بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
كَلَّا إِنَّا خَلَقْنَاهُمْ مِمَّا يَعْلَمُونَ – فَلَا أُقْسِمُ بِرَبِّ الْمَشَارِقِ وَالْمَغَارِبِ إِنَّا لَقَادِرُونَ * عَلَى أَنْ نُبَدِّلَ خَيْرًا مِنْهُمْ وَمَا نَحْنُ بِمَسْبُوقِينَ * فَذَرْهُمْ يَخُوضُوا وَيَلْعَبُوا حَتَّى يُلَاقُوا يَوْمَهُمُ الَّذِي يُوعَدُونَ * يَوْمَ يَخْرُجُونَ مِنَ الْأَجْدَاثِ سِرَاعًا كَأَنَّهُمْ إِلَى نُصُبٍ يُوفِضُونَ * خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ذَلِكَ الْيَوْمُ الَّذِي كَانُوا يُوعَدُونَ
অনুবাদ: (মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেছেন) কখনই নয়, নিশ্চয় আমি (আল্লাহ) তাদেরকে ওই বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছি, যা তারা জানে, সুতরাং আমি শপথ করছি উদয়াচল ও অস্তাচলসমূহের পালনকর্তার, নিশ্চয় আমি শক্তিমান- তাদের স্থলে তাদের চেয়ে উৎকৃষ্টতর মানব গোষ্ঠিকে স্থলাভিষিক্ত করতে। এবং আমার আয়ত্ত হতে কেউ বের হয়ে যেতে পারে না। অতএব (ওহে রাসূল (দ.) আপনি তাদেরকে ছেড়ে দিন তারা অনর্থক বাকবিতৃা ও ক্রীড়া-কৌতুক করতে থাকুক, শেষ পর্যন্ত তারা তাদের ওই দিবসের সাক্ষাৎ পাবে যে দিবসের ওয়াদা তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে। যেদিন তারা কবরসমূহ থেকে দ্রুতবেগে বের হবে, যেন তারা কোন এক লক্ষ্যস্থলের দিকে যাচ্ছে। তাদের চক্ষুসমূহ অবনমিত অবস্থায় তাদের উপর লাঞ্ছনা সওয়ার থাকবে। এটা ওই দিন যে দিনের ওয়াদা তাদেরকে দেওয়া হচ্ছিল। [সূরা আল-মাআরিজ, ৩৯-৪৪ নম্বর আয়াত]
আনুষঙ্গিক আলোচনা
كَلَّا إِنَّا خَلَقْنَاهُمْ مِمَّا يَعْلَمُونَ
আল্লাহর পবিত্র বাণী كَلَّا إِنَّا خَلَقْنَاهُمْ مِمَّا يَعْلَمُونَ الخ এর ব্যাখ্যায় মুফাসসেরীনে কেরাম উল্লেখ করেছেন, আরবের কাফির-মুশরিক-বেদ্বীনরা রাসূলে কারীম রাউফুর রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আগমন করে তাঁর চতুর্দিকে বৃত্তাকারে বসতো। এবং রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাবির্ক বিষয়াবলী গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করত।
ঐ সময় রাসূলের দরবারে বিদ্যমান দরিদ্র ও অভাবী সাহাবীগণ দেখে এসব কাফির তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সাথে মন্তব্য করত। “যদি এসব লোক জান্নাতে প্রবেশ করে যেমন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে থাকেন, তবে আমরাও অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশাধিকার লাভ করব।”
আর তারা রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্সাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র ও বরকতমৃিত উপদেশাবলী নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত। তখনই মহান রাব্বুল আ‘লামীন তাদের এহেন আশাবাদ এর খন্ডন করতঃ নাযিল করেছেনঃ- كَلَّا إِنَّا خَلَقْنَاهُمْ مِمَّا يَعْلَمُونَ অর্থাৎ কখনই তাদের এ আশা পূরণ হবার নয়। জন্নাতী হবার মূল ভিত্তি হল ঈমান ও নেক আমল। যেমন, এরশাদ হয়েছে- وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلا অর্থাৎ নিশ্চয় যারা ঈমান আনায়ন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে জান্নাতুল ফেরদাউসই তাদের আতিথেয়তার জন্য নির্ধারিত থাকবে। [সূরা কাহ্ফ]
সূরা সফ্ফাতে এরশাদ হয়েছে- إِنَّا خَلَقْنَاهُم مِّن طِينٍ لّازِبٍঅর্থাৎ নিশ্চয় আমি আল্লাহ তাদেরকে এঁটেল মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষই মাটি দ্বারা সৃজিত হয়েছে। কারণ, চিন্তা করলে দেখা যায় যে, প্রত্যেক মানুষের সৃষ্টির মূল উপকরণ পানি মিশ্রিত মাটি। কেননা প্রত্যেক মানুষের জন্ম বীর্য থেকে এবং বীর্য রক্ত দ্বারা গঠিত হয়। রক্ত খাদ্যের নির্যাস, খাদ্য যে কোন আকারেই থাকুক না কেন? উদ্ভিদ তার মূল পদার্থ। আর উদ্ভিদ মাটি ও পানি থেকে উৎপন্ন। শুরুতে যেমন মহান আল্লাহ মানব গোষ্ঠীকে এটেল মাটি দ্বারা সৃষ্টি করে অতঃপর দেহে রূহ সঞ্চারিত করেছিলেন, তেমনিভাবে মৃত্যুর পর যখন মানুষ পুনরায় মাটিতে পরিণত হয়ে যাবে তখন ও মহান আল্লাহ মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করে বিচারের মুখোমুখি করবেন। অতএব, মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত হওয়াকে অস্বীকার কিংবা অসম্ভব মনে করা মূর্খতার নামান্তর বৈ অন্য কিছু নয়।
فَذَرْهُمْ يَخُوضُوا وَيَلْعَبُوا حَتَّى يُلَاقُوا يَوْمَهُمُ الَّذِي يُوعَدُونَ
আল্লাহর পবিত্র বাণী-الخ فَذَرْهُمْ يَخُوضُوا وَيَلْعَبُوا حَتَّى এর ব্যাখ্যায় মুফাসসেরীনে কেরাম উল্লেখ করেছেন, মহান আল্লাহ উপরিউক্ত বাণী অবতীর্ণ করে হাবীবে খোদা আশরাফে আম্বিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সান্ত¦না দিয়েছেন যে, ওহে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম! মক্কার কাফের- মুশরিকদের নিকট বারংবার ঈমান-ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ না করার দরুণ আপনি কোনরূপ চিন্তিত কিংবা মনক্ষুণœ হবেন না। বরং তাদের ঈমানের দাওয়াত গ্রহণ করে হেদায়াত প্রাপ্ত হওয়া কিংবা না হওয়ার বিষয়টি আপনি তাদের জিম্মায় ছেড়ে দিন। তারা তাদের অনর্থক কার্যাদি -বাকবিতৃা ও ক্রীড়া-কৌতুক করতে থাকুক। শেষ পর্যন্ত তারা তাদের ওই দিবসের সাক্ষাৎ পাবে যে দিবসের ওয়াদা তাদের সাথে করা হচ্ছে। কেননা, কেয়ামত দিবসে মহান আল্লাহর দরবারে তাদের ঈমান আনায়ন না করে জাহান্নামী হওয়ার বিষয়ে আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে না। (সুবহানাল্লাহ)। যেমন এরশাদ হয়েছে- ولا تسئل عن أصحاب الجحيم অর্থাৎ ওহে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম! অবশ্যই জাহান্নামীদের বিষয়ে আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হবে না ।
অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে-إنّا عليك إلاّ البلاغ অর্থাৎ ওহে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আপনার জিম্মাদারী হল শুধু হেদায়াতের পয়গাম পৌছিয়ে দেয়া। আর আপনি এ জিম্মাদারী পরিপূর্ণরূপে পালন করেছেন। কুরআনে কারীমের সূরা আল-গাশিয়াহ্ তে এরশাদ হয়েছে- فَذَكِّرْ إِنَّمَا أَنتَ مُذَكِّر- لَّسْتَ عَلَيْهِم بِمُصَيْطِرٍ অর্থাৎ ওহে হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আপনি কাফির-মুশরিকদের হেদায়তের উপদেশ দিতে থাকুন। আপনি তো উপদেশ দাতাই। আপনি তাদের উপর দারোগা নন যে, তাদেরকে মুমিন করতেই হবে। আপনার কাজ শুধু প্রচার করা ও উপদেশ দেয়া। এতটুকু করেই আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। তাদের হিসাব-নিকাশ, শাস্তি ও প্রতিদান আমি আল্লাহর কাজ। উল্লিখিত আয়াত দু’টিকে এভাবে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সান্ত¡না দান করে শানে মুস্তফাকে সৃষ্টিকুলের সম্মুখে চির সমুন্নত ও মহিমান্বিত করেছেন।
হাদীসে পাকে এরশাদ হয়েছে কেয়ামত দিবসে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার সন্তান, স্ত্রী এবং অধীনস্থ চাকর-সেবক সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে এরা কেন হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় নি। কিন্তু মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি ও পরম প্রিয়তম রসূল আহমদ মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে কেয়ামত দিবসে এ ধরনের কোনরূপ প্রশ্ন করা হবে না। কেননা, হাবীবে খোদা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের মূল জিম্মাদারী ছিল ঈমান-ইসলামের পয়গাম উম্মতের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া। আর এ মহান জিম্মাদারী তিনি যথার্থ ও পরিপূর্ণরূপে পালন করেছেন। যার সাক্ষ্য লক্ষাধিক সাহাবায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের দিনে আরাফাতের ময়দানে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে দিয়েছেন। (সুবহানাল্লাহ)
মহান আল্লাহর আলিশান দরবারে ফরিয়াদ জানাই তিনি যেন সকল মুমিন নর-নারীদের উপরোক্ত শিক্ষানুসারে কুরআনের উপর আমল করার সৌভাগ্য নসীব করেন। আমীন।