সাহাবায়ে কেরামের আমল:
১.হযরত আলী রা. এর আমল:
আবূ আব্দুর রহমান সুলামী র. বলেন,
كان عبد الله يأمرنا أن نصلي قبل الجمعة أربعا ، وبعدها أربعا ، حتى جاءنا عليّ فأمرنا أن نصلي بعدها ركعتين ثم أربعا . أخرجه عبد الرزاق (٥٥٢٥) وإسناده صحيح.
অর্থ : আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে কাবলাল জুমআ চার রাকাত, বা’দাল জুমআ চার রাকাত পড়ার নির্দেশ দিতেন। অবশেষে হযরত আলী রা. যখন আমাদের এখানে (কূফায়) আসলেন, তখন তিনি আমাদেরকে বা’দাল জুমআ দুই রাকাত তারপর চার রাকাত (মোট ছয় রাকাত) পড়ার আদেশ দিয়েছেন। মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৫৫২৫। এর সনদ সহীহ।
২.কাতাদা র. বলেন,
أن ابن مسعود كان يصلي قبل الجمعة أربع ركعات وبعدها أربع ركعات ، قال أبو إسحاق : وكان علي يصلي بعد الجمعة ست ركعات ، وبه يأخذ عبد الرزاق . أخرجه عبد الرزاق (٥٥٢٤) ورواه الطبراني وإسناده صحيح قاله النيموي في آثار السنن.
অর্থ: ইবনে মাসউদ রা. কাবলাল জুমআ চার রাকাত ও বা’দাল জুমআ চার রাকাত পড়তেন। আবূ ইসহাক বলেন, আলী রা. বা’দাল জুমআ ছয় রাকাত পড়তেন। (আব্দুর রাযযাক বলেন,) আব্দুর রাযযাক এ হাদীস অনুসারেই আমল করে থাকে।
মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৫৫২৪। তাবারানী শরীফ। এর সনদ সহীহ।
৩.হযরত ইবনে উমর রা. সম্পর্কে আতা র. বলেছেন,
كَانَ إِذَا كَانَ بِمَكَّةَ فَصَلَّى الْجُمُعَةَ تَقَدَّمَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ تَقَدَّمَ فَصَلَّى أَرْبَعًا وَإِذَا كَانَ بِالْمَدِينَةِ صَلَّى الْجُمُعَةَ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى بَيْتِهِ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ وَلَمْ يُصَلِّ فِى الْمَسْجِدِ فَقِيلَ لَهُ فَقَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَفْعَلُ ذَلِكَ. أخرجه أبو داود (١١٣٠ ) وقال العراقي: إسناده صحيح. آثار السنن صـ ٣٠٢
অর্থ: তিনি যখন মক্কা শরীফে অবস্থান করতেন এবং জুমআর ফরজ পড়তেন, তখন সামনে অগ্রসর হয়ে দুই রাকাত পড়তেন, পরে আরেকটু অগ্রসর হয়ে চার রাকাত পড়তেন। আর যখন মদীনা শরীফে জুমআ আদায় করতেন তখন ঘরে ফিরে গিয়ে দুই রাকাত পড়তেন। মসজিদে পড়তেন না। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই করতেন।
আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ১১৩০; আল্লামা ইরাকী বলেছেন, এর সনদ সহীহ।
৪.হযরত ইবনে আব্বাস রা. সম্পর্কে বর্ণিত,
أنه كان يصلي يوم الجمعة في بيته أربع ركعات ، ثم يأتي المسجد فلا يصلي قبلها ولا بعدها
অর্থাৎ তিনি জুমআর দিন ঘরে চার রাকাত পড়তেন। এরপর মসজিদে আসতেন এবং জুমআর আগে ও পরে আর কোন নামায পড়তেন না।
মুহাদ্দিস হারব ইবনে ইসমাইল কিরমানী (মৃত্যু ২৮০ হি.) তাঁর কিতাবে সনদসহ এটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী কিরমানীর বরাতে তাঁর বুখারী শরীফের ভাষ্যগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে প্রমাণ হিসেবে এটি উল্লেখ করেছেন। (হাদীস নং ৯৩৭) উল্লেখ্য যে, এ হাদীসে যে বলা হয়েছে, জুমআর আগে ও পরে আর কোন নামায পড়তেন না: তার মানে মসজিদে পড়তেন না।
৫.হযরত সাফিয়া (صافية) বলেন :
رأيت صفية بنت حيي صلت أربعا قبل خروج الإمام وصلت الجمعة مع الإمام ركعتين
আমি হযরত সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই রা. (উম্মুল মুমিনীন)কে দেখেছি, ইমাম বের হওয়ার পূর্বে চার রাকাত পড়তেন এবং ইমামের সঙ্গে জুমআর দুই রাকাত নামায আদায় করতেন। ইবনে সাদ তাঁর তাবাকাতে এটি উদ্ধৃত করেছেন। (ক্রমিক নং ৪৭০১)
অন্যান্য সাহাবী ও তাবেয়ীর আমল:
৬.আমর ইবনে সাঈদ ইবনুল আস রহ. (মৃত্যু ৭০ হি.) বলেন,
كنت أرى أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فإذا زالت الشمس يوم الجمعة قاموا فصلوا أربعا
অর্থাৎ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে দেখতাম, জুমআর দিন সূর্য ঢলে যাওয়ার পর তাঁরা দাঁড়িয়ে যেতেন, এবং চার রাকাত পড়তেন। ইবনে আব্দুল বার রহ. তামহীদ গ্রন্থে (حديث ثامن لزيد بن أسلم) আবূ বকর আল আছরাম রহ. (মৃত্যু ২৭০ হি.) এর বরাতে এটি সনদসহ উল্লেখ করেছেন। এর সনদ সহীহ। ইবনে রজব হাম্বলীও তার ফাতহুল বারী গ্রন্থে আছরামের বরাতে এটি উদ্ধৃত করেছেন। (হাদীস নং ৯৩৭)
তামহীদ গ্রন্থে বর্ণিত সনদটি নিম্নরূপ:
الأثرم قال حدثنا منجاب بن الحارث قال أخبرنا خالد بن سعيد بن عمرو بن سعيد بن العاصي عن أبيه قال كنت أرى …
৭.ইবরাহীম নাখায়ী রহ. (মৃত্যু ৯৬ হি.) বলেন,
كانوا يصلون قبلها أربعا وبعدها أربعا .أخرجه ابن أبي شيبة (٥٤٠٥، ٥٤٢٢)
অর্থ: সাহাবায়ে কেরাম কাবলাল জুমআ চার রাকাত, বা’দাল জুমআ চার রাকাত পড়তেন। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৫৪০৫,৫৪২২।
ইবনে রজব হাম্বলী রহ. এটি ইবনে আবুদ দুনিয়া রহ. রচিত কিতাবুল ঈদায়ন এর বরাতে স্বীয় ফাতহুল বারী গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছে,
قال النخعي : كانوا يحبون أن يصلوا قبل الجمعة أربعا
অর্থাৎ তাঁরা (সাহাবী ও তাবেয়ীন) জুমআর পূর্বে চার রাকাত পড়া পছন্দ করতেন। ইবনে রজব রহ. বলেছেন, এর সনদ সহীহ।
এরপর ইবনে রজব রহ. ইমাম ইবনে আবু খায়ছামা রহ. (মৃত্যু ২৭৯ হি.) এর কিতাবুত তারীখ-এর উদ্ধৃতিতে ইবরাহীম নাখায়ী রহ. এর নিম্নোক্ত উক্তি ও নীতিটি আ’মাশ রহ. এর সূত্রে উল্লেখ করেছেন:
ما قلت لكم : كانوا يستحبون ، فهو الذي أجمعوا عليه
অর্থাৎ যে ক্ষেত্রে আমি كانوا يستحبون (তারা পছন্দ করতেন) বলব, সেটা এমন বিষয়েই হবে, যার উপর তাঁদের ইজমা ও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল।
এ দুজন তাবেয়ীর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর সাহাবা-তাবেয়ীনের সাধারণ কর্মধারা ছিল জুমআর পূর্বে চার রাকাত নামায পড়া। হাদীস শরীফ ও সাহাবা-তাবেয়ীনের এই কর্মধারার অনুসরণেই অধিকাংশ মুজতাহিদ ইমাম মত দিয়েছেন যে, জুমআর পূর্বে জোহরের সুন্নতের মতোই সুন্নতে মুয়াক্কাদা রয়েছে। এই ইমামগণের অনুসারীরা সে হিসেবেই এ সুন্নত আদায় করে আসছে। অধিকাংশ ইমামের মতের কথা শুধু আমরাই বলছি না। হাম্বলী মাযহাবের প্রসিদ্ধ আলেম হাফেযে হাদীস ইবনে রজবও তাঁর বুখারী শরীফের ভাষ্যগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে এ কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো:
অধিকাংশ আলেমের মত:
ইবনে রজব রহ. বলেছেন:
وقد اختلف في الصلاة قبل الجمعة : هل هي من السنن الرواتب كسنة الظهر قبلها ، أم هي مستحبة مرغب فيها كالصلاة قبل العصر ؟ وأكثر العلماء على أنها سنة راتبة ، منهم : الأوزاعي والثوري وأبو حنيفة وأصحابه ، وهو ظاهر كلام أحمد ، وقد ذكره القاضي أبو يعلى في ” شرح المذهب ” وابن عقيل ، وهو الصحيح عند أصحاب الشافعي . وقال كثير من متأخري أصحابنا : ليست سنة راتبة ، بل مستحبة .
কাবলাল জুমআ নামাযটি কি জোহরের পূর্বের সুন্নতের মতো সুন্নতে রাতিবা (মুয়াক্কাদা), নাকি আসরের পূর্বের নামাযের মতো মুস্তাহাব? এনিয়ে দ্বিমত রয়েছে। অধিকাংশ আলেমের মতে এটি সুন্নতে রাতিবা। ইমাম আওযায়ী, ছাওরী, আবূ হানীফা ও তাঁর শিষ্যবর্গের মত এটাই। ইমাম আহমদের উক্তি থেকেও এটাই স্পষ্ট। কাযী আবূ ইয়ালা ও ইবনে আকীল এ কথা উল্লেখ করেছেন। ইমাম শাফেয়ীর শিষ্যগণের নিকট এটাই সহীহ ও বিশুদ্ধ মত। আমাদের (হাম্বলীদের) পরবর্তী আলেমগণের অনেকে বলেছেন, এ নামায সুন্নতে রাতিবা নয়, বরং মুস্তাহাব। (ইবনে রজব, ফাতহুল বারী, হাদীস নং ৯৩৭