পবিত্র মক্কার ন্যায় মদীনা শরীফও পবিত্র ও সম্মানিত শহর, ওহী নাযিল হওয়ার স্থান। কুরআনুল কারীমের অর্ধেক নাযিল হয়েছে মদীনা শরীফে। মদীনা শরীফ ইসলামের প্রাণকেন্দ্র, ঈমানের আশ্রয়স্থল, মুহাজির ও আনসারদের মিলনভূমি। মুসলমানদের প্রথম রাজধানী। এখান থেকেই আল্লাহর পথে জিহাদের পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল, আর এখান থেকেই হিদায়াতের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটেছে, ফলে আলোকিত হয়েছে সারা বিশ্ব। এখান থেকে সত্যের পতাকাবাহী মু’মিনগণ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিলেন দ্বীনের বারতা নিয়ে। তাঁরা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ডেকেছেন। নবীজীর শেষ দশ বছরের জীবন যাপন, তাঁর ওফাত ও কাফন-দাফন এ ভূমিতেই হয়েছে। এ ভূমিতেই তিনি শায়িত আছেন। এখান থেকেই তিনি পুনরুত্থিত হবেন। নবীদের মধ্যে একমাত্র তাঁর কবর শরীফই সুনির্ধারিত রয়েছে। তাই মদীনা শরীফের যিয়ারত আমাদেরকে ইসলামের সোনালী ইতিহাসের দিকে ফিরে যেতে সাহায্য করে। সুদৃঢ় করে আমাদের ঈমান-আকীদার ভিত্তি। তাই ইসলামি নিদর্শনাবলীর একটি বড় নিদর্শন হলো “মদিনা শরীফ”, যার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা প্রত্যেক ঈমানদারের অন্তরের কাজ। ইসলামের নিদর্শনগুলোর প্রতি সম্মান দেখানো ও সেগুলোকে সংরক্ষণ করা মহান আল্লাহরই নির্দেশ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন: ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ “যে আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনাবলীকে সম্মান করবে সে যেন তার আন্তরিক তাকওয়ারই বহিপ্রকাশ ঘটালো।” (সূরা হাজ্ব:৩২) যেমনিভাবে সাফা, মারওয়া, মাশআর, মিনা এবং হজ্জের সামগ্রিক আনুষ্ঠানিকতা সবই ঐশী নিদর্শন হিসেবে পরিগণিত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَآئِرِ اللّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَن تَطَوَّعَ خَيْراً فَإِنَّ اللّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ “নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার নিদর্শন গুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কা’বা ঘরে হজ্ব বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দ’ুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোন দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ করে, তবে আল্লাহ তা’আলার অবশ্যই তা অবগত এবং তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন।” (বাক্বারা-১৫৮) অনুরূপভাবে মদিনা মুনাওয়ারাও ইসলামের নিদর্শনাবলীর একটি বড় নিদর্শন যাকে সম্মান প্রদর্শন করা ঈমান ও তাকওয়ার পরিচায়ক। রাসূলে খোদার সময়ে সাহাবায়ে কেরামগণ নবীজী এবং তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবহার্য দ্রব্যাদির ও বিচিত্র বস্তুকে তাবাররুক হিসেবে গ্রহণ করার জন্যে উদগ্রিব থাকতেন। তাঁর ব্যবহৃত জিনিস-পত্রকে তাঁরা অত্যন্ত পবিত্র মনে করে সেগুলোকে পবিত্র উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করতেন। নবীজীও কখনো সাহাবাদেরকে এ কাজ করতে নিষেধ করেন নি। ثُمَّ إِنَّ عُرْوَةَ جَعَلَ يَرْمُقُ أَصْحَابَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِعَيْنَيْهِ. قَالَ فَوَاللَّهِ مَا تَنَخَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نُخَامَةً إِلاَّ وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمُ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ، وَإِذَا تَوَضَّأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ، وَإِذَا تَكَلَّمَ خَفَضُوا أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَهُ، وَمَا يُحِدُّونَ إِلَيْهِ النَّظَرَ تَعْظِيمًا لَهُ، فَرَجَعَ عُرْوَةُ إِلَى أَصْحَابِهِ، فَقَالَ أَىْ قَوْمِ، وَاللَّهِ لَقَدْ وَفَدْتُ عَلَى الْمُلُوكِ، وَوَفَدْتُ عَلَى قَيْصَرَ وَكِسْرَى وَالنَّجَاشِيِّ وَاللَّهِ إِنْ رَأَيْتُ مَلِكًا قَطُّ، يُعَظِّمُهُ أَصْحَابُهُ مَا يُعَظِّمُ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم مُحَمَّدًا، وَاللَّهِ إِنْ تَنَخَّمَ نُخَامَةً إِلاَّ وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمُ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ وَإِذَا تَوَضَّأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ، وَإِذَا تَكَلَّمَ خَفَضُوا أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَهُ، وَمَا يُحِدُّونَ إِلَيْهِ النَّظَرَ تَعْظِيمًا لَهُ، অতঃপর ‘উরওয়াহ চোখের কোণ দিয়ে সাহাবীদের দিকে তাকাতে লাগল। সে বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো থুথু ফেললে তা সাহাবীদের হাতে পড়তো এবং তা তারা গায়ে মুখে মেখে ফেলতেন। তিনি তাঁদের কোন আদেশ দিলে তা তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে পালন করতেন। তিনি ওযু করলে তাঁর ওযুর পানির জন্য তাঁর সাহাবীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হত। তিনি যখন কথা বলতেন, তখন তাঁরা নীরবে তা শুনতেন এবং তাঁর সম্মানার্থে সাহাবীগণ তাঁর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেন না। অতঃপর ‘উরওয়াহ তার সঙ্গীদের নিকট ফিরে গেল এবং বলল, হে আমার কওম, আল্লাহর কসম! আমি অনেক রাজা-বাদশাহর দরবারে প্রতিনিধিত্ব করেছি। কায়সার, কিসরা ও নাজাশী সম্রাটের দরবারে দূত হিসেবে গিয়েছি; কিন্তু আল্লাহর কসম করে বলতে পারি যে, কোন রাজা বাদশাহকেই তার অনুসারীদের মত এত সম্মান করতে দেখিনি, যেমন মুহাম্মাদের অনুসারীরা তাঁকে করে থাকে। আল্লাহর কসম! আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি থুথু ফেলেন, তখন তা কোন সাহাবীর হাতে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে তারা তা তাদের গায়ে মুখে মেখে ফেলেন। তিনি কোন আদেশ দিলে তারা তা সঙ্গে সঙ্গে পালন করেন; তিনি ওযু করলে তাঁর ওযুর পানি নিয়ে সাহাবীগণের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়; তিনি কথা বললে, সাহাবীগণ নিশ্চুপ হয়ে শুনেন। এমনকি তাঁর সম্মানার্থে তারা তাঁর চেহারার দিকেও তাকান না। (বুখারী-২৭৩১, ২৭৩২) হজ্বের সময় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর চুল মোবারক কাটতেন, সাহাবাগণ তখন নবীজীর কর্তিত চুল মোবারকগুলো জমা করতেন পবিত্রতা ও বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে। একইভাবে নবীজী যখন কোনো পানির মশকের মুখ দিয়ে পানি পান করতেন সাহাবিগণ ঐ মশকের মুখ কেটে নিতেন বরকতের উদ্দেশ্যে। তাই মদিনা শরিফের মাটি, ধুলো-বালি এমনকি ফল-ফলাদি অন্য কোন মাটি, ধুলো-বালি ও ফল-ফলাদিও সাথে তুলনা হয় না। মদিনা শরিফের মাটি, ধুলো-বালি হলো জ্বর, কুষ্ঠ রোগ ও শ্বেত রোগের জন্যে শিফা। وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ النَّبِيِّ – صلى الله عليه وسلم – كَانَ يَقُولُ لِلمَرِيضِ: ” بِسْمِ اللهِ تربَةُ أَرْضِنَا، بِرِيقةِ بَعْضِنَا، يُشْفَى سَقِيمُنَا، بإِذْنِ رَبِّنَا “. হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নিকট আশা রোগীদের চিকিৎসা করতেন এভাবে: “বিসমিল্লাহ, আমাদের এ মাটি আমাদের কারও লালার সাথে মিশ্রিত করে রোগীর জণ্য ব্যবহার করলে আমাদের রোগীরা আরোগ্য লাভ করবে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায়।”( বোখারী, ১১২৪) যেহেতু মদিনা মুনাওয়ারা আল্লাহর কাছে সম্মানিত হারাম হিসেবে পরিগণিত এবং সুন্নাতে নববীতেও মদিনা শরিফ, সেখানকার মাটি এবং বাসিন্দারা এমনকি সেখানে যাদেঁরকে দাফন করা হয়েছে তাঁদেরকে অনেক উচ্চ ফযিলত সম্পন্ন বলে মূল্যায়ন করা হয়। তাই মদীনা শরীফ যিয়ারত যদিও হজের কোন অংশ নয়, কিন্তু অতীব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও পরম সৌভাগ্যের বিষয়। মদীনা শরীফের সীমানা: —————————— পবিত্র মক্কার ন্যায় এ বরকতময় মদীনা শরীফ নগরীকেও হারাম অর্থাৎ সম্মানিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কা মুকাররমাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন এবং তিনি তাকে সম্মানিত করেছেন। আর আমি এই দুই পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত মদীনা শরীফকে হারাম ঘোষণা করলাম।’[মুসলিম : ২/১০০১।] হারামের সীমারেখা হচ্ছে, উত্তরে লম্বায় উহুদ পাহাড়ের পেছনে সাওর পাহাড় থেকে দক্ষিণে আইর পাহাড় পর্যন্ত। পূর্বে হার্রা ওয়াকিম অর্থাৎ কালো পাথর বিশিষ্ট এলাকা থেকে পশ্চিমে হার্রা আল-ওয়াবরা অর্থাৎ কালো পাথর বিশিষ্ট এলাকা পর্যন্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, اَلْمَدِيْنَةُ حَرَمٌ ما بَيْنَ عَيْرٍ إلى ثَوْرٍ ‘মদীনা শরীফের ‘আইর’ থেকে ‘সাওর’-এর মধ্যবর্তী স্থানটুকু হারাম।’[বুখারী : ৬২৫৮; মুসলিম : ২৪৩৩।] নবীজীর সাথে সম্পর্কের কারণে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থান মদিনা মুনাওয়ারা আল্লাহর দরবারে খুবই ঘনিষ্ট। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেন, ্রإِنِّى أُحَرِّمُ مَا بَيْنَ لاَبَتَىِ الْمَدِينَةِ أَنْ يُقْطَعَ عِضَاهُهَا أَوْ يُقْتَلَ صَيْدُهَاগ্ধ.‘আমি মদীনা শরীফের দুই হাররা বা কালো পাথর বিশিষ্ট যমীনের মাঝখানের অংশটুকু হারাম তথা সম্মানিত বলে ঘোষণা দিচ্ছি। এর কোন গাছ কাটা যাবে না বা কোন শিকারী জন্তু হত্যা করা যাবে না।’[মুসলিম : ২৪২৫।] সুতরাং মদীনা শরীফও নিরাপদ শহর। এখানে রক্তপাত বৈধ নয়। বৈধ নয় শিকার করা বা গাছ কাটা। এ শহর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে এরশাদ করেন, ্রلاَ يُهَرَاقَ فِيهَا دَمٌ وَلاَ يُحْمَلَ فِيهَا سِلاَحٌ لِقِتَالٍ وَلاَ يُخْبَطَ فِيهَا شَجَرَةٌ إِلاَّ لِعَلْفٍগ্ধ.‘এখানে রক্তপাত করা যাবে না। এখানে লড়াইয়ের উদ্দেশ্যে অস্ত্র বহন করা যাবে না। ঘাস সংগ্রহের জন্য ছাড়া কোন গাছও কাটা যাবে না।’[মুসলিম : ২/১০০১।] মদীনা শরীফের ফযীলত ————————– মদীনাতুর রাসূলের ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। নিম্নে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হল : ১. মক্কার ন্যায় মদীনা শরীফও পবিত্র নগরী। মদীনা শরীফও নিরাপদ শহর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,্রإِنَّ إِبْرَاهِيْمَ حَرَّم مَكَّةَ، وإنّيْ حَرَّمْتُ الْمَدِيْنَةَগ্ধ ‘হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কা মুকাররমাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন এবং তিনি তাকে সম্মানিত করেছেন। আর আমি এই দুই পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত মদীনা শরীফকে হারাম ঘোষণা করলাম।’[মুসলিম : ২/১০০১।] ২. হযরত আবদুল্লাহ ইবন যায়েদ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রإِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ وَدَعَا لأَهْلِهَا وَإِنِّى حَرَّمْتُ الْمَدِينَةَ كَمَا حَرَّمَ إِبْرَاهِيمُ مَكَّةَ وَإِنِّى دَعَوْتُ فِى صَاعِهَا وَمُدِّهَا بِمِثْلَىْ مَا دَعَا بِهِ إِبْرَاهِيمُ لأَهْلِ مَكَّةَগ্ধ. ‘হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন এবং তার বাসিন্দাদের জন্য দো‘আ করেছেন। যেমনিভাবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন, আমিও তেমন মদীনা শরীফকে হারাম ঘোষণা করেছি। আমি মদীনা শরীফের সা’ ও মুদ-এ বরকতের দো‘আ করেছি যেমন মক্কার বাসিন্দাদের জন্য হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দো‘আ করেছেন।’[বুখারী : ২১২৯; মুসলিম : ১৩৬০। সা‘ ও মুদ দু’টি পরিমাপের পাত্র। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে দু‘আ করেছেন যেন তাতে বরকত হয় এবং তা দিয়ে যেসব বস্তু ওযন করা হয়- সেসব বস্তুতেও বরকত হয়।] ৩. মদীনা শরীফ যাবতীয় অকল্যাণকর বস্তুকে দূর করে দেয়। হযরত জাবের ইবন আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রالْمَدِينَةُ كَالْكِيرِ تَنْفِي خَبَثَهَا وَيَنْصَعُ طِيبُهَاগ্ধ.“মদীনা শরীফ হল হাপরের মতো, এটি তার যাবতীয় অকল্যাণ দূর করে দেয় এবং তার কল্যাণকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে।’[বুখারী : ১৮৮৩; মুসলিম : ১৩৮৩।] ৪. শেষ যামানায় ঈমান মদীনা শরীফে এসে একত্রিত হবে এবং এখানেই তা ফিরে আসবে। হযরত আবূ হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রإنَّ الإِيْمَانَ لَيَأْرِزُ إلى المَدِيْنَةِ كما تَأْرِزُ الحيَّةُ إلى جُحْرِهاগ্ধ ‘নিশ্চয়ই ঈমান মদীনা শরীফের দিকে ফিরে আসবে যেমনিভাবে সাপ তার গর্তে ফিরে আসে।’[বুখারী : ১৮৬৭; মুসলিম : ১৪৭।] ৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা শরীফের জন্য বরকতের দো‘আ করেছেন। হযরত আনাস ইবন মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রاَللَّهُمَّ اجْعَلْ بِالْمَدِينَةِ ضِعْفَيْ مَا جَعَلْتَ بِمَكَّةَ مِنَ الْبَرَكَةِগ্ধ.‘হে আল্লাহ, আপনি মক্কায় যে বরকত দিয়েছেন মদীনা শরীফে তার দ্বিগুণ বরকত দান করুন।’[বুখারী : ১৮৮৫; মুসলিম ১৩৬০।] হযরত আবূ হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রاَللَّهمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْ ثَمَرِنا، وَبَارِكْ لَنَا فِيْ مَدِيْنَتِنَا، وَبَارِكْ لَنَا فِيْ صَاعِنَا، وَبَارِكْ لَنَا فِي مُدِّنَاগ্ধ. ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ফল-ফলাদিতে বরকত দাও। আমাদের এ মদীনা শরীফে বরকত দাও। আমাদের সা’তে বরকত দাও এবং আমাদের মুদ-এ বরকত দাও।’[মুসলিম : ১৩৭৩।] হযরত আবদুল্লাহ ইবন যায়েদ রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রإِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ وَدَعَا لأَهْلِهَا وَإِنِّى حَرَّمْتُ الْمَدِينَةَ كَمَا حَرَّمَ إِبْرَاهِيمُ مَكَّةَ وَإِنِّى دَعَوْتُ فِى صَاعِهَا وَمُدِّهَا بِمِثْلَىْ مَا دَعَا بِهِ إِبْرَاهِيمُ لأَهْلِ مَكَّةَগ্ধ. ‘হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন এবং তার বাসিন্দাদের জন্য দো‘আ করেছেন। মক্কাকে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেমন হারাম ঘোষণা দিয়েছেন আমিও তেমন মদীনা শরীফকে হারাম ঘোষণা করেছি। আমি মদীনা শরীফের সা’ তে এবং মুদ-এ বরকতের দো‘আ করছি যেমন মক্কার বাসিন্দাদের জন্য হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দো‘আ করেছেন।’[বুখারী : ২১২৯; মুসলিম : ১৩৬০।] ৬. মদীনা শরীফে মহামারী ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রعَلَى أَنْقَابِ الْمَدِيْنَةِ مَلاَئِكَةٌ، لاَ يَدْخُلُهَا الطَّاعُونُ وَلاَ الدَّجَّالُগ্ধ.‘মদীনা শরীফের প্রবেশ দ্বারসমূহে ফেরেশতারা প্রহরায় নিযুক্ত আছেন, এতে মহামারী ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না।’[বুখারী : ১৮৮০; মুসলিম : ১৩৭৯।] ৭. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা শরীফে মৃত্যু বরণ করার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রمَنْ اسْتَطَاعَ أَنْ يَمُوْتَ بِالْمَدِيْنَةِ فَلْيَمُتْ بِهَا فَإِنِّيْ أَشْفَعُ لِمَنْ يَمُوْتُ بِهَاগ্ধ.‘যার পক্ষে মদীনা শরীফে মৃত্যুবরণ করা সম্ভব সে যেন সেখানে মৃত্যুবরণ করে। কেননা মদীনা শরীফে যে মারা যাবে আমি তার পক্ষে সুপারিশ করব।’[মুসলিম : ১৩৭৪।] ৮. নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা শরীফকে হারাম ঘোষণার প্রাক্কালে এর মধ্যে কোন জুলুম বা অন্যায় ঘটনা ঘটানোর ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবধান করেছেন। হযরত আলী ইবন আবী তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রالمَدِينَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَيْرٍ إلى ثَوْرٍ، مَنْ أَحْدَثَ فيْهَا حَدَثاً أَو آوَى مُحدِثاً فَعَلَيهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالمَلاَئِكَةِ وَالنَاسِ أَجمَعِينَ، لاَ يَقبَلُ اللهٌ مِنهُ صَرْفاً وَلَا عَدْلاًগ্ধ. ‘মদীনা শরীফ ‘আইর’ থেকে ‘সাওর’ পর্যন্ত হারাম। যে ব্যক্তি মদীনা শরীফে কোন অন্যায় কাজ করবে অথবা কোন অন্যায়কারীকে আশ্রয় প্রদান করবে তার ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সমস্ত মানুষের লা‘নত পড়বে। তার কাছ থেকে আল্লাহ কোন ফরয ও নফল কিছুই কবুল করবেন না।’[বুখারী : ১৮৭০; মুসলিম : ১৩৭০।] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- وَلَا يُرِيدُ أَحَدٌ أَهْلَ الْمَدِينَةِ بِسُوءٍ، إِلَّا أَذَابَهُ اللَّهُ فِي النَّارِ ذَوْبَ الرَّصَاصِ أَوْ ذَوْبَ الْمِلْحِ فِي الْمَاءِ ‘যে ব্যক্তি মদিনাবাসীদের ক্ষতি করতে চেষ্টা করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে এমনভাবে শাস্তি দিবেন যেভাবে সীসা আগুনে এবং লবণ পানিতে গলে যায়। (মুসলিম শরিফ,খ.২,পৃ.৯৯২) এভাবে অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি ইরশাদ করেন- عَنْ سَعْدٍ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: لَا يَكِيدُ أَهْلَ الْمَدِينَةِ أَحَدٌ، إِلَّا انْمَاعَ كَمَا يَنْمَاعُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ ‘যে ব্যক্তি মদিনাবাসীর সাথে অন্যায়ভাবে ষড়যন্ত্র করবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে যেভাবে লবণ পানিতে গলে যায়’। (বুখারি শরিফ,খ.৩,পৃ.২১) মদীনা শরীফে অনেক স্মৃতি বিজড়িত ও ঐতিহাসিক স্থানের যিয়ারত করতে হাদীসে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। সেগুলো হলো : মসজিদে নববী শরীফ, মসজিদে কুবা, জান্নাতুল বাকী’, উহুদের শহীদদের মাযার ইত্যাদি। নিচে সংক্ষিপ্তভাবে এসব স্থানের ফযীলত ও যিয়ারতের আদব উল্লেখ করা হল। মসজিদে নববী শরীফের ফযীলত: ———————————— মসজিদে নববী শরীফের রয়েছে ব্যাপক মর্যাদা ও অসাধারণ শ্রেষ্ঠত্ব। কুরআন ও হাদীসে এ সম্পর্কে একাধিক ঘোষণা এসেছে। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿لَّمَسۡجِدٌ أُسِّسَ عَلَى ٱلتَّقۡوَىٰ مِنۡ أَوَّلِ يَوۡمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِۚ فِيهِ رِجَالٞ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُواْۚ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُطَّهِّرِينَ ١٠٨ ﴾ [التوبة: ١٠٨] “অবশ্যই যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে তা বেশী হকদার যে, আপনি সেখানে সালাত কায়েম করতে দাঁড়াবেন। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।’[তওবা : ১০৮।] আল্লামা সামহুদী বলেন, ‘কুবা ও মদীনা শরীফ- উভয় স্থানের মসজিদ প্রথম দিন থেকেই তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত। উক্ত আয়াতে তাই উভয় মসজিদের কথা বলা হয়েছে।’[সফিউর রহমান মুবারকপুরী, তারীখুল মাদীনাতিল মুনাওয়ারা : পৃ. ৭৫।] মসজিদে নববী শরীফের আরেকটি ফযীলত হলো, এতে এক নামায পড়লে এক হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার নামায পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়। হযরত ইবন উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রصَلاةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلاةٍ فِيمَا سِوَاهُ، إِلا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَগ্ধ‘আমার এ মসজিদে এক সালাত আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাত আদায় করার চেয়েও উত্তম।’[বুখারী : ১১৯০; মুসলিম : ১৩৯৪।] হযরত আবূ দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রاَلصَّلاَةُ فِيْ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ بِمِائَةِ أَلْفِ صَلاَةٍ وَالصَّلاَةُ فِيْ مَسْجِدِيْ بِأَلْفِ صَلاَةٍ وَالصَّلاَةُ فِيْ بَيْتِ الْمُقَدَّسِ بِخَمْسِمِائَةٍ صَلاَةٍগ্ধ.“মসজিদে হারামে এক নামায এক লাখ সালাতের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববী) এক নামায এক হাজার সালাতের সমান এবং বাইতুল মাকদাসে এক নামায পাঁচশ সালাতের সমান।’[মাজমাউয যাওয়াইদ : ৪/১১।] হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, عن أنس بن مالك ، قال : قال رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” صَلاةُ الرَّجُلِ فِي بَيْتِهِ بِصَلاةٍ ، وَصَلاَتُهُ فِي مَسْجِدِ الْقَبائِلِ بِخَمْسٍ وَعِشْرِينَ صَلاَةٍ ، وَصَلاَتُهُ فِي الْمَسْجِدِ الَّذِي يُجمَّعُ فِيهِ بِخَمٍسِ مِئَةِ صَلاةٍ ، وَصَلاَةٌ فِي الْمسْجِدِ الأَقْصَى بِخَمْسِينَ أَلْفَ صَلاَةٍ ، وَصَلاَةٌ فِي مَسْجِدِي بِخَمْسِينَ أَلْفِ صَلاةٍ ، وَصَلاَةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرامِ بِمئَةِ أَلْفِ صَلاَةٍ ” ) سنن ابن ماجه গ্ধ كتاب إقامة الصلاة والسنة فيها গ্ধ باب ما جاء في الصلاة في المسجد الجامع. مرقاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح গ্ধ كتاب الصلاة গ্ধ باب المساجد ومواضع الصلاة ৭৫২ “নিজ ঘরে যদি কেউ নামায পড়ে তাহলে তার এক নামাযের সাওয়াব, নিজ গোত্রের মসজিদে পঁচিশ নামাযের, জুমা হয় এমন মসজিদে পাঁচ শত, বাইতুল মাকদাসে এক নামায পঞ্চাশ হাজার নামায পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়, আমার এই মসজিদে (মসজিদে নববী শরীফে) এক নামায পঞ্চাশ হাজার সালাতের সমান এবং মসজিদে হারামে এক নামায এক লাখ সালাতের সমান।” [ইবনু মাযা, হা-১৪১৩, মিশকাত-৭৫২] মসজিদে নববী শরীফের ফযীলত সম্পর্কে অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রلا تُشَدُّ الرِّحَالُ إلاَّ إلى ثَلاثَةِ مَسَاجِدَ: اَلْمَسْجِدِ الْحَرَام، وَمَسْجِدِيْ هَذَا، وَالْمَسْجِدِ الأَقْصَىগ্ধ.‘তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে (অধিক সওয়াবের আশায়) সফর করা জায়েয নেই: মসজিদুল হারাম, আমার এ মসজিদ ও মসজিদুল আক্সা।’[বুখারী : ১১৮৯, মুসলিম : ১৩৯৭।] এ হাদীস শরীফে অধিক সওয়াবের আশায় তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোনও মসজিদে নামাযের উদ্দেশ্যে সফর করাকে নিষেধ করা হয়েছে, কেননা অন্যান্য সকল মসজিদে নামায পড়ার সাওয়াব সমান। তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও সফর করাকে নিষেধ করা হয়নি, যদি তাই হতো তা’হলে ব্যাবসা-বানিজ্য, চাকুরী-বাকুরী, চিকিৎসা, আত্মীয়-স্বজনের সাক্ষাতসহ সবধরণের সফর নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, যা হাদীস শরীফের উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। মুসনাদ-এ আহমদ এ হযরত শহর ইবনু হাওশাব রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, شَهْرِ بْنِ حَوْشَبٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا سَعِيدٍ وَذَكَرَ عِنْدَهُ الصَّلَاةَ فِي الطُّورِ فَقَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لا ينبغي للمصلي أن يشد رحاله إِلَى مَسْجِدٍ تُبْتَغَى فِيهِ الصَّلَاةُ غَيْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَالْمَسْجِدِ الْأَقْصَى وَمَسْجِدِي (وَشَهْرٌ حَسَنُ الْحَدِيثِ. أخرجه أحمد في المسند (৩ / ৬৪، ৯৩) واللفظ له، وأبو يعلى في مسنده (২ / ৪৮৯. الزيارة النبوية في ضوء الكتاب والسنة لفضيلة الدكتور محمد علوي المالكي (صـ ৮৩ ) “কোনও মুসল্লীর জন্য নামাযের আদায়ের লক্ষে তিনটি মসজিদ তথা মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আক্সা ও আমার এ মসজিদ ব্যতিরেকে অন্য কোনও মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা উচিৎ নয়। (মুসনাদ-এ আহমদ, খ-৩, পৃ-৬৪, ৯৩. মুসনাদ-এ আবু ইয়ালা খ-২, পৃ-৪৮৯) হযরত আবূ হুরাইয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রمَنْ جَاءَ مَسْجِدِي هَذَا ، لَمْ يَأْتِهِ إِلاَّ لِخَيْرٍ يَتَعَلَّمُهُ أَوْ يُعَلِّمُهُ ، فَهُوَ بِمَنْزِلَةِ الْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللهِ ، وَمَنْ جَاءَ لِغَيْرِ ذَلِكَ ، فَهُوَ بِمَنْزِلَةِ الرَّجُلِ يَنْظُرُ إِلَى مَتَاعِ غَيْرِهِগ্ধ.‘যে আমার এই মসজিদে কেবল কোনো কল্যাণ শেখার জন্য কিংবা শেখানোর জন্য আসবে, তার মর্যাদা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য। পক্ষান্তরে যে অন্য কোন উদ্দেশ্যে আসবে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে অন্যের মাল-সামগ্রীর প্রতি তাকায়।’[ইবন মাজাহ্ : ২৭৭।] হযরত আবূ উমামা আল-বাহেলী রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রمَنْ غَدَا إِلَى الْمَسْجِدِ لا يُرِيدُ إِلا أَنْ يَتَعَلَّمَ خَيْرًا أَوْ ُيعلِّمَهُ، كَانَ لَهُ كَأَجْرِ حَاجٍّ تَامًّا حِجَّتُهُগ্ধ. ‘যে ব্যক্তি একমাত্র কোন কল্যাণ শেখা বা শেখানোর উদ্দেশ্যে মসজিদে (নববী শরীফে) আসবে, তার জন্য পূর্ণ একটি হজের সওয়াব লেখা হবে।’[মাজমাউয যাওয়াইদ : ১/১২৩।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হুজরা মুবারক তথা সাইয়েদা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহার ঘর যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাফন করা হয়েছে সে রবকতময় স্থান ও তাঁর মিম্বর শরীফের মাঝখানের জায়গাটুকুকে জান্নাতের অন্যতম উদ্যান বলা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ্রمَا بَينَ بَيْتِيْ ومِنْبَرِيْ رَوْضَةٌ مِن رِيَاضِ الْجَنَّةٍগ্ধ ‘আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মাঝখানের অংশটুকু রওদাতুন মিন রিয়াদিল জান্নাত (জান্নাতের উদ্যানসমুহের একটি উদ্যান)।’[বুখারী : ১১২০; মুসলিম : ২৪৬৩।] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওযা শরীফ ও এর আশেপাশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন রয়েছে। এ সবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পূর্ব দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুজরা শরীফ। তার পশ্চিম দিকের দেয়ালের মধ্যখানে তাঁর মিহরাব শরীফ এবং পশ্চিমে মিম্বর শরীফ। এখানে বেশ কিছু পাথরের খুঁটি রয়েছে। যে সবের সাথে জড়িয়ে আছে হাদীস ও ইতিহাসের কিতাবে বর্ণিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ও স্মৃতি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এসব খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। এগুলো ছিল- ১. উসতুওয়ানা আয়েশা বা আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু -এর খুঁটি। ২. উসতুওয়ানাতুল-উফূদ বা প্রতিনিধি দলের খুঁটি। ৩. উসতুওয়ানাতুত্তাওবা বা তওবার খুঁটি। ৪. উসতুওয়ানা মুখাল্লাকাহ বা সুগন্ধি জালানোর খুঁটি। ৫. উসতুওয়ানাতুস-সারীর বা খাটের সাথে লাগোয়া খুঁটি এবং উসতুওয়ানাতুল-হারছ বা মিহরাছ তথা পাহাদারদের খুঁটি। মুসলিম শাসকগণের কাছে এই রওযা মুবারক ছিল বরাবর খুব গুরুত্ব ও যতেœর বিষয়। উসমানী সুলতান সলীম রওযাশরীফের খুঁটিগুলোর অর্ধেক পর্যন্ত লাল-সাদা মারবেল পাথর দিয়ে মুড়িয়ে দেন। অতপর আরেক উসমানী সুলতান আবদুল মাজীদ এর খুঁটিগুলোর সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করেন। ১৯৯৪ সালে সৌদি সরকার পূর্ববর্তী সকল বাদশাহর তুলনায় উৎকৃষ্ট পাথর দিয়ে এই রওযা মুবারকের খুঁটিগুলো ঢেকে দেন এবং রওযার মেঝেতে দামী কার্পেট বিছিয়ে দেন।
রসুলে পাক সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে দরবারে যেয়ারতের উদ্দ্যশে সফর পর্বঃ০১
পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।