ষাটতম অধ্যায়ঃ হায়াতুন্নবী [ﷺ]
প্রসঙ্গঃ রওযা মোবারকে পবিত্র দেহ স্থাপন এবং রূহ মোবারক ফেরতদান, তিনি হায়াতুন্নবী [ﷺ]
============
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنها) -এঁর হুজরার মধ্যে রওযা মোবারক তৈরী করা হয়। হযরত আলী (رضي الله عنه), হযরত আব্বাস (رضي الله عنه), হযরত ফযল ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এবং নবী করিম [ﷺ]-এঁর আশ্রিত খাদেম হযরত সালেহ (رضي الله عنه)-এই চারজন সাহাবী নবী করিম [ﷺ]-কে রওযা মোবারকে নামান। হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) দেখতে পেলেন – কাফনের ভিতরে হুযুর [ﷺ]-এঁর ঠোঁট মোবারক নড়ছে – তিনি জীবিত। তিনি কান লাগিয়ে শুনতে পেলেনঃ- করিম [ﷺ] “রাব্বি হাব্লী উম্মতি” বলে কাঁদছেন। ইমাম বায়হাকীর সূত্রে ইমাম তকিউদ্দিন সুবকি রেওয়ায়াত করেনঃ
ان النبي صلى الله عليه وسلم بعد ما دفن فى قبره رد الله روحه واستمرت الر وح في جسده الى يوم القيامة ليرد على من سلم عليه (شفاء السقام في ريارة خيرلانام للعلامة تقي الدين سبكى رح)
অর্থ-“রাসুল মকবুল [ﷺ]-কে রওযা মোবারক দাফন করার পরপরই আল্লাহ তায়ালা তাঁর রূহ মোবারককে ফেরত পাঠিয়ে দেন এবং রূহ মোবারক দেহ মোবারকের মধ্যে কেয়ামত পর্যন্ত সবসময় অবস্থান করতে থাকবে – যাতে তিনি উম্মতের সালামের জবাব দিতে পারেন” (ইমাম তকিউদ্দিন সুবুকী (৬২৭ হিঃ) কৃত সিফাউস সিকাম ফী যিয়ারতে খাইরিল আনাম)।
বিঃদ্রঃ ইবনে তাইমিয়া কর্তৃক নবী করিম [ﷺ]-এঁর রওযা মোবারক যিয়ারতের সফরকে শির্ক বলে ফতোয়া প্রদানের বিরুদ্ধে এবং যিয়ারত যে নৈকট্য লাভেল শ্রেষ্ঠতম উপায়, সে সম্পর্কে সুবুকীর এই গ্রন্থখানা রচিত হয়। ইবনে তাইমিয়া (৭২৮ হিঃ) ছিল ওয়াবী সম্প্রদায়ের মূল পূর্বগুরু। পরবর্তী গুরু হলো ইবনে কাইয়েম (৭৫১ হিঃ)। এর পরবর্তী গুরু ইবনে ওহাব নজদী (১২০৬ হিঃ) তার পরবর্তী ওহাবী গুরু ইসমাঈল দেহলভী (১২৪৬ হিঃ)। তার পরবর্তী গুরু কাছেম নানুতবী, গাঙ্গুহী, থানবী প্রমুখ ওহাবী নেতা। ইমাম তকিউদ্দিন সুবকী (رحمة الله عليه) ছিলেন সে যুগের (৭৫১) সুন্নী ইমাম। তাঁর লিখিত শিফাউস সিকাম গ্রন্থখানা খুবই তথ্যবহুল ও হাদীস নির্ভর।
উপরে বর্ণিত ইমাম বায়হাকী (رحمة الله عليه)-এঁর রেওয়ায়াতখানা একথাই প্রমাণ করে যে, নবী করিম [ﷺ]-এঁর রুহ মোবারক সোমবার দ্বিপ্রহের কিছু পূর্ব হতে মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত প্রায় ৪০ ঘণ্টা দেহ মোবারক থেকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে পৃথক থাকার পর ঐ রাত্রেই পুনরায় ফেরত দান করা হয়। কাজেই নবী করিম [ﷺ] এখন সশরীরে রওযা মোবারকে হায়াতুন্নবী হিসাবে জীবিত আছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন।
এই পবিত্র জীবন ও হায়াত দুনিয়াবী হায়াত। দেওবন্দী আলেম খলীল আহমদ আম্বেটী তার প্রতারণামূলক ‘তাসদীকাত গ্রন্থে মক্কা মদিনার আলেমদের নিকট প্রতারণা করে স্বীকার করেছে যে, “নবী করিম [ﷺ] দুনিয়াবী হায়াতের সাথেই রওযা মোবারকে জীবিত আছেন এবং এটাই দেওবন্দের আক্বিদা। এই অর্থেই তিনি হায়াতুন্নবী [ﷺ]।” খলিল আহমদ আম্বেটীর এই দাবী প্রতারাণামূলক – কেননা ওহাবীপন্থী ইসমাইল দেহলভী তাকভিয়াতুল ঈমান গ্রন্থে বলেছে – “নবী করিম [ﷺ] মরে-পঁচে-গলে মাটির সাথে মিশে গিয়েছেন” (নাউজুবিল্লাহ)। (তাকভিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা-৬০)। বাংলাদেশে ইসমাইল দেহলভীর অনেক অনুসারী আছে। তারাও হায়াতুন্নবী বিশ্বাস করেনা।
অথচ দেওবন্দেরই হেড মোহাদ্দেস শাহ্ আনওয়ার কাশ্মিরী তাঁর রচিত ফয়জুল বারী শরহে বোখারী ১ম খন্ড ১ম পারায় উল্লেখ করেছেনঃ-
– اتفق العلماء على حيات الانبياء عليهم السلام
অর্থ-“পূর্ব জামানার সমস্ত ওলামগণের ঐকমত্য হচ্ছে নবী করিম [ﷺ] সশরীরে জীবিত এবং অন্যান্য নবীগণও।” একারণেই তাঁর দেওবন্দের চাকুরী চলে যায়।
রাসুল মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- “যে কোন মুসলমান যে কোন স্থান থেকে আমাকে ছালাম জানায় – আল্লাহ তায়ালা আমার রূহানী তাওয়াজজহ্তার দিকে ফিরিয়ে দেন। অতঃপর আমি তার ছালামের জবাব দেই” (আবু দাউদ ও মিশকাত)।
বুঝা গেল, দুনিয়ার সব সালাম পাঠকারীর সালাম তিনি একসাথে শুনতে পারেন এবং একসাথে জবাবও দিতে পারেন। জালালুদ্দীন সুয়ূতি আল-হাভী গ্রন্থে নবী করিম [ﷺ] কর্তৃক রওযা মোবারক থেকে ৫টি দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে দুটি হলোঃ- “উম্মাতের যাবতীয় আমল প্রত্যক্ষ করা এবং অলী-আল্লাহদের জানাযায় শরিক হওয়া।” ওয়াহাবী নেতা ইবনে কাইয়েম রচিত “জাল্লাউল আফহাম” নামক গ্রন্থে একখানা হাদীস এরূপ বর্ণিত হয়েছে “আনা আছমাউ ছালাতাকুম আলাইয়া বিলা ওয়াছিতাতিন” – অর্থাৎ, “আমি ফেরেশতাদের মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি তোমাদের সালাম শুনতে পাই।” (মূল নোছখা)
বুঝা গেলঃ করিম [ﷺ] সদা জাগ্রত এবং প্রেমিকদের সালাম সরাসরি শুনেন। ফেরেশতাগণ তাদের ডিউটি হিসাবে পরে তা পৌঁছান। মোহাদ্দেসীনগণ এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন – “মহব্বতের সালাম তিনি নিজে শুনেন এবং মুখের সালাম ফেরেশতারা পৌঁছায় (সূত্রঃ জাআল হক)।