লাখো লাখো শুকরিয়া সে মহান সত্তার অধিকারী আল্লাহ্ পাক পরওয়ার দিগারের দরবারে, যিনি কুন শব্দের দ্বারা আসমান জমীন ও তার মধ্যবর্তী সকল প্রাণীকুল ও বস্তুনিচয়কে অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে অস্তিত্বের আলোকে বিকশিত করেছেন। কোটি কোটি দরূদ ও সালাম জানাই সে নুর নবীজীর ( সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম ) পবিত্র দরবারে, যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুরই সৃষ্টি করা হতোনা। ইনি সে মহান সত্তা যখন হযরত আদমের (আলাইহিসালাম) প্রাণহীন নিথর মুর্তি মাটি ও পানির মধ্যে গড়াগড়ি খাচ্ছিল তখনও তিনি নবুয়তের মহাসম্মানিত পদে আসীন। রঙ্গিলা দুনিয়ার মায়াময় মোহজাল ও শয়তানের কুমন্ত্রণায় দিশেহারা মানবকুলকে সুপথ প্রদর্শনের নিমিত্ত মহান দয়ালু আল্লাহ্তায়ালা যুগে যুগে পৃথিবীতে অসংখ্য নবী ও রাসুলগনকে প্রেরণ করেছেন। যেহেতু নুর নবীজীর ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম ) পরে এ ধরাধামে আর কোন নবীর আর্বিভাব হবেনা, তাই যখনই মানুষ ভ্রান্ত পথে অগ্রসর হয়, তখন তাদের সামনে মহান আল্লাহ্ পাক একজন অলী-আল্লাহ্র আগমন ঘটিয়ে থাকেন। যাতে দিশেহারা মানবমন্ডলী সুপথ প্রাপ্ত হতে পারে। এদের মধ্যে প্রতি একশত বছরের ব্যবধানে তিনি পৃথিবীতে একজন সংস্কারক তথা মুজাদ্দিদ প্রেরণ করে থাকেন যারা তাঁর দ্বীনকে নতুনভাবে পুনরুজ্জীবিত করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে শায়খে আকবর হজরত মুহীউদ্দিন ইবনুল আরাবী (রহঃ) (জন্ম : ৫৬০ হিজরী-ওফাত : ৬৩৮ হিজরী) তাঁর বিশ্বখ্যাত গ্রন্থ ফুসুসুল হিকাম এর ৯১ নং পৃষ্ঠায় বলেছেন,“বেলায়েতের ধারা কোন সময়ও বন্ধ হয় না। যেহেতু এটা সরাসরি আল্লাহ পাকের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কযুক্ত”।
একথা সত্য যে, সাহাবায়ে কিরামগণের (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহুম) তরীকার অনুসারী অলি-আল্লাহ্গণ সত্য পথের দিশারী। তাঁরা নিঃসন্দেহে মুমিন বান্দাগণকে প্রকৃত পথ দেখিয়ে আল্লাহ্ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিতে পারেন। তাই মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র গ্রন্থ কুরআনে হাকিমে বলেছেন, “হে ঈমানদারগন! তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গী হয়ে যাও” – অর্থাৎ তিনি আমাদেরকে তাঁর প্রিয় নেক বান্দাদের তথা আউলিয়ায়ে কিরামগনের সঙ্গ অবলম্বনের জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন।
আল্লাহ্ পাক পবিত্র গ্রন্থ কুরআনে ইরশাদ করেছেন,“ওয়াল্লাজীনা জাহাদু ফীনা লানাহদিয়ান্নাহুম সুবুলানা, ইন্নাল্লাহা মায়াল মুহসিনীন” অর্থাৎ – “যে আল্লাহ্র পথে প্রচেষ্টা চালায় আল্লাহ্ তাঁকে পথ দেখিয়ে দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সৎকর্মশীলদের সাথে আছেন। ” আল কুরআন-সুরা আনকাবুত, আয়াত নং-৬৯।
পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ্পাক আরও বলেছেন, “হে মুহাম্মাদ! আমি আাপনার কাছে নবী রাসুলের কাহিনী বর্ননা করছি। এতে আপনার মনে শক্তি ও সাহসের সঞ্চার হবে এবং আপনি মনে শান্তি লাভ করবেন। ”
নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়ালিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি বায়আতের বন্ধন ছাড়া মৃত্যুবরণ করলো, সে জাহিলিয়াত এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করলো। ” আল হাদীস, মুসলিম ।
এক হাদীসে আছে,“যে ব্যক্তি শরীয়ত শিখলো, কিন্তু তরীকতকে অবজ্ঞা করলো, সে কুফরী করলো, আর যে ব্যক্তি তরীকত শিখলো কিন্তু শরীয়তকে অবজ্ঞা করলো সে যেন একজন জিন্দিকের কাজ করলো, কিন্তু যে ব্যক্তি শরীয়ত ও তরীকত উভয়টাই শিখলো সেই প্রকৃত মুহাক্কিক অর্থাৎ জ্ঞানী ।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তানজিলুর রাহমাতু ইনদা যিকরূস সালিহীন -অর্থাৎ নেক বান্দাদের স্মরণ করলে আল্লাহ্র রহমত নাযিল হয়ে থাকে।” পবিত্র এ হাদীস শরীফের মর্মার্থ অনুযায়ী, ধার্মিক ও অলিআল্লাহদের জীবন কাহিনী আলোচনার মাহফিলে আল্লাহ্র রহমত অবতীর্ণ হয়। আর এ রহমত প্রাপ্তির আশায় যদি কেউ দপ্তর বিছিয়ে দেয়, তবে যতদুর সম্ভব তিনি বিফল হবেন না। এ বিপর্যয়ের যুগে পবিত্রা তাপস তথা সূফী সাধকগণের জ্যোর্তিময় জীবন মানুষকে সাহায্য করে। ফলে মৃত্যুর পুর্বে সৌভাগ্য অর্জন করে এ ধরাধাম থেকে বিদায় নেয়া সম্ভব হয়। কারন অলি আল্লাহ্গনের জীবন কাহিনী সততায় সুসমৃদ্ধ । অতএব, এর দ্বারা মানুষ পুরোপুরি প্রভাবিত হবে, সে বিষয়ে কোন রকম সন্দেহ নাই।
হাদীসে আছে,“নেক মজলিস ও সৎ সাহচার্য মুমিন ব্যক্তির জন্য বিশ লক্ষ পাপানুষ্ঠানের ক্ষমার কারণ হয়ে থাকে”।
হযরতে গাউসে পাক (রহঃ) (জন্ম : ৪৭০ হিজরী – ওফাত : ৫৬১ হিজরী) বলেছেন, “খোদার বন্ধুদের সাহচর্য গ্রহন কর। তাঁরা যার প্রতি নজর নিবদ্ধ করেন, তার রূহানী বা সুক্ষজীবন আরম্ভ হয়। সে ব্যক্তি যদি ঈহুদী, নাসারা বা মাজুসী হয় তবুও। যদি মুসলমান হয় তবে তার ঈমান শক্তিশালী হয়”। আল ফাতহুর রাব্বাণী -পৃষ্টা নং-৫০৫-৫০৬।
যিকরুল আম্বিয়ায়ি ইবাদাতুন ওয়া যিকরুল আউলিয়ায়ী কাফ্ফারাতুন। অর্থাৎ আম্বিয়ায়ে কিরামগনের কথা স্মরণ করলে তা ইবাদাত হিসেবে গন্য হয় আর নেক বান্দা তথা আউলিয়ায়ে কিরামগনের কথা স্মরণ করলে তা বান্দার গুনাহসমুহের জন্য কাফফারা স্বরূপ হয়ে থাকে। সুবহান আল্লাহ্! আল্লাহ্র নেক বান্দা তথা আউলিয়ায়ে কিরামগনের কথা স্মরণ করার কতনা উপকারীতা!
মাওলানা জালালুদ্দিন রুমী (রহঃ) (জন্মঃ১২০৭ খৃষ্টাব্দ – ওফাতঃ ১২৭৩ খৃষ্টাব্দ) ‘মসনবীতে বলেছেন,“বুজুর্গানে দ্বীনের ভালবাসা বেহেশতের চাবি। অস্বীকারকারীরা অভিশাপের যোগ্য। শেষ জামানার বিপদ হতে রক্ষা পাওয়ার মানসে সুফীয়ানে কিরাম অর্থাৎ আধ্যাত্মিক জ্ঞান সম্পন্ন লোকদের অনুসরণ করা একান্ত দরকার”।
হযরত ইউসুফ হামাদানীকে (রহঃ) একবার তাঁর মুরীদানগন জিজ্ঞাসা করলেন, “হুযুর ! বুযুর্গানেদ্বীনগন যখন দুনিয়া থেকে পর্দা করবেন তখন আমরা কী করবো? কোথায়ইবা যাব? আর আমরা মনকে শান্তনাই বা দেব কিভাবে?” এর উত্তরে ইউসুফ হামাদানী (রহঃ) বল্লেন,“তোমরা আউলিয়ায়ে কিরামগনের জীবনীগ্রন্থ থেকে প্রতিদিন কিছু কিছু পাঠ করবে আর ঐসব নিয়ে আলাপ আলোচনা করে দিন কাটাবে এবং তাঁদের অনুসরণে জীবন গঠন করবে। আর তাহলেই তোমরা হিদায়াত লাভ করতে পারবে।”
হযরত শায়খ ফরীদউদ্দীন আত্তার (রহঃ) বলেছেন, “পবিত্র কুরআন ও হাদীস শরীফের পরে সাধক দরবেশগণের কালামই সবচেয়ে বেশী মর্যাদাসম্পন্ন । কেননা, সেগুলি আল্লাহ্র প্রেমের প্রাচুর্যে উজ্জল, পার্র্থিব কলুষতা তাঁদের স্পর্শ করেনা বলেই তাঁরা সর্বজনমান্য বলে আমি মনে করি। ” শায়খ ফরীদউদ্দীন আত্তার (রহঃ) বলেছেন,“পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর অনুধাবন করা জটিল ব্যাপার। তবে সাধক দরবেশগণের পবিত্র জীবন কাহিনী তা বোঝার জন্য ভাষ্য গ্রন্থের কাজ করে।” শায়খ ফরীদউদ্দীন আত্তার (রহঃ) আরও বলেছেন,“ আমি যখন কুরআন হাদীসের পর তাপসগণের বাণীকে উত্তম এবং কুরআন হাদীস অনুযায়ী তাঁদেরকে উত্তম বন্ধুরূপে দেখতে পেলাম, তখন তাঁেদর জীবনালেখ্যের বিষয়ে আলেচনা করতে আÍনিয়োগ করলাম। যদিও আমি তাঁদের সমপর্যায়ভুক্ত নই, তবুও এ কাজকে ব্রত হিসেবে গ্রহন করলাম। কেননা হাদীসে রয়েছে, ‘যে লোক যে দলের অনুসরণ করে, সে রোজ কিয়ামতে সে দলেরই অন্তর্ভূক্ত হবে। ” তিনি আরও বলেন, “আমি দীর্ঘকাল ধরে মনে মনে এ আশা পোষণ করে আসছি, সাধক-দরবেশগনের আলোচনা ছাড়া আর কোন আলোচনা শুনবো না।”
হযরত জুনাঈদ বাগদাদীকে (রহঃ) ( জন্মঃ-২২৮ হিজরী/৮৪৩ খৃষ্টাব্দ – ওফাতঃ-২৯৮ হিজরী/৯১১ খৃষ্টাব্দ) একবার প্রশ্ন করা হয়,“ সাধক দরবেশগণের গল্পকথা শুনে বিশেষ কোন উপকার হয় কি?” এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,“ অলী আল্লাহগণের পবিত্র বাণীগুলি আল্লাহ্র সৈন্যের ন্যায়। এগুলো দূর্বল মানব মনকে সবল করে । অন্তরে সাহস এনে দেয়। পাঠক এগুলি থেকে সাহায্য পায়।”
হযরত আবু আলী দাক্কাক (রহঃ) প্রশ্ন করা হয়, “মহান তাপসদের প্রত্যক্ষ উপদেশ যখন পাওয়া যায়না, তখন তাঁদের বাণী কোন মাধ্যম দ্বারা শুনে কি উদ্দেশ্য পূরণ হতে পারে?” এর উত্তরে তিনি বলেন,“মহৎ লোকদের ঘটনা শুনলে শ্রোতার মনে সৎ সাহস ও আল্লাহ্র প্রতি আসক্তি বৃদ্ধি পায়। অহমিকা দূর হয়। ন্যায়-অন্যায় বিচারবোধ জাগে। কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ তা তার চোখ দেখতে পায়।” হযরত আবু আলী দাক্কাক (রহঃ) আরো বলেছেন,“আমার দু’টি ইচ্ছা ১। কুরআন পাকের আলোচনা শোনা। পূণ্যবান লোকের সাক্ষাত লাভ করা। যেহেতু, আমি এখনও মূর্খ লিখতে,পড়তে ও বলতে জানিনা। তাই আমি এমন লোকের খোঁজ করি, যে আমাকে আল্লাহ্র অলিদের কথা বলবে, আর আমি তা নীরবে শুনে যাবো। অথবা আমি তাঁদের কথা বলবো, সে তা চুপচাপ শুনবে। এছাড়া আমার আর কিছুই কাম্য নয়। সত্যি বলতে কি, যদি জান্নাতেও তাঁদের বিষয়ে অআলেচন না হয়, তাহলে অধম বু আলী তেমন জান্নাত লাভেও প্রত্যাশী নয়।” এ কথা শুনে হযরত আত্তার (রহঃ) বল্লেন, “আমারও মনের এই একই কথা।”
বিখ্যাত সূফী সাধক হযরত ইব্রাহিম খাওয়াস (রহঃ) (ওফাত-২৯১হিজরী) বলেছেন,“অন্তরের ঔষধ হচ্ছে, আল্লাহ্ওয়ালা নেককারদের সোহবত এখতিয়ার করা।”
আল্লামা কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী (রহঃ) বলেছেন,“অলী আল্লাহ হবার প্রথম শর্ত হচ্ছে একজন অলী আল্লাহর সোহবতে থাকা”।
তাযকিরাতুল আউলিয়া গ্রন্থের বিজ্ঞ রচয়িতা বিখ্যাত সূফী সাধক হযরত শায়খ ফরীদউদ্দীন আত্তার (রহঃ) বলেছেন,“তোমরা প্রতিদিন কমপক্ষে বিশ পৃষ্টা করে এ কিতাব থেকে পাঠ করবে। তাহলে এটা তোমাদের জন্য উত্তম নসীহতের কাজ করবে”। আল্লাহর প্রিয় বন্ধুগনের অমুল্য বাণী ও তাঁদের জীবনের বিভিন্ন অত্যাশ্চর্য ঘটনাবলী উপলদ্ধি করার জন্য প্রেমিক সুলভ হৃদয় ও ভাবসমৃদ্ধ মস্তিষ্ক চাই। একথা সত্য যে, সাধারন পাঠক সমাজের জন্য এগুলো হচ্ছে তাওহিদের আলোকদীপ্ত মশাল। এ আলোর মাধ্যমে আল্লাহ্র রহমতে তারা সুপথ পাবেন, তা সুনিশ্চিত ।
অলী আল্লাহ্গনের পবিত্র জীবনকথা আলোচনার উপকারীতা বর্ননা প্রসঙ্গে শায়খ ফরীদউদ্দীন আত্তার (রহঃ) বলেছেন, “অলী আউলিয়াদের প্রতি আমার আকর্ষণ, শ্রদ্ধা ও ভক্তি ছোটবেলা থেকেই। তাঁদের অমূল্য বাণী মনে শান্তি ও তৃপ্তি দেয়। নিয়ম হলো, মানুষ তার প্রিয় জনের সান্নিধ্য চায়। আর তা সম্ভব না হলে, তার আলাপ-আলোচনায় মগ্ন থাকতে চায় । এটা মানুষের চিরন্তন রীতি । বলা বাহুল্য, এরই ভিত্তিতে আমি তাপস-জীবনের উপর এ গ্রন্থ রচনা করলাম। বিশেষ করে, যুগটাও এমন, যখন আল্লাহ্র প্রিয়জনদের বাণী অবলুপ্ত প্রায়। তাছাড়া কিছু লোককে সাধক-দরবেশের বেশে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত অলি আল্লাহ্ একেবারেই দুর্লভ। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি এ যুগে মানুষ অতিমাত্রায় পাপাসক্ত হয়ে আল্লাহ্র অলিদের কথা একেবারে ভুলে যাচ্ছে । এজন্য তাঁদেরই স্মরণার্থে এ গ্রন্থখানা রচনা করে আমি এর নাম দিলাম “তাজকিরাতুল আউলিয়া” অর্থাৎ তাপস স্মরণিকা – যেন বিপথগামী মানুষ এ গ্রন্থ পাঠ করে তাঁদের কথা স্মরণ করে ও তাঁদের রীতিনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নিজেদের কল্যান সাধন করতে পারে। ”
শায়খ ফরীদউদ্দীন আত্তার (রহঃ) বলেন,“দরবেশদের জীবন কাহিনীও মানুষের কিছু উপকার করে। যেমন –
১. তাঁদের অমূল্য বাণী মানুষের মন থেকে পার্থিব লোভ, মোহ ও ভালবাসা দুর করে।
২. পরকালের চিন্তা-ভাবনা দুরীভূত হয়।
৩. হৃদয়ে আল্লাহ্ প্রেমের সৃষ্টি হয়।
৪. তাঁদের জীবন কাহিনী শুনে মানুষ পরকালের সম্বল লাভে তৎপর হয়।
৫. আল্লাহ্র প্রতি প্রেম বেদনায় পরিপূর্ণ আল্লাহ্ প্রেমীদের হৃদয়গুলির বাস্তবরূপটি উপলদ্ধি করা যায়।
অতঃপর শায়খ ফরীদউদ্দীন আত্তার (রহঃ) বলেন,“ আমি একান্তভাবে আশা করি যে,রোজ কিয়ামতে দয়াময় আল্লাহ্ আমাকে এই তাযকিরাতুল আউলিয়া গ্রন্থের বদৌলতে হয়তো নাজাত দিবেন। সব রকমের নৈরাশ্যের অন্ধকারের মাঝেও হয়তো মুক্তির আলো দেখাবেন।
মাওলানা জালালুদ্দিন রুমী তাঁর প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক কাব্য গ্রন্থ ‘মসনবীতে বলেছেন,
“এক যামানা সোহবতে বাআউলিয়া, বেহতর আজ ছদ ছালা তায়াত বেরিয়া” অর্থাৎ – আউলিয়ায়ে কিরামের সংস্পর্শে কিছুক্ষণ বসা, শত বছরের বেরিয়া ইবাদাতের (অর্থাৎ যে ইবাদাতে কোন রকম রিয়া বা লোকদেখানোর প্রবণতা নেই এমন ইবাদাত) চেয়ে উত্তম।
“গরতু খাহী হাম নশীনী বা খোদা, গো নশীনী দর হুজুরে আউলিয়া” ঃ অর্থাৎ -তুমি যদি আল্লাহ্র সাথে বসতে চাও, তাহলে আউলিয়ায়ে কিরামের দরবারে বসো।
“চশমে রওশন কুঞ্জে খাকে আউলিয়া, তাববিনী এবতেদা তা এন্তেহা” ঃ অর্থাৎ – আউলিয়ায়ে কিরামের পদধুলি দ্বারা তোমার চক্ষু উজ্জল কর, তাহলে শুরু হতে শেষ পর্যন্ত দেখতে পাবে।
“আঁ নাকে খাকরা বনজর কিমিয়া কুনন্দ, আয়া বুয়াদ কেহ গোশায়ে চশম বমাকুনন্দ” ঃ অর্থাৎ – যারা দৃষ্টি দ্বারা মাটিকে স্বর্ণ করেন, কতইনা উত্তম হতো যদি তাঁরা আমাদের প্রতি নজর করতেন ।
শায়খ মাহফুজ (রহঃ) বলেছেন, “তোমরা নিজের মানদন্ডে কোন অলী অল্লাহ্কে বিচার করোনা। বরং আউলিয়াদের মানদন্ড ব্যবহার কর। তবেই তাঁদের মহত্ব ও নিজের ক্ষুদ্রত্ব উপলব্ধি করতে পারবে।”
“আউলিয়ারা হাস্ত কুদরত আজ ইলাহ – অর্থাৎ সাবধান তোমরা অলী আল্লাহ্র কোপ দৃষ্টি থেকে বেঁচে থাকবে, কারন আল্লাহ্র অলীগন আল্লাহ্র চোখ দিয়ে দেখে থাকেন। তাঁরা যা কিছুই বলে থাকেন তা তাঁরা আল্লাহ্র পক্ষ থেকেই বলে থাকেন ।
প্রখ্যাত সাধক হজরত মুহীউদ্দিন ইবনুল আরাবী (রহঃ) তাঁর বিশ্বখ্যাত গ্রন্থ ফুসুসুল হিকাম এর ফচ্ছে ওজাইরী অধ্যায়ের ১৭৭ পৃষ্ঠায় বলেছেন,“অলীয়ে কামেলের কাজ খোদার ইচ্ছাশক্তি ও হেকমত অনুযায়ী হয়”।
“চেরাগে আউলিয়া হারগিজ নমিরদ”……………………. অর্থাৎ – যে বাতি অলী আল্লাহ কর্তৃক প্রজ্জলিত হয়ে থাকে তা কখনোই নির্বাপিত হবার নয়।
আউলিয়ায়ে কিরামের অন্বেষণ করা ও তাঁদের সান্নিধ্যলাভের চেষ্টাচরিত্র করা আম্বিয়া আলাইহিসসালাম গনের সুন্নত। যেমন – বনী ইসরাঈলের নবী হযরত মুসা আলাইহিসসালাম একজন কিতাব প্রাপ্ত পয়গাম্বর হওয়া সত্ত্বেও হযরত খাজা খিজির আলাইহিসসালাম এর সংস্পর্শে কয়েকদিন কাটিয়েছিলেন এবং তাঁর সাহচার্যের ফায়েদা হাসিল করে ধন্য হয়েছিলেন।
মাওলানা রুমী (রহঃ) বলেছেন, “আমি কখনই মাওলানা রুমী হতে পারতাম না, যদি হযরত শামস তাবরেজী (রহঃ) আমাকে তাঁর পদতলে ঠাঁই না দিতেন”।
একই কথার প্রতিধ¡নি তুলে হজরত ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বলেন,“আমার জীবনে যদি দুটি বছর না হতো, তবে নোমান (আবু হানিফা) ধ্বংশ হয়ে যেত”। অর্থাৎ আমি আবু হানিফা যদি আমার পীর হযরত ইমাম বাকের (রহঃ) ও ইমাম জাফর সাদেক (রহঃ) এর নিকট বাইয়্যাত না হতাম, তবে শয়তানী প্ররোচনায় ধ্বংশ বা বিভ্রান্ত হয়ে যেতাম।
বিখ্যাত সুফী সাধক হযরত ফতেহ মুসেলী (রহঃ) বলেন,“যে ব্যক্তি নিজ অন্তকরণকে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং পবিত্রাত্মা সাধকদের বাণী আলোচনা থেকে বিরত রাখে, তার অন্তকরণ অবশ্যই মরে যায়”।
আল্লাহ “বর করীমা কারাহা দিসওয়ারে নিস্ত”……………………. অর্থাৎ – আল্লাহ-র অলীর নিকট কোন কাজই অসাধ্য নয়”।
পরিশেষে, মহান রাব্বুল আলামীনের পাক দরবারে নিবেদন, তাঁর পথের পথিকগনের পবিত্র জীবনালেখ্য আলোচনার বিনিময়ে, তিনি যেন আমাদের সকলকে তথা এর সকল পাঠক-পাঠিকাবর্গকে তাঁরই নির্দেশিত সঠিক পথের দিক নির্দেশনা দেন এবং সে পথের উপর আমরণ প্রতিষ্টিত থাকতে সাহায্য করেন। আমীন! ছুম্মা আমীন!
হে প্রভু! আপনি আপনার নবী-রাসূল ও প্রিয় তাপস -তাপসীগনের উসিলায়, আপনার মনোনীত পণ্যবানদের কাছ হতে এ অধম দাসকে দুরে সরিয়ে রাখবেন না আর আপনার অনুগ্রহ দৃষ্টি থেকেও বঞ্চিত করবেন না। করুণাময় প্রভু আমার! আমি আপনার প্রিয় বন্ধুগনের এক অধম দাস। প্রভুগো! জানি আপনিই একমাত্র প্রার্থনা কবুলকারী! আপনার অতি প্রিয় এ সকল বান্দাগনের উসিলায় অধম দাসের দোয়া কবুল করে নিন। আল্লাহম্মা আমীন ! ছুম্মা আমীন!