পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর: কাদের সাথে পর্দা করতে হবে? (চতুর্থ পর্ব)
প্রশ্ন :- মহিলাদের জন্য কোন কোন পুরুষের সাথে পর্দা রয়েছে, আর কোন পুরুষের সাথে পর্দা নেই?
উত্তর:- মহিলাদের জন্য প্রত্যেক অচেনা বালিগ পুরুষের সাথে পর্দা রয়েছে। অচেনা বলতে; যে মাহরামের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত নয়। মাহরাম দ্বারা সে পুরুষগণ উদ্দেশ্য, যাদের সাথে সব সময়ের জন্য বিয়ে হারাম। চাই সে হারাম বংশগত হোক বা অন্য কোন কারণে হোক। যেমন; দুধের সম্পর্ক অথবা শশুড়ালী সম্পর্ক হোক।
প্রশ্ন :- মাহরামের মধ্যে কোন কোন লোক অন্তর্ভূক্ত?
উত্তর:- মাহরামের মধ্যে তিন প্রকারের লোক অন্তর্ভূক্ত:
(১) বংশের কারণে যাদের সাথে সবসময়ের জন্য বিয়ে হারাম।
(২) দুধের সম্পর্কের কারণে যাদের সাথে বিয়ে হারাম।
(৩) ‘মুসাহারাত’ অর্থাৎ শশুড়ালী সম্পর্কের কারণে যাদের সাথে বিয়ে হারাম। যেমন; শশুড়ের জন্য তার পুত্রবধু অথবা শাশুড়ীর জন্য তার মেয়ের জামাই। ‘মুসাহারাত’কে এভাবে বুঝে নেয়া যায়, মেয়ে যেই ছেলের সাথে বিয়ে করে, সেই ছেলের উসুল (মূল) ও ফুরু (শাখা)। উসুল দ্বারা উদ্দেশ্য পিতা, দাদা, পিতার দাদা এভাবে উপরস্থ পর্যন্ত, আর ফুরু দ্বারা উদ্দেশ্য সন্তানের সন্তান এভাবে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত) তার জন্য সব সময়ের জন্য হারাম হয়ে যায়। অনূরূপভাবে স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর উসুল (মূল) ও ফুরুর (শাখার) সাথেও বিয়ে সব সময়ের জন্য হারাম। এছাড়া যিনা এবং যিনার দিকে আহ্বানকারী কর্ম (যেমন; উত্তেজনা সহকারে শরীরকে আবরণ ব্যতিত স্পর্শ করা বা চুম্বন করার) মাধ্যমেও পুরুষ ও মহিলার জন্যও এই বিধান কার্যকর হবে। অর্থাৎ ‘মুসাহারাতে’র হারাম কর্মের বিধান কার্যকর হবে। বংশগত মাহরাম ব্যতিত উভয় প্রকারের মাহরামের সাথে পর্দা ওয়াজিব নয় এবং নিষেধাজ্ঞা নেই। বিশেষ করে যখন মেয়ে যুবতী হয়ে যায় বা ফিতনার আশংকা থাকে তবে পর্দা করবে।
আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “যার সাথে সবসময়ের জন্য বিয়ে হারাম তার সাথে কখনও বিয়ে হালাল হতে পারে না। কিন্তু হারাম হওয়ার কারণ (অর্থাৎ বিয়ে হারাম হওয়ার কারণে) রক্তের সম্পর্ক নয় বরং দুধের সম্পর্ক যেমন; দুধের সম্পর্কের বাবা, দাদা, নানা, ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নে, চাচা, মামা, ছেলে, নাতি, নাতনি অথবা শশুড়ালী সম্পর্ক যেমন; শশুড়, শাশুড়ী, মেয়ের জামাই, পুত্রবধু তাদের সবার সাথেও পর্দা ওয়াজিব নয়, অর্থাৎ তার সাথে পর্দা করা না করা উভয়টি জায়েয। আর কিশোরী অবস্থায় বা ফিতনার আশংকা থাকাবস্থায় পর্দা করাই উত্তম। বিশেষ করে দুধের সম্পর্কের সাথে। কেননা, লোকদের নজরে তাদের মর্যাদা অনেক কম হয়ে থাকে।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ২৩৫ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন :- বংশীয় মাহরামের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তি অন্তর্ভূক্ত?
উত্তর:- বংশীয় মাহরামের মধ্যে চার প্রকারের লোক অন্তর্ভূক্ত;
(১) আপন সন্তানাদী (অর্থাৎ ছেলে মেয়ে) এবং নিজের ছেলের ছেলে (অর্থাৎ নাতি-নাতনি) এমনিভাবে নিম্নপর্যায় পর্যন্ত,
(২) নিজের মা-বাবা এবং নিজের মা-বাবার পিতা-মাতা (অর্থাৎ দাদা-দাদী, নানা-নানি) উঁচ্চ পর্যায় পর্যন্ত,
(৩) নিজের মা-বাবার সন্তানাদি (অর্থাৎ ভাই-বোন চাই তারা আপন ভাই-বোন হোক বা সৎ ভাই-বোন অর্থাৎ বৈপিত্রিয় অথবা বৈমাত্রিয় ভাই-বোন) এবং এমনিভাবে মা-বাবার সন্তানের সন্তানাদী (অর্থাৎ ভাতিজা-ভাতিজী, ভাগ্নে-ভাগ্নী তার আপন ভাই বোনের হোক বা সৎ ভাই বোনের) এভাবে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত।
(৪) আপন দাদা-দাদী, নানানানীর সন্তানাদী (অর্থাৎ চাচা, ফুফী, মামা, খালা এই সম্পর্ক আপন হোক বা সৎ) তবে চাচা, ফুফী, মামা, খালার সন্তানেরা মাহরাম নয়।” (অপ্রকাশিত ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১১তম খন্ড, ৪৬৪ পৃষ্ঠা)
বিঃ দ্রঃ- বর্ণনাকৃত বংশ বহির্ভূত মাহরামের মধ্যে পুরুষ মহিলাদের জন্য এবং মহিলারা পুরুষের জন্য হারাম।
প্রশ্ন :- শশুড়ের সাথে বউয়ের কি পর্দা রয়েছে?
উত্তর:- শশুড়ালী সম্পর্কের কারণে পর্দা নাই। তবে পর্দা করলে সমস্যা নাই। বরং যৌবনাবস্থায় বা ফিতনার সম্ভাবনা থাকলে অর্থাৎ বর্তমান যুগে পর্দা করাই উত্তম। কেননা, অবস্থা বড়ই শোচনীয়, শশুড় ও বউয়ের “বিভিন্ন” সমস্যার কথা আজকাল শুনা যায়। যা সাধারণত একতরফা ভাবে অর্থাৎ শশুড়ের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। অনেক সময় শশুড় একা সুযোগ পেয়ে বউয়ের গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করে। এজন্য বর্তমান যুগে বউয়েরও শশুড়ের সামনে বেপরোয়া থাকা উচিত নয়। বিশেষকরে বউদের জন্য ঐ শশুড় সবচেয়ে বেশি বিপদজনক হতে পারে, যারা তার স্ত্রীর (শাশুড়ীর) সঙ্গ হতে দূরে বা বঞ্চিত। (দয়া করে! বাহারে শরীয়াত ৭ম অধ্যায় থেকে মাহরামের বর্ণনার অংশটি পাঠ করুন।)
প্রশ্ন :- ইসলামী বোনের জন্য কি তার দেবর, ভাসুর, বোনের স্বামী, খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো ভাই, ফুফা এবং খালুর সাথেও পর্দা রয়েছে?
উত্তর:- জ্বী, হ্যাঁ! বরং এদের সাথে তো পর্দা বিষয়ে সাবধানতা আরও বেশি হওয়া উচিত। কেননা, পরিচিত থাকার কারণে পরস্পর সংকোচভাব কমে যায়, আর একারণেই অচেনা লোকদের তুলনায় অনেক গুন বেশি ফিতনার আশংকা থাকে। কিন্তু আফসোস! আজকাল তাদের সাথে পর্দা করার মনমানসিকতা একেবারেই নেই, যদি কোন মদীনার দিওয়ানি (মহিলা) পর্দা করার চেষ্টা করেও তবে তাকে বিভিন্ন ভাবে কষ্ট দেয়া হয়। কিন্তু সাহস হারানো উচিত নয়, কষ্টসাধ্য হলেও যদি সে সৌভাগ্যবান ইসলামী বোন শরয়ী পর্দা করার মধ্যে সফল হয়ে যায়। আর যখন সে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে তখন হতে পারে প্রিয় মুস্তফা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! এর শাহ্জাদী সায়্যিদাতুন নিসা, ফাতেমাতুয যাহরা ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬَﺎ তাকে শান ও শওকত সহকারে সংবর্ধনা জানাবেন, তাকে নিজের গলায় জড়িয়ে নিবেন এবং তাকে আমাদের প্রিয় আক্বা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! এর দরবারে পৌঁছিয়ে দিবেন।
কিউ করে বযমে শবস্থানে জিঁনা কি খোয়াহিশ,
জলওয়া য়ে ইয়ার জু শমএ শবে তনহায়ী হো। (যওকে নাত)
দেবর, ভাসুর, বোনের স্বামী, খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো ভাই, ফুফা এবং খালুর সাথে পর্দার তাগিদ দিতে গিয়ে আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “ভাসুর, দেবর, বোনের স্বামী, ফুফা, খালু, চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাই এ সমস্ত লোক মহিলাদের জন্য পর-পুরুষ বরং তাদের দ্বারা ক্ষতি অন্যান্য পুরুষের তুলনায় অধিক হয়ে থাকে। কেননা, বাহিরের লোক ঘরে প্রবেশ করতে দ্বিধাবোধ করে কিন্তু বর্ণিত আত্মিয়রা পরস্পর পূর্ব পরিচিত হওয়ার কারণে নির্ভয় থাকে। মহিলাগণ অপরিচিত লোকদের সাথে খুব তাড়াতাড়ি সংকোচ কাটিয়ে উঠতে পারে না, কিন্তু বর্ণিত পুরুষদের সাথে সংকোচ ভাব আগে থেকেই কেটে যায়। এজন্য যখন রাসূলুল্লাহ্ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! পর নারীদের সামনে যেতে বারণ করেছেন, তখন এক সাহাবী আরয করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! ভাসুর, দেবরের জন্য কি হুকুম? ইরশাদ করলেন: ভাসুর, দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২তম খন্ড, ২১৭ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন :- শশুড় বাড়ীতে দেবর, ভাসুর ইত্যাদির সাথে কিভাবে পর্দা করা যায়? সারাদিন পর্দার মধ্যে থাকা খুব কঠিন, পরিবারের কাজ কর্ম করার সময় কিভাবে চেহারাকে গোপন করা যায়?
উত্তর:- ঘরে থাকাবস্থায়ও বিশেষ করে দেবর ও ভাসুর ইত্যাদির ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। “সহীহ বুখারী” শরীফে হযরত সায়্যিদুনা উকবা বিন আমের ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, হুযুর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! ইরশাদ করেন: “মহিলাদের নিকট যাওয়া থেকে বিরত থাকো।” এক ব্যক্তি আরয করল: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! দেবরের ব্যাপারে কি হুকুম। ইরশাদ করলেন: “দেবর মৃত্যুর সমতুল্য।” (বুখারী, ৩য় খন্ড, ৪৭২ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৫২৩২)
দেবরের জন্য নিজের ভাবীর সামনে যাওয়া যেন মৃত্যুর সম্মুখীন হওয়া। কেননা, এই পর্যায়ে ফিতনার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। মুফতীয়ে আযম পাকিস্তান হযরত ওয়াকারে মিল্লাত মাওলানা ওয়াকার উদ্দিন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “না-মাহরাম আত্মীয়ের সাথে চেহারা, হাতের তালু, কব্জি, পা এবং গোড়ালি ব্যতিত বাকী সব অঙ্গ পর্দা করা আবশ্যক। সৌন্দর্যতা ও সাজ-সজ্জাও যেন তাদের সামনে প্রকাশ করা না হয়।” (ওয়াকারুল ফতোয়া, ৩য় খন্ড, ১৫১ পৃষ্ঠা)
বর্ণিত আছে; “যে ব্যক্তি যৌন উত্তেজনা সহকারে কোন পরনারীর সৌন্দর্য ও মাধুর্যতার দিকে দেখবে, কিয়ামতের দিন তার চোখে আগুনের গলিত শিশা ঢেলে দেয়া হবে।” (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড, ৩৬৮ পৃষ্ঠা)
নিঃসন্দেহে ভাবীও পর-নারীর অন্তর্ভূক্ত। যে দেবর বা ভাসুর নিজের ভাবীকে ইচ্ছাকৃত ভাবে যৌন উত্তেজনা সহকারে দেখে, নিঃসংকোচ ভাবে মেলামেশা করে, হাসি-ঠাট্টা করে, তারা যেন আপন প্রতিপালকের কঠিন শাস্তিকে ভয় করে, দেরী না করে সত্যিকার তাওবা করে নেয়। ভাবী যদি দেবরকে ছোট ভাই আর ভাসুরকে বড় ভাই বলে, তবুও তা দ্বারা বেপর্দা এবং নিঃসংকোচতা জায়েয হবে না, বরং এমন কথাবার্তার ধরণও দূরত্বকে দূর করে নৈকট্য বাড়িয়ে দেয় এবং দেবর ও ভাবী কুদৃষ্টি, নিঃসংকোচতা, হাসি-ঠাট্টা ইত্যাদি গুনাহের সাগরে আরও অধিক পরিমাণে ডুবিয়ে দেয়। অথচ ভাসুর ও দেবর এবং ভাবী পরস্পরের মধ্যে কথাবার্তা বলাতেও একাধারে ভয়ের ঘন্টা বাজাতে থাকে। আল্লাহ্ তাআলার দয়ায় আমার কথা সবার অন্তরে গেঁথে যাক। দেবর ও ভাসুর এবং ভাবী ইত্যাদি সাবধান হোন। কেননা, হাদীস শরীফের ইরশাদ হয়েছে: ﺍَﻟْﻌَﻴْﻨَﺎﻥِ ﺗَﺰْﻧِﻴَﺎﻥ ” ” অর্থাৎ চোখও যিনা করে।” (মুসনদে ইমাম আহমদ, ৩য় খন্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৮৮৫২)
যাই হোক যদি একই পরিবারে থাকাবস্থায় মহিলাদের জন্য কাছের না-মাহরাম আত্মীয়ের সাথে পর্দা করা কঠিন হয়, তবে চেহারা খোলার অনুমতি তো রয়েছে। কিন্তু কাপড় যেন এতো পাতলা না হয়, যার দ্বারা শরীর অথবা মাথার চুল ইত্যাদির রং প্রকাশ পায় অথবা এমন আটোসাঁটো না হয় যাতে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, শরীরের আকৃতি, গঠন এবং বুকের উত্থান ইত্যাদি প্রকাশ পায়।
প্রশ্ন :- আজকাল পর্দানশীন মহিলাকে “হুযুরনী” বলে ঘরে হাসি-ঠাট্টা করা হয়ে থাকে। কখনো মহিলাদের কোন অনুষ্ঠানে মাদানী বোরকা পরিহিতা ইসলামী বোন যদি চলে যায়, তবে কেউ কেউ বলে থাকে; আরে! এটা কি পরিদান করেছো? খুলে ফেল এটা। আবার কেউ বলে; হয়েছে! আমরা জানি যে তুমি অনেক পর্দানশীন হয়েছো, এখন ছাড়তো এসব পর্দা-টর্দা। কেউ বলে; দুনিয়া উন্নতি করছে আর তুমি সেই পুরোনো ভাব ধরে রেখেছো ইত্যাদি। এরকম মনে কষ্ট দানকারী কথা দ্বারা শরয়ী পর্দানশীন মহিলার মন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। এ অবস্থায় তার কি করা উচিত?
উত্তর:- আসলেই এটা খুবই নাজুক সময়। শরয়ী পর্দানশীন ইসলামী বোন অনেক কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে, কিন্তু সাহস না হারানো উচিত। হাসি-ঠাট্টা অথবা আপত্তিকারীদের সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া বা রাগান্বিত হয়ে ঝগড়া করা মারাত্মক ক্ষতিকর যে, এরূপ ব্যবহারে সমস্যা সমাধান হওয়ার পরিবর্তে অধিক বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমতাবস্থায় এটা মনে করে মনকে শান্তনা দেয়া উচিত যে, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রিয় আক্বা, মাদানী মুস্তফা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ নবুয়তের প্রকাশ করেননি ততক্ষণ পর্যন্ত পথহারা কাফিরগণ তাঁকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতো এবং তাঁকে আমিন এবং সাদিক উপাধী দ্বারা স্মরণ করতো। হুযুর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! যখন প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দেয়া শুরু করলেন, তখনই কাফির ও মুশরিকরা বিভিন্ন ভাবে কষ্ট, হাসি-ঠাট্টা এবং গালিগালাজ করতে লাগলো, শুধু এতটুকু নয় বরং প্রাণ নাশের চেষ্টায়ও লিপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু কুরবান হয়ে যান! হুযুর পুরনূর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! এর উপর, তিনি কখনো সাহস হারাননি, সব সময় ধৈর্য সহকারেই কাজ করেছেন। এখন ইসলামী বোনেরা ধৈর্য ধারণ করে একটু চিন্তা করুন যে যতক্ষণ পর্যন্ত আমি ফ্যাশনকারীনী বেপর্দা নারী ছিলাম আমাকে কেউ হাসি-ঠাট্টা করতো না। আর যখনই আমি শরয়ী পর্দা করা শুরু করলাম, তখনই আমাকে কষ্ট দেয়া শুরু করলো। আল্লাহ্ তাআলার কৃতজ্ঞতা যে, আমার দ্বারা অত্যাচারের উপর ধৈর্য ধারণ করার সুন্নাত আদায় হচ্ছে। মাদানী আরয হলো যে, যেমনই আঘাত আসুক ধৈর্যহারা হবেন না, আর শরয়ী অনুমতি ছাড়া মুখে কিছু বলবেন না। হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত রয়েছে; আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: “হে আদম সন্তান! যদি তুমি প্রথম আঘাতে ধৈর্য ধারণ করো আর সাওয়াবের প্রত্যাশী হও, তবে আমি তোমার জন্য জান্নাত ছাড়া কোন প্রতিদানে সন্তুষ্ট নই।” (সুনানে ইবনে মাজাহ্, ২য় খন্ড, ২৬৬ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৫৯৭)
প্রশ্ন :- যেই ইসলামী বোনকে শরয়ী পর্দা ও সুন্নাতের উপর আমল ইত্যাদির কারণে সমাজে তুচ্ছ মনে করা হয় এবং বংশের লোকেরাও তাকে নিপীড়ন করে, সেই ইসলামী বোনের উৎসাহের জন্য কোন বেদনাদায়ক কাহিনী বর্ণনা করুন।
উত্তর:- যেই ইসলামী বোনকে পর্দা করার কারণে পরিবার ও বংশের পক্ষ থেকে কষ্ট দেয়া হয়, তার জন্য হযরত সায়্যিদাতুনা আছিয়া ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬَﺎ এর ঘটনায় যথেষ্ট শিক্ষা রয়েছে। যেমনিভাবে, হযরত সায়্যিদাতুনা আছিয়া ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬَﺎ ফিরআউনের স্ত্রী ছিলেন। যাদুকরদের পরাজিত হওয়া এবং ঈমান গ্রহণ করাতে তিনিও হযরত সায়্যিদুনা মুসা কলিমুল্লাহ্ ﻟٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এর প্রতি ঈমান আনয়ন করেন। যখন ফিরআউন এ ব্যাপারে জেনে গেলো তখন সে তাঁকে বিভিন্ন ধরণের শাস্তি দেয়া শুরু করলো। কোন ভাবে যেন তিনি ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬَﺎ ঈমান থেকে বিচ্যুত হন, কিন্তু তিনি নিজের ঈমানের উপর অটল রইলেন। অবশেষে ফিরআউন তাঁকে প্রচন্ড রোদে কাঁঠের চৌকির উপর শোয়াইয়ে উভয় হাত ও পায়ে লোহার পেরেক ঢুকিয়ে দিলো। অত্যাচারের মাত্রা এতই ভয়াবহ ছিলো যে, পবিত্র বুকের উপর আটা পেষার চাক্কি রেখে দিলো যেন নড়তে না পারে। এই কঠিনতর ও অসাধ্য কষ্টের পরও তার অবিচলতা একটুও এদিক সেদিক হয়নি। অসহ্য হয়ে আপন ক্ষমাশীল প্রতিপালকের দরবারে আরয করলেন:
ﺭَﺏِّ ﺍﺑْﻦِ ﻟِﻲ ﻋِﻨﺪَﻙَ ﺑَﻴْﺘًﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻭَﻧَﺠِّﻨِﻲ ﻣِﻦ ﻓِﺮْﻋَﻮْﻥَ ﻭَﻋَﻤَﻠِﻪِ ﻭَﻧَﺠِّﻨِﻲ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য তোমার নিকট জান্নাতে ঘর তৈরী করো এবং আমাকে ফিরআউন ও তার কর্ম থেকে মুক্তি দাও আর আমাকে যালিম লোকদের থেকে মুক্তি দান করো। (পারা: ২৮, সূরা: তাহরীম, আয়াত: ১১)
প্রখ্যাত মুফাস্সীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খান ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: আল্লাহ্ তাআলা তাঁর অর্থাৎ হযরত সায়্যিদাতুনা আছিয়ার ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬَﺎ উপর ফিরিশতা নিযুক্ত করে দেন, যারা তাঁর উপর ছায়া প্রদান করলেন এবং তার জান্নাতী ঘর তাঁকে দেখিয়ে দিলেন। যার কারণে তিনি সমস্ত কষ্টকে ভুলে গেলেন। কতিপয় বর্ণনায় এসেছে যে, তাঁকে স্ব-শরীরে আসমানে উঠানো হয়। হযরত সায়্যিদাতুনা আছিয়া ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬَﺎ জান্নাতে আমাদের প্রিয় নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর বিবাহ বন্ধনে থাকবেন। (নূরুল ইরফান, ৮৯৬ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর সদকায় আমাদের (বিনা হিসেবে) ক্ষমা হোক।
ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ
ইসলামী বোনেরা! বিপদাপদে ধৈর্য ধারণকারীদের উপর আজও আল্লাহ্ তাআলার দয়ার বহিঃপ্রকাশ হয়ে থাকে। এক ইসলামী বোনের লিখিত বর্ণনা নিজের মতো বর্ণনা করার চেষ্টা করছি; কোট আত্তারী (কোটরী, বাবুল ইসলাম সিন্ধু) এর এক ইসলামী বোনের বর্ণনা যে; ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ আমি দা’ওয়াতে ইসলামীকে ভালবাসি, তাই আমি একান্তভাবে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজ করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার সন্তানের বাবা অনুমতি দিতেন না। তারপরও আমি শরীয়াতের গন্ডির মধ্যে নিজের সামর্থানুযায়ী মাদানী কাজ করতাম। আমার সৌভাগ্য যে, ১৪৩০ হিজরীর পবিত্র সফর মাসে আমাদের এলাকার একটি ঘরে দা’ওয়াতে ইসলামীর ইসলামী বোনদের মাদানী কাফেলা আগমন করে। রুটিন অনুযায়ী দ্বিতীয় দিন অনুষ্ঠিতব্য তরবিয়্যতি ইজতিমায় আমারও অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জিত হলো। আমি সেখানে এই দোয়া করলাম যে, “হে আল্লাহ্! এই মাদানী কাফেলার বরকতে যেন আমার সন্তানের বাবা আমাকে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজ করার অনুমতি দিয়ে দেন।”
ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ সেই রাতেই আমার সন্তানের বাবা স্বপ্নে আমার মরহুমা আম্মাজান (অর্থাৎ তার শাশুড়ী যিনি তাকে সন্তানের দৃষ্টিতে দেখতেন) এর যিয়ারত হলো। মরহুমা বললেন: “তুমি আমার মেয়েকে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজ করতে দিচ্ছনা কেন? তাকে তা করার অনুমতি দিয়ে দাও।” আমার সন্তানের বাবা আমাকে এই স্বপ্নের কথা শুনিয়ে খুশি মনে দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজ করার অনুমতি দিয়ে দিলেন। এমনিভাবে ইসলামী বোনদের মাদানী কাফেলার বরকতে আমার মনের আশা পূরণ হলো।
কাফিলে মে যরা মাঙ্গো আ’কর দোয়া পাওগে নেমতে কাফিলে মেঁ চলো।
হোগা লুত্বফে খোদা আও বেহনো দোয়া মিলকে সারে করে কাফিলে মেঁ চলো।
ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ
ইসলামী বোনেরা! আপনারা দেখলেন তো! মাদানী কাফেলারও কিরূপ চমৎকার বাহার। ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ সেখানে দোয়া কবুল হয় মাদানী কাজের মাধ্যমে নেকীর দাওয়াত প্রসার করার উৎসাহ মারহাবা। কেননা, এতে সাওয়াবই সাওয়াব রয়েছে। এ ব্যাপারে ৪টি হাদীস শরীফ উপস্থাপন করছি;
(১) “নেকীর পথ প্রদর্শনকারী নেক কর্মসম্পাদনকারীর ন্যায়।” (তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৬৭৯)
(২) “যদি আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে হিদায়ত দান করেন, তবে তা তোমাদের জন্য তোমাদের নিকট লাল উট থাকার চেয়েও উত্তম।” (মুসলিম, ১৩১১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৪০৬)
(৩) “নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা, তাঁর ফিরিশতা, আসমান ও জমিনের সৃষ্ট জীব এমনকি পিঁপড়া তার গর্তের মধ্যে এবং মাছ সমূহ পানির মধ্যে লোকদেরকে নেকীর কাজ শিক্ষা দানকারীর উপর দরূদ প্রেরণ করে।” (তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৩১৪ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৬৯৪)
প্রখ্যাত মুফাস্সীর, হাকীমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “আল্লাহ্ তাআলার দরূদ দ্বারা তাঁর বিশেষ রহমত ও সৃষ্ট জীবের দরূদ দ্বারা বিশেষ রহমতের দোয়া উদ্দেশ্য।” (মিরআতুল মানাজিহ্, ১ম খন্ড, ২০০ পৃষ্ঠা)
(৪) “উত্তম সদকা হলো, মুসলমান ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করবে আর তা অপর মুসলমান ভাইকে শিক্ষা দেবে।” (সুনানে ইবনে মাযাহ, ১ম খন্ড, ১৫৮ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৪৩)
প্রশ্ন :- ঘরের মধ্যে পর্দার মন-মানসিকতা কিভাবে বানানো যায়?
উত্তর:- “ফযয়ানে সুন্নাত” এবং এই কিতাব “পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর” থেকে ঘর দরস চালু করে, মাকতাবাতুল মদীনা থেকে প্রকাশিত সুন্নাতে ভরা বয়ানের ক্যাসেট শুনিয়ে, ইনফিরাদী কৌশিশের মাধ্যমে ঘরের পুরুষদেরকে দা’ওয়াতে ইসলামীর সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফেলার মুসাফির বানিয়ে ঘরে মাদানী পরিবেশ তৈরী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। এর জন্য একাগ্রতার সাথে দোয়াও করতে থাকুন। নিজেকে এবং পরিবারের লোকদেরকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর ব্যাকুলতা তৈরী করুন এবং তার জন্য প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখুন। কিন্তু নম্রতা, নম্রতা এবং নম্রতাকে আবশ্যক করে নিন। শরীয়াতের বিনা অনুমতিতে কঠোরতা করা তো দুরের কথা তা কল্পনাও করবেন না। কেননা, সাধারণত যে কাজ নম্রতা সহকারে হয় তা কঠোরতা দ্বারা হয় না।
হে ফালাহ ও কামরানি নরমি ও আসানি মেঁ,
হার বানা কাম বিগাড় জাতা হে নাদানি মেঁ।
যাই হোক! নিজের পরিবার পরিজনকে সংশোধনের জন্য প্রত্যেক সম্ভাব্য ব্যবস্থা করা উচিত। ২৮ পারার সূরা তাহরিম এর ৬নং আয়াতে করীমায় আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻗُﻮﺍ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻫْﻠِﻴﻜُﻢْ ﻧَﺎﺭًﺍ ﻭَﻗُﻮﺩُﻫَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺍﻟْﺤِﺠَﺎﺭَﺓُ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবার বর্গকে ওই আগুন থেকে রক্ষা করো যার ইন্ধন হচ্ছে মানুষ ও পাথর । (পারা: ২৮, সূরা: তাহরীম, আয়াত: ৬)
স্মরণ রাখবেন! স্বামী তার স্ত্রীর, পিতা তার সন্তানের এবং প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের অধিনস্থদের জন্য এক প্রকারের শাসক। আর প্রত্যেক শাসকের নিকট তার অধিনস্থদের ব্যাপারে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কেননা, রাসূলে আকরাম, নূরে মুজাস্সাম, নবীয়ে মুকাররম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! ইরশাদ করেন: “তোমরা সবাই নিজের সংশ্লিষ্টদের নেতা ও শাসক, আর শাসকের নিকট কিয়ামতের দিন তার প্রজাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, ৩০৯ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৮৯৩)
ইসলামী বোনেরা! নিজেকে ধ্বংস থেকে বাঁচানো এবং ক্ষমা পাওয়ার একটি উত্তম মাধ্যম হলো; তবলীগে কোরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশ, কখনও কখনও একজন লোকের দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া, সম্পূর্ণ পরিবারের সংশোধনের মাধ্যম হয়ে যায়। এরকম অসংখ্য বাহার রয়েছে, একটি বাহার লক্ষ্য করুন; যেমন- বাবুল মদীনার (করাচীর) একজন ইসলামী বোনের বর্ণনা কিছুটা এরকম যে, আমাদের পরিবার অনেক মডার্ণ ছিলো। পরিবারের লোকেরা গান-বাজনা এবং সিনেমা-নাটকের সৌখিন ছিলো। আল্লাহ্ তাআলার দয়া কিছুটা এভাবে হলো; আমার ছোট ভাইকে একজন ইসলামী ভাই ইনফিরাদী কৌশিশ করলো। তাতে সে দা’ওয়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করলো।
ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ ইজতিমায় নিয়মিত যাওয়ার কারণে ভাইয়ের আচরণের মধ্যে মাদানী পরিবর্তন এসে গেলো, সে নিয়মিতভাবে নামাযী হয়ে গেলো, সুন্নাতের উপর আমল করার চেষ্টা এবং পরিবারের সদস্যদেরকে সংশোধনের ধ্যানে মগ্ন থাকতো। সে দা’ওয়াতে ইসলামীর বরকত সমূহ আমাদেরকে বলতো এবং ইসলামী বোনদের সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করতো। তার ইনফিরাদী কৌশিশ পরিশেষে সফল হলো এবং আমি ইসলামী বোনদের ইজতিমায় অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করলাম। সেখানের পরিবেশের রূহানিয়্যত এবং সুন্নাতে ভরা বয়ান আমার মধ্যে আশ্চার্যজনক অবস্থা জাগিয়ে দিলো। দোয়া চলাকলীন সময়ে আমি অঝোর নয়নে কান্না করে নিজের গুনাহ থেকে তাওবা করলাম এবং দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী পরিবেশকে কখনও ত্যাগ না করার পরিপূর্ণ ওয়াদা করে নিলাম। ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ ইসলামী বোনদের সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করার কারণে খোদাভীরুতা ও নবী প্রেম বৃদ্ধি করার প্রেরণা নসীব হলো। দা’ওয়াতে ইসলামীর সদকায় আমাদের পরিবারের বিপথগামী পরিবেশ মাদানী পরিবেশে পরিবর্তন হয়ে গেলো। পরিবারের লোকদের ঐক্যমতে ঘর থেকে টিভি বের করে দেয়া হয়েছে। কেননা, এটা থাকাবস্থায় সিনেমা-নাটক থেকে বাঁচা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য বিষয়। বর্তমানে আমাদের ঘরে সিনেমা-নাটক এবং গান-বাজনা নয় বরং তাজেদারে মদীনা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর নাতের ধ্বনি ধ্বনিত হয়।
না মরনা ইয়াদ আতা হে, না জীনা ইয়াদ আতা হে,
মুহাম্মদ ইয়াদ আতে হেঁ, মদীনা ইয়াদ আতা হে।
ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ
ইসলামী বোনেরা! সাহস না হারিয়ে বেশি বেশি ইনফিরাদী কৌশিশ করতে থাকুন, ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ নিষ্ফল হবেন না। এই অবস্থায় যদি কোন কষ্ট হয় তবে ধৈর্যশীলতার সুযোগ হাত ছাড়া হতে দিবেন না। কেননা, আগত বিপদ ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ অনেক বড় কল্যাণের আগাম বার্তা হিসেবে প্রমাণীত হবে। হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ থেকে বর্ণিত; প্রিয় আক্বা, উভয় জগতের দাতা, মক্কী মাদানী মুস্তফা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করেন: “আল্লাহ্ তাআলা যার সাথে কল্যাণের ইচ্ছাপোষণ করেন, তবে তাকে মুসীবতে লিপ্ত করে দেন।” (সহীহ বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ৪ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৫৬৪৫)
পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর: কাদের সাথে পর্দা করতে হবে? (চতুর্থ পর্ব)
পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।




Users Today : 573
Users Yesterday : 677
This Month : 7148
This Year : 179019
Total Users : 294882
Views Today : 10273
Total views : 3516402