রাসুলে কারিম সল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
জুম’আর দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, তা-ই তাকে দেওয়া হয়। আর এ সময়টি হল জুম’আর দিন আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত, একটি সময়।
*_* বুখারী শরীফ/৯৩৫।
হযরত আবু হুরাইরা(রা) হতে বর্ণিত,
রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
”যে গোসল করে জুমু’আর উদ্দেশ্যে আসে এবং যে পরিমাণ নফল নামায পড়ার তাওফীক হয় তা পড়ে, এরপর ইমামের খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকে এবং ইমামের সঙ্গে নামায আদায় করে, আল্লাহ তা’আলা তার দশ দিনের (সগীরা) গুনাহ মাফ করে দেন।”
*_* সহীহ মুসলিম, ১/২৮৩।
জুমুয়ার দিন রসূলে কারিম হাযরাত মুহাম্মদ সল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মত এর জন্য একটি মহান দিন। এ জুম’আর দিনটিকে সম্মান করার জন্য ইহুদী-নাসারাদের উপর ফরজ করা হয়েছিল; কিন্তু তারা মতবিরোধ করে এই দিনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অতঃপর ইহুদীরা শনিবারকে আর খ্রিষ্টানরা রবিবারকে তাদের ইবাদতের দিন বানিয়েছিল। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা তাঁর হাবীব রসূলে কারিম হাযরাত মুহাম্মদ সল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মতের জন্য শুক্রবারকে মহান দিবস ও ফযীলতের দিন হিসেবে দান করেছেন। আর উম্মতে মুহাম্মদী তা গ্রহন করে নিল।
*_* বুখারী শরীফ ৮৭৬;
*_* মুসলিম শরীফ ৮৫৫।
হাযরাত আবদুল্লাহ ইবনে আমর [রাযি] থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক জুমুআর দিনে নিজের গোঁফ ছোট করেতেন এবং আংগুলের নখ কাটতেন।
*_* আখলাকুন নবী সল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম, হাদিস নং-৭৭০।
হাযরাত আবু হুরায়রা [রাযি] থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেন,
জুমুআর দিন মসজিদের দরজায় ফিরিশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মোটাতাজা উট কুরবানী করে। এরপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি গাভী কুরবানী করে। এরপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি দুম্বা কুরবানী করে তারপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগী দানকারীর ন্যায়। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি ডিম দানকারীর ন্যায়। তারপর ইমাম যখন [খুৎবার প্রদানের জন্য] বের হন তখন ফিরিশিতা তাঁদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহকারে খুৎবা শুনতে থাকেন।
*_* বুখারি শরীফ, হাদিস ৮৮২।
হাযরাত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন,
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরা কাহ্ফ পড়বে তার জন্য এক জুম’আ থেকে আরেক জুম’আ পর্যন্ত আলো বিচ্ছুরিত হবে।
*_* মুসতাদারেক হাকিমঃ২/৩৯৯,
*_* বায়হাকীঃ ৩/২৪৯,
*_* ফয়জুল ক্বাদীরঃ ৬/১৯৮।
হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত,
রসূলে কারিম সল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
যে ব্যক্তি শুক্রবার দিন সূরা কাহফ পাঠ করবে তার পা থেকে আকাশের উচ্চতা পর্যন্ত নূর হয়ে যাবে, যা কেয়ামতের দিন আলো দিবে এবং বিগত জুমআ থেকে এ জুমআ পর্যন্ত তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
*_* সহিহ্ আত তারগীব ওয়া তারহীবঃ ১/২৯৮।
হাযরাত আবু দারদা রাঃ রসূলে কারিম সল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,
যেব্যক্তি সুরায়ে কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফেৎনা হতে রক্ষা পাবে।
*_* মুসলিম শরীফ, হাদিস ১৩৪২,
*_* মুসনাদু আহমদ শরীফ, হাদিস ২০৭২০,
*_* আবু দাউদ শরীফ, হাদিস ৩৭৬৫।
হযরত ইয়াযীদ ইবনে আবি মারয়াম (র) থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন,
আমি একদিন পায়ে হেঁটে জুম’আর জন্য যাচ্ছিলাম। এমন সময় আমার সাথে আবায়া ইবনে রিফায়া (র) এর সাথে সাক্ষাৎ হয়।
তিনি বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর! তোমার এই পদচারণা আল্লাহর পথেই। আমি আবু আবস (রা) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুলে কারিম সল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
যে ব্যক্তির পদদ্বয় আল্লাহর পথে ধূলিময় হলো, তার পদদ্বয় জাহান্নামের জন্য হারাম করা হলো।
*_* জামে তিরমিযি, হাদিস ১৬৩৮,
*_* সহীহ বুখারী, হাদিস ৯০৭।
রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
জুম’আতে তিন ধরনের লোক আসে।
(ক) যে ব্যক্তি অনর্থক আসে, সে তাই পায;
(খ) যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনার জন্য আসে। আল্লাহ চাইলে তাকে দেন, অথবা না দেন;
(গ) যে ব্যক্তি নীরবে আসে এবং কারো ঘাড় মটকায় না ও কষ্ট দেয় না, তার জন্য এই জুম’আ তার পরবর্তী জুম’আ এমনকি তার পরের তিন দিনের (সগীরা) গোনাহ সমূহের কাফফারা হয়ে থাকে। এ কারণেই মহান আল্লাহ্ পাক বলেছেন,
যে ব্যক্তি একটি নেকীর কাজ করে, তার জন্য দশগুণ প্রতিদান রয়েছে (সূরাহ্ আন’আম; আয়াত ১৬০)।
*_* আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৩৯৬, অনুচ্ছেদ-৪৪।
ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ্ বলেনঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّهُ قَالَ: تُعْرَضُ أَعْمَالُ النَّاسِ كُلَّ جُمُعَةٍ مَرَّتَيْنِ، يَوْمَ الْاثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ، فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ مُؤْمِنٍ إِلَّا عَبْدًا كَانَتْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ، فَيُقَالُ: اتْرُكُوا هَذَيْنِ حَتَّى يَفِيئَا. أَوِ ارْكُوا (يعني أخِّروا) هَذَيْنِ حَتَّى يَفِيئَا.
“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: প্রতি জুমায় [সপ্তাহে] বান্দার আমল দু’বার পেশ করা হয়: সোমবার ও বৃহস্পতিবার। অতঃপর প্রত্যেক মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করা হয়, তবে সে বান্দা ব্যতীত যার মাঝে ও তার ভাইয়ের মাঝে বিদ্বেষ রয়েছে। বলা হয়: তাদেরকে ত্যাগ কর, যতক্ষণ না তারা সংশোধন করে নেয়”।
গ্রন্থ সূত্র :
*_* মুয়াত্তা মালেক; ২/৯০৮, হাদিস ১৭।