প্রশ্নঃ মৃত্যুর সময় কি করা উচিৎ? মৃত্যুর পর চোখ বন্ধ করা, হাত-পা সোজা করে দেওয়া দুরস্ত আছে কিনা?
জওয়াবঃ মূমূর্ষ অবস্থায় বুযর্গ ও নেককার ব্যক্তিদেরকে উপস্থিত রাখা মোস্তাহাব- যেন তাঁরা কলেমা ইত্যাদি তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন এবং তার জন্য দোয়া করতে পারেন।
ঐ সমস্ত নেককার লোকেরা সুরা ক্বিরাত পাঠ করলে এবং তার জন্য দোয়া করলে ফিরিস্তারা আমীন বলে- এতে মূর্দারের বিরাট উপকার হয়।
মৃত্যুর পরপর হাত-পা যথাসম্ভব সোজা করে দেয়া, চক্ষু বন্ধ করে দেয়া উচিৎ। তবে জোর করে মৃত ব্যক্তিকে কষ্ট দেয়া কোনমতেই জায়েয নয়।
(১) মৃত্যুর সাথে সাথে চোখ উপরের দিকে উল্টে যায়।
শদ্দাদ ইবনে আউছ (রাঃ) বর্ণনা করেন-
ابن ماجۃ عن شداد بن أوس قال قال رسول اللّٰہ ﷺ اذا حضرتم موتا کم فاغمضوا البصر فان البصر یتبع الروح ۔ وقولوا خیرا فان الملائکۃ تؤمن علی ما قال اھل المیت ۔
অর্থঃ হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউছ (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “যখন তোমরা তোমাদের কোন ব্যক্তির মৃত্যুর সময় উপস্থিত থাকো- তখন মাইয়েতের চোখ বন্ধ করে দিও- কেননা, চোখ বহির্গত রূহ্কে অনুসরণ করে উর্দ্ধ দিকে ছুটে যেতে চায়। আর ঐ সময় তোমরা দোয়া কালামসহ উত্তম জিনিস পাঠ করবে। কেননা, ফিরিস্তারা ঐসময়ের দোয়া কালামে আমিন আমিন বলে”। (তাযকিরাহ্ ৩৯ পৃষ্ঠা)।
(২) মৃত্যুর সময় দোয়া-ﷺ পড়া উত্তমঃ
======
উম্মে হাসান রাদিয়াল্লাহু আন্হা থেকে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন-
قالت کنت عند ام سلمۃ رضی اللّٰہ عنھا فجاءھا انسان فقال فلان بالموت ۔ فقالت لھا انطلقی فاذا احتضر فقولی السلام علی المرسلین و الحمد للّٰہ رب العالمین ۔
অর্থঃ হযরত উম্মে হাসান (রাঃ) বলেন- আমি হযরত উম্মে ছালমার (রাঃ) -এর খেদমতে ছিলাম। এমন সময় উনার নিকট একজন লোক এসে বললেন- অমুক মৃত্যুমুখে আছেন। হযরত উম্মে ছালমা (রাঃ) আমাকে বললেন- তুমি যাও। যখন মৃত্যু ঘনিয়ে আসবে- তখন তুমি পাঠ করবে- “আসসালামু আলাল মোরছালীন, ওয়াল হাম্দু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন”। অর্থাৎ- “আম্বিয়ায়ে কেরামের উপর আল্লাহর ছালাম এবং সমন্ত প্রশংসা আল্লাহর”। বুঝা গেল- মৃত্যুর পর বাজে কথা না বলে ছালাম, ﷺ ও দোয়া পড়তে থাকবে।
(৩) মৃত্যুর পূর্বে জোর করে চক্ষু বন্ধ করা নিষিদ্ধঃ
সুফিয়ান ছাওরী (রাঃ) হতে হাদীস বর্ণিতঃ নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন-
اذا غملت فقض بسم اللّٰہ وعلی ملۃ رسول اللّٰہ وسبح ثم تلا سفیان قولہ تعالی ’’والملائکۃ یسبحون بحمد ربھم ‘‘ قال ابو داؤد تغمیض المیت انما ھو بعد خروج الروح سمعت بن احمد المقری قال سمعت ابا میسرۃ وکان رجلا عابدا یقول غمضت جعفر المعلم وکان رجلا عاقلا فی حالۃ الموت فرأیت فی منامی یقول اعظم ماکان علی تغمیضک قبل ان اموت ۔
অর্থঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- “যখন মৃতব্যক্তির চোখ বন্ধ করা হয়, তখন বলবে- “বিছমিল্লাহ ওয়া আলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ”- এবং তাছবীহ পাঠ করতে থাকবে”।
সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) ছুরা শুরা ৫ম আয়াত তিলাওয়াত করে তাছ্বীহপাঠের উপকারিতা প্রমাণ করলেন। আয়াতখানা হলো-
واﻟﻤﻼﺋﻜﺔ ﯾﺴﺒﺤﻮن ﺑﺤﻤﺪ رﺑﮭﻢ۔
অর্থাৎ “ফিরিস্তাগণ তাদের প্রভূর তাছ্বিহ্ হামেশা পাঠ করে থাকেন। ”
আবু দাউদ বলেন- মৃত্যু নিশ্চিত হলেই চক্ষু বন্ধ করবে- এর আগে নয়। আমি (আবু দাউদ) মোহাম্মদ ইবনে আহমদ মুক্রী থেকে শুনেছি। তিনি আবু মাইছারা থেকে শুনেছেন। আবু মাইছারা একজন আবেদ লোক ছিলেন। তিনি বলেন- আমি জাফর মোয়াল্লিমকে মৃত মনে করে তাঁর চক্ষু বন্ধ করে দেই। কিন্তু তিনি তখনও ছিলেন সুস্থ বুদ্বির মানুষ। তাঁকে আমি স্বপ্নে দেখলাম। তিনি বলছেন- ”আমার মৃত্যুর পূর্বেই তুমি আমার চক্ষু বন্ধ করে আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছো”।