হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের পিতা আযর ছিলো না, তাঁর পিতা ছিলেন তারাহ বা তারিখ আলাইহিস সালাম।
মুসলমানদের সবচাইতে বড় শত্রু হচ্ছে কাফির মুশরিকরা। তারা সবসময় চায় মুসলমানদের ঈমানহারা করে দেয়ার জন্যে। এজন্যে তারা বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
বর্তমান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা-২০১৩ কতৃক নির্ধারিত ৬ষ্ঠ শ্রেণীর “ইসলাম ও নৈতিকতা শিক্ষা” বইয়ের ২য় পৃষ্ঠায় তাওহীদে বিশ্বাসে উদাহরণ দিতে গিয়ে বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাকের নবী ও রসূল হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এক মূর্তি পুজক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর পিতা ছিলেন মন্দিরের পুরোহিত।”
নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক!!
তাছাড়াও বাংলাদেশের কুরআন শরীফের অনুবাদে সূরা আনআম ৭৪ আয়াতের অর্থও হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পিতাকে মূর্তিপুজক বলা হয়েছে। মীনা প্রকাশনির অনুবাদ দ্রষ্টব্য।
এগুলো বিধর্মীদের সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র, তারা কৌশলে পাঠ্যপুস্তকে ইহা ঢুকিয়ে দিচ্ছে যাতে কোমলমতি একটা শিশু কুফরি আক্বীদা নিয়ে বড় হয় এবং সাধারণ মানুষ কুরআন শরীফের ভুল অনুবাদ পড়ে ঈমানহারা হয়ে যায়।
এ কুফরি মতবাদ প্রচার করার জন্যে বিধর্মীদের দোসররা কাজ করছে।
এবার আসুন আমরা অকাট্য দলীল প্রমানের মাধ্যমে দেখি সূরা আনআম ৭৪ আয়াতের তাফসীরে কি আছে এবং মুসলিম জাতীর বাবা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের বাবা কে ছিলেন।
মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন-
واذ قال ابرهيم لابيه ازر اتتخذ اصناما الهة
অর্থ: আর যখন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের “আবীহি” (চাচা) আযরকে বললেন, আপনি কি মূর্তিকে ইলাহ বা মা’বুদ হিসাবে গ্রহণ করেছেন?”
[সূরা আনআম, আয়াত ৭৪]।
উক্ত আয়াত শরীফে ابيه এর اب (আবুন) শব্দ মুবারকের শাব্দিক অর্থ পিতা গ্রহণ করে ধর্মব্যবসায়ী দেওবন্দী খারেজীরা প্রচার করছে – আযর ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের পিতা। নাউযুবিল্লাহ্!
কিন্তু সকল ইমাম মুস্তাহিদ এবং মুফাসসিরানে কিরামগণ একমত, উক্ত আয়াত শরীফে ابيه শব্দ মুবারকের অর্থ হচ্ছে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের চাচা ।
গ্রহণযোগ্য সকল তাফসীরের কিতাবে বর্নিত আছে-
والعرب يطلقون الاب علي العم
অর্থ: আরববাসীরা الاب (আল আবু) শব্দটি চাচার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেন।”
[দ্রষ্টব্য দলীল- তাফসীরে কবীর লিল ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ১৩ তম খন্ড ৩৮পৃষ্ঠা; তাফসীরে মাযাহারী ৩য় খন্ড ২৫৬ পৃষ্ঠা]।
অর্থাৎ উক্ত আয়াত শরীফে “আবুন” শব্দ মুবারকের অর্থ পিতা না হয়ে চাচা হবে। কারন পবিত্র কুরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফের অনেক জায়গায় “আবুন” পিতা না হয়ে অন্য অর্থে যেমন- চাচা, দাদা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার হয়েছে।
এবার আসুন আমরা বিশুদ্ধ সনদ সহকারে একাধিক তাফসীর শরীফের মাধ্যমে সূরা আনআম ৭৪ নং আয়াত শরীফের তাফসীর বর্ননা উল্লেখ করি –
حدثنا محمد بن حميد و سفيان ابن وكيع قالا حدثنا جرير عن ليث عن مجاهد قال ليس ازر ابا ابراهيم
অর্থ : হযরত আবু জাফর মুহম্মদ বিন জারীর ত্বাবারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- আমাদের কাছে পবিত্র হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন হযরত মুহম্মদ বিন হুমায়িদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত সুফিয়ান বিন ওয়াকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তাঁরা দু’জন বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন হযরত জারীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত লাইছ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত মুজাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে । তিনি বলেন- হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পিতা আযর ছিলো না।”
[দ্রষ্টব্য দলীল- জামিউল বয়ান ফী তফসীরিল কুরআন (তাফসীরুত ত্বাবারী) ৫ম খন্ড ১৫৮ পৃষ্ঠা; ওফাত: ৩১০ হিজরী। প্রকাশনা: দারুল মা’রিফা বইরুত লেবানন]।
حدثنا محمد بن الحسين قال حدثنا احمد ابن المفضل قال حدثنا اسباط عن السدي قال واذ قال ابراهيم لابيه ازر قال اسم ابيه ويقال لا بل اسمه تارح واسما الصنم ازر يقول اتتخذ ازر اصناما الهة
অর্থ: হযরত ইমাম জারীর ত্ববারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে পবিত্র হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন হযরত মুহম্মদ বিন হুসাইন রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন হযরত আহমদ বিন মুফাদ্দাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেন হযরত আসবাত রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সুদ্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহির থেকে। তিনি واذ قال ابرهيم لابيه ازر এই আয়াত শরীফের তাফসীরে বলেন, পবিত্র আয়াত শরীফের মধ্যে “আব” আযরকে বলা হয়েছে। কিন্তু ফয়সালা এটাই যে, বরং তাঁর পিতার নাম ছিলো “তারাহ” আলাইহিস সালাম। আর আযর ছিলো একটি মূর্তির নাম।”
[দ্রষ্টব্য দলীল- তাফসীরুত ত্বাবারী ৫ম খন্ড ১৫৮ পৃষ্ঠা]।
وفي كتب التواربخ ان اسمه بالسريانية تارح
অর্থ: তাওয়ারীখ (ইতিহাস) গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই ‘সুরইয়ানী’ ভাষায় হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পিতার নাম মুবারক ছিলো ‘তারাহ’।”
[দ্রষ্টব্য দলীল- আল কাশশাফ আন হাক্বায়িকিত তানযীল ওয়া উয়ূনীল আক্বাবীল ফী উজুহীত তা’বীল ২য় খন্ড ২৩ পৃষ্ঠা। ( ৪৬৬ হিজরী- ৫৩৮ হিজরী) প্রকাশনা- দারুল মা’রিফাহ বইরূত, লেবানন]।
وفي كتب التواريخ ان اسمه تارح
অর্থ: তাওয়ারীখ তথা সকল ইতিহাসের গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ আছে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পিতার নাম ‘তারাহ’ ছিলো।”
[দ্রষ্টব্য দলীল- তাফসীরে বাইদ্বাবী ১ম খন্ড ৩০৭ পৃষ্ঠা। প্রকাশনা- দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বইরূত লেবানন]।
قال ازجاج لا خلاف بين النسابين في ان اسمه تارح صح بالحاء المهملة سماعا
অর্থ: হযরত যুজাজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- বংশতত্ববিদ ঐতিহাসিকগনের এ ব্যাপারে কোনই দ্বিমত নাই যে, হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পিতার নাম ছিলো ‘তারাহ’ আলাইহিস সালাম। সিমায়ী ( শ্রুত) নিয়মে নুকতাবিহীন ‘হা’ হওয়াই সহীহ মত। যিনি মূর্তিপুজক ছিলেন না।”
[দ্রষ্টব্য দলীল- হাশিয়াতুশ শায়েখ যাদাহ ২য় খন্ড ১৭৮ পৃষ্ঠা। প্রকাশনা- দারু ইহইয়ায়িত তুরাছিল আরাবী বইরূত লেবানন]।
আরো বর্নিত আছে-
اخرج ابن ابي شيبة و عبد الله بن حميد و ابن جرير و ابن المنذر و ابن ابي حاتم عن عن مجاهد قال ازر لم يكن بابيه لكنه اسم صنم
অর্থ : হযরত ইবনে আবী শয়বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দুল্লাহ বিন হুমাইদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনু জারীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে মুনজির রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও ইবনে আবী হাতিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি সকলেই হযরত মুজাহিদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর থেকে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেন, আযর হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পিতা ছিলো না। বরং আযর ছিলো একটি মূর্তির (বা মূর্তিপুজকের) নাম।”
[দ্রষ্টব্য দলীল- আদ দুররুল মানছুর লিল জালালুদ্দীন সূয়ুতি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ৩য় খন্ড ২৩ পৃষ্ঠা]।
قال الفراء و الزجاج اسم ابيه تارخ اجمع عليه النسابون
অর্থ: হযরত ফাররা ও জুজাজ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম বলেন, হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পিতার নাম মুবারক ছিলো হযরত তারাখ আলাইহিস সালাম। এ বিষয়ে সকল বংশতত্ববিদ ঐতিহাসিকগণেরা ইজমা করেছেন।”
[দ্রষ্টব্য দলীল- তাফসীরুল কুরআন লিস সাময়ানী ২য় খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা। প্রকাশনা- দারুল ওয়াতান, রিয়াদ]।
ان والد ابراهيم عليه السلا ما كان مشركا وثبت ان ازر كان مشركا فوجب الطع بان والد ابرهيم كان انسانا اخر غير ازر
অর্থ: নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পিতা মুশরিক ছিলেন না। বরং আযর (তাঁর চাচা) মুশরিক ছিলো। কেননা অকাট্যভাবে প্রমানিত যে, নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পিতা আযর নয়। বরং অন্য একজন অর্থাৎ তারাখ আলাইহিস সালাম।”
[দ্রষ্টব্য দলীল- তাফসীরে কবীর ১৩ তম খন্ড ৩৯ পৃষ্ঠা]।
ليس ازر ابا لابراهيم انما هو ابراهيم بن تارخ
অর্থ: আযর হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পিতা নয়। বরং নিশ্চয়ই তিনি হলেন তারাখ আলাইহিস সালামের সুযোগ্য সন্তান।”
[দ্রষ্টব্য দলীল- তাফসীরে মাযহারী ৩য় খন্ড ২৫৬ পৃষ্ঠা]।
ان ابا ابراهيم عليه السلام لم يكن اسمه ازر وانما كان اسمه تارخ
অর্থ: নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পিতার নাম আযর নয়। বরং তাঁর পিতার নাম মুবারক হলো হযরত তারাখ আলাইহিস সালাম।’
[দ্রষ্টব্য দলীল- তাফসীরু ইবনে কাছীর ২য় খন্ড ২৪০ পৃষ্ঠা। প্রকাশনা- দারুল ফিকর, বইরুত লেবানন]।
শুধু তাই নয়, এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফ বর্ননা করা হয়েছে বিশুদ্ধ সনদে।
হাদীস শরীফে বর্নিত আছে-
حدثنا ابو زرعة حدثنا منجاب اخبرنا بشر بن عمارة عن ابي روق عن الضحاك عن ابن عباس قال ان ابا ابراهيم لم يكن اسمه ازر انما كان اسمه تارح
অর্থ : হযরত আবী হাতিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন হযরত আবু যুরয়াহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ননা করেছেন হযরত মিনজাব রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হযরত বিশর বিন আম্মারাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবূ রাওক্ব রহমাতুল্লাহি আলাইহির থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমার থেকে খবর দিয়েছেন। তিনি বলেন, হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পিতার নাম কখনোই আযর ছিলো না। নিশ্চয়ই তাঁর পিতার নাম ছিলো হযরত তারাহ আলাইহিস সালাম।”
[দ্রষ্টব্য দলীল- তাফসীরু ইবনে আবী হাতিম ৪র্থ খন্ড ১৩২৫ পৃষ্ঠা। প্রকাশনা: মাকতাবাহ নাযার মুছতফা বায, মক্কাতুল মুকাররামা, রিয়াদ, সৌদি আরব]।
কাজেই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ব পুরুষ যাঁরা ছিলেন বা তিনি যাঁদের মাধ্যমে যমীনে তাশরীফ এনেছেন অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে হযরত আব্দুল্লাহ যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত ছিলেন পূর্ণ পরহেযগার, মুত্তাক্বী এবং সর্বোচ্চ ধার্মিক।
আর সে কারণেই হাদীস শরীফে বর্নিত আছে-
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الي ارحام الطاهرات
অর্থ: আমি সর্বদা পূত-পবিত্র নারী ও পুরুষদের মাধ্যমেই স্থানান্তরিত হয়েছি।
[দ্রষ্টব্য দলীল- তাফসীরে কবীর ১৩ তম খন্ড ৩৯ পৃষ্ঠা]।
জাহেলী যুগেও নবীজি صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّمএর পিতা-মাতা মু’মিন ছিলেন মর্মে বর্ণিত হয়েছে-
٢٧- عن ابْنِ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّه صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّمِ ” مَا وَلَدَنِي مِنْ سِفَاحٍ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ شَيْءٌ ، مَا وَلَدَنِي إِلا نِكَاحٌ كَنِكَاحِ الإِسْلامِ . رواه الطبرني و البيهقي و ابن عساكر
অর্থাৎঃ হযরত ইবনে আব্বাস رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করেছেন, আমার সম্মানিত পিতা-মাতার মধ্যে জাহেলী যুগের বিন্দু পরিমান খারাপ কিছু ছিলনা। এবং আমার জন্ম ইসলাম সম্মত বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে হয়েছে।
[সূত্রঃ তাবরানী মুজামুল কাবির ১০/৩২৯, হা: ১০৮১২, বাযহাকী সুনানে কুবরা- ৭/১৯০ হা: ১৩৮৫৪, ইবনে আসাকির তারিখে দামেস্ক- ৩/৪০০।]
এ প্রসঙ্গে আরো ইরশাদ হয়েছে-
ان جميع اباء محمد صلي الله عليه و سلم كانوا مسلمين و حيءذ يجب القطع بان والد ابراهيم عليه السلام كان مسلما
অর্থ: নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্বপুরুষরা সকলেই পরিপূর্ণ মুসলমান ছিলেন। এ থেকে অকাট্য ভাবে প্রমানিত হয় যে, নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পিতা মুসলমান ছিলেন।”
[দ্রষ্টব্য দলীল- তাফসীরে কবীর ১৩/৩৮]।
এ প্রসঙ্গে স্বয়ং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
ان الله خلق الخلق فجعلني في خيرهم ثم جعلهم فرقتين فجعلني في خيرهم فرقة ثم جعلهم قباءل فجعلني في خيرهم قبيلة ثم جعلهم بيوتا فجعلني في خيرهم بيت فأنا خيركم بيتا و خيركم نفسا
অর্থ: আল্লাহ পাক তামাম মাখলুক সৃষ্টি করে আমাকে সর্বোত্তম সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এরপর তাদের দুই ভাগে বিভক্ত করে আমাকে উত্তম ভাগে রেখেছেন এবং আমাকে তাঁদের মধ্যে সর্বোত্তম গোত্রে পাঠিয়েছেন। এবং সে গোত্রকে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে সর্বোত্তম পরিবারে প্রেরন করেছেন। সূতরাং আমি ব্যক্তি ও বংশের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ।”
[দ্রষ্টব্য দলীল- তিরমীযি শরীফ ২য় খন্ড ২০১ পৃষ্ঠা। হাদীস শরীফ ৩৬০৮। মুসনাদে আহমদ ১ম খন্ড ২২০ পৃষ্ঠা। হাদীস শরীফ ১৭৯১]।
এ সকল হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে-
فلا يمكن ان يكون كافرا في سلسلة ابءه صلي الله عليه و سلم
অর্থ: হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্ব পুরুষদের সিলসিলার মধ্যে কেউই কাফির হওয়া সম্ভব নয়।”
[দ্রষ্টব্য দলীল- তাফসীরে মাজাহারি ৪/৩০৮]।
সুতরাং অকাট্যভাবে প্রমানিত হলো হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র নসব শরীফ যে সিলসিলা মুবারক রয়েছে সেখানে কারো অমুসলিম হওয়া কল্পনা করারও সুযোগ নাই। যদি কেউ কল্পনাও করে সে কাফির হয়ে যাবে। আর হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম হচ্ছেন সম্মানিত পূর্ব পুরুষ, আর তাঁর পিতা মুশরিক ছিলো এটা বলাতো দূরের কথা, চিন্তা করলেও সে কাট্টা কাফির হয়ে যাবে।
শুধু তাই নয়, কোন নবী রসূল আলাইহিমুস সালামদের বংশের সিলসিলায় কারো ঈমামহীন হওয়া সম্ভব নয়।
সূতরাং শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং সকল কুরআন শরীফ এবং পুস্তক অনুবাদকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি অবিলম্বে পাঠ্যপুস্তক থেকে এবং কুরআন শরীফ থেকে উক্ত ভুল ব্যাখ্যা প্রত্যাহার করুন। অন্যথায় এত মানুষকে ঈমান হারা করার অপরাধে কাল কিয়ামতের ময়দানে কঠিন পাকড়াও হতে হবে।