পর্দার মাসআলা (দ্বাদশ পর্ব)
আবদুল্লাহ্ বিন মোবারকের তাওবার কারণ
প্রশ্ন:- হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ্ বিন মোবারকও ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ কি অবৈধ প্রেমের রোগে আক্রান্ত ছিলেন?
উত্তর:- জ্বী, হ্যাঁ। কিন্তু তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে তাওবা করে নেন এবং উচ্চ মর্যাদা লাভ করেন। হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ বিন মোবারক ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ এর ঘটনা কিছুটা এমন: “শুরুতে তিনি একজন সাধারণ যুবক ছিলেন। তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ এক দাসীর (কানিয) প্রেমে পড়ে গেলেন এবং তা খুবই গভীর হয়ে গিয়েছিলো। প্রচন্ড শীতে একবার তার দর্শন লাভের জন্য তিনি সেই দাসীর বাড়ীর পাশে পুরো রাত দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমনকি এই অবস্থায় সকাল হয়ে গেলো। সারা রাত অহেতুক অতিবাহিত হওয়াতে তার অন্তরে নিন্দাভাব সৃষ্টি হলো এবং এ বিষয়ে খুবই অনুশোচনা হলো যে, এই দাসীর অপেক্ষায় পুরো রাত অতিবাহিত করে দিলাম, কিন্তু কোন উপকার হলো না। আহ! যদি এই রাত আল্লাহ্ তাআলার ইবাদতে অতিবাহিত করতাম! এই ভাবনায় তার অন্তরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে গেলো এবং তাঁর অন্তরে মাদানী পরিবর্তন সাধিত হলো। তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ সত্য অন্তরে তাওবা করলেন, দাসীর ভালবাসা তার অন্তর থেকে বের করে দিলেন। আপন প্রতিপালকের দিকে মনোযোগী হলেন এবং অতি অল্প সময়ে বিলায়াতের উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হলেন এবং আল্লাহ্ তাআলা তার শান এতো বৃদ্ধি করলেন যে,
সাপ, মাছি তাড়ানোয় রত ছিলো
একবার তাঁর সম্মানীত আম্মাজান ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ তাঁর খোঁজে বের হলেন, তখন একটি বাগানের গোলাপ গাছের নিচে তাঁকে এভাবে শোয়া অবস্থায় দেখলেন যে, একটি সাপ মুখে নার্গিছ গাছের ডাল নিয়ে মাছি তাড়াচ্ছিলো। অর্থাৎ তাঁর শরীর থেকে মাছি তাড়াচ্ছিলো। (তাযকিরায়ে আওলিয়া, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক। ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ
সৌভাগ্যবান আবিদের দৃঢ়তা
প্রশ্ন:- “ইসরাঈলিদের” মধ্যে পরীক্ষায় পতিত কোন ব্যক্তির দৃঢ়তার ঈমান তাজাকারী ঘটনা বলে দিন, যা থেকে শিক্ষা ও ধৈর্যধারণ করার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয়।
উত্তর:- যে মুসলমান পরীক্ষা দিতে ভয় করে না, নিজের নফসের চাহিদা সমূহকে তুচ্ছ মনে করে, যতই কঠিন ধৈর্যধারণ করার মুহুর্ত আসুক না কেন, তাতে ঘাবড়ায় না। আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য কঠিন থেকে কঠিনতর বিপদকেও আলিঙ্গন করে এবং শয়তান ও নফসের সাথে প্রতিটি অবস্থায় যুদ্ধ করতে থাকে। সে আল্লাহ্ তাআলার দরবার থেকে উচ্চ মর্যাদা লাভ করে এবং শান ও শওকাতের সাথে জান্নাতুল ফিরদাউসে প্রবেশ করে। যেমনিভাবে- হযরত সায়্যিদুনা কাবুল আহবার ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ এর বর্ণনাকৃত একটি ঘটনাকে সংক্ষিপ্তকারে বর্ণনা করার চেষ্ট করছি: “বনি ইসরাঈলে এক আবিদ ব্যক্তি ছিলেন, যিনি সিদ্দিক (অর্থাৎ প্রথম সারির ওলী) এর মর্যাদায় উপনীত ছিলেন। তার মর্যাদা এমন ছিলো যে, তার খানকায় বাদশাহ নিজে উপস্থিত হয়ে তাঁর চাহিদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতো। কিন্তু তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ কিছু চাইতেন না। আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে তাঁর ইবাদত খানায় আঙ্গুরের গাছ লাগানো ছিলো। যা প্রতিদিন একটি অদ্ভুত আঙ্গুর ফলাতো। যখনই তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ সেটার দিকে নিজের হাত মোবারক বাড়াতেন। তখন তা থেকে পানির ধারা উপচে পড়তো, যা তিনি পান করে নিতেন। একদিন মাগরিবের নামাযের সময় এক যুবতী তার দরজায় কড়া নেড়ে বললো: “অন্ধকার হয়ে গেছে, আমার বাড়িও অনেক দূর। দয়াকরে আমাকে (এখানে) রাত কাটানোর করার অনুমতি দিন।” তখন তিনি তার প্রতি দয়া পরবশ হয়ে খানকায় আশ্রয় দিলেন। যখন রাত গভীর হলো, তখন সেই মেয়েটি উঠে পড়ে লেগে গেলো যে, আমার সাথে “ব্যভিচার” (যিনা) করো, এমনকি সে নিজের কাপড় খুলে ফেললো। তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ততক্ষনাৎ চোখ বন্ধ করে নিলেন এবং তাকে কাপড় পরিধানের আদেশ দিলেন। কিন্তু সে শুনলো না, বারবার সেই একই দাবী করতে লাগল। তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ আতঙ্কিত হয়ে নিজের নফসকে জিজ্ঞাসা করলো: ‘হে নফস! তুই কি চাস?’ নফস উত্তর দিলো: ‘আল্লাহর শপথ! আমি এই সুবর্ণ সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে চাই।’ তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বললেন: ‘তোর ধ্বংস হোক! তুই কি আমার সারা জীবনের ইবাদত নষ্ট করে দেয়ার আশাবাদী? তুই কি জাহান্নামের আগুনের প্রত্যাশী? তুই কি দোযখের গন্ধকের পোশাকের আশা করিস? তুই কি জাহান্নামের সাপ ও বিচ্ছুর প্রত্যাশী? মনে রাখ! ব্যভিচারীকে তার মুখের উপর টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামের গভীর গর্তে নিক্ষেপ করা হবে।’ কিন্তু সেই নির্লজ্জ মেয়েটির সাথে সাথে নফসও তার আবদার করতে রইলো। তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِনিজের নফসকে বললেন: ‘চল প্রথমে অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিই, যে দুনিয়ার সাধারণ আগুনকে সহ্য করতে পারিস কিনা! ‘ এই বলে তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ জলন্ত প্রদিপের উপর হাত রেখে দিলেন! কিন্তু তা জ্বললো না! তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ক্ষোভে চিৎকার করে বললেন: ‘হে আগুন! তোর কি হয়ে গেলো, তুই কেন জ্বালালি না?’ তা শুনে আগুন প্রথমে বৃদ্ধাঙ্গুলকে প্রজ্জ্বলিত করলো। অতঃপর বাকী আঙ্গুলগুলোকেও জ্বালাতে লাগলো, ধীরে ধীরে পুরো পাঁচটি আঙ্গুল জ্বালিয়ে দিলো! এই বেদনাদায়ক অবস্থা দেখে সেই মেয়েটি ভয়ে কাঁপতে লাগলো। তার মুখ দিয়ে উচ্চস্বরে একটি চিৎকার বের হয়ে বাতাসে মিলিয়ে গেলো, অতঃপর সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ও তার রূহ দেহ পিঞ্জির থেকে বের হয়ে গেলো। তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ তার উলঙ্গ দেহকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। সকাল হতেই শয়তান উচ্চ আওয়াজে ঘোষনা করলো: ‘এই আবিদ অমুকের মেয়ে অমুকের সাথে রাতে জোরাজোরী করে তাকে হত্যা করে দিয়েছে।’ এই ভয়ানক খবর শুনে বাদশাহ জ্বলন্ত আগুনের ন্যায় হয়ে তার সিপাহিদের সঙ্গে সেই আবিদের খানকায় পৌঁছলো। যখন সেখান থেকে যুবতীর উলঙ্গ লাশ উদ্ধার করা হলো। তখন আবিদ ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ এর গলায় শিকল লাগিয়ে টেনে হেঁচড়ে বাইরে আনা হলো এবং সিপাহিরা খানকাটি ধ্বংস করে দিলো। সেই আবিদ ধৈর্যের উপর অটল রইলেন। এতদাসত্বেও তিনি তাঁর প্রজ্জ্বলিত হাতকে কাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে রাখলেন এবং তা কারো কাছে প্রকাশ করেননি! সেই সময়কার নিয়ম ছিলো যে, ব্যাভিচারিকে করাত দিয়ে কেটে দু’টুকরো করা হতো। সুতরাং বাদশাহের আদেশক্রমে সেই আবিদ ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ এর মাথায় করাত রেখে তার শরীরকে দু’টুকরো করে দেওয়া হলো, আবিদের ওফাতের পর, আল্লাহ্ তাআলা সেই যুবতীকে জীবিত করলেন এবং সেই যুবতী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো ঘটনা খুলে বললো। যখন তাঁর হাত থেকে কাপড় সরানো হলো তখন সত্যিই সেই যুবতীর বর্ণনা অনুযায়ী তাঁর হাত পোঁড়া ছিলো। অতঃপর সেই যুবতী পূর্বের ন্যায় পুনরায় মৃত্যুবরণ করলো। আশ্চর্য্যজনক এই ঘটনা শুনে লোকদের মাথা সম্মানে নত হয়ে গেলো এবং সৌভাগ্যবান আবিদের এই বেদনাদায়ক মৃত্যুতে সবাই আফসোস ও দুঃখ প্রকাশ করতে লাগলো। যখন তাঁর জন্য কবর খনন করা হলো, তখন তা থেকে মুশক ও আম্বরের সুগন্ধি আসতে লাগলো। যখনই তাদের জানাযা উপস্থিত করা হলো তখন আসমান থেকে আওয়াজ আসতে লাগলো : ﺍِﺻْﺒِﺮُﻭْﺍ ﺣَﺘّٰﻰ ﺗُﺼَﻠِّﻰ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎﺍﻟْﻤَﻠٰﺌِﻜَﺔُ অর্থাৎ ধৈর্য ধারণ করো! যতক্ষণ না ফিরিশতারা জানাযার নামায আদায় করে নেয়। কাফন দাফনের পর আল্লাহ্ তাআলা সেই সৌভাগ্যবান আবিদের কবরে একটি (চাম্বলীর) গাছ উদ্গীরন করলেন। লোকেরা তার মাযারের উপর একটি শিলালিপি পেলো। যাতে কিছুটা এরূপ লিখা ছিলো: ﺑِﺴۡﻢِ ﺍﻟﻠﮧِ ﺍﻟﺮَّﺣۡﻤٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﯿۡﻢِ আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে তাঁর বান্দা ও ওলির নিকট। আমি আমার ফিরিশতাদেরকে একত্রিত করেছি, জিব্রাঈল ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ খুতবা পাঠ করেন এবং আমি পঞ্চাশ হাজার কনের সাথে জান্নাতুল ফেরদৌসে আমার ওলীর সাথে বিয়ে দিয়েছি। আমি আপন আনুগত্যকারীদের ও নৈকট্যশীলদের এভাবেই পুরস্কৃত করি।” (বাহরুদ দুমু, ১৬৯ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁর সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক। ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ
আম্বিয়ায়ে কিরামদের উপরও পরীক্ষা এসেছে
আপনারা দেখলেন তো! নারীর ফিতনা কত ভয়ানক! অভিশপ্ত শয়তান তাদের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআলার ওলীদের উপরও হামলা করতে দ্বিধাবোধ করে না। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলার সাহায্য যাদের উপর থাকে, তারা অভিশপ্ত শয়তানের ফাঁদে বন্দি হয় না। উল্লেখিত ঘটনা থেকে সম্ভবত কারো এই কুমন্ত্রনা আসতে পারে যে, অবশেষে এতো বড় কারামত সম্পন্ন বুযুর্গের উপর কিভাবে ব্যভিচারের ও মুসলমানকে হত্যা করার অপবাদ দেওয়া হলো। অতঃপর বেচারাকে নির্দয়ভাবে করাত দিয়ে কেটে হত্যা করা হলো? এই কুমন্ত্রনার প্রতিকার হলো, খোদায়ে হান্নান ও মান্নান নিজের বান্দাদেরকে পরীক্ষা করে থাকেন এবং অটলতা প্রদর্শন কারীদেরকে শুধুমাত্র নিজের দয়া ও করুনায় উচ্চ পর্যায়ের পুরস্কার ও উচ্চ মর্যাদা দান করেন। এরকম পরীক্ষার ঘটনা দ্বারা আমাদের ইসলামের ইতিহাস পরিপূর্ণ। হযরত সায়্যিদুনা যাকারিয়া ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ কে করাত দিয়ে কেটে ফেলা হয়! তার আদরের সন্তান হযরত সায়্যিদুনা ইয়াহইয়া ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ কেও নির্মম ভাবে শহীদ করা হয়! এছাড়া আরো অনেক নবীদের বনি ইসরাঈলের লোকেরা শহীদ করে দেয়। কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনা নেক লোকদের উপর দুঃখ ও মুসিবতের পাহাড় ভেঙ্গে পড়ার ব্যাপারে খুবই প্রসিদ্ধ। সুতরাং যদি আমাদের উপর কখনোও কোন পরীক্ষা এসে যায়, তখন ধৈর্য্যের আঁচল না ছাড়া উচিত। আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টির প্রতি সন্তুষ্টি থাকাই উভয় জাহানের সফলতা এবং এটাও স্মরণ রাখবেন যে, পরীক্ষা যত কঠিনতর হবে সার্টিফিকেটও (ফলাফল) তত উন্নত পাওয়া যাবে। আল্লাহ্ তাআলা পারা ২০, সূরা: আনকাবুত এর প্রারম্ভিক আয়াতে ইরশাদ করেন:
ﺍﻟﻢ ( ১ ) ﺃَﺣَﺴِﺐَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺃَﻥ ﻳُّﺘْﺮَﻛُﻮْﺍ ﺃَﻥ ﻳَّﻘُﻮْﻟُﻮﺍ ﺍٰﻣَﻨَّﺎ ﻭَﻫُﻢْ ﻟَﺎ ﻳُﻔْﺘَﻨُﻮﻥَ ( ২ ) ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻓَﺘَﻨَّﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻠِﻬِﻢْ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: লোকেরা কি এ অহঙ্কারের মধ্যে রয়েছে যে, এতটুকু কথার উপর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে যে, তারা বলবে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’। তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? এবং নিশ্চয় আমি তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি; (পারা: ২০, আনকাবুত, আয়াত: ১,২,৩)
প্রসিদ্ধ মুফাস্সীর, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: মুসলমানদেরকে ঈমানের শক্তি অনুযায়ী পরীক্ষা নেয়া হয়, আল্লাহ্ তাআলার বিধান, অসুস্থতা, নিঃস্বতা, দারিদ্রতা, মুসিবত এ সবই আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে পরীক্ষা। যার মাধ্যমে মুখলিছ ও মুনাফিকের পার্থক্য হয়ে যায়। (অর্থাৎ তাদের পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়) মু’মিন আল্লাহ্ তাআলার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট থাকে। কেননা, আল্লাহ্ তাআলার কোন বান্দাকে করাত দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে। কাউকে লোহার চিরুনি দ্বারা ফালা ফালা করা হয়েছে। কাউকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। কাউকে আদেশ করা হয়েছে যে, আপন পুত্রকে নিজের হাতেই জবাই করার জন্য। কিন্তু সেই সম্মানিত ব্যক্তিরা অটলতার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। (নূরুল ইরফান, ২৩২ পৃষ্ঠা)
ওহ ঈশকে হাকিকি কি লযযত নেহি পা সাকতা
জু রনজ ও মুসিবত সে দো-চার নিহি হোতা।
আজকালকার অবৈধ প্রেম-ভালবাসা ধ্বংস করে দিলো
আহ! খুবই সংকটময় যুগ, সহ-শিক্ষা ইত্যাদির কারণে লাজ-লজ্জার মন-মানসিকতা একেবারেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রেম-ভালবাসা প্রসার হয়ে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হচ্ছে। সগে মদীনা ﻋُﻔِﻰَ ﻋَﻨْﻪُ এর নামে আগত পত্রে এমন এমন লজ্জাজনক কথা লিখা থাকে যে, লজ্জাশীল ব্যক্তি তা পাঠ করে লজ্জায় মাথা নত হয়ে যাবে। এই দূর্ভাগা প্রেমিমকগন অনেক সময় নিঃসংকোচে পরস্পরের নাম ঠিকানা বর্ণনা করে নিজের ও বংশের সম্মানকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়! এরকম নির্লজ্জ প্রেমিকদের লিখিত পত্রের কয়েকটি উদাহরণস্বরূপ উপস্থাপন করছি। কিন্তু এটা পড়ে তাদেরই আঘাত লাগবে, যাদের লজ্জা বলতে কিছু এখনো বিদ্যমান। তাছাড়া যাদের নিকট লজ্জা বলতে কিছু নেই তারা এমনিতেই পড়ে চলে যাবে। সম্ভবত তারা এ বাক্যগুলো থেকে দোষের কোন আভাস পাবে না।
প্রমিকদের আবেগময় ৭টি লজ্জাজনক বাক্য
(এরকম বিষয়াদি আমার নিকট পাঠানো পত্রগুলোর মধ্যে অধিক পরিমাণে লিখা থাকে:)
(১) আমি অমুককে ভালবেসে কোন গুনাহ তো করিনি? (আল্লাহর পানাহ্! )
(২) অমুক মেয়েকে আমি প্রচন্ড ভালবাসি। যদি তাকে না পাই, তবে আমি (আল্লাহর পানাহ্! ) আত্মহত্যা করবো।
(৩) অমুক মেয়েকে আমি ছোটবেলা থেকেই ভালবাসি। কিন্তু দুই মাস হয়ে গেলো, তার পিতামাতা তাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। দোয়া করুন, যেন তার তালাক হয়ে যায়। তা না হলে আমি তার বরকে এই দুনিয়াতে থাকতে দিবো না, যে আমার ভালবাসাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে।
(৪) ‘তার’ স্মরণ আমাকে অনেক অস্থির করে রাখে, এটা জানি যে, মদ পান করা হারাম, কিন্তু দুঃখ দূর করার জন্য অল্পখানি পান করে নিই।
(৫) আমার ভালবাসা যদি আমি না পাই এবং অন্যকোন জায়গায় তার বিয়ে হয়ে যায়। তবে সেই দিনই আমার জীবনের শেষ দিন হবে!
(৬) সারাক্ষন শুধু তারই স্বরনে মগ্ন থাকি। কিছুই ভাল লাগে না।
(৭) আপনাকে হযরত মুহাম্মদ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর দোহাই আমাকে আমার প্রেমিকার সাথে মিলিয়ে দিন।
প্রেমিকার আবেগময় ১২টি লজ্জাজনক বাক্য
(১) অমুক ছেলেকে আমি ভালবেসে ফেলেছি, তার স্মরনই আমার জীবন, যদি আমি তাকে না পাই, তাহলে আত্মহত্যা করবো।
(২) যদি ‘কলেজ ফ্রেন্ডের’ সাথে আমার বিয়ে না হয়, তাহলে “কোর্ট ম্যারেজ” করবো। আপনি আমাদের পিতামাতাকে বলে দিন, তারা যেন আমাদের বিয়ে করিয়ে দেয়।
(৩) তার স্মরণ অন্তরে গেথেঁ গেছে, না খাবার ভাল লাগে, না কিছু পান করতে ভাল লাগে, এ কারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেছে। পিতা মাতার সাথেও বেয়াদবী করে ফেলি।
(৪) অমুককে আমি অন্তর থেকে ভালবাসি, কিন্তু সে তা জানে না যে, আমি তাকে ভালবাসি, তার নিকট প্রকাশও করতে পারি না, এমন কোন আমল বলে দিন, সে যেন আমার ভালবাসার কথা জেনে যায় এবং সে আমার হয়ে যায়।
(৫) আমরা উভয়ে একে অপরকে অনেক ভালবাসি, ফোনের মাধ্যমেও কথাবার্তা চলতে থাকে। কখনোও কখনোও পরিবারকে ধোকা দিয়ে, বান্ধবীর সাথে দেখা করার বাহানা করে ঘর থেকে বের হয়ে তার সাথে দেখা করতে চলে যাই। আমি তাকে আপন করে পেতে চাই কিন্তু পরিবারের লোকেরা এতে রাজি নেই।
(৬) অমুকের সাথে আমার প্রেম হয়ে গেছে, সে বিয়ে করার অনেক ওয়াদা করেছে, কিন্তু এখন সে তা প্রত্যাখ্যান করছে, কিছু করুন, তাকে বুঝান।
(৭) তাকে আমি এতো ভালবাসি যে, যদি তাকে একদিন না দেখি (অর্থাৎ আল্লাহর পানাহ্! কুদৃষ্টি না দিই) তবে অন্তরে শান্তি পাই না। আহ! যদি সে আমার হয়ে যেতো।
(৮) এখন ধৈর্যের মাত্রা অতিক্রম হয়ে গেছে, তাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। যদি তাকে না পাই তবে প্রাণ দিয়ে দিবো। (অর্থাৎ আল্লাহর পানাহ! আত্মহত্যা করবো)
(৯) আমি আমার প্রেমিককে অনেক ভালবাসি, এমন কোন তাবিয দিন, সেও যেন আমাকে ভালবাসে। (আল্লাহর পানাহ্! )
(১০) যেভাবেই হোক আমি আমার প্রেমিককে চাই।
(১১) সে আমার মন ও প্রাণে গেথেঁ গেছে। এখন অন্য কাউকে ভাবতেই পারি না।
(১২) চার বছর যাবত আমরা একে অপরের সাথে সাক্ষাত করছি, সে আমাকে ভালবাসার আশ্বাস দেয়। কিন্তু এখন সে আমার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে, সে আমার আনন্দকে চুরমার করে দিলো।
প্রেমের বিয়ে সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
কোর্ট ম্যারেজ
প্রশ্ন:- আজকালকার প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে কেউ কেউ পরিবারের বিরোধীতা সত্ত্বেও কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে নেয়। এমন করা কি ঠিক?
উত্তর:- কখনোও ঠিক নয়। বরং ছেলে যদি মেয়ের যোগ্য না হয় এবং মেয়ের অবিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে নেয়, তবে এই বিয়েই বাতিল বলে গণ্য হবে। যদি যোগ্যও হয় এবং বিয়েও করে নেয়, তবুও ‘কোর্ট ম্যারেজ’ করাতে তাদের পিতা মাতা মনে অনেক কষ্ট পায়। বংশের সবার কপালে কলংকের দাগ লেগে যায় এবং অন্যান্য ভাই বোনের বিয়েতে তা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। শুধু তাই নয় এরূপ করাতে অধিকাংশ সময় গীবত, অপবাদ, দোষত্রুটি অন্বেষন, কুধারণা এবং অন্তরে কষ্ট দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি গুনাহের দরজা খুলে যায়। তাই কখনোও এপথে পা বাড়ানো উচিত নয়।
প্রশ্ন:- ওলী কাকে বলে?
উত্তর:- ওলী শব্দটির শাব্দিক অর্থ বন্ধু ও সাহায্যকারী, সাধারণরত আল্লাহ্ তাআলার প্রিয় বান্দাকে ওলী বলা হয়। কিন্তু ফিকহের পরিভাষায় ওলী দ্বারা যা উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে (তা) একেবারে ভিন্ন। ফিকহের পরিভাষায় ওলী সেই জ্ঞানী, বালিগ ব্যক্তিকে বলে, যার অন্যের জান ও মালের উপর নির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে। “বাহারে শরীয়াতে” বর্ণিত রয়েছে: “ওলী সেই, যার কথা অপরের উপর ধার্য হয়, অপরজন চায় বা না চায়।” (বাহারে শরীয়াত, ৭ম অধ্যায়, ৪২ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন:- আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে ওলী কাকে বলা হয়? অর্থাৎ নৈকট্যতম অবস্থায় যাকে বিয়ের কার্যাদিতে ওলী বলে গন্য করা হয়। তার বিস্তারিত বর্ণনা করুন?
উত্তর:- নৈকট্যতার কারণে জন্মগত “আছাবাহ বিনাফসিহি”দের (অর্থাৎ আত্মীয়দের মধ্যে একটি প্রকারের নাম, এরা হচ্ছে, যাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক হওয়ার জন্য কোন মহিলার প্রয়োজন নেই। যেমন; চাচা, কিন্তু মামার সম্পর্ক মায়ের কারণে) জন্য এবং তাদের মধ্যে প্রধান্যতার জন্য (একজনকে আরেক জনের উপর শ্রেষ্ঠতা দেয়া) এখানে সেই নিয়মকানুনের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে যা ওয়ারিসের মধ্যে উপযোগী অর্থাৎ সে আত্মীয়দের মধ্যে যার সবচেয়ে নিকটতম মর্যাদা (অর্থাৎ নৈকট্যতা রাখে তাকে নিকটতম) তাকে ওলী বলে গন্য করা হবে এবং নিকটতম আত্মীয় থাকাবস্থায় দূরের ওলী নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে অপারগ। এমনি ভাবে মর্যাদা অনুযায়ী এক সময়ে শুধু একজনই ওলী হতে পারবে। তবে হ্যাঁ! যদি একের অধিক অভিভাবক একই মর্যাদায় উপনীত হয় তবে একের অধিকও ওলীর মর্যাদায় উপনীত হতে পারবে। যে মহিলার জ্ঞানী বালিগ সন্তান অথবা নাতি (এভাবে নিচে পর্যন্ত) না থাকে তবে তার ওলী তার বাবা হবে। আর যদি বাবা না থাকে তবে তার ওলী তার দাদা হবে, এবং যদি ছেলে থাকে তবে ছেলেই তার সর্ব প্রথম ওলী। ছেলে না থাকলে নাতির অবস্থান দ্বিতীয় নম্বর, এভাবে নিম্নস্তর পর্যন্ত। এরপর বাবা তারপর দাদা তার ওলী হবে। দাদা বেঁচে না থাকলে দাদার বাবা ওলী হবে। এভাবে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত যদিওবা অনেক পুরুষের উপরের দাদা হয়, সে থাকাবস্থায় অন্য কেউ ওলী হতে পারবে না।
প্রশ্ন:- বর্ণিত পাঁচ আত্মীয়ের মধ্যে যদি কেউই না থাকে তখন কে ওলী হবে? এবং মা-ও কি ওলী হতে পারবে?
উত্তর:- বর্ণিত পাঁচ আত্মীয়ের পর ভাই অতঃপর চাচা অতঃপর চাচাত নিকটতম আত্মীয় নিজের মর্যাদা অনুযায়ী ওলী হবে। এদের বিস্তারিত বর্ণনা মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত “বাহারে শরীয়াত” ৭ম খন্ডের ৪৩ পৃষ্ঠায় দেখুন।
যখন ﻋَﺼَﺒَﻪ ﺑِﻨَﻔْﺴِﻪ (আছাবাহ বিনাফসিহি) এর তালিকায় অর্ন্তভুক্ত কোন আত্মীয় না থাকে তবে ওলী মা হবে। যদি মা না থাকে তবে দাদী অতঃপর নানীও ওলী হতে পারবে। এ পর্যায়েও আত্মীয়দের একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। এই তালিকার বিস্তারিত জানতে “বাহারে শরীয়াত” ৭ম খন্ডের, ৪২-৫২ পৃষ্ঠা পাঠ করুন।
পর্দার মাসআলা (দ্বাদশ পর্ব) আবদুল্লাহ্ বিন মোবারকের তাওবার কারণ
পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।