যারা লোপ পেয়ে যাওয়া একটি সুন্নাতকে পুনর্জীবিত করবেন- তারা একশত শহীদের সওয়াব পাবেন।
★ মিশকাত শরীফ, ৩০ পৃষ্ঠা,
★ বায়হাকী শরীফ ‘কিতাবুল জিহাদে’ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে]
রাসূলাল্লাহ [ﷺ ] কে দেখার পূর্বে দাঁড়ানো নিষেধঃ
_____________________________________
হযরত আবু কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করীম [ﷺ ] ইরশাদ ফরমায়েছেনঃ
ﻋﻦ ﺃﺑﻰ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ [ ﷺ ] ﺇﺯﺍ ﺃﻗﻴﻤﺖ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﻼ ﺗﻘﻮﻣﻮﺍ ﺣﺘﻰ ﺗﺮﻭﻧﻰ .
“নামাযের ইকামত দেওয়া শুরু হলে তোমরা আমাকে (হুজরা শরীফ থেকে বের হতে) দেখার পূর্বে দাঁড়াবে না।”
হাদিস থেকে কয়েকটি বিষয় প্রতিয়মান হয়ঃ
(১) প্রিয় নবীজী [ ﷺ ] ইকামত শুরু হওয়ার পর হুজরা মোবারক থেকে বের হতেন।
(২) হুজুর [ﷺ ] বেরিয়ে আসার পূর্বে মুসল্লিদের দাঁড়াতে নিষেধ করেছেন।
(৩) ইকামতে দাঁড়ানোর বিষয়টি ইমামের সাথে সম্পৃক্ত।
প্রকাশ থাকে যে, প্রিয় নবীজী [ﷺ ]’র হুজরা মোবারক মসজিদে নববী’র মেহরাবের অতি নিকটবর্তী ছিল। অতি সামান্য ব্যবধানেই তিনি মেহরাবে তাশরীফ নিতেন।
[(ক) আবূ দাউদ; খন্ড-০১, পৃ.১৪৮, হাদীস: ৫৩৯, ৫৪০;
(খ) তিরমিযী; খন্ড-০২, পৃ.৪৮৭, হাদীস: ৫৯২;
(গ) নাসাঈ; খন্ড-২, হাদীস: ৬৮৭;
(ঘ) সহীহ ইবনু হিব্বান; খন্ড-৫, পৃ.৬০১, হাদীস:২২২৩
(ঙ) শুয়াবুল ঈমান; খন্ড-২, পৃ.২০, হাদীস: ২১২০;
(চ) সহীহ মুসলিম; খন্ড-০১, পৃ.৪২২, হাদীস: ৬০৪]
।।।
রাসূলাল্লাহ [ﷺ ] হুজরা শরীফ থেকে ইকামতের কোন মুহূর্তে মেহরাবে আসতেনঃ
_____________________________________
এ ব্যাপারে মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) “মিরকাতুল মাফাতীহ” গ্রন্থে লিখেনঃ
ﻟﻌﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻛﺎﻥ ﻳﺨﺮﺝ ﻣﻨﺎ ﺍﻟﺤﺠﺮﺓ ﺑﻌﺪ ﺷﺮﻭﻉ ﺍﻟﻤﺆﺯﻥ ﻓﻲ ﺍﻻﻗﺎﻣﺔ ﻭﻳﺪﺧﻞ ﻓﻲ ﻣﺤﺮﺏ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻋﻨﺪ ﻗﻮﻟﻪ ﺣﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﻼﺓ .
“আর সম্ভবত নবী করিম [ﷺ ] হুজরা শরীফ থেকে বের হতেন মুয়াজ্জিন ইকামত শুরু করার পর এবং ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ বলার সময় তিঁনি মেহরাবে প্রবেশ করতেন।” [মিরকাতুল মাফাতীহ লিল মোল্লা আলী ক্বারী]
নবী করিম [ﷺ ] ইকামত বলা শুরু করার পরই হুজরা শরীফ থেকে বের হতেন এবং তাঁকে দেখার পূর্বে দাঁড়াতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং হাদীসের মাধ্যমে বুঝা গেল ইকামতের পূর্বে দাঁড়ানো নিষেধ।
।।।
ණ ইকামতের পূর্বে না পরে কাতার সোজা করবেনঃ
[ ﻋﻦ ﺍﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﺍﻗﻴﻤﺖ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻓﺎﻗﺒﻞ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻮﺟﻬﻪ ﻓﻘﺎﻝ : ﻭﺃﻗﻴﻤﻮﺍ ﺻﻔﻮﻓﻜﻢ ﻭﺗﺮﺍﺻﻮﺍ ﻓﺈﻧﻰ ﺃﺭﺍﻛﻢ ﻣﻦ ﻭﺭﺍﺀ ﻇﻬﺮﺉ . ]
অর্থাৎঃ খাদেমে রাসূল হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নামাযের ইকামত হয়ে গেছে। অতঃপর প্রিয় রাসূল [ ﷺ ] আমাদের দিকে সামনা-সামনি হয়ে ফিরে গেলেন এবং বললেনঃ তোমাদের কাতার বা লাইনসমূহ সোজা কর এবং একে অন্যের সাথে লাগিয়ে মিলিয়ে দাঁড়াও। কেননা নিশ্চয়ই আমি আমার পিছনের দিক থেকেও তোমাদেরকে দেখতে পাই।” [বুখারী শরীফ; ১ম খন্ড, পৃ.১০০, হাদীস: ৭১৯]
আবূ দাউদ শরীফের ১ম খন্ড ৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছেঃ
[ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﻌﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﺑﺸﻴﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺴﻮﺉ ﺻﻔﻮﻓﻨﺎ ﺍﺫﺍ ﻗﻤﻨﺎ ﻟﻠﺼﻼﺓ ﻓﺎﺫﺍ ﺍﺳﺘﻮﻳﻨﺎ ﻛﺒﺮ . ]
অর্থাৎঃ হযরত নু’মান বিন বশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেতাম, তখন প্রিয় রাসূল [ ﷺ ] আমাদের (নামাযের) কাতার সোজা করতেন। কাতার যখন সম্পূর্ণ সোজা হয়ে যেত তখন তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলতেন। [মিশকাত শরীফ; পৃ. ৯৮, হাদীসঃ ১০২৭]
জামাআতের সময় ইমাম ও মুসল্লীগণ কখন দাঁড়াবেন?
_____________________________________
১। আইনী শরহে বুখারীতে (৪র্থ খন্ডের ৩৫৭ পৃষ্টায়) উল্লেখ আছে-
[ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻭﻣﺤﻤﺪ ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﻓﻰ ﺍﻟﺼﻒ ﺍﺯﺍ ﻗﺎﻝ ﺣﻰ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ . ]
অর্থাৎ- ইমাম আবু হানিফা [ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ] ও তার শাগরীদ ইমাম মুহাম্মদ [ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ] বলেছেন – যখন মুয়াজ্জিন ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ বলবে তখন মুসল্লীগণ দাঁড়াবেন।
২। ফতহুল বারী শরহে বুখারীতে (২য় খন্ডের ১৪০ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ আছে-
[ ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﺍﺯﺍ ﻗﺎﻝ ﺣﻰ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻔﻼﺡ . ]
অর্থাৎ- ইমাম আবু হানিফা [ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ] হতে বর্ণিত আছে যে- যখন মুয়াজ্জিন ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলবে তখন মুসল্লিগণ দাঁড়াবেন।
৩। আল্লামা নববী [ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ] শরহে মুসলিমের মধ্যে (১ম খন্ডের ২২১ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ করেছেন-
[ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻭﺍﻟﻜﻮﻓﻴﻮﻥ – ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﻓﻰ ﺍﻟﺼﻒ ﺍﺯﺍ ﻗﺎﻝ ﺣﻰ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ . ]
অর্থাৎ- ইমাম আবু হানিফা [ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এবং কুফার ফকিহগণ বলেছেন- যখন মুয়াজ্জিন ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ বলবে তখন মুসল্লীগণ দাঁড়াবেন।
৪। আউনুল মা’বুদ শরহে আবু দাউদ -এ (২য় খন্ডের ১২৮ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ আছে-
[ ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﺍﺯﺍ ﻗﺎﻝ ﺣﻰ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻔﻼﺡ . ]
অর্থাৎ- ইমাম আবু হানিফা [ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ] হতে বর্ণিত, যখন মুয়াজ্জিন ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলবে তখন মুসল্লীগণ দাঁড়াবেন।
বিঃ দ্রঃ উপরের দুইটি প্রদ্ধতি ইমাম আবু হানিফা [ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ] থেকে বর্ণিত হয়েছে। দুইটি বর্ণনায় “হাইয়্যা আলাল ফালাহ” উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত বর্ণনার ফয়সালা বা সমন্বয় মুফতীগণ এভাবে করেছেন “হাইয়্যা আলাছ ছালাহ” বলার সময় দাঁড়ানো শুরু করবে “হাইয়্যা আলাল ফালাহ” বলার সময় পূর্ণভাবে দাঁড়াবে।
৫। তাহতাভী আলা মারাকিল ফালাহ’ তে (২য় খন্ডের ২২০ পৃষ্ঠায়) উল্লেখ আছে-
[ ﺍﺫﺍ ﺍﺧﺬ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﻓﻰ ﺍﻻﻗﺎﻣﺔ ﻭﺩﺧﻞ ﺭﺟﻞ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﺎﻧﻪ ﻳﻘﻌﺪ ﻭﻻ ﻳﻨﺘﻈﺮ ﻗﺎﺋﻤﺎ ﻓﺎﻧﻪ ﻣﻜﺮﻭﻩ ﻛﻤﺎ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﻀﻤﺮﺍﺕ ﻗﻬﺴﺘﺎﻧﻰ ﻭﻳﻔﻬﻢ ﻣﻨﻪ ﻛﺮﺍﻫﺔ ﺍﺑﺘﺪﺍﺀ ﺍﻻﻗﺎﻣﺔ – ﻭﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻨﻪ ﻏﺎﻓﻠﻮﻥ . ]
অর্থাৎ- যখন মুয়াজ্জিন ইকামত শুরু করবে, এমন সময় যদি কোন মুসল্লী মসজিদে প্রবেশ করে তা হলে তাকে বসে যেতে হবে। দাঁড়িয়ে (হাইয়্যা আলাছ ছালাহ বা ফালাহ) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবে না কেননা উহা মাকরুহ। আল্লামা কাহাস্তানীর মুজমিরাত গ্রন্থে এরুপই বর্ণিত আছে। তাহতাভী প্রণেতা বলেন কাহাস্তানীর ইবারত দ্বারা বুঝা গেল – ইকামতের শুরুতে দাঁড়িয়ে যাওয়া মাকরুহে তাহরীমী। কিন্তু লোকেরা এ সম্পর্কে খুবই গাফেল।
(উল্লেখ্য যে, আল্লামা তাহতাভীর যুগের লোকেরাও এ সম্পর্কে গাফলতি করে একটি মারাত্মক মাকরুহ কাজে লিপ্ত ছিল। বর্তমান কালে এরুপ করা কোন নতুন বিষয় নয়। আমাদের বিপরীত চিন্তার লোকেরা ভারতের জন্মলাভ করার পূর্বে ফতোয়ায়ে আলমগীরী রচিত হয়েছে। বাদশাহ আলমগীর ৭০০ বিজ্ঞ আলেম দিয়ে তৎকালীন ষোল লক্ষ টাকা ব্যয় করে উক্ত ফতোয়া রচনা করেছেন যাদের মধ্যে শাহ্ আব্দুর রহীম দেহলভী [ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ] অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তখন দেওবন্দ মাদ্রাসা ছিল না। উক্ত ফতোয়ায় মুসল্লিগণের দাঁড়ানোর একটি মাত্র পদ্ধতিই বর্ণনা করা হয়েছে তা হল “হাইয়্যা আলাল ফালাহ” তে দাঁড়ানো শেষ করা। নিন্মে আলমগীরীর ইবারত দেখুন।)
৬। (ফতোয়ায়ে) আলমগীরীতে উল্লেখ আছে-
[ ﺍﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺭﺟﻞ ﻋﻨﺪ ﺍﻻﻗﺎﻣﺔ ﻳﻜﺮﻩ ﻟﻪ ﺍﻻﻧﺘﻈﺎﺭ ﻗﺎﺋﻤﺎ – ﻭﻟﻜﻦ ﻳﻘﻌﺪ ﺛﻢ ﻳﻘﻮﻡ ﺍﺫﺍ ﺑﻠﻎ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﻗﻮﻟﻪ ﺣﻰ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻔﻼﺡ ﻛﺬﺍ ﺍﻟﻤﻀﻤﺮﺍﺕ ﺍﻥ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﻏﻴﺮ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﻭﻛﺎﻥ ﺍﻟﻘﻮﻡ ﻣﻊ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﺎﻧﻪ ﻳﻘﻮﻡ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﻭﺍﻟﻘﻮﻡ ﺍﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﺣﻰ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻔﻼﺡ ﻋﻨﺪ ﻋﻠﻤﺎﺋﻨﺎ ﺍﻟﺜﻼﺛﺔ ﻭﻫﻮ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ . ]
অর্থাৎ- ইকামতের সময় কোন মুসল্লী মসজিদে প্রবেশ করলে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা মাকরুহ বরং সে বসে যাবে। মুয়াজ্জিন যখন “হাইয়্যা আলাল ফালাহ” বলবে তখন সে পূর্ণভাবে দাঁড়াবে। মুজমিরাত গ্রন্থে এরুপ ফতোয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। অনুরুপভাবে ইমাম ও মুসল্লীগণ একসাথে মুয়াজ্জিনের “হাইয়্যা আলাল ফালাহ” বলার সময় দাঁড়াবে যদি তারা ইকামতের পূর্ব হতেই মসজিদে বসা থাকেন। হানাফী মাযহাবের প্রথম তিন ইমাম আবু ইউসূফের ইহা ঐক্যমত। ফতোয়ার নীতিমালা অনুযায়ী ইহাকে বিশুদ্ধ সহীহ্ একমাত্র গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বলা হয়। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী, ১ম খন্ড ৫৭ পৃঃ)
অন্য তিন মাযহাবের মতামতঃ
১। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল [ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ] এর মতামত সম্পর্কে ইমাম নববী শরহে মুসলিমে (মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড ২২১ পৃষ্ঠায়) বলেন-
[ ﻭﻛﺎﻥ ﺍﻧﺲ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻳﻘﻮﻡ ﺍﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﻗﺪ ﻗﺎﻣﺖ ﺍﻟﺼﻠﻮﺕ ﻭﺑﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﺣﻤﺪ . ]
অর্থাৎ- রাসূলে পাক [ ﷺ ] এর খাদেম হযরত আনাস [ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ] ইকামতের সময় তখন দাঁড়াতেন যখন মুয়াজ্জিন বলতেন ক্বাদ ক্বামাতিছ ছালাহ। ইহাই ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের অভিমত।
২। আল্লামা আইনী শরহে বুখারীতে (৪র্থ খন্ড ৩৫৭ পৃষ্ঠায়) ইমাম আহমদের অভিমত এভাবে উল্লেখ করেছেন-
[ ﻗﺎﻝ ﺍﺣﻤﺪ ﺍﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﻗﺪ ﻗﺎﻣﺖ ﺍﻟﺼﻠﻮﺕ ﻳﻘﻮﻡ ﺍﻻﻣﺎﻡ . ]
অর্থাৎ- ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল [ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ] এই অভিমত দিয়েছেন যে, যখন মুয়াজ্জিন বলবে ” ক্বাদ ক্বামাতিছ ছালাহ” তখন ইমাম দাঁড়াবে।
৩। ইমাম শাফেয়ী [ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ] এর অভিমত সম্পর্কে আল্লামা কাস্তুলানী বলেন-
[ ﻭﺍﺧﺘﻠﻒ ﻓﻰ ﻭﻗﺖ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﺊ ﻭﺍﻟﺠﻤﻬﻮﺭ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻔﺮﺍﻍ ﻣﻦ ﺍﻻﻗﺎﻣﺔ ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﺍﺑﻰ ﻳﻮﺳﻒ . ]
অর্থাৎ- নামাযের জামাতে দাঁড়ানোর সময়ের ব্যাপারে ইমামগণের মধ্যে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। ইমাম শাফেয়ী এবং অধিকাংশ উলামাগণের মতে ইকামত সমাপ্ত হওয়ার পর ইমাম ও মুসল্লীগণ দাঁড়াবে। হানাফী মাযহাবের ইমাম আবু ইউসুফ [ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ] তাঁর পৃথক একটি মতে ইমাম শাফেয়ীর ন্যায় অভিমত দিয়েছেন। [মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড ২২১ পৃষ্ঠা এবং শরহে মুসলিম শরীফেও রয়েছে]
৪। ইমাম মালেক [ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ] এর অভিমত সম্পর্কে আউনুল মা’বুদ শরহে আবু দাউদ (২য় খন্ড ১২৮ পৃষ্ঠায়) এবং ফতহুল বারী শরহে বুখারী গ্রন্থদ্বয়ে উল্লেখ রয়েছে-
[ ﻭﻗﺎﻝ ﻣﺎﻟﻚ ﻓﻰ ﺍﻻﻣﺆﻃﺎ ﻟﻢ ﺍﺳﻤﻊ ﻓﻰ ﻗﻴﺎﻡ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺣﻴﻦ ﺗﻘﺎﻡ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﺑﺤﺪ ﻣﺤﺪﻭﺩ ﺍﻻ ﺍﻧﻰ ﺍﺭﻯ ﺯﻟﻚ ﻋﻠﻰ ﻃﺎﻗﻪ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﺎﻥ ﻓﻴﻬﻢ ﺍﻟﺜﻘﻴﻞ ﻭﺍﻟﻀﻌﻴﻒ ﻭﺫﻫﺐ ﺍﻻﻛﺜﺮﻭﻥ ﺍﻟﻰ ﺍﻧﻬﻢ ﺍﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﻣﻌﻬﻢ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻟﻢ ﻳﻘﻮﻣﻮﺍ ﺣﺘﻰ ﻳﻔﺮﻍ ﻣﻦ ﺍﻻﻗﺎﻣﺔ . ]
অর্থাৎ- ইমাম মালেক [ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ] বলেছেন- নামাযের ইকামতের কোন পর্যায়ে মুসল্লীগণকে দাঁড়াতে হবে- এ সম্পর্কে আমি কোন চুড়ান্ত হাদীছ এ পর্যন্ত শুনিনি। তবে আমি মুসল্লীগণের শারীরিক শক্তির উপর দাঁড়ানোর বিষয়টি ন্যস্ত করছি। কেননা, মুসল্লীদের মধ্যে কেউ আছে শারীরিকভাবে দূর্বল এবং কেউ আছেন হালকা পাতলা। তবে অধিকাংশ আলেমগণ (মালেকী) অভিমত দিয়েছেন যে, ইকামত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইমাম ও মুসল্লীগণ দাঁড়াবে না।
কাতার কখন সোজা করবেন?
_________________________
কাতার সোজা করা ওয়াজিব। ওয়াজিব কখন আদায় করবেন? এর দুটি পদ্ধতি রয়েছে।
একঃ হযরত ওমর [ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ] কাতার সোজা করতেন ইকামতের পরে। তিনি হযরত আলী [ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ] কে দিয়ে কাতার সোজা করে তারপর তাকবীরে তাহরীমা বাঁধতেন (মিশকাত)। মদিনা শরীফের মসজিদে নববীতে এই প্রথাই বর্তমানে চালু আছে।
দুইঃ বর্তমানে প্রায় সকল মসজিদেই কাতার চিহ্ন দেয়া থাকে। কোন গাফেল মুসল্লী যদি কাতার ভঙ্গ করে বসে থাকেন- তাহলে ইমাম সাহেব ইকামতের পূর্বে সকল মুসল্লীকে দাঁড় করিয়ে কাতার সোজা করে বসিয়ে দিয়ে মুয়াজ্জিনকে ইকামতের নির্দেশ দিলে ওয়াজিব এবং সুন্নাত উভয়টিই পালন করা সহজ হয়। এটা ইমামের সতর্কতার উপর নির্ভরশীল। তিনি জেনে শুনে মুসল্লীগণকে দিয়ে মাকরুহ’ কাজ করালে সেজন্য তিনিই দায়ী থাকবেন। [কৃত- প্রিন্সিপাল হাফেয এম এ জলীল (রহঃ)]