মুহাম্মদ আব্দুল জলিল বাংলাদেশের একজন ইসলামী রাজনীতিবিদ। তিনি হাফেয এম.এ জলিল ও অধ্যক্ষ এম.এ জলিল নামেও পরিচিত। তিনি একজন লেখক, গবেষক, অনুবাদক এবং ইসলামিক স্কলার ছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি ২০০০ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন
জীবনকাল
তিনি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর-এর অধীনস্থ আমিয়াপুর গ্রামে তিনি জন্ম লাভ করেন। তার পিতার নাম মুন্সী আদম আলী মোল্লা এবং মাতার নাম মালেকা খাতুন। তিনি ছিলেন চার বোন ও ছয় ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। তিনি আক্বিদা বিশ্বাসে সুন্নী, মাযহাবে হানাফী এবং তরিকায় ক্বাদেরী ছিলেন।
শিক্ষা ও কর্ম জীবন
মুহাম্মদ আব্দুল জলিল ১৯৫৫ সালে আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল (হাদীস) ১ম বিভাগে বৃত্তিসহ (১৯৫৬-১৯৬৪ ইং সালে) উত্তীর্ণ হন। তারপর ইন্টারমিডিয়েট, ডিগ্রি এবং এম এ (জেনারেল ইতিহাস) উচ্চতর দ্বিতীয় বিভাগে স্টাইপেন্ডসহ (১৯৬৪-১৯৭০) পাস করেন। ১৯৭০ সালে জেনারেল শিক্ষা সমাপ্তির পর ১৯৭২ সালে কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। ছাগলনাইয়া কলেজ ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা কলেজে ১৯৭৫ ইং সাল পর্যন্ত ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপনা করেন। উচ্চতর শিক্ষালাভের পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে তিনি চট্টগ্রাম শহরে ১৯৬৪-৭৮ ইং পর্যন্ত হযরত তারেক শাহ্ দরগাহ মসজিদে ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপনার ফাঁকে ১৯৭৩ ইং সালে এক বছর অগ্রণী ব্যাংকে প্রবেশনারী অফিসার হিসাবে কাজ করে ইস্তফা দেন। ১৯৭৩ ইং সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। হাজীগঞ্জ বড় মসজিদে ১৯৭৫ সালে ছয় মাস ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করে ইস্তফা দিয়ে পুনরায় চট্টগ্রাম চলে যান। চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা ’র অধ্যক্ষ পদে ১৯৭৭ সালে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকা মুহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা ’র অধ্যক্ষ পদে যোগদান করে স্থায়ীভাবে ঢাকা চলে আসেন। ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত অধ্যক্ষ পদে ছিলেন। ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯০ ইং সাল পর্যন্ত মধ্যখানে ৪ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর ইমাম ট্রেনিং প্রজেক্ট ও ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে ডাইরেক্টর পদে দায়িত্ব পালন করে ১৯৯০-এর ডিসেম্বরে কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা ’র অধ্যক্ষ পদে পুনরায় যোগদান করেন এবং এখান থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শাহজাহানপুর গাউছুল আযম জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা খতীব এবং আহলে সুন্নাতের নির্বাচিত মহাসচিবের দায়িত্বও পালন করেছেন। শাইখুল মুদাররিসীন আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ আব্দুল জলিল নিজ গ্রাম আমিয়াপুরে হযরত বিবি ফাতেমা মহিলা দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন।
মৃত্যু

২০০৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বুধবার তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার নিজ গ্রাম মতলব (উত্তর), চাঁদপুরস্থ আমিয়াপুরে তারই প্রতিষ্ঠিত বিবি ফাতেমা মহিলা দাখিল মাদ্রাসা কাছেই মা-বাবার কবরের পাশে তার মাজার শরীফ অবস্থিত। [
প্রকাশনা ও সম্পাদনা
বই , অনুবাদ গ্রন্থ এবং পত্রিকা
- জলিলুল বয়ান ফী তাফসিরীল কোরআন
- বোখারী শরীফের বঙ্গানুবাদ
- নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
- ইরফানে শরীয়াত
- হায়াত মউত কবর হাশর
- মিলাদ ও কিয়ামের বিধান
- শিয়া পরিচিতি
- বালাকোট আন্দোলনের হাকিকত
- গেয়ারবী শরীফের ইতিহাস
- কারামাতে গাউছুল আযম
- ঈদে মিলাদুন্নবী [ﷺ] ও না’ত লহরী
- আহকামুল মাযার
- প্রশ্নোত্তরে- আকায়েদ ও মাছায়েল শিক্ষা
- ফতোয়ায়ে ছালাছা
- ফতোয়ায়ে ছালাছীন
- ইসলাহে বেহেশতী জেওর
- সফরনামা আজমীর
- কালেমার হাকিকত
- রহমাতুল্লিন আলামীন
ইত্যাদি গ্রন্থ তিনি রচনা করেন। বিশেষত্ব তার জীবনের সর্বশেষ গ্রন্থ’টি হলো হায়াত মউত কবর হাশর। অনন্য এই গ্রন্থ’টি তার জীবনে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। জীবনের শেষলগ্নে এসে তাফসিরের কাজে হাত দিলেও বেশি দূর এগোতে পারে নি। তবুও ডাক্তারের নিষেদ্ধ থাকার পরেও চুপেসারে কলম চালিয়েছে। বুখারী শরীফসহ তার লিখিত, অনুদিত ও সম্পাদিত ২০ টি গ্রন্থের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৯ টি প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে মাসিক সুন্নীবার্তা প্রকাশ শুরু করেন, যা আজও চলমান আছে।
প্রামাণ্য অনুষ্ঠান
২০১৮ সালের ১ই জুলাই রাত ১০.৩০ ঘটিকায় আল্লামা অধ্যক্ষ হাফেজ এম এ জলিল এর জীবনী নিয়ে প্রামাণ্য অনুষ্ঠান, “আউলিয়াদের জীবনী বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বি টি ভি ওয়ার্ল্ডে সম্প্রচারিত হয়।





Users Today : 310
Users Yesterday : 767
This Month : 14732
This Year : 186603
Total Users : 302466
Views Today : 31965
Total views : 3608709