হাকিকতে নূরে মুহাম্মদী (صلى الله عليه و آله و سلم)
●■ □ নূরে মোহাম্মদীর সৃষ্টির রহস্যঃ
মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বপ্রথম যে মাখলুক সৃষ্টি করেছিলেন, তা ছিলো মহা-সম্মানী একখানা নূর মোবারক এবং সেই নূর মোবারকের নামকরণ করেছিলেন মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর এ আজিমুশশান নূর মোবারককেই বলা হয়ে থাকে নূরে মোহাম্মদী।
মাহবুবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর মোবারক সৃষ্টির পূর্বে যেহেতু আর কোনো মাখলুক(Creation)-ই ছিল না, সেহেতু আল্লাহ তাকারাকা ওয়া তা’য়ালা হেকমতে কামেলা দ্বারা তাঁর হাবিবের নূর মোবারক সৃষ্টি করেছিলেন। কোনো ধাতু ছাড়াই কীভাবে যে আল্লাহতা’য়ালা তাঁর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টি করলেন, তা কেউ বলতে পারে না। নূরে মোহাম্মদী সৃষ্টির এই অজানা রহস্যকেই বলা হয় নূরে মোহাম্মদীর হাকীকত।
আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র নূরানী ফরমান –
ﻳﺎ ﺍﺑﺎ ﺑﻜﺮ ﻟﻢ ﻳﻌﺮﻓﻨﻰ ﺣﻘﻴﻘﺔ ﻏﻴﺮ ﺭﺑﻰ –
অর্থাৎ, ‘হে আবু বকর! আমার প্রভু ভিন্ন আমার হাকীকত সম্বন্ধে কেউই অবগত নন।’
এ হাদিস শরীফের মর্ম অনুযায়ী বলা হয়ে থাকে –
ﻣﺤﻤﺪ ﺳﺮ ﻗﺪﺭﺕ ﮨﮯ – ﮐﻮﺉ ﺭﻣﻮﺯ ﺍﺱ ﮐﺎ ﮐﯿﺎ ﺟﺎﻧﮯ
ﺷﺮﯾﻌﺖ ﻣﯿﮟ ﺗﻮ ﺑﻨﺪﮦ ﮨﮯ- ﺣﻘﯿﻘﺖ ﻣﯿﮟ ﺧﺪﺍ ﺟﺎﻧﮯ
অর্থাৎ, ‘আল্লাহর হাবিব মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুদরতে এলাহির এক গোপনীয় সুক্ষ্ম রহস্য, যার ভেদ কেউ জানতে পারে নাই। শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে তিনিতো আল্লাহর একজন বান্দা, কিন্তু তাঁর মূল হাকীকত কী, তা জানেন একমাত্র আল্লাহতা’য়ালাই।’
এ প্রসঙ্গে চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খাঁন (আলাইহির রহমত) তাঁর লিখিত ‘সিলাতুস সাফা ফি নূরীল মোস্তফা’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেন –
ﻋﺎﻟﻢ ﻣﯿﮟ ﺫﺍﺕ ﺭﺳﻮﻝ ﮐﻮ ﺗﻮ ﮐﻮﺉ ﭘﮩﭽﺎﻧﺘﺎ ﻧﮩﯿﮟ
অর্থাৎ, ‘এ নশ্বর পৃথিবীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র সঠিক পরিচিতি কেউই অবগত নন।’
তিনি আরো বলেন –
ﺍﺱ ﺗﺨﻠﯿﻖ ﮐﮯ ﺍﺻﻞ ﻣﻌﻨﯽ ﺗﻮ ﺍﻟﻠﮧ ﻭﺭﺳﻮﻝ ﺟﺎﻧﯿﮟ ﺟﻞ
ﻭﻋﻠﯽ ﻭﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ –
অর্থাৎ, ‘মাহবুবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র সৃষ্টির মূল রহস্য একমাত্র আল্লাহতা’য়ালা ও তাঁর রাসূল-ই জানেন।’
অন্যত্র বলেন –
ﮐﮧ ﻧﻮﺭ ﻣﺤﻤﺪﯼ ﺟﺐ ﻗﺪﯾﻢ ﺍﻭﺭ ﺍﺯﻟﯽ ﻧﻮﺭ ﮐﯽ ﭘﮩﻠﯽ ﺗﺠﻠﯽ
ﮨﮯ ﺗﻮ ﮐﺎﺋﻨﺎﺕ ﻣﯿﮟ ﺑﮭﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﮐﮯ ﻭﺟﻮﺩ ﮐﺎ ﻭﮬﯽ
ﺳﺐ ﺳﮯ ﭘﮩﻠﮧ ﻣﻈﮭﺮ ﮨﮯ –
অর্থাৎ, ‘নূরে মোহাম্মদী যখন নূরে কাদীম ও নূরে আজলি, অর্থাৎ, আল্লাহতা’য়ালার জাতের প্রথম তাজাল্লি, তাতে প্রমাণিত হয় সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে তিনি-ই আল্লাহতা’য়ালার অজুদ বা অস্তিত্বের প্রথম প্রকাশক।’
আ’লা হযরত আরো বলেন –
ﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﻧﮯ ﻣﺤﻤﺪ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﮐﯽ ﺫ
ﺍﺕ ﭘﺎﮎ ﮐﻮ ﺍﭘﻨﯽ ﺫﺍﺕ ﮐﺮﯾﻢ ﺳﮯ ﭘﯿﺪﺍﮐﯿﺎ ﯾﻌﻨﯽ ﻋﯿﻦ ﺫﺍﺕ
ﮐﯽ ﺗﺠﻠﯽ ﺑﻼ ﻭﺍﺳﻄﮧ ﮨﻤﺎﺭﮮ ﺣﻀﻮﺭ ﮨﯿﮟ ﺑﺎﻗﯽ ﺳﺐ
ﮨﻤﺎﺭﮮ ﺣﻀﻮﺭ ﮐﮯ ﻧﻮﺭ ﻭﻇﮭﻮﺭ ﮨﯿﮟ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ –
অর্থাৎ, ‘আল্লাহতা’য়ালা হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সত্তাকে আল্লাহর জাতে পাকের স্বীয়জাতে করিম কর্তৃক সৃষ্টি করেছেন; অর্থাৎ, আমাদের হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো মাধ্যম ছাড়াই আল্লাহতা’য়ালার জাতের তাজাল্লি, আর বাকি কুল-কায়েনাত আমাদের নূর নবীর মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।’
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হলো যে, নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র নূর মোবারক আল্লাহ পাকের কাদীম ও আজলি নূরের প্রথম তাজাল্লি; অর্থাৎ, আল্লাহর জাত কর্তৃক সৃষ্ট নূর।
●■ □ আল্লাহর নূর কর্তৃক নবীজীর নূর সৃষ্টি কথাটির ব্যাখ্যাঃ
নূরে মোহাম্মদী সৃষ্টির রহস্য উদঘাটন ও আলোচনার ক্ষেত্রে হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণিত হাদিসখানা উল্লেখযোগ্য –
ﻳﺎ ﺝ
ﺍﺑﺮ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺪ ﺧﻠﻖ ﻗﺒﻞ ﺍﻻﺷﻴﺎﺀ ﻧﻮﺭ ﻧﺒﻴﻚ ﻣﻦ ﻧﻮﺭﻩ –
‘হে জাবির! নিশ্চয়ই আল্লাহতা’য়ালা সব কিছুর পূর্বে তোমার নবীর নূর মোবারক স্বীয় নূর কর্তৃক সৃষ্টি করছেন।’
এ হাদিস শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লামা জারকানি আলাইহির রহমত বলেন –
ﻣﻦ ﻧﻮﺭﻩ ﺍﻯ ﻣﻦ ﻧﻮﺭ ﻫﻮ ﺫﺍﺗﻪ –
অর্থাৎ, আল্লাহতা’য়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওই নূর কর্তৃক সৃষ্টি করেছেন, যাﻋﻴﻦ ﺫﺍﺕ ﺍﻟﻬﻰ আল্লাহর প্রকৃত জাত, অর্থাৎ, আল্লাহতা’য়ালা স্বীয় জাত কর্তৃক তাঁর হেকমতে কামেলার দ্বারা কোনো মাধ্যম ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন। এর অর্থ এই নয় যে আল্লাহতা’য়ালার নূর নবী সৃষ্টির ধাতু। আল্লাহতা’য়ালা কোনো মাধ্যম ছাড়াই ‘কুন’ বলেছেন, ‘ফাইয়াকুন’ অতঃপর নবী (দ:)-এর নূর মোবারক সৃষ্টি হয়ে গেল।
�� চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী আলাইহির রহমত নিজ ‘সিলাতুস সফা ফি নূরিল মোস্তফা’ শীর্ষক কিতাবে উল্লেখ করেছেন –
ﮬﺎﮞ ﻋﯿﻦ ﺫﺍﺕ ﺍﻟﮭﯽ ﺳﮯ ﭘﯿﺪﺍ ﮨﻮﻧﮯ ﮐﮯ ﯾﮧ ﻣﻌﻨﯽ ﻧﮩﯿﮟ
ﮐﮧ ﻣﻌﺎﺫ ﺍﻟﻠﮧ ﺫﺍﺕ ﺍﻟﮭﯽ ﺫﺍﺕ ﺭﺳﺎﻟﺖ ﮐﮯ ﻟﮱ ﻣﺎﺩﮦ ﮨﮯ
ﺟﯿﺴﮯ ﻣﭩﯽ ﺳﮯ ﺍﻧﺴﺎﻥ ﭘﯿﺪﺍ ﮨﻮﺍ ﻋﯿﺎﺫ ﺑﺎﻟﻠﮧ ﺫﺍﺕ ﺍﻟﮭﯽ ﮐﺎ
ﮐﻮﺉ ﺣﺼﮧ ﯾﺎ ﮐﻞ ﺫﺍﺕ ﻧﺒﯽ ﮨﻮﮔﯿﺎ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﺣﺼﮯ
ﺍﻭﺭ ﭨﮑﺮﮮ ﺍﻭﺭ ﮐﺴﯽ ﮐﮯ ﺳﺎﺗﮧ ﻣﺘﺤﺪ ﮨﻮﺟﺎﻧﮯ ﯾﺎ ﮐﺴﯽ
ﻣﯿﮟ ﺣﻠﻮﻝ ﻓﺮﻣﺎﻧﮯ ﺳﮯ ﭘﺎﮎ ﻭﻣﻨﺰﮦ ﮨﮯ ﺣﻀﻮﺭ ﺳﯿﺪ ﻋﺎﻟﻢ
ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﺧﻮﺍﮦ ﮐﺴﯽ ﺷﺊ ﮐﻮ ﺟﺰﺀ ﺫﺍﺕ
ﺍﻟﮭﯽ ﺧﻮﺍﮦ ﮐﺴﯽ ﻣﺨﻠﻮﻕ ﮐﻮ ﻋﯿﻦ ﻭﻧﻔﺲ ﺫﺍﺕ ﺍﻟﮭﯽ
ﻣﺎﻧﻨﺎ ﮐﻔﺮ ﮨﮯ –
(আলা হযরত ইমাম আহমদ রেজা খাঁন আলাইহির রহমত ﺣﻀﻮﺭ ﻋﯿﻦ ﺫﺍﺕ ﺍﻟﮭﯽ ﺳﮯ ﭘﯿﺪﺍ ﮨﻮﺍ -এর ভাবার্থ উদঘাটন করতে গিয়ে উল্লেখ করেন)
ভাবার্থ: আইনে জাতে এলাহি বা আল্লাহর প্রকৃত জাত থেকে (নূরে হাকিকী আল্লাহর জাত কর্তৃক) হাবিবে খোদা সৃষ্টি হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর জাত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জাত সৃষ্টির জন্য মাদ্দা বা মূল ধাতু (নাউজুবিল্লাহ)। যেমন মাটি দ্বারা মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে। অথবা এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর জাতের কোনো অংশ বা আল্লাহর কুল জাত নবী হয়ে গিয়েছেন (নাউজুবিল্লাহ)।
মহান আল্লাহ অংশ, টুকরো এবং কোনো কিছুর সাথে একীভূত হওয়া অথবা কোনো বস্তুর মধ্যে হুলুল হওয়া থেকে পবিত্র। হুজুর সাইয়িদে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনকি কোনো বস্তুকে আল্লাহর জাতের অংশ, এমনকি কোনো সৃষ্টিকে প্রকৃত জাত ও নফসে জাতে এলাহি মানা বা আক্বিদা রাখা কুফুরি।’
উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, আল্লাহতা’য়ালার জাত মোবারক এমন একটি নূর যার কোনো উদাহরণ বা মিসাল নেই। বেনজীর বেমিসাল নূর। যে নূরের অংশ হয় না, ভাগ হয় না, টুকরো হয় না, লাল, হলুদ,সবুজ, এক কথায় সৃষ্টির মধ্যে যার কোনো তুলনা নেই।
মোটকথা, আল্লাহর নূর হলো নূরে হাকিকী এবং রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর হলো নূরে তাখলিকী বা আল্লাহর সৃষ্ট নূর।
�� আ’লা হযরত নিজ ‘নূরুল মোস্তফা’ শীর্ষক গ্রন্থের ১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-
ﻧﻮﺭ ﻋﺮﻑ ﻋﺎﻣﮧ ﻣﯿﮟ ﺍﯾﮏ ﮐﯿﻔﯿﺖ ﮨﮯ ﮐﮧ ﻧﮕﺎﮦ ﭘﮩﻠﮯ ﺍﺳﮯ
ﺍﺩﺭﺍﮎ ﮐﺮﺗﯽ ﮨﮯ ﺍﻭﺭ ﺍﺱ ﮐﮯ ﻭﺍﺳﻄﮯ ﺳﮯ ﺩﻭﺳﺮﯼ ﺍﺷﯿﺎﺋﮯ
ﺩﯾﺪﻧﯽ ﮐﻮ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺴﯿﺪ ﻓﯽ ﺗﻌﺮﯾﻔﺎﺗﮧ ﺍﻟﻨﻮﺭ ﮐﯿﻔﯿۃ ﺗﺪﺭﮐﮭﺎ
ﺍﻟﺒﺎﺻﺮۃ ﺍﻭﻻ ﻭﺑﻮﺍﺳﻄﺘﮭﺎ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻟﻤﺒﺼﺮﺍﺕ- ﺍﻭﺭ ﺣﻖ ﯾﮧ ﮐﮧ
ﻧﻮﺭ ﺍﺱ ﺳﮯ ﺍﺟﻠﯽ ﮨﮯ ﮐﮧ ﺍﺱ ﮐﯽ ﺗﻌﺮﯾﻒ ﮐﯽ ﺟﺎﺋﮯ – ﯾﮧ
ﺟﻮ ﺑﯿﺎﻥ ﮨﻮﺍ ﺗﻌﺮﯾﻒ ﺍﻟﺠﻠﯽ ﺑﺎﻟﺨﻔﯽ ﮨﮯ ﮐﻤﺎ ﻧﺒﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻓﯽ
ﺍﻟﻤﻮﺍﻗﻒ ﻭﺷﺮﺣﮭﺎ ﻧﻮﺭ ﺑﺎﯾﮟ ﻣﻌﻨﮯ ﺍﯾﮏ ﻋﺮﺽ ﻭﺣﺎﺩﺙ ﮨﮯ
ﺍﻭﺭ ﺍﺏ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﺍﺱ ﺳﮯ ﻣﻨﺰﮦ ﮨﮯ –
অর্থাৎ, উরফে আম বা প্রচলিত সংজ্ঞায় নূর হচ্ছে একটি কাইফিয়ত বা অবস্থা, দৃষ্টিশক্তি প্রথমে যেটিকে অনুধাবন করে এবং এর মাধ্যমে অন্যান্য দৃষ্ট জিনিসও অনুধাবন করা হয়।
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺴﻴﺪ ﻓﻰ ﺗﻌﺮﻳﻔﺎﺗﻪ ﺍﻟﻨﻮﺭ
ﻛﻴﻔﻴﺔ ﺗﺪﺭﻛﻪ ﺍﻟﺒﺎﺻﺮﺓ ﺍﻭﻻ ﻭﺑﻮﺍﺳﻄﺘﻬﺎ ﺳﺎﺋﺮ ﺍﻟﻤﺒﺼﺮﺍﺕ
সঠিক তত্ত্ব হলো, এখানে যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে, তা থেকে নূর অনেক উর্ধ্বে। এটা ﺗﻌﺮﻳﻒ ﺍﻟﺠﻠﻰ ﺑﺎﻟﺨﻔﻰ ‘ তা’রিফুল জলি বিল খফি’। যেমন ﻣﻮﺍﻗﻒ ও তার ব্যাখ্যা গ্রন্থে তা বর্ণনা করা হয়েছে। এই অর্থে নূর হচ্ছে আরজ ও হাদেস তথা যা অন্যের মাধ্যমে স্থিতিশীল এবং ক্ষণস্থায়ী। আর আল্লাহতা’য়ালা এগুলো থেকে পবিত্র। (এ জন্যে উপরোক্ত অর্থে আল্লাহ তা’য়ালার পবিত্র সত্তাকে নূর বলা যেতে পারে না।)
�� একাদশ শতাব্দীর দশম মুজাদ্দিদ, হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী শায়খ আহমদ ফারূকী সিরহিন্দী আলাইহির রহমত (বেসাল: ১০৩৪ হিজরি) স্বপ্রণীত একাদশ শতাব্দীর দশম মুজাদ্দিদ, হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী শায়খ আহমদ ফারূকী সিরহিন্দী আলাইহির রহমত (বেসাল: ১০৩৪ হিজরি) স্বপ্রণীতﻣﻜﺘﻮﺑﺎﺕ ﺍﻣﺎﻡ ﺭﺑﺎنى ‘মাকতুবাতে ইমামে রাব্বানী’ শীর্ষক কিতাবের তৃতীয় জিলদের (উর্দু) ১৬১৫/১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন –
ﻣﻤﮑﻦ ﭼﮧ ﺑﻮﺩ ﮐﮧ ﻇﻞ ﻭﺍﺟﺐ ﺑﺎﺷﺪ
ﻭﺍﺟﺐ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﮐﺎ ﺳﺎﯾﮧ ﮐﯿﻮﮞ ﮨﻮﮔﺎ ﮐﯿﻮﻧﮑﮧ ﻣﺜﻞ ﮐﯽ ﺗﻮﻟﯿﺪ
ﮐﺎ ﻣﻮﮨﻢ ﮨﮯ ﺍﻭﺭ ﻋﺪﻡ ﮐﻤﺎﻝ ﻟﻄﺎﻓﺖ ﮐﮯ ﺷﺎﺋﺒﮧ ﮐﯽ ﺧﺒﺮ
ﺩﯾﺘﺎﮨﮯ- ﺟﺒﮑﮧ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﮧ ﺻﻠﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﯿﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﮐﺎ
ﻟﻄﺎﻓﺖ ﮐﯽ ﻭﺟﮧ ﺳﮯ ﺳﺎﯾﮧ ﻧﮧ ﺗﮭﺎ ﺗﻮ ﺧﺪﺍﮰ ﻣﺤﻤﺪ ﮐﺎ
ﺳﺎﯾﮧ ﮐﯿﻮﮞ ﮨﻮﮔﺎ- ﺧﺎﺭﺝ ﻣﯿﮟ ﻣﻮﺟﻮﺩ ﺑﺎﻟﺬﺍﺕ ﺍﻭﺭ
ﺑﺎﻻﺳﺘﻘﻼﻝ ﺻﺮﻑ ﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﮐﯽ ﺫﺍﺕ ﮨﮯ ﺍﻭﺭ ﯾﺎﭘﮭﺮ ﺍﻟﻠﮧ
ﺗﻌﺎﻟﯽ ﮐﯽ ﺻﻔﺎﺕ ﺛﻤﺎﻧﯿﮧ ﺣﻘﯿﻘﯿﮧ ﺍﻭﺭ ﺍﻥ ﮐﮯ ﺳﻮﺍ ﺟﻮ
ﮐﭽﮫ ﺑﮭﯽ ﮨﮯ ﻭﮦ ﺍﻟﻠﮧ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﮐﯽ ﺍﯾﺠﺎﺩ ﺳﮯ ﻣﻮﺟﻮﺩ ﮨﻮﺍ ﮨﮯ
ﺍﻭﺭ ﻣﻤﮑﻦ ﺍﻭﺭ ﻣﺨﻠﻮﻕ ﺍﻭﺭ ﺣﺎﺩﺙ ﮨﮯ ﺍﻭﺭ ﮐﻮﺉ ﻣﺨﻠﻮﻕ
ﺍﭘﻨﮯ ﺧﺎﻟﻖ ﮐﺎ ﻇﻞ ﻧﮩﯿﻦ ﮨﮯ –
ভাবার্থ: মমকিনের কী ক্ষমতা যে, ওয়াজিবের প্রতিচ্ছায়া হয়। ওয়াজিব বা অবশ্যম্ভাবী জাত বা সত্তার (আল্লাহতা’য়ালার) ছায়া কেন হবে? যেহেতু ছায়াবিশিষ্ট হওয়া অনুরূপ বস্তুর সাদৃশ্যের ধারণার জন্ম দিয়ে থাকে। ছায়াবিশিষ্ট না হওয়া পূর্ণ সূক্ষ্ম অস্তিত্বের নিদর্শন জ্ঞাপক। যখন সূক্ষ্মতা বশতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র শরীর মোবারকের ছায়া ছিল না, তবে মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র রব বা প্রতিপালকের ছায়া হবে কেন?
খারেজ বা বহিঃজগতে ﻣﻮﺟﻮﺩ ﺑﺎﻟﺬﺍﺕ ‘মাওজুদ বিজজাত’ বা স্বীয় অস্তিত্বে অস্তিত্ববান এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহতা’য়ালার যাত বা সত্তা। আল্লাহতা’য়ালার অষ্ট সিফাতে খাসসা বা খাস গুণাবলীতে প্রকৃত আদি বা বাস্তব গুণ বিদ্যমান। এটি ছাড়া অন্যান্য গুণাবলী যা আছে, তা সম্ভাব্য সৃষ্ট ও হাদেস বা নতুন বস্তু। কোনো সৃষ্ট বস্তু স্বীয় স্রষ্টার ছায়া নয়।
ﺩﺭ ﺧﻮﺍﺳﺘﮧ ﺍﺳﺖ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﺍﮮ ﺧﺪﺍ ﮐﮧ ﺩﺭ ﺟﻤﯿﻊ ﺍﻋﻀﺎ
ﻭﺟﮭﺎﻥ ﻧﻮﺭ ﺑﺨﺸﺪ ﻭﺩﺭ ﺁﺧﺮ ﺁﮔﻔﺘﮧ ﻭﺍﺟﻌﻠﻨﯽ ﻧﻮﺭﺍ ﻭﭼﻮﮞ
ﺁﻧﺤﻀﺮﺕ ﻋﯿﻦ ﻧﻮﺭ ﺑﺎﺷﺪ ﻧﻮﺭ ﺭﺍﺳﺎﯾﮧ ﻧﻤﯿﺒﺎﺷﺪ ( ﻣﺪﺍﺭﺝ
ﺍﻟﻨﺒﻮۃ ﺹ ১/ ۱ ٤٦ ﻓﺎﺭﺳﯽ )
ভাবার্থ: নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাজাত করতেন, ইয়া আল্লাহ! আমার সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও চতুর্দিকে নূর দান করুন (নূরানী করে দিন)। দো’য়ার শেষাংশে উল্লেখ রয়েছে- ﻭﺍﺟﻌﻠﻨﻰ ﻧﻮﺭﺍ আমাকে নূরে পরিণত করে দিন। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ﻋﻴﻦ ﻧﻮﺭ ﺑﺎﺷﺪ
‘আইনে নূরে বাসদ’, অর্থাৎ, নিজেই নূর ছিলেন, আর নূরের তো ছায়া হয় না।’
উপরেলিখিত দলিলভিত্তিক আলোচনার দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, আল্লাহতা’য়ালা সর্বপ্রথম নবী (দ:)-এর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন তাঁর হেকমতে কামেলার দ্বারা এবং নবীর নূর মোবারক দ্বারা সবকিছু তথা কুল কায়েনাত আল্লাহপাক সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল্লা নূরে হাকিকী, বরং হাকিকতে বা প্রকৃতপক্ষে তিনি-ই একমাত্র নূর। অর্থাৎ, ﻣﻨﻮﺭ ‘মুনাওইর’ বা নূরের সৃষ্টিকর্তা এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন নূরে তাখলিকী বা সৃষ্ট নূর। ﻟﻄﺎﻓﺖ ‘লতিফ’ বা সূক্ষ্ম হওয়ার কারণে নবী (দ:)-এর যেমন ছায়া ছিল না, আল্লাহতা’য়ালারও তেমনি ছায়া নাই। কারণ তিনি হচ্ছেন সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতম।
●■ □ ওয়াজিবুল ওজুদ ও নূরে হাকিকী একমাত্র আল্লাহঃ
ওয়াজিবুল ওজুদ একমাত্র আল্লাহতা’য়ালা। তিনি ছাড়া ওয়াজিবুল ওজুদ আর কেউই নেই। কেননা, ওয়াজিবুল ওজুদ ওই সত্তাকে বলে, যিনি সত্তাগতভাবে স্বয়ং অস্তিত্বশীল, অন্যের দ্বারা অস্তিত্বশীল নন। যিনি কখনো অস্তিত্বহীন ছিলেন না এবং অস্তিত্বহীন হবেনও না। এমন সত্তা একমাত্র আল্লাহ। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই বলা হয় لا موجود الا الله অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া কারো কোনো অস্তিত্ব নেই। যারা অন্যের দ্বারা একবার অস্তিত্বশীল হন আবার এক সময় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েন, তাঁদেরকে বলা হয় মমকিনুল ওজুদ। আর এর উদাহরণ হল সমস্ত মাখলুক।
এভাবে নূরে হাকিকী বা নূরে মতলক একমাত্র আল্লাহ। কেননা, নূরে হাকিকী বা প্রকৃত অর্থে নূর একমাত্র আল্লাহতা’য়ালার জাত বা সত্তাকেই বুঝায়। আল্লাহতা’য়ালা ছাড়া যা কিছু আছে, তাকে বিজ্জাত মুজলিম বা অন্ধকার বলা হয়। হ্যাঁ, আল্লাহপাক যাঁকে নূর বানিয়েছেন বা নূর দান করেছেন, তাঁকে রূপক অর্থে নূর বলা হয়। এ ধরনের নূরকে ’নূরে মুজাজি’ বলে। অতএব, আল্লাহতা’য়ালা ছাড়া যে সকল সম্মানিত মাখলুককে আমরা নূর বলে থাকি, তা নূরে মজাজি; নূরে মতলক বা নূরে হাকিকী নয়।
এ প্রসঙ্গে তাফসিরে রূহুল মায়ানী ৬ষ্ঠ খণ্ড ১৮ পারা – الله نور السموات والارض – এ আয়াতের তাফসিরে ১৬৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
فالوجود الحق- والله تعالى كما ان النور الحق هو الله عزوجل-
‘অতএব, যেমনভাবে ওজুদে হক একমাত্র আল্লাহতা’য়ালা, তেমনিভাবে নূরে হক-ও আল্লাহতা’য়ালা-ই।’
এর কয়েক লাইন পরে উল্লেখ রয়েছে –
وفسر النور فى هذه الاية اعنى قوله تعالى (الله نور السموات والارض) بذلك ثم اشار الى وجه الاضافة الى (السموات والارض) بقوله: لا ينبغى ان يخفى عليك ذلك بعد ان عرفت انه تعالى هو النور ولا نور سواه-
অর্থাৎ, الله نور السموات والارض – এ আয়াতে কারীমার মধ্যে যে নূর রয়েছে, এ নূর দ্বারা আল্লাহ যে নূরে হাকিকী তারই প্রমাণ বহন করে একমাত্র আল্লাহতা’য়ালাই ‘হাকিকী নূর’। অন্য নূরের সঙ্গে যার কোনো তুলনা হতে পারে না। এ নূর হচ্ছে আজলি ও কাদীম যার কোনো আরম্ভ নেই।
তারপর অানুমানিক ১১ লাইন পরে উল্লেখ রয়েছে –
معنى النور وهو الظهور فى نفسه واظهار لغيره-
আল্লাহতা’য়ালাই হাকিকী নূর যা নিজে নিজে প্রকাশকারী এবং অন্যকেও প্রকাশকারী।
এরপর আরো ১১ লাইন পরে উল্লেখ রয়েছে –
وقيل: نور بمعنى منور وروى ذلك عن الحسن- وابى العاليه والضحاك وعليه جماعة عن المفسرين-
অর্থাৎ, ‘نور ‘নূর’-এর অর্থ হচ্ছে منور ‘মুনাওইর’ যা অন্য সব কিছুকে আলোকিতকারী। হাসান আবু আলীয়া ও জেহহাকসহ এবং এক জামাত মুফাসসিরীনে কেরামের অভিমত এর ওপর রয়েছে।
আল্লামা রাগেব ইস্পাহানির লিখিত ‘আল মুফরিদাত’ শীর্ষক কিতাবের ৫০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে –
وسمى الله تعالى نفسه نورا من حيث انه هو المنور- قال: (الله نور السموات والارض)
অর্থাৎ, ‘আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’য়ালা স্বীয় নাফস বা জাতকে নূর বলে নামকরণ করেছেন, এ মর্মে যে এ নূরের অর্থ হলো منور ‘মুনাওইর’ বা আলোদানকারী। আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ আসমান ও জমিনের নূর দানকারী।’ অর্থাৎ, আল্লাহ হচ্ছেন হাকিকী নূর আর নবী হচ্ছেন তাখলিকী বা সৃষ্ট নূর। আল্লাহতা’য়ালা তাঁর হেকমতে কামেলার দ্বারা এ নূর মোবারককে সৃষ্টি করে, এর সম্পর্ক সরাসরি আল্লাহর জাত মোবারকের দিকে রেখেছেন। এ জন্যে বলা হয়, আল্লাহর জাত কর্তৃক নবী (দ:)-এর জাতের সৃষ্টি।
ষষ্ঠ শতাব্দীর পঞ্চম মুজাদ্দিদ আল্লামা ইমাম গাজ্জালি আলাইহির রহমত (বেসাল: ৫০৫ হিজরি) ‘মিশকাতুল আনওয়ার’ শীর্ষক একখানা কিতাব প্রণয়ন করেছেন এবং কুরআন-সুন্নাহর দলিল-আদিল্লাহর মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন আল্লাহতা’য়ালা-ই একমাত্র নূর, নূরে হাকিকী, নূরে মতলক, আল্লাহর জাত হলো নূর এবং আল্লাহ ছাড়া সবই مظلم ‘মুজলিম’ বা অন্ধকার। আল্লাহ যাঁকে নূর দান করেছেন তিনি-ই একমাত্র নূর নামে আখ্যায়িত হয়েছেন। আল্লাহর হাবিব নিজেই এরশাদ করেছেন – اول ما خلق الله نورى সর্বসৃষ্টির পূর্বে আল্লাহতা’য়ালা আমি নবীর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং আল্লাহর হাবিব হচ্ছেন আল্লাহতা’য়ালার সৃষ্ট নূর।
সপ্তম শতাব্দীর ষষ্ঠ মুজাদ্দিদ আল্লামা ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী আলাইহির রহমত (ওফাত ৬০৪ হিজরি) নিজ ‘তাফসিরে কবির’ শীর্ষক কিতাবের ১২ নম্বর জিলদের ২৩ নম্বর জুজ-এর ২৩০ পৃষ্ঠায় ইমাম গাজ্জালি আলাইহির রহমত’এর – مشكوة الانوار ‘মিশকাতুল আনওয়ার’ নামক কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেন –
والممكن لذاته يستحق العدم من ذاته والوجود من غيره والعدم هو الظلمة- ( ص ۲۳٠ جزء ۲۳)
ভাবার্থ: মুমকিন বিজ্জাত বা সত্তাগত মুমকিন বলা হয় তাকে যা স্বয়ং অস্তিত্বশীল নয়, অন্যের দ্বারা অস্তিত্বশীল হয়, আর সকল عدم ‘আদম’ বা অস্তিত্বহীন হচ্ছে জুলমত বা অন্ধকার (যা নূরের বিপরীত)।
অতঃপর ইমাম রাযী (রহ:) বলেন –
الحاصلة والوجود هو النور- فكل ما سوى الله مظلم لذاته مستنير بانارة الله تعالى (ص ۲۳٠ جزء ۲۳)
ভাবার্থ: সারকথা হচ্ছে, আল্লাহতা’য়ালার ওজুদ-ই হচ্ছে একমাত্র নূর (বা হাকিকী নূর বমা’না منور ‘মুনাওইর’ নূর সৃষ্টিকারী)
অতএব, আল্লাহ ছাড়া অন্য সবকিছু সত্তাগতভাবে জুলমত বা অন্ধকার এবং আল্লাহ প্রদত্ত নূরের দ্বারাই নূরানী।
এককথায়, আল্লাহ হচ্ছেন ওয়াজিবুল ওজুদ যার আরম্ভ নেই, শেষও নেই, যিনি বিজ্জাত মওজুদ, অর্থাৎ, নিজে নিজেই অস্তিত্বশীল।
অতঃপর ইমাম রাযী (রহ:) আরো বলেন –
وعند هذا يظهر ان النور المطلق هو الله سبحانه وان اطلاق النور على غيره مجاز اذ كل ما سوى الله (ص ۲۳٠ جزء ۲۳)
ভাবার্থ: দলিলভিত্তিক আলোচনার দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, নিশ্চয় মতলক নূর হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা। আল্লাহ ছাড়া অন্যের ওপর নূরের এতলাক বা অন্য কাউকে নূর আখ্যায়িত করা মজাজ বা রূপক অর্থে প্রয়োগ হবে। (হাকিকী নূর একমাত্র আল্লাহতা’য়ালা-ই। আল্লাহ তাঁর হাবিবের নূর মোবারক সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন।)
অতঃপর হযরত ইমাম আরো বলেন –
فثبت انه سبحانه هو النور- وان كل ما سواه فليس بنور الاعلى سبيل المجاز (ص ۲۳٠ جزء ۲۳)
ভাবার্থ: অতএব, স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা-ই একমাত্র নূর। আল্লাহতা’য়ালা ছাড়া অন্য যা কিছুই রয়েছে কাউকে নূর বলে আখ্যায়িত করা যায় না; কিন্তু তা হবে মজাজ বা রূপক অর্থে নূর। অতঃপর তিনি আরো বলেন-
واعلم ان هذا الكلام الذى روينا عن الشيخ الغزالى رحمه الله كلام مستطاب ولكن يرجع حاصله بعد التحقيق الى ان معنى كونه سبحانه نورا انه خالق للعالم وانه خالق للقوى الدراكة وهو المعنى من قولنا معنى كونه نورا السموات والارض انه هادى اهل السموات والارض- فلاتفاوت بين ما قاله وبين الذى نقلناه عن المفسرين فى المعنى والله اعلم (جلد ۱۲ ص ۲۳۱ جزء ۲۳ تفسير كبير)
ভাবার্থ: (ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী আলাইহির রহমত বলেন) জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই এই বক্তব্য যা আমি বর্ণনা করেছি, তা হলো শায়খ ইমাম গাজ্জালী আলাইহির রহমত হতে كلام مستطاب উত্তম কালাম বা গ্রহণযোগ্য বক্তব্য। এই ভাষ্য তাহকিক বা বিশ্লেষণ করে যা প্রাধান্য পায়, তা হলো এ অর্থে আল্লাহতা’য়ালা নূর যে তিনি জগতের স্রষ্টা এবং নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহতা’য়ালা) শক্তিশালী জ্ঞান বা বোধগম্যতা সৃষ্টিকারী। আমাদের বক্তব্য এ অর্থই বহন করে যে, আল্লাহতা’য়ালার কালাম الله نور السموات والارض – ‘আল্লাহতা’য়ালা আসমান জমিনের নূর’, অর্থাৎ, তিনি (আল্লাহতা’য়ালা) নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের অধিবাসীদের পথপ্রদর্শক।
আল্লামা ইমাম গাজ্জালী আলাইহির রহমত যে ফয়সলা দিয়েছেন এবং মুফাসসিরীনগণ থেকে আমরা যা বর্ণনা করেছি, এর উভয়ের মধ্যে অর্থের দিক দিয়ে কোনো পার্থক্য নেই। সহিহ মুসলিম শরীফ ১ম জিলদের ৭৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে –
عن ابى ذر قال سالت رسول الله صلى الله عليه وسلم هل رأيت ربك قال نور انى اراه-
عن قتادة عن عبد الله بن شقيق قال قلت لابى ذر لو رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم لسألته فقال عن اى شئ كنت تسأله قال كنت اسأله هل رأيت ربك قال ابو ذر قد سألته فقال رأيت نورا-
অর্থাৎ, হযরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আমি আরজ করেছি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি আপনার রবকে দেখেছেন? আল্লাহর হাবিব উত্তরে বললেন, তিনি নূর আমি তাঁকে কীভাবে দেখবো?
হযরত কাতাদা কর্তৃক হযরত আব্দুল্লাহ বিন শাকীক হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছি যে, যদি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাৎ পেতাম, তাহলে আমি জিজ্ঞেস করতাম। তখন আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি কোন্ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করতে? তিনি বললেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম: আপনি কি আপনার রবকে দেখেছেন? হযরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি এ বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তাঁকে নূর (রূপে) দেখেছি।
মুজাদ্দিদে আলফেসানী আলাইহির রহমত স্বরচিত ‘মাকতুবাতে ইমামে রাব্বানী’ গ্রন্থে বলেন,
جیسا کہ رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم نے اللہ تعالی کو دیکھنے کے سوال کے جواب میں فرمایا تھا کہ وہ تو نور ھے میں اسے کیسے دیکھ سکتا ہو-
যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহতায়ালার দর্শনের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন যে তিনি তো নূর আমি তাঁকে কীভাবে দেখবো।
উপরোক্ত হাদিস শরীফ ও মুজাদ্দিদে আলফেসানী আলাইহির রহমত-এর দলিলভিত্তিক ভাষ্য দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, আল্লাহর জাত নূর বমা’না منور ‘মানাওইর’ নূর সৃষ্টিকারী।
শরহে ফেকহে আকবর নামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে –
(كما وصف) اى الله سبحانه (نفسه) اى ذاته؟ وفيه دليل على جواز اطلاق النفس على ذاته تعالى- … وقد ورد تفكروا فى كل شئ ولا تفكروا فى ذات الله-
ভাবার্থ: যেভাবে তিনি গুণান্বিত, অর্থাৎ, আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা نفسه ‘নাফসাহু’, অর্থাৎ, তাঁর পবিত্র জাত বা সত্তা এতে দলিলভিত্তিক প্রমাণিত হলো, النفس ‘আন নফস’ প্রযোজ্য আল্লাহতা’য়ালার জাতের ওপর হয়ে থাকে।… এবং বর্ণিত আছে যে, প্রত্যেক বস্তুর ওপর চিন্তা ফিকির করো। আল্লাহর জাত বা সত্তার ওপর চিন্তা-ফিকির করো না। কারণ, আল্লাহর জাত কী তা বোঝার মতো জ্ঞান কারোরই নেই।
‘তাফসিরে আবিস সউদ’ নামক কিতাবের মোহাম্মদ ইবনে মোহাম্মদ এমাদি আলাইহির রহমত (ওফাত ৯৫১ হিজরি) الله نور السموات والارض এর আয়াতে কারীমার তাফসিরে উল্লেখ করেন-
وعبر عن المنور بنفس النور تنبيها على قوة التنوير وشدة التأثير وايذانا بانه تعالى ظاهر بذاته وكل ما سواه ظاهر باظهاره كما ان النور نير بذاته وما عداه مستنير به-
ভাবার্থ: নূরকে মুনাওইর (আলো দানকারী) অর্থে গণ্য করা হয়েছে। কারণ আলো দান করার শক্তি, ভীষণ প্রভাবের দরুণ শুধু নূরকে মুনাওইর অর্থে গণ্য করা হয়েছে। আল্লাহতা’য়ালা স্বয়ং জাহের বা প্রকাশমান এবং তাঁকে ছাড়া অন্য সবকিছু প্রকাশ হয়ে থাকে তাঁরই দ্বারা প্রকাশ করার কারণে। যেমন নিশ্চয় তিনি নিজে নিজেই আলোকিত। আর অন্য সব কিছুকে আলো দানকারী।
চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম আহমদ রেজা খাঁন আলাইহির রহমত স্বপ্রণীত نور المصطفى নামক কিতাবে উল্লেখ করেন –
محققین کے نزدیک نور وہ کہ خود ظاھر ہو اور دوسروں کا مظھر کما ذکرہ الامام حجۃ الاسلام الغزالی ثم العلامہ الزرقانی فی شرح المواھب الشریف باین معنی اللہ عز وجل نور حقیقی ہے بلکہ حقیقۃ وھی نور ہے اور آیۃ کریمہ اللہ نور السموات والارض بلا تکلف وبلاتاویل اپنے معنی حقیقی پرہے فان اللہ عز وجل ھو الظاھر بنفسہ المظھر لغیرہ من السموات والارض ومن فیھن وسائر المخلوقات-
حضور پرنور سید عالم صلی اللہ علیہ وسلم بلا شبہ اللہ عز وجل کے نور ذاتی سے پیدا ہیں- حدیث شریف میں وارد ہے: ان الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره- اے جابر بیشک اللہ تعالی نے تمام اشیاء سے پہلے ترے نبی کا نور اپنے نور سے پیدا فرمایا- رواہ عبد الرزاق ونحوہ عند البیھقی حدیث میں نورہ فرمایا جسکی ضمیر اللہ کی طرف ہے کہ اسم ذات ہے من نور جمالہ یا نور علمہ یا نور رحمتہ وغیرہ نہ فرمایا کہ نور صفات سے تخلیق ہو- علامہ زرقانی رحمہ اللہ تعالی اسی حدیث کے تحت میں فرما تے ہیں (من نورہ) ای من نور ھو ذات یعنی اللہ عز وجل نے نبی صلی اللہ علیہ وسلم کو اس نور سے پیدا کیا جو عین ذات الھی ہے یعنی اپنی ذات سے بلا واسطہ پیدا فرمایا کما سیاتی تقریرہ-
ভাবার্থ: মুহাক্কিক বা বিশ্লেষকদের মতে নূর তাকেই বলে, যে স্বয়ং প্রকাশমান এবং অন্যকেও প্রকাশকারী, যেমনটি হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী আলাইহির রহমত, আল্লামা যারকানী নিজ ’শরহে মাওয়াহিব শরীফে’ উল্লেখ করেছেন। এ অর্থে মহান আল্লাহতা’য়ালা হচ্ছেন নূরে হাকিকী বা প্রকৃত حقيقة তিনি-ই একমাত্র নূর, আর الله نور السموات والارض ‘আল্লাহু নূরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি’ আয়াতে কারীমায় জটিল ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে স্বীয় হাকিকী অর্থে প্রযোজ্য হবে। কেননা, নিশ্চয় আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা নিজেই প্রকাশমান এবং অন্যকেও প্রকাশকারী। আসমান, জমিন উভয়ের অধিবাসী এবং সমস্ত সৃষ্টিজগতকে জাহির বা প্রকাশ করেছেন। হুজুর পুর নূর সাইয়েদে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিঃসন্দেহে আল্লাহতা’য়ালার জাতি নূর কর্তৃক সৃষ্ট। (অর্থাৎ, আল্লাহতা’য়ালা তাঁর হাবিবের জাতি নূরকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করে সেই নূরের সম্পর্ক বেলাওয়াসেতা বা ডাইরেক্ট আল্লাহর জাতের সঙ্গে রেখেছেন। এ অর্থে আল্লাহর জাতি নূর কর্তৃক সৃষ্টি বলা হয়ে থাকে।)
হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে –
ان الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره-
হে জাবির! নিশ্চয় আল্লাহতা’য়ালা সবকিছুর পূর্বে তোমার নবীর নূর স্বীয় নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন। শায়খ আব্দুর রাজ্জাক এ হাদিসখানা বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ ইমাম বায়হাকিও বর্ণনা করেছেন।
হাদিস শরীফে من نوره ‘মিননূরুহি’ বর্ণিত হয়েছে, যার ضمير ‘জমির’ আল্লাহতা’য়ালার ইসমে জাতের দিকে প্রত্যার্পন করেছে। من نور جماله ‘মিন নূরে জামালিহি’ অথবা نور علمه ‘নূরে ইলমিহি’ অথবা نور رحمته ‘নূরে রাহমাতিহি’ ইত্যাদি বলেননি, যেহেতু নূরে সিফাত দ্বারা সৃষ্টি বলা হয়নি।
আল্লামা জারকানী আলাইহির রহমত উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন – من نوره اى من نور هو ذات – অর্থাৎ, আল্লাহতা’য়ালা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওই নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, যা عين ذات الهى‘আইনে জাতে ইলাহি’ বা আল্লাহর প্রকৃত জাত, অর্থাৎ, নিজ জাত কর্তৃক কোনো মাধ্যম ছাড়াই সৃষ্ট বলে অভিহিত করেছেন।
শারিহে বোখারি আল্লামা ইমাম কাসতালানী রাদিয়াল্লাহু আনহু مواهب لدنيه ‘মাওয়াহিবে লাদুনিয়া’ শীর্ষক কিতাবে হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একখানা দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেছেন। উক্ত হাদিস শরীফে নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সম্বোধন করে বলেন –
قال يا جابر ان الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره (الحديث)
অর্থাৎ, ‘হযরত জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর প্রশ্নের জবাবে আল্লাহর হাবিব বললেন, হে জাবির! নিশ্চয়ই আল্লাহতা’য়ালা সমুদয় বস্তু সৃষ্টির পূর্বে তাঁর নূর কর্তৃক তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।’
উক্ত হাদিস শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লামা জারকানী আলাইহির রহমত ‘শরহে মাওয়াহিবে লাদুনিয়া’ শীর্ষক কিতাবে উল্লেখ করেন –
من نوره اضافة تشريف واشعار بانه خلق عجيب وان له شانا مناسبة ما الى الحضرة الربوبية على حد قوله تعالى ونفخ فيه من روحه وهى بيانية اى من نور هو ذاته لابمعنى انها مادة خلق نوره منها بل بمعنى تعلق الارادة به بلا واسطة شئ فى وجوده-
অর্থাৎ, মিন নূরিহি তাঁর (আল্লাহর) নূর হতে বা নূর কর্তৃক – এটি ইজাফতে তাশরিফি বা সম্মানসূচক সম্বন্ধ এবং এ কথা জানিয়ে দেয়া উদ্দেশ্য যে, এটি সৃষ্টিজগতের এক আশ্চর্য বস্তু। এর একটি পৃথক শান রয়েছে আল্লাহতা’য়ালার দরবারে। এ শানটির একটি মুনাসিবত বা সাদৃশ্য হতে পারে আল্লাহতা’য়ালার ওই বাণীর সাথে, যেখানে এরশাদ হয়েছে – ونفخ فيه من روحه আদম আলাইহিস সালামের দেহ মোবারকে তাঁর (আল্লাহর) রূহ ফুঁকলেন, অর্থাৎ, এখানে রূহের সম্বন্ধ আল্লাহতা’য়ালার দিকে সম্মানার্থে করা হয়েছে।
من نوره –
এর মধ্যে من ‘হরফে জার’ বয়ানিয়া, বর্ণনামূলক। من نوره এর মধ্যে যে নূর রয়েছে, এর ব্যাখ্যায় আল্লামা জারকানি আলাইহির রহমত বলেন-
اى من نور هو ذاته –
অর্থাৎ, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে নূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে, সে নূর আল্লাহতা’য়ালার জাত; কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর জাত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৃষ্টির মাদ্দা বা মূল ধাতু, বরং এর অর্থ এই যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর মোবারক সৃষ্টি করার মধ্যে আল্লাহতা’য়ালার এরাদা বা ইচ্ছার সম্পর্ক বেলা ওয়াসেতা বা সরাসরি অর্থাৎ কোনো কিছুর মাধ্যম ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন।
আল্লামা জারকানি আলাইহির রহমত-এর উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, আল্লাহতা’য়ালা হেকমতে কামেলার দ্বারা সর্বপ্রথম তাঁর হাবিবের নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সৃষ্ট নূরের ডাইরেক্ট বা সরাসরি সম্পর্ক আল্লাহর জাতের সঙ্গে রয়েছে।
এ জন্যে বলা হয়ে থাকে, আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম عین ذات الھی سے پیدا ہوا আল্লাহর প্রকৃত জাত কর্তৃক সৃষ্ট।
সুতরাং আল্লাহ হচ্ছেন নূরে হাকিকী, অর্থাৎ, নূর সৃষ্টিকারী; আর রাসূলেপাক হচ্ছেন সৃষ্টিতে নূর جنس ‘জিনছে’ বা জাতিতে বশর, অর্থাৎ, নূরের মনুষ্য আকৃতি।
আগেই আলোচনা করা হয়েছে, আল্লাহর জাত বা মূল সত্তা হচ্ছেন নূরে হাকিকী বা হাকিকী নূর। আল্লাহতা’য়ালার নূরের অংশ হয় না, টুকরো হয় না, ভাগ হয় না, এ নূরের কোনো উদাহরণ বা মিসাল নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লামা ফাসী আলাইহির রহমত স্বরচিত ‘মাতালিউল মুসাররাত শরহে দালাইলুল খায়রাত’ শীর্ষক কিতাবে উল্লেখ করেন –
قد قال الاشعرى انه تعالى نور ليس كا الانوار والروح النبوة القدسية لمعة من نوره والملئكة شرر تلك الانوار وقال صلى الله تعالى عليه وسلم اول ما خلق الله نورى ومن نورى خلق كل شئ وغيره مما فى معناه-
অর্থাৎ, ইমামে আহলে সুন্নাত আবুল হাসান আশআরী আলাইহির রহমত এরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহতা’য়ালা নূর; কিন্তু অন্য কোনো নূরের মত নন (যার কোন উদাহরণ নেই)। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র রূহ মোবারক সেই নূরেরই ঝলক এবং ফেরেশতাগণ ওই জ্যোতি থেকে ঝড়ে পড়া নূরের খণ্ডসমূহ। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহতা’য়ালা সর্বপ্রথম আমার নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন এবং আমার নূর হতেই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।
শায়খ মুহাক্কিক আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত (ওফাত ১০৫২ হিজরি) নিজ ‘মাদারিজুন নবুয়ত’ শীর্ষক গ্রন্থের ২/৭৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন –
انبیاء مخلوق انداز اسماء ذاتیہ حق واولیاء ازاسماء صفاتیہ وبقیہ کائنات ازصفات فعلیہ وسید رسل مخلوق ست ازذات حق و ظھور حق دروی بالذات ست-
অর্থাৎ, ‘আম্বিয়ায়ে কেরামগণকে আল্লাহতা’য়ালার ইসমে জাত (সত্তাগত নাম) থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আউলিয়ায়ে কেরামগণকে আসমায়ে সিফাতিয়া (গুণগত নামসমূহ) থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্যান্য সকলকে সৃষ্টি করা হয়েছে সিফাতে ফে’লিয়া (ক্রিয়াগত গুণসমূহ) থেকে। সাইয়িদুল মুরসালিন (দ:)-কে হক তা’য়ালার জাত (সত্তা) কর্তৃক সৃষ্টি করা হয়েছে। আর হক তা’য়ালার বহিঃপ্রকাশ বা বিকাশ ঘটেছে তাঁর মধ্যে সত্তাগতভাবে।’
●■ □ আল্লাহপাকের জাত সম্পর্কে মুফতি মোস্তফা হামিদী সাহেবের ভুল ব্যাখ্যাঃ
শর্ষিণা দারুচ্ছুন্নাত কামেল মাদ্রাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ মোস্তফা হামিদী সাহেব ‘ফাতাওয়ায়ে দারুচ্ছুন্নাত’ নামের একখানা পুস্তক সংকলন করেছেন। উক্ত পুস্তকের দ্বিতীয় খণ্ডের ২১ পৃষ্ঠায় – الله نور السموات والارض ‘আল্লাহতা’য়ালা আসমান জমিনের নূর’ – এ আয়াতে কারীমার তাফসির করতে গিয়ে ‘তাফসিরে কবির’ নামক কিতাবের নিম্নলিখিত এবারত পেশ করে প্রমাণ করতে অপচেষ্টা করেছেন যে – نور ‘নূর’ আল্লাহতা’য়ালার জাত হতে পারে না।
اعلم ان لفظ النور موضوع فى اللغة لهذه الكيفية الفائضة من الشمس والقمر والنار على الارض والجدران وغيرهما وهذه الكيفية يسحيل ان تكون الها لوجوه الخ-
জানা উচিত যে, আভিধানিক অর্থে নূর ওই আলোকে বলে, যা সূর্য, চন্দ্র, অগ্নি হতে ভুপৃষ্ঠে প্রাচীর ও অন্যান্য বস্তুর ওপর পতিত হয়। আর আলোর এ অবস্থাকে কয়েকটি কারণে ইলাহ (প্রভু) বলা অসম্ভব।
উপরোক্ত এবারতের যে ভাবার্থ, তা হলো সৃষ্ট নূর। আল্লাহতা’য়ালার نور হচ্ছে হাকিকী নূর, যার অর্থ منور ‘মুনাওইর’ নূর সৃষ্টিকারী। আল্লাহর নূর হচ্ছে নূরে মতলক।
আল্লাহ-ই হচ্ছেন একমাত্র নূর। আল্লাহ ছাড়া অন্যের ওপর যে নূরের এতলাক হয়, তা হচ্ছে বিজ্জাত জুলমত বা অন্ধকার। যাঁকে আল্লাহ নূর করেছেন, তিনি-ই হচ্ছেন আল্লাহর সৃষ্টি নূর। যেমন সহিহ হাদিস শরীফে রয়েছে, আল্লাহর হাবিব নিজেই এরশাদ করেছেন – اول ما خلق الله نورى ‘আল্লাহ সর্বপ্রথম আমি নবীর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন’। নবী হচ্ছেন আল্লাহর সৃষ্ট নূর। আল্লাহতা’য়ালার নূর হচ্ছে হাকিকী নূর। যার আরম্ভও নেই, শেষও নেই। তিনি হচ্ছেন ওয়াজিবুল ওজুদ। অবশ্যম্ভাবী যার তুলনা সৃষ্টির মধ্যে কেউই নেই, এবং আল্লাহতা’য়ালার জাতে কোনো শরীক নেই। তেমনি আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল্লার সিফাতে খাসসা বা খাস গুণাবলীরও কোনো নজির নেই।
●■ □ ইতিপূর্বে ‘তাফসিরে কবির’ নামের কিতাব হতে মুহাক্কিকীনদের তাহকিক-এর দলিল সহকারে ৫টি এবারতের মাধ্যমে উল্লেখ করে প্রমাণ করা হয়েছে:
০১. আল্লাহতা’য়ালাই একমাত্র নূর। আল্লাহ ছাড়া সব কিছু بالذات বা সত্তাগতভাবে মুজলিম বা অন্ধকার।
০২. আল্লাহতা’য়ালা হচ্ছেন নূরে মতলক এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের ওপর নূরের এতলাক বা অন্য কাউকে নূর বলে আখ্যায়িত করা রূপক অর্থে (মজাজি) নূর।
হামিদী সাহেব ‘তাফসিরে কবির’ নামের কিতাবের সৃষ্ট নূর-এর এবারত পেশ করে আল্লাহর জাত নূর নয় বলে যে দাবি করেছেন, তা সঠিক নয়। তা ব্যাখ্যার নামে অপব্যাখ্যা করা হয়েছে।
কিন্তু এ তাফসিরে আল্লামা ইমাম গাজ্জালী আলাইহির রহমতের তাহকিকাত পেশ করে ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী আলাইহির রহমত স্পষ্টভাবে তাহকিকের সাথে আল্লাহর ‘জাত’ যে নূর যার অর্থ منور ‘মুনাওইর’ তা প্রমাণ করেছেন।
হামিদী সাহেব তাফসিরে কবিরের আদ্যপান্ত পাঠ করেন নাই। তাই নিজের মনগড়া মতে ফতওয়া দিয়েছেন। তার এ ফতওয়া সংশোধন আমরা কামনা করি।
আল্লাহপাকের জাত ও সিফাত সম্পর্কে আকিদা
হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা ইমাম গাজ্জালী আলাইহির রহমত-এর ‘এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন’ নামক কিতাবের ১ম জিলদের ৫৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন –
انه واحد لاشريك له فرد لا مثل له صمد لا ضد له منفرد لا ند له وانه قديم لا اول له ازلى لا بداية له مستمر الوجود لا اخر له ابدى لا نهاية له قيوم لا انقطاع له دائم لا انصرام له لم يز
ل ولا يزال موصوف نبعوث الجلال لا يقضى عليه بالانقضاء والانفصال بتصرم الاماد (اى لا يقضى عليه بانقضاء تصرم الاماد) وانقراض الاجال بل هو الاول والاخر والظاهر والباطن-
অর্থাৎ, নিশ্চয় তিনি (আল্লাহ) তাঁর অস্তিত্বে অদ্বিতীয়; তাঁর কোনো শরিক নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো সাদৃশ্য-ও নেই; তিনি অভাবশূন্য, তাঁর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই; তিনি সর্বেসর্বা, তাঁর কোনো অংশীদার নেই; তিনি অনাদি ও অসীম, সর্বক্ষণ বিরাজমান, তাঁর কোন বিরাম নেই; তিনি অনন্তকাল স্থায়ী, তাঁর কোনো শেষ নেই, তিনি গৌরবের গুণে সকল সময়ই গুণান্বিত ছিলেন, আছেন ও থাকবেন, সময়ের অতীতেও তাঁর শেষ নেই। তিনি প্রথম, তিনি শেষ, তিনি প্রকাশ্য, তিনি গুপ্ত এবং সর্ব বিষয়ে তিনি-ই মহাজ্ঞানী।
তারপর ইমাম গাজ্জালী আলাইহির রহমত উক্ত কিতাবের ৫৩ পৃষ্ঠায় আরো লিখেন –
وانه ليس بجسم مصور ولا جوهر محدود مقدر انه لا يماثل الاجسام لا فى التقدير ولا فى قبول الانقسام وانه ليس بجوهر ولا تحله الجوهر ولا يعرض ولا تحله الاعراض بل لا يماثل موجودا ولا يماثله موجود ليس كمثله شئ ولا هو مثل شئ وانه لا يحده المقدار ولا تحويه الاقطار ولا تحيط به الجهات ولا تكشفه الارضون ولا السموات وانه مستو على العرش على الوجه الذى قاله وبالمعنى الذى اراده استواء منزها عن المماسة والاستقرار والتمكن والحلول والانتقال لا يحمله العرش بل العرش وحملته محمولون بلطف قدرته ومقهورون فى قبضته-
ভাবার্থ: আল্লাহ অশরীরী, নিরাকার, পরিমাণশূণ্য, সাদৃশ্যহীন, তকদীরহীন, অবিভাজ্য, অণু-পরমাণূশূন্য, তাঁর দৈর্ঘ বা প্রস্থ নেই, কোনো জিনিস দ্বারা তাঁর দৃষ্টান্ত দেয়া যায় না, তিনি কোনো জিনিসের তুল্য-ও নন, তাঁর মতো আর কিছুই নেই। তিনি কোনো জিনিসের মতো নন। তিনি পরিমাণের ভেতর সীমাবদ্ধ নন, কোনো স্থানের ভেতর তিনি আবদ্ধ নন, কোনো দিক তাঁকে বেষ্টন করতে পারে না। আসমান ও জমিন তাঁকে লুকিয়ে রাখতে পারে না। তিনি পরিশ্রম, বিশ্রাম, স্থিতি, স্থান পরিবর্তন হতে মুক্ত। তিনি আরশের সম্মুখে অবস্থিত, যার সম্মন্ধে আল্লাহ নিজেই বলেছেন – استوى على العرش – আর ইসতাওয়ার অর্থ হচ্ছে পরিশ্রম, বিশ্রাম, স্থিতি, স্থান পরিবর্তন হতে তিনি (আল্লাহ) মুক্ত। আরশ তাঁকে বহন করে না (অর্থাৎ, আল্লাহ আরশে বসতে পারেন না, কারণ আল্লাহ নিরাকার, অশরীরী), বরং আরশ ও তার বহনকারী (ফেরেশতা)-কে আল্লাহর কুদরতের করুণা বহন করে আসছে। সবকিছুই আল্লাহর আয়ত্তাধীন।’
তারপর তিনি বলেন –
وهو الان على ما عليه كان وانه بائن عن خلفه بصفاته ليس فى ذاته
অর্থাৎ, তিনি (আল্লাহ) পূর্বে যেরূপ ছিলন, এখনও তিনি সেরূপই আছেন। তিনি তাঁর সৃষ্টির কাছে গুণ দ্বারা প্রকাশ, অস্তিত্ব বা জাত দ্বারা নয়।
আল্লামা ইমাম গাজ্জালী আলাইহির রহমত ‘এহইয়ায়ে উলুমিদ্দিন’ শীর্ষক কিতাবের ১ম জিলদের ৫৪ পৃষ্ঠায় আরো বলেন –
يرى من غير حدقة واجفان ويسمع من غير ضمخة واذان كما يعلم بغير قلب ويبطش بغير جارخة ويخلق بغير اله اذ لاتشبه صفاته صفات الخلق كما لا تشبه ذاته ذات الخلق-
অর্থাৎ, আল্লাহ পাক চক্ষু ব্যতিরেকে দেখেন, কর্ণ ব্যতিরেকে শুনেন, দ্বিল ব্যতিরেকে জ্ঞান রাখেন, হস্ত ব্যতিরেকে ধরেন, যন্ত্র ব্যতিরেকে সৃষ্টি করেন, তাঁর গুণ সৃষ্টির তুল্য নয়। যেরূপ তাঁর অস্তিত্ব সৃষ্টির অস্তিত্বের তুল্য নন।
সারকথা, আল্লাহর মহান গুণ হলো আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী বা মুহতাজ নন, الله الصمد – আল্লাহ হলেন সমদ বা বে-নিয়াজ। অর্থাৎ, আল্লাহর দেখতে চোখের প্রয়োজন নেই, শুনতে কানের প্রয়োজন নেই, জ্ঞান রাখতে দিলের প্রয়োজন নেই, ধরতে হাতের প্রয়োজন নেই।
আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত স্বরচিত ‘তাকমীলুল ঈমান’ শীর্ষক কিতাবে আল্লাহর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন –
وليس مجسم ولا جوهر ولا عرض ولا مصور ولا مركب ولا معدود ولا محدود ولا فى جهة ولا فى مكان ولا فى زمان-
অর্থাৎ, তিনি (আল্লাহ) দেহবিশিষ্ট নন, তিনি জওহর বা বস্তু বিশেষ নন, আরজ বা বস্তু বিশিষ্টও নন। তিনি আকারবিশিষ্ট নন, তিনি মুরাক্বাব নন (তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই); সংখ্যা ও আধিক্যতাবিশিষ্ট নন, পরিমাণযোগ্য নন, তিনি দিকশূন্য, তিনি কোনো স্থানে অবস্থান করেন না এবং তাঁর ওপর কোনো সময় অতিক্রান্ত হয় না। অর্থাৎ, তিনি নিরাকার, জমান-মকান ও দিক থেকে তিনি পবিত্র।
তারপর তিনি উক্ত কিতাবে আরো বলেন –
لا مثل له ولا شبه ولا ضد ولا ند له ولا ظهر ولا معين-
অর্থ: তিনি উপমাহীন, রূপকহীন, তাঁর সমতুল্য কেউ নেই, তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই, তাঁর সাহায্যকারী ও সহযোগী কেউ নেই; অর্থাৎ, তাঁর সাহায্য-সহযোগিতার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি হলেন সমদ বা কারো মুখাপেক্ষী নন।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ এক, তাঁর কোনো শরিক নেই, তিনি সৃষ্টিকর্তা, তিনি কোনো বস্তুর মতো নন, কোনো বস্তুও তাঁর মতো নয়; গোটা আলম তথা আল্লাহ ছাড়া যা কিছু আছে সবই হাদস, অর্থাৎ, ধ্বংসশীল/বিনাশপ্রবণ। যখন এসব কিছুই ছিল না, তিনি তখনও ছিলেন; আবার যখন কোনো কিছুই থাকবে না, তিনি তখনও থাকবেন। তিনি একাই নিজের কুদরত দ্বারা সম্পূর্ণ ‘নেই’ হতে সব কিছু সৃজন করেছেন, তথা অস্তিত্ব দান করেছেন; তিনি-ই হলেন আল্লাহ। তিনি এক, একক ও অদ্বিতীয়, অনাদি, অবিনশ্বর, শাশ্বত ও চিরঞ্জীব, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা এবং স্বাধীন ও কার্যকর ইচ্ছাশক্তির মালিক। তিনি عرض ‘আরজ’ তথা এমন বস্তু নন, যা অন্যের মাধ্যম ছাড়া স্থিতিশীল হতে পারে না। যথা – রং, গন্ধ, স্বাদ, তাপ, শীতলতা, আদ্রতা ও শুষ্কতা ইত্যাদি। তিনি জিসিম তথা দেহবিশিষ্ট নন। কেননা, দেহ বহু অবিভাজ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ এবং স্থান দখলকারী। অথচ এ সবই নশ্বর সৃষ্টিকুলের বৈশিষ্ট্য। তিনি মানুষ কিংবা অন্যান্য প্রাণীর আকার-আকৃতিবিশিষ্টও নন। কেননা, এটি (আকৃতি) দেহের বৈশিষ্ট্য, যা দেহের প্রান্তসীমা ও পরিধি তথা দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও বেধ দ্বারা অর্জিত অবস্থা তথা আয়তন ও পরিমাণ হতে সৃষ্টি হয়ে থাকে। তিনি প্রান্ত, সীমা ও পরিধিবিশিষ্ট নন। অর্থাৎ, তিনি সসীম তথা পরিমাণযোগ্য নন। বরং তিনি আদি, অন্ত ও মধ্যহীন; তিনি অনন্ত, অসীম। তিনি সংখ্যা ও আধিক্যতাবিশিষ্ট নন। অর্থাৎ, তিনি গণণা ও পরিসংখ্যানযোগ্য নন। তিনি অংশ ও আংশিকতামুক্ত। তাঁর জাত বিভিন্ন খণ্ডে খণ্ডে ও অংশে বিভক্ত ও বিভাজ্য হয় না। বহু পৃথক পৃথক ও স্বতন্ত্র অংশে মিলিত হয়ে তাঁর জাত গড়ে ওঠেনি। কেননা, যার অংশ থাকে এবং যা বহু বিচ্ছিন্ন অংশ দ্বারা সংযোজিত, তার অস্তিত্ব লাভের ক্ষেত্রে ওই সব অংশের প্রতি মুখাপেক্ষিতা অপরিহার্য। আর এই মুখাপেক্ষিতা আল্লাহর অনিবার্য সত্তার পরিপন্থী। তাঁর ওপর কোনো সময় অতিক্রান্ত হয় না। তাঁর সাথে কোনো বস্তুর সাদৃশ্য নেই। তাঁর ইলম ও কুদরত-বহির্ভুত কোনো বস্তু নেই। তাঁর জাতের মধ্যে অন্য কোনো বস্তু স্থান পায় না এবং পেতে পারে না। তিনি কোনো বস্তুতে প্রবেশ করেন না এবং তাঁর মধ্যেও কোনো বস্তু প্রবেশ করে না এবং করতেও পারে না; আর তিনি কোনো বস্তুর সাথে এক হয়ে যান না। তিনি অনন্ত ও অসীম। কেননা সসীম হওয়া পরিমাণ ও পরিসংখ্যানযোগ্য বস্তুর বৈশিষ্ট্য। তিনি অংশ ও আংশিকতামুক্ত। তিনি কোনো বস্তুর শ্রেণিভুক্ত নন। তিনি দেহের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গুণাবলী যথা – রং, স্বাদ, গন্ধ, তাপ, শীতলতা, আদ্রতা ও শুষ্কতা ইত্যাদি হতে মহাপবিত্র। কেননা, এসবই দেহ তথা সংযোজিত ও সংমিশ্রিত বস্তুর গুণ। তিনি কোনো স্থানে অবস্থান করেন না।
অনুরূপভাবে, শাহ ওলি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত নিজ ‘আল কাওলুল জামিল’ শীর্ষক কিতাবের ৩৭ পৃষ্ঠা লিখেছেন –
منزه من جميع سمات النقص والزوال من الجسمية والتحير والعرضية والجهة والالوان والاشكال-
অর্থাৎ, ‘আল্লাহতা’য়ালা অপূর্ণতা ও নশ্বরতা, এ জাতীয় সবকিছু থেকে মুক্ত। তিনি দেহধারী, স্থান গ্রহণকারী, কোনো দিকে অবস্থানকারী, বর্ণ ও আকৃতিধারী এবং দেহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যধারী নন।
‘মাকতুবাতে ইমামে রাব্বানী’ নামক কিতাবের (উর্দু) ১১৫৮/৬২পৃষ্ঠায় মাকতুবাত নং ৬৭) উল্লেখ করেন –
اور اللہ کسی چیز سے متحد نہیں ہوتے اور نہ ھی کوئ اور چیز ان سے متحد ہوتی ہے اور اللہ تعالی کسی چیز میں حلول بھی نہیں کرتا اور نہ ھی کوئ چیز اللہ میں حلول کرتی ھے اور اللہ تعالی کے لۓ اجزاء اور حصص کا ہونا بھی محال ہے اور ترکیب وتحلیل اللہ تعالی کی بارگاہ میں ممنوع ھے اور اللہ تعالی کا کوئ مثل اور کفو نہیں ھے بیوی بچے نہیں ہیں- اسکی ذات وصفات بے چوں بے جگون اور بے شبیہ اور بے نمونہ ہیں- ھم صرف اتناجنتے ہیں کہ اللہ تعالی اور اسماء وصفات کاملہ سے جن سے اپنے آپ کی تعریف کی ہے ان سے متصف ہے ان میں جو چیز بھی ہمارے فھم وادراک اۓ اور ہم اسے سمجہ سکیں اور تصور کرسکا وہ اس سے پاک اور بلند ہے-
ভাবার্থ: আল্লাহতা’য়ালা কোনো বস্তুর সাথে একত্রিত নন এবং কোনো বস্তু তাঁর সঙ্গে এক হয়ে যায় না। আল্লাহতা’য়ালা কোনো বস্তুর ভেতর অনুপ্রবেশ করেন না। আল্লাহতা’য়ালার পক্ষে খণ্ড ও অংশ হওয়া অসম্ভব। তরকীব বা সংমিশ্রণ, তাহলিল বা দ্রবীভূত হওয়া তাঁর পাক জাতে দুষ্কর ও নিষিদ্ধ। আল্লাহতা’য়ালার কোনো অনুরূপ ও সমশ্রেণিভূক্ত কেউই নেই। তাঁর স্ত্রী-পুত্রও নেই। তাঁর জাতে ও সিফাত বা গুণাবলীসমূহ রকম বা প্রকারবিহীন এবং অনুরূপ ও নিদর্শন রহিত। আমরা শুধু এতোটুকু জানি (ঈমান রাখি) যে আল্লাহতা’য়ালা আছেন এবং তিনি যেরূপ নিজের প্রশংসা করেছেন, তদ্রুপ তাঁর নাম ও কামেল গুণাবলীতে বর্তমান আছেন।’
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল্লা স্বেচ্ছায় অস্তিত্ববান এবং অপরাপর সবকিছুই তাঁর সৃষ্টির কারণে অস্তিত্ব লাভ করেছে, আল্লাহপাক আপন জাত ও সিফাত এবং কর্মকাণ্ডের মাঝে সম্পূর্ণ একা। প্রকৃতপক্ষে কোনো বিষয়েই, চাই তা অস্তিত্ব হোক, অথবা অস্তিত্বহীন হোক, কেউই তাঁর সঙ্গে অংশীদার নন। নামগত অংশিদারিত্ব ও শব্দগত সম্পর্ক আলোচ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়।
মাকতুবাত ৩/১১৫৭/৬২ পৃষ্ঠা মাকতুবাত নং ৬৭ উল্লেখ রয়েছে –
اللہ سبحانہ وتعالی اکیلا ہے ان کا کوئ شریک نہیں نہ وجوب ووجود میں اور نہ عبادت کے مستحق ہونے میں- وجود وجوب (لازمی طور پر قائم رھنا) اللہ تعالی کے سوا کسی کے لۓ لائق نہیں اور نہ عبادت کا استحقاق اس کے سوا کسی کے لۓ درست نہیں-
اللہ تعالی صفات کاملہ رکھتا ہے جن میں سے حیات- علم- قدرت- اردہ- سمع- بصر- کلام اور تکوین بھی ہیں- یہ صفات ازلی اور قدیمی ہیں- اور اللہ جل سلطانہ کی ذات کے ساتھ قائم ہیں
ভাবার্থ: আল্লাহপাক সুবহানাহু ওয়াতায়ালা এক তাঁর কোন শরিক বা সমকক্ষ নেই। অবশ্যম্ভাবী অস্তিত্বধারী হিসেবে হোক অথবা এবাদতের উপযোগী হিসেবেই হোক, তিনি সমকক্ষবিহীন। তিনি ছাড়া অন্য কেউই অবশ্যম্ভাবী অস্তিত্বের উপযোগী নন এবং ইবাদতের যোগ্যতাও কেউই রাখেন না।
আল্লাহতা’য়ালার সিফাতে কামেলা বা পূর্ণাঙ্গ গুণ সর্বমোট ৮টি; এগুলো নিম্নরূপ –
১. হায়াত বা জীবনী শক্তি
২. এলম বা জ্ঞান
৩. কুদরত বা ক্ষমতা
৪. এরাদত বা ইচ্ছাশক্তি
৫. ছামা বা শ্রবণশক্তি
৬. বছর বা দর্শনশক্তি
৭. কালাম বা বাকশক্তি
৮. তাকবিন বা সৃষ্টিশক্তি
এ ৮টি সিফাতসমূহ কাদীম ও আজলি বা অনাদি (যার কোনো আরম্ভ নেই) ও অনন্ত (যার কোনো শেষ নেই)। এ গুণসমূহ আল্লাহ জাল্লা শানুহুর জাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। নবজাত বস্তুসমূহের সাথে সম্পর্ক সিফাতসমূহের অনাদিত্বের মধ্যে কোনোরূপ ব্যতিক্রম ঘটাতে সক্ষম হয় না। সম্পর্কিত বস্তুর নতুনত্ব এদের চিরস্থায়িত্বের প্রতিবন্ধক হয় না।’
মাকতুবাতে ইমামে রাব্বানী ৩/১৬১৩/১৫৩ পৃষ্ঠা মকতুব নং ১২২ উল্লেখ রয়েছে –
آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم بھی اس جاہ وجلال اور اس بلندی شان کے با وجود ہمیشہ ممکن ہیں اور ہرگز امکان سے باہر نہیں آسکتے اور نہ واجب سے مل سکتے کیونکہ یہ الوھیت سے متصف ہونے کو مستلزم ہے اور تعالی اس سے بلند ھے کہ کوئ اسکا شریک اور برابری کرنے والا ہو-
دع ما ادعتہ النصاری فی نبیھم
واحکم بما شئت مدحا فیہ واحتکم
ভাবার্থ: হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টির মধ্যে সর্বোচ্চ শান-শওকত ও কুল-কায়েনাতের সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও সবসময় (চিরকালই) তিনি হচ্ছেন ممكن মমকিন বা সম্ভাব্য ও সৃষ্ট। নিশ্চয় তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ممكن মমকিন বা সম্ভাব্য হতে নিষ্কৃতি লাভ করেননি এবং আল্লাহতা’য়ালা যিনি واجب الوجود ‘ওয়াজিবুল ওজুদ’ বা অবশ্যম্ভাবী জাতে পাকের সাথে মিলিত হতে পারেন না; এজন্য জাতে উলুহিয়াতের সাথে মিলিত হওয়া অনিবার্য হয়ে পড়ে। কারণ আল্লাহতা’য়ালা তাঁর সমকক্ষ ও শরিক হওয়া হতে তিনি অতি উর্ধ্বে ও পবিত্র।
কহিল নাছারা যাহা স্বীয় নবীর ’পরে
কহিও না তোমরা তাহা মম নবী-বরে।