শিয়াদের পাতা ফাঁদঃ
মুসলমানদের জান মাল হেফাজতের কথা চিন্তা করে জালিম মুয়াবিয়ার সাথে ইমাম হাসানকে সন্ধি করতে হয়েছে।
কিন্ত মুয়াবিয়া সেই সন্ধি চুক্তির খেলাফ করেছে।
জবাবঃ
শিয়াদের অপপ্রচার সমূহের মধ্যে এটি একটি অন্যতম অপপ্রচার।
জেনে রাখা উচিত, কাফির, মুনাফিকের সাথে আপোষ করে চলার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। কাজেই কাফির, মুনাফিকের সাথে আপোষ করে চলাকে ইসলাম সমর্থন করে না। সেহেতু কাফির, মুনাফিকের সাথে আপোষ করে চলাকে ইসলামে অনৈসলামিক কর্ম বলে গণ্য করা হয়।
এখন প্রশ্ন আসে যে তাহলে রাসূলে কারীম ﷺ হুদাইবিয়ার সন্ধি চুক্তি করলেন কেন?
রাসূলে কারীম ﷺ যে কাফেরদের সাথে হুদায়বিয়ায় সন্ধি করেছিলেন তা কি তাহলে আপোষমূলক ছিল? এখনো কি তাহলে বাতিলদের সাথে আপোষ করা যাবে?
এর উত্তর হচ্ছে, আল্লাহর নির্দেশেই রাসূলে কারীম ﷺ সন্ধিতে সম্মত হয়েছিলেন। এটা বাতিলের সাথে আপোষ নয়; বরং রক্তক্ষয় এড়ানোর জন্য শত্রুদের সাথে সাময়িক চুক্তি ছিল। এর ফলে মক্কার কাফিররা মুসলিমদেরকে একটি শক্তি হিসাবে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। শর্তসাপেক্ষ এই সন্ধি-চুক্তির মধ্যে ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য সুস্পষ্ট বিজয় নিহিত ছিল। যা তখন ছাহাবীগণও বুঝতে সক্ষম হননি। এ কারণে তাদের অনেকেই প্রথমে সন্ধি চুক্তিতে সম্মত ছিলেন না। এটিকে সুস্পষ্ট বিজয় হিসাবে আল্লাহ্ তা‘আলা সূরা আল-ফাত্হ বা বিজয়ের সূরা নাযিল করেন। বর্তমানেও যদি ইসলাম ও মুসলিমের জন্য কল্যাণকর বিবেচিত হয়, তাহ’লে মুসলিম রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কাফির রাষ্ট্রের সাথে সন্ধি-চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই সূত্র ধরে বর্তমানে ইসলামী দলগুলো যেভাবে বাতিল আক্বীদা ও বাতিল মতাদর্শের সাথে আপোষ করছে, তা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়।
পথভ্রষ্ট শিয়ারা তাদের দাবীতে ইমাম হাসান রাঃ এর সন্ধি চুক্তিকে অনৈসলামিক প্রমাণ করে বসে। ঈমাম হাসান রাঃ এর ও সমালোচনা করে বসে। কিভাবে? তারা অনুমান নির্ভরতায় হাযরাত মুআবিয়া রাঃ কে মুনাফিক বানাতে গিয়ে বা অনুমান করতে গিয়ে ইমাম হাসান রাঃ কেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষকারী বানিয়ে দেয়। নাউযুবিল্লাহ।
হুদাইবিয়ার চুক্তি আর ইমাম হাসান রাঃ এর চুক্তি কি এক? জ্বী না, হুদাইবিয়ার চুক্তি কেবল যুদ্ধ বিরতি চুক্তি ছিল। আপোষমূলক ছিল না। পক্ষান্তরে ইমাম হাসান রাঃ ক্ষমতাকেই হস্তান্তরের চুক্তি করেন। ইসলামিক শাসন ব্যাবস্থা যাঁর হাতে ইমাম হাসান রাঃ তুলে দিলেন তিনি অইসলামিক হতে পারেন না। অকুতোভয় ইমাম হাসান রাঃ কখনও অইসলামিক ব্যক্তির কাছে ক্ষমতার মত ইসলামের গুরুদায়িত্ব হস্তান্তর করতে পারেন না। তাও আবার কেবল রক্তক্ষয়ের ভয়ে। অথচ হাযরাত মুআবিয়া রাঃ এর তুলনায় অনেক অনেক বেশী সামরিক শক্তিমত্তা ও সাহাবায়ে কিরাম রাঃ এর অংশগ্রহণ ছিল ইমাম হাসান রাঃ এর দলে। ইসলাম নিয়ে কম্প্রমাইজ বা আপোষ হাসনাঈন কারিমাঈন ইমাম হাসান হুসাইন রাঃ করবেন এটা শিয়ারা ভাবে কি করে?
বরং ইমাম হাসান রঃ এর চুক্তি আর কারবালায় ইমাম হুসাইন রাঃ এর প্রতিবাদ স্পষ্ট করে দেয় যে ইমাম হাসান রাঃ হাযরাত মুআবিয়া রাঃ এর কাছে খিলাফাত হস্তান্তর করেছেন কারন সেটা ইসলামিক ছিল। কাজেই হাযরাত মুআবিয়া রাঃ ও ইসলামিক ছিলেন। ইসলামের গণ্ডীর বাইরে তিনি যান নি বা ছিলেন না। তিনি মুনাফিক বা কাফির হয়েও যান নি বা তিনি তা ছিলেনও না। শিয়ারা যে ধারণা অনুমান করে বলে হাযরাত মুআবিয়া রাঃ মুনাফিক ও জালিম ছিলেন তার অসারতাও এর থেকে প্রমাণিত হয়ে যায়। ইসলানাী খিলাফাতের ক্ষমতা পরিচালনায় হাযরাত মুয়াবিয়া রাঃ যদি যোগ্য না হতেন তাহলে মাওলা ইমাম হাসান রাঃ কখনও ক্ষমতা একজন অযোগ্যের হাতে হস্তান্তর করতেন না। কাজেই প্রমাণিত হয়ে গেল হাযরাত মুআবিয়া রাঃ হাযরাত হাসান রাঃ এর হস্তান্তর কৃত খিলাফাতের যোগ্য ছিলেন।
আর ইমাম হুসাইন রাঃ প্রতিবাদ করেছেন কারন সেই ব্যক্তি অইসলামিক ছিল। তাই আমরা প্রকৃত হাসানি ও হুসাইনি হুকুম পালন করি। শিয়ারা অনুমান আন্দাজ নির্ভর এক হতভাগা পথভ্রষ্ট ফির্কায় পর্যবসিত হয়েছে।
শিয়াদের পক্ষ থেকে হাযরাত মুআবিয়া রাঃ কর্তৃক সন্ধি চুক্তি ভঙ্গের প্রশ্ন অভিযোগ তোলা হয়। শিয়াদের অভিযোগে বলা হয়, হাযরাত মুয়াবিয়া রাদ্বি. ও ইমাম হাসান রাদ্বি. এর মধ্যে যে সন্ধি হয়েছিল তিনি সেই চুক্তি ভঙ্গ করেছেন।
প্রশ্নঃ হাযরাত মুয়াবিয়া রাদ্বি. ও ইমাম হাসান রাদ্বি. এর মধ্যে যে সন্ধি হয়েছিল তিনি কি সেই চুক্তি ভঙ্গ করেছেন?
হযরত ইমাম হাসান রাদ্বি. এর সাথে কৃত সন্ধি চুক্তি তঁর জীবদ্দশায় হাযরাত মুয়াবিয়া রাদ্বি. ভঙ্গ করেছেন মর্মে দাবীটি সত্য নয়। নির্ভরযোগ্য সূত্র মোতাবেক, হাযরাত মুয়াবিয়া রাদ্বি. ইন্তেকালের পরে ইমাম হাসান রাদ্বি. এর অনুপস্থিতিতে হাযরাত ইমাম হুসাইন রাদ্বি. কে খেলাফত দিতে হবে এরূপ শর্তারোপ সন্ধির মধ্যে উল্লেখ ছিল না।
তবে হাযরাত মুয়াবিয়া রাদ্বি. এর পরে ইমাম হাসান রাদ্বি. কে পুনরায় খেলাফত প্রাপ্তির বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
ঈমামগণের অভিমত
১
ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী রহ. অন্যান্য ইমামগণ উল্লেখ করেছেন,
فكره الحسن القتال، وبايع معاوية على أن يجعل العهد له من بعده،
-“ইমাম হাসান রাদ্বি, মুসলমানদের মাঝে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধকে অপছন্দ করলেন ও মুয়াবিয়া রাদ্বি. এর নিকট বায়াত গ্রহণ করলেন এই মর্মে যে, তাঁর ওফাতের পরে হাযরাত হাসান রাদ্বি. কে খলিফা বানানো হবে।”
রেফারেন্স
১/ আসকালানী: আল-ইসাবা ফি তামিযিস সাহাবা, ১ম খণ্ড, ৪৩৩ পৃঃ।
২/ ইবনু আব্দিল বার: আল-ইস্তেআব ফি মারিফাতিল আসহাব, ১ম খণ্ড, ৩৮৬ পৃষ্ঠা।
যেহেতু ইমাম হাসান রাদ্বি. হাযরাত মুয়াবিয়া রাঃ এর ইন্তেকালের পূর্বেই শাহাদাত বরণ করেছেন সেহেতু খেলাফত পুনরায় ফিরিয়ে না দেওয়ার অভিযোগ আর থাকছে না। অর্থাৎ হাযরাত মুয়াবিয়া রাঃ সন্ধির চুক্তি ভঙ্গকারী প্রমাণিত হয় না।
২
ছহীহ্ বুখারীতে হাযরাত হাসান বছরী (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে যে,
ইমাম হাসান রাদ্বি. হাযরাত মুয়াবিয়া (রা.) কে শর্ত দিলেনঃ-
وَلَيْسَ لمعاوية بن أبي سُفْيَان أَن يعْهَد إِلَى أحد من بعده عهدا بل يكون الْأَمر من بعده شُورَى بَين الْمُسلمين.
-“হাযরাত মুয়াবিয়া (রা.) এর এ বিষয়ে অনুমতি নেই যে, তিনি তাঁর পর কাউকে খেলাফত দিয়ে যাবেন। বরং তাঁর পরে এ বিষয়টি মুসলমানদের পরামর্শ অনুযায়ী সমাপ্ত হবে।
রেফারেন্স
ইবনু হাজার রহিঃ, আস সাওয়াইকুল মুহরিকা, ২য় খণ্ড, ৩৯৯ পৃষ্ঠা।
৩
হাফিজ ইবনু কাসির রহ. তদীয় কিতাবে বলেন,
فاشترط ان يأخذ من بيت مال الكوفة خمسة آلاف الف درهم، وان يكون خراج دار أبجرد له، وان لا يسب علي وهو يسمع.
হাযরাত ইমাম হাসান (রাঃ) এই শর্তে খেলাফতের দাবী পরিত্যাগ রাজি হলেন যে, তাঁকে কুফার বায়তুল মাল থেকে ৫০ লক্ষ দিরহাম দেওয়া হবে। আবজারাদ অঞ্চলের খাজনা তিনি গ্রহণ করবেন এবং হাযরাত আলী (রাদ্বি.) এর প্রতি কোন নিন্দাবাদ যেন তাঁর কানে না আসে।
রেফারেন্স
ইবনু কাসির রহিঃ, আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ৮ম খণ্ড, ৪০ পৃষ্ঠা।
অতএব, হাযরাত মুয়াবিয়া রাদ্বি. ইমাম হাসান রাদ্বি. এর সন্ধি চুক্তি ভঙ্গকারী প্রমাণিত নয়। তাই অহেতুক বিনা কারণে একজন সাহাবীয়ে রসূলকে এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া মোটেও উচিত নয়।
[বিঃদ্রঃ হাযরাত মুয়াবিয়া রাদ্বি. এর পরে ইমাম হাসান রাদ্বি. এর অবর্তমানে নিঃসন্দেহে ইমাম হুসাইন রাদ্বি. খেলাফতের অধিক হক্বদার ছিলেন। কিন্তু কুখ্যাত ইয়াজিদের চক্রান্তের কারণে আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বি. চুক্তি ভঙ্গকারী প্রমাণিত হয় না।]
মহান আল্লাহ তা’আলা সকলকে বুঝার তৌফিক দান করুন, আমিন।
উল্লেখ্য –
যে বিষয়ে ইমাম হুসাইন রাঃ চুপ সেই বিষয়ে আমরা চুপ যেই বিষয়ে তিনি প্রতিবাদ মুখর সেই বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ করব।
তিনি বাবার ইন্তেকালের পর ২০ বছর শান্ত। ভাইয়ের থেকে খেলাফত হস্তান্তর এর পর ১৯ বছর শান্ত এবং ভাইয়ের শাহাদাতের পর ১০ বছর শান্ত। তাঁর চেয়ে বেশি আমরা ১৪০০ বছর পরে এসে বুঝতে শিখলে হবে না। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হওয়া ভালো নয়।





Users Today : 249
Users Yesterday : 374
This Month : 2396
This Year : 174267
Total Users : 290130
Views Today : 1282
Total views : 3430755