(১) কবরে ছাওয়াল-জওয়াব বরহক্ব। ইহা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের অন্তর্ভূক্ত। কোরআন-সুন্নাহ্তে এর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। ছুরা ইবরাহীম ২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্পাক এরশাদ করেছেন-
يُثَبِّتُ اللّهُ الَّذِينَ آمَنُواْ بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ وَيُضِلُّ اللّهُ الظَّالِمِينَ وَيَفْعَلُ اللّهُ مَا يَشَاء
অর্থঃ আল্লাহ্পাক মোমেনদেরকে মজবুত বাক্য (কালেমা) দ্বারা পার্থিব জীবনে এবং পরকালে সুদৃঢ় রাখেন- আর যালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ্ যা ইচ্ছা- তাই করেন”। (সুরা ইবরাহীম-২৭ আয়াত)।
ব্যাখাঃ অত্র আয়াতে “মজবুত বাক্য” অর্থ মজবুত কলেমা বা ঈমানী কলেমা। আল্লাহ্ মুমিনদেরকে দুনিয়াতে কলেমার উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকার শক্তি যোগান এবং পরকালে বা বরযখেও প্রতিষ্ঠিত রাখেন। ইহাই কবরের ছাওয়াল জওয়াবের কোরআনের দলীল।
সহীহ্ বুখারীতে উল্লেখ আছে যে, উক্ত আয়াত কবর আযাব সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। কবরে তিনটি ঈমানী পরীক্ষা হবে। মোমেনরা উক্ত তিনটি পরীক্ষায় পাশ করবে- আর কাফের ও মুনাফিকরা পরীক্ষায় ফেল করে শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। কবরে তিনটি প্রশ্ন হবে ঈমান ও আক্বিদার প্রশ্ন। বাকী প্রশ্ন ও আমলের পরীক্ষা হবে হাশরে। তিনটি প্রশ্ন হবে- আল্লাহ্, ইসলাম ও নবী পরিচিতি সস্পর্কে।
(২) কবরের ছাওয়াল-জওয়াবের ইতিহাসঃ কখন থেকে তা শুরু হয়েছে?
এ ব্যাপারে একখানা হাদীস প্রমাণ করে যে, কবরের ছাওয়াল-জওয়াব উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য খাস। পূর্ব জামানায় পরীক্ষা হয়ে যেতো দুনিয়ায়। আম্বিয়ায়ে কেরামের অবাধ্য কাফির ও মুনাফিকদের দুনিয়াতেই শাস্তি দেয়া হতো। যেমন- হযরত নূহ আলাইহিস সালাম, ছালেহ আলাইহিস সালাম, হুদ আলাইহিস সালাম, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম, লুত আলাইহিস সালাম, মুছা আলাইহিস সালাম, দাউদ আলাইহিস সালাম, ইছা আলাইহিস সালাম- প্রমূখ আম্বিয়ায়ে কেরামের যামানায় অবাধ্য কাফির ও মুনাফিক উম্মতকে প্লাবন, আকাশের মহা গর্জন, যমিন ধস, সাগরে নিমজ্জিত করা, বানরে পরিণত করা, ভূমিকম্প- ইত্যাদি দ্বারা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং- তারা দুনিয়াতেই জাহান্নামী হিসাবে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানের খাতিরে পূর্ব ব্যবস্থা রহিত করে কবরে নিয়ে (সেলে নিয়ে) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ প্রসঙ্গে ছুরা আন্ফালে আবু জাহেল প্রমূখ কাফের কর্তৃক তাৎক্ষনিক দুনিয়াবী শাস্তি নাযিলের দাবীর জবাবে আল্লাহ্পাক বলে দিয়েছেন,
ما کان اللّٰہ لیعذبھم وانت فیھم
অর্থঃ “হে রাসুল! তাদের মধ্যে আপনার অবস্থানের কারণে (এবং আপনার নবুয়তি যুগে) তাদেরকে আযাব ও গজব দ্বারা ধ্বংস করে দেয়া আল্লাহর শান নয়”। (তাফসীরে নাঈমী)
ব্যাখ্যাঃ বুঝা গেল- নবীজীর খাতিরে দুনিয়াতে পাইকারীভাবে শাস্তি দেয়া হবে না। পরকালে যা হবার- তাই হবে। হাকীম তিরমিযি নাওয়াদিরুল উছুল গ্রন্থে বলেছেন- ”কবরের ছাওয়াল জাওয়াব এই উম্মতের জন্য খাস”।
৩। উম্মতে মুহাম্মদীর সওয়াল-জওয়াব হবে কবরেঃ
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ
یاایھا الناس ان ھذہ الامۃ تبتلی فی قبورھا ۔ رواہ ابن ماجۃ والامام احمد عن ابی سیعد الخدری۔
অর্থাৎঃ “হযরত আবু ছায়ীদ খুদরী (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন- ”হে লোক সকল! এই উম্মতকে কবরে পরীক্ষা করা হবে”। (ইবনে মাযাহ্ ও মুসনদে আহমদ্)
এজন্যই রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে কবর আযাব থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করার তালীম দিয়ে এভাবে বলার জন্য এরশাদ করেছেন-
اللھم انی اعوذ بک من عذاب القبر ومن عذاب النار ومن فتنۃ المحیا والممات ومن فتنۃ الدجال ۔ اخرجہ البخاری عن ابی ھریرۃ ص
অর্থাৎঃ “হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই (আমার উম্মতের) কবর আযাব হতে, জাহান্নামের আযাব হতে, জীবন মরণের ফিতনা হতে এবং দাজ্জালের ফিত্না থেকে”। (হযরত আবু হোরায়রা বর্ণিত হাদীস-বুখারী)
(৪) কবরের ঈমানী ছাওয়াল-জওয়াব ও কবর আযাবের দলীল সমূহঃ
(৪: ক) হযরত বারা ইবনে আযেব (রাঃ) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
قال رسول اللّٰہ ﷺ المؤمن یاتیہ ملکان فیجلسانہ فیقولان لہ من ربک فیقول ربی اللّٰہ فیقولان لہ ما دینک فوقل دینی الاسلام فیقولا ن ما ھذا لرجل الذی بعث فیکم فیقول ھو رسول اللّٰہ ﷺ فیقولان لہ وما یدریک فیقول قرأت کتاب اللّٰہ فامنت بہ وصدقت فذلک قولہ یثبت اللّٰہ الذین آمنوا بالقول الثابت فی الحیوۃ الدنیا وفی الاٰخرۃ ۔ قال فینادی مناد من السماء ان صدق عبدی فافرشوہ من الجنۃ وافتحوا لہ بابا الی الجنۃ فیفتح قال فیأتیہ من روحھا وطیبھا ویفسح لہ فیھا مد بصرہ ۔
واما الکافر فذکرموتہ ۔ قال ویعاد روحہ فی جسدہ ویاتیہ ملکان فیجلسانہ فیقولان من ربک فیقول ھاہ ھاہ لادری۔ فیقولان لہ ما دینک فیقول ھاہ ھاہ لاادری فیقولان ما ھذا الرجل الذی بعث فیکم فیقول ھاہ ھاہ لا ادری فینادی مناد من السماء ان کذب فافرشوہ من النار البسوہ من النار وافتحوا لہ بابا الی النار قال فیاتیہ من حرھا وسمومھا ویضیق علیہ قبرہ حتی یختلف فیہ اضلاعا ثم یفیض لہ اعمٰی صم معہ مرزبہ من حدید لو ضرب بھا جبل لصار ترابا ۔ فیضربہ بھا ضربۃ یسمعھا ما بین المشرق والمغرب الاالثقلین فیصیر ترابا ثم یعاد فیہ الروح رواہ ابوداؤد واحمد مشکوۃ باب اثبات عذاب القبر۔
অর্থঃ “হযরত বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেনঃ নবীজী ফরমান- “মৃত মু’মিন ব্যক্তির কাছে দুই ফিরিস্তা (মুনকার-নকীর) এসে তাকে বসিয়ে জিজ্ঞেস করবে- তোমার রব কে? সে বলবে- আমার রব আল্লাহ্। ফেরেস্তাদ্বয় পূণঃ জিজ্ঞেস করবে- তোমার ধর্ম কী? মোমিন ব্যক্তি বলবে- আমার ধর্ম ইসলাম। (জামাতে ইসলাম নয়)। ফিরিস্তাদ্বয় পূনঃ জিজ্ঞেস করবে- এই ব্যক্তি কে- যাঁকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে? মোমিন মূর্দা বলবে- তিনি আল্লাহর রাসুল। ফিরিস্তাদ্বয় পূনঃ জিজ্ঞেস করবে- আচ্ছা, কিভাবে তুমি এসব জানলে? মোমিন মূর্দা বলবে- কেন? আমি তো আল্লাহর কিতাব পড়ে বা শুনে এসব বিষয় জেনেছি, ঈমান এনেছি এবং ইনিকে সত্য নবী বলে বিশ্বাস করেছি। ” রাসুল করিম (ﷺ) বলেন- কবরে মুমিনদের মজবুত থাকার এ বিষয়টিই আল্লাহ্পাক কোরআন মজিদের ছুরা ইবরাহীম ২৭ আয়াতে বর্ণনা করেছেন। (আয়াতটির অর্থ অধ্যায়ের শুরুতে করা হয়েছে)। অতঃপর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- বান্দার এ উত্তরের পর আকাশ থেকে আল্লাহর পক্ষে এক ফিরিস্তা আহ্বান করে বলবে- ”আমার বান্দা সত্য বলেছে। তার জন্য জান্নাতী বিছানা বিছিয়ে দাও, জান্নাতী লেবাছ পরিয়ে দাও এবং বেহেস্তের দিকে একটি দরজা খুলে দাও”। সে অনুযায়ী জান্নাতী দরজা খোলা হবে, জান্নাতী বায়ূ ও জান্নাতী খুশবু কবরে আসতে থাকবে; আর তার কবরকে দৃষ্টিসীমা পর্য্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে”।
আর খালেছ কাফের ও মুসলিম সদৃশ মুনাফিক কাফেরদের বেলায় তাদের মৃত্যুযন্ত্রণা বর্ণনা করার পর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন- ”কবরে তাদের রূহ্ দেহের সাথে সংযুক্ত করার পর দুই ফিরিস্তা এসে তাদেরকে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে- তোমার রব কে? কাফির ও মুনাফিক বলবে- হা: হা: জানিনা-চিনিনা। তারপর বলবে- তোমার ধর্ম কী? সে পূর্বের ন্যায় বলবে- হা: হা: জানিনা-চিনিনা। আবার তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে- এই ব্যক্তি কে- যাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে? সে বলবে-হা: হা: জানিনা- চিনিনা। তখন আকাশ থেকে আল্লাহর পক্ষে একজন ফিরিস্তা ডেকে বলবে- সে মিথ্যুক। তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও, আগুনের পোষাক পরিয়ে দাও এবং জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও”। রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতঃপর বললেন-তার কবরে জাহান্নামের গরম সাইমুম বায়ু আসতে থাকবে। তার কবরকে এমন সঙ্কুচিত করা হবে যে, শরীরের একদিকের হাঁড় অন্যদিকে চলে যাবে। আর তার ওপর অন্ধ ও বধির ফিরিস্তা লেলিয়ে দেয়া হবে। তাদের সাথে থাকবে লোহার হাতুড়ী। এ হাতুড়ী দিয়ে যদি পাহাড়ের উপর আঘাত করা হতো- তাহলে পাহাড় মাটির সাথে মিশে যেতো। ঐ হাতুড়ী দ্বারা ফিরিস্তা তাকে আঘাত করতে থাকবে- যা জ্বীন- ইনছান ছাড়া পূর্ব পশ্চিমের অন্য সব প্রাণী শুনতে পাবে। এতে নিরেট কাফের ও মুনাফিক কাফের মাটির সাথে মিশে যাবে। পুনরায় তার মধ্যে রূহের সংযোগ দিয়ে তাকে জীবিত করা হবে এবং এভাবে কিয়ামত পর্য্যন্ত আযাব চলতে থাকবে”। (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ ও মিশকাত- আযাবুল কবর অধ্যায়)।
ফরিয়াদঃ হে আল্লাহ্! তোমার সম্পর্কে, তোমার হাবীবের সম্পর্কে এবং দ্বীন সম্পর্কে আমাদের ঈমানকে মজবুত করে দাও- যেন কবরের ভয়াবহ আযাব থেকে নিস্কৃতি পাই। আমীন!
বন্ধুগণ, উক্ত তিনটি ঈমানী পরীক্ষায় পাশ করার জন্য নবীজীর নযরে করম এবং আল্লাহর রহমত কামনা করুন এবং ঈমান আক্বিদা দুরস্ত করুন।
উল্লেখ্যঃ ইমাম কুরতুবী (৬৭১ হিজরী) তাঁর তাযকিরাহ্ গ্রন্থে কবরের ছাওয়াল-জাওয়াব ও কবর আযাব সম্পর্কে অনেক দলীল ও হাদীস পেশ করেছেন। সবগুলো হাদীসের মর্ম এক- কিন্তু শব্দ ও বাক্য কিছু কমবেশী রয়েছে। তাই উল্লেখ করা হলো না।
(৫) হযরত আনাছ বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে- ”মোমেন বান্দাকে জাহান্নাম দেখিয়ে বলা হবে- এটা তোমার জন্য তৈরী হয়েছিল- কিন্তু আল্লাহ্ এর পরিবর্তে তোমাকে জান্নাত দিয়েছেন। কবর চল্লিশ গজ অথবা সত্তর গজ প্রশস্ত করা হবে। কবর দেওয়ার পর ফিরিস্তা আসার পূর্বে কবরবাসীরা প্রত্যাবর্তনকারী লোকদের জুতার শব্দ শুনতে পাবে বলেও হাদীসে উল্লেখ আছে।
(৬) হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) -এর বর্ণনায় অতিরিক্ত কয়েকটি তথ্য বর্ণনা করা হয়েছে। যথা- মুনকার-নকীর ফিরিস্তাদ্বয় হবে কুৎসিৎ ও কালো বর্ণের। তাদের চোখ হবে বিড়ালের চোখের ন্যায়। মুমিনরা পরীক্ষায় পাশ করলে এবং নবীজীর পরিচিতি বলতে পারলে ফিরিস্তাদ্বয় বলবেঃ
نم کنومۃ العروس الذی لا یوقظہ الا احب اھلہ الیہ حتی یبعثہ اللّٰہ من مضجعہ ذلک۔
অর্থঃ “হে মুমিনবান্দা! তুমি বাসর ঘরের দুল্হানের ন্যায় সুখের নিদ্রা যেতে থাকো- আপন প্রিয়জন ছাড়া অন্য কেউ তাকে জাগ্রত করবেনা। এই সুখনিদ্রা চলতে থাকবে ততক্ষণ- যখন আল্লাহ্পাক তাকে পুনরুত্থানের দিনে হাশরে উঠাবেন”। (তাযকিরাহ্ ও মিশকাত)।
ব্যাখ্যাঃ বুঝা গেলো- কবরেও মোমেনদের প্রেমাস্পদ থাকবেন। তিনি হলেন আল্লাহর প্রিয় হাবীব (ﷺ)। এজন্য ওলীগণের মৃত্যু দিবসকে ”উরুছের দিন” বলা হয়।
(৭) ৩ জিনিস মৃত ব্যক্তির সহগামী হবেঃ
হযরত আনাছ ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত-রাসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ
قال رسول اللّٰہ ﷺ یتبع المیت ثلاث ۔ فیرجع اثنان ویبقی واحد یتبعہ اھلہ ومالہ وعملہ۔
অর্থাৎঃ ”মৃত ব্যক্তির সাথে তিনটি জিনিস গমন করে। দুটি ফিরে আসে- একটি সাথে যায়। তার পরিবারের লোকেরা এবং তার মাল দৌলত সাথে গিয়ে তাকে ছেড়ে আসে। কিন্তু তার আমল তাকে ছেড়ে আসেনা- বরং সাথে কবরে যায়”।
৮। আমল ও ঈমান মুর্দাকে মুনকার-নকীরের আগমন ও পরীক্ষা গ্রহণের আগাম খবর দেয়ঃ
তাযকিরাহ্ গ্রন্থে ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন-
یلج علی المیت عملہ عقیب لامان فی احسن صورۃ طیب الریح حسن الثیاب فیقول لہ ام اتعرفنی ؟ فیقول من انت الذی من اللّٰہ علی بک فی غربتی؟ فیقول انا عملک الصالح فلا تحزن ولا توجل فعما قلیل یلج علیک منکر ونکیر یسألانک فلا تدھش ۔ ثم یلقنہ حجتہ فینما ھو کذلک اذ دخلا علیہ فینتھران ویقعد انہ مستندا ویقولان من ربک۔
অর্থাৎঃ মৃত ব্যক্তিকে কবরে স্থাপন করার পরপরই তার আমলসমূহ উত্তম সূরতে খুশবু ছড়িয়ে, সুন্দর লেবাছে তার কাছে এসে বলবে “আমাকে চিন্তে পেরেছেন? কবরবাসী বলবে- আপনি এমন উপকারী কোন্ মহাপুরুষ- যাকে আমার এই একাকী মুসাফিরী জীবনে আল্লাহ্পাক দয়া করে পাঠালেন? তখন সে বলবে- আমি আপনার নেক আমলসমূহ। আপনি চিন্তিত হবেন না। তাছাড়া তাড়াহুড়ারও কিছু নেই। কিছুণের মধ্যেই আপনার কাছে মুনকার ও নকীর আসছে। আপনি তাদেরকে দেখে ঘাবড়াবেন না। অতঃপর আমল সমূহ তাকে বাঁচার উপায় শিক্ষা দিবে। এমতাবস্থায়ই মুনকার-নকীর তার কবরে এসে তাকে বসিয়ে ধমকের সূরে জিজ্ঞেস করবে- তোমার রব কে? ইত্যাদি।
ব্যাখ্যাঃ বুঝা গেল- কবরে আমলসমূহ ঈমানী পরীক্ষার বিষয়াবলী সম্পর্কে মৃত ব্যক্তিকে পূর্ব ধারণা দিতে শুরু করবে। সতুরাং, আমল হলো সহকারী ও সহযোগী পরম বন্ধু। ঐদিন আলেমের এলেম, বিদ্যানের বিদ্যা কোন কাজে আসবে না। ঈমান ও আমলই হবে একমাত্র সাহায্যকারী সম্বল।