বিসমিল্লাহ হির রাহমানির রাহিম।
ছবি তোলার নিষেধাজ্ঞায় অগিনিত হাদিস এসেছে। যুগের বিবর্তনে মানুষের প্রয়োজন অনুসারে ইজমা-কিয়াস অনুযায়ী সকল সমস্যার সমাধানেরও অধিকার দিয়েছে ইসলাম।
এমন অনেক কিছুই ছিল যা পূর্বে নাজায়েজ ছিল কিন্তু এখন তা জায়েজ। যেমনঃ
– ইটের তৈরি মসজিদ।
– মাইক দিয়ে আজান দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি (মাসুম বিল্লাহ সানি) এখানে জায়েজ ও নাজায়েজ দুইপ্রকার মতামতই বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরব।
ছবি তোলা নাজায়েজ প্রসংঙ্গেঃ
ফতোয়াঃ
® প্রাণীর ছবি ঘরে রাখাকে ফকীহগণ নাজায়েয ও মাকরূহে তাহরীমী বলেছেন। (যুগ জিজ্ঞাসা, ফতোয়ায়ে রেজভীয়া – ৯ম খন্ড, আহকামে তাসভীর ইত্যাদি)
হাদিসঃ
1.
জিবীকার উদ্দেশ্যে হলেও প্রানীর ছবি আঁকা হারাম তবে জরবস্তু কিংবা গাছ-পালা আঁকা জায়েজঃ
® সাইদ বিন আব আল হাসান বর্ণনা করেন যে তিনি যখন ইবনে আব্বাসের সাথে বসেছিলেন তখন এক লোক তার কাছে আসে ও বলে-” হে আব্বাসের পিতা , আমি ছবি এঁকে জীবিকা নির্বাহ করি “। ইবনে আব্বাস বললেন-” আমি সেটাই বলব যা আমি আল্লাহর নবির কাছ থেকে শুনেছি। আমি তাকে বলতে শুনেছি, যে লোক ছবি আঁকে তাকে আল্লাহ শাস্তি দেবে যতক্ষন পর্যন্ত না সে তাতে জীবন দিতে পারে এবং সে সেটা করতে কখনই সক্ষম হবে না।” এটা শুনে সেই লোকটার মুখ শুকিয়ে গেল। ইবনে আব্বাস তাকে বললেন – ” কি দু:খের কথা ! যদি তুমি ছবি আঁকতেই চাও তাহলে আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে গাছ পালার ছবি বা অন্য কোন জড় বস্তুর ছবি আঁকতে পার।”সহি বুখারি , ভলিউম- ৩, বই – ৩৪, হাদিস – ৪২৮
2.
যে ঘরে কুকুর বা কোন প্রানীর ছবি থাকবে সেই ঘরে ফিরিস্তারা প্রবেশ করে নাঃ
® ইবনে মুকাতিল (র)…আবূ তালহা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ঘরে কুকুর থাকে আর প্রানীর ছবি থাকে সে ঘরে (রহমতের) ফিরিশতা প্রবেশ করেন না। [সহীহ বুখারী, পঞ্চম খণ্ড, হাদিস নং ২৯৯৮ – ইফা]
এছাড়াও হাদীছে আরও আছে –
® “হযরত আবু তালহা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলে পাক (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ঘরে (প্রানীর) ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।” (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, হাদীছ নং ৫৫৩৩)
®”হযরত আয়েশা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহা) হতে বর্ণিত,… নবীজী (’আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) বলেন, … আর যে ঘরে (প্রানীর) ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।” (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, হাদীছ নং ৫৫৩২)
3.
মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা প্রানীর ছবি/মূর্তি তৈরি করেঃ
® হুমায়দী (র)…মুসলিম (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (একবার) মাসরুকের সাথে ইয়াসার ইবনে নুমায়রের ঘরে ছিলাম। মাসরুক ইয়াসারের ঘরের আঙ্গিনায় কতগুলো মূর্তি দেখতে পেয়ে বললেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে শুনেছি এবং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, (কিয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি বানায়। [সহীহ বুখারী, নবম খণ্ড, হাদিস নং ৫৫২৬ – ইফা]
4.
কঠিন আযাব হবে তাদের, যারা আল্লাহ্র সৃষ্টির (প্রানীর) অনুরূপ তৈরি করবে, তাই ছবির পর্দাসমূহ ছিরেঁ ফেললেন/ সরিয়ে ফেলতে বললেনঃ
® “হযরত আয়েশা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূক যুদ্ধের সফর থেকে ফিরে এলেন। আমি আমার ঘরে পাতলা কাপড়ের পর্দা টাঙ্গিয়েছিলাম। তাতে ছিল (প্রাণীর) অনেকগুলো ছবি। নবীজী (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন এটা দেখলেন, তখন তা ছিঁড়ে ফেললেন…।” (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, হাদীছ নং ৫৫৩০ ও ৫৫৩১)
® “নবী সহধর্মিণী হযরত আয়েশা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, (একবার) তিনি ছবিযুক্ত গদি কিনলেন। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (বাহির থেকে এসে) যখন তা দেখতে পেলেন, তখন দরজার উপর দাঁড়িয়ে গেলেন। (ভেতরে) প্রবেশ করলেন না। আয়শা (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহা) নবীজীর (’আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) চেহারায় অসন্তুষ্টির ভাব বুঝতে পারলেন।…” (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, হাদীছ নং ৫৫৩৬)
® হযরত আনাস (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহু) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, “হযরত আয়শার (রাদ্বিআল্লাহুতা’লা আনহা) নিকট কিছু পর্দার কাপড় ছিল, তা দিয়ে তিনি ঘরের এক দিকে পর্দা করেন। রসূলুল্লাহ (’আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) তাঁকে বললেন, আমার থেকে এটা সরিয়ে নাও (অর্থাৎ, লুকিয়ে রাখ বা ছবি নেই এমন কিছু দ্বারা আচ্ছাদিত করে রাখ), কেননা এর ছবিগুলো নামাজের মধ্যে আমাকে বাধার সৃষ্টি করে। (বুখারী শরীফ, ৯ম খন্ড, পরিচ্ছেদঃ ছবিযুক্ত কাপড়ে নামাজ পড়া মাকরূহ, হাদীছ নং ৫৫৩৪)
ছবি তোলা জায়েজ প্রসংঙ্গেঃ
যেহেতু হাদিসের উপরে ফতোয়া নয় তাই আল্লাহ এ ব্যাপারে আমাদের ক্ষমাকরবেন কিনা তিনিই সর্বাধিক জ্ঞাত।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ফতোয়াঃ
® আহলে সুন্নাহর প্রখ্যাত আলেম মুফতী মুহাম্মদ অছিয়র রহমান সাহেব তাঁর কিতাবে লিখেছেন –
“কোনো প্রাণীর ছবি ঘরে টাঙ্গিয়ে রাখা জায়েয নেই। কারণ, যে ঘরে প্রাণীর ছবি ঝুলানো থাকে, সে ঘরে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতাগণ প্রবেশ করেন না। তবে, মাতা-পিতা, পীর-মুর্শিদ বা অন্য কারও স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি অ্যালবামে বা গোপন স্থানে সংরক্ষণ করলে তাতে অসুবিধা নেই।
(‘যুগ জিজ্ঞাসা’ বইয়ের ৪৫ পৃষ্ঠা)
® সম্মানিত মাতাপিতা ও পীর-বুযর্গদের অ্যালবাম বা গোপনস্থানে সংরক্ষিত ছবিসমূহ শুধুমাত্র স্মৃতিস্বরূপ বা তাঁদেরকে স্মরণে আবদ্ধ রাখার নিমিত্তেই হবে। শোভা প্রদর্শন বা চুম্বন করার উদ্দেশ্যে নয়। কারণ, শোভা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে যেকোনো প্রাণীর ছবি ঘরে টাঙ্গিয়ে রাখা বা কোনো ছবিকে চুম্বন করা ফকীহগণের মধ্যে অনেকেই নাজায়েয ও মাকরূহে তাহরীমী বলেছেন।
(সূত্রঃ ফতোয়ায়ে রেজভিয়া – ৯ম খন্ড, আহকামে তাসভীর ইত্যাদি)”
আহলে হাদিস শাইখের ফতোয়াঃ
® শাইখ ইবনে উথাই’মিন বলেছেন: আধুনিক ছবি দুই ধরনের হয়ে থাকে:
১. যেসব ছবি, যা কোন কিছুর সাহায্য ছারা দেখা যায় না, আমাকে বলা হয়েছে যেমন ভিডিও ক্যামেরার দৃশ্য। এরূপ ছবির ক্ষেত্রে কোন নীতিমালা নেই এবং এগুলি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পরে না। যেসব আলেমরা প্রিন্ট করা ছবির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছেন তারাই বলেছেন এরূপ অস্থায়ী ভিডিও ক্যামেরার ছবির ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই।
২. যা কাগজে ছাপানো হয়। (নাজায়েজ তবে পিতা-মাতা বা পীরের ছবি স্মৃতির উদ্দেশ্যে লুকিয়ে রাখা যেতে পারে – পূর্বে আলোচিত হয়েছে)
® শাইখ ডা: খা’লিদ আল-মুস’হাকি (র:)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: আমি মোবাইল দিয়ে স্মৃতির জন্য আমার বাচ্চার ছবি তুলি। কিন্তু আমি পড়েছি যে স্মৃতির জন্য ছবি তোলা শরীয়ত মতে হারাম। আমার এই ছবি তোলা কি শরীয়তে নিষিদ্ধ অথবা এটা কি ঠিক আছে মোবাইলে ফোনের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা। এর ক্ষেত্রে দলিল কি? আমি এও পড়েছি যে কম্পিউটার এবং মোবাইলের ছবিকে ‘ছবি’ বলা হয় না, কারণ তা রাখা হয় কম্পিউটার বা মোবাইলের মেমোরিতে এবং তা ছাপানো হয় না। আমি যদি কম্পিউটার বা মোবাইলে ছবি খুলি তাহলে তাতে ফেরেশতারা কি থাকবে না চলে যাবে? আমি আশা করছি আপনি আমাকে বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে বুঝাতে পারবেন কারণ এটি খুব বিভ্রান্তিকর বিষয়। আল্লাহ্ যেন আপনাকে ভাল প্রতিদান দেয়।
তার উত্তর: ‘মোবাইল বা কম্পিউটার বা ভিডিও টপের ছবিগুলি, শরীয়তের ছবির নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পরে না কারণ এই ছবিগুলোর কোন আকার নেই এবং তা স্থায়ী নয় , যতক্ষণ না তা কাগজে ছাপা হয়। এ ভিত্তিতে মোবাইলে বা কম্পিউটারে স্মৃতির জন্য ছবি রাখাতে কোন সমস্যা নেই, যদি না তা দ্বারা কোন হারাম কাজ করা হয়। এবং আল্লাহ্ই ভাল জানেন’…
এই নীতির ভিত্তিতে, কেউ যদি মোবাইল দিয়ে বা ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে দেয় তাতে কোন সমস্যা নেই, যদি না তা ছাপানো হয়। তবে তা ঝুকিপূর্ণ ও তাকওয়ার খেলাপ। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে এরূপ ছবি তোলা শরীয়ত সম্মত নয়, কারণ তা ফিতনার কারণ হবে এবং তা ছেলেদের মধ্যে খারাপ কামনা-বাসনা তৈরি করবে। কম্পিউটার ও মোবাইল স্ক্রীনে থাকা প্রাণীর (অশ্লীল ও নারীর ছবি ছাড়া) ছবি প্রিন্ট করার আগ পর্যন্ত জায়েজ বলেছেন জামিয়া বিন্নুরিয়া পাকিস্তানের ফাতওয়া বিভাগ।
সুতরাং ফটোগ্রাফী ছবিকে মুতলাক জায়েজ বলা এই হিসেবে যে, তা মূলত ছবি না, বরং তা ছায়াকে আটকে ফেলা, এরূপ বলা উচিত নয়, বরং তার বৈধতা প্রয়োজন পর্যন্ত সীমিত থাকবে।
(তাফসীরু আয়াতিল আহকাম-২/৩০০)
তাবলিগ জামাতের ফতোয়াঃ
® মুফতী তাক্বী উসমানী প্রণীত “ফিক্বহী মাক্বালাত”-৪/১২৩-১৩০
দলিলঃ فى تفسير آيات الأحكام-فإطلاق
الإباحة في التصوير الفوتوغرافي ، وأنه ليس بتصوير وإنما هو حبس للظلّ ،
مما لا ينبغي أن يقال ، بل يقتصر فيه على حد الضرورة ، (تفسير آيات
الأحكام-2/300) অনুবাদ-সুতরাং ফটোগ্রাফী ছবিকে
মুতলাক জায়েজ বলা এই হিসেবে যে, তা মূলত ছবি না, বরং তা ছায়াকে আটকে ফেলা, এরূপ বলা উচিত নয়, বরং তার বৈধতা প্রয়োজন পর্যন্ত সীমিত থাকবে। (তাফসীরু আয়াতিল আহকাম-২/৩০০)
وفى فتاوى الشيخ عبد الرزاق
عفيفي-اما التصوير الشمسى لذوات الأرواح فهو محرم وممنوع لان فيه مضاهان
لخلق الله ولان فاعله من اظلم الناس ولانه يمنع من دخول ملائكة الرحمة
والبركة الى المكان الذي تكون به هذه الصور ولان تصوير ذوات الأرواح من
المعظمين كالأمراء والعلماء ونحوهم هو ذريعة وسبب ووسيلة للشرك (فتاوى
الشيخ عبد الرزاق عقيفى-1/305) প্রামান্য গ্রন্থাবলী
১. তাফসীরু আয়াতিল আহকাম-২/৩০০
২. ফাতওয়া আব্দুর রাজ্জাক আফিফী-১/৩০৫
৩. আল ফাতওয়া লাজনাতুত দায়িমাহ-১/৬৬২
৪. ফিক্বহী মাকালাত-৪/৮৯
৫. জাদীদ ফিক্বহী মাসায়েল-১/৩৫৪
৬. জাওয়াহীরুল ফিক্বহ-৪/৯
যুক্তিসহ প্রশ্নউত্তরের জবাবঃ
১ম প্রশ্নঃ
ছবি তোলার পাপসমূহ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবেন কিনা?
জবাবঃ
® “আমার খাতিরে আল্লাহ্ তায়ালা, আমার উম্মাতের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি ও ভুল ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তার সে কাজ যা সে বাধ্য হয়ে করেছে। “
[ইবনে মাজাহ্, হাঃ নং-২০৪৫]
যেহেতু এখন জনসং্খ্যা বেড়েছে অপরাধ কর্মও বেড়েছে। রাষ্ট্র ও জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য, কতিপয় কাজ-কর্ম সহজ করার জন্য ছবির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এ ব্যাপারে ধারণা করা যায় আল্লাহ চাহেন তো ক্ষমা করতে পারেন। সব আল্লাহর ইচ্ছা।
২য় প্রশ্নঃ
ছবি তোলা বা ভিডিওচিত্র ধারণ করা জায়েয নাকি নাজায়েয? শরীয়তে ছবি তোলা সম্পর্কে কোনো বিধি-নিষেধ আছে কি?
উত্তরঃ
শরীয়তে (যে কোনো প্রাণীর বা জড়বস্তুর) ছবি তোলা এবং ভিডিওচিত্র ধারণ করা সাধারণভাবে জায়েয (তবে, ছবি আঁকা নয়)। কেননা,
প্রথমত,
ক্যামেরা দিয়ে তোলা স্থির ছবি বা ভিডিওচিত্র মূলত আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণের মাধ্যমে সৃষ্ট আমাদের প্রতিবিম্ব, যা কাগজে ছাপানো কিংবা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে (কম্পিউটার, মোবাইল, ক্যামেরা ইত্যাদির মেমোরিতে) সেইভ করে রাখা যায়। আর কারও প্রতিবিম্ব এবং আঁকা ছবি এক নয়; কেননা আঁকা ছবিতে সৃষ্টিশীলতার ছোঁয়া থাকে, যা প্রতিবিম্বে থাকে না। তাই ছবি আঁকার প্রতি অর্পিত নিষেধসমূহ (যা হাদীছে বর্ণিত আছে – যেমন, হাশরের ময়দানে তা-তে প্রাণ সঞ্চার করতে হবে) ছবি তোলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
দ্বিতীয়ত,
আলোকচিত্র বা তোলা ছবির প্রতিবিম্ব এবং আয়নায় বা পানিতে সৃষ্ট প্রতিবিম্বের মধ্যে প্রকৃতিগতভাবে পার্থক্য নেই। কোনো সাহাবী পানিতে প্রতিবিম্ব দেখে সৌন্দর্যচর্চা করেছেন বা চুল আঁচড়িয়েছেন এবং নবীজী (’আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম) তা-তে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মর্মে কোনো হাদীছ বা দলীল পাওয়া যায় না।
তৃতীয়ত,
তবে ছবি তোলা ও ভিডিওচিত্র ধারণ করা নাজায়েয হবে, যদি তোলা ছবি ও ভিডিওতে অশ্লীলতা, উচ্ছৃঙ্খলতা, বেহায়পনা বা এমন সব কর্মকান্ডের বহিঃপ্রকাশ থাকে, যা সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে; কেননা, শরীয়তে অশ্লীলতা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত আয়াতসমূহ দ্রষ্টব্যঃ
®“কোন রকম অশ্লীলতার কাছেও যেও না তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক।” (সূরা আল-আনআমঃ ১৫১)
®”আপনি বলুন, আমার পালনকর্তা কেবলমাত্র অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন।” (সূরা আ’রাফঃ ৩৩)
®”তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন।…” (সূরা নাহলঃ ৯০)
এছাড়া হাদীছে আছে, “আল্লাহর রসূল (সল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, … অশ্লীলতা উচ্ছৃঙ্খলতার অংশ। আর উচ্ছৃঙ্খলতার ঠিকানা জাহান্নামে।” (আহমাদ ও তিরমিযী)
৩য় প্রশ্নঃ
প্রাণীর ছবি ঘরে ঝুলিয়ে রাখা বা উন্মুক্ত রাখা কি জায়েয?
উত্তরঃ
(বাস্তব কিংবা কল্পিত) প্রাণীর (ছাঁপানো বা আঁকানো) ছবি ঘরে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখা তথা উন্মুক্ত রাখা নাজায়েয।