প্রশ্ন : নেক্কার লোকের কবরের পাশে কবর দেওয়াতে উপকার আছে কি না? বদকার লোকের পাশে কবর দিলে ক্ষতি হয় কি না?
জওয়াব : নেক্কার লোকের পাশে কবর দিলে উপকার হয়। আর বদকার লোকের পাশে কবর দিলে মুর্দারের কষ্ট হয়। প্রমাণ নীচে দেখুন।
(১) আবু বকর খারায়েতী “কিতাবুল কুবুর” এবং আবু ছায়ীদ মালিয়ানী “কিতাবুল মো’তালিফ ওয়াল মুখ্তালিফ” গ্রন্থে হযরত সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস এভাবে বর্ণনা করেছেন-
عن سفیان الثوری عن عبد اللّٰہ بن محمد بن عقیل عن محمد بن الحنفیۃ عن علی کرم اللّٰہ وجھہ قال امرنا رسول اللّٰہ ﷺ ان ندفن موتانا وسط قوم صالحین ۔ فان الموتی یتأذون بالجار السوء کما یتاذبہ الاحیاء ۔
অর্থ : সুফিয়ান ছাওরী (রাঃ) আব্দুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আকিল থেকে- তিনি মুহম্মদ ইবনে হান্ফিয়া (রহঃ) থেকে, তিনি আপন পিতা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজ্হাহু থেকে বর্ণনা করেছেন- হযরত আলী (রাঃ) বলেন- ”নবী করীম (ﷺ) আমাদেরকে (সাহাবাগণকে) হুকুম করেছেন- আমরা যেন আমাদের মৃতলোককে নেক্কার বুযুর্গ ব্যক্তিদের মাঝে দাফন করি। কেননা, মৃতব্যক্তিরা বদকার প্রতিবেশির কারণে কবরে কষ্ট পায়- যেভাবে দুনিয়াতে তাঁদের কারণে জীবিতরা কষ্ট পেয়ে থাকে”।
(২) আল্লামা যমক্শারী ”রাবিউল আবরার” কিতাবে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) -এর একখানা হাদীস উল্লেখ করেছেন-
عن ابن عاس عن النبی ﷺ قال اذا مات لاحدکم المیت فحسنوا کفنہ وعجلوا انجاز وصیتہ واعمقوا لہ فی قبرہ وجنبوہ جارا لسوء ۔ قیل یا رسول اللّٰہ ﷺ وھل ینفع الجار الصالح فی الاٰخرۃ ؟ قال ھل ینفع فی الدنیا۔ قالوا نعم ۔ قال کذلک ینفع فی الاٰخرۃ ۔
অর্থ : হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন- নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেন- “যখন তোমাদের কেউ মৃত্যুবরণ করে- তখন তাকে উত্তম কাফন দিও, তার শেষ অসিয়ত শীঘ্র পুরণ করিও, তার কবরকে গভীর করিও এবং তাকে খারাপ প্রতিবেশি থেকে দূরে কবর দিও”। আরয করা হলো- ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কবরে কি নেক্কার প্রতিবেশি উপকারে আসে? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন- “দুনিয়াতে কি উপকারে আসে”? সাহাবাগণ জওয়াব দিলেন- হ্যাঁ! হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন- “দুনিয়াতে যেভাবে উপকারে আসে- কবরেও সেভাবেই উপকারে আসে”। (রবিউল আবরার- কৃত আল্লামা যমক্শারী)।
এবার পরিস্কার হয়ে গেলো- নেক্কার লোকের পাশে কবর দিলে কবর আযাব মাফ হয়ে যায়।
(৩) আবু নোয়াইম (রহঃ) ইমাম মালেক ইবনে আনাছ থেকে- তিনি আপন চাচা নাফে’ ইবনে মালেক থেকে, তিনি আপন পিতা মালেক থেকে, তিনি হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে রেওয়ায়াত করেছেন। হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন-
قال رسول اللّٰہ ادفنوا موتاکم وسط قوم صالحین ۔ فان المیت یتاذیبا الجار السوہ ۔
অর্থঃ রাসুলেকরিম রাউফুর রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- “তোমরা তোমাদের মৃতব্যক্তিকে নেক্কার ও বুযর্গ ব্যক্তির পার্শে দাফন করিও। কেননা, কবরবাসী অন্য বদকার প্রতিবেশী দ্বারা কষ্ট পায়”।
বুঝা গেল- কারো কবরের পার্শ্বে নেক্কার থাকলে উপকার পায়, আর বদকার থাকলে কষ্ট পায়। তাই সম্ভব হলে দূরে হলেও নেক্কার লোকের কবরের পার্শে কবর দেওয়া উত্তম। তবে বর্তমানে বিভিন্ন কারণে এরূপ করা খুবই কঠিন কাজ।
আল্লামা কুরতুবী (৬৭১ হিজরী) উপরোক্ত তিনটি হাদীস বর্ণনা করার পর মন্তব্য করেন- “আমাদের পূর্ববর্তী উলামাগণ বলেছেন- নেক্কার লোকের কবর তালাশ করে সেখানে মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করা মোস্তাহাব। তোমরা নেক্কার লোকদের পার্শে তোমাদের মৃতব্যক্তিকে দাফন করো, তাঁদের পাশে রাখো, তাঁদের নিকটে বসবাস করতে দাও। এতে তাঁদের দ্বারা বরকত হবে, তাঁদের উছিলায় আল্লাহর কাছে নেকী পাবে। তোমরা বদকার লোক থেকে তোমাদের মৃতব্যক্তিকে দূরে রাখো- কেননা এতে তোমাদের মৃতের ক্ষতি হয়। বদকার লোকের আযাব দেখে তাঁরা ব্যথিত হয়”। (তাযকিরাহ্)