হজরতে মুগিরা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর প্রতি আমীরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর পাঠানো চিঠি এবং তাতে আলী ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে গালাগাল দেয়া নিয়ে শিয়া, রাফেজিদের অপবাদ এবং জবাব।
🖋Sifat Sultan Alif
___________________________________
সাহাবি বিদ্বেষী লোকেরা বিশেষত, সুন্নি নামধারী রাফেজিরা আমীরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর প্রতি আরেকটি অপবাদ দিয়ে থাকে যে, হজরত মুগিরা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর প্রতি লিখা চিঠিতে আমীরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ নাকি হজরত আলী ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে গালিগালাজ করেছেন। মূলত এই অপবাদের উপর তাঁরা বেশকিছু রেওয়ায়েত উপস্থাপন করলেও আফসোসের সাথে বলতে হয় একটি মাত্র রেওয়ায়েত সহীহ বা হাসান পর্যায়ের পাওয়া যায়নি। আমি একটি একটি করে রেওয়ায়েতগুলো তাহকীক আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ্।
মূলত হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ হতে এটি কাত’আন প্রমাণিত নই যে তিনি মাওলা আলী ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে গালাগাল করেছেন।
এটি মূলত শিয়া, রাফেদ্বী এবং কিছু নামধারী সুন্নিদের দেয়া অপবাদ এবং মিথ্যাচার। আফসোসের সহিত বলতে হচ্ছে যাদের মাঝে শহীদে মিল্লাত নুরুল ইসলাম ফারুকি রহ: এর মেজ সন্তান এবং ছোট সন্তান অন্যতম। প্রমাণসাপেক্ষে কিছু স্ক্রিনশট দেওয়া হয়েছে এবং তাদের প্রোফাইলে গেলেও দেখতে পাবেন তাঁরা আহলে সুন্নাতের অনুসারী দাবী করেও হজরত আমীরে মুয়াবীয়াসহ অন্যান্য সাহাবীদের কিভাবে কট্টর সমালোচনা করে যাচ্ছে। সুন্নিজামাতের জন্য শায়খ আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকি রহ: এর অবদান চির অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কিন্তু তাঁর এ নিঃস্বার্থ অবদানকে খুদ তাঁর সন্তানরাই আজ উম্মাহের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করছে! শায়খ শহীদে মিল্লাত রহ: এর শাহাদাতকে কলঙ্কিত করে তুলছে। আহলুস সুন্নাহের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে তাঁরা প্রকাশ্যে শিয়াবাদ চর্চায় মত্ত। আমাদের ওলামাগণের অসচেতনতাই তাঁরা বহুলাংশে সফলও হচ্ছে বটে।
শিয়াবাদের ইতিহাস বিবেচনা করলে বুঝা যাবে জাল, বানোয়াট এবং ভ্রান্ত ইতিহাস তথাপি আসহাব, আসলাফ, আইম্মাদের কট্টর সমালোচনা, গালাগাল নিয়েই তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হত ; যা আজ পর্যন্ত তাদের আচারব্যবহারে পরিলক্ষিত হয়।
ঐ’সব শিয়া, রাফেদ্বীদের অনুরোধ করবো যে, তাঁরা যাতে আগে মুহাদ্দিসদের উসূল তথাপি উসূলে হাদীস, আসমাউ রিজাল শিখে আসুক। আরেকটি কথা! দালায়েল হতে হবে একমাত্র সহীহ, হাসান গ্রহণযোগ্য। বিপরীতে কোন দঈফ, কাযযাব, মাজরুহ, শিয়া রাফেজি মার্কা রাবীর বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নই।
প্রাসঙ্গিক আলোচনাই যাওয়া যাক….
সুহাইম বিন হাফস হতে বর্ণিত,
ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺍﻟْﻤَﺪَﺍﺋِﻨِﻲُّ ﻋَﻦْ “ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻓَﺎﺋِﺪٍ ﻭَﺳُﺤَﻴْﻢِ ﺑْﻦِ ﺣَﻔْﺺٍ ” ﻗَﺎﻻ : ﻛَﺘَﺐَ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻤُﻐِﻴﺮَﺓِ ﺑْﻦِ ﺷُﻌْﺒَﺔَ : ﺃَﻇْﻬَﺮَ ﺷَﺘْﻢَ ﻋَﻠِﻲٍّ ﻭَﺗَﻨَﻘُّﺼَﻪُ، ﻓَﻜَﺘَﺐَ ﺇِﻟَﻴْﻪِ : ﻣَﺎ ﺃُﺣِﺐُّ ﻟَﻚَ ﻳَﺎ ﺃَﻣِﻴﺮَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﺃَﻥْ ﻛُﻠَّﻤَﺎ ﻋَﺘَﺒْﺖَ ﺗَﻨَﻘَّﺼْﺖَ، ﻭَﻛُﻠَّﻤَﺎ ﻏَﻀِﺒْﺖَ ﺿَﺮَﺑْﺖَ، ﻟَﻴْﺲَ ﺑَﻴْﻨَﻚَ ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﺫَﻟِﻚَ ﺣَﺎﺟِﺰٌ ﻣِﻦْ ﺣِﻠْﻤِﻚَ ﻭَﻻ ﺗَﺠَﺎﻭُﺯٌ ﺑِﻌَﻔْﻮِﻙَ .
মুয়াবীয়া ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ মুগিরা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে একটি চিঠি লিখলেন। যেখানে আলী ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে বারংবার গালাগাল দেয়া হয়েছে এবং কট্টর মন্দ কথা বলা হয়েছে। চিঠির উত্তরে হজরতে মুগিরা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ লিখলেন, হে আমীরুল মুমিনীন..! এটি আপনার শান নই যে, আপনি এভাবে কাউকে গালাগাল এবং মন্দ কথা বলবেন, রাগ করবেন এবং মারবেন। আপনার বিবেক কি আপনাকে বাঁধা দেইনা.? আপনি ধীর স্বস্তিতে কেন কাজ করেন না..!
( ﺃﻧﺴﺎﺏ ﺍﻷﺷﺮﺍﻑ ﺍﻟﺒﻼﺫﺭﻱ ৫/২৩ )
* রেওয়ায়েতটির তাহকীক – এই বর্ণনা কয়েকটি কারণে মওজু।
প্রথমত, এই ﺃﻧﺴﺎﺏ ﺍﻷﺷﺮﺍﻑ ﻟﻠﺒﻼﺫﺭﻱ কিতাবটি প্রমাণিত নই। বরং এটি ইমাম বালাজুরি ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ দিকে মানসুব করা হয়েছে।
* যেমন, ইমাম ইবনে কাসীর ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ বলেন,
ﺍﻟﻤﻨﺴﻮﺏ ﺇﻟﻴﻪ
এটি ইমাম বালাজুরি ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ এর দিকে মানসুব করা হয়েছে।
( ﺍﻟﺒﺪﺍﻳﺔ ﻭﺍﻟﻨﻬﺎﻳﺔ ১১/৭৫ )
অতএব এটি গ্রহণযোগ্য নই। এছাড়াও আরও কয়েকটি কারণ দেখা যায় –
১/ আনসাব উল আশরাফ কিতাবটির মূল বা আসল সনদ নেই।
২/ বালাজুরি থেকে এই কিতাবের রাবীর নাম অজানা।
৩/ আনসাব উল আশরাফ কিতাবের বহুসংখ্যক রেওয়ায়েত সহীহ হাদীসের খেলাফ হওয়ার কারণে এটি মুনকার এবং মওজু প্রমাণিত হয়।
যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, এই কিতাব সহীহ.! তবুও এই রেওয়ায়েত মওজু। এটার দু’টি কারণ –
১/ প্রথমত,
ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻓَﺎﺋِﺪٍ ﻭَﺳُﺤَﻴْﻢِ ﺑْﻦِ ﺣَﻔْﺺٍ
এই দুইজন মাজহুল এবং দুজনই হজরত মুয়াবীয়া ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর যুগ পাইনি।
২/ দ্বিতীয়ত, বালাজুরির কাছে মুয়াবীয়া রাযি: এর বিরুদ্ধে মওজু রেওয়ায়েত ছিলো। যেমন, বালাজুরি বলেন –
ﻗَﺎﻝَ ﻟﻲ ﻫﺸﺎﻡ ﺑْﻦ ﻋﻤﺎﺭ : ﻧﻈﺮﺕ ﻓِﻲ ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔ ﻋﻨﺪﻛﻢ ﻓﻮﺟﺪﺕ ﺃﻛﺜﺮﻫﺎ ﻣﺼﻨﻮﻋًﺎ .
আমাকে হিশাম বিন আম্মার বলেছেন যে, আপনার কাছে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর বিরুদ্ধে হাদীস রয়েছে। যার মাঝে বেশিরভাগ রেওয়ায়েতই বানোয়াট।
( ﺃﻧﺴﺎﺏ ﺍﻷﺷﺮﺍﻑ ﻟﻠﺒﻼﺫﺭﻱ ৫/৭৪ )
শিয়া, রাফেদ্বীরা সাহাবা ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর বিরোধীতায় এতটাই সীমা অতিক্রম করেছে যে, সাহাবাদের ফাজায়েল সম্পর্কিত হাদীসগুলোকে খুদ সাহাবাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে এবং তাদের মতানুসারে এমন একটি হাদীস সহীহ মুসলিমেও বর্ণিত হয়েছে। কষ্ট লাগে তখন, যখন দেখা যায় এসব দলিল আমাদের জাম’আতের ( আহলুস সুন্নাহ) কিছু নামধারী সুন্নিরা! শিয়া, রাফেদ্বীদের অনুসরণ, অনুকরণে সাহাবীদের বিরুদ্ধে উপস্থাপন করছে এবং তাঁরা এটা প্রমাণ করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালায় যে, সহীহ মুসলিমের ঐ হাদীসে রাসুলুল্লাহ ﷺ ক্বাতীবে ওহী, উম্মাতের মামা সাইয়্যিদুনা আমীরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে বদ’দোয়া তথা লানত দিয়েছেন। (মাআ’জাল্লাহ)।
এই হাদীসের অপব্যাখ্যা করে শিয়া, রাফেদ্বীরা মুহাদ্দীসদের বিরুদ্ধেও ঘৃণ্য মিথ্যাচার করেছেও বটে। যে সব ব্যক্তিরা ঐ হাদীসটি পেশ করে হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর সমালোচনা বা তাকে গালমন্দ করছে! ওদের হেদায়াত কামনা এবং যারা এটা নিয়ে ভ্রান্তিজনক পরিস্থিতির স্বীকার, তাদের ভ্রান্ততা দূর করার সুবাদে আজকের এই লিখা। আল্লাহ সুবহানা ওয়াতআ’লা আমাদের সত্য গ্রহণে কবুল করুন। আমীন।
তাদের দেয়া হাদীস এবং তাঁর অনুবাদ নিম্নরূপ –
حدثنا : محمد بن المثنى العنزي ح ، وحدثنا : إبن بشار واللفظ لإبن* المثنى قالا ، حدثنا : أمية بن خالد ، حدثنا : شعبة ، عن أبي حمزة القصاب ، عن إبن عباس ، قال : كنت ألعب مع الصبيان فجاء رسول الله صلي الله عليه و سلم فتواريت خلف باب قال : فجاء فحطأني حطأة وقال : أذهب وإدع لي معاوية قال : فجئت فقلت : هو يأكل قال : ثم قال : لي أذهب فإدع لي معاوية قال : فجئت فقلت : هو يأكل فقال : لا أشبع الله بطنه قال : إبن المثنى قلت لأمية :ما حطأني قال : قفدني قفدة ، حدثني : إسحق بن منصور ، أخبرنا : النضر بن شميل ، حدثنا : شعبة ، أخبرنا : أبو حمزة سمعت إبن عباس يقولا : كنت ألعب مع الصبيان فجاء رسول الله صلي الله عليه و سلم فإختبأت منه فذكر بمثله.
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমা থেকে হাদিস শরীফটি বর্ণিত তিনি বলেন আমি বাচ্চাদের নিয়ে খেলছিলাম নবী এসে আমাকে বললেন তুমি গিয়ে মুয়াবিয়াকে ডেকে আনো তখন আমি ডাকতে গেলাম এবং বললাম প্রিয়নবী আপনাকে ডাকছেন তখন তিনি জবাব দিলেন- আমি খাচ্ছি এখন যেতে পারবোনা। প্রিয়নবীকে এটা বলাতে আবারো আমাকে পাঠালেন তখনও তিনি বললেন আমি খাচ্ছি এখন যেতে পারবোনা অবশেষে প্রিয়নবী তাকে অভিশাপ দিয়ে বললেন “আল্লাহ তার পেট কখনো ভরাবেন না”।
( সহীহ মুসলিম -২৬০৪)
* হাদীসটির তাহকীক –
_____________________
* প্রথমত, উপরের হাদীসটি সহীহ তথা যথাযোগ্য সঠিক, কিন্তু এর অনুবাদে ঘৃণ্য মিথ্যাচার করা হয়েছে।
* দ্বিতীয়ত, শিয়া, রাফেদ্বীদের মূল বক্তব্য হল যে, রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাললাম এই হাদীসে হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া রাযি: কে ” لا أشبع الله بطنه ” বলে লা’নত তথা অভিশাপ দিয়েছেন। ( লানাতুল্লাহে আ’লাল কাযেবীন) মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত।
* হাদীসটির অনুবাদে মিথ্যাচার –
________________________
শিয়া, রাফেদ্বীরা হাদীসটিকে বানোয়াট এবং নিজেদের মত করে অনুবাদের মাধ্যমে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে। মূলত, মুসলিম শরীফের এই হাদীসটির মূল অনুবাদের সাথে শিয়া, রাফেদ্বীদের অনুবাদের আকাশ’পাতাল বিস্তর পার্থক্য। চলুন প্রকৃত অনুবাদ দেখে নিই –
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻤُﺜَﻨَّﻰ ﺍﻟْﻌَﻨَﺰِﻱُّ، ﺡ ﻭَﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﺑْﻦُ ﺑَﺸَّﺎﺭٍ، – ﻭَﺍﻟﻠَّﻔْﻆُ ﻻِﺑْﻦِ ﺍﻟْﻤُﺜَﻨَّﻰ – ﻗَﺎﻻَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃُﻣَﻴَّﺔُ ﺑْﻦُ ﺧَﺎﻟِﺪٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺷُﻌْﺒَﺔُ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺣَﻤْﺰَﺓَ ﺍﻟْﻘَﺼَّﺎﺏِ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻛُﻨْﺖُ ﺃَﻟْﻌَﺐُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺼِّﺒْﻴَﺎﻥِ ﻓَﺠَﺎﺀَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﺘَﻮَﺍﺭَﻳْﺖُ ﺧَﻠْﻒَ ﺑَﺎﺏٍ – ﻗَﺎﻝَ – ﻓَﺠَﺎﺀَ ﻓَﺤَﻄَﺄَﻧِﻲ ﺣَﻄْﺄَﺓً ﻭَﻗَﺎﻝَ ” ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ – ﻗَﺎﻝَ – ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲَ ” ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” . ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﺍﻟْﻤُﺜَﻨَّﻰ ﻗُﻠْﺖُ ﻷُﻣَﻴَّﺔَ ﻣَﺎ ﺣَﻄَﺄَﻧِﻲ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﻔَﺪَﻧِﻲ ﻗَﻔْﺪَﺓً
অনুবাদ –
ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন , একবার আমি শিশুদের সাথে খেলছিলাম । এ সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ সেখানে এসে উপস্থিত হলেন । আমি তখন দরজার আড়ালে লুকিয়ে রইলাম । অতঃপর নবীজি ﷺ এসে আমাকে স্নেহভরে চাপড় দিয়ে বললেন , যাও , মুয়াবীয়াকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো । ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ গিয়ে দেখেন যে, মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ খাচ্ছেন। ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ বলেন , অতঃপর আমি নবীজী ﷺ এর কাছে ফিরে এসে বললাম , তিনি ( মূয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ) খাচ্ছেন । তখন নবীজি ﷺ আবার আমাকে বললেন , আবার যাও, মূয়াবীয়াকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো। এবারও মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে তিনি খেতে দেখলেন, ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ বলেন, এবারও আমি গিয়ে ফিরে এসে বললাম , তিনি খাচ্ছেন । এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন , “আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক ।
( 2604 صحيح مسلم)
* হাদীসটির অনুবাদে ঘৃণ্য মিথ্যাচার –
_______________________________
উল্লেখ্য যে, এই হাদীসের ( আরবী মতনানুসারে) কোথাও লিখা নেই যে, ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে এটি বলেছেন যে, আল্লাহর রাসূল ﷺ আপনাকে ডাকছেন এবং এর উত্তরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এটাও বলেননি যে, আমি খাচ্ছি এখন যেতে পারবোনা..! লানাতুল্লাহে আলাল কাযেবীন, মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত। কতবড় মুনাফিক হলে অনুবাদে খেয়ানত করতে পারে তাঁর উপর ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এবং হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর উপর এতবড় তোহমৎ লাগাতে পারে। বরংচ, এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন –
ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” .
ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞ ”
যাও মুয়াবীয়াকে ডেকে নিয়ে আসো। ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ গিয়ে দেখেন যে, মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ খাচ্ছেন, তাই তিনি ফিরে এসে বল্লেন যে, তিনি খাচ্ছেন। আবারও আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেন,
ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﻟِﻲَ ” ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻭَﺍﺩْﻉُ ﻟِﻲ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ” . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺠِﺌْﺖُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻫُﻮَ ﻳَﺄْﻛُﻞ
যাও আবারও ডেকে আসো… এবারও ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ দেখেন যে, মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ খাচ্ছেন। তাই তিনি ফিরে এসে বল্লেন, তিনি খাচ্ছেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ বল্লেন, ﻓَﻘَﺎﻝَ ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক।
অতএব, এই হাদীসে কোথাও প্রমাণ হয়না যে, হজরতে ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ কে গিয়ে এই খবর দিলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে ডাকছেন বা এটাও প্রমাণ হয়না যে, মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ উত্তরে, ” আমি খাচ্ছি, এখন যেতে পারবোনা ” বলেছেন। এমন কোন বক্তব্যও হাদীসে উল্লেখ নেই। মূর্খরা হাদীস বুঝেনা ওরা এটাও দেখেনা যে, ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে ডাকেনি বরং তিনি হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে খেতে দেখে ফিরে আসেন। যদি হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ রাসূলুল্লাহ ﷺ ডাকার ব্যাপারটা জানাতেন তবেঁ অবশ্যই হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর বক্তব্যটাও ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীসে আনতেন বরং কথা হয়েছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর মাঝে। যেমনটা আমি তাহকীক করে দেখালাম।
অতএব হাদীসটিতে স্পষ্টতরভাবে বুঝা গেলো, হজরতে আমীরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে ডাকার ব্যাপারটা জানতেন না। কারণ ইবনে আব্বাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে খেতে দেখে ফিরে আসেন। এবার হয়তোবা কৌতূহলজনক প্রশ্ন জাগতে পারে আপনাদের..! যদি আমীরে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ নাই বা জানতেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে ডাকছেন! তবেঁ কেনইবা আল্লাহর রাসূল ﷺ মুয়াবীয়া রাযি:কে ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” তথা ” আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক ” বল্লেন..?
* হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাললল্লাহু আলাইহে মুয়াবীয়া রাযি:কে ” ” ﻻَ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﻄْﻨَﻪُ ” তথা ” আল্লাহ তাঁর পেট না ভরাক ” বলার কারণ –
_____________________________
* ইমাম নববী রহ: এই সম্পর্কে লিখেন –
ﺃَﻥَّ ﻣَﺎ ﻭَﻗَﻊَ ﻣِﻦْ ﺳَﺒِّﻪِ ﻭَﺩُﻋَﺎﺋِﻪِ ﻭَﻧَﺤْﻮِﻩِ ﻟَﻴْﺲَ ﺑِﻤَﻘْﺼُﻮﺩٍ ﺑَﻞْ ﻫُﻮَ ﻣِﻤَّﺎ ﺟَﺮَﺕْ ﺑِﻪِ ﻋَﺎﺩَﺓُ ﺍﻟْﻌَﺮَﺏِ ﻓِﻲ ﻭَﺻْﻞِ ﻛَﻠَﺎﻣِﻬَﺎ ﺑِﻠَﺎ ﻧِﻴَّﺔٍ ﻛَﻘَﻮْﻟِﻪِ ﺗَﺮِﺑَﺖْ ﻳَﻤِﻴﻨُﻚَ ﻭﻋَﻘْﺮَﻯ ﺣَﻠْﻘَﻰ ﻭَﻓِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﻟَﺎ ﻛَﺒِﺮَﺕْ ﺳِﻨُّﻚِ ﻭَﻓِﻲ ﺣَﺪِﻳﺚِ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻟَﺎ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑﻄﻨﻪ ﻭﻧﺤﻮ ﺫﻟﻚ ﻻ ﻳﻘﺼﺪﻭﻥ ﺑﺸﺊ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ ﺣَﻘِﻴﻘَﺔَ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀِ
যেসব হাদীসে ( সাহাবাদের ব্যাপারে) রাসূল ﷺ যে ” বদ’দোয়া ” বুঝা যায়, মূলত সেগুলো ঐ’রকম বাক্য যা আরব লোকেরা অনর্থকতা বা রসিকতাছলে বলতো। যেমন, একটা হাদীসে কোন একজন সাহাবী ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে তালিম দিতে গিয়ে রাসূল ﷺ বল্লেন, ﺗَﺮِﺑَﺖْ ﻳَﻤِﻴﻨُﻚَ তোমার ডান হাতের অমঙ্গল হোক বা একবার উম্মুলমুমীনিনা আম্মাজান আয়েশা রাযি: এর উদ্দিশ্যে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ﻭﻋَﻘْﺮَﻯ ﺣَﻠْﻘَﻰ বা ﻟَﺎ ﻛَﺒِﺮَﺕْ ﺳِﻨُّﻚِ তোমার বয়স না বাড়ুক এবং সাইয়্যিদুনা মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন “ ﻟَﺎ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑﻄﻨﻪ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাঁর পেট না ভরাক, মূলত এসব ঐরকম পর্যায়ের যে, আহলে আরবগণ যা ” বদদোয়া ” হিসেবে মুরাদ নিতেন না।
( শরহে সহীহ মুসলিম ১৬/১৫২)
এবার হয়তো শিয়া, রাফেদ্বীদের প্রশ্ন থাকতে পারে যে, তবেঁ কেন ইমাম মুসলিম রহ; এই হাদীসকে ” বাবুল লানাত ” তথা লানত অধ্যায়ে উল্লেখ করলেন….! সে বিষয়ে ইমাম নববী রহ: লিখেন –
ﻭَﻗَﺪْ ﻓَﻬِﻢَ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﺭَﺣِﻤَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦْ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﺃَﻥَّ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻟَﻢْ ﻳَﻜُﻦْ ﻣُﺴْﺘَﺤِﻘًّﺎ ﻟِﻠﺪُّﻋَﺎﺀِ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓَﻠِﻬَﺬَﺍ ﺃَﺩْﺧَﻠَﻪُ ﻓِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﻭﺟﻌﻠﻪ ﻏﻴﺮﻩ ﻣﻦ ﻣﻨﺎﻗﺐ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔﻻﻧﻪ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺤَﻘِﻴﻘَﺔِ ﻳَﺼِﻴﺮُ ﺩُﻋَﺎﺀً ﻟَﻪُ
ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীস থেকে এটাই বের করেছেন যে, হজরত ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ” লানত” এর মুখাপেক্ষী ছিলেন না। এটার একমাত্র কারণ হতে পারে যে, ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীসকে ঐ বা’বে উল্লেখ করেছেন। তবেঁ ইমাম মুসলিম রহ: ছাড়া অধিকাংশ আহলে ইলমগণ এই হাদীসকে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর মানাকেব বা ফজিলত অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কারণ আল্লাহ রাসূল ﷺ এই বাক্যটি সত্যিকারে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪর জন্য দোয়া হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলো।
( শরহে সহীহ মুসলিম ১৬/১৫৬)
.
* আল্লামা হাাফিজ ইবনে কাছীর রহ: মুসলিম শরীফের এই হাদীসটির ব্যাপারে লিখেন –
ﻓَﺮَﻛَّﺐَ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﺍﻟْﺄَﻭَّﻝِ ﻭَﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﻓَﻀِﻴﻠَﺔً ﻟِﻤُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ،
ইমাম মুসলিম রহ: এই হাদীসকে প্রথম হাদীসের তুলনায় পরে এনেছেন। এবং এই হাদীস থেকে সায়্যিদুনা মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর ফজিলত প্রমাণিত হয়।
( ﺍﻟﺒﺪﺍﻳﺔ ﻭﺍﻟﻨﻬﺎﻳﺔ 8/120 )
* ইবনে বাত্তাল রহ; এমন একটি রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যার লিখেন –
ﻫﻰ ﻛﻠﻤﺔ ﻻ ﻳﺮﺍﺩ ﺑﻬﺎ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﺗﺴﺘﻌﻤﻞ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺪﺡ ﻛﻤﺎ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻟﻠﺸﺎﻋﺮ ﺇﺫﺍ ﺃﺟﺎﺩ : ﻗﺎﺗﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻘﺪ ﺃﺟﺎﺩ
মূলত, এসব এমন বাক্য যা দ্বারা ” বদ’দোয়া ” মুরাদ নয়। এগুলো শুধু মাত্র সুনাম করার অর্থে ব্যবহার করা হয়। যেমন, কোন শায়ের যখন সুন্দর করে শে’র পড়ে তখন আরবীয়রা বলে যে, আল্লাহ তাকে মারুক! সে কত সুন্দর শে’র পড়লো। (শরহে সহীহ বুখারী ৯/ ৩২৯)
* আবু মানসুর মুহাম্মদ বিন আহমদ রহ: এই সম্পর্কে লিখেন –
ﮬﺬﺍ ﻋﻠﯽ ﻣﺬﮬﺐ ﺍﻟﻌﺮﺏ ﻓﯽ ﺍﻟﺪﻋﺎ ﻋﻠﯽ ﺍﻟﺸﯽﺀ ﻣﻦ ﻏﯿﺮ ﺍﺭﺍﺩۃﻟﻮﻗﻮﻋﮧ , ﻻ ﯾﺮﺍﺩ ﺑﮧ ﺍﻟﻮﻗﻮﻉ
এমন বাক্যগুলো আরবীয়দের মাঝে এভাবে প্রচলিত যে, যেখানে তাঁরা কারো ব্যাপারে বদদোয়ার মত শব্দ করে কিন্তু এখানে সেই ইচ্ছে (বদদোয়া) থাকতো না অর্থাৎ বদদোয়া কবুল হওয়ার চিন্তা আনতো না।
( ﺗﻬﺬﻳﺐ ﺍﻟﻠﻐﺔ ১/১৪৫ )
* লা’মাজহাবীদের শায়খুল মুহাদ্দীস জনাব আলবানী সাহেবও এই হাদীসের মূল রহস্য বুঝেছিলেন। শুধু বুঝলো না শিয়া খবিসরা। আলবানী এ সম্পর্কে লিখেন –
ﻭﻗﺪ ﻳﺴﺘﻐﻞ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻔﺮﻕ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻟﻴﺘﺨﺬﻭﺍ ﻣﻨﻪ ﻣﻄﻌﻨﺎ ﻓﻲ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ،ﻭﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﻣﺎ ﻳﺴﺎﻋﺪﻫﻢ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ، ﻛﻴﻒ ﻭﻓﻴﻪ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ
ﻛﺎﺗﺐ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
কিছু গুমরাহ ফেরকারা এই হাদীসকে ভুলভাবে উপস্থাপন করতে গিয়ে হজরত মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪর নিকৃষ্টতা প্রমাণ করার চেষ্টা করে। যদিওবা এই হাদীসে এমন কোন কথা নেই যা ওনার সমালোচনার সৃষ্টি করবে। এই হাদীস থেকে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর মন্দতা কিভাবে প্রমাণিত হবে..! যেখানে এটাই উল্লেখ্য যে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামার কাতীবে ওহী ছিলেন।
( ﺳﻠﺴﻠﺔ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺤﺔ ﻭﺷﻲﺀ ﻣﻦ ﻓﻘﻬﻬﺎ ﻭﻓﻮﺍﺋﺪﻫﺎ পৃষ্ঠা ৮২)
* সহীহ মুসলিমের আরেকটি হাদীস দেখলে বুঝতে আরেকটু সহজ হবে –
ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺯُﻫَﻴْﺮُ ﺑْﻦُ ﺣَﺮْﺏٍ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﻣَﻌْﻦٍ ﺍﻟﺮَّﻗَﺎﺷِﻲُّ – ﻭَﺍﻟﻠَّﻔْﻆُ ﻟِﺰُﻫَﻴْﺮٍ – ﻗَﺎﻻَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋُﻤَﺮُ، ﺑْﻦُ ﻳُﻮﻧُﺲَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋِﻜْﺮِﻣَﺔُ ﺑْﻦُ ﻋَﻤَّﺎﺭٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕُ ﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﻠْﺤَﺔَ، ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﺃَﻧَﺲُ ﺑْﻦُ ﻣَﺎﻟِﻚٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻋِﻨْﺪَ ﺃُﻡِّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﻳَﺘِﻴﻤَﺔٌ ﻭَﻫِﻲَ ﺃُﻡُّ ﺃَﻧَﺲٍ ﻓَﺮَﺃَﻯ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟْﻴَﺘِﻴﻤَﺔَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ” ﺁﻧْﺖِ ﻫِﻴَﻪْ ﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺒِﺮْﺕِ ﻻَ ﻛَﺒِﺮَ ﺳِﻨُّﻚِ ” . ﻓَﺮَﺟَﻌَﺖِ ﺍﻟْﻴَﺘِﻴﻤَﺔُ ﺇِﻟَﻰ ﺃُﻡِّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﺗَﺒْﻜِﻲ ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﺃُﻡُّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﻣَﺎ ﻟَﻚِ ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻴَّﺔُ ﻗَﺎﻟَﺖِ ﺍﻟْﺠَﺎﺭِﻳَﺔُ ﺩَﻋَﺎ ﻋَﻠَﻰَّ ﻧَﺒِﻲُّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮَ ﺳِﻨِّﻲ ﻓَﺎﻵﻥَ ﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮُ ﺳِﻨِّﻲ ﺃَﺑَﺪًﺍ – ﺃَﻭْ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻗَﺮْﻧِﻲ – ﻓَﺨَﺮَﺟَﺖْ ﺃُﻡُّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﻣُﺴْﺘَﻌْﺠِﻠَﺔً ﺗَﻠُﻮﺙُ ﺧِﻤَﺎﺭَﻫَﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﻟَﻘِﻴَﺖْ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻬَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ” ﻣَﺎ ﻟَﻚِ ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ” . ﻓَﻘَﺎﻟَﺖْ ﻳَﺎ ﻧَﺒِﻲَّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺩَﻋَﻮْﺕَ ﻋَﻠَﻰ ﻳَﺘِﻴﻤَﺘِﻲ ﻗَﺎﻝَ ” ﻭَﻣَﺎ ﺫَﺍﻙِ ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ” . ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺯَﻋَﻤَﺖْ ﺃَﻧَّﻚَ ﺩَﻋَﻮْﺕَ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮَ ﺳِﻨُّﻬَﺎ ﻭَﻻَ ﻳَﻜْﺒَﺮَ ﻗَﺮْﻧُﻬَﺎ – ﻗَﺎﻝَ – ﻓَﻀَﺤِﻚَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ” ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺳُﻠَﻴْﻢٍ ﺃَﻣَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻤِﻴﻦَ ﺃَﻥَّ ﺷَﺮْﻃِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺑِّﻲ ﺃَﻧِّﻲ ﺍﺷْﺘَﺮَﻃْﺖُ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺑِّﻲ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﺃَﺭْﺿَﻰ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﺮْﺿَﻰ ﺍﻟْﺒَﺸَﺮُ ﻭَﺃَﻏْﻀَﺐُ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﻐْﻀَﺐُ ﺍﻟْﺒَﺸَﺮُ ﻓَﺄَﻳُّﻤَﺎ ﺃَﺣَﺪٍ ﺩَﻋَﻮْﺕُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺑِﺪَﻋْﻮَﺓٍ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻬَﺎ ﺑِﺄَﻫْﻞٍ ﺃَﻥْ ﺗَﺠْﻌَﻠَﻬَﺎ ﻟَﻪُ ﻃَﻬُﻮﺭًﺍ ﻭَﺯَﻛَﺎﺓً ﻭَﻗُﺮْﺑَﺔً ﻳُﻘَﺮِّﺑُﻪُ ﺑِﻬَﺎ ﻣِﻨْﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ
সাইয়্যিদুনা আনাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ হতে বর্ণিত,
উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা যিনি হজরত আনাস রাযি: এর মাতা ছিলেন। ওনার ঘরে একটা মেয়ে ছিলো। রাসূল ﷺ ঐ মেয়েটাকে দেখে বল্লেন, এটাকি তুই ? তুই তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস..! তোর বয়স না বাড়ুক। এটা শোনামাত্র ঐ মেয়েটি কান্না করতে করতে উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহার কাছে গেলো। উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন, বেটি কি হয়েছে? মেয়েটি বল্লো আমার ব্যাপারে রাসূল ﷺ বদদোয়া করেছেন যে, আমার বয়স যাতে না বাড়ে..! এখন তো আমার বয়স আর কখনই বাড়বেনা। তা শুনে উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা তাড়াতাড়ি নিজের চাদর মাটির সাথে লাগাতে লাগাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সামনে হাজির। রাসূলুল্লাহ ﷺ জিজ্ঞেস করলেন..উম্মে সুলাঈম.! কি হলো?
উম্মে সুলাঈম রাযি:আনহা আরজ করলেন, ইয়া রাসূলআল্লাহ ﷺ আপনি কি ঐ মেয়েটিকে বদদোয়া দিয়েছেন যে, যাতে তাঁর বয়স না বাড়ুক? তখন রাসূল ﷺ মুচকি হেঁসে উত্তর দিলেন, হে উম্মে সুলাঈম.! আপনি কি জানেন? আমি আমার আল্লাহর কাছ হতে এই অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি এবং দোয়া করেছি যে, আমি একজন মানুষ এবং মানুষেরই মত খুশি হই আবার অখুশি। যদিওবা, যে কারোই জন্য বদদোয়া করবো, যেটার সে মুখাপেক্ষী নয় তবেঁ ঐ বদদোয়াটি তাঁর জন্য গুনাহ মাফের ওসীলা হিসেবে সাব্যস্ত হবে। ( আলহামদুলিল্লাহ্)
এবং ঐ বদদোয়াটি রোজ কেয়ামতের দিন নিজেদের মুক্তি লাভের ওসীলা হিসেবেও সাব্যস্ত হবে। ( আলহামদুলিল্লাহ্)
(সহীহ মুসলিম / হাদীস ২৬০৩)
* সহীহ মুসলিম শরীফের আরেকটি হাদীস লক্ষ করা যায় –
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺯُﻫَﻴْﺮُ ﺑْﻦُ ﺣَﺮْﺏٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺟَﺮِﻳﺮٌ، ﻋَﻦِ ﺍﻷَﻋْﻤَﺶِ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺍﻟﻀُّﺤَﻰ، ﻋَﻦْ ﻣَﺴْﺮُﻭﻕٍ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺩَﺧَﻞَ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭَﺟُﻼَﻥِ ﻓَﻜَﻠَّﻤَﺎﻩُ ﺑِﺸَﻰْﺀٍ ﻻَ ﺃَﺩْﺭِﻱ ﻣَﺎ ﻫُﻮَ ﻓَﺄَﻏْﻀَﺒَﺎﻩُ ﻓَﻠَﻌَﻨَﻬُﻤَﺎ ﻭَﺳَﺒَّﻬُﻤَﺎ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺧَﺮَﺟَﺎ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﻦْ ﺃَﺻَﺎﺏَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻣَﺎ ﺃَﺻَﺎﺑَﻪُ ﻫَﺬَﺍﻥِ ﻗَﺎﻝَ ” ﻭَﻣَﺎ ﺫَﺍﻙِ ” . ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻗُﻠْﺖُ ﻟَﻌَﻨْﺘَﻬُﻤَﺎ ﻭَﺳَﺒَﺒْﺘَﻬُﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ ” ﺃَﻭَﻣَﺎ ﻋَﻠِﻤْﺖِ ﻣَﺎ ﺷَﺎﺭَﻃْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺭَﺑِّﻲ ﻗُﻠْﺖُ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻓَﺄَﻯُّ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻟَﻌَﻨْﺘُﻪُ ﺃَﻭْ ﺳَﺒَﺒْﺘُﻪُ ﻓَﺎﺟْﻌَﻠْﻪُ ﻟَﻪُ ﺯَﻛَﺎﺓً ﻭَﺃَﺟْﺮًﺍ
উম্মুল মুমীনিনা হজরত আয়শা রাযি:আনহা হতে বর্ণিত যে, দু’জন ব্যক্তি রাসূল ﷺ দরবারে উপস্থিত হলেন, এবং রাসূলুল্লাহ সালল্লাহু ﷺ সাথে কি জেন আলাপ করলেন( রাবীর মতে)। আমি ওসব কথা বুঝতে পারিনি। ঐ’দুজন ব্যক্তির কথাগুলোর কারণে রাসূলুল্লাহ ﷺ রাগ আসলো এবং তিনি ঐ ব্যক্তিদের বদদোয়া দিলেন। যখন ঐ দু’জন ব্যক্তি রাসূল ﷺ এর দরবার হতে চলে গেলেন তখন আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলআল্লাহ ﷺ এতটা কষ্টও কি কেও পায়, যতটা সে পেয়েছে? রাসূলুল্লাহ ﷺ বল্লেন, কি বুঝাতে চাও? আমি ( রাবী) আরজ করলাম, আপনি ওনাদের বদদোয়া করেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বল্লেন, তোমার কি ঐ অঙ্গীকার মনে নেই.! যেটা আমি আমার আল্লাহর সাথে করেছি? আমি আমার আল্লাহর সাথে এই অঙ্গীকারের আবদ্ধ হয়েছি যে, হে আল্লাহ..! আমি একজন মানুষ.! যদি আমি কোন মুসলমানের জন্য বদদোয়া করি তবেঁ সেটা তাঁর জন্য গুনাহ মাফের ওসীলা হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম / হাদীস ২৬০০)
* অতএব.! প্রমাণিত হল যে, যদি রাসূল ﷺ রেগে গিয়ে কোন সাহাবীর জন্য বদদোয়া করেন তবেঁ ঐ বদদোয়াটি ঐ সাহাবীর জন্য মাগফিরাতের ওসীলা হয়ে দাঁড়াবে। ( সুবহানআল্লাহ)
আর এটাও স্পষ্টতর যে, হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ রাগ বা নারাজ হওয়ার কোণ দলিলও নেই। আচ্ছা, যদি এটা কিছুক্ষণের জন্য মানাও হয় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ রেগে গিয়ে হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে বদদোয়া করেছেন.! তবুও উপরে উল্লেখিত সহীহ হাদীসগুলোর ভিত্তিতে হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর মানাকেব তথা ফজিলতও তথাপি কেয়ামতে তাঁর জন্য ওসীলা হয়ে দাঁড়াবে।
মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালীসিতে তেও ঐ হাদীসের বর্ণনাও ঠিক এমনই এসেছে। ( মুসনাদ ২৮৬৯ নং হাদীস)
* দেখুন মুসনাদে আবি দাউদে লিখা আছে –
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻳُﻮﻧُﺲُ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺩَﺍﻭُﺩَ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻫِﺸَﺎﻡٌ، ﻭَﺃَﺑُﻮ ﻋَﻮَﺍﻧَﺔَ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺣَﻤْﺰَﺓَ ﺍﻟْﻘَﺼَّﺎﺏِ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑَﻌَﺚَ ﺇِﻟَﻰ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔَ ﻳَﻜْﺘُﺐُ ﻟَﻪُ ………
রাসূলুল্লাহ ﷺ হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর প্রতি এই বার্তা পাঠালেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺকে যাতে মুয়াবীয়া রাযি: ওহী লিখতে সহযোগীতা করেন।
( ﻣﺴﻨﺪ ﺃﺑﻲ ﺩﺍﻭﺩ ﺍﻟﻄﻴﺎﻟﺴﻲ হাদীস ২৮৬৯)
অর্থাৎ, ঐ হাদীস হতে হজরতে মুয়াবীয়া রাযি: এর ” কাতীবে ওহী ” হওয়া প্রমাণিত হয়। এটি ওনার জন্য একটি বড় ফজিলত বা মানাকেবের দিকে নির্দেশ করে। এজন্য….
* ইমাম ইবনে আসাকীর রহ: এই হাদীসের ব্যাপারে লিখেন –
ﻭﺃﺻﺢ ﻣﺎ ﺭﻭﻱ ﻓﻲ ﻓﻀﻞ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ
হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর মানাকেব বা ফজিলত সম্পর্কে সবচেয়ে সহীহ হাদীস হল এটিই।
( তারিখে দামেস্ক, ইবনে আসাকীর, ৫৯/১০৬)
* পরিশেষে, মোদ্দাকথা এটাই যে, হজরতে ইবনে আব্বাস রাযি: কর্তৃক হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪকে রাসূলুল্লাহ ﷺ ডাকার কারণ তিনি ” ﻳَﻜْﺘُﺐُ ﻟَﻪُ ” ওহী লিখতে যাতে সহযোগীতা করেন এবং এই কাজের জন্যই তিনি হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪএর খোজ নেন। এবং হাদীসে উল্লেখ্য
“ ﻟَﺎ ﺃَﺷْﺒَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑﻄﻨﻪ ”
বাক্য দ্বারা আমীরে মুয়াবিয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর প্রতি বদদোয়াও প্রমাণ হয়না বরং এসব এমন বাক্য যা ইমাম নববী রহ:, ইবনে বাত্তাল রহ:, ইবনে কাসীর, ইবনে আসাকীর প্রমুখ ইমামগণ এটাকে আহলে আরবদের রসিকতা বা কৌতুকপূর্ণ বাক্যের সাথে নিসবত করেছেন এবং আল্লার রাসূল ﷺ নিজেই বলেছেন, যদি আমি কোন মুসলমানের জন্য বদদোয়া করি তবেঁ সেটা তাঁর জন্য গুনাহ মাফের ওসীলা হয়ে যায়।
( সহীহ মুসলিম / হাদীস ২৬০০)
যদিওবা সেটি লানত বা বদদোয়া ছিলোনা। যেরুপ উপরে উল্লেখিত দলিলগুলোতে পরিলক্ষিত হয়। এত স্পষ্টতর প্রমাণ থাকার পরও যদি কেও এই হাদীসকে হজরতে মুয়াবীয়া ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর মানাকেব এবং ফাজায়েলের দলিল না মানে, তবেঁ তাঁর চাইতে বড় জালেম আর মূর্খ দুনিয়াতে নেই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের শিয়া, রাফেদ্বীদের মিথ্যাচার হতে হেফাজত করুন। আমীন।