পর্দার মাসআলা (একাদশ পর্ব)
দোয়ার ফযীলত
ইসলামী বোনেরা! আসলেই এই কথাটি বিশুদ্ধ যে, “নিয়্যত পরিস্কার তো মঞ্জিল সহজ” সেই ইসলামী বোনের সংশোধন হওয়ার আকাঙ্খা ছিলো আর এর জন্য দোয়াও করতো তখন আল্লাহ্ তাআলা তার সংশোধনের ব্যবস্থাও করে দিলেন। আমাদেরও উচিত, নফস ও শয়তানের আক্রমন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দোয়া করাতে অবহেলা না করা। কেননা, “দোয়া মুমিনের হাতিয়ার” দোয়ার মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যায়, রহমতে আলম, হুযুর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর দু’টি বাণী লক্ষ্য করুন: (১) “আমি কি তোমাদের সেই জিনিসের ব্যাপারে বলবো না, যা তোমাদেরকে তোমাদের শত্রু থেকে মুক্তি দান করবে এবং তোমাদের রিযিক প্রশস্থ করে দিবে, রাত দিন আল্লাহ্ তাআলার নিকট দোয়া করতে থাকো। কেননা, দোয়া মুমিনের হাতিয়ার।” (মুসনদে আবু ইয়ালা, ২য় খন্ড, ২০১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৮০৬)
(২) “দোয়া ভাগ্যকে পরিবর্তন করে দেয় এবং উপকার করার দ্বারা বয়স বৃদ্ধি পায় এবং বান্দা গুনাহের কারণে রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।” (ইবনে মাজাহ্, ৪র্থ খন্ড, ৩৭৯ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪০২২)
দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ৩১২ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত” এর ১৬তম অধ্যায়ের ১৯৯ পৃষ্ঠায় সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “এই হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, দোয়ার মাধ্যমে বিপদাপদ দূর হয়ে যায়, এখানে ভাগ্য দ্বারা উদ্দেশ্য তাকদীরে মুয়াল্লাক (ঝুলন্ত ভাগ্য) এবং বয়স বৃদ্ধি দ্বারাও এই উদ্দেশ্য যে, উপকার করা বয়স বৃদ্ধির কারণ এবং রিযিক দ্বারা আখিরাতের সাওয়াবই উদ্দেশ্য। কেননা, গুনাহ রিযিক থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ এবং হতে পারে যে, কখনো দুনিয়াবী রিযিক থেকেও বঞ্চিত হয়ে যায়।”
কারো ঘরে উঁকি মেরো না
প্রশ্ন:- জেনে শুনে কারো ঘরে উঁকি মারা কি শরীয়াতে নিষেধ রয়েছে?
উত্তর:- জ্বী, হ্যাঁ! কিন্তু দরজা যদি আগে থেকেই খোলা থাকে এবং অনিচ্ছাকৃত কারো প্রতি দৃষ্টি পড়ে যায় তবে সমস্যা নেই। কিন্তু আফসোস! শতকোটি আফসোস! ! বর্তমানে এই ব্যাপারে অধিকাংশ মুসলমানই উদাসীন। লোকেরা ঘরের দরজায় নিঃসংকোচে উঁকি মারে, যদি দরজা খোলা নাও থাকে তাহলে লাফিয়ে লাফিয়ে উঁকি মারে, দরজা দিয়ে উঁকি মারে, জানালা দিয়ে উঁকি মারে, পর্দা সরিয়ে উঁকি মারে এবং এই বিষয়ে কোন দ্বিধাবোধ করে না যে, কারো ঘরে উঁকি মারা শরীয়াতে নিষেধ রয়েছে।
চোখ উপড়ে ফেলার অধিকার
প্রশ্ন:- যদি দরজায় কড়া নাড়া সত্ত্বেও ভেতর থেকে কোন উত্তর পাওয়া না যায়, তবেও কি ঘরের ভেতর উঁকি মারতে পারবে না?
উত্তর:- উঁকি মারতে পারবে না। হযরত সায়্যিদুনা আবু যর গিফারী ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর শিক্ষা মুলক বাণী হচ্ছে: “যে (ব্যক্তি) অনুমতি নেওয়ার পূর্বেই পর্দা সরিয়ে ঘরের ভেতরে দৃষ্টি দিলো এবং ঘরের বাসিন্দাদের গোপন কিছু দেখলো, তবে সে এমন কাজ করলো যা তার জন্য বৈধ ছিলো না, যখন সে ঘরের ভিতরে দৃষ্টি দিয়েছিলো তখন যদি কেউ তার চোখ উপড়ে দিতো তবে তাকে (চোখ উপড়ানো ব্যক্তি) আমি লজ্জিত করবো না। যদি কেউ এমন দরজার পাশ দিয়ে অতিক্রম করে, যাতে কোন পর্দা নেই এবং দরজাও বন্ধ ছিলো না, এমতাবস্থায় যদি (অনিচ্ছাকৃতভাবে) সেদিকে দৃষ্টি চলে যায়, তবে সে গুনাহগার হবে না বরং গুনাহ ঘরের বাসিন্দাদের হবে।” (সুনানে তিরমিযী, ৪র্থ খন্ড, ৩২৪ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৭১৬) প্রসিদ্ধ মুফাস্সীর হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বর্ণনাকৃত হাদীসে পাকের এই বাক্য “তাকে লজ্জিত করবো না” এর সম্পর্কে বলেন: “অর্থাৎ চোখ উপড়ানো ব্যক্তিকে আমি কোন প্রকারের শাস্তি দেবো না এবং না তাকে নিন্দিত করবো। কেননা, এখানে দোষ উঁকি মারা ব্যক্তিরই।
স্মরণ রাখবেন! হানাফী মাযহাবে এই বাক্যটি ভয় দেখানো এবং ধমকানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, তা না হলে সেই চোখ উপড়ানো ব্যক্তি থেকে চোখের বদলা (কিসাস) অবশ্যই আদায় করা হবে। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন: “ ﺍَﻟْﻌَﻴْﻦُ ﺑِﺎﻟْﻌَﻴْﻦِ চোখ তো চোখের পরিবর্তেই উপড়ানো যেতে পারে, উঁকি মারার পরিবর্তে নয়।” (মিরআত, ৫ম খন্ড, ২৫৭ পৃষ্ঠা)
কথাবার্তার সময় দৃষ্টি কোথায় থাকবে?
প্রশ্ন:- কথাবার্তা বলার সময় দৃষ্টিকে নিচে রাখা কি আবশ্যক?
উত্তর:- এর বিভিন্ন দিক রয়েছে। যেমন; যদি পুরুষের সম্মুখস্থ ব্যক্তি (অর্থাৎ যার সাথে কথা বলছে সে) আমরদ (সুশ্রী বালক) হয় এবং তাকে দেখার দ্বারা যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি হয় (অথবা শরয়ী অনুমতি সাপেক্ষে পর-পুরুষের সাথে পর-নারী কথাবার্তা বলে) তখন দৃষ্টিকে এভাবে নত রেখে কথাবার্তা বলবে, যেন সম্মুখস্থ ব্যক্তির চেহারায় বরং শরীরের কোন অঙ্গ এমনকি পোশাকের উপরও যেন দৃষ্টি না পড়ে। যদি কোন ধরনের শরয়ী প্রতিবন্ধকতা না থাকে, তাহলে সম্মুখস্থ ব্যক্তির চেহারায় দৃষ্টি দিয়ে কথাবার্তা বলাতেও কোন সমস্যা নেই। যদি দৃষ্টিকে সংযত রাখার অভ্যাস গড়ে তোলার নিয়্যতে প্রত্যেকের সাথে দৃষ্টি নত রেখে কথা বলার অভ্যাস বানিয়ে নেন, তাহলে এটা খুবই ভাল অভ্যাস। কেননা, পর্যবেক্ষন এটাই বলে যে, বর্তমান যুগে যার দৃষ্টি নত রেখে কথা বলার অভ্যাস নেই, যখন তার সুশ্রী বালক অথবা পর-নারীর সাথে কথা বলতে হয়, তখন দৃষ্টিকে নত রাখা তার জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রিয় নবী ﷺ এর দৃষ্টির অনুকরণ
প্রশ্ন:- তাজেদারে মদীনা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর দৃষ্টি প্রদানের কয়েকটি পদ্ধতি বর্ণনা করুন?
উত্তর:- হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ বিন ঈসা তিরমিযী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ উদ্ধৃত করেন: “যখন প্রিয় নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ কোন দিকে তাকাতেন তখন পরিপূর্ণ মনোযোগী হয়ে তাকাতেন, দৃষ্টি মোবারক নত হয়ে থাকতো, পবিত্র দৃষ্টি আসমানের পরিবর্তে অধিকাংশ সময় জমিনের দিকে থাকতো, অধিকাংশ সময় চোখ মোবারকের কিনারা দিয়ে দেখতেন।”(শামাইলে তিরমিযী, ২৩ পৃষ্ঠা, নম্বর- ৭)
বর্ণনাকৃত হাদীস শরীফের এই বাক্য “পরিপূর্ণ মনোযোগী হয়ে তাকাতেন” এর উদ্দেশ্য হলো; দৃষ্টি সরাতেন না এবং এই বাক্যটি “দৃষ্টি মোবারক নত হয়ে থাকতো” অর্থাৎ যখন কারো দিকে তাকাতেন তখন আপন দৃষ্টি নত করে নিতেন। অযথা এদিক সেদিক তাকাতেন না। সর্বদা আল্লাহ্ তাআলার মুহাব্বতে মগ্ন থাকতেন, তাঁরই স্বরণে লিপ্ত এবং আখিরাতের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করতেন।( আল মাওয়াহিবু লিল্লাদুনড়বীয়া ওয়া শারহুয্ যুরকানী আলাল মাওয়াহিবি বিল্লাদুনড়বীয়া, ৫ম খন্ড, ২৭২ পৃষ্ঠা) এবং এই বাক্যটি “তাঁর দৃষ্টি মোবারক আসমানের পরিবর্তে অধিকাংশ জমিনের দিকে থাকতো” অর্থাৎ এটি তাঁর অত্যধীক লজ্জার প্রমাণ বহন করো, হাদীস শরীফে এসেছে; “হুযুর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ যখন কথাবার্তা বলার জন্য বসতেন তখন নিজের দৃষ্টি শরীফ অধিকাংশ আসমানের দিকে উঠাতেন।”(আবু দাউদ, ৪র্থ খন্ড, ৩৪২ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪৮৩৭) অর্থাৎ এই দৃষ্টি উঠানো ওহীর অপেক্ষায় হতো, তা না হলে দৃষ্টি মোবারক জমিনের দিকে রাখা দৈনন্দিন অভ্যাস ছিলো।(আবু দাউদ, ৪র্থ খন্ড, ৫২৬ পৃষ্ঠা। মাদারীজুন্ নাবুওয়াত, ১ম খন্ড, ৬ পৃষ্ঠা)
জিস তরফ উঠ গেয়ী দম মে দম আ গেয়া, উস নিগাহে ইনায়াত পে লাখোঁ সালাম।
জশনে বিলাদতের বরকতে আমার জীবনপরিবর্তন হয়ে গেলো
ইসলামী বোনেরা! আমরা মুসলমানদের জন্য মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর শুবাগমণের দিনের চেয়ে বড় পুরস্কারের দিন আর কিইবা হতে পারে? সমস্ত নেয়ামত তাঁরই ওসীলায় তো পেলাম, এবং এই দিন ঈদের দিন থেকেও উত্তম এজন্য যে, তাঁরই ওসীলায় ঈদও ঈদে হয়েছে। এ জন্যই সোমবার শরীফে রোযা রাখার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ইরশাদ করেন: “ ﻓِﻴْﻪِ ﻭُﻟِﺪﺕُ অর্থাৎ এই দিন আমার জন্ম হয়েছে।” (সহীহ্ মুসলিম, ৫৯১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১১৬২)
ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ তবলীগে কোরআন ও সুন্নাতের বিশ্বব্যাপী অরাজনৈতিক সংগঠন দা’ওয়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে পৃথিবীর অসংখ্য দেশের অগণিত জায়গায় প্রতি বছর ঈদে মিল্লাদুন্নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ খুবই জাঁকঝমকপূর্ণভাবে পালন করা হয়। রবিউন নূর শরীফের ১২তম রাতে আজিমুশ্মান ইজতিমায়ে মিলাদের আয়োজন করা হয়ে থাকে এবং ঈদের দিন মারহাবা ইয়া মুস্তফা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর শ্লোগানে অসংখ্য জুলুসে মিলাদ বের করা হয়। যাতে লক্ষ লক্ষ আশিকে রাসূল অংশগ্রহণ করে থাকেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী তো ঈদ কি ভি ঈদ হে,
বিল ইয়াকিঁ¡ হে ঈদে ঈদাঁ ঈদে মিলাদুন্নবী।
জশনে বিলাদতের অসংখ্য বাহার রয়েছে, তার মধ্য থেকে একটি বাহার শ্রবণ করুন: যেমনিভাবে- একজন ইসলামী বোনের বর্ণনা কিছুটা এ রকম; সাধারণ মেয়েদের মতো আমিও সিনেমা, নাটক দেখায় অভ্যস্থ ছিলাম। গানের প্রতি খুবই আগ্রহী এবং বিবাহ অনুষ্ঠানে সাজ-সজ্জা করে বেপর্দা অবস্থায় অংশগ্রহণ করায় উৎসাহী ছিলাম। “মৃত্যুর পরে আমার কি হবে” আমার ভিতর এর এটুকুও অনুভূতি ছিলো না! দু’বছর পূর্বে হঠাৎ বাবুল মদীনা করাচীতে আমার আত্মীয়ের বাসায় যাওয়া হলো। তাদের বাসার একেবারে নিকটে ইসলামী বোনদের সুন্নাতে ভরা ইজতিমা অনুষ্ঠিত হতো। একজন ইসলামী বোনের দাওয়াতে আমিও সেখানে চলে গেলাম, ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ সেই ইজতিমা আমার চিন্তা-ভাবনাকে একেবারে পরিবর্তন করে দিলো!
অতঃপর আমি বাবুল মদীনা করাচীতেই অনুষ্ঠিত রবিউন নূর শরীফের বাহার লক্ষ্য করলাম, তখন অন্তর নেকীর দিকে আরোও ধাবিত হলো, ﺍَﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠّٰﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ আমি নামায আদায় করা শুরু দিলাম, মাদানী ইনআমাতের উপর আমল এবং শরয়ী পর্দা নসীব হয়ে গেলো। দা’ওয়াতে ইসলামীর মাদানী কাজ করাবস্থায় এই বর্ণনা লিখা পর্যন্ত এলাকা পর্যায়ে মাদানী ইনআমাতের যিম্মাদার হিসেবে সুন্নাতের খিদমত করার সৌভাগ্য অর্জন করছি।
আয়ী নয়ি হুকুমত সিক্কা নয়া চলেগা, আলম নে রঙ্গ বদলা সুবহে শবে বিলাদত।
ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺤَﺒِﻴﺐ ! ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋَﻠﻰ ﻣُﺤَﻤَّﺪ
জশনে বিলাদত দেখে ইসলাম গ্রহণ
ইসলামী বোনেরা! আল্লাহ্ তাআলা হিদায়েত দানকারী, তিনি যখন কাউকে কিছু দিতে চান, তখন নিজেই তার ব্যবস্থা করে দেন। যেমনিভাবে; একজন মডার্ন যুবতীর জন্য ব্যবস্থা হয়ে যাওয়াতে সে মাদানী পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেলো। ﺳُﺒْﺤٰﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞ জশনে বিলাদতের কি অপূর্ব শান! এর মাধ্যমে না জানি কতো পথহারা পথ খুঁজে পেয়েছে। একজন ইসলামী ভাই বর্ণনা করেন: জশনে বিলাদতে মসজিদের আলোকসজ্জার প্রতি প্রভাবিত হয়ে একজন কাফির ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নিলো যে, বাহ! বাহ! মুসলমানেরা নিজের প্রিয় নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর বিলাদতে কত আয়োজন সহকারে আনন্দ উদযাপন করে, মুসলমানদের তাদের নবীর প্রতি কিরূপ ভালবাসা রয়েছে।
জশনে বিলাদত উদযাপনকারীর প্রতি প্রিয় আক্বা ﷺ খুশি হন
ﺳُﺒْﺤٰﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞ ! আমাদের প্রিয় নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ নিজেও তারঁ জশনে বিলাদত উদযাপনকারীকে ভালবাসেন। যেমনিভাবে- আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ কিছুটা এরূপ বর্ণনা করেন: “অনেক আশিক্বানে রাসূল জশনে বিলাদত উদযাপনের কারণে প্রিয় নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ কে স্বপ্নে অত্যন্ত খুশি অবস্থায় দেখেছে এবং বলতে শুনেছে : ﻣَﻦْ ﻓَﺮِﺡَ ﺑِﻨَﺎﻓَﺮِﺣْﻨَﺎ ﺑِﻪٖ অর্থাৎ যে আমার প্রতি খুশি উদযাপন করে থাকে, আমিও তার উপর খুশি হয়ে যাই।” (খুলাছা ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১৫তম খন্ড, ৫২২,৫২৩ পৃষ্ঠা)
খুশিয়াঁ মানও ভাইও! ছরকার আঁ গেয়ে,
ছরকার আঁ গেয়ে শাহে আবরার আঁ গেয়ে।
ঈদে মিলাদুন্নবী সে হাম কো বেহদ পিয়ার হে,
ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ দো জাঁহা মে আপনা বেড়া পার হে।
অবৈধ প্রেম-ভালবাসা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন:- যদি কেউ অনিচ্ছাকৃত ভাবে কারো প্রেমে আসক্ত হয়ে যায় এবং শরীয়াত বিরোধী কোন আচরণ না করে। তবে কি সে গুনাহগার হবে?
উত্তর:- জ্বী, না। কেননা, এতে তার কোন ক্ষমতা ছিলো না।
প্রশ্ন:- তাহলে এখন প্রেম রোগীর কি করা উচিত?
উত্তর:- ধৈর্য ধারণ করে সাওয়াব অর্জন করা উচিত।
প্রশ্ন:- কি অপরূপ! প্রেমের মাধ্যমে সাওয়াবও অর্জন করা যায়?
উত্তর:- কেন নয়! এ কথাটা স্মরণ রাখবেন যে, না চাওয়া সত্ত্বেও যদি প্রেম হয়ে যায়, সেই অবস্থায়ও সাওয়াব অর্জন করার জন্য শরীয়াতের আনুগত্য আবশ্যক। উদাহরস্বরূপ; যদি কোন পুরুষের দৃষ্টি হঠাৎ কোন পর-নারীর উপর পড়ে যায় এবং তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়া সত্ত্বেও তার (সেই নারীর) চেহারা তার মনে গেঁথে যায়। অতঃপর অনিচ্ছাকৃত তার খেয়াল চলে আসে এবং না সেই নারীকে ইচ্ছাকৃত দেখেছে, না তার সাথে কখনও সাক্ষাৎ করেছে, ফোনেও কথাবার্তা হয়নি, তাকে (নারীকে) কখনোও ভালবাসাপূর্ণ চিঠিও লিখেনি এবং তাকে (নারীকে) কখনোও কোন ধরণের উপহারও দেয়নি, মোটকথা সেই ঘটে যাওয়া অনিচ্ছাকৃত ভালবাসাকে এমন ভাবে গোপন করে রাখে যে, অন্য কেউ বরং সেই মেয়েটিও সে সম্পর্কে জানে না। তাহলে সেই সত্যিকার প্রেমিক যদি এমন ভালবাসায় ভুগে ভুগে মৃত্যুবরণ করে, তবে সে শহীদ। যেমনিভাবে- রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম, হুযুর পুরনূর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর ইরশাদ হচ্ছে: “যে ব্যক্তি কারো প্রেমে আসক্ত হলো এবং সে পবিত্রতা অবলম্বন করলো এবং ভালবাসাকে গোপন রাখল অতঃপর সেই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলো, তবে সে শাহাদাতের মৃত্যুবরণ করলো।” (তারিখে বাগদাদ, ১৩তম খন্ড, ১৮৫ পৃষ্ঠা, নম্বর-৭১৬০)
আপনারা দেখলেন তো! সত্যিকার প্রেমিকের জন্য এটা শর্ত যে, সে যেন পবিত্রতা অবলম্বন করে এবং নিজের ভালবাসাকে গোপন রাখে। তখন সেই অবস্থায় মৃত্যবরণ করলে সে শহীদ বলে গণ্য হবে। দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত ১২৫০ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “বাহারে শরীয়াত” এর ১ম খন্ড ৮৫৯ পৃষ্ঠায় সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ শাহাদাতের ৩৬ প্রকার বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে ১৬ নম্বর এটা যে (সে ব্যক্তিও শহীদ যে) প্রেমে আসক্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, কিন্তু শর্ত হলো, যেন পবিত্রতা অবলম্বন করে।
প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পর বিয়ে করতে পারবে কিনা?
প্রশ্ন:- প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পর বিবাহ করাতে কি শরয়ী কোন বাঁধা রয়েছে?
উত্তর:- যদি কোন শরয়ী প্রতিবন্ধকতা না থাকে তাহলে বিবাহ করতে পারবে। স্মরণ রাখবেন! বিবাহের পূর্বে সাক্ষাৎ, চিঠি-পত্র, ফোনে কথাবার্তা এবং উপহার আদান-প্রদান করা ইত্যাদি হারাম এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ। কিছু প্রেমিক-প্রেমিকা পিতামাতা থেকে লুকিয়ে “কোর্ট ম্যারেজ” করে। এরকম করাতে অবশ্যই পিতামাতার অন্তরে কষ্ট দেওয়া এবং বিশেষ করে মেয়ের পিতামাতার অসম্মানি হয় এবং ছেলে যদি মেয়ের (কুফু) যোগ্য না হয় তবে মেয়ের পিতা অথবা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে আসলে বিয়েই হয় না। (যোগ্যতা (কুফু) সম্পর্কিত আরও প্রশ্নোত্তর কয়েক পৃষ্ঠা পর আসবে) নিজের অবৈধ প্রেমের জন্য ﻣَﻌَﺎﺫَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞ (আল্লাহর পানাহ! ) হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এবং জুলেখার ঘটনাকে দলিল বানানো অনেক বড় বোকামী ও হারাম। স্মরণ রাখবেন! প্রেম শুধু জুলেখার পক্ষ থেকেই ছিলো, হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এর পবিত্র সত্বা তা থেকে পবিত্র ছিলো, প্রত্যেক নবী মাসুম (নিষ্পাপ)।
শরীয়াত বিরোধী প্রেম-ভালবাসার ধ্বংসলীলা
প্রশ্ন:- আজকাল প্রেম-ভালবাসার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে শরীয়াতের বিরোধীতা করা হয়, এর কারণ কি?
উত্তর:- এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো, বর্তমানে অধিকাংশ মুসলমানের মধ্যে ইসলামী জ্ঞান না থাকা ও সুন্নাতে ভরা মাদানী পরিবেশ থেকে দূরত্ব। এই কারণেই চারিদিকে গুনাহের বন্যা বয়ে চলছে। T.V, V.C.R এবং ইন্টারনেট ইত্যাদিতে প্রেম কাহিনী ও অশ্লিল সিনেমা দেখে অথবা প্রেমিক-প্রেমিকারা প্রেম কাহিনীপূর্ণ পত্রিকার খবর এবং উপন্যাস, বাজারি মাসিক পত্রিকা, গল্পগুচ্ছ, কাল্পনিক প্রেম কাহিনী পড়ে বা সহ শিক্ষার কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে নারীপুরুষ একত্রে ক্লাসে বসে বা না-মাহরাম আত্মিয়ের সাথে মেলামেশা করে নিঃসংকোচতার অতল গহ্বরে পতিত হয়ে কেউ না কেউ কারো প্রেমে পড়ে যায়। প্রথমে একপক্ষ থেকে হয় অতঃপর যখন প্রথম ব্যক্তি দ্বিতীয়জনকে জানিয়ে দেয়, তখন অনেক সময় উভয় পক্ষ থেকে প্রেম হয়ে যায়। অতঃপর সাধারণত গুনাহের ভয়াবহ তুফান শুরু হয়ে যায়। ফোনের মাধ্যমে মন ভরে নির্লজ্জ কথাবার্তা বরং বেপর্দা হয়ে পরস্পর সাক্ষাত করা অব্যহত থাকে। চিঠিপত্র ও উপহার আদান-প্রদান হয়। গোপনে গোপনে বিয়ের কথার্বাতাও চলতে থাকে এবং পরস্পর বিয়ে করার জন্য ব্যাকুল হয়ে যায়, যদি পরিবারের লোকেরা বিয়েতে বাধা প্রদান করে, তবে অনেক সময় তারা পালিয়ে যায়। অতঃপর পত্রিকায় তাদের বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। বংশের সম্মান লোকের সামনে ধুলোয় মিশে যায়। কখনোও ‘কোর্ট ম্যারেজ’ করে, আবার কখনোও ﻣَﻌَﺎﺫَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞ (আল্লাহর পানাহ! ) এমনিতেই বিয়ে ছাড়াই…, এছাড়া এমনও হয়ে থাকে যে, যদি পালিয়ে যেতে না পারে, তখন আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। যার খবর প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আপনাদের শিক্ষার জন্য জমাদিউল আউয়াল ১৪২৭ হিজরী (৫-৬-২০০৬) সোমবারের জং পত্রিকার পক্ষ থেকে ইন্টারনেটের একটি সংবাদ নাম প্রকাশ না করে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে উপস্থাপন করছি।
তিন যুবতী বোনের সম্মিলিত আত্মহত্যা
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একটি শহরে তিন যুবতী বোনের বিষাক্ত ট্যাবলেট খেয়ে সম্মিলিত আত্মহত্যা করে। ১৭ বছরের বোন ফাস্ট ইয়ারে, ১৯ বছরের বোন র্থাড ইয়ারে ও ২৬ বছরের বোন M.A এর ছাত্রী ছিলো। রাতভর তারা তাদের মায়ের সাথে নিজের পছন্দনীয় বিয়ে ও সামাজিক বিষয়াদী নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকতো এবং তিন বোনের মধ্যে সর্বদা তর্কাতর্কি হতেই থাকতো। মা তাদের বিয়ে নিজের পছন্দ অনুযায়ী দিতে চাইছিলো। গতরাতেও সামাজিক বিষয়াদী ও বিয়ের ব্যাপারে তাদের মায়ের সাথে তর্কাতর্কিতে লিপ্ত ছিলো। রাতে তিন বোন একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে একত্রে বিষাক্ত ট্যাবলেট খেয়ে নিলো। পরে তাদেরকে ডাক্তারের কাছে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা প্রায় আধ ঘন্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মৃত্যুবরণ করে। তিনজনই তাদের বিধবা মায়ের সাথে বসবাস করতো, তাদের লাশের পোষ্টমর্টেম ৮ ঘণ্টা পর করা হয়। অতঃপর তিন বোনকে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে মাটি দেয়া হলো। পত্রিকায় উল্লেখিত নামে ধারণা করা যায় যে, তারা তিনজনই মুসলমান ছিলো, তাই এটাই দোয়া যে, হে আল্লাহ্! আমাদের এবং এই তিন মরহুমা বোনকে ও প্রিয় নবী, রাসূলে আরবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! এর সমস্ত উম্মতকে ক্ষমা করে দাও।
ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ
ভালবাসায় ব্যর্থ হওয়ায় আত্মহত্যা
(নাওয়ায়ে ওয়াক্ত) নামক করাচীর দৈনিক পত্রিকায় ৪ঠা আগষ্ট ২০০৪ইং তারিখের আরও দুটি খবর লক্ষ্য করুন: (১) পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করতে না পেরে এক যুবকের বিষ পান। (২) ভালবাসায় ব্যর্থ হয়ে (দাদু) সিন্ধু প্রদেশের এক যুবকের আত্মহত্যা। এরকম মৃত্যু খুবই আফসোসের হয়ে থাকে।
অবৈধ প্রেম-ভালবাসা থেকে বাঁচার পদ্ধতি
প্রশ্ন:- অবৈধ প্রেম-ভালবাসার কারণ ও তা থেকে বাঁচার পদ্ধতি বলে দিন।
উত্তর:- নগ্নতা ও অশ্লীলতা, সহ-শিক্ষা, বেপর্দা, সিনেমা, উপন্যাস এবং পত্রিকার প্রেম কাহিনী ও অশ্লীল বিষয়াদি পাঠ করা ইত্যাদি অবৈধ প্রেম-ভালবাসা সৃষ্টি হওয়ার কারণ। ছোটবেলায় এক সাথে খেলাধুলাকারী ছেলে-মেয়ে ও বাল্যকালের বন্ধুত্বের কারণে এতে পতিত হতে পারে। পিতামাতা যদি প্রথম থেকেই নিজের সন্তানকে অন্যের সাথে, নিকটাত্মীয় বরং আপন ভাই বোনের সন্তানদের সঙ্গে, এমনিভাবে নিজের মেয়েকে অন্যের ছেলের সাথে খেলাধুলা করা থেকে বিরত রাখতে সফল হন এবং বর্ণনাকৃত প্রতিটি কারণ থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন, তবে এই ভালবাসার রোগ থেকে যথেষ্ট পরিমাণে মুক্তি পাওয়া যাবে। সন্তানদেরকে ছোটবেলা থেকেই আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর প্রিয় হাবীব ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! এর ভালবাসার শিক্ষা দেওয়া উচিত। যদি কারো অন্তরে সত্যিকারে প্রিয় নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! এর ভালবাসা সৃষ্টি হয়ে যায়, তবে ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ সে ভালবাসার রোগ থেকে বেঁচে থাকবে।
মুহাব্বত গেয়র কি দিলো সে নিকালো ইয়া রাসূলাল্লাহ্!
মুঝে আপনা হি দিওয়ানা বানা লো ইয়া রাসূলাল্লাহ্!
কত বছর বয়সে বিয়ে করা উচিৎ?
প্রশ্ন:- বিয়ে কত বছর বয়সে করা উচিত?
উত্তর:- পিতামাতার উচিত, যখন সন্তান বালিগ হয়, তখন তাকে যেন বিয়ে দিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে হুযুর পুরনূর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! এর দু’টি বাণী লক্ষ্য করুন: (১) “যার ঘরে ছেলে সন্তান জন্ম নেয়, সে (যেন) তার উত্তম নাম রাখে। উত্তম আদব শেখায় এবং যখন সে বালিগ হয় তখন যেন তার বিয়ে করিয়ে দেয়। যদি তাকে বালিগ হওয়া সত্বেও বিয়ে না করায় এবং সে (ছেলে) কোন ধরনের গুনাহে পতিত হয় তখন তার সেই গুনাহ পিতার উপর হবে।” (শুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪০১ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৮৬৬৬)
প্রসিদ্ধ মুফাস্সীর হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ হাদীসে পাকের এই বাক্য “তার গুনাহ পিতার উপর বর্তাবে” এর ব্যাপারে বর্ণনা করেন: “এটা সেই অবস্থায় যে, যদি সন্তান গরীব হয় এবং বিয়ে করার সামর্থ্য না থাকে এবং যদি পিতা সম্পদশালী হয় এবং সন্তানের বিয়ে দিতে পারবে, কিন্তু অমনোযোগিতা অথবা সম্পদশালী পরিবারের মেয়ের সন্ধানে বিয়ে না দেয়। সেই অবস্থায় সন্তানের গুনাহ সেই অমনোযোগী পিতার উপর হবে। (মিরআতুল মানাজিহ, ৫ম খন্ড, ৩০ পৃষ্ঠা) (২) “তাওরাতে”র মধ্যে বর্ণিত আছে: “যার কন্যা সন্তানের ১২ বছর পূর্ণ হয়ে যায় এবং সে তার বিয়ে না দেয়। যদি সে মেয়ে কোন গুনাহে লিপ্ত হয় তখন সেই গুনাহ তার পিতার উপর বর্তাবে।” (শুয়াবুল ঈমান, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪০২ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৮৬৬৯) “মিরআতুল মানযিহ” ৫ম খন্ডের ৩১ পৃষ্ঠায় এ হাদীসে পাকের বাক্য “যার কন্যা সন্তানের ১২ বছর পূর্ণ হয়ে যায় এবং সে তার বিয়ে না দেয়” এর টীকায় বর্ণনা করেন: “অর্থাৎ যোগ্যতা সম্পন্ন হয় (কুফু মিলে যায়) এবং পিতা বিয়ে করিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। এতদাসত্ত্বেও শুধুমাত্র সম্পদশালীর সন্ধানে উদাসীনতার কারণে বিয়ে না দেয়।” এই হাদীসে পাক থেকে জানা গেলো, যদি আল্লাহ্ তাআলা তৌফিক দেয়, তাহলে কন্যা সন্তানের বিয়ে ১২ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই করিয়ে দিন। এখন তো পঁচিশ, ত্রিশ বছরের যুবতীও অবিবাহিত অবস্থায় ঘরে বসে থাকে। না B.A. পাশ লাখপতি ছেলে পাওয়া যায়, না বিয়ে হয়। আল্লাহ্ তাআলা মুসলমানদের চোখের পর্দা উঠিয়ে দিন। এই বাক্য “সেই গুনাহ তার পিতার উপর হবে” এর টীকায় বলেন: “অর্থাৎ সেই মেয়ের কৃত গুনাহের ভাগিদার তার পিতাও হবে। কেননা, সে (পিতা) তার (মেয়েটি) গুনাহের কারণ হয়েছে।” (মিরআতুল মানাযিহ, ৫ম খন্ড, ৩১ পৃষ্ঠা) আফসোস! আজকাল দুনিয়ার প্রচলিত রীতিনীতির কারণে বিয়ে দিতে দেরী করা হয়, যার কারণে প্রেম-ভালবাসার বিস্তার ও অগণিত গুনাহের ধারাবাহিকতা চলতে থাকে। আহ! যদি এমন কোন মাদানী রীতি প্রচলিত হয়ে যেতো যে, ছেলে ও মেয়ে যখনই বালিগ হওয়ার বয়সে পা রাখে তখনই তাদের বিয়ে হয়ে যায়। ﺍِﻥْ ﺷَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞّ এভাবে আমাদের সমাজ অগণিত গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে।
জ্বিন যদি নারীর উপর আসক্ত হয়ে যায় তবে…?
প্রশ্ন:- জ্বিন যদি কোন নারীর প্রেমে পড়ে যায় ও টাকা পয়সা দেয় তখন কি করতে হবে?
উত্তর:- ইমামে আহলে সুন্নাত ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ এর দরবারে এমনি একজন নারীর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো যাকে জ্বিন টাকা ইত্যাদি দিয়ে যেতো, তখন তিনি উত্তরে বললেন: “সেই জ্বিন যা কিছু নারীকে দেয়, তা নেয়া হারাম। কেননা, সেটা ব্যভিচারের ঘুষ। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া ২৩ খন্ড, ৫৬৬ পৃষ্ঠা)
জ্বিন যদি নারীকে জোরপূর্বক উপহার দেয় তবে…?
প্রশ্ন:- যদি সেই জ্বিন নারীকে জোরপূর্বক টাকা দেয় তখন সে কি করবে?
উত্তর:- যদি জ্বিন নেয়ার জন্য বাধ্য করে তাহলে নিয়ে ফকিরদেরকে সদকা করে দিবে। সেটা নিজে ব্যবহার করা হারাম। ((ফতোওয়ায়ে রযবীয়া ২৩ খন্ড, ৫৬৭ পৃষ্ঠা)
প্রেমিক-প্রেমিকার উপহার প্রদানের শরয়ী হুকুম
প্রশ্ন:- প্রেমিক-প্রেমিকা যদি পরস্পরের মধ্যে উপহার আদান-প্রদান করে। তবে তার হুকুম কি?
উত্তর:- (এটা ঘুষ) কবিরা গুনাহ, মারাত্মক হারাম এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ। “আল বাহরুর রাইক” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে: “প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পরের মাঝে যে উপহার আদানপ্রদান করে তা ঘুষ, সেটাকে ফিরিয়ে দেয়া ওয়াজিব এবং অন্য কেউ সেগুলোর মালিক হতে পারবে না।” (আলবাহরুর রাইক, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৪৪১ পৃষ্ঠা)
নাজায়িয উপহার ফেরত দেওয়ার উপায়
প্রশ্ন:- এরকম উপহার যার কাছ থেকে নেয়া হয়েছিল যদি সে মরে যায়, তাহলে কি করবে? যদি তাওবা করে নেয়, তাহলে কি রাখা জায়িয হবে?
উত্তর:- ঘুষের হুকুম বর্ণনা করতে গিয়ে আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “যে সম্পদ ঘুষ অথবা কবিতা বা গান গেয়ে অথবা চুরি করে অর্জন করে, তার উপর ফরয যে, যার কাছ থেকে নিয়েছিলো তাকে যেন ফিরিয়ে দেয়। যদি সে না থাকে তা হলে তার উত্তরাধিকারীদের ফিরিয়ে দিবে। আর যদি তার ঠিকানা জানা না থাকে তবে ফকিরদের সদকা করে দিবে। বেচাকেনা ইত্যাদি কোন কাজে সেই সম্পদকে ব্যবহার করা মারাত্মক হারাম। উল্লেখিত অবস্থা ব্যতিত অন্য কোন উপায়, এর ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারবে না। একই হুকুম সুদ ইত্যাদি অসৎ লেনদেনের। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, তা (অর্থাৎ সুদ) যার কাছ থেকে নিয়েছিলো তাকেই বিশেষভাবে ফিরিয়ে দেয়া ফরয নয় বরং তার অধিকার রয়েছে মালিককে ফিরিয়ে দেয়ার বা খয়রাত করে দেয়ার।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৩তম খন্ড, ৫৫১ পৃষ্ঠা)
আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ আরো বলেন: “যদি (নৃত্য পরিবেশনকারী বা গায়ককে টাকা দেয়ার) আসল উদ্দেশ্য ভালবাসা বৃদ্ধি করা এবং নিজের দিকে আকৃষ্ট করা হয়, তাহলে অবশ্যই ঘুষ বলে গণ্য হবে এবং তা ছিনিয়ে নেয়ার হুকুমে গন্য হবে।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২৩ খন্ড, ৫০৯ পৃষ্ঠা)
সুদর্শন বালককে উপহার দেয়া কেমন?
প্রশ্ন:- পুরুষের যৌন উত্তেজনা সহকারে সুদর্শন বালকের সাথে বন্ধুত্ব রাখা ও তাকে আরো আসক্ত করার জন্য উপহার ও দাওয়াতের ব্যবস্থা করা কেমন?
উত্তর:- এমন বন্ধুত্ব না জায়িয ও হারাম। বরং ফুকাহায়ে কিরাম ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ বলেন: “সুদর্শন বালকের দিকে যৌন উত্তেজনা সহকারে দেখাও হারাম।” (তাফসীরে আহমদিয়া, ৫৫৯ পৃষ্ঠা) এবং যৌন উত্তেজনার কারণে তাকে উপহার দেওয়া অথবা তাকে দাওয়াত করাও হারাম এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ।
মহিলারা না-মাহারিমকে উপহার দিতে পারবে কিনা?
প্রশ্ন:- ইসলামী বোনেরা না-মাহরাম আত্মীয় যেমন; খালু, ফুফা, দুলাভাই ইত্যাদিকে ভাল নিয়্যতে কোন মাহরামের মাধ্যমে উপহার পাঠাতে পারবে কি পারবে না?
উত্তর:- পাঠাতে পারবে না। উপহারের অদ্ভুত প্রভাব হয়ে থাকে। হাদীসে পাকে বর্ণিত রয়েছে: “উপহার হাকীমকে (বিচারককে) অন্ধ করে দেয়।” (আল ফিরদাউছ বিমাচুরিল খাত্তাব, ৪র্থ খন্ড, ৩৩৫ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৬৯৬৯)
অন্য একটি হাদীসে পাকে বর্ণিত রয়েছে: “উপহার দাও ভালবাসা বাড়বে।” (আসসুনা নুল কুবরা লিল বায়হাকী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ২৮০ পৃষ্ঠা) যাই হোক নারীদের তার না-মাহরাম আত্মীয়ের অন্তরে ভালবাসার বীজ বপন করার অনুমতি নেই।
প্রশ্ন:- কতিপয় প্রেমিক মুর্খতার কারণে হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ ও জুলেখার উদাহরণ পেশ করে, তাদের কে কিভাবে উত্তর দেয়া যায়?
উত্তর:- নিশ্চয় সেই দুর্ভাগা প্রেমিক মারাত্মক ভুলে লিপ্ত রয়েছে। নফসের ধোকায় পড়ে শয়তানের কথানুযায়ী চিন্তাভাবনা না করেই কোন নবীর ব্যাপারে মুখ খোলা ঈমানের জন্য খুবই সাংঘর্ষিক। স্মরণ রাখবেন! নবী ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡ এর সামান্য পরিমাণ বেয়াদবীও কুফরী। হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ আল্লাহ্ তাআলার নবী ছিলেন এবং প্রত্যেক নবী নিষ্পাপ। নবীর দ্বারা কোন প্রকারের মন্দ কাজ সংগঠিত হওয়া অসম্ভব। যেমনিভাবে- আল্লাহ্ তাআলা ১২তম পারা সূরা ইউসুফের ২৪নং আয়াতে ইরশাদ করেন:
ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻫَﻤَّﺖْ ﺑِﻪٖ ۖ ﻭَﻫَﻢَّ ﺑِﻬَﺎ ﻟَﻮْﻟَﺎ ﺃَﻥ ﺭَّﺍٰ ﺑُﺮْﻫَﺎﻥَ ﺭَﺑِّﻪٖ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং নিশ্চয় স্ত্রীলোকটা তার কামনা করেছিলো এবং সেও স্ত্রীলোকের ইচ্ছা করতো যদি আপন রবের নিদর্শন না দেখতো । (পারা১২, সূরা: ইউসূফ, আয়াত: ২৪)
সদরুল আফাযিল হযরত আল্লামা নঈম উদ্দিন মুরাদাবাদী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “আল্লাহ্ তাআলা সমস্ত নবীদের ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ পবিত্র অন্তরকে মন্দ চরিত্র ও মন্দ কাজ থেকে পবিত্র করে সৃষ্টি করেছেন এবং উত্তম চরিত্র দ্বারা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। এজন্য তারা সকল মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে। একটি বর্ণনা এমনও রয়েছে যে, “যখন জুলেখা তাঁর সামনে আসলো তখন তিনি ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ তাঁর সম্মানিত পিতা হযরত সায়্যিদুনা ইয়াকুব ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ কে দেখলেন যে, আঙ্গুল মোবারককে দাঁতের নিচে চাপ দিয়ে তাঁকে বেঁচে থাকার ইশারা করেছেন।” (খাযায়িনুল ইরফান, ৩৮০ পৃষ্ঠা)
সত্য এটাই যে, প্রেম শুধু জুলেখার পক্ষ থেকে ছিলো হযরত ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এর পবিত্র সত্বা তা থেকে পবিত্র ছিলো। পারা ১২, সূরা: ইউসুফের ৩০ নং আয়াতে মিশরের অভিজাত অনেক মহিলার বর্ণনা এভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে:
ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻧِﺴْﻮَﺓٌ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺪِﻳﻨَﺔِ ﺍﻣْﺮَﺃَﺕُ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳﺰِ ﺗُﺮَﺍﻭِﺩُ ﻓَﺘَﺎﻫَﺎ ﻋَﻦ ﻧَّﻔْﺴِﻪٖ ﺝ ﻗَﺪْ ﺷَﻐَﻔَﻬَﺎ ﺣُﺒًّﺎ ﻁ ﺇِﻧَّﺎ ﻟَﻨَﺮٰﻫَﺎ ﻓِﻲ ﺿَﻠٰﻞٍ ﻣُّﺒِﻴﻦٍ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং শহরে
কিছু নারী বললো, “আযীযের স্ত্রী১ তার
যুবকের২ হৃদয়কে প্রলোভিত করেছে; নিশ্চয়
তাঁর ৩ প্রেম তার ৪ অন্তরকে উন্মত্ত৫
করেছে, আমরাতো তাকে ৬ সুস্পষ্ট প্রেম-
বিভোর ৭ দেখতে পাচ্ছি।” (পারা: ১২, সূরা: ইউসুফ, আয়াত: ৩০)
(১) অর্থাৎ জুলেখা, (২) অর্থাৎ হযরত ইউসুফ, (৩) অর্থাৎ হযরত ইউসুফ, (৪) অর্থাৎ জুলেখা, (৫) অর্থাৎ ছেয়ে গেলো, (৬) অর্থাৎ জুলেখাকে, (৭) অর্থাৎ প্রেমে বিভোর,
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “জুলেখার প্রবল ইচ্ছা ছিলো, কিন্তু হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ শক্তি ও সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তার প্রতি আসক্ত হওয়া থেকে বিরত ছিলেন। আল্লাহ্ তাআলা কোরআনে পাকে তাঁর বিরত থাকাকে অনেক প্রসংশা করেছেন।” (ইহইয়াউল উলূম, ৩য় খন্ড, ১২৯ পৃষ্ঠা)
জুলেখার কাহিনী
প্রশ্ন:- “জুলেখার কাহিনীটি” শুনিয়ে দিন যেন হযরত ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এর ব্যাপারে প্রচার হওয়া ভুল ধারণা, দূর হয়ে যায়।
উত্তর:- জুলেখার ঘটনা খুবই অদ্ভুত। হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ এর তাফসীর “সূরা ইউসুফ” এ বর্ণিত খুবই দীর্ঘ কাহিনীকে সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করার চেষ্টা করছি: “পশ্চিমাদেশের বাদশাহ তেয়মুছের খুবই সুন্দরী শাহাজাদী ছিলো। নয় বছর বয়সে যখন সে স্বপ্নযোগে প্রথমবার সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এর দর্শন করলো তখনই সে ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এর প্রেমে পাগল হয়ে গেলো। ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এর সৌন্দর্য্যতার কি অপরূপ মাধুর্য? যখন তাকে মিসরের বাজারে আনা হলো তখন আল্লাহ্ তাআলা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এর আসল সৌন্দর্য্যের পর্দা উঠিয়ে দিলেন। লোকেরা তার দর্শনের জন্য ব্যাকুল হয়ে দৌঁড়াদোঁড়ি করতে লাগলো, সেই ভীড়ে ২৫০০০ (পঁচিশ হাজার) পুরুষ ও মহিলা মারা গেলো, ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এর সৌন্দর্য্যতার আকর্ষন সহ্য করতে না পেরে আরও পাঁচ হাজার পুরুষ ও ৩৬০ জন যুবতী নারী মৃত্যুবরণ করলো। জুলেখা একজন মূর্তি পূঁজারি ছিলো। সে ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ কে পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। এমনকি সময়ের আবর্তনে সে বৃদ্ধা, অন্ধ ও দরিদ্র হয়ে গেলো। যখন হযরত সায়্যিদুনা ইয়াকুব ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ মিশরে আগমন করলেন, তখন হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে সংবধর্না জানানোর জন্য বের হলেন। জুলেখাও একজন মহিলার হাত ধরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেলো এবং সেই মহিলাকে বললো যখনই হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এদিক দিয়ে যাবেন আমাকে জানাবে। সেই মহিলাটি যখন জানালো তখন জুলেখা হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ কে ডাকলো, কিন্তু তাঁর মনোযোগ সে দিকে গেলো না। তখনই হযরত সায়্যিদুনা জিবরাঈল ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ আগমন করলেন এবং সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এর বাহন খচ্চরের লাগাম ধরে বললেন: নিচে নামুন এবং এই মহিলাকে উত্তর দিন। তিনি ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ নেমে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কে? জুলেখা নিজের মাথায় মাটি লাগিয়ে বলতে লাগলো: আমি সেই জুলেখা! যে মন প্রাণ দিয়ে আপনার সেবা করেছে। তিনি ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ আল্লাহ্ তাআলা হুকুমে জুলেখাকে তার চাহিদা জিজ্ঞাসা করলেন, তখন সে বিবাহের আবেদন করলো। ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ বললেন: তোমার মতো কাফিরাকে আমি কিভাবে বিয়ে করবো? আল্লাহ্ তাআলার শান দেখুন! হযরত সায়্যিদুনা জিব্রাঈল ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ জুলেখাকে স্পর্শ করতেই তার ফিরে যাওয়া যৌবন ও অপরূপ সৌন্দর্য্যতা ফিরে আসলো। মূর্তি পূঁজা থেকে তাওবা করে সে মু’মিনা (ঈমানদার) হয়ে গেলো।
হযরত সায়্যিদুনা ইয়াকুব ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ কে জুলেখার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দিলেন। বর্ণিত আছে: হযরত সায়্যিদাতুনা জুলেখা ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ঈমান আনার পর যখন হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। তখন তার জৈবিক চাহিদা পূরণ হয়ে যায় এবং তিনি ইবাদত বন্দেগীতে এমন ভাবে লিপ্ত হয়ে গেলেন যে, অনেক উচ্চ পর্যায়ের আবিদা ও যাহিদা হয়ে গেলেন। অন্য এক রেওয়ায়েত অনুযায়ী: তিনি হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এর সম্মানীত খেদমতে ৭৩ বছর ছিলেন এবং তার গর্ভে এগারজন ছেলে সন্তান জন্ম লাভ করে।” (তাফসীরে সুরায়ে ইউসুফ অনুদিত, ৯৩, ৯৬, ১৮৪, ২৩৭-২৩৯ পৃষ্ঠা) আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক।
ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ
দূর্ভাগা প্রেমিকদের যুক্তি খন্ডন হয়ে গেলো!
এই ঘটনা দ্বারা ﺍَﻇْﻬَﺮُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﻤﺲِ ﻭَﺍَﺑْﻴَﻦُ ﻣِﻦَ ﺍﻻَﻣْﺲِ অর্থাৎ সূর্যের চেয়েও অধিক আলো এবং গতকালের চেয়েও অধিক বিশ্বাসযোগ্য, হয়ে গেলো যে, আজকালের দূর্ভাগা প্রেমিকরা তাদের গুনাহে ভরা প্রেমকে সঠিক সাব্যস্ত করার জন্য ﻣَﻌَﺎﺫَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞ ( আল্লাহর পানাহ্! ) হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ ও জুলেখার ঘটনাকে উপস্থাপন করে, তারা অনেক বড় ভুল করছে। সূরা ইউসুফে শুধুমাত্র জুলেখার পক্ষ থেকে প্রেমের বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু কোথাও এমন কোন ইশারাও নেই যে, ﻣَﻌَﺎﺫَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞ (আল্লাহর পানাহ্! ) হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ ও তার প্রেমে মগ্ন ছিলেন। তাই যারা হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ কেও জুলেখার প্রেমে আসক্ত বলেন, তারা যেন তা থেকে তাওবা করেন। আল্লাহ্ তাআলার নবী ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ এর মর্যাদা অনেক বেশি এবং তাঁরা গুনাহ থেকে নিষ্পাপ।
হে আল্লাহ্! আমাদেরকে তোমার ভালবাসা ও তোমার প্রিয় হাবীব ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর সত্যিকারের ভালবাসা দান করো। হে আল্লাহ্! দুনিয়ার ভালবাসা আমাদের অন্তর থেকে বের করে দাও। হে আল্লাহ্! যে মুসলমান গুনাহে ভরা প্রেমের জালে বন্দি রয়েছে, তাদেরকে তা থেকে মুক্তি দিয়ে আপন প্রিয় হাবীব ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর চুল মোবারকের প্রেমিক বানিয়ে দাও।
ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ
মুহাব্বত গেয়র কি দিল সে নিকালো ইয়া রাসূলাল্লাহ্!
মুঝে আপনী হি দিওয়ানা বানা লো ইয়া রাসূলাল্লাহ্!
প্রশ্ন:- যদি এক পক্ষ অর্থাৎ কোন মেয়ে কোন ছেলের প্রেমে পড়ে, তাকে বিরক্ত করে, তখন কি করা উচিত?
উত্তর:- কখনোও তার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত নয়। যদি শয়তানকে আঙ্গুল ধরার জন্য দেয়া হয় তবে সে হাত ধরে নিবে। অতঃপর গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা শুধু কঠিন নয় বরং সম্ভবত অসম্ভবই হয়ে যাবে। অতি শীঘ্রই কোথাও ভাল জায়গায় বিয়ের ব্যবস্থা করে নেয়া উচিত। কেননা, এভাবেও অধিকাংশ সময় প্রেম থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বোরকা পরিহিতা গ্রাম্য মহিলা
দৃষ্টিকে হিফাযতকারী এক ভাগ্যবান সুদর্শন যুবকের ঈমান তাজাকারী ঘটনা লক্ষ্য করুন। হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ গাযালী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ উদ্ধৃত করেন: “হযরত সায়্যিদুনা সুলায়মান বিন ইয়াসার ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ খুবই খোদাভীরু ও পরহেযগার এবং অপরূপ সুদর্শন যুবক ছিলেন। একবার হজ্জ্বের সফরে “আবওয়াহ” নামক স্থানে তিনি একা তাবুতে অবস্থান করছিলেন। তার সফরসঙ্গি খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য বাইরে গিয়েছিলেন। হঠাৎ এক বোরকা পরিহিতা গ্রাম্য মহিলা তার তাবুতে প্রবেশ করলো এবং সে তার চেহারার পর্দা উঠিয়ে দিলো! তার সৌন্দর্য্যতা খুবই ফিতনাযুক্ত ছিলো। সেই মহিলাটি বলতে লাগলো: আমাকে কিছু দান করুন। তিনি মনে করলেন যে সম্ভবত রুটির আবেদন করছে। তখন সেই মহিলাটি বলতে লাগলো: একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে যা কামনা করে আমিও তাই কামনা করছি।
তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ খোদাভীরুতায় কাঁপতে লাগলেন। “আমার কাছে তোকে শয়তান পাঠিয়েছে” এতটুকু বলার পর তিনি নিজের মাথাকে হাটুর উপরে রাখলেন ও উচ্চ আওয়াজে কান্না করতে লাগলেন, এ অবস্থা দেখে বোরকা পরিহিতা গ্রাম্য মহিলাটি হতভম্ব হয়ে তাড়াতাড়ি তাবু থেকে বের হয়ে গেলো। যখন তার সফরসঙ্গী ফিরে আসলো এবং দেখলো যে, তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ কেঁদে কেঁদে তাঁর চোখগুলো ফুলিয়ে দিলেন এবং গলার আওয়াজ বসিয়ে দিলেন। তখন সে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলো। তিনি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ প্রথমে তাল বাহানা করতে লাগলেন। কিন্তু বন্ধুর বারবার জিজ্ঞাসার কারণে সত্যি ঘটনা প্রকাশ করলেন। তখন সেও কাঁদতে লাগলো। তিনি বললেন: তুমি কেন কান্না করছো? সে বললো: আমার তো আরও অধিক পরিমাণে কান্না করা উচিত। কেননা, যদি আপনার পরিবর্তে আমি হতাম, তাহলে সম্ভবত ধৈর্যধারন করতে পারতাম না। (অর্থাৎ সম্ভবত গুনাহে লিপ্ত হয়ে যেতাম) অতঃপর উভয়ে কাঁদতে কাঁদতে মক্কায়ে মুকাররমায় পৌছে গেলেন। তাওয়াফ ও সাঈ ইত্যাদি করার পর হযরত সায়্যিদুনা সুলায়মান বিন ইয়াসার ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ কাবা শরীফের হাতিমের মধ্যে উভয় হাটু মাটিতে রেখে চাদর দিয়ে বেঁধে বসে গেলেন। ততক্ষণাৎ ঘুম তাকে ঘিরে নিলো এবং স্বপ্নের দুনিয়ায় চলে গেলেন। (স্বপ্নে) এক অপরূপ সৌন্দর্য্যের অধিকারী, সুগন্ধিযুক্ত সুন্দর পোশাক পরিহিত দীর্ঘ উচ্চতার একজন বুযুর্গকে দেখলেন। হযরত সায়্যিদুনা সুলায়মান বিন ইয়াসার ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ জিজ্ঞাসা করলেন: “আপনি কে?” উত্তর দিলেন: “আমি (আল্লাহর নবী) ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ ” তখন তিনি বললেন: “ইয়া নবীয়াল্লাহ্! জুলেখার সাথে আপনার ঘটনাটি খুবই বিস্ময়কর।” তখন ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ বললেন: “আবওয়া নামক স্থানে গ্রাম্য মহিলার সাথে সংগঠিত আপনার ঘটনাটিও বিস্ময়কর।” (ইহ্ইয়াউল উলুম, ৩য় খন্ড, ১৩০ পৃষ্ঠা)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হোক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের বিনা হিসাবে ক্ষমা হোক। ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ
আপনারা দেখলেন তো! সুলায়মান বিন ইয়াসার ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ নিজ থেকেই আগত বোরকা পরিহিতা মহিলাকে তাড়িয়ে দিলেন। (শুধু তাই নয়) বরং খোদার ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন। যার ফলে হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ ﻋَﻠٰﯽ ﻧَﺒِﯿِّﻨَﺎﻭَﻋَﻠَﯿْﮧِ ﺍﻟﺼَّﻠﻮٰۃُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡ স্বপ্নযোগে এসে তাকে উৎসাহ প্রদান করেন। যাই হোক দুনিয়া ও আখিরাতের মঙ্গল এতেই যে, নারী সম্প্রদায় লাখো মন আকৃষ্ট ও গুনাহের প্রতি আগ্রহী করুক, কিন্তু মানুষের উচিত যে কখনোও যেন তার ধোঁকায় না পড়া। প্রতিটি অবস্থায় তার ধোঁকা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে ও অগণিত নেকী অর্জন করুন।
প্রশ্ন:- যদি কারো সাথে প্রেম হয়ে যায়, কুদৃষ্টি ইত্যাদি গুনাহের ধারাবাহিকতাও চলতে থাকে এবং বিয়ের ব্যবস্থাও না হয়। তখন তা থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে?
উত্তর:- সত্যিই এ অবস্থাটি খুবই ধৈর্য পরীক্ষা স্বরূপ। এই সময় যে সমস্ত গুনাহ সংগঠিত হয়েছে, তা থেকে সত্য অন্তরে তাওবা করে এই গুনাহে ভরা প্রেম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ্ তাআলার দরবারে কান্নাকাটি করে দোয়া করুন, তাকে (প্রেমিককে) দেখা থেকে বেচেঁ থাকুন, বরং যদি তার কোন ছবি অথবা উপহার এবং অন্য কোন চিহ্ন নিজের কাছে থাকে তবে সেগুলোকে দেখবেন না এবং তৎক্ষনাৎ সেই জিনিসগুলো নিজের কাছ থেকে সরিয়ে ফেলুন, তার ফোন ধরবেন না, তার প্রেমপত্র পড়বেন না, (শুধু তাই নয়) যতটুকু সম্ভব তার চিন্তাভাবনা করা থেকেও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন। নিজেকে দ্বীনের কাজে একেবারে ব্যস্ত করে দিন। আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর প্রিয় নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর ভালবাসা নিজের অন্তরে বৃদ্ধি করুন এবং রাসূল ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ এর দরবারে ফরিয়াদ জানাতে থাকুন।
মুহাব্বত গেয়র কি দিল সে নিকালো ইয়া রাসূলাল্লাহ্!
মুঝে আপনা হি দিওয়ানা বানা লো ইয়া রাসূলাল্লাহ্!
অবৈধ প্রেম-ভালবাসা থেকে বেঁচে থাকার রূহানি চিকিৎসা
প্রশ্ন:- অবৈধ প্রেম-ভালবাসা থেকে বেঁচে থাকার জন্য কোন রূহানি চিকিৎসা বলে দিন।
উত্তর:- পূর্বের প্রশ্নের উত্তরের শুরুতে যে মাদানী ফুল উপস্থাপন করা হয়েছে, তার পাশাপাশি কোরআনে কারীমে অন্তর্ভুক্ত এই ‘আমলটি’ও অবশ্যই করে নিন:
ﺑِﺴۡﻢِ ﺍﻟﻠﮧِ ﺍﻟﺮَّﺣۡﻤٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﯿۡﻢِ ﻟَﺂ ﺍِﻟٰﻪَ ﺍِﻟَّﺎ ﺍَﻧْﺖَ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﺍِﻧِّﻰْ ﻛُﻨْﺖُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴْﻦَ – ﺍَﻟﻠﻪُ ﻧُﻮْﺭُ ﺍﻟﺴَّﻤٰﻮٰﺕِ ﻭَﺍﻟْﺎَﺭْﺽِ – ﻟَﺎﺗَﺎْﺧُﺬُﮦٗ ﺳِﻨَﺔٌﻭَّﻟَﺎﻧَﻮْﻡٌ
অযু সহকারে তিনবার পাঠ করে (পূর্বে ও পরে একবার দরূদ শরীফ পাঠ করে) পানিতে ফুঁক দিয়ে পান করে নিন। এই আমলটি ৪০ দিন পর্যন্ত চালু রাখুন। মহিলারা নাপাকির দিনে (পিরিয়ডের দিনে) বর্ণিত আমলটি করবে না। (বরং) পাক হওয়ার পর যেখান থেকে বন্ধ করেছিলো সেখান থেকে গননা শুরু করবে। নিয়মিত নামায আদায় করা খুবই জরুরী।
পর্দার মাসআলা (একাদশ পর্ব) দোয়ার ফযীলত
পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।