১১তম অধ্যায়ঃ কবরের আযাব হতে মুক্তিদানকারী আমল

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ইতিপূর্বে কবর আযাবের কারণ সমূহ বর্ণনা  করা হয়েছে। এখন আলোচনা করবো কবর আযাব হতে মুক্তিদানকারী আমলসমূহ সম্পর্কে। দুনিয়ায় থাকতে বান্দা যেসব আমল করে গেলে কবরে ও হাশরে তাকে তা সাহায্য করবে- তাঁর বিস্তারিত বর্ণনা কিতাবুর রূহ্ এবং আত্-তাযকিরাহ্ গ্রন্থদ্বয় থেকে উদ্বৃত করা হবে। কবরে হাশরে বান্দা অন্যান্য  পন্থায়ও উপকৃত হবে বলে অত্র গ্রন্থদ্বয় হতেই ইতিপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রিয়নবীর উম্মতকে নানাহ উছিলায় মুক্তি দেয়ার জন্যই আল্লাহ্পাক দয়া করে বান্দাকে নিজের আমল এবং অন্যের আমল দ্বারা উপকৃত  করবেন এবং মুক্তি দিবেন-   যেমন কবর যিয়ারত, ফাতেহা, ইছালে ছাওয়াব, উরছ,  হজ্বে  বদল,  তিলাওয়াত, সদকা-খয়রাত, নেক সন্তানের দোয়া, জনসেবামূলক কার্যাবলী -ইত্যাদি। ইতিপূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সুন্নী আক্বিদায় বিশ্বাসী প্রত্যেকেই এই বিশ্বাস করে যে, বান্দা নিজের আমল দ্বারা যেভাবে উপকৃত হয়- অন্যের দানকৃত আমলের দ্বারাও তদ্রুপ উপকৃত হয়। কিন্তু একদল ভ্রান্ত বিশ্বাসী লোক অন্যের আমল দ্বারা উপকার পাওয়ার ঘোর বিরোধী। তারা কোরআন সুন্নাহ্র অপব্যাখ্যাকারী ও ইসলাম বিকৃতকারী। আল্লাহ্ তাদের প্রতারণা থেকে সকলকে রক্ষা করুন!

কবর আযাব থেকে মুক্তিদানকারী নিজস্ব ঈমান  ও আমলঃ
=====
(কিতাবুর রূহ্ হতে)

প্রশ্নঃ নিজস্ব ঈমান  ও আমল সমূহ কবরের আযাব, হাশরের  আযাব, দোযখের আযাব, পুলসিরাতের আযাব- ইত্যাদি কঠিন অবস্থায় সাহায্য করবে কিনা? নিজস্ব আমল কিভাবে ঐসব বিপদ হতে রক্ষা করবে? কবর ও হাশরের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য সবচেয়ে বেশী উপকারী কোন্ আমলটি?

সংক্ষিপ্ত জওয়াবঃ যেসব কাজের দ্বারা কবরের আযাব হবে- ঐসব কাজ ছেড়ে দেয়াই মুক্তির গ্যারান্টি। পূর্ব অধ্যায়ে (দশম অধ্যায়) ৬৫টি গুনাহের উল্লেখ করা হয়েছে। ঐগুলি ত্যাগ করলেই কবরে মুক্তি পাওয়া  যাবে। সুতরাং  ঐগুলো ত্যাগ করার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ  করতে হবে- পীর মুর্শিদের সাহায্য নিতে হবে- খোদাভীরুদের সংস্রবে  থাকার চেষ্টা করতে হবে। নিজে নিজে কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে হবে। সবচেয়ে উত্তম ও উপকারী পন্থা হলো- রাত্রে  নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে  সারাদিনের  খতিয়ান ও  লাভ লোকসানের হিসাব নিকাশ করে আগামী দিনের ভাল আমলের প্রতিজ্ঞা করে আল্লাহর দরবারে লজ্জিত হয়ে খালেছ দিলে তাওবা  করে নিদ্রা যাওয়া। এভাবে প্রতিরাত্রে নিয়মিতভাবে হিসাব নিকাশের অভ্যাস গড়ে তুলতে  পারলেই গুনাহের পরিমান কমে আসতে থাকবে। একদিন দেখা যাবে- আল্লাহ্ আপন সাহায্যের হাত বান্দার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং বান্দার মনে নেক কাজের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্বি করে দিয়েছেন। যদি ঐরাত্রে সে মারা যায়- তহলে তাওবাহ্ অবস্থায় মারা গেল। আর যদি হায়াত নিয়ে সকালে ঘুম থেকে সজাগ হয়- তাহলে ভাল কাজের নিয়তের কারণে আল্লাহ্পাক তাঁকে ভাল কাজের  তৌফিক  দিবেন। ইহাকে তরিকতের  ভাষায় “মোরাকাবা ও মোহাছাবা” বলা হয়। এমন অভ্যাস যদি  কেউ গড়ে তুলতে পারেন- তাহলে তাঁর নিদ্রা হবে উত্তম নিদ্রা এবং জাগরণ হবে উত্তম জাগরণ।

মনে মনে গুনাহ্ ত্যাগের দৃঢ় সংকল্পের  সাথে যদি নিদ্রার পূর্বে আল্লাহর কিছু যিকির এবং হাদীসে বর্ণিত কিছু আমল করে বিছানায় যাওয়া যায়- তাহলে এর চেয়ে উত্তম আর  কিছু হতে পারে না। আল্লাহ্ কোন বান্দার প্রতি তুষ্ট হলে তাঁকে এভাবেই নেক কাজের তৌফিক দেন। এক্ষেত্রে তরিকতের নির্ধারিত সবক হলো  সর্বোত্তম  আমল। কেননা, ইহা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের ন্যায় কাজ করে। নিজে নিজে ঔষুধ খেলে তেমন স্থায়ী ফল পাওয়া যায় না।

কবর আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার দলিলঃ কিতাবুর রূহের বিস্তারিত বর্ণনা

(১)  ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেওয়া কবর আযাব থেকে মুক্তির গ্যারান্টি,
رواہ مسلم فی صحیحہ عن سلمان الفارسی رضی اللّٰہ عنہ قال سمعت رسول اللّہ ﷺ یقول رباط یوم ولیلۃ خیر من صیام شھر وقیامہ وان مات اجری علیہ عملہ الذی کان یعملہ واجری علیہ رزقہ وامن الفتان ۔
অর্থঃ ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ্ মুসলিম শরীফে হযরত সালমান ফারছী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে  বর্ণনা  করেছেন- হযরত সালমান ফারছী (রাঃ) বলেন- আমি রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জবানে এরশাদ করতে শুনেছি- “একদিন ও একরাত্রি সীমান্ত পাহারা দেয়া  একমাসের রোযা  ও রাত্রি জাগরনের চেয়েও উত্তম। আর যদি ঐ অবস্থায় মারা যায়- তাহলে তাঁর আমলের পুরস্কারের সাথে অতিরিক্ত জান্নাতী রিযিকও  দেয়া হবে এবং কবর হাশরের আযাব থেকেও মুক্তি দেয়া হবে”।

(২) সীমান্ত পাহারারত অবস্থায় মৃত্যু হলে আমল বৃদ্ধি পায় কিয়ামত পর্য্যন্ত এবং তাঁর কবর আযাব হবে নাঃ
فی جامع الترمذی من حدیث فضالۃ بن عبید عن رسول اللّٰہ ﷺ قال کل میت یختم علی عملہ الاالذی مات مرابطا فی سبیل اللّٰہ فانہ  ینمی لہ عملہ الی یوم القیامۃ ویأمن من فتنۃ القبر ۔ قال الترمذی ھذا حدیث حسن صحیح ۔
অর্থঃ জামে তিরমিযিতে হযরত ফুযালা ইবনে উবায়েদ (রাঃ) রাসুল করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেনঃ নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- “প্রত্যেক মৃতব্যক্তির আমল তাঁর  মৃত্যুর সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায়- কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত চৌকী পাহারারত মুজাহিদের আমল কিয়ামত পর্য্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তাঁকে কবরের আযাব থেকে মুক্ত রাখা হয়”। ইমাম তিরমিযী এই হাদীসখানাকে দ্বিতীয় স্তরের হাসান লি-যাতিহী হাদীস এবং প্রথম  স্তরের  সহীহ্ লি-গায়রিহী হিসাবে  আখ্যায়িত করেছেন”। সহিহ্ এবং হাসান হাদীস অতি নির্ভরযোগ্য হাদীস হিসেবে বিবেচিত।

৩। শহীদগণের কবর আযাব না হওয়ার কারণঃ
وفی سنن  النسائی عن رشید بن سعد من رجل من اصحاب النبی ﷺ  ان رجلا قال یا رسول اللّٰہ ما بال المؤمنین یفتنون فی قبورھم الا الشھید ۔ قال کفی ببارقۃ السیوف علی رأسہ فتنۃ ۔
অর্থঃ ইমাম নাছায়ী রশিদ ইবনে ছাআদ সূত্রে জনৈক সাহাবীর একটি রেওয়ায়াত এভাবে বর্ণনা করেছেন- ”একজন সাহাবী রাসুলপাকের  খেদমতে জানতে চাইলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ্! সব মুমিনদেরই কবরের বিপদ হবে- কিন্তু শহীদগণের হবেনা- এর কারণ কি? নবী  করিম (ﷺ) জবাব দিলেন- শহীদগণের মাথায় তরবারীর কঠোর আঘাতই ছিল কবরের বিপদের চেয়ে বড় বিপদ। শহীদগণ একবার বিপদ ভোগ করেছেন- তাই দ্বিতীয়বার ভোগ করতে হবে না”।

৪। আল্লাহর নিকট শহীদগণের ছয়টি মর্যাদা
وعن  المقدام بن معدیکرب قال قال رسول اللّٰہ ﷺ للشھید ست خصال ۔ یغفر لہ فی اول دفعۃ من دمہ ویری مقعدہ من الجنۃ۔ ویجار من عذاب القبر ۔ ویأمن من الفزع الاکبر ۔ ویوضع علی رأسہ تاج الوقار الب اقوتۃ منہ خیر من الدنیا وما فیھا ۔ یزوج اثنین وسبعین زوجۃ من الحور العین ۔ ویشفع فی سبعین من اقار بہ  ۔ رواہ ابن ماجۃ والترمذی وھذا لفظہ وقال ھذا حسن صحیح ۔
অর্থঃ ইমাম  তিরমিযি এবং ইবনে মাজাহ হযরত মিকদাম  ইবনে মা’দিকারাব (রাঃ) থেকে  বর্ণনা করেছেন- হযরত মা’দি কারাব (রাঃ)   বলেন- রাসুলপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “শহীদগণকে ছয়টি  বিশেষ মর্যাদা দেয়া হবে। (ক) শাহাদাতের প্রথম ফোটা রক্ত ঝড়ার সাথে সাথেই তাঁর সব গুনাহ্ ক্ষমা করা হবে। (খ) জান্নাতে তাঁর জন্য নির্ধারিত স্থান সে পূর্বেই দেখতে পাবে। (গ) কবরের আযাব ও কষ্ট থেকে সে মুক্ত থাকবে। (ঘ) কিয়ামতের ভয়ঙ্কর ভয়-ভীতি থেকে নিরাপদ থাকবে। (ঙ) তাঁর মাথায় ইয়াকুত পাথর খচিত সম্মানিত তাজ পরানো হবে- যার একখণ্ড ইয়াকুত পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয়  বস্তু থেকে অনেক বেশী উত্তম হবে। (চ) জান্নাতে বাহাত্তর জন ডাগর নয়না হুরের সাথে তাঁর বিবাহ হবে। (ছ) সে তাঁর নিকট আত্মীয়স্বজনের মধ্যে সত্তরজনকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিতে পারবে”। ইমাম তিরমিযি এই হাদীসকে হাসান লি-যাতিহী এবং সহীহ লি-গায়রিহি বলে অভিহিত করেছেন।

ব্যাখ্যাঃ হাদীসে বলা হয়েছে- ছয়টি মর্যাদা- কিন্তু  হিসাবে দেখা যায়- ৭টি মর্যাদা রাবীর বর্ণনায় এসে গেছে।  হয়তো রাবী সাত বলতে চেয়েছিলেন- কিন্তু মুখে ছয় এসে গেছে। তাই তাঁর হুবহু বাক্য বর্ণনা করা হয়েছে। আর একটি   বিষয় লক্ষণীয়- নবীজী শাহাদাতের ৭টি পুরষ্কার কি না দেখেই ঘোষণা  করেছেন?  কখনই  নয়। হুযুরের  আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গিতে সাহাবায়ে কেরাম শহীদ হওয়ার জন্য পাগল হয়ে পতঙ্গের  মত যুদ্ধ ময়দানে  ঝাঁপিয়ে পড়তেন। আর একটি  জওয়াব এও হতে পারে- আরবীতে ৬ ও ৭ লিখা হয় ও হয়তো রাবী বলেছেন আর শাগরিদগণ শুনেছেন।

৫। ছুরা মুলক তিলাওয়াতকারীর কবর আযাব মাফ
وعن ابن عباس ص قال ضرب رجل من اصحاب رسول اللّہ ﷺ خباء ۃ علی قبر وھو  لا یحسب انہ قبر ۔ فاذا قبر انسان یقرأ سورۃ الملک حتی ختمھا ۔ فاتی النبی ﷺ والہ فقال یا رسول اللّٰہ ضربت خبائی علی قبر وانا لا احسب انہ قبر انسان وھو یقرأ سورۃ الملک حتی ختمھا ۔ فقال النبی ﷺ ھی المانعۃ ۔ ھی المنجیۃ ۔ تنجیہ من عذاب القبر ۔ قال الترمذی ھذا حدیث حسن غریب ۔
অর্থঃ ইমাম তিরমিযি হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা সুত্রে বর্ণনা করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন- “নবী করিম (ﷺ) -এর একজন  সাহাবী একটি  কবরের উপর  তাঁবু ফেলেছিলেন। তিনি জানতেন না যে, ওখানে  কবর আছে। হঠাৎ করে তিনি বুঝতে পারলেন  যে, উহা মানুষের কবর- এবং কবরবাসী সুরা মুলক  পাঠ করছেন। তিনি ৩০  আয়াত বিশিষ্ট পূর্ণ সুরা পাঠ করলেন। ঐ সাহাবী নবী করিম (ﷺ) -এর দরবারে এসে বললেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ্! আমি একটি কবরের  উপর না জেনে তাঁবু ফেলেছিলাম। হঠাৎ শুনি- একজন লোক কবরে  পূর্ণ সুরা মুলক তিলাওয়াত করছেন। তাই আমি তাবু তুলে নিলাম। হুযুর (ﷺ) এরশাদ করলেন- ”ছুরা মুলক আযাব প্রতিরোধকারী, ইহা নাজাত দানকারী। কবরবাসীকে  উহা কবর আযাব থেকে নাজাত দান করে”। ইমাম তিরমিযী বলেন- এই হাদীসখানা হাসান- কিন্তু প্রত্যেকযুগে একজন রাবীর বর্ণিত- তাই ইহাকে গরীব বলা হয়।

মন্তব্যঃ যারা নিয়মিত ছুরা মূলক তিলাওয়াত করবে- তারা কবর আযাব থেকে মুক্ত থাকবে- ইন্শা আল্লাহ্।

(৬) সন্তানাদিকে সুরা মুলক মুখস্ত করানো তাদের প্রতি পিতা-মাতার উত্তম হাদিয়া
عن ابن عباس رضی اللّٰہ عنھما قال رجل الا اتحفک بحدیث تفرح  بہ ۔ قال الرجل بلی ۔ قال اقرأ تبارک الذی بیدہ الملک وھو علی کل شیئ قدیر۔ احفظھا و علمھا اھلک وولدک وصبیان بیتک وجیرانک فانھا المنجیہ والمجادلۃ تجادل او تخاصم یوم القیامۃ عند ربھا لقارءھا وتطلب لہ الی ربھا ان ینجیہ من عذاب النار اذا کانت فی جوفہ  وینجی اللّٰہ بہ صاحبھا من عذاب القبر ۔ قال رسول   اللّٰہ  ﷺ لوودت انھا فی قلب کل انسان من امتی
অর্থঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) একজন লোককে বললেন- আমি কি তোমাকে একটি উপহার দেবনা- যাতে তুমি  খুশী হয়ে  যাবে? লোকটি বললেন- অবশ্যই। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন- “তুমি সুরা মুলক- অর্থাৎ তাবারাকাল্লাযী পড়ো, মুখস্ত করো এবং তোমার পরিবার, সন্তান,  ঘরের শিশু, প্রতিবেশী- সবাইকে উক্ত সুরা শিক্ষা দাও। কেননা, উহা নাজাত দানকারী। উহা কিয়ামতের দিনে উহার পাঠকারীদের পক্ষে আল্লাহর  কাছে দস্তুরমত ঝগড়া করবে। উহা আল্লাহর   কাছে  ফরিয়াদ  করবে- যাতে তিলাওয়াতকারীকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করা হয়- যতক্ষণ পর্য্যন্ত উহা তিলাওয়াতকারীর পেটে  (মুখস্ত)  থাকে। আল্লাহ্পাক এই সুরা পাঠকারীকে কবরের  আযাব থেকেও রক্ষা করবে। রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) এরশাদ করেছেন- ”আমি একথা পছন্দ করি- এই সুরা যেন আমার উম্মতের সকলের ক্বলবে থাকে”। (মুসনাদে আবদ ইবনে হামীদ)

৭। ছুরা মুলক তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করে তাকে ক্ষমা করাবে
قال ابو عمر بن عبد  البر وصح عن رسول اللّٰہ  ﷺ انہ قال ان سورۃ ثلاثین آیۃ  شفعت فی صاحبھا حتی غفرلہ (تبارک الذی بیدہ الملک)
অর্থঃ আবু ওমর ইবনে আবদুল বার সহী সনদে নবী করিম (ﷺ) থেকে   রেওয়ায়াত করেছেন- “রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট ছুরাটি উহার তিলাওয়াতকারীর পক্ষে শাফাআত করে তাকে ক্ষমা করাবে। উক্ত ছুরাটি হলো তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মূলক…..

(৮) কলেরা রোগী শাহাদাতের সওয়াব পাবে
وفی سنن ابن ماجۃ من حدیث ابی ھریرۃ رضی اللّٰہ عنہ یرفعہ من مات مبطونا مات شھیدا وفی فتنۃ القبر وغدی وریح علیہ یرزق من الجنۃ ۔
অর্থঃ ইবনে মাজাহ হযরত আবু হোরায়রা থেকে মারফু হাদীস  বর্ণনা  করেছেন-  “নবী  করিম  (ﷺ)  এরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় (কলেরায়) মারা যায়, সে শহীদ হিসাবে গণ্য হবে এবং  কবরের আযাব থেকে রক্ষা পেয়ে সকাল সন্ধ্যায় জান্নাতী রিযিকপ্রাপ্ত হবে”।  (ইবনে মাযাহ্)

(৯) কলেরায় মৃত্যু বরণকারী কবর আযাব থেকে মুক্ত থাকবে
وفی سنن النسائی عن جامع بن شداد قال سمعت عبد اللّٰہ بن یشکر یقول کنت جالسا مع سلیمان بن صرد وخالد بن عرقطۃ فذکروا ان رجلا مات ببطنہ فاذا ھما یشتھیان ان یکونا شھدا جنازتہ فقال احدھا للاٰخر الم یقل رسول اللّٰہ ﷺ من قتلہ بطنہ لم یعذب فی قبرہ۔
অর্থঃ ইমাম নাছায়ী জামে’ ইবনে শাদ্দাদ থেকে বর্ণনা করেন। জামে’  বলেন-  আমি আবদুল্লাহ্ ইবনে ইয়াশ্কুরকে বলতে  শুনেছি-  তিনি বলেন, আমি সোলাইমান ইবনে র্ছাদ এবং খালেদ ইবনে আরক্বাতাহ্ -এর সাথে  বসা ছিলাম। সোলায়মান এবং খালেদ বলাবলি করছিল-একজন  লোক  কলেরায় মারা গিয়েছেন। তারা উভয়ে তার জানাযায় শরিক হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেন। একজন আরেকজনকে বললেন- নবী করীম (দরুদ) কি একথা বলেননি যে, যে ব্যক্তি কলেরায় মারা যাবে- তাকে  কবরে আযাব দেয়া হবেনা”? (অবশ্যই বলেছেন)

(১০) শুক্রবার রাত্রে বা দিনে মৃত্যুবরণকারীর মুক্তি
وفی الترمذی من حدیث ربیعۃ بن سیف عن عبد اللّٰہ بن عمرو قال قال رسول اللّٰہ ﷺ مامن مسلم یموت یوم الجمعۃ او لیلۃ الجمعۃ الاوفاہ اللّٰہ فتنۃ القبر ۔ قال الترمذی ھذا  حدیث حسن غریب۔
অর্থঃ ইমাম তিরমিযি রাবিয়া ইবনে ছাইফ থেকে, তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনে আমর (রাঃ) বলেন-  রাসুল  করিম  (ﷺ) এরশাদ করেছেন- যে মুসলমান শুক্রবার দিনে অথবা রাত্রে মারা যায়- তাকে আল্লাহ্ কবর আযাব থেকে রক্ষা করবেন”।

ইমাম তিরমিযি  এই হাদীসখানাকে হাছান ও গরীব বলেছেন- অর্থাৎ প্রতি যুগে একজন উত্তম রাবী থেকে ইহা বর্ণিত হয়েছে।

(১১) বিভিন্ন আমল বিভিন্ন  বিপদের সময় সাহায্য করবে

হযরত আবদুর রহমান  ইবনে ছামুরা (রাঃ) বর্ণনা করেন- আমরা কতিপয়  সাহাবী মদিনা শরীফের শহরতলীতে ছিলাম। নবী করিম (ﷺ) আমাদের কাছে তাশরীফ এনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ এক হাদীস এরশাদ করতে লাগলেন-

فقال انی رایت البارحۃ عجبا ۔ رایت رجلا من امتی اتاہ ملک الموت لیقبض روحہ فجاء برہ بوالدیہ فرد عنہ ملک الموت ۔ ورأیت رجلا من امتی قد احتوشہ الشیا طین فجاء تہ صلاتہ فاستنقذتہ من ایدیھم ۔ ورایت رجلا من امتی قد احتوشتہ ملائکۃ العذاب فجاء تہ صلاتہ فاستنقذتہ من ایدیھم ۔ ورایت رجلا من امتی یلھث عطشا فلما دنا من حوض منع وطرد فجاء ہ صیامہ رمضان فاسقاہ وارواہ ۔ ورایت رجلا من امتی ورایت النبیین جلوسا حلقا حلقا کلما دنا الی حلقۃ طرد ومنع فجاء ہ غسلہ من الجنابۃ واخذ یدہ واقعدہ الی جنبی۔ ورایت رجلا من امتی من بین یدیہ ظلمۃ ومن خلفہ ظلمۃ وعن یمینہ ظلمۃ وعن یسارہ ظلمۃ ومن فوقہ ظلمۃ وھو متحیر فیہ فجاء ہ ھجہ وعمرتہ فاستخرجاہ من الظلمۃ وادخلاہ فی النور۔ ورایت رجلا من امتی وھم یتقی النار وشررھا فجاء تہ صدقتہ فصارت سترا بینہ وبین النار وظلا علی راسہ۔ ورایت رجلا من امتی یکلم  المومنین ولا یکلمونہ فجاء تہ  صلتہ  لرحمہ فقالت یا معشر المومنین انہ  کان وصولا لرحمہ فکموہ فکمہ المومنون وصافحوہ وصافحھم ۔ روایت رجلا من امتی قد احن وشتہ الزبانیۃ فجاۂ امرہ بالمعروف ونھیہ عن المنکر فاستنقذہ من ایدیھم ادخلہ فی ملائکۃ الرحمۃ ۔ ورایت رجلا من امتی جاثیا علی رکبتیہ وبینہ وبین اللّٰہ حجاب فجاء ہ حسن خلقہ فاخذ بیدہ فادخلہ اللّٰہ عزوجل۔ ورایت رجلا من امتی قد ذھبت صحیفتہ من قبل شمالہ فجاء ہ خوفہ ۔ من اللّٰہ عزوجل فاخذ صحیفتہ فوضعھا فیمنہ  ۔ ورایت رجلا من امتی خف میزانہ فجاۂ  افراطہ فثقلوا میزانہ ۔ ورایت رجلا من امتی قائما علی شفیر جھنم فجاۂ رجاۂ من اللّٰہ عزوجل فاستنقذہ منہ ومضی ۔ ورایت رجلا من امتی قد ھوی فی النار فجاء ہ دمعتہ التی قد بکی من خشیۃ اللّٰہ عزوجل فاستنقذتہ من ذلک ۔ ورایت رجلا من امتی قائما علی الصراط یرعد کما ترعد السعفۃ من عاصف ۔ فجاۂ حسن ظنہ باللّٰہ عزوجل فسکن روعہ ومضی۔ ورایت رجلا من امتی یزحف علی الصراط یحبو احیانا یتعلق احیانا فجاۂ صلوتہ فاقامتھا علی الصراط قد میھا  وانفذتہ ۔ ورایت رجلا من امتی انتھی الی ابواب الجنۃ فغلقت الابواب دونہ فجاءۃ شھادتہ ان لا الٰہ الا اللّٰہ ففتحت لہ الابواب۔ وادخلتہ الجنۃ ۔ قال الحافظ ابو موسی ھذا حدیث حسن جدا ۔رواہ عن سعید بن المسیب وعمر بن ذر۔

অর্থঃ আবদুর রহমান ইবনে ছামুরা (রাঃ) বলেন- নবী করিম (ﷺ)  মদিনার শহরতলীতে আমাদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে লক্ষ্য করে এরশাদ করলেন- আমি গতরাত্রে একটি আশ্চর্য জনক স্বপ্ন দেখেছি। আমি আমার এক উম্মতকে দেখলাম- তার কাছে মালাকুল মউত রূহ্ কব্জ  করার জন্য বসেছে।  এমন সময় তার পিতা-মাতার প্রতি তার ”সদ্ব্যবহার” এসে বাধা দিল। তাতেই মালাকুল মউত ফিরে চলে গেলো। আমার আরেক উম্মতকে দেখলাম- শয়তানেরা এসে তাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে- এমন সময় তার ”যিকির-আয্কার” এসে উপস্থিত।  অতঃপর শয়তানেরা তার নিকট থেকে  উড়াল দিয়ে পলায়ন করলো। আমার আরেক উম্মতকে দেখলাম- আযাবের ফিরিস্তারা এসে তাকে ধমকাচ্ছে ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এমন সময় তার নামায এসে তাকে তাদের কাছ থেকে মুক্ত করে আনলো। আমার আরেক উম্মতকে দেখলাম- সে পিপাসায় জিহ্বা বের করে হাঁপাচ্ছে। সে যখনই  একটি কুপের কাছে যাচ্ছে- তখনই তাকে বারন করা হচ্ছে এবং হাঁকিয়ে পিছনে হটিয়ে দিচ্ছে। এমন সময় তার ”রমযানের রোযা” এসে তাকে পানি তুলে পান করালো ও পিপাসা নিবারণ করালো। আমার আরেক উম্মতকে দেখলাম- এবং আরো দেখলাম- কতেক নবী গোল হয়ে বসে আছেন। আর ঐ উম্মত যখনই তাঁদের নিকটবর্তী হচ্ছে- তখনই তাকে বারণ করা হচ্ছে এবং তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এমন সময় তার ”ফরয গোসল” এসে তাকে হাত ধরে আমার কাছে এনে বসিয়ে দিল। আমার উম্মতের আরেক ব্যক্তিকে দেখলাম- তার  সামনে, পিছনে, ডানে, বামে ও উপরে অন্ধকার আর অন্ধকার। সে বেদিশা হয়ে ঘুরছে। এমন সময় তার ”হজ্জ ও ওমরাহ্”এসে তাকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর মধ্যে এনে পৌঁছিয়ে দিলো। আমার উম্মতের আরেক ব্যক্তিকে দেখলাম- সে আগুন ও তার শিখা থেকে বাঁচার জন্য প্রবলভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। এমন সময় তার ”দানকৃত সদ্কা” এসে তার ও আগুনের মধ্যখানে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ালো এবং তার মাথার উপরে ছায়া দিলো।

“আমার উম্মতের আরেক ব্যক্তিকে দেখলাম- সে কিছু মুমিন লোকদের সাথে কথা বলতে চাচ্ছে- কিন্তু তারা তার সাথে কথা বলছেনা। এমন সময় ”আত্মীয়দের প্রতি তার  সুসম্পর্ক” এসে মুমিনদের লক্ষ্য করে বললো- হে মুমিনগণ, এই ব্যক্তি আপনজনদের সাথে ভাল সর্ম্পক রেখেছে- তোমরা তার সাথে কথা বলতে পারো। তার কথা শুনে মোমেন ব্যক্তিরা তার সাথে কথা বললো এবং পরস্পর করমর্দন  (মোসাফাহা) করলো। আমার উম্মতের আরেক ব্যক্তিকে দেখলাম- আযাবের যাবানিয়া ফিরিস্তারা  তাকে ভয়-ভীতি  দেখাচ্ছে- এমন সময় তার ”আম্র বিল মা’রুফ ও নেহী আনিল মুনকার” (ভালকাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ) এসে যাবানিয়া ফিরিস্তাদের হাত থেকে উদ্ধার করে তাকে রহমতের ফিরিস্তাদের কাছে হস্তান্তর করে দিলো।

আমার উম্মতের আরেক ব্যক্তিকে দেখলাম- সে হাঁটুর উপর উপুড় হয়ে আছে এবং আল্লাহ্ ও তার মধ্যখানে একটি পর্দা পড়ে আছে। এমন সময় তার ”সৎ স্বভাব” এসে তার হাত  ধরে তুলে আল্লাহর কাছে পৌঁছিয়ে দিলো। আমার উম্মতের আরেক ব্যক্তিকে দেখলাম- তার আমলনামা তার বামদিকে চলে যাচ্ছে। এমন  সময় আল্লাহর প্রতি তার ”ভয়-ভীতি” এগিয়ে আসলো এবং আমলনামাটি এনে তার ডান হতে রেখে দিলো। আমার আরেক উম্মতকে  দেখলাম- তার মিজানের পাল্লা হাল্কা হয়ে যাচ্ছে। এমন সময় তার “উত্তম অযু” এসে তার নেকীর পাল্লা ভারী করে দিলো।

আমার উম্মতের আরেক  ব্যক্তিকে দেখলাম- সে জাহান্নামের তীরে দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় আল্লাহর প্রতি তার ”আস্থা ও ভরসা” এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে চলে গেলো। আমার আরেক উম্মতকে দেখলাম- সে জাহান্নামে নিচের দিকে চলে যাচ্ছে। এমন সময় “আল্লাহর ভয়ে তার রোদন” এসে তাকে উদ্ধার করে চলে গেলো। আমার  উম্মতের  আরেক ব্যক্তিকে দেখলাম- সে পুলসিরাতের উপর থরথর করে কাঁপছে- যেভাবে খেজুর গাছের শুকনাপাতা  শীতল হাওয়ায় থরথর  করে কাঁপে। অতঃপর আল্লাহর প্রতি তার ”উত্তম ধারণা” এসে তার কাঁপুনী বন্ধ করে দিয়ে চলে গেলো। আমার উম্মতের আরেক ব্যক্তিকে দেখলাম- সে পুল্ছিরাতের উপর পিছল খাচ্ছে। কখনও সে পড়ে যাচ্ছে, কখনও উঠে দাঁড়াচ্ছে। এমন  সময় আমার উপর তার ‘ﷺ’ এসে পুলসিরাতের উপর তার পা স্থির করে দিলো এবং তাকে দোযখে পাঠানো  থেকে  রক্ষা করলো। আমার উম্মতের আরেকজনকে দেখলাম-  সে  জান্নাতের দরজার একেবারে কাছে পৌঁছে গেছে- এমন সময় জান্নাতের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।  এমন সময় তার কলেমা শাহাদাত “আশহাদু আল লাইলাহা ইল্লাল্লাহু” এসে তার জন্য জানাœতের দরজা খুলে দিলো এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিলো”। (কিতাবুর রূহ্ ১৪২-১৪৩-১৪৪ পৃঃ)।

হাফেয আবু মুছা বলেন, এই হাদীসখানা খুবই উত্তম সনদে বর্ণিত হয়েছে। হযরত ছায়ীদ ইবনে মুসাইয়েব, ওমর  ইবনে যার এবং আলী ইবনে ইয়াজিদ ইবনে জাদ্আন উক্ত হাদীসখানা বর্ণনা করেছেন।

ব্যাখ্যাঃ নবী করিম (ﷺ) এর স্বপ্ন  দিয়ে ওহীর সূচনা হয়েছিল। ছয়মাস পর রমযানের ২৭শে রাত্রে শবে ক্বদরে প্রত্যক্ষ  ওহী নিয়ে হযরত জিবরাঈল (আঃ) আসেন। হযরত ইবরাহীম  (আঃ) স্বপ্নে দেখে পুত্রকে কোরবানী দিয়েছিলেন। অতএব, আম্বিয়ায়ে কেরামের  স্বপ্ন সাত প্রকার ওহীর মধ্যে অন্যতম এক প্রকার ওহী এবং  উহা বাস্তব। এতে সন্দেহ করলে বা উহাকে হাল্কা মনে করলে ঈমান চলে যাবে।

হাদীসখানার সারর্মম হচ্ছে- কবরে ও হাশরে, দোযখে ও জান্নাতে, মিযানে ও পুলসিরাতে দুনিয়ার আমল হবে সাহায্যকারী।  নামায, রোযা, হজ্ব, ওমরাহ, যাকাত সদ্কা, পরোপকার, আত্মীয়তার হক, হিতোপদেশ, আল্লাহর ভয় ও রোদন, আল্লাহর প্রতি উত্তম ধারণা ও রহমতের আশা পোষন- ইত্যাদি  কবরে উপকারে আসবে, দোযখ থেকে রক্ষা করবে। মিযানের পাল্লা ভারী করবে। পুল্সিরাত পার হতে  সাহায্য করবে। এমনকি- আযাবের ফিরিস্তাকে ফিরিয়ে দিবে।  তাই ঈমান ও আমলকে  মযবুত করে ধরতে  হবে। ঈমানহারা ও আমলহারা লোকেরাই প্রকৃতপক্ষে  সর্বহারা। আল্লাহর হক্ব ও বান্দার  হক্ব সঠিকভাবে আদায় করার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত নাজাত।

হে  আল্লাহ্! তুমি নিজগুনে অধীনকে ক্ষমা করো। জনগণের খেদমতে তোমার প্রিয় হাবীবের এই বাণী পৌছিয়ে  দেয়ার উছিলায় আমাকে ক্ষমা করে দিও- আমীন!

(১২) কবর ও হাশরের আযাব থেকে নাজাত দানকারী আমলের বিবরণঃ (তাযকিরাহ্ গ্রন্থ থেকে)-

এতক্ষণ ”কিতাবুর রূহ্” থেকে মুক্তিদানকারী আমল সমূহের আলোচনা শেষ হলো।  এবার আলোচনা করবো ইমাম কুরতুবীর আত্-তাযকিরাহ্ গ্রন্থ হতে। ইমাম কুরতুবী স্পেনের কর্ডোভার অধিবাসী। ৬৭১ হিজরীতে তাঁর ইন্তিকাল। আর কিতাবুর রূহের গ্রন্থকার ইবনে কাইয়েম -এর মৃত্যু ৭৫১ হিজরীতে। সে ছিল বালিতপন্থী ইবনে তাইমিয়ার শাগরিদ। তার ভাল কথা গুলো আমি গ্রহণ করেছি- খারাপগুলো বর্জন করেছি। (যেমন কিতাবুর রূহ্ গ্রন্থের শেষ অধ্যায়ে সে আল্লাহ্কে সাকার বলেছে)। সুতরাং তার ৮০ বৎসর পূর্বেকার কিতাব “আত্- তাযকিরাহ্” অতি মূল্যবান কিতাব।

তাযকিরাহ্ গ্রন্থে উল্লেখিত নাজাতের কারণ
======
(১) পাঁচটি আমলের কারণে পাঁচ প্রকার লোকের কবর আযাব হবেনা- (১)  সীমান্ত প্রহরারত মুজাহিদ, (২) শহীদ, (৩)ছুরা মুলক রাত্রে  তিলাওয়াতকারী, (৪) কলেরা রোগে ইন্তিকালকারী, (৫)জুমার রাত্রে বা দিনে ইন্তিকালকারী। (তাযকিরাহ্ -১৫৪ পৃঃ)।

(২) নিয়মিত নামায আদায়কারীর ছাওয়াল- জাওয়াব ও কবর আযাব মাফঃ
روی ابن ماجۃ فی سننہ عن  جابر عن  النبی ﷺ قال اذا  دخل المیت فی قبرہ مثلت لہ الشمس عند  غروبھا فیجلس فیمسح  عینیہ ۔ ویقول دعونی اصلی ۔
অর্থঃ ইমাম ইবনে মাজাহ হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে রেওয়ায়াত করেছেন- রাসুল  মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে রাখা হবে, তখন তার কাছে মনে হবে- যেন সূর্য ডুবে যাচ্ছে- অর্থাৎ আছরের শেষ সময় বলে মনে হবে। সে উঠে বসবে  এবং চোখ রগড়াতে রগড়াতে বলবে- ”আমাকে ছেড়ে দাও, আগে নামায পড়ে নিই”।

ইমাম  কুরতুবী বলেন- বুঝা গেল, “যারা দুনিয়াতে নামাযের জন্য পাগল ছিল- তারা মুনকার- নকীরের ছাওয়াল থেকে মুক্ত এবং কিয়ামত পর্য্যন্ত কবর আযাব থেকেও মুক্ত থাকবে”।

নোটঃ কবরের  ছাওয়াল মুমিন-কাফির নির্বিশেষে সকলের জন্য আম হলেও  কিছু কিছু লোক   ছাওয়াল-জওয়াব  থেকে মুক্ত  থাকবে। নিয়মিত নামাযীর বেলায়ও এই ব্যতিক্রম প্রযোজ্য। সাধারণ নিয়মের মধ্যে ব্যক্তিক্রম থাকেই। ইহাকে আরবীতে التخصيص  বলা হয়। সুতরাং ইহা সাধারণ নিয়মের বিপরীত নয়-  বরং ব্যক্তিক্রম  (তাযকিরাহ্-১৫৯ পৃষ্ঠা)।

(৩) রমযানের বিদায়লগ্নে, আরাফার দিনে  এবং সদ্কাদান শেষে মৃত্যুবরণকারী জান্নাতী,
ابو نعیم عن ابن مسعودؓ  قال قال  رسول اللّٰہ ﷺ من وافق موتہ عند انقضاء رمضان دخل الجنۃ ۔ ومن وافق موتہ عند انقضاء عرفۃ دخل الجنۃ ۔ ومن وافق موتہ عند اقضاء صدقتہ دخل الجنۃ ۔
অর্থঃ আবু নোয়াইম হিল্য়া গ্রন্থে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে   বর্ণনা করেছেন-  নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেছেন- ”যার মৃত্যু রমযান অতিবাহিত হওয়ার সাথে  সাথে হয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। “যার মৃত্যু আরাফাত দিবস অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে হয়,  সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। “যার মৃত্যু সদ্কা দানের সাথে সাথে হয়, সেও জান্নাতে যাবে”। অর্থাৎ তাদের কবর আযাব হবে না।

(৪) সাত প্রকার লোক শাহাদাতের সাওয়াব পাবে। হযরত জাবের (রাঃ) বলেন- রাসুলেখোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন-
الشھداء سبعۃ سوی القتل فی سبیل اللّہ المطعون ۔ والغرق ، والحرق، وصاحب ذات الجنب والذی یموت تحت الھدم ، والمراۃ تموت بجمع ، قیل ھی التی تموت من الولادۃ وولدھا فی بطنھا قد تم جلقہ وقیل اذا اماتت من النفاس فھی شھیدۃ سواء القت ولدھا ۔ اوماتت وھو فی بطنھا۔

অর্থাৎ- “আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ব্যতিত  আরো সাত প্রকারের লোক শাহাদাতের সমান সাওয়াব পাবে- (ক) প্লেগ রোগে মৃত (খ) কলেরা রোগে মৃত (গ) পানিতে ডুবে মৃত (ঘ) আগুনে পুড়ে মৃত (ঙ) নাপাক অবস্থায় মৃত মহিলা (চ) চাপা পড়ে মৃত (ছ) প্রসবকালীন গর্ভে সন্তান রেখে অথবা নিফাছকালীন সময়ে মৃত মহিলা” (নাছায়ী)। এদের কবর আযাব মাফ।

(৫) ছুরা হাশরের শেষ তিন  আয়াত সকাল সন্ধ্যায় তিলাওয়াতকারীর সাওয়াবঃ

মা’কাল ইবনে ইয়াছার (রাঃ) বলেন-
من قال حین یصبح ثلاث مرات اعوذ باللّٰہ السمیع العلیم من الشیطان الرجیم ۔ وقرأ ثلاث ایات من آخر سورۃ الحشر  وکل اللّٰہ بہ سبعین الف ملک یصلون علیہ حتی یمسی فان مات من یومہ مات شھیدا ومن قرا ھا حین یمس کذا لک (الترمذی)
অর্থঃ “রাসুল করিম (ﷺ)  এরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি ফজরের সময় “আউযু বিল্লাহিছ ছামিয়িল আলীমে মিনাশ শাইত্বানির রাজীম” তিনবার পাঠ  করবে এবং ছুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তিলাওয়াত করবে- আল্লাহ্ তায়ালা তার জন্য সত্তর হাজার ফিরিস্তা নিয়োজিত করবেন। ঐ ফিরিস্তারা সন্ধ্যা পর্য্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আর যদি ঐদিনে মারা যায়- তাহলে শহীদী মৃত্যু হবে।  মাগরিবের সময়ও অনুরূপ ফযিলত ”। (তিরমিযী)।

বিঃদ্রঃ  আউযুবিল্লাহ্ পড়ার পূর্বেই  বিছমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম পড়ে নিবে। কেননা, কোন ভাল কাজ শুরু করার পূর্বে বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম  না পড়লে  ঐ কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায় (হাদীস)। অত্র হাদীসে বিছমিল্লাহ্ পড়ার কোন নিষেধাজ্ঞা নেই- তাই পড়া উচিৎ। কিন্তু  ওহাবী সম্প্রদায় বিছমিল্লাহ্ পড়ে না।

(৬) সর্বদা অযু অবস্থায় থাকার ফযিলতঃ

আনাছ ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত-
قال رسول اللّہ ﷺ یا انس ان استطعت ان تکون ابدا علی الوضوء فافعل فان ملک الموت اذا قبض  روح العبد وھو علی وضوء کتب لہ شھادۃ اخرج الازری ۔
অর্থাৎ- রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “হে আনাছ, যদি সম্ভব হয়- তাহলে সর্বদা অযু অবস্থায় থাকিও। কেননা, মালাকুল মউত যখন কারো রূহ্ অযু অবস্থায় কব্জ করেন- তার জন্য শাহাদাতের সওয়াব লেখা হয়। ” অর্থাৎ-তার কবর আযাব হবেনা। (আযরী)।

(৭) চাশতের নামায, আইয়ামে বীজের তিন রোযা ও বিতির নামায আদায়কারীর ফযিলতঃ

আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন-
عن النبی ﷺ قال من صلی الضحٰی وصام ثلاثۃ ایام من کل شھر ولم یترک الوتر فی حضر ولاسفر کتب لہ اجر شھید ۔ اخرجہ ابو نعیم ۔
অর্থঃ “নবী করিম সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন-  যে কেহ চাশ্তের নামায পড়বে, প্রতিমাসে ৩টি রোযা রাখবে এবং  কখনও বিতির নামায ছাড়বে না- মুকিম অবস্থায় হোক অথবা মুসাফির অবস্থায় হোক- তার জন্য শাহাদাতের ছাওয়াব লিখা হবে” (আবু নোয়াইম)। সেও কবরের আযাব থেকে মুক্ত থাকবে।

(৮) তালিবুল ইলম-এর ফযিলতঃ

হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) ও হযরত আবু যর (রাঃ) বলেন-
عن النبی ﷺ اذا جا ء الموت لطالب العلم وھو علی حالہ مات شھیدا وبعضھم یقول لیس بینہ وبین الانبیاء الادرجۃ واحدۃ ذکرہ ابو عمر فی بیان العلوم ۔
অর্থঃ রাসুলুল্লাহ্  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “তালেবুল এলেমী অবস্থায় কেউ মারা গেলে সে শহীদ হিসেবে গণ্য হবে। কোন কোন সাহাবী থেকে  এরূপ বর্ণনাও এসেছে যে, তালেবুল এলেম ও নবীগণের মধ্যে পরকালে মাত্র একটি দরজা বা মর্তবার ব্যবধান থাকবে”। (আবু ওমর কৃত বায়ানুল উলুম গ্রস্থ)।

বিঃদ্রঃ উপরের কয়েকটি হাদীসে যেসব ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে- সবগুলোর মধ্যে শাহাদাতের সাওয়াবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ঐসব আমলকারীরা কবরে শাস্তি ভোগ করবেনা। কেননা, শহীদের কোন প্রকার কবর আযাব নেই।

(যুদ্ধাবস্থায়  শহীদের গোসল ও কাফন নেই। কিন্তু শাহাদাতের সাওয়াব প্রাপ্তদের  বেলায় গোসল ও কাফন আছে। পূর্বে  দশম অধ্যায়ের শুরুতে ৬৫টি গুনাহের  বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ঐগুলো থেকে যারা বাঁচতে পারবে- তারাও কবরে নাজাত পাবে। ইমাম কুরতুবী (রহঃ) অন্যান্য যেসব হাদীস বর্ণনা করেছেন- সেগুলো ইবনে  কাইয়েমও তার ”রূহ্” গ্রন্থে উল্লেখ করেছে- বিধায় এখানে উল্লেখ করা হলো না। আমল করার চেষ্টা করার  জন্য আল্লাহ্ আমাদের সকলকে তৌফিক দিন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment