এ ব্যাপারে হজরত মুহাম্মদের ﷺ উৎসাহ প্রদান সম্পর্কিত হাদিস নিম্নরূপ:
১. আবু উমামা বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহকেﷺ জিজ্ঞেস করা হলো, কোন মুহূর্তের দোয়া অধিক কবুল হয়ে থাকে? রাসূল ﷺ বললেন, রাতের শেষাংশের দোয়া এবং ফরজ নামাজগুলোর পরের দোয়া।
★★(জামে তিরমিজি, কিতাবুদ দাওয়াত, বাব. ৮, হাদিস : ৩৪৯৯, খ. ৫, পৃ. ১৮৮; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা, হাদিস : ৯৯৩৬)।
২. ইমাম তবারি (রহ.) হজরত ইমাম জাফর সাদিকের (রহ.) প্রতিবেদন সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ফরজ নামাজের পর দোয়া প্রার্থনা করাটা নফল নামাজের পর দোয়া করার চেয়ে ওইরূপ উত্তম, যেরূপ নফল নামাজের চেয়ে ফরজ নামাজ উত্তম। এ বর্ণনাটি হাফেজ ইবনে হাজার তার ফতহুল বারির খ- ১১, পৃ. ১৪৫-এর মধ্যে এনেছেন। এ বর্ণনাটি হাসান স্তরের।
৩. সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করিম ﷺ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা লজ্জাশীল, দয়াবান। কোনো ব্যক্তি তার কাছে দুই হাত ওঠালে তিনি তা ব্যর্থ ও শূন্য অবস্থায় ফেরত দিতে লজ্জা পান। জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৫৬, হাদিসটি ইমাম তিরমিজি হাসান এবং শায়খ আলবানি সহিহ বলেছেন।
৪. মুহাম্মদ বিন আবি ইয়াহইয়া বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইরকে (রা.) দেখলাম, তিনি এক ব্যক্তিকে সালাত শেষ করার আগেই দুই হাত উঠিয়ে দোয়া করতে দেখে বললেন, রাসূূলুল্লাহ ﷺ কখনও সালাত থেকে অবসর না হয়ে দুই হাত ওঠাতেন না। অর্থাৎ নামাজ শেষ করে তবেই দুই হাত তুলে মোনাজাত করতেন।
★★মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, দারুল ফিকর, বৈরুত, লেবানন, খ. ১০, পৃ. ২৬৬, হাদিস : ১৭৩৪৫; ★মুজামুল কাবির লিত তবারানি, পৃ. ২২, খ. ১১; হাফেজ হাইছামি বলেন, ইমাম তাবরানি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং এ হাদিসের রাবিরা নির্ভরযোগ্য।
#দুই. হাত তুলে মোনাজাত করা সম্পর্কে হাদিস :
৫. সাহাবি হজরত মালেক ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণিত, নবী করিম ﷺ বলেন, যখন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে, তখন তোমাদের হাতের তালু দিয়ে প্রার্থনা করবে, হাতের পিঠ দিয়ে নয়।
★★সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৮৮, কিতাবুস সালাত, বাবুদ দোয়া, নাসিরুদ্দীন আলবানি বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ।
৬. সালমান ফারসি (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা লজ্জাশীল ও দয়াবান, যখন কোনো মানুষ তাঁর দিকে দুই হাত ওঠায়, তখন তিনি তা ব্যর্থ ও শূন্যভাবে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান।
★জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৫৬, কিতাবুদ দাওয়াত, পৃ. ৫৫৬/৫ ইমাম তিরমিজি (রহ.) হাদিসটি হাসান বলেছেন;
★সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮৬৫, কিতাবুদ দোয়া, বাবু রফইল ইয়াদাইন ফিদ দোয়া, আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন;
★সহিহ ইবনে হাব্বান, হাদিস : ৮৭৬, পৃ. ১৬০/৩।
* ইজতেমাই তথা সম্মিলিতভাবে মোনাজাতের হাদিস :
৭. মুত্তালিব ইবনে আবি ওদায়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল ﷺ বলেন, রাতের সালাত দুই রাকাত দুই রাকাত করে, প্রত্যেক দুই রাকাতে তাশাহুদ পড়বে, বিনীত হবে, অসহায়ত্ত প্রকাশ করবে এবং তোমার দুই হাত প্রভুর দিকে উঠিয়ে বলবে, হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দাও। যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, তার সালাত অসম্পূর্ণ।
★সুনানু আবি দাউদ : আল মাকতাবাতুল আশরাফিয়া, দেওবন্দ, খ. ১, পৃ. ১৮৩,
★আবু দাউদ শামেলা হাদিস : ১২৯৮, কিতাবুস সালাত, বাবু সালাতিন নাহার, পৃ. ৪০/২;
★সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩২৫, পৃ. ৪১৯/১, কিতাবু ইকামাতিস সালাত।
৮. সাহাবি হজরত হাবিব ইবনে মাসলামা আল ফিহরি (রা.) যিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়াত ছিলেন, তিনি সৈন্যদের অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দিলেন, যুদ্ধের ডঙ্কা বেজে উঠল, যখন শত্রুর মুখোমুখি হলেন তিনি বললেন, আমি রাসূলকে ﷺ বলতে শুনেছি, কিছু মানুষ যখন কোথাও একত্র হয়ে এভাবে দোয়া করে যে, একজন দোয়া করে এবং বাকিরা আমিন আমিন বলে, তবে আল্লাহ তায়ালা তাদের দোয়া কবুল করেন।
★ আল মুজামুল কাবির লিত তাবরানি, খ. ৪, পৃ. ২৬, হাদিস : ৩৫৩৬;
★মাজমাউজ জাওয়ায়েদ লিল হাহছামি, খ. ১০, পৃ. ১৭ হাদিস : ১৭৩৪৭, হাদিসটির সনদ সহিহ।
৯. সাহাবায়ে কেরাম এরূপ বিভিন্ন হাজতের কথা উল্লেখ করে ফরজ নামাজের পরে সবাই একত্র হয়ে মোনাজাত করতেন। যেমন : এরকম একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে…। অতঃপর ফজরের নামাজের আজান হলো। তিনি সবাইকে নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর তিনি হাঁটু গেড়ে চারজানু হয়ে বসলেন, মুজাহিদরাও চারজানু হয়ে বসল। এরপর তিনি দোয়ার জন্য হাত ওঠালেন আর লোকেরাও হাত ওঠাল।
★আল বেদায় ওয়ান নেহায়া, ফি জিকরি রদ্দাতি আহলিল বাহরাইন ওয়া আওদিহিম ইলাল ইসলাম। খ. ৬, পৃ. ৩৪৭, দারুত তাকওয়া, কায়রো, মিসর; ★তারিখে তাবারি, জিকরু খবরি আহলিল বাহরাইন, খ. ২, পৃ. ২৮৮।
*. নামাজের পরে রাসূলুল্লাহর ﷺ হাত তুলে দোয়া করার খাস হাদিস :
১০. হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার নবী ﷺ নামাজ শেষে সালামের পর হাত উঠিয়ে কেবলামুখী হয়ে বললেন, হে আল্লাহ ওলিদ ইবনে ওলিদ, আইয়াশ ইবনে আবু রাবিয়া, সালামা ইবনে হিশামসহ যেসব দুর্বল মুসলিম কোনোরূপ উপায় উদ্ভাবন করতে পারে না, কোনো পথ পায় না, তাদের কাফেরের হাত থেকে মুক্তি দাও। হাদিসটি গ্রহণযোগ্য।
★(তাফসিরে ইবনে কাসির খ. ১ পৃ. ১২৩)।
১১, হজরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ দোয়ার সময় হাত উঠালে তা নামানোর আগে চেহারা মোবারকে মুছে নিতেন।
★(জামেয়ে তিরমিজি ২/১৭৬, আল মুজামুল আওসাত লিত্তাবরানি ৫/১৯৭, হাদিস: ৭০৫৩)।এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেছেন, হাদিসটি সহিহ। বিশিষ্ট হাদিস বিশারদ আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) বলেন, হাদিসটি হাসান।
**হজরত উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, এ হাদিসের মধ্যে স্পষ্টভাবে দোয়ার সময় হাত তোলার কথা উল্লেখ আছে। এতে বোঝা যায়, দোয়ার সময় হাত তোলা নবীজিﷺ -এর সুন্নাত এবং দোয়ার শেষে হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসেহ করাও সুন্নাত।
*হাত তুলে দোয়া এবং মুখে মাসেহ করা।
১২, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, তোমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করার সময় হাতের তালু ওপর দিকে করো। হাতের তালুর উল্টো দিক করে প্রার্থনা করো না। যখন দোয়া করা শেষ হবে, দুই হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসেহ করো।
★(আবু দাউদ ৫৫৩, আদ্দাওয়াতুল কবির লিল বায়হাকি, পৃ. ৩৯)।
(ইমাম ইবনে মাজাহ (রহ.) বর্ণনা করেছেন এভাবে- হজরত ইবনে আব্বাস কর্তৃক বর্ণিত আবু দাউদ শরিফের উল্লিখিত হাদিস সম্পর্কে লা-মাজহাবি কোনো কোনো আলেম প্রশ্ন তুলেছেন যে ইমাম আবু দাউদ (রহ.) এই হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেননি। সেজন্য হাদিসটি জয়িফ।
এ প্রশ্নের উত্তরে লা-মাজহাবদেরই আলেম মাওলানা শামসুল হক আজিমবাদী আবু দাউদ শরিফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ আইনুল মাবুদে ওই হাদিসের ব্যাখ্যা করেছেন, ইমাম আবু দাউদ (রহ.) যে বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেননি, সে বর্ণনাকারীর নাম ইমাম ইবনে মাজাহ (রহ.) ইবনে মাজাহ শরিফে উল্লেখ করেছেন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.)ও তাঁর কিতাব তাকরিবুত তাহজিবে ওই বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করেছেন। ফলে হাদিসটি জয়িফ বলার কোনো অবকাশ থাকে না।লা-মাজহাবিদের কোনো আলেমের কথা অনুযায়ী যদি ওই হাদিসটির সনদ জয়িফও ধরে নেওয়া যায়, তখনো আলোচ্য বিষয়ে হাদিসটি দলিল হওয়ার সম্পূর্ণ উপযোগী। কারণ লা-মাজহাবিদের আলেম হাফেজ আব্দুল্লাহ রওপুরী তাঁর একটি ফতোয়ায় লিখেছেন, ‘শরিয়তের বিধান দুই প্রকার। এক. কোনো কিছুকে বৈধ স্বীকৃতি দেওয়া,।
দুই. অবৈধ বলে স্বীকৃতি দেওয়া।’ প্রথম প্রকারের বিধানের জন্য সহিহ ও জয়িফ হাদিস দুটিই প্রযোজ্য। দ্বিতীয় প্রকারের জন্য শুধু সহিহ হাদিসই প্রযোজ্য।ফরজ নামাজের পর হাত তুলে দোয়া করা প্রথম প্রকারের অন্তর্ভুক্ত, অর্থাৎ এটি একটি জায়েজ কাজ, হারাম কাজ নয়। তাই মাসয়ালাটি প্রমাণিত হওয়ার জন্য সহিহ ও জয়িফ উভয় প্রকারের হাদিসই প্রযোজ্য। এ ছাড়া তিনি এও মেনে নিয়েছেন, ফরজ নামাজের পর হাত তুলে মুনাজাত করা মুস্তাহাব আমল।
★ (ফাতাওয়া উলামায়ে আহলে হাদিস ১/২২-১৯৮৭ ইং)।
১৩, রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর নিয়ম ছিল, ‘তিনি যখন হাত উঠিয়ে দোয়া করতেন, তখন নিজের হাত চেহারা মোবারকে ফেরাতেন’
★★(আবু দাউদ) (হাদিসটি মুহাদ্দিসিনের কাছে গ্রহণযোগ্য)।
১৪, রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর নিয়ম ছিল, ‘তিনি যখন হাত উঠিয়ে দোয়া করতেন, তখন নিজের হাত চেহারা মোবারকে ফেরাতেন’
★ (আবু দাউদ) (হাদিসটি মুহাদ্দিসিনের কাছে গ্রহণযোগ্য)।