ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র শাহাদাত।
৬০ হিজরীর রজব মাসে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ওফাতের পর ইয়াযিদ মদীনা মুনাওয়ারাহর গভর্ণর ওয়ালিদ বিন উতবার নিকট এই মর্মে পত্র প্রেরণ করে যে, “হযরত ইমাম হুসাইন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর ও আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা কর্তৃক ইয়াজিদের নিকট বায়’আত হওয়ার স্বীকারোক্তি নামা দ্রুততার সাথে সংগ্রহ কর। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তারা বায়’আত গ্রহণ না করে, তাদেরকে ছাড়বেনা।
[সূত্রঃ তারিখে কামিল, ইবনে আসীর ৪র্থ খন্ড পৃঃ ১৪/ ৩য় খন্ড পৃঃ ১২৭ দারুল কিতাবুল আরাবী, বৈরুত]।
ইবনে কাসীর ও তাবারীর বর্ণনায় এসেছে-
فَخُذْ حُسيناً وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ وَعَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ بِالْبَيْعَةِ أَخْذًا شَدِيدًا لَيْسَتْ فِيهِ رُخْصَةٌ حَتَّى يُبَايِعُوا
অর্থাৎ হুসাইন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর ও ইবনে যুবাইর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম কে এমনভাবে পাকড়াও কর, যেন বাইয়াত না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি না পায়।
[সূত্রঃ তারিখে ত্বাবারী ৫ম খন্ড পৃঃ ৩৩৮, দারুত তুরাছ বৈরুত , ইবনে কাছীর আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৮ম খন্ড পৃঃ ১৫৭, দারু ইহিয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত]।
হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইয়াযিদের বায়’আত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে মক্কা মুকাররামায় চলে যান। ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নিকট ইয়াযিদ মুসলিম জাহানের ইমাম ও নেতৃত্ব প্রদানের জন্য সম্পূর্ণ অযোগ্য ছিল, বরং; সে ফাসিক, পাপিষ্ঠ, অত্যাচারী ও মদ্যপায়ী ছিল । আর খলিফা হিসেবে তার নিযুক্তিও খোলাফায়ে রাশেদার নৈর্বাচনীক ইসলামী পদ্ধতির পরিপন্থী ছিল। কূফার অধিবাসীগণ ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নিকট একে একে চিঠি এবং প্রতিনিধি প্রেরণ করে আরজ করেন যে, তিনি যেন কূফায় আগমণ করেন। এবং বলে, আমাদের কোন ইমাম নেই। আমরা আপনার নিকটই বায়’আত গ্রহণ করব।
তাদের (কূফাবাসীদের) চিঠি ও দূত প্রেরণের পরিমাণ এতই বেড়ে যায় যে, ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মনে হল তাদের দিকনির্দেশনা প্রদান ও ফাসিক পাপিষ্ঠ ইয়াযিদের বায়’আত গ্রহণ হতে রক্ষা করতে তাঁর কূফা যাওয়া প্রয়োজন।
পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য তিনি হযরত মুসলিম বিন আকীল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে কূফায় প্রেরণ করেন। সেখানে সকলে তাকে সাদরে গ্রহণ করল এবং অগণিত লোক তাঁর হাতে ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পক্ষে বায়’আত গ্রহণ করলো। কিন্তু যখন ইবনে যিয়াদ সকলকে হুমকি প্রদান করল, তারা বায়’আত ত্যাগ করল। আর হযরত মুসলিম বিন আকীল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বন্দী অবস্থায় শহীদ করা হল।
ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত মুসলিম বিন আকীল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত ও কূফাবাসীর বিশ্বাসঘাতকতার সংবাদ মক্কা হতে কূফার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর লাভ করেন ।
সংক্ষিপ্ত ঘটনা হল এই , এই যাত্রায় নারী-পুরুষ ও শিশু মিলে মোট বিরাশি (৮২) জন শাহাদাত গ্রহণ করেন, যাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য ও (সামরিক)প্রস্তুতি পর্যন্ত ছিল না । অন্যদিকে ইয়াযিদ বাহিনী তাদের মোকাবেলায় ২২ হাজার সৈন্য নিয়ে উপনীত হয় । এমনকি এই নির্দয় জালিম লোকেরা সম্মানিত আহলে বাইতেগণের জন্য ফোরাত নদীর পানি পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে দেয়।
ত্বাবারীর বর্ণনা অনুসারে ইবনে যিয়াদের নির্দেশ –
فحل بين الْحُسَيْن وأَصْحَابه وبين الماء، وَلا يذوقوا مِنْهُ قطرة، كما صنع بالتقي الزكي المظلوم أَمِير الْمُؤْمِنِينَ عُثْمَان بن عَفَّانَ
অর্থাৎ হযরত হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, তাঁর সাথীদের মাঝে এবং ফোরাত নদীর মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াও। পানি এমনভাবে বন্ধ করে দাও, যেন এক ফোঁটাও পানি পান না করতে পারে। যেমনটি মুত্তাকী এবং নির্মলচিত্ত মজলুম আমীরুল মুমিনীন হযরত ওসমান বিন আফফান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে করা হয়েছিল।
[সূত্রঃ তারিখে ত্বাবারী ৫:৪১২]।
তিন দিন যাবৎ ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং তাঁর ১৮ জন আহলে বাইত ও সঙ্গীদের মধ্য হতে ৫৪ জনকে ৬১ হিজরীর ১০ই মুহররম কারবালা প্রান্তরে নির্দয় ভাবে শহীদ করা হয়। ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে অভিশপ্ত শিমার মস্তক মুবারক বিচ্ছিন্ন করে শহীদ করে।(নাউজুবিল্লাহ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ : رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيمَا يَرَى النَّائِمُ ذَاتَ يَوْمٍ بِنِصْفِ النَّهَارِ ، أَشْعَثَ أَغْبَرَ ، بِيَدِهِ قَارُورَةٌ فِيهَا دَمٌ ، فَقُلْتُ : بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي ، مَا هَذَا ؟ قَالَ : ” هَذَا دَمُ الْحُسَيْنِ وَأَصْحَابِهِ ، وَلَمْ أَزَلْ أَلْتَقِطُهُ مُنْذُ الْيَوْمُ ” فَأُحْصِي ذَلِكَ الْوَقْتَ فَأَجِدُ قُتِلَ ذَلِكَ الْوَقْتِ
অর্থাৎ একদিন দুপুরে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখতে পেলাম, তাঁর পবিত্র কেশরাজি বিক্ষিপ্ত ও ধুলোবালি মিশ্রিত আর তাঁর হাত মুবারকে ছিল রক্তে পূর্ণ একটি শিশি। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমার পিতা-মাতা আপনার কদম মুবারকে উৎসর্গ হোক, আপনার নুরাণী হাতে এটা কি? তিনি ইরশাদ করলেন, এটা হুসাইন ও তাঁর সঙ্গীদের রক্ত । আমি আজ সারা দিনই এগুলো সংগ্রহ করে যাচ্ছি । ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি ঐ দিনক্ষণ হিসাব করে স্মরণে রাখলাম, পরবর্তীতে ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের সংবাদ এলে মিলিয়ে দেখলাম আমার স্বপ্ন ও ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র শাহাদাত একই সময়ে সংগঠিত হয়েছে।
[সূত্রঃ মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল মানাক্বিব হাদীস নং-৬১৮১, মুসনাদে আহমদ হাদীস নং- ২৫৫৩, তাবরানী আল মু’জামুল কাবীর ৩:১১০ হাদীস-২৮২২ [মাকতাবাতু ইবনে তাইয়্যিমাহ,কায়রো] , হাকেম আল মুস্তাদরাক, হাদীস- ৮২০১ , বায়হাক্বী দালায়িলুন নবুওয়াহ, ৬:৪৭১]।
হযরত সালমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত –
دَخَلْتُ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ، وَهِيَ تَبْكِي، فَقُلْتُ: مَا يُبْكِيكِ؟ قَالَتْ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، تَعْنِي فِي المَنَامِ، وَعَلَى رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ التُّرَابُ، فَقُلْتُ: مَا لَكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: شَهِدْتُ قَتْلَ الحُسَيْنِ آنِفًا
অর্থাৎ আমি উম্মুল মুমিনীন হযরত সালামা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার নিকট আসলাম। দেখলাম, তিনি কাঁদছেন। আমি বললাম আপনি কেন কাঁদছেন? তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখলাম যে, তাঁর পবিত্র চুল ও দাঁড়ি মুবারকে মাটি লেগে আছে। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আপনার কি হয়েছে? তিনি ফরমালেন, আমি এইমাত্র আমার হুসাইনের শাহাদাতের ময়দান (কারবালা) থেকে আসলাম।
[সূত্রঃ সুনানে তিরমিযি, আবওয়াবুল মানাক্বিব,হাদীস-৩৭৭১, হাকেম আল মুস্তাদরাক, হাদীস-৬৭৬৪, বায়হাক্বী দালায়িলুন নবুওয়াহ ৭:৪৮ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৮:২০০ দারুল ফিকর, বৈরুত]।
ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মাথা মুবারক দেহ হতে আলাদা করে কুফায় ইবনে যিয়াদের নিকট রাখা হল। ইবনে যিয়াদ একটি ছড়ি দ্বারা ইমাম পাকের ঠোঁট মুবারকে আঘাত করা শুরু করলো। সেই মজলিশে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন প্রবীণ সাহাবী হযরত যায়েদ বিন আরকাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উপস্থিত ছিলেন। তিনি অভিশপ্ত ইবনে যিয়াদের এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজ দেখে সহ্য করতে পারলেন না। ব্যাকুল ও রাগত স্বরে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন , এই পবিত্র ঠোঁট হতে ছড়ি সরাও! আল্লাহর শপথ, নিঃসন্দেহে আমি নিজ চোঁখে বারংবার দেখেছি যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ঠোঁট মুবারকে চুমো খেতেন। এ বলে তিনি অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। ইবনে যিয়াদ বলল, আল্লাহর শপথ ! তুমি যদি আজ বৃদ্ধ না হতে, তবে আমি তোমাকেও হত্যা করতাম।
[সূত্রঃ আইনী উমদাতুল ক্বারী শরহে সহীহ বুখারী, ১৬:২৪১ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৮:২০৭ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৮:১৯০ দারুল ফিকর বৈরুত, ইবনে আসীর আল কামিল ৩:১৮৫ দারুল কিতাবুল আরাবী বৈরুত, তারীখে ত্বাবারী ৫:৪৫৬ দারুত তুরাস বৈরুত]।
পবিত্র ইমাম আর অপবিত্র ইয়াযিদ।
________
ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতে ইয়াযিদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কারো কারো বক্তব্য হল যে, এই ঘটনায় ইয়াযিদের কোন হাত ছিলনা বরং যা করার ইবনে যিয়াদই করেছে ।
নিম্নে এই বিষয়ে কিছু ঐতিহাসিক প্রমাণ উপস্থাপন করা হচ্ছে যা দ্বারা সত্যান্বেষী ও ন্যয়পরায়ণ লোকেরা সহজেই নির্ধারণ করতে সক্ষম হবে যে, এই সকল ঘটনায় ইয়াযিদের সম্পৃক্ততা কতটুকু ছিল ।
প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক আল্লামা ইবনে জরীর ত্বাবারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন যে, ইয়াযিদ নিজেই ইবনে যিয়াদকে কুফার শাসনকর্তা নিয়োগ দেয় এবং নির্দেশ দেয়, হযরত মুসলিম বিন আকীল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে যেখানে পাও হত্যা কর অথবা শহর হতে বের করে দাও।
[সূত্রঃ তারীখে ত্বাবারী ৫:৩৪৮ দারুত তুরাস বৈরুত]।
অতঃপর যখন মুসলিম বিন আকীল ও হানী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা কে শহীদ করে তাদের খণ্ডিত মস্তকদ্বয় দামেশকে ইয়াযিদের নিকট পেশ করা হয়। আর ইয়াযিদ ইবনে যিয়াদকে এ হীন কর্মের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে চিঠি লিখে।
[সূত্রঃ ইবনে আসীর তারীখে কামিল, ৩:১৪৬ দারুল কিতাবুল আরাবী বৈরুত]।
এখন জেনে রাখা প্রয়োজন যে, ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের পর ইয়াযিদের প্রথম হীন কর্ম কি ছিল? আল্লামা ইবনে জরীর ত্বাবারী লিখেন যে, ইবনে যিয়াদ হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পবিত্র মস্তক তাঁর হত্যাকারীদের মাধ্যমে ইয়াযিদের নিকট প্রেরণ করে। ইয়াজিদের দরবারে পৌঁছলে মস্তক মুবারক তার সামনে রাখা হয়। ইয়াযিদ তার হাতের ছড়ি দিয়ে ইমাম পাকের ওষ্ঠ ও দাঁত মুবারকে মৃদু আঘাত করছিল আর বলছিল, তাঁর এবং আমাদের উদাহরণ এমনই, যেমন হাসীন ইবনে হামাম মুররী (তার কবিতায়) বলেছে –
يُفَلِّقْنَ هَامًا مِنْ رِجَالٍ أَعِزَّةٍ … عَلَيْنَا وَهُمْ كَانُوا أَعَقَّ وَأَظْلَمَا
অর্থাৎ তারা এমন লোকদের মাথার খুলি উড়িয়ে দিয়েছে, যারা আমাদের চাইতেও প্রভাবশালী ছিল। আর তারা ছিল অত্যাধিক অবাধ্য ও জালিম।(নাউজুবিল্লাহ)
সেখানে সাহাবী আবু বোরযা আল আসলামী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুও উপস্থিত ছিলেন, তিনি বলে উঠলেন, হে ইয়াযিদ ! আল্লাহর শপথ, ছড়ি সরিয়ে নাও। তুমি যে স্থানে আঘাত করে যাচ্ছ, সেস্থানে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বারবার চুমতে দেখেছি।
তিনি আরো বললেন, হে ইয়াযিদ মনে রেখ ! ক্বিয়ামতের দিন হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন উত্থিত হবেন, তখন তাঁর সুপারিশকারী হবেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর তুমি যখন উত্থিত হবে এমন অবস্থায়, যখন তোমার পক্ষে সুপারিশকারী পাবে ইবনে যিয়াদকে। তখন সেই সাহাবী মজলিশ হতে উঠে চলে যান।
[সূত্রঃ তারিখে ত্বাবারী ৫:৪৬৫ দারুত তুরাস বৈরুত, ইবনে আসীর তারীখে কামিল, ৩:১৮৮ দারুল কিতাবুল আরাবী বৈরুত, ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৮:২০৯ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৮:১৯২ দারুল ফিকর বৈরুত]।
এখন আপনারা নিজেরাই ফয়সালা করুন যে, ইয়াযিদের মনে কি ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র শাহাদাতে কোন আফসোস বা দুঃখ থাকতে পারে, যে কিনা হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র পবিত্র মস্তক সামনে রেখে তিরস্কার ও অহংকার করে কবিতা আবৃতি করে। যে মুবারক ঠোঁটদ্বয়ে স্বয়ং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা চুমু খেতেন, তাতে আঘাত করে। এহেন কাজের কারণে সে কি লা’নত ও তিরস্কারের উপযুক্ত নয়?
আহলে বায়তের সদস্যদের সাথে তার (ইয়াযিদ) দূর্ব্যবহার হতেও এ সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যায় যে, যখন আহলে বায়তের শোকাহত এই কাফেলাকে অভিশপ্ত ইবনে যিয়াদ দামেশকে ইয়াযিদের নিকট প্রেরণ করল; তখন ইয়াযিদ সিরিয়ার আমীর উমরা ও রাজ কর্মচারীদের দরবারে একত্রিত করল। আর ভরা মজলিশে সকলের সামনে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশের পবিত্র নারীদের আনা হল । আর ইয়াজিদের মজলিশের উপস্থিত সবাই ইয়াযিদকে তার বিজয়ের অভিনন্দন জানায়।
[সূত্রঃ ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৮:২১৫ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত,৮:১৯৭ দারুল ফিকর বৈরুত, তারিখে ত্বাবারী ৫:৩৯০ দারুত তুরাস বৈরুত]।
ইয়াযিদ কর্তৃক আহলে বায়তের প্রতি নোংরা ও লজ্জাকর আচরণের একটি উদাহরণ-
আহলে বায়তের পবিত্র মহিলাদের যখন ইয়াযিদের দরবারে আনা হলে, এক সিরিয় দুরাচার হযরত ফাতিমা বিনতে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার দিকে ইশারা করে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন(ইয়জিদ) ! এ মেয়েটি আমাকে দিন। নিস্পাপ সাইয়্যিদা ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এ কথা শুনে ভয় পেয়ে বড় বোন যয়নব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার কাপড় খামচে ধরলেন।
হযরত যয়নব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা ঐ সিরিয়কে ভৎর্সনা করে বলে উঠলেন, বাজে বকছিস কেন কমবখত? এ কন্যা (শরীয়ত মতে) তোর ভাগ্যে তো দূর স্বয়ং ইয়াযিদের ভাগ্যেও জুটবে না।
একথা শুনে ইয়াযিদ রাগন্বিত হল এবং বলে উঠল, আল্লাহর শপথ ! সে আমার অধীনস্থ আছে। আমি যদি তাকে দিতে চাই, তাহলে দিতে পারব।
হযরত যয়নব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা রাগত স্বরে বললেন, কখনোই না। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তা’আলা তোমাকে এমনটা করার অধিকার দেননি। তবে, তুমি যদি ঘোষণা পূর্বক আমাদের ইসলাম হতে বহির্ভূত হও বা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে তাঁর গন্ডি হতে বের হয়ে যাও এবং ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ কর, তবে ভিন্ন কথা। (অর্থাৎ যতক্ষন তুমি মুসলিম পরিচয় দিবে, ততক্ষণ মুসলিম কন্যাকে গণিমত হিসেবে কবজা করতে পারবে না)
এ কথায় ইয়াযিদ ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, তুমি আমার মোকাবেলা করে এ বলছ? তোমার বাবা আর তোমার ভাই দ্বীন ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন ।
হযরত যয়নব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বললেন, আল্লাহর ধর্ম, আমার বাবার ধর্ম এবং আমার নানার ধর্ম ইসলাম হতেই তুমি ও তোমার বাপ-দাদা হেদায়াত পেয়েছিলে।
ইয়াযিদ বলল, তুমি মিথ্যা বলছ।
হযরত যয়নব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তুমি জোর করে আমীর হয়ে রাজক্ষমতার দম্ভে এমন অনুচিত ও কর্কশ ভাষা আর অশোভন বাক্য প্রয়োগ করছ।
এ কথা শুনে ইয়াযিদ চুপ হয়ে গেল। আর ঐ পাপিষ্ঠ সিরিয় আবার একই প্রশ্ন করলে, ইয়াযিদ বলে আল্লাহ তোমায় মৃত্যু দিক।
[সূত্রঃ তারিখে ত্বাবারী ৫:৪৬১,৪৬২ দারুত তুরাস বৈরুত, ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২১১-১২ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৮:১৯৪-৫ দারুল ফিকর বৈরুত, ইবনে আসীর তারীখে কামিল, ৩:১৮৮ দারুল কিতাবুল আরাবী বৈরুত]।
কেউ কেউ আবার ইয়াযিদের অনুতাপ ও দুঃখ প্রকাশ করার কথা উল্লেখ করে তাকে নির্দোষ প্রমাণের প্রয়াস চালায়। তার অনুতাপ প্রকাশের মূল উদ্দেশ্য আল্লামা ইবনে আসীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র বক্তব্য হতেই স্পষ্ট হয়ে যায় –
“(তিনি বলেন) ইমাম পাকের মস্তক মুবারক যখন ইয়াযিদের নিকট পৌঁছল, তখন সে খুশী হয়ে গেল। তার নিকট ইবনে যিয়াদের মান মর্যাদা বেড়ে গেল। পরে যখন জানতে লাগল যে, এই ঘটনার দরুণ মানুষ তাকে ঘৃণা করছে, তার উপর অভিশাপ দিচ্ছে, গাল-মন্দ করছে তখন সে ইমাম পাকের হত্যায় অনুতপ্ত হল।
তখন সে ইবনে যিয়াদকে গালমন্দ করতে লাগল। বলতে লাগল, মারজানার পুত্রের উপর খোদার লা’নত ! হুসাইনকে হত্যা করে সে মানুষের অন্তরে আমার জন্য বিদ্বেষ ও শত্রুতার বীজ বপন করে দিয়েছে । ভাল-মন্দ নির্বিশেষে সকল লোকই হযরত হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র হত্যার কারণে আমায় ঘৃণা করছে। কেননা তারা মনে করছে, আমি ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যা করে অনেক বড় জুলুম করেছি । আল্লাহর লা’নত ও গজব ইবনে যিয়াদের উপর। সে আমায় বরবাদ করে দিল।
[সূত্রঃ ইবনে আসীর তারীখে কামিল, ৩:১৯০ দারুল কিতাবুল আরাবী বৈরুত]।
তাবারী ও ইবনে কাসীরের বর্ণনা অনুসারে-
যখন ইমাম হুসাইন ও তার সঙ্গী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম’দের শহীদ করে তাঁদের মাথা মুবারকগুলো ইয়াযিদের নিকট প্রেরণ করা হল, তখন ইয়াজিদ প্রথমদিকে খুশি হয়েছিল এবং এ কারণে তার নিকট ইবনে যিয়াদের মান-মর্যাদাও বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সে আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। খানিক পরে এ ঘটনায় সে লজ্জিত হয়ে পড়ল।
[সূত্রঃ তারিখে ত্বাবারী ৫:৫০৬ দারুত তুরাস বৈরুত, ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২৫৪ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৮:২৩২ দারুল ফিকর বৈরুত]।
ইবনে যিয়াদকে ইয়াযিদের কর্তৃক লা’নত প্রদান ও নিজে অনুতপ্ত হওয়া প্রসঙ্গে ইবনে কাসীর উল্লেখ করেন-
ইয়াযিদ ইবনে যিয়াদকে ঐ কার্যকলাপের দায়ে লা’নত দিল বটে, তাকে গাল-মন্দও করল। তা এই আশঙ্কায় যে, পরবর্তীতে এই ঘটনা প্রকাশ পেলে তার বদনাম ছড়িয়ে পড়বে, তখন কি হবে?
কিন্তু ইবনে যিয়াদের এ নারকীয় তান্ডবের দায়ে না তাকে ইয়াযিদ পদচ্যুত করল, না তার কোন শাস্তি বিধান করল। না অন্য কারো মাধ্যমে তাকে এর দায়ে তিরস্কার করল।
[সূত্রঃ ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২২১ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৮:২০৩ দারুল ফিকর বৈরুত।]
ইয়াযিদের আচরণ ও তার অনুতপ্ত হওয়া প্রসঙ্গ আপনারা অবগত হলেন। কিন্তু সেটা তার সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও নিছক লোক দেখানো কাজ ছিল। এ বিষয়ে ন্যায়বিচারের কোন প্রয়াসই ছিলনা। যেখানে একজন সাধারণ মুসলমানকে হত্যা করা হলে তার কিসাস (প্রতিশোধ) নেয়া বিচারকের জন্য ফরজ। আর সেখানে স্বয়ং নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশকে গণহত্যা হয়েছিল। ইয়াযিদ যদি সত্যিকারার্থে অনুতপ্ত হত, তবে সে অবশ্যই ইমাম পাকের হত্যাকারীদের পাকড়াও করত। আর তাঁদের শাস্তি দিত। কিন্তু সে এমনটা করেনি । আর ঐতিহাসিকদের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা হতেই তার ভূমিকা স্পষ্ট বোঝা যায়।
ইয়াযিদ পাপাচারী ও অভিশপ্ত ছিল।
কিছু অজ্ঞ লোকের বক্তব্য হল, ইয়াযিদের আনুগত্য গ্রহণ করা ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর উপর আবশ্যক ছিল। আর এই বদ ধারণা খন্ডন করে শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখছেন –
ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র বিদ্যমান থাকা অবস্থায় ইয়াযিদ কিভাবে আমীরুল মুমিনীন হতে পারে? আর তার আনুগত্য কিভাবে মুসলমানদের উপর আবশ্যক হয়? যেখানে কিনা ঐ সময়ে সাহাবা কেরাম এবং তাঁদের বংশধরগণ জীবিত ছিলেন এবং সকলেই তখন ইয়াজিদের আনুগত্যের ঘোষণার প্রতি অসন্তুষ্টি পোষণ করেছিলেন ।
মদীনা মুনাওয়ারা হতে কয়েকজনকে জোর করে সিরিয়ায় তার (ইয়াযিদ) নিকট আনা হয়। তারা ইয়াযিদের অপছন্দনীয় কাজসমূহ দেখে মদীনা ফিরে এলেন এবং বায়’আতের আহবান নাকচ করে দিলেন। ঐ লোকেরা প্রকাশ্যে বলেন যে, ইয়াযিদ আল্লাহর শত্রু, মদ্যপায়ী, নামায ত্যাগকারী, ব্যভিচারী, পাপাচারী ও মুহরিমের সাথে মিলনে বিরত হয় না।
[সূত্রঃ তাকমীলুল ঈমান, ১৭৮ পৃষ্ঠা]।
ইয়াযিদের পাপাচার ও ফাসেকী সম্বন্ধে শীর্ষস্থানীয় সাহাবা ও তাবেয়ীগণের বর্ণনা তারিখে ত্বাবারী, তারিখে কামিল ও তারিখুল খুলাফা তে পাওয়া যায়।
সংক্ষেপে গসীলে মালাইকাহ (যাকে ফিরিশতাগণ শাহাদাতের পর গোসল দেন) হযরত হানযালা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পুত্র আব্দুল্লাহ বর্ণনা করেন, আল্লাহর শপথ! আমরা ইয়াযিদের আনুগত্য তখনই ছেড়ে দিয়েছি যখন আমাদের আশংকা হল যে, (তারই বদমায়েশীর কারণে) না জানি আমাদের উপর আসমান হতে পাথর বর্ষিত হয় কিনা। অবশ্যই লোকটি (ইয়াযিদ) মা-বোন ও কন্যাদের সাথে বিবাহে বৈধতা দেয়, প্রকাশ্যে মদ্যপান করতে থাকে এবং নামায ত্যাগ করল।
[সূত্রঃ সুয়ূতী তারিখুল খুলাফা ১৫৮, ১৫৯ পৃঃ, ইবনে সা’দ আত ত্ববকাতুল কুবরা ৫:৬৬ দারু সাদির বৈরুত, ৫:৪৯ দারুল কুতুবিল আলামিয়্যাহ বৈরুত, ইবনে আসাকির তারিখে দামেশক ২৭:৪২৯]।
হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন ইয়াযিদ বাহিনীর সামনে বক্তব্য দান করেন, তখনও ইয়াযিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার একই কারণ বর্ণনা করে বলেন-
“সাবধান ! নিশ্চয়ই ঐ লোকগুলো শয়তানের আনুগত্য বেছে নিয়েছে এবং দয়ালু আল্লাহর আনুগত্য ত্যাগ করেছে। তারা দেশে অনাচার সৃষ্টি করেছে, শরীয়তের শাসনকে মুক্ত করে দিয়েছে, গণীমতের সম্পদ ব্যক্তিসম্পদের মত কুক্ষিগত করেছে। আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত বস্তুকে হালাল ও হালালকৃত বস্তুকে হারাম করে দিয়েছে।”
[সূত্রঃ ইবনে আসীর তারীখে কামিল, ৩:১৫৯ দারুল কিতাবুল আরাবী বৈরুত, তারিখে ত্বাবারী ৫:৪০৩ দারুত তুরাস বৈরুত]।
শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের নিকট ইয়াযিদ একজন জঘন্য ঘৃণিত ব্যক্তি ছিল। এই দুরাচার যে ঘৃণ্য কাজ সমূহ আঞ্জাম দেয়, তা উম্মতের মধ্যে কোন ব্যক্তিই দিতে সক্ষম হয়নি। ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত ও আহলে বায়তে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের অবমাননার পর এই দুরাচার মদীনা মুনাওয়ারায় সৈন্য প্রেরণ করে মদীনা মুনাওয়ারার অবমাননার পর মদীনাবাসীর রক্তে স্বীয় হাত রঞ্জিত করে। মদীনা পাকে অবস্থানরত বহু সাহাবী ও তাবেঈ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম তার নির্দেশে শহীদ হয় ।
মদীনা মুনাওয়ারায় ধ্বংস সাধনের পর সে মক্কা মুকাররামায় ধ্বংসলীলা সাধনের আদেশ দেয় । মক্কায় ব্যাপক হামলা হয়,হত্যা লুন্ঠন চালায়, পবিত্র কাবা ঘরের গিলাফ পুড়ে যায়,ছাদ পুড়ে যায়,দেয়াল ধ্বসে পড়ে। এমতাবস্থায় সে (ইয়াযিদ) মৃত্যু বরণ করে।
[সূত্রঃ তাকমীলুল ঈমান, ১৭৯ পৃষ্ঠা]।
আ’লা হযরত মুজাদ্দিদে দ্বীন ওয়া মিল্লাত শাহ আহমদ রজা ফাজেলে বেরেলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এ প্রসঙ্গে লিখছেন, ইয়াযিদ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের ইজমা দ্বারা অভিশপ্ত, ফাসিক, ঘৃণ্য ও কবীরা গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি । এরপর তার কৃতকর্ম ও অত্যাচারের ঘটনা লিখে বলেন-
লা’নতের উপযুক্ত হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে ঘৃণ্য অভিশপ্ত কাজসমূহকে ঘৃণ্য ও পাপাচার হিসেবে না মানে । কুরআনে কারীমে এই সকল ব্যক্তিদের জন্য স্পষ্টত ‘তাদের প্রতি আল্লাহর লা’নত’ উল্লেখ করা হয়।
[সূত্রঃ ইরফানে শরীয়ত, ৭৮-৮০পৃঃ আল্লামা হাফেজ আব্দুল জলীল (রহঃ) কর্তৃক অনুদিত]।
ইদানীং কিছু পথভ্রষ্ট নির্বোধ লোক বলে থাকে, “আমাদের হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও ইয়াজিদের মধ্যকার ব্যাপারে মাথা ঘামানোর কি প্রয়োজন, তারা উভয়ই শাহজাদা।”
এরূপ মন্তব্যকারী অবশ্যই মরদুদ, খারেজী, নাসেবী ও জাহান্নামী।
[সূত্রঃ বাহারে শরীয়ত, সদরুস শরীয়াহ মুফতি আমজাদ আলী আজমী ১ম খন্ড ৭৮পৃঃ, মোহাম্মদী কুতুবখানা চট্টগ্রাম কর্তৃক অনুবাদ ১ম খন্ড ৮৭ পৃঃ]।
ইয়াযিদ কি লা’নতের উপযুক্ত ছিল?
কুরআনে পাকে ইরশাদ হচ্ছে-
إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
অর্থাৎ নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দেয়, তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত দুনিয়া ও আখিরাতে।
[সূত্রঃ সুরা আল আহযাব আয়াতঃ৫৭ অনুবাদ, কানযুল ঈমান]।
হাদীস শরীফে হযরত সালমান ফার্সী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ ابْنَايَ، مَنْ أَحَبَّهُمَا أَحَبَّنِي، وَمَنْ أَحَبَّنِي أَحَبَّهُ اللَّهُ، وَمَنْ أَحَبَّهُ اللَّهُ أَدْخَلَهُ الْجَنَّةَ، وَمَنْ أَبْغَضَهُمَا أَبْغَضَنِي، وَمَنْ أَبْغَضَنِي أَبْغَضَهُ اللَّهُ، وَمَنْ أَبْغَضَهُ اللَّهُ أَدْخَلَهُ النَّارَ
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি, হাসান-হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আমার বেটা। যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালবাসলো সে আমাকে ভালবাসলো, আর যে আমায় ভালবাসলো তাকে আল্লাহ ভালবাসবেন। আর যাকে আল্লাহ ভালবাসবেন তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে তাঁদের উভয়ের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করল, সে আমার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করল। আর যে আমার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করবে, তার সাথে আল্লাহ বিদ্বেষ পোষণ করবে। আর যার সাথে আল্লাহ বিদ্বেষ পোষণ করবেন, তাকে তিনি জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
[সূত্রঃ হাকেম আল মুস্তাদরিকু আলাস সাহিহাইন, হাদীস -৪৭৭৬, তাবরানী আল মু’জামুল কবীর ৩:৫০, হাদীস-২৬৫৫ মাকতাবা ইবনে তায়্যিমাহ কায়রো]।
হাদীস শরীফে আরও ইরশাদ হচ্ছে, হযরত যায়দ বিন আরকাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ لِفَاطِمَةَ وَالْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ: أَنَا حَرْبٌ لِمَنْ حَارَبَكُمْ، وَسَلْمٌ لِمَنْ سَالَمَكُمْ
অর্থাৎ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতিমা, ইমাম হাসান-হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করেন, যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবে আমিও তাদের সাথে যুদ্ধ করব । আর যারা তোমাদের সাথে সন্ধি করবে আমিও তাদের সাথে সন্ধি করব।
[সূত্রঃ সহীহ ইবনে হিব্বান ১৫:৪৩৪ হাদীস-৬৯৭৭, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ-৩২১৮১, তাবরানী আল মু’জামুল কবীর ৩:১৭৯, হাদীস-২৮৫৪]।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
أَوَّلُ مَنْ يُبَدِّلُ سُنَّتِي رَجُلٌ مِنْ بَنِي أُمَيَّةَ يُقَالُ لَهُ يَزِيدُ
অর্থাৎ আমার উম্মতের মধ্যে যে সর্বপ্রথম আমার সুন্নাতকে পরিবর্তন করে দিবে সে হল, বনু উমাইয়ার ইয়াযিদ।
[সূত্রঃ সওয়ায়িকুল মুহাররিকাহ ২:৬৩৩ মুয়াসসাতুর রিসালাহ লেবানন, ইবনে আসাকির তারিখে দামেশক ৬৫:২৫০ দারুল ফিকর, সিয়ারু আ’লামুন নুবলা ৩:২০০ দারুল হাদীস কায়রো]।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন-
لَا يَزَالُ أَمْرُ أُمَّتِي قَائِمًا بِالْقِسْطِ حَتَّى يَثْلَمَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي أُمَيَّةَ يُقَالُ لَهُ: يَزِيدُ
অর্থাৎ আমার উম্মতের শাসন ন্যয়সঙ্গত থাকবে অর্থাৎ শাসক ন্যয়পরায়ণ হবে। সর্বপ্রথম যে তা বিনষ্ট করবে সে হল বনু উমাইয়ার ইয়াযিদ।
[সূত্রঃ সওয়ায়িকুল মুহাররিকাহ ২:৬৩৭ মুয়াসসাতুর রিসালাহ লেবানন, ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২৫৩ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৮:২৩১ দারুল ফিকর বৈরুত, বায়হাক্বী দালায়িলুন নবুওয়াহ ৬:৪৬৭, সুয়ূতী তারিখুল খুলাফা ১৫৮ পৃঃ]।
মুহাদ্দিস ইবনে জওযী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির নিকট তার পুত্র সালেহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি জিজ্ঞাসা করলেন, এক সম্প্রদায় আমাদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলল যে, আমরা ইয়াযিদের শুভাকাঙ্খী ও সাহায্যকারী। তিনি বললেন, হে আমার পুত্র! যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ঈমান আনে, সে কিভাবে নিজেকে ইয়াযিদের বন্ধু দাবী করতে পারে? বরং ঐ ব্যক্তির প্রতি অভিসম্পাত দেই, যার প্রতি আল্লাহ পবিত্র কুরআনে অভিসম্পাত দিয়েছেন।
ইরশাদ হচ্ছে-
فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ (22)
أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ (23)
অর্থাৎ তবে কি তোমাদের এ লক্ষণ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে যে, যদি তোমরা শাসন ক্ষমতা লাভ কর, তবে পৃথিবীতে বিপর্যয় ছড়াবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।
এরা হচ্ছে ঐসব লোক যাদের উপর আল্লাহ তা’আলা অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদেরকে সত্য থেকে বধির করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখগুলোকে দৃষ্টিশক্তিহীন করে দিয়েছেন।
[সূত্রঃ সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ২২, ২৩, অনুবাদ, কানযুল ঈমান]।
অতঃপর ইমাম আহমদ বিন হাম্বল বললেন,
فَهَل يكون فَسَاد أعظم من الْقَتْل
অর্থাৎ আর বল, হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হত্যার চেয়ে বড় ফ্যাসাদ আছে কি?।
[সূত্রঃ আবুল আব্বাস, সওয়ায়িকুল মুহাররিকাহ ২:৬৩৫ মুয়াসসাতুর রিসালাহ লেবানন]।
আল্লামা সা’দ উদ্দীন তাফতাযানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ওলামায়ে কেরাম ঐ ব্যক্তিকে লা’নত দেয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন, যে ব্যক্তি ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যা করেছে বা হত্যার নির্দেশ দিয়েছে কিংবা অনুমতি দিয়েছে এবং তাতে সন্তুষ্ট হয়েছে।
আসল কথা হল, ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের ব্যাপারে ইয়াযিদের সন্তুষ্টি ছিল। ফলস্বরুপ ইয়াজিদের উপর লা’নত দেয়া যায়। হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের সংবাদ পেয়ে ইয়াযিদের আনন্দিত হওয়া এবং সরকারে দো আলম নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বংশধরগণের অপমান করা ও তাঁদের অপমান করার বিষয়ে এমন অনেক বর্ণনা আছে, যা অর্থের দিক থেকে মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছেছে; যদিও পৃথক পৃথকভাবে খবরে ওয়াহেদ।
আমরা ইয়াযিদের ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করছি না, বরং তার ঈমান সম্পর্কে আপত্তি পোষণ করি । আল্লাহ তা’আলা ইয়াজিদ, তার সহযোগী ও দলবলের ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করুক।
[সূত্রঃ শরহু আকায়িদিন নাসাফিয়্যাহ, ১০২/১৩৭ পৃঃ]।
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের বর্ণনা শেষে বলেন, ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হত্যাকারী, ইবনে যিয়াদ এমনকি ইয়াযিদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত।
[সূত্রঃ সুয়ূতী তারিখুল খুলাফা ১৫৮ পৃঃ (ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়া অধ্যায়)]।
প্রসিদ্ধ তাফসীরকারক আল্লামা শিহাব উদ্দিন মাহমুদ আলুসী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমার নিকট ইয়াযিদের মত কুখ্যাত ব্যক্তির উপর লানত করা অকাট্যভাবে বৈধ। আর তার মত ফাসিক ব্যক্তির জন্য চিন্তাও করা যাবে না। স্পষ্টত হচ্ছে যে, সে তাওবা করেনি। আর তার তাওবা করার ধারণাটা তার ঈমানের চেয়েও অধিক দূর্বল। ইয়াযিদের সাথে ইবনে যিয়াদ, ইবনে সা’দ ও তার দলবলও এ হুকুমের সাথে শামিল হবে। সুতরাং তাদের সকলের উপর কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর অভিসম্পাত হোক। এমনকি তাদের সাথী, সহযোগীদের উপর এবং সেই গোষ্ঠীর উপর যারা কিনা ইয়াজিদের হিতাকাংখী। এবং ততদিন, যতদিন মুসলমানের চোঁখ হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর জন্য অশ্রুপাত করবে।
[সূত্রঃ আল্লামা আলুসী তাফসীরে রুহুল মা’আনী ১৩:২২৯ দারুল কিতাবিল আলামীয়্যাহ বৈরুত]।
সুতরাং প্রমাণিত হল যে, নাপাক ইয়াজিদ লা’নত তথা অভিশাপের যোগ্য। মোদ্দাকথা হল যে, এই অভিশপ্তের প্রতি লা’নত দিয়ে সময় নষ্ট করার চেয়ে উত্তম হবে সে সময়টাতে আল্লাহর যিকির, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার আহলে বাইতের উপর দরুদ শরীফ পাঠে মগ্ন থাকা।
মক্কা মুকাররমা ও মদিনা শরীফে আক্রমন।
তথাপি ইয়াজিদ নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি বলবৎ করতে হারামাইন শরীফের পবিত্র মক্কা ও মদীনার উপরও হামলার ধৃষ্টতা দেখায়। এ দুরাচার সেখানে এমন তান্ডব বইয়ে দিল, যা যে কোন মু’মিনের হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করবে। সাহাবা ও তাবেঈ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমসহ বহু নিরীহ লোক সেখানে শহীদ হলেন।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হচ্ছে-
مَنْ أَخَافَ أَهْلَ الْمَدِينَةِ أَخَافُهُ اللهُ وَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ لَا يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ
অর্থাৎ যে মদীনাবাসীদের ভীত সন্ত্রস্ত করবে, আল্লাহ তা’আলা তকেও ভীত সন্ত্রস্ত করবেন। আর তার উপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সমগ্র মানবজাতির অভিসম্পাত। তার না কোন ফরজ ইবাদত কবুল হবে না কোন নফল ইবাদত।
[সূত্রঃ নাসাঈ আস সুনানুল কুবরা হাদীস-৪২৫১, তাবরানী আল মু’জামুল কবীর ৭:১৪৩ হাদীস-৬৬৩১ মাকতাবা ইবনে তায়্যিমাহ কায়রো]।
তাবরানীর অপর বর্ননায় বর্ণিত আছে, যারা মদীনাবাসীকে কষ্ট দিবে ( آذى ) শব্দের ব্যবহার হয় ।
মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে-
مَنْ أَرَادَ أَهْلَ الْمَدِينَةِ بِسُوءٍ، أَذَابَهُ اللهُ كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মদীনাবাসীদের কোন ক্ষতি করতে চাইবে, আল্লাহ তাকে এমনভাবে গলিয়ে দিবেন যেমন লবণ পানিতে গলে যায়।
[সূত্রঃ সহীহ মুসলিম , কিতাবুল হজ্জ হাদীস নং-১৩৮৭, সুনানে ইবনে মাজাহ-৩১১৪ , সহীহ ইবনে হিব্বান-৩৭৩৭]।
সুতরাং সাব্যস্ত হল যে, ইয়াযিদ তার সহযোগী ও অনুসারীরা অভিশাপের উপযুক্ত।
________
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
আমার উম্মতের মধ্যে যে সর্ব প্রথম আমার সুন্নাহকে পরিবর্তন করে দিবে, সে হল বনু উমাইয়ার ইয়াজিদ।
[সূত্রঃ সাওয়ায়েকে মুহরিকা ২ / ৬৩৩]।
ইয়াজিদ এর ব্যাপারে ফতোয়া উলামায় কেরামের رای
عن وتكفير يزيد من كتب السنة
بسم الله الرحمن الرحيم
حاولت أن أجمع بعض المصادر من كتب السنة على لعن وكفر يزيد بن معاوية لعنه الله
راجيا من الله عز وجل قبول هذا العمل
ولا تنسونا من صالح الدعاء
أفتى كلّ من سبط بن الجوزي والقاضي أبو يعلى والتفتازاني والجلال السيوطي وغيرهم من أعلام السنة القدامى بكفر يزيد وجواز لعنه
قال اليافعي: وأمّا حكم من قتل الحسين، أو أمر بقتله، ممّن استحلّ ذلك فهو كافر.
شذرات من ذهب / ابن العماد الحنبلي: 1 / 68
وقال الذهبي: كان ناصبياً فظاً غليظاً، يتناول المسكر ويفعل المنكر، افتتح دولته بقتل الحسين، وختمها بوقعة الحرّة. نفس المصدر السابق
وقال ابن كثير: ان يزيد كان اماماً فاسقاً البداية: 8 / 223
قال المسعودي: ولمّا شمل الناس جور يزيد وعماله وعمّهم ظلمه وما ظهر من فسقه ومن قتله ابن بنت رسول الله (صلى الله عليه وسلم) وأنصاره وما أظهر من شرب الخمر، سيره سيرة فرعون، بل كان فرعون أعدل منه في رعيّته، وأنصف منه لخاصّته وعامّته أخرج أهل المدينة عامله عليهم، وهو عثمان بن محمّد بن أبي سفيان.مروج الذهب: 3 / 82.
وروي أنّ عبد الله بن حنظلة الغسيل قال: والله ما خرجنا على يزيد، حتى خفنا أن نرمى بالحجارة من السماء، أنّه رجل ينكح أمهات الأولاد والبنات والأخوات ويشرب الخمر ويدع الصلاة.
الكامل: 3 / 310 وتاريخ الخلفاء: 165
المنكرات التي اقترفها يزيد من قتل الحسين وحمله بنات رسول الله (ص) سبايا، وقرعه ثنايا الحصين بالعود، وإخافته أهل المدينة، وهدم الكعبة، تدل على القسوة والغلظة، والنصب، وسوء الرأي، والحقد والبغضاء والنفاق والخروج عن الايمان، فالفاسق ملعون، ومن نهى عن شتم الملعون فملعون
الجاحظ – الرسالة الحادية عشر في بني أمية – رقم الصفحة: (398)
الحق أن رضا يزيد بقتل الحسين (ع) واستبشاره به، وإهانته أهل بيت النبي (ص) مما تواتر معناه وإن كانت تفاصيله آحادا، فنحن لا نتوقف في شأنه بل في إيمانه، لعنة الله عليه وعلى أنصاره وأعوانه
العلامة سعد الدين التفتازاني الشافعي – شرح العقائد النسفية – رقم الصفحة: (181)
قال اليافعي: وأما حكم من قتل الحسين، أو أمر بقتله، ممن استحل ذلك فهو كافر.
– وقال التفتازاني في شرح العقائد النفسية: والحق أن رضا يزيد بقتل الحسين، واستبشاره بذلك، وإهانته أهل بيت الرسول مما تواتر معناه، لعنة الله عليه، وعلى أنصاره وأعوانه
إبن العماد الحنبلي – شذرات الذهب في أخبار من ذهب – الجزء: (1) – رقم الصفحة: (68)
لا لعدم تصويب فعله، بل لأنهم يرون عدم جواز إراقة الدماء، فلا يجوز نصرة يزيد بقتال الحسين، بل قتله من فعلات يزيد المؤكدة لفسقه، والحسين فيها شهيد
إبن خلدون – المقدمة – رقم الصفحة: (254)
وقد روي أن يزيد كان قد اشتهر بالمعازف وشرب الخمر والغناء والصيد واتخاذ الغلمان والقيان والكلاب والنطاح بين الكباش والدباب والقرود، وما من يوم إلا يصبح فيه مخمورا، وكان يشد القرد على فرس مسرجة بحبال ويسوق به، ويلبس القرد قلانس الذهب، وكذلك الغلمان، وكان يسابق بين الخيل، وكان إذا مات القرد حزن عليه. وقيل: إن سبب موته أنه حمل قردة وجعل ينقزها فعضته
إبن كثير – البدايه والنهايه – الجزء: (8) – رقم الصفحة: (258)
ولقد أفرط بعض أهل العلم كالكرامية ومن وافقهم في الجمود على أحاديث الباب حتى حكموا بأن الحسين السبط (ر) وأرضاه باغ على الخمير السكير الهاتك لحرم الشريعة المطهرة يزيد بن معاوية لعنهم الله، فيالله العجب من مقالات تقشعر منها الجلود ويتصدع من سماعها كل جلمود
الشوكاني – نيل الأوطار – الجزء: (7) – رقم الصفحة: (147)
قال: لعن الله قاتله – يعني حسينا (ع) – وابن زياد معه ويزيد أيضا.جلال الدين السيوطي – تاريخ الخلفاء – رقم الصفحة: (207).
٢٧١ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ -، قَالَ: حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – وِعَاءَيْنِ، فَأَمَّا أَحَدُهُمَا فَبَثَثْتُهُ فِيكُمْ، وَأَمَّا الْآخَرُ فَلَوْ بَثَثْتُهُ قُطِعَ هَذَا الْبُلْعُومُ – يَعْنِي مَجْرَى الطَّعَامِ – رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ.
٢٧١ – (وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ) أَيْ: مِنْ كَلَامِهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -، قَالَ الْأَبْهَرِيُّ: فِي أَكْثَرِ الرِّوَايَاتِ (عَنْ) وَفِي رِوَايَةِ الْكُشْمِيهَنِيِّ (مِنْ) بَدَلَ (عَنْ) وَهَذَا صَرِيحٌ فِي تَلَقِّيهِ مِنَ النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – بِلَا وَاسِطَةٍ (وِعَاءَيْنِ) : أَيْ: نَوْعَيْنِ كَثِيرَيْنِ مِنَ الْعِلْمِ مِلْءَ ظَرْفَيْنِ مُتَسَاوِيَيْنِ (فَأَمَّا أَحَدُهُمَا) : وَهُوَ عِلْمُ الظَّاهِرِ مِنَ الْأَحْكَامِ وَالْأَخْلَاقِ (فَبَثَثْتُهُ) : أَيْ: أَظْهَرْتُهُ بِالنَّقْلِ (فِيكُمْ، وَأَمَّا الْآخَرُ) : وَهُوَ عِلْمُ الْبَاطِنِ (قُطِعَ هَذَا الْبُلْعُومُ) : بِضَمِّ الْبَاءِ أَيِ الْحُلْقُومُ، لِأَنَّ أَسْرَارَ حَقِيقَةِ التَّوْحِيدِ مِمَّا يَعْسُرُ التَّعْبِيرُ عَنْهُ عَلَى وَجْهِ الْمُرَادِ، وَلِذَا كُلُّ مَنْ نَطَقَ بِهِ وَقَعَ فِي تَوْهِيمِ الْحُلُولِ وَالْإِلْحَادِ، إِذَ فَهْمُ الْعَوَامِّ قَاصِرٌ عَنْ إِدْرَاكِ الْمَرَامِ، وَمِنْ كَلَامِ الصُّوفِيَّةِ صُدُورُ الْأَحْرَارِ قُبُورُ الْأَسْرَارِ، وَقَوْلُهُ: ” قُطِعَ ” يَحْتَمِلُ الْإِخْبَارَ مِمَّا يُتَوَقَّعُ، وَيَحْتَمِلُ الدُّعَاءَ مُبَالَغَةً فِي إِسْرَارِ الْأَسْرَارِ كَمَا هُوَ دَأْبُ الْخُلَّصِ مِنَ الْأَبْرَارِ، وَقِيلَ إِنَّهُ عِلْمٌ يَتَعَلَّقُ بِالْمُنَافِقِينَ بِأَعْيَانِهِمْ أَوْ بِوِلَادَةِ الْجَوْرِ مِنْ بَنِي أُمَيَّةَ أَوْ بِفِتَنٍ أُخْرَى فِي زَمَنِهِ، وَقَالَ الْأَبْهَرِيُّ: حَمَلَ الْعُلَمَاءُ الْوِعَاءَ الَّذِي لَمْ يَبُثَّهُ عَلَى الْأَحَادِيثِ الَّتِي فِيهَا يَتَبَيَّنُ أَسَامِي أُمَرَاءِ الْجَوْرِ وَأَحْوَالُهُمْ وَذَمُّهُمْ، وَكَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ يُكَنِّي عَنْ بَعْضِهِ وَلَا يُصَرِّحُ بِهِ خَوْفًا عَلَى نَفْسِهِ مِنْهُمْ كَقَوْلِهِ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ رَأْسِ السِّتِّينَ، وَإِمَارَةِ الصِّبْيَانِ، يُشِيرُ إِلَى خِلَافَةِ يَزِيدَ بْنِ مُعَاوِيَةَ لِأَنَّهَا كَانَتْ سَنَةَ سِتِّينَ مِنَ الْهِجْرَةِ، وَاسْتَجَابَ اللَّهُ دُعَاءَ أَبِي هُرَيْرَةَ فَمَاتَ قَبْلَهَا بِسَنَةٍ (يَعْنِي مَجْرَى الطَّعَامِ) . تَفْسِيرٌ مِنْ بَعْضِ رُوَاةِ الْحَدِيثِ (رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ) . لَكِنْ قَالَ الْعَسْقَلَانِيُّ: زَادَ فِي رِوَايَةِ الْمُسْتَمْلِي، قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: الْبُلْعُومُ مَجْرَى الطَّعَامِ وَعَلَى هَذَا لَا يَخْفَى مَا فِي الْمِشْكَاةِ إِذْ يُفْهَمُ مِنْهُ أَنَّ تِلْكَ الْعِبَارَةَ مِنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَوْ أَحَدِ رُوَاتِهِ وَلَا يُفْهَمُ مِنْهُ أَنَّهَا لِلْبُخَارِيِّ، وَاللَّهُ أَعْلَمُ.
٥٩٥١ – وَعَنْ سَعْدِ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ، قَالَ: لَمَّا كَانَ أَيَّامُ الْحَرَّةِ لَمْ يُؤَذَّنْ فِي مَسْجِدِ النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – ثَلَاثًا وَلَمْ يُقَمْ، وَلَمْ يَبْرَحْ سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ الْمَسْجِدَ، وَكَانَ لَا يَعْرِفُ وَقْتَ الصَّلَاةِ إِلَّا بِهَمْهَمَةٍ يَسْمَعُهَا مِنْ قَبْرِ النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ.
٥٩٥١ – (وَعَنْ سَعِيدِ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ) ، قَالَ الْمُؤَلِّفُ: تَنُوخِيٌّ دِمَشْقِيٌّ، كَانَ فَقِيهَ أَهْلِ الشَّامِ فِي زَمَنِ الْأَوْزَاعِيِّ بَعْدَهُ. وَقَالَ أَحْمَدُ: لَيْسَ بِالشَّامِ أَصَحَّ حَدِيثًا مِنْهُ وَمِنَ الْأَوْزَاعِيِّ، وَهُوَ وَالْأَوْزَاعِيُّ عِنْدِي سَوَاءٌ، وَكَانَ سَعِيدٌ بَكَّاءً، فَسُئِلَ فَقَالَ: مَا قُمْتُ إِلَى الصَّلَاةِ إِلَّا مُثِّلَتْ لِي جَهَنَّمُ. (قَالَ: لَمَّا كَانَ) ، أَيْ: وَقَعَ (أَيَّامَ الْحَرَّةِ) : بِفَتْحٍ فَتَشْدِيدٍ. قَالَ الطِّيبِيُّ: هُوَ يَوْمٌ مَشْهُورٌ فِي الْإِسْلَامِ أَيَّامَ يَزِيدَ بْنِ مُعَاوِيَةَ لَمَّا نَهَبَ الْمَدِينَةَ عَسْكَرٌ مِنْ أَهْلِ الشَّامِ نَدَبَهُمْ لِقِتَالِ أَهْلِ الْمَدِينَةِ مِنَ الصَّحَابَةِ وَالتَّابِعِينَ، وَأَمَرَ مُسْلِمُ بْنُ عُيَيْنَةَ الْمُرِّيُّ فِي ذِي الْحِجَّةِ سَنَةَ ثَلَاثٍ وَسِتِّينَ، وَعَقِيبَهَا هَلَكَ يَزِيدُ، وَالْحَرَّةُ هَذِهِ أَرْضٌ بِظَاهِرِ الْمَدِينَةِ بِهَا حِجَارَةٌ سُودٌ كَثِيرَةٌ وَقَعَتْ فِيهَا هَذِهِ الْوَقْعَةُ (لَمْ يُؤَذَّنْ فِي مَسْجِدِ النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -) : بِصِيغَةِ الْمَجْهُولِ. أَيْ: لَمْ يُؤَذِّنْ أَحَدٌ فِيهِ لِأَجْلِ الْفِتْنَةِ (ثَلَاثًا) ، أَيْ: ثَلَاثَ لَيَالٍ بِأَيَّامِهَا (وَلَمْ يُقَمْ) : عَلَى بِنَاءِ الْمَفْعُولِ مِنَ الْإِقَامَةِ أَيْ: وَلَمْ يُقِمْ أَحَدٌ لِلصَّلَاةِ أَيْضًا (وَلَمْ يَبْرَحْ) : بِفَتْحِ الرَّاءِ لَمْ يُفَارِقْ (سَعِيدُ بْنُ الْمُسَيَّبِ الْمَسْجِدَ) : وَكَانَ النَّاسُ يَقُولُونَ فِي حَقِّهِ: إِنَّهُ شَيْخٌ مَجْنُونٌ. قَالَ الْمُؤَلِّفُ: كَانَ سَيِّدَ التَّابِعِينَ جَمَعَ بَيْنَ الْفِقْهِ وَالْحَدِيثِ وَالزُّهْدِ وَالْوَرَعِ وَالْعِبَادَةِ لَقِيَ جَمَاعَةً كَثِيرَةً مِنَ الصَّحَابَةِ، وَرَوَى عَنْهُمْ وَعَنِ الزُّهْرِيِّ، وَكَثِيرٍ مِنَ التَّابِعِينَ وَغَيْرِهِمْ، حَجَّ أَرْبَعِينَ حَجَّةً مَاتَ سَنَةَ ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ. (وَكَانَ) ، أَيْ: سَعِيدٌ فِي ذَلِكَ الْوَقْتِ الشَّدِيدِ (لَا يَعْرِفُ وَقْتَ الصَّلَاةِ إِلَّا بِهَمْهَمَةٍ) ، أَيْ: بِصَوْتٍ خَفِيٍّ لَا يُفْهَمُ (يَسْمَعُهَا مِنْ قَبْرِ النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -. رَوَاهُ الدَّارِمِيُّ) .
٥٣٨٨ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ – قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” «هَلَكَةُ أُمَّتِي عَلَى يَدَيْ غِلْمَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ» “. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ.
٥٣٨٨ – (وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ تَعَالَى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” هَلَكَةُ أُمَّتِي “) بِفَتْحِ الْهَاءِ وَاللَّامِ أَيْ: هَلَاكُهُمْ، وَالْمُرَادُ بِالْأُمَّةِ هُنَا الصَّحَابَةُ ; لِأَنَّهُمْ خِيَارُ الْأُمَّةِ وَأَكَابِرُ الْأَئِمَّةِ (” عَلَى يَدَيْ “) تَثْنِيَةٌ مُضَافَةٌ إِلَى (” غِلْمَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ “) بِكَسْرِ الْغَيْنِ جَمْعُ غُلَامٍ، أَيْ: عَلَى أَيْدِي الشُّبَّانِ الَّذِينَ مَا وَصَلُوا إِلَى مَرْتَبَةِ كَمَالِ الْعَقْلِ، وَالْأَحْدَاثِ السَّنِّ، الَّذِينَ لَا مُبَالَاةَ لَهُمْ بِأَصْحَابِ الْوَقَارِ وَأَرْبَابِ النُّهَى، وَالظَّاهِرُ أَنَّ الْمُرَادَ مَا وَقَعَ بَيْنَ عُثْمَانَ – رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ – وَقَتَلَتِهِ، وَبَيْنَ عَلِيٍّ وَالْحَسَنِ – رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُمَا – وَمَنْ قَاتَلَهُمْ. وَقَالَ الْمُظْهِرُ: لَعَلَّهُ أُرِيدَ بِهِمُ الَّذِينَ كَانُوا بَعْدَ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ مِثْلَ يَزِيدَ وَعَبْدِ الْمَلَكِ بْنِ مَرْوَانَ وَغَيْرِهِمَا. (رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ) ، وَلَفْظُ الْجَامِعِ: ” «هَلَاكُ أُمَّتِي عَلَى يَدَيْ غِلْمَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ» “. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبُخَارِيُّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ.
٣٧١٦ – وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: «تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ رَأْسِ السَّبْعِينَ وَإِمَارَةِ الصِّبْيَانِ» . رَوَى الْأَحَادِيثَ السِّتَّةَ أَحْمَدُ وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ حَدِيثَ مُعَاوِيَةَ فِي دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ.
٣٧١٦ – (وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – «تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ رَأْسِ السَّبْعِينَ» ) ; أَيْ مِنْ فِتْنَةٍ تَنْشَأُ فِي ابْتِدَاءِ السَّبْعِينَ مِنْ تَارِيخِ الْهِجْرَةِ، أَوْ وَفَاتِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ، (وَإِمَارَةِ الصِّبْيَانِ) بِكَسْرِ أَوَّلِهِ ; أَيْ وَمِنْ حُكُومَةِ الصِّغَارِ الْجُهَّالِ كَيَزِيدَ بْنِ مُعَاوِيَةَ، وَأَوْلَادِ الْحَكَمِ بْنِ مَرْوَانَ، وَأَمْثَالِهِمْ وَأَغْرَبَ الطِّيبِيُّ حَيْثُ قَالَ: قَوْلُهُ ” وَإِمَارَةِ الصِّبْيَانِ ” حَالٌ ; أَيْ وَالْحَالُ أَنَّ الصِّبْيَانَ أُمَرَاءُ يُدَبِّرُونَ أَمْرَ أُمَّتِي، وَهُمْ أُغَيْلِمَةٌ مِنْ قُرَيْشٍ، رَآهُمُ النَّبِيُّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فِي مَنَامِهِ يَلْعَبُونَ عَلَى مِنْبَرِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ، وَقَدْ جَاءَ فِي تَفْسِيرِ قَوْلِهِ تَعَالَى: {وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلَّا فِتْنَةً لِلنَّاسِ} [الإسراء: ٦٠] أَنَّهُ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – رَأَى فِي الْمَنَامِ ; أَنَّ وَلَدَ الْحَكَمِ يَتَدَاوَلُونَ الْمِنْبَرَ كَمَا يَتَدَاوَلُ الصِّبْيَانُ الْكُرَةَ، (رَوَى الْأَحَادِيثَ السِّتَّةَ) ; أَيْ مِنْ أَوَّلِ الْفَصْلِ (أَحْمَدُ) وَوَافَقَهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْحَدِيثِ الْأَوَّلِ، وَرَوَى الطَّبَرَانِيُّ وَالضِّيَاءُ عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ، وَلَفْظُهُ «إِنْ شِئْتُمْ أَنْبَأْتُكُمْ عَنِ الْإِمَارَةِ، وَمَا هِيَ ; أَوَّلُهَا مَلَامَةٌ، وَثَانِيهَا نَدَامَةٌ، وَثَالِثُهَا عَذَابُ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، إِلَّا مَنْ عَدَلَ» . (وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ حَدِيثَ مُعَاوِيَةَ فِي دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ) وَأَخْرَجَ ابْنُ عَسَاكِرَ بِسَنَدٍ وَاهٍ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: «كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – وَعِنْدَهُ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ وَعُثْمَانُ وَمُعَاوِيَةُ، إِذْ أَقْبَلَ عَلِيٌّ فَقَالَ النَّبِيُّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – لِمُعَاوِيَةَ: أَتُحِبُّ عَلِيًّا؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: إِنَّهَا سَتَكُونُ بَيْنَكُمَا هُنَيَّةٌ، قَالَ مُعَاوِيَةُ: فَمَا بَعْدَ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: عَفْوُ اللَّهِ وَرِضْوَانُهُ، قَالَ: رَضِينَا بِقَضَاءِ اللَّهِ فَنَزَلَ ; {وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلُوا وَلَكِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ} [البقرة: ٢٥٣] » كَذَا فِي الدُّرِّ الْمَنْثُورِ فِي التَّفْسِيرِ الْمَأْثُورِ.
٣٧٠٠ – وَعَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: «أُعِيذُكَ بِاللَّهِ مِنْ إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ، قَالَ: وَمَا ذَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: أُمَرَاءُ سَيَكُونُونَ مِنْ بَعْدِي، مَنْ دَخَلَ عَلَيْهِمْ فَصَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ، فَلَيْسُوا مِنِّي، وَلَسْتُ مِنْهُمْ، وَلَنْ يَرِدُوا عَلَيَّ الْحَوْضَ، وَمَنْ لَمْ يَدْخُلْ عَلَيْهِمْ وَيُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ، فَأُولَئِكَ مِنِّي، وَأَنَا مِنْهُمْ، وَأُولَئِكَ يَرِدُونَ عَلَيَّ الْحَوْضَ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ.
٣٧٠٠ – (وَعَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ) بِضَمٍّ فَسُكُونٍ قَالَ الْمُصَنِّفُ: نَزَلَ الْكُوفَةَ وَمَاتَ بِالْمَدِينَةِ سَنَةَ إِحْدَى وَخَمْسِينَ، وَهُوَ ابْنُ خَمْسٍ وَسَبْعِينَ سَنَةً، رَوَى عَنْهُ خَلْقٌ كَثِيرٌ مِنَ الصَّحَابَةِ وَالتَّابِعِينَ، (قَالَ: قَالَ لِي) ; أَيْ وَحْدِي، أَوْ مُخَاطِبًا لِي، (رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – أُعِيذُكَ بِاللَّهِ مِنْ إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ) ; أَيْ مِنْ عَمَلِهِمْ، أَوْ مِنَ الدُّخُولِ عَلَيْهِمْ، أَوِ اللُّحُوقِ بِهِمْ، وَالسُّفَهَاءُ الْجُهَّالُ عِلْمًا وَعَمَلًا، وَقَالَ الطِّيبِيُّ: السُّفَهَاءُ الْخِفَافُ الْأَحْلَامِ، وَفِي النِّهَايَةِ السَّفَهُ فِي الْأَصْلِ ; الْخِفَّةُ وَالطَّيْشُ، وَسُفِّهَ فُلَانٌ رَأْيُهُ إِذَا كَانَ مُضْطَرِبًا لَا اسْتِقَامَةَ لَهُ، وَالسَّفِيهُ الْجَاهِلُ، (قَالَ) ; فِيهِ الْتِفَاتٌ، أَوْ تَجْرِيدٌ، إِذْ حَقُّهُ أَنْ يَقُولَ: قُلْتُ (وَمَا ذَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ) ; أَيْ ; أَيُّ شَيْءٍ مَا ذَكَرْتَهُ مِنْ إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ؟ وَقَالَ الطِّيبِيُّ: إِشَارَةٌ إِلَى مَعْنَى إِمَارَةِ السُّفَهَاءِ، وَهُوَ فِعْلُهُمُ الْمُسْتَفَادُ مِنْهُ مِنَ الظُّلْمِ وَالْكَذِبِ، وَمَا يُؤَدِّي إِلَيْهِ جَهْلُهُمْ وَطَيْشُهُمْ (قَالَ أُمَرَاءُ سَيَكُونُونَ مِنْ بَعْدِي) ; أَيْ سُفَهَاءُ ; مَوْصُوفُونَ بِالْكَذِبِ وَالظُّلْمِ، (مَنْ دَخَلَ عَلَيْهِمْ) ; أَيْ مِنَ الْعُلَمَاءِ وَغَيْرِهِمْ، (فَصَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ) بِفَتْحٍ فَكَسَرٍ، وَيَجُوزُ بِكَسْرٍ فَسُكُونٍ، وَالْأَوَّلُ أَصَحُّ وَأَفْصَحُ ; لِعَدَمِ وُرُودِ غَيْرِهِ فِي الْقُرْآنِ، وَقِيلَ الْكَذِبُ: إِذَا أُخِذَ فِي مُقَابَلَةِ الصِّدْقِ كَانَ بِسُكُونِ الذَّالِ لِلْازْدِوَاجِ، وَإِذَا أُخِذَ وَحْدَهُ كَانَ بِالْكَسْرِ، (وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ) ; أَيْ بِالْإِفْتَاءِ وَنَحْوِهِ، (فَلَيْسُوا مِنَّي وَلَسْتُ مِنْهُمْ) ; أَيْ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ بَرَاءَةٌ وَنَقْضُ ذِمَّةٍ، (وَلَنْ يَرِدُوا) وَفِي نُسْخَةٍ، وَلَمْ يَرِدُوا مِنَ الْوُرُودِ ; أَيْ لَمْ يَمُرُّوا (عَلَيَّ) بِتَشْدِيدِ الْيَاءِ بِتَضْمِينِ مَعْنَى الْعَرْضِ ; أَيْ لَنْ يَرِدُوا عَلَيَّ مَعْرُوضِينَ، (الْحَوْضَ) ; أَيْ حَوْضَ الْكَوْثَرِ فِي الْقِيَامَةِ، أَوْ فِي الْجَنَّةِ، (وَمَنْ لَمْ يَدْخُلْ عَلَيْهِمْ وَلَمْ يُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ ; فَأُولَئِكَ مِنِّي، وَأَنَا مِنْهُمْ، وَأُولَئِكَ يَرِدُونَ عَلَيَّ الْحَوْضَ) ، قَالَ الطِّيبِيُّ: أَدْخَلَ الْفَاءَ فِي خَبَرِ (مَنْ) لِتَضَمُّنِهِ مَعْنَى الشَّرْطِ، زَادَ فِيهِ (أُولَئِكَ) وَكَرَّرَهُ لِمَزِيدِ تَقْرِيرِ الْعِلَّةِ ; لِأَنَّ اسْمَ الْإِشَارَةِ فِي مِثْلِ هَذَا الْمَقَامِ، مُؤْذِنٌ بِأَنَّ مَا يَرِدُ عَقِيبَهُ جَدِيرٌ بِمَا قَبْلَهُ ; لِاتِّصَافِهِ بِالْخِصَالِ الْمَذْكُورَةِ كَقَوْلِهِ تَعَالَى: {أُولَئِكَ عَلَى هُدًى مِنْ رَبِّهِمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ} [البقرة: ٥] بَعْدَ قَوْلِهِ: {الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ} [البقرة: ٣] إِلَى مَا يَتَّصِلُ بِهِ، اسْتِحْمَادًا عَلَى فِعْلِهِمْ مِنَ الِاجْتِنَابِ عَنْهُمْ، وَعَنْ تَصْدِيقِهِمْ وَمُعَاوَنَتِهِمْ، قَالَ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ: لَا نُخَالِطُ السُّلْطَانَ وَلَا مَنْ يُخَالِطُهُ، وَقَالَ: صَاحِبُ الْقَلَمِ، وَصَاحِبُ الدَّوَاةِ، وَصَاحِبُ الْقِرْطَاسِ، وَصَاحِبُ اللِّيطَةِ بَعْضُهُمْ شُرَكَاءُ بَعْضُ، وَرُوِيَ أَنَّ خَيَّاطًا سَأَلَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الْمُبَارَكِ عَنْ خِيَاطَتِهِ لِلْحُكَّامِ ; هَلْ أَنَا دَاخِلٌ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى: وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا؟ قَالَ: بَلْ يَدْخُلُ فِيهِ مَنْ يَبِيعُكَ الْإِبْرَةَ، قَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ: مَنْ رَضِيَ بِأَمْرِ الظَّالِمِ وَإِنْ غَابَ عَنْهُ ; كَانَ كَمَنْ شَهِدَهُ وَتَلَا الْآيَةَ (رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ) .
٣٦٩٣ – وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ قَالَ: «لَمَّا بَلَغَ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – أَنَّ أَهْلَ فَارِسَ قَدْ مَلَّكُوا عَلَيْهِمْ بِنْتَ كِسْرَى قَالَ: لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا أَمْرَهُمُ امْرَأَةً» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ.
٣٦٩٣ – (وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ) بِالتَّاءِ (قَالَ لَمَّا بَلَغَ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – أَنَّ أَهْلَ فَارِسَ) بِكَسْرِ الرَّاءِ وَفَتْحِ السِّينِ (قَدْ مَلَّكُوا) بِتَشْدِيدِ اللَّامِ ; أَيْ جَعَلُوا الْمَلِكَ (عَلَيْهِمْ بِنْتَ كِسْرَى) بِكَسْرِ الْكَافِ وَيَفْتَحُ، مَلِكُ الْفُرْسِ مُعَرَّبٌ خِسْرُوا ; أَيْ وَاسِعُ الْمُلْكِ ذَكَرَهُ فِي الْقَامُوسِ، وَفِي النِّهَايَةِ لَقَبُ مَلِكِ الْفُرْسِ، يَعْنِي كَمَا أَنَّ قَيْصَرَ لَقَبُ مَلِكِ الرُّومِ، وَفِرْعَوْنَ لَقَبُ مَلِكِ مِصْرَ، وَتُبَّعَ لِمَلِكِ الْيَمَنِ، (قَالَ لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا) بِالتَّشْدِيدِ ; أَيْ فَوَّضُوا (أَمْرَهُمْ) ; أَيْ أَمْرَ مُلْكِهِمْ (امْرَأَةً) فِي شَرْحِ السُّنَّةِ ; لَا تَصْلُحُ الْمَرْأَةُ أَنْ تَكُونَ إِمَامًا، وَلَا قَاضِيًا ; لِأَنَّهُمَا مُحْتَاجَانِ إِلَى الْخُرُوجِ لِلْقِيَامِ بِأُمُورِ الْمُسْلِمِينَ، وَالْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ لَا تَصْلُحُ لِذَلِكَ، وَلِأَنَّ الْمَرْأَةَ نَاقِصَةٌ ; وَالْقَضَاءُ مِنْ كَمَالِ الْوِلَايَاتِ ; فَلَا يَصْلُحُ لَهَا إِلَّا الْكَامِلُ مِنَ الرِّجَالِ. (رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ) وَكَذَا أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالنَّسَائِيُّ.
_______