নবীজির পরিবারের প্রতি যে সুন্দর আচরণ ও মুহব্বত রাখতে হবে এটা কিন্তু স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার আদেশ। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন পাকের সূরা আশ-শুরা ২৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে-
“হে রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি বলুন, আমি তোমাদের নিকট রিসালত-এর দায়িত্ব পালনের কোন প্রতিদান চাই না। তবে তোমারা আমার আত্মীয়-স্বজনদের তথা বংশধরদের সাথে সদাচরণ করবে। (সূরা আশ-শুরা : ২৩)
.
.
.এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিশ্বখ্যাত তাফসীর “তাফসীরে মাযহারী” ৮ম জিঃ ৩২০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে-
لا اسئلكم اجرا الا ان تودوا اقربائى واهل بيتى وعترتى وذلك لانه صلى الله عليه وسلم كان خاتم النبين لا نبى بعده.
অর্থ: “আমি তোমাদের নিকট প্রতিদান চাইনা তবে তোমরা আমার নিকটাত্মীয়, আহলে বাইত ও বংশধরগণের (যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক) হক্ব আদায় করবে। কেননা, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন শেষ নবী। উনার পরে কোন নবী নেই।”
.
.
عن زيد بن ارقم رضى الله تعالى عنه قال قام رسول الله صلى الله عليه وسلم يوما فينا خطيبا بماء يدعى خما بين مكة والمدينة فحمد الله واثنى عليه ووعظ وذكر ثم قال اما بعد الا ايها الناس انما انا بشر يوشك ان ياتينى رسول ربى فاجيب وانا تارك فيكم الثقلين اولهما كتاب الله فيه الهدى والنور فخذوا بكتاب الله واستمسكوا به فحث على كتاب الله ورغب فيه ثم قال واهل بيتى اذكركم الله فى اهل بيتى اذكركم الله فى اهل بيتى.
অর্থ: “হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একবার রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এর মধ্যবর্তী “খোম” নামক পানির নালার নিকট দাঁড়িয়ে আমাদেরকে খুৎবা দান করলেন। প্রথমে আল্লাহ পাক উনার হামদ ও ছানা বর্ণনা করলেন, এরপর ওয়ায ও নছীহত করলেন, অতঃপর বললেন, সাবধান! হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আমি একজন বাশার, অচিরেই আমার নিকট আল্লাহ পাক উনার দূত (হযরত মালাকুল মউত আলাইহিস্ সালাম) আসবে, তখন আমি আমার রব তায়ালার আহবানে সাড়া দিব। আমি তোমাদের মাঝে দু’টি মূল্যবান সম্পদ রেখে যাচ্ছি। তন্মধ্যে প্রথমটি হল, আল্লাহ পাক উনার কিতাব, এর মধ্যে রয়েছে হিদায়েত ও নূর। অতএব, তোমরা আল্লাহ পাক উনার কিতাবকে খুব মজবুতভাবে আঁকড়ে ধর এবং দৃঢ়তার সাথে তার বিধি-বিধান মেনে চল। (বর্ণনাকারী বলেন,) আল্লাহ পাক উনার কিতাবের নিদের্শাবলী কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য তিনি খুব বেশী উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করলেন। অতঃপর বললেন, আর দ্বিতীয়টি হলো; আমার আহলে বাইত। আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বাইত সম্পর্কে আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বিশেষ নছীহত করছি। আমি তোমাদেরকে আমার আহলে বাইত সম্পর্কে আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বিশেষ নছীহত করছি।” (মুসলিম শরীফ)
.
.
عن جابر رضى الله تعالى عنه قال رايت رسول الله صلى الله عليه وسلم فى حجته يوم عرفة وهو على ناقته القصواء يخطب فسمعته يقول يا ايها الناس انى تركت فيكم ما ان اخذتم به لن تضلوا كتاب الله وعترتى اهل بيتى.
অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছি, তিনি (বিদায়) হজ্জে আরাফাতের দিন তাঁর “কাসওয়া” নামক উষ্ট্রীর উপর সওয়ার অবস্থায় খুৎবা দান করছেন। আমি শুনেছি, তিনি খুৎবায় বলেছেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা যদি তাকে শক্তভাবে ধরে রাখ, তবে কখনও গোমরাহ হবেনা। তা হলো আল্লাহ পাক উনার কিতাব ও আমার ইতরত বা আহলে বাইত।” (তিরমিযী শরীফ)
.
.
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم احبوا الله لما يغذوكم من نعمة واحبونى لحب الله واحبوا اهل بيتى لحبى.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা আল্লাহ পাককে মুহব্বত কর। কেননা, তিনি তোমাদের প্রতি খাদ্যসামগ্রীর মাধ্যমে অনুগ্রহ করে থাকেন। আর আমাকে মুহব্বত কর আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে, যেহেতু আমি আল্লাহ পাক উনার হাবীব। আর আমার আহলে বাইতকে মুহব্বত কর আমার মুহব্বতে।” (তিরমিযী শরীফ)
.
.
عن ابى ذر رضى الله تعالى عنه انه قال وهو اخذ بباب الكعبة سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول الا ان مثل اهل بيتى فيكم مثل سفينة نوح من ركبها نجا ومن تخلف عنها هلك.
অর্থ: “হযরত আবূ যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি কা’বা শরীফ-এর দরজা ধরে বলেছেন, আমি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি, সাবধান! আমার আহলে বাইত হলো তোমাদের জন্য হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম-এর নৌকার ন্যায়। যে তাতে আরোহন করবে, সে রক্ষা পাবে। আর যে তা হতে পশ্চাতে থাকবে সে ধ্বংস হবে। (মুসনাদে আহমদ শরীফ)
.
পাক পাঞ্জাতন আহলে বাইতের মর্যাদা ও ফযিলত
আহলে বাইতের ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। তন্মধ্যে কতিপয় হাদীছ শরীফ বর্ণনা করা হলো:
.
.
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت خرج النبى صلى الله عليه وسلم غداة وعليه مرط مرحل من شعر اسود فجاء الحسن بن على فادخله ثم جاء الحسين فدخل معه ثم جاءت فاطمة فادخلها ثم جاء على فادخله ثم قال انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهركم تطهيرا.
অর্থ” “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, একদা ভোরবেলা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একখানা কাল বর্ণের পশমী নকশী কম্বল শরীর মুবারকে জড়িয়ে বের হলেন। এমন সময় হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেখানে আসলেন, তিনি তাঁকে কম্বলের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। তারপর হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম আসলেন, তাঁকেও ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সহিত প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতঃপর হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আসলেন তাঁকেও তাতে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। তারপর হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আসলেন, তাঁকেও তার ভিতরে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতঃপর নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন শরীফ-এর এই আয়াত শরীফখানা পড়লেন, ‘হে আমার আহলে বাইত! আল্লাহ তা’য়ালা আপনাদেরকে সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রেখে পবিত্র করার মত পবিত্র করবেন।” (মুসলিম শরীফ)
.
।
عن سعد بن ابى وقاص رضى الله تعالى عنه قال لما نزلت هذه الاية فقل تعالوا ندع ابناءنا وابناءكم دعا رسول الله صلى الله عليه وسلم عليا وفاطمة وحسنا وحسينا فقال اللهم هؤلاء اهل بيتى.
অর্থ: “হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যখন ندع ابناءنا وابناءكم الاية (আসো আমরা আহবান করি আমাদের সন্তানগণকে ও তোমাদের সন্তানগণকে) আয়াত শরীফ নাযিল হলো, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামকে ডাকলেন এবং বললেন, আয় আল্লাহ পাক! এরা সকলে আমার আহলে বাইত।” (মুসলিম শরীফ)
.
.
عن المسور بن مخرمة رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال فاطمة بضعة منى فمن اغضبها اغضبنى.
অর্থ: “হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আমার (দেহ মুবারকেরই) একটি টুকরা। যে তাঁকে রাগান্বিত করবে, সে আমাকেই রাগান্বিত করলো। ” (বুখারী, মুসলিম)
.
.
عن البراء رضى الله تعالى عنه قال رايت النبى صلى الله عليه وسلم والحسن بن على على عاتقه يقول اللهم انى احبه فاحبه
অর্থ: “হযরত বারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছি যে, তিনি হাসান ইবনে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নিজের কাঁধের উপর রেখে বলছেন, হে আল্লাহ পাক! আমি তাঁকে মুহব্বত করি, আপনিও তাঁকে মুহব্বত করুন।” (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
.
.
عن زيد بن ارقم رضى الله تعال عنه قال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعلى وفاطمة والحسن والحسين انا حرب لمن حاربهم وسلم لمن سالمهم.
অর্থ: “হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নিশ্চয়ই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেছেন, যারা তাঁদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করবে, আমি তাদের শত্রু। পক্ষান্তরে যে তাঁদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবো।” (তিরমিযী শরীফ)
.
।
عن ابى سعيد رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الحسن والحسين سيدا شباب اهل الجنة.
অর্থ: “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম দু’জনই জান্নাতী যুবকগণের সাইয়্যিদ।” (তিরমিযী শরীফ)
.
.
عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الحسن والحسين هما ريحانى من الدنيا.
অর্থ: “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁরা দু’জনেই দুনিয়াতে আমার দু’টি ফুলস্বরূপ। (তিরমিযী শরীফ)
.
.
عن يعلى بن مرة رضى الله تعلى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم حسين منى وانا من حسين احب الله من احب حسينا حسين سبط من الاسباط.
অর্থ: “হযরত ইয়া’লা ইবনে মুররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমার থেকে আর আমি হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। যে ব্যক্তি হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে মুহব্বত করবে আল্লাহ পাক তাকে মুহব্বত করবেন। হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বংশসমূহের মধ্যে একটি বংশ। (তিরমিযী শরীফ)
.
.
عن على رضى الله تعالى عنه قال الحسن اشبه رسول الله صلى الله عليه وسلم ما بين الصدر الى الرأس والحسين اشبه النبيى صلى الله عليه وسلم ما كان اسفل من ذلك.
অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হলেন (চেহারা-আকৃতি-অবয়বে) মাথা মুবারক হতে বক্ষ মুবারক পর্যন্ত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সদৃশ। আর হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম হলেন বক্ষ মুবারক হতে নীচ পর্যন্ত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সদৃশ। (তিরমিযী শরীফ)
.
.
অর্থাৎ নবীজির পরিবার বা বংশধরদের প্রতি ভালোবাসা ও সৎভাব পোষন করা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার এবং নবীজির নির্দেশ। এখানে বাতিল আকিদ্বাভূক্ত শিয়াদের বিষয়টি উঠতেই পারে না।
.
.
হাদীছ শরীফ এ আরো বর্ণিত আছে,
ان رسول الله صلى الله عليه وسلم اخذ بيد (حضرت) حسن عليه السلام و (حضرت) حسين عليه السلام فقال من احبنى واحب هذ ين واباهما وامهما كان معى فى درجة يوم القيا مة.
অর্থ: “একদিন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুদের হাত ধরলেন এবং ইরশাদন করলেন, “যে ব্যক্তি আমাকে মুহব্বত করবে, এ দু’জনকে মুহব্বত করবে এবং উনাদের সম্মানিত আব্বাজান ও সম্মানিত আম্মাজান উনাদেরকে মুহব্বত করবে সে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন আমার সাথে একই স্থানে অবস্থান করবে।” (মুসনদে আহমদ- ২/২৬, শহীদ ইবনে শহীদ- ৪১)
.
.
সুবহানাল্লাহ
সম্মানীত নববী পরিবার
হযরত আহলে বাইত ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিরোধিতাকারীরা জাহান্নামী।
বিখ্যাত ছাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لوان رجلا صعد بين الركن والمقام فصلى وصام ثم مات وهو مبغض لاهل بيت النبى صلى الله عليه وسلم دخل النار.
অর্থ: “যদি কোনো ব্যক্তি বাইতুল্লাহ শরীফ উনার হাজরে আসওয়াদ ও মাক্বামে ইবরাহীম উনার মধ্যে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে এবং রোযাও রাখে, কিন্তু সে হযরত আহলে বাইত শরীফ ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষভাব রেখে মৃত্যুবরণ করে, নিশ্চয়ই সে জাহান্নামে যাবে।” (খছায়েছুল কুবরা)
.
.
অপর এক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
من مات على بغض ال محمد صلى الله عليه وسلم لم يشم راحة الجنة
অর্থ: “যারা হযরত আহলে বাইত শরীফ ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষভাব রেখে মৃত্যুবরণ করবে, তারা পবিত্র জান্নাত উনার সুঘ্রাণ পর্যন্ত পাবে না।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান)
.
.
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
من ابغض اهل البيت فهو منافق.
অর্থ: “হযরত আহলে বাইত ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি যে ব্যক্তি বিদ্বেষভাব রাখবে, সে মুনাফিক।
.
.
উল্লেখ্য, বর্তমানে ওহাবী, নজদী, সালাফী, খারিজী, মওদুদী, জামাতী, তাবলীগী, দেওবন্দী এরা সবাই হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম ও আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণকারী দল। এদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত।
.
.
.সম্মানীত নববী পরিবার
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
من مات على حب ال (سيدنا حضرت) محمد صلى الله عليه وسلم مات شهيدا الا ومن مات على حب ال (سيدنا حضرت) محمد صلى الله عليه و سلم مات مغفورا له.
অর্থ: “যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আল তথা বংশধরগণ উনাদের মুহব্বত মুবারকে মৃত্যুবরণ করবে, সে শহীদের মৃত্যু পাবে।” অর্থাৎ সে শহীদী মর্যাদা পাবে। সুবহানাল্লাহ!
.
.
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা সাবধান হও! যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধরগণ উনাদের মুহব্বত মুবারকে মারা যাবে, সে ব্যক্তির সমস্ত গুনাহখতা মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমা করে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ!
.
.
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
الا ومن مات على حب ال (سيدنا حضرت) محمد صلى الله عليه وسلم مات مؤمنا مستكمل الايمان.
অর্থ: “তোমরা সাবধান হও! যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধরগণ উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তিকাল করবে, সে ব্যক্তি পরিপূর্ণ ঈমানদাররূপে ইন্তিকাল করবে।” সুবহানাল্লাহ!
.
.
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
الا من مات على حب ال (سيدنا حضرت) محمد صلى الله عليه وسلم مات تائبا
অর্থ: “যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধরগণ উনাদের মুহব্বত মুবারকে ইন্তিকাল করবে, সে ব্যক্তি তওবাকারীরূপে ইন্তিকাল করবে।” (তাফসীরে কবীর- ৭/৩৯০, তাফসীরে কাশশাফ, তাফসীরে রুহুল বয়ান- ৩/৫৩৪, নুজহাতুল মাজালিস-২/২২২)
.
.
যে চার ব্যক্তি কিয়ামতের দিন খাছভাবে সুপারিশ পাবেন
হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহু বলেন –
অর্থ: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “ক্বিয়ামতের দিন আমি নিজেই চার শ্রেণীর লোককে খাছভাবে সুপারিশ করবো।
১. যে ব্যক্তি আমার বংশধর তথা আহলে বাইত এবং আওলাদে রসূলদেরকে সম্মান করবে।
২. যে ব্যক্তি আহলে বাইত এবং আওলাদে রসূলদেরকে অর্থ-সম্পদ দ্বারা খিদমত করবে।
৩. যে ব্যক্তি আহলে বাইত এবং আওলাদে রসূলদেরকে কাজে-কর্মে সহযোগিতা বা খিদমত করবে।
৪. যে ব্যক্তি আহলে বাইত এবং আওলাদে রসূলদেরকে মনেপ্রাণে গভীরভাবে মুহব্বত করবে।”
(বিহারুল আনওয়ার-৮/৪৯, যখায়িরুল উক্ববা-১৮)
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
2য় অধ্যায় ::::
.
হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার রচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ না’ত শরীফ-এর অনুবাদ ও শাব্দিক অর্থ
وَاِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ
অর্থ: “নিশ্চয়ই আপনি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।” (সূরা ক্বলম-৪)
হামদ শরীফ, না’ত শরীফ, ক্বাছীদা শরীফ লেখা, পাঠ করা, পাঠ করতে সাহায্য করা, শ্রবণ করা ইত্যাদি সবকিছুই খাছ সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বাংলায় যাকে গযল ও কবিতা বলা হয়। তবে এসবক্ষেত্রে গান ও সংগীত শব্দগুলি ব্যবহার করা হারাম নাজায়িয। কারণ, দ্বীন ইসলামে গান ও সংগীত বলতে কিছু নেই। গান, গীতি ও সংগীত শয়তানী ইবলীসী কার্যকলাপ। যা শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয।
কাব্য ও ছন্দের মিলের মাধ্যমে আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা করাকে হামদ শরীফ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রশংসা করাকে না’ত শরীফ এবং আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের প্রশংসা করাকে মাদহ বা ক্বাছীদা শরীফ বলা হয়। তবে ক্বাছীদা শরীফ দ্বারা সকলপ্রকার দ্বীনী কাব্য ও ছন্দকেও বুঝানো হয়ে থাকে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রশংসামূলক কাব্যের ব্যাপারেও ক্বাছীদা শরীফ শব্দটি ব্যবহার করতে দেখা যায়। মূলত হামদ শরীফ, না’ত শরীফ, মাদহ শরীফ (আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের প্রশংসা) ও দ্বীনী সকল প্রকার অন্তমিলযুক্ত কাব্যকে ক্বাছীদা বলে। অর্থাৎ ক্বাছীদা শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার হয়।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সস্মানিতা শ্রদ্ধেয়া আম্মা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম স্বীয় আওলাদ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে প্রশংসামূলক যে না’ত শরীফ বা ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করেছিলেন তা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুবারক না’ত শরীফ হিসেবে গণ্য ও পরিচিত। যা তিনি স্বীয় ইন্তিকাল মুবারকের অল্পক্ষণ পূর্বে পাঠ (আবৃত্তি) করেছিলেন। যা ১০ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ আল্লামা হযরত ইমাম আবুল ফদ্বল আব্দুর রহমান আবূ বকর জালালুদ্দীন সুয়ূতী শাফিয়ী আশয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত মুবারক- ৯১১) উনার ‘আল খছায়িছুল কুবরা- বাবুন মা ওয়াক্বায়া ইনদা ওয়াফাতি উম্মিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিনাল আইয়াত’ ১ম খন্ড ১৩৫-১৩৬ পৃষ্ঠা এবং ‘কিতাবুল আযীম ওয়াস সুন্নাহ’ কিতাবে সংকলন করেছেন। নিম্নে উক্ত মুবারক না’ত শরীফ বা ক্বাছীদা শরীফ উল্লেখ পূর্বক তার সহজ অনুবাদ ও শাব্দিক অর্থ উল্লেখ করা হলো।
اخرخ ابو نعيم من طريق الزهرى عن ام سماعة بنت ابى رهم عن أمها قالت: شهدت امنة ام رسول الله صلى الله عليه و سلم في علتها التى ماتت فيها ومحمد غلام يقع له خمس سنين عند راسها فنظرت إلى وجهه ثم قالت:
بارك فيك الله من غلام يا ابن الذى من حومة الحمام نجا بعون الملك المنعام فودى غداة الضرب بالسهام بمائة من ابل سوام ان صح ما ابصرت فى الـمنام فانت مبعوث الى الانام من عند ذى الجلال والاكرام تبعث فى الحل و فى الحرام تبعث با لتحقيق والاسلام دين ابيك البر ابراهام فالله انهاك عن الاصنام ان لا تواليها مع الاقوام
ثم قالت:
كل حى ميت وكل جديد بال وكل كبير يفنى وانا ميتة وذكرى باق وقد تركت خيرا وولدت طهرا ثم ماتت فكنا نسمع نوح الجن عليها فحفظنا من ذلك: نبكى الفتاة البرة اللامينة ذات الجمال العفة الرزينة زوجة عبد الله والقرينة ام نبى الله ذى السكينة وصاحب المنبر بالمدينة صارت لدى حفرتها رهينة (كفاية الطالب اللبيب فى خصائص الحبيب الـمعروف الخصائص الكبرى للسيوطى رحمة الله عليه باب ما وقع عند وفاة امه صلى الله عليه وسلم من الايات الجلد ۱ الصفحة ۱۳۶-۱۳۵)
অনুবাদ: হযরত আবূ নুয়াইম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত তাবিয়ী ইমাম ইবনু শিহাব যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হযরত উম্মু সামায়াহ বিনতু আবী রহম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি উনার মাতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন: আমি সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফ-এর (ইন্তিকালের) সময় উনার নিকটে উপস্থিত ছিলাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বয়স মুবারক তখন ছিলো পাঁচ বছর (কিন্তু মশহূর বর্ণনা মতে ৬ বছর)। তিনি উনার মায়ের মাথা মুবারকের পাশেই বসা ছিলেন। আর এমতাবস্থায় উনার মা সাইয়্যিদুনা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরানী চেহারা মুবারকের দিকে তাকিয়ে না’ত শরীফ পাঠ করছিলেন।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুবারক না’ত শরীফখানা হলো-
۱. بارك فيك الله من غلام يا ابن الذى من حومة الحمام
۲. نجا بعون الملك المنعام فودى غداة الضرب بالسهام
۳. بمائة من ابل سوام ان صح ما ابصرت فى المنام
۴. فانت مبعوث الى الانام من عند ذى الجلال والاكرام
۵. تبعث فى الحل و فى الحرام تبعث با لتحقيق والاسلام
۶. دين ابيك البر ابراهام فالله انهاك عن الاصنام
۷. ان لا تواليها مع الاقوام ان لا تواليها مع الاقوام
۸. كل حى ميت وكل جديد بال وكل كبير يفنى وانا ميتة وذكرى باق
۹. وقد تركت خيرا وولدت طهرا وقد تركت خيرا وولدت طهرا
১. হে আমার যোগ্য পুত্র, মহান আল্লাহ পাক আপনাকে বরকতময় করে সৃষ্টি করেছেন। হে আমার যোগ্য পুত্র আমার বিদায়ের সময় আমি তা বলে যাচ্ছি।
শাব্দিক অর্থঃ الله – আল্লাহ পাক, بارك – বরকতময় করেছেন, غلام – আমার পুত্র, حومة- ইন্তিকালের সময়, বিদায়ের মুহুর্ত, মউতকালীন অবস্থা, الحمام – আমার ইন্তিকাল বা বিদায়।
.
.
২. আল্লাহ মালিক মিনয়াম উনার অনুগ্রহে লটারীর সময় উটের বিনিময়ে আমার জীবন সঙ্গী (অর্থাৎ আপনার পিতা) বেঁচে যান।
শাব্দিক অর্থঃ نجا – নাজাত পেয়েছেন, বেঁচে গিয়েছেন, عون – অনুগ্রহ, দয়া, রহমত, সাহায্য, الملك – সবকিছুর অধিপতি মহান আল্লাহ পাক, মালিক, المنعام – নিয়ামতের মালিক, নিয়ামত দানকারী, অনুগ্রহকারী فودى- আমার জীবন সঙ্গী বা স্বামী, দিক, পক্ষ, দল, বাহিনী غداة – সময়, সকাল, ভোর الضرب – লটারী, ভাগ্য, প্রহার, উদাহরণ (এ শব্দটি অবস্থার চাহিদানুযায়ী অনেক অর্থ প্রদান করে) السهام – উট।
.
.
৩. একশত তরুতাজা উটের বিনিময়ে (আপনার পিতা) বেঁচে যান। আর আমি যা স্বপ্নে দেখেছি নিশ্চয়ই তা সত্য। তা হলো-
শাব্দিক অর্থঃ مائة – একশত, ১০০, ১শ’ ابل – উট سوام – তরুতাজা, হৃষ্টপুষ্ট, সুস্থ্য, রোগহীনان – নিশ্চয়ই, অবশ্যই صح – সত্য, মিথ্যা নয়ما – যা, যা কিছু ابصرت – আমি দেখেছি فى – মধ্যে, ভিতরে المنام – স্বপ্নে, ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে।
.
.
৪. আপনি সমস্ত সৃষ্টি জগতের জন্য নবী ও রসূলরূপে প্রেরিত হয়েছেন। মহা সম্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকেই প্রেরিত হয়েছেন।
শাব্দিক অর্থঃ انت – আপনি, مبعوث – নবী ও রসূল রূপে প্রেরীত, الانام – সৃষ্টিজগত, মানবজাতি ও জিন জাতি, عند – পক্ষ থেকেذى – অধিকারী, الجلال والاكرام – মহিমা, মহত্ত্ব, বড়ত্ব, মর্যাদা, সম্মান।
.
.
৫. আপনাকে নবী ও রসূলরূপে পাঠানো হয়েছে মদীনা শরীফ, মক্কা শরীফ ও সারা দুনিয়াবাসীর মধ্যে। আপনাকে নবী ও রসূলরূপে পাঠানো হয়েছে হক্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
শাব্দিক অর্থঃ تبعث – আপনাকে নবী রসূল ও রহমত স্বরূপ পাঠানো হয়েছে, الحل – মক্কা শরীফ-এর এক বিশেষ স্থান الحرام – মদীনা শরীফ ও মক্কা শরীফ, التحقيق – হক্ব, সত্য দ্বীন,الاسلام – দ্বীন ইসলাম, শরীয়ত।
.
.
৬. আপনি আপনার পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার সত্য দ্বীন নিয়ে এসেছেন (যা মূলত আপনার থেকেই উনাকে দান করা হয়েছিলো)। আর মহান আল্লাহ পাক আপনার সম্মান-মর্যাদার কারনেই আপনার উম্মতদেরকে মূর্তিপুজা থেকে রক্ষা করবেন।
শাব্দিক অর্থঃ دين – দ্বীন ইসলাম, ابيك – আপনার পিতা হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম, البر – সত্য, ন্যায়, সঠিকابراهام – হযরত ইব্্রাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনার দ্বীন انهاك – আপনার দ্বারা ধ্বংস করবেন, নিশ্চিহ্ন করবেন, اصنام – মূর্তিসমূহ, মূর্তিপূজা, প্রাণীর ছবি, ভাস্কর্য।
.
.
৭. যেনো মূর্তি-ভাস্কর্যের অনুশীলন সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা যমীনে কেউ না করে। যদিও মুশরিক সম্প্রদায় পূর্ব থেকে তার অনুশীলন করে আসছে।
শাব্দিক অর্থ: ان لا توالى- যেনো অনুশীলন না করে, যেনো সমর্থন না করে, যেনো পৃষ্ঠপোষকতা না করে, ها-উহার অর্থাৎ মূর্তি ও ভাস্কর্যের مع- যদিও, সত্ত্বেও, সঙ্গে, সাথে, সহিত, সহকারে, সহযোগে الاقوام- সম্প্রদায়, জাতি, দল, গোত্র (এখানে মুশরিক সম্প্রদায় উদ্দেশ্য)।
.
.
৮. প্রতিটি প্রাণীর একদিন মউত হবে। তেমনি প্রতিটি নতুন বস্তু পুরাতন হবে। প্রত্যেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা একদিন ইন্তিকাল করবেন। আর আমিও (মধ্যবয়ষ্কা) বিদায় গ্রহণ করে চলে যাচ্ছি। কিন্তু আমার প্রশংসনীয় আলোচনা অনন্তকাল ধরে অবশিষ্ট থাকবে।
শাব্দিক অর্থঃ كل – প্রত্যেক, সকল, সব, সমস্ত حى – প্রাণী, জীবনধারী ميت – মউত, বিছাল, বিদায়, ইন্তিকাল, পূর্ণতা, মৃত্যু جديد -নতুন, নব, নবীন, কচি بال – পুরাতন, ফ্যাকাশে, ধ্বংস। كل – প্রত্যেক, كبير – বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, বড়, বয়সি, শায়খ, يفنى – ধ্বংস হবে, ফানা হবে, انا – আমি, ميتة – বিদায়, বিছাল, ওফাত, ইন্তিকাল, ذكرى – আমার আলোচনা, আমার স্বরণ, باق – অবশিষ্ট, চলমান, অব্যাহত।
.
.
৯. কারণ আমি মহান আল্লাহ পাক উনার সর্বশ্রেষ্ঠ হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে রেখে যাচ্ছি। আমি আপনাকে পূতঃপবিত্র হিসেবে আগমন করতে সাহায্য করেছি।
শাব্দিক অর্থঃ تركت – আমি রেখে গেলাম, خيرا- কল্যাণময়, বরকতপূর্ণ, রহমতময়, ولدت – আমি আগমনে সাহায্য করেছি, طهرا – পাক-পবিত্র, পুতঃ পবিত্র, পবিত্রম।
বর্ণনাকারী বলেন, যখন তিনি বিছাল শরীফ লাভ করলেন, তখন আমরা মুসলমান জিনদের ক্রন্দন বা আর্তনাদ শুনতে পেলাম। তাই আমরা উনাদের থেকেও না’ত শরীফ মুখস্ত করে নিলাম।
মুসলমান জিনদের পঠিত না’ত শরীফ হলো-
۱. نبكى الفتاة البرة اللامينة
ذات الجمال العفة الرزينة
۲. زوجة عبد الله والقرينة
ام نبى الله ذى السكينة
۳. وصاحب المنبر بالمدينة
صارت لدى حفرتها رهينة
১. আমরা মধ্যবয়ষ্কা সৎকর্মপরায়না হযরত আমিনাহ আলাইহাস সালাম উনার জন্য ক্রন্দন করছি। যিনি সৌন্দর্যের অধিকারীনি পবিত্রা ও জ্ঞানী।
শাব্দিক অর্থঃ نبكى – আমরা ক্রন্দন করছি الفتاة- মধ্যবয়স্কা, যুবতী البرة – সৎকর্মপরায়না, সতী-সাধ্বী, পুণ্যময়ী الامينة – সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা উনার নাম, বিশ্বাসী, মুত্তাক্বী, আমনতদারিনী, শান্তিময়ী ذات – অধিকারীনীالجمال – সৌন্দর্য্য, সুন্দর العفة – পবিত্রা, নির্দোষ, সংযমী, চারিত্রিক নিষ্কলুষতা الرزينة – জ্ঞানী, বিচক্ষণ, মেধাবী, গম্ভীর, চিন্তাশীল।
.
২. যিনি হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়া ও জীবন সঙ্গীনি। প্রশান্তির অধিকারী মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতা।
শাব্দিক অর্থঃ زوجة – আহলিয়াহ, যাওজাহ, স্ত্রী। عبد الله – সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিইয়ীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা উনার নাম, আল্লাহ পাক উনার প্রিয় আব্দ القرينة – সঙ্গীনি, সাথী, স্ত্রী ام – মাতা, মা, আম্মা ذى – মালিক, অধিকারী السكينة- প্রশান্তি, শান্তি, দয়া, মায়া, অনুগ্রহ, রহমত।
.
.
৩. এমন নবীজি যিনি মদীনা শরীফ-এর মিম্বরের অধিপতি। উনার মাতা এখন উনার নির্জন ক্ববর শরীফ-এ যাওয়ার নিকটে উপনিত।
শাব্দিক অর্থঃ صا حب – অধিকারী, মালিক, অধিপতি – المنبر খুতবাহ দেয়ার স্থান, নছীহতের স্থান – المدينة মদীনা শরীফ, পবিত্র শহর, পবিত্র স্থান – صارت উপনিত হয়েছেন – لدى নিকটে, কাছে, কাছাকাছি حفرتها -সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার ক্ববর শরীফ, উনার রওদ্বা শরীফ, উনার মাজার শরীফ, – رهينة নির্জন, একাকী।
চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়, হযরত আমিনা ত্বাহিরাহ, ত্বাইয়্যিবাহ আলাইহাস সালাম নিজের মর্যাদার কারণ ও ওসীলা হিসেবে আপন ছেলে সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উল্লেখ করলেন। মূলত: সমস্ত নিয়ামত, রহমত, বরকতের উৎস তিনিই। তিনি যে বস্তুকে বা বিষয়কে ছোহবত দিয়েছেন এবং যে জিনিস বা বস্তু উনার ছোহবত অর্জন করেছে সে বিষয় বা বস্তু বরকতময় রহমতপূর্ণ হয়ে গেছে। তেমনিভাবে ১২ রবীউল আউয়াল শরীফ ও সোমবার শরীফ তারিখ ও বার হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছে উনার বরকতী ছোহবতের কারণেই। সুবহানাল্লাহ। এজন্য ফতওয়া দেয়া হয়: আল্লাহ পাক উনার যমীনে সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ বা খুশী হচ্ছে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
.
.
মানুন
না
মানুন
আপনার
ব্যাপার ,
তবে
মোরতে তো
এক দিন
হবেই!
তখন টের পাবেন। ।
.
.
আল্লাহ আমাদের কে তৌফিক দিন আমিন