স্মরণ: হযরত ওসমান (র.)’র শাহাদাত দিবস

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

আমিরুল মুমিনিন, খলিফাতুল মুসলিমিন হযরত ওসমান জিন্নুরায়ন রাদিয়াল্লাহু আনহু

………………………………..

ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানী

…………………………………

আমিরুল মুমেনিন, ইমামুল মুজাহেদিন, জামেউল কুরআন, সাহিবুল হিজরাতাইন, হযরত ওসমান জিন্নুরায়ন রাদিয়াল্লাহু আনহু, ইসলামের তৃতীয় খলিফা। ইসলামের শুরুর দিকেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর কুনিয়ত আবু আবদুল্লাহ, আবু আমর, উপাধি জিন্নুরাইন। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি সেই মহাব্যক্তি যাকে উর্ধ্বজগতে জুন্নুরাইন উপাধিতে করা হয়। পিতার নাম আফফান। আশরায়ে মুবাশেরার অন্যতম ও ইসলাম গ্রহণের দিক দিয়ে চতুর্থ ব্যক্তি।

তাঁর উপাধি জিন্নুরাইন ও গনী। কেননা, তিনি ছিলেন অত্যন্ত দানশীল। ইসলাম গ্রহণের পর মুসলাম ও মুসলিম ফৌজদের জন্য তিনি ব্যাপক আর্থিক সাহায্য দান করেন। এ কারণে সরকারে দু’ আলম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁকে গণী উপাধিতে ভূষিত করেন। আর যেহেতু তার আকদে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের দু‘শাহজাদি এসেছেন তাই তাঁকে জুন্নুরায়ন উপাধিতে ভূষিত করা হয়। হযরত আদম (আ.) থেকে প্রিয় নবী পর্যন্ত কোন ব্যক্তি নবীর দু‘কন্যাকে বিবাহ করার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেন নি, একমাত্র হযরত ওসমান ব্যতীত। হযরত আলী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলে আকরাম দ. কে বলতে শুনেছি, তিনি হযরত ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বললেন, যদি আমার চল্লিশজন কন্যাও থাকতো তবে হে ওসমান আমি তাদের প্রত্যেককে একের পর এক তোমাকে বিবাহ দিতাম। [সুয়ুতি, তারিখুল খোলাফা :১০৪]

ওসমান জিন্নুরায়ন রাদিয়াল্লাহু আনহু সেসব সৌভাগ্যবান সাহাবিদের অন্যতম যারা সর্বপ্রথম ইমান এনেছেন। কুরআন করিমে যাদেরকে সাবিকুনাল আউয়ালিন ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি হযরত আবু বকর সিদ্দিক (র.) দাওয়াতে ইসলাম গ্রহণ করেন। মুসলমান হওয়ার পর মক্কার অন্যান্য মুসলমানদের ন্যায় তাঁকেও অমানষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এমন স্বয়ং তাঁর চাচা হাকাম বিন আস তাঁকে অনেক নির্যাতন করেছেন। একদিন তাকে কুঠরিতে বন্ধি করে সেখানে ধোয়া ভর্তি করে দিয়েছিলো যাতে তিনি দম বন্ধ হয়ে মারা যান। কিন্তু এরপরও তিনি ইমানহারা হন নি।

হিজরত

রাসূল এর পরামর্শে তিনি স্ত্রী রোকাইয়্যাসহ প্রথমে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। তাদের হিজরতের দৃশ্য দেখে নবী করিম হযরত আবু বকর (রা.)কে সম্মোধন করে বলেন-

يَا اَبَا بَكْرٍ اِنَّهُمَا الاَوَّل مَنْ هَاجَرَ بَعْدَ لُوْطٍ وَاِبْراهِيْمَ

হে আবু বকর! এরা দু’জন (ওসমান ও রোকাইয়্যা) হযরত লূত ও হযরত ইব্রাহিম (আ.)‘র পর সর্বপ্রথম হিজরতকারী। সেখানে দু’বছর থাকার পর একটি ভুল সংবাদের ভিত্তিতে তারা আবিসিনিয়া থেকে মক্কায় চলে আসেন। পরবর্তীতে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি মদীনায় হিজরত করে রাসূলে আকরাম (দ.)’র সাথে মিলিত হন।

হযরত ওসমানের ফজিলত

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হে আল্লাহ! আমি ওসমানের উপর সন্তুষ্ট। আপনিও তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। [মিশকাত]

বুখারি ও মুসলিম শরিফে হযরত আবু মুসা আশয়ারী (র.) বর্ণিত হাদিসে যারা রাসূল কর্তৃক জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে হযরত ওসমানও ছিলেন। রাসূল (দ.) তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদের সাথে দুনিয়ায় কঠিন বিপদের সংবাদও দিয়েছিলেন। [মিশকাত, ৫৬৩, হা নং ৫৭০৩।]

ওসমান লজ্জাশীল তাই তাঁকে ফেরেস্তারাও লজ্জা করেন

হযরত আয়িশা সিদ্দিকা বলেন, ওসমান জিন্নুরায়ন রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হতেন তখন নবীজি নিজেকে গুটিয়ে বসে যেতেন আর তাঁর কাপড়ও গুটিয়ে নিতেন। একদিন এক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (দ.) আমার পিতা-মাতা আপনার উপর উৎসর্গ হোক! ওসমান আসলে আপনি কেন নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন। বললেন, আমি কেন তাকে লজ্জা করবো না যাকে লজ্জা করেন স্বয়ং ফেরেস্তারাও। [মুসলিম, সূত্র: মিশকাত, পৃ. ৫৬০-৬১।

হযরত ওসমান দুনিয়া ও আখিরাতে আমার ঘনিষ্ট বন্ধু

হযরত তালহা ইবনে ওবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তুমি দুনিয়াতে আমার বন্ধু আর আখিরাতেও আমার বন্ধু। [মিশকাত, পৃ. ৫৬০ হা. নং ৫৬৮৯।]

হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসূল হযরত ওসমানকে সম্বোধন করে বললেন, প্রত্যেক নবীর কিছু বন্ধু থাকে আর ওসমান জান্নাতে আমার বন্ধু। [আহমদ বিন হাম্বল, ফাযায়েলুস সাহাবা, ১: ৫০৩, হা. নং ৮২১।]

ওসমান যা ইচ্ছা করতে পারবে

যে সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন হযরত ওসমান একহাজার আশরাফি আস্তিনে রেখে হুযুরের কাছে নিয়ে আসেন। আর তার কোলে এনে রাখেন। হুযুর এগুলো উল্টে পাল্টে দেখেন আর বলেন, ওসমানের আর কোনো ক্ষতি হতে পারে না। আজকের পর ওসমান যা ইচ্ছা করতে পারে। এ কথা তিনি দুবার বললেন। [মিশকাত, পৃ. ৫৬১, হা. নং ৫৬৯১।]

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম একবার উহুদ পাহাড়ে উঠলেন। তাঁর সাথে ছিলেন আবু বকর (র.), ওমর (র.) ও ওসমান (র.)। পাহাড় দুলতে লাগলো। তখন তিনি তার পা দিয়ে ইঙ্গিত করে বললেন, হে ওহুদ! থামো। তোমার উপর একজন নবী একজন সিদ্দিক ও দুজন শহীদ রয়েছেন। [বুখারি, ১: ৫২৩, হা. নং ৩৪৩৪।]

হযরত ওসমানের খেলাফত এক নজরে

১. ৩৩ বছর বয়সে ইলাম গ্র্হণ।

২. সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী চৌদ্দ মুসলমান ও আশারা মুবাশ্শেরার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।

৩. হাবশা ও মদিনা হিজরত করেছেন।

৪. হুযুরের দু শাহজাদিকে বিয়ে করেছেন।

৫. বদর ছাড়া সকল যুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহণ করেছেন।

৬. লজ্জা ও দানশীলতার মুর্ত প্রতীক।

৭. অধিকাংশ যুদ্ধের জন্য যুদ্ধসামগ্রী দানকারী।

৮. মসজিদে নবভীর জন্য জমি ক্রয়কারী।

৯. বীরে রুমা খরিদ করে মদিনাবাসীদের দান করেছেন।

১০. হযরত শায়খায়নের ঘনিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য উপদেষ্টা ছিলেন।

১১. ২৪ হিজরি সনের ১লা মুহাররম তৃতীয় খলিফা হিসাবে অধিষ্টিত হন।

১২. তার যুগে ইসলামি সম্রাজ্য হিন্দুস্তান, রুশ, আফগানিস্থান, পাকিস্থান, লিবিয়া, জাজায়ের, মারাকিশ ও বহিরায়ে রুমের জাজায়ের পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে।

১৩. নৌ যুদ্ধে মুসলমানগণ রোমদের পরাজিত করেন।

১৪. বিভিন্ন অঞ্চলের কিছু বিদ্রোহ দমন করেন।

শাহাদাত: হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু ১৮ জিলহজ্জ, ৩৫ হি. সন মোতাবেক ২০ মে ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দে জুমার দিন রোযা অবস্থায় ৮২ বছর বয়সে শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর নামাযে জানাযায় হযরত জুবায়ের র. ইমামতি করেন এবং জান্নাতুল বকীতে তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর খিলাফতকাল ছিলো ১২ দিন কম ১২ বছর। [ইমাম আহমদ, ফাযায়েলুস সাহাবা, ১: ৪৮০।]

…………………..

ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানী, ঢাকা।

তারিখ:০৬/০৭/২০২৩ ইং

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment