পর্দার মাসআলা (ত্রয়োদশ পর্ব)
কুফু (যোগ্যতা) কাকে বলে?
প্রশ্ন:- কুফু কাকে বলে?
উত্তর:- সাধারণ পরিভাষায় শুধুমাত্র স্ব-জাতিকে (বংশ) কুফু বলা হয়ে থাকে এবং শরীয়াতে কুফুর সংজ্ঞা হলো; “জাতি অথবা ধর্ম অথবা পেশা অথবা চলাফেরা অথবা অন্য কোন কর্মে অযোগ্য না হওয়া, যা দ্বারা বিয়ে হওয়ায় অভিভাবকের জন্য (অর্থাৎ মেয়ের বাবা, দাদা ইত্যাদি) সামাজিক ভাবে লজ্জা ও বদনামীর কারণ হয়।” (ফতোওয়া মালেকুল উলামা, ২০৬ পৃষ্ঠা) সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ “বাহারে শরীয়াত”এ বর্ণনা করেন: “যোগ্যতার জন্য ছয়টি জিনিসের উপর নির্ভর করা হয়: ১. জাত (বংশ)। ২. ইসলাম। ৩. পেশা। ৪. আযাদ (স্বাধীন হওয়া)। ৫. সততা। ৬. সম্পদ।” (বাহারে শরীয়াত, ৭ম অংশ, ৫৩ পৃষ্ঠা)
কুফু’র প্রতিটি শর্তের বিস্তারিত বর্ণনা
(১) জাত (বংশ) এর বর্ণনা
প্রশ্ন:- বংশের মধ্যে যোগ্যতা দ্বারা কি উদ্দেশ্য?
উত্তর:- বংশের মধ্যে যোগ্যতা দ্বারা উদ্দ্যেশ হলো; প্রচলিত নিয়মানুযায়ী মেয়ের বিপরীতে ছেলের বংশ হয়তো উচ্চ হবে অথবা সমান, আর যদি সামান্য কম হয়েও যায় তবে এতটুকু যেন কম না হয় যে, মেয়ের অভিভাবকের (অর্থাৎ বাবা ও দাদা ইত্যাদি) জন্য অসম্মানের কারণ হয়। বংশের উচ্চতা ও নিম্নতা সমান পর্যায় হওয়ার কিছু বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নরূপ: (ক) কোরাইশের যতগুলো বংশ রয়েছে তা সবগুলো পরস্পর যোগ্যতা রাখে। শুধু তাই নয়, কোরাইশ তো বটে, কিন্তু হাশেমি নয়। তবে এমন কোরাইশি হাশেমি বংশের যোগ্য। “ফতোওয়ায়ে রযবীয়া”য় বর্ণিত আছে: “সৈয়দজাদীর বিয়ে কোরাইশ বংশের প্রতিটি বংশের সাথে হতে পারবে, হোক সে আলাবী বংশের অথবা আব্বাসি অথবা জাফরি অথবা সিদ্দীকি অথবা ফারুকি অথবা উসমানি অথবা উমাবী।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১১তম খন্ড, ৭১৬ পৃষ্ঠা)
(খ) যে কোরাইশি নয়, সে কোরাইশির যোগ্যও নয়।
(গ) কোরাইশ বংশ ব্যতিত আরবের প্রতিটি বংশ পরস্পর যোগ্যতা রাখে। আনসার, মুহাজেরিন সবাই এতে সমান।
(ঘ) অনারবী বংশ আরবীর যোগ্য নয়। কিন্তু যদি আলিমে দ্বীন হয়, তবে তাঁর জ্ঞানের আভিজাত্য বংশের আভিজাত্যের উপর প্রাধান্যতা রাখে। (বাহারে শরীয়াত, ৭ম অংশ, ৫৩ পৃষ্ঠা)
(ঙ) অনারবী বংশগুলোতে বংশ ব্যতিত অন্য বিষয়ে যোগ্যতার ব্যপারে লক্ষ্য রাখবে এবং অনারবী বংশকে ঘৃনিত মনে করার বড় কারণ এই পেশার জন্যই। (ফতোওয়ায়ে আমজাদিয়া, ২য় খন্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা) এজন্য প্রচলিত সমাজে যদি কোন বংশকে তার পেশার কারণে নিম্ন পর্যায়ের ধারণা করে তবে এটিও ছেলের অযোগ্যতার একটি কারণ। (ফতোওয়ায়ে ফয়যে রাসূল, ১ম খন্ড, ৭০৫ পৃষ্ঠা)
অনারবী ছেলে ও আরবী মেয়ে
প্রশ্ন:- অনারবী ও আরবীর মধ্যে (কুফু) যোগ্যতা আছে কিনা?
উত্তর:- অনারবীদের মধ্যে আলিমে দ্বীন ব্যতিত অন্য কেউ আরবীর যোগ্য নয়। সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত “বাহারে শরীয়াত”এর ৭ম অংশের ৫৩ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন: “কোরাইশের মধ্যে যত গোত্র রয়েছে তারা সবাই পরস্পর যোগ্য। শুধু তাই নয়, যারা ‘কোরাইশী কিন্তু হাশেমী নয়’ তারা হাশেমীর যোগ্য এবং যারা ‘কোরাইশী নয়’ তারা কোরাইশীর যোগ্যও নয়। কোরাইশ ব্যতিত আরবের প্রতিটি বংশ পরস্পর সমান যোগ্যতা রাখে। আনসার, মুহাজেরিন সবাই এতে সমান। অনারবী আরবীর যোগ্য নয়, আলিমে দ্বীন ব্যতিত কোন অনারবী আরবীর যোগ্য হতে পারে না। কেননা, তার মর্যাদা বংশের মর্যাদার উর্ধ্বে।”(ফতোওয়ায়ে ক্বাযি খাঁন, ১ম খন্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা। আলমগিরী, ১ম খন্ড, ২৯০, ২৯১ পৃষ্ঠা)
আলিমে দ্বীনের অনেক বড় একটি ফযীলত
আমার আক্বা আ’লা হযরত মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ“ফতোওয়ায়ে রযবীয়া’ এর ১১তম খন্ডের, ৭১৩ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন: “ফতোওয়ায়ে খায়রিয়া”য় বর্ণিত আছে; হযরত ইবনে আব্বাস ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ বলেন: “ওলামায়ে কিরামদের মর্যাদা সাধারণ মু’মিন থেকে ৭০০ গুন বেশি এবং প্রতি দুটি মর্যাদার মাঝে ৫০০ বছর সফরের সমান (দূরত্ব রয়েছে)।” আর এতে সবাই একমত এবং সকল ইলমি কিতাব, কোরাইশি লোকের উপর আলিমের মর্যাদা বৃদ্ধি হওয়াতে একমত, যেমনটি আল্লাহ্ তাআলা তাঁর ইরশাদে ﻫَﻞْ ﻳَﺴْﺘَﻮِﻯ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻟَﺎ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ ‘জ্ঞানীরা ও অজ্ঞলোকেরা কি এক সমান?’ (পারা: ২৩, সূরা: যুমার, আয়াত: ৯)) কোরাইশি ও কোরাইশি নয় এমনদের মধ্যে কোন ধরনের পাথর্ক্য করা হয় নাই।” (ফতোওয়ায়ে খাইরিয়া, ২য় খন্ড, ২৩৪ পৃষ্ঠা)
আ’লা হযরত ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “ ﻗُﻠْﺖُ (অর্থাৎ আমি বলছি) আমরা আলিমকে “দ্বীনের আলিম ও আল্লাহ্ওয়ালা আলিমের”মধ্যে পরিবেষ্টন করবো। কেননা, সত্যিকার আলিম তারাই। আর বদ মাযহাব উলামা তো মূর্খ থেকেও নিকৃষ্ট।” ১১তম খন্ডের ৭১৪ পৃষ্ঠায় তিনি আরো বলেন: “সেই আলিমের এই শর্তেও উপনীত হওয়া আবশ্যক যে, যেন সে একেবারে নগন্য ও নিকৃষ্ট রূপে প্রসিদ্ধ না হয়। যেমন; জেলে, নাপিত, মুছি (এরকম আরও)। কেননা, নির্ভরযোগ্যতা একথার উপর যে, এলাকায় প্রচলিতভাবে সে যেন নিকৃষ্ট গন্য না হয়। যেমনটি বড় বড় উলামায়ে কিরামগণ বলেছেন।” মুহাক্কিক আলাল ইত্বলাক নিজের কিতাব “ফাতহুল কাদীর”এ বলেন: “এলাকার লোকদের নিকৃষ্ট মনে করাই এর কারণ, সুতরাং হুকুম এর উপরই নির্ভরশীল।” ৭১৫ পৃষ্ঠায় তিনি আরো বলেন: “জেলে, ধোপি, নাপিত ও মুছির কালিমা ইলমের কারণে মুছে যায় না। তবে হ্যাঁ! যদি তারা এই পেশা দীর্ঘদিন যাবত ত্যাগ করে দেয় এবং লোকেরা সম্মানের সহিত তাদের সাথে সাক্ষাত করে এবং লোকদের অন্তরে তাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে তারা সম্মানীত হয়। এখন বড় লোকের মেয়েকে বিয়ে করাতে কোন অসম্মানের কারণ না হয়, তবে অন্য কথা।”
মেমন বংশের ছেলে ও সৈয়দ বংশের মেয়ের কোর্ট ম্যারেজ
প্রশ্ন:- যদি সৈয়দজাদী তার পিতার অজান্তে নিজের ইচ্ছানুযায়ী কোন মেমন বংশের ছেলেকে কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে করে, তবে কি বিয়ে হয়ে যাবে?
উত্তর:- এমন অবস্থায় বিয়েই হবে না। কারণ সৈয়দ বংশের সম্মান মেমন বংশ থেকে উচ্চ ও উত্তম। এজন্য মেমন বংশের ছেলে সৈয়দজাদীর যোগ্য হতে পারে না এবং মেয়ে যখন অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে বিয়ে করে, তখন বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য ছেলের যোগ্য হওয়া আবশ্যক।
প্রশ্ন:- বিয়ের পর যদি পরিবারের সদস্যরা আপোষ করে নেয় এবং সৈয়দজাদীর পিতাও সেই বিয়েতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, তা হলে এখন তো কোন সমস্যা নেই?
উত্তর:- সমস্যা কেন থাকবে না। সেই সৈয়দজাদীর সন্তুষ্টির পাশাপাশি বিয়ের পূর্বেই তার পিতার সন্তুষ্টিও থাকা আবশ্যক ছিলো। বিয়ের পরের সন্তুষ্টি কোন কাজে আসবে না। শরীয়াত অনুযায়ী নতুন ভাবে পুনরায় বিয়ে করতে হবে। আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “শরীয়াতের মধ্যে অযোগ্য সেই, যে বংশ, ধর্ম, পেশা ও চলাফেরায় এমন নিচুঁ স্তরের হওয়া, যার সাথে মেয়ের বিয়ে দেয়ায় মেয়ের অভিবাবকদের অসম্মানিত হতে হয়। এমন ব্যক্তির সাথে যদি বালিগা মেয়ে নিজেই বিয়ে করে, তবে বিয়েই হবে না। যদিওবা অভিভাবক বাধা প্রদান না করে এবং না সেই ব্যাপারে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করে। এরকম বিয়ে সেই অবস্থায় জায়েয হবে, যখন অভিভাবক বিয়ের পূর্বেই সেই অযোগ্য অর্থাৎ বর্ণিত অবস্থাদি সম্পর্কে অবহিত হয়ে, খুশি মনে প্রকাশ্য ভাবে সেই ছেলের সাথে বিয়ে করার অনুমতি প্রদান করে। বর্ণিত শর্তগুলোর মধ্যে যদি একটি শর্তও পাওয়া না যায়, তবে সংগঠিত হওয়া বিয়ে বাতিল হয়ে যাবে এবং অভিভাবকের এই বিয়ে ভঙ্গ করারই বা কি প্রয়োজন! কেননা এসব তখনই করা হয়, যখন বিয়ে সংঘঠিত হয়ে যায়। এটাতো কোন বিয়েই হয়নি।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১১তম খন্ড, ২৮০ পৃষ্ঠা)
সৈয়দজাদা ও মেমন বংশের মেয়ের কোর্ট ম্যারেজ
প্রশ্ন:- যদি বালিগ সৈয়দজাদা তার পিতার বিনা অনুমতিতে নিজের ঘরে কর্মরত বালিগা মেমন বংশের মেয়েকে কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে করে, তাহলে কি হবে?
উত্তর:- যদি অন্য কোন শরয়ী বাঁধা না থাকে তাহলে বিয়ে হয়ে যাবে। মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত “বাহারে শরীয়াত” ৭ম খন্ডের, ৫৩ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে: “যোগ্যতা (কুফু) শুধুমাত্র পুরুষের পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য। মেয়ে যদিওবা নিম্ন পর্যায়ের হয় তবে তা গন্য নয়। বাবা ও দাদা ব্যতিত যদি অন্য কোন অভিভাবক নাবালিগ ছেলের বিয়ে কোন অযোগ্য মেয়ের সাথে করিয়ে দেয় তবে বিয়ে হবে না এবং যদি বালিগ ছেলে নিজেই বিয়ে করতে চায় তবে অযোগ্য মেয়ের সাথেও করতে পারবে। কেননা, মেয়ের পক্ষ থেকে এই অবস্থায় যোগ্যতা গ্রহণযোগ্য নয় এবং নাবালিগ অবস্থায় উভয়ের পক্ষ থেকে যোগ্যতা শর্ত।” (বাহারে শরীয়াত, ৭ম অংশ, ৫৩ পৃষ্ঠা) এই মাসাআলা শুধুমাত্র বিয়ে শুদ্ধ হওয়া পর্যন্তই সঠিক। তবে এভাবে “কোর্ট ম্যারেজ” করাতে পারিবারিক সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং বংশের খুবই বদনাম হয়। এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য বিয়ে মা-বাবার সন্তুষ্টিতেই করা উচিত।
প্রশ্ন:- যদি কোন পাঠান বংশের মেয়ে রাজপুত বংশের মুসলমান ছেলের সাথে অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে বিয়ে করে, তাহলে কি বিয়ে হয়ে যাবে?
উত্তর:- রাজপুত একটি সম্মানিত বংশ। অতএব যদি যোগ্যতার (কুফুর) অবশিষ্ট শর্তগুলো পাওয়া যায় এবং বিয়ের শর্তাবলী সম্পন্ন হয়, তাহলে বিয়ে হয়ে যাবে। “ফতোওয়ায়ে রযবীয়া” শরীফে বর্ণিত রয়েছে: “হিন্দুওয়ারি বংশের মধ্যে চারটি বংশকে উত্তম গন্য করা হয়। তার মধ্যে ছেতরা অর্থাৎ ঠাকুর দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে, হিন্দুস্থানের (ভারত) অধিকাংশ রাজত্ব সেই বংশেরই। এজন্যই তাদেরকে “রাজপুত” বলা হয়। হিন্দুওয়ারী বংশের মধ্যে তাদের সম্মানিত হওয়াটা প্রকাশ্য।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১১তম খন্ড, ৭১৯ পৃষ্ঠা) তবে হ্যাঁ! মেয়ে যদি কোন বংশের এমন ছেলের সাথে অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে বিয়ে করে, যাকে তার পেশার কারণে সমাজে নিকৃষ্ট মনে করা হয়, তাহলে এমতাবস্থায় বিয়ে হবে না। এরকম একটি প্রশ্নের উত্তর “ফতোওয়ায়ে ফয়যে রাসূল” থেকে লক্ষ্য করুন:
প্রশ্ন- হিন্দা (নাম) পাঠান বংশীয় এবং ছেলে ঘানচী বংশীয় অর্থাৎ মুসলমান তৈল ব্যবসায়ী, তাহলে কি সে হিন্দার যোগ্য হতে পারবে?
উত্তর- যোগ্যতা সামাজিক প্রচলনের উপর নির্ভর করে। যদি সেখানকার প্রচলিত নিয়মে পাঠান মেয়ের সাথে ঘানচী অর্থাৎ মুসলমান তৈল ব্যবসায়ীর ছেলে বিয়ে হওয়ায় মেয়ের মাতা-পিতার জন্য অপমানকর হয়, তবে বিয়ে ভঙ্গ হওয়ার প্রশ্নই জাগে না। কেননা, “মাযহাবে মুফতাবিহী” ) “মাযহাবে মুফতাবিহী” এটি একটি ফিকাহর পরিভাষা, এর অর্থ হচ্ছে: সেই ধর্ম (মাযহাব) যাদের জন্য ফতোওয়া দেয়া হয়।) অনুযায়ী সেই বিয়েই হয়নি।
সৈয়দজাদীর সাথে সৈয়দ নয় এমন লোকের বিয়ে
প্রশ্ন:- যদি সৈয়দ নয় এমন পাঠান ছেলের সাথে বালিগা সৈয়দজাদীর বিয়ে অভিভাবকের অনুমতিতে হয়, তবে কি হুকুম?
উত্তর:- সৈয়দজাদী ও তার সম্মানিত পিতা যদি বরের পাঠান হওয়ার ব্যাপারে জানে এবং তারা উভয়েই তাতে রাজি থাকে, এমতাবস্থায় বিয়ে নিঃসন্দেহে জায়িয। এ ব্যাপারে “ফতোওয়ায়ে রযবীয়া” ১১তম খন্ডের, ৭০৪ পৃষ্ঠায় একটি প্রশ্নের উত্তর লক্ষ্য করুন। প্রশ্ন: পাঠানের ছেলের সাথে কি সৈয়দজাদীর বিয়ে করা জায়েয? ﺑَﻴِّﻨُﻮْﺍ ﺗُﻮْﺟَﺮُﻭﺍ (অর্থাৎ বর্ণনা করুন ও প্রতিদান অর্জন করুন) উত্তর: প্রশ্নকারীর প্রশ্ন থেকে বুঝা গেলো, মেয়ে যুবতী এবং তার পিতা জীবিত, উভয়ের জানা আছে যে, বর পাঠান এবং উভয়ে এতে সন্তুষ্ট, বাবা নিজেই তার ঘটক। এমতাবস্থায় বিয়ে জায়েয হওয়াতে কোন সন্দেহ নেই। ﻛَﻤَﺎ ﻧَﺺَّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓِﻰ ﺭَﺩِّ ﺍﻟﻤُﺤﺘَﺎﺭ ﻭَﻏَﻴْﺮَﻩ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺎَﺳْﻔَﺎﺭ (অর্থাৎ রদ্দুল মুখতারে যেমনিভাবে তার দলিল অবশিষ্ট আছে।) ﻭَﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟﻰ ﺍَﻋْﻠَﻢُ
(২) ইসলামে যোগ্য হওয়া
প্রশ্ন:- যোগ্যতার (কুফুর) ক্ষেত্রে ইসলামেরও গুরুত্ব রয়েছে, এতে কি উদ্দেশ্য?
উত্তর:- ইসলামের পরিপ্রেক্ষিতে যোগ্যতার অবস্থাদি বর্ণনা করতে গিয়ে সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ “বাহারে শরীয়াতে” বর্ণনা করেন: “যে নিজেই মুসলমান অর্থাৎ তার বাবা ও দাদা মুসলমান নয়, তবে সে যার বাবা মুসলমান তার যোগ্য হতে পারে না, এবং যার শুধুমাত্র বাবাই মুসলমান সে যার দাদাও মুসলমান তার যোগ্য নয়। আর যার বাবা ও দাদা দুই বংশ যাবত মুসলমান, তবে এখন যদিওবা অপর পক্ষ অনেক বংশ যাবত মুসলমান হয়, তবে যোগ্য। কিন্তু বাবা ও দাদার মুসলমান হওয়ার সম্পর্ক শুধুমাত্র অনারবেই গ্রহণযোগ্য। আরবে নিজে মুসলমান হোক বা বাপ, দাদা হতে ইসলাম চলে আসুক উভয়টাই সমান।” (বাহারে শরীয়াত, ৭ম অংশ, ৫৪ পৃষ্ঠা)
মুসলমান মেয়ের সাথে নও মুসলিম ছেলের বিয়ে
প্রশ্ন:- কাফির ছেলে ও মুসলমান মেয়ের মাঝে যদি প্রেম হয়, অতঃপর ছেলে মুসলমান হয়ে যায় এবং উভয়ে কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে, তাহলে এর শরয়ী হুকুম কি?
উত্তর:- মুসলমান হয়ে যাওয়া তো মারহাবা! কিন্তু বিয়ের জন্য এখানেও যোগ্যতা আবশ্যক। বর্ণিত অবস্থায় যদি মেয়ে অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে নও মুসলিমকে বিয়ে করে, তবে বিয়েই হবে না। এই বিধান তখনই কার্যকর হবে যখন মেয়ে নও মুসলিম না হয় বরং মুসলমান ঘরেই জন্ম হয়।
(৩) পেশায় যোগ্য হওয়া
প্রশ্ন:- পেশায় (Profession) যোগ্য হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য কি?
উত্তর:- পেশায় যোগ্য হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো; ছেলে এমন পেশায় লিপ্ত না থাকা, যাকে সমাজে ঘৃণিত মনে করা হয় এবং এর দ্বারা মেয়ের অভিভাবকের অপমান অনুভব হয়। সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত “বাহারে শরীয়াত” ৭ম অংশের, ৫৫ পৃষ্ঠায় বলেন: “যাদের পেশাকে সমাজে নিকৃষ্ট মনে করা হয়, তারা উত্তম পেশাজীবিদের যোগ্য নয়। যেমন- মুছি, চামার, ঘোড়ার দেখাশুনাকারী রাখাল। এরা সেই সব লোকের যোগ্য হতে পারে না, যারা কাপড় বিক্রেতা, আতর বিক্রেতা, ব্যবসায়ী এবং নিজে জুতা বানায় না বরং কারখানার মালিক, তার নিকট লোকেরা চাকরী করে (এবং তারাই জুতা তৈরী করে) অথবা দোকানদার যে শুধুমাত্র বানানো জুতা কিনে আনে অতঃপর সেটা বিক্রি করে। তবে এ সমস্ত লোকেরা ব্যবসায়ীদের যোগ্য হতে পারবে। এমনিভাবে অন্যান্য পেশায়ও।
ব্যবসায়ীর মেয়ের কুফু আছে কি নেই?
প্রশ্ন:- যে নাপিত অথবা মুছি, সে ব্যবসায়ীর মেয়ের যোগ্য হতে পারবে কিনা?
উত্তর:- না।
নাপিত ও মুছি পরস্পরের যোগ্য হওয়া
প্রশ্ন:- নাপিতের মেয়ে ও মুছির ছেলে কি পরস্পর যোগ্য হবে?
উত্তর:- যেই পেশাগুলোকে নিকৃষ্ট মনে করা হয়, সেই পেশায়রত লোকেরা পরস্পর যোগ্য। অতএব নাপিতের মেয়ে ও মুছির ছেলে পরস্পর যোগ্য। (সংগৃহিত রদ্দুল মুহতার, ৪র্থ খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন:- ব্যবসায়ীর মেয়ে কামারের ছেলেকে অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে বিয়ে করেছে, কিন্তু ছেলের পিতা বর্তমানে নিজের পেশা ত্যাগ করে (অর্থাৎ মাটির পাত্র তৈরী) ব্যবসা করা শুরু করেছে এবং নিজের পিতৃপেশা ত্যাগ করে দিয়েছে এমন অবস্থায় বিয়ে সঠিক হবে কি?
উত্তর:- যদি এমনই হয় যে, কোন জায়গায় কামারের পেশায়রত লোক দীর্ঘদিন যাবত মাটির কাজ ত্যাগ করে দেয় এবং ব্যবসা অথবা কোন সম্মানজনক পেশায় লিপ্ত হয়ে যায় এবং লোকদের অন্তরে সে সম্মানিতও হয় তবে বিয়ে সঠিক হবে। তা না হলে হবে না। আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “তাঁতি, ধুপি, নাপিত ও মুছির কালিমা জ্ঞানের কারণে মুছে যায় না। তবে হ্যাঁ! যদি এ সমস্ত লোক দীর্ঘদিন যাবত এ কর্ম ত্যাগ করে এবং লোকেরা সম্মান করে ও লোকদের অন্তরে তার সম্মান এবং সাধারণ দৃষ্টিতে তার সম্মান প্রতিষ্ঠা হয়ে যায়। এখন বড় লোকের মেয়ের জন্য সে অপমানের না হয়, তাহলে অন্য কথা।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া সংকলিত, ১১তম খন্ড, ৭১৫ পৃষ্ঠা)
(৪) সততার মধ্যে যোগ্য হওয়া
প্রশ্ন:- সততার মধ্যে যোগ্য হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য কি?
উত্তর:- সততা দ্বারা উদ্দেশ্য খোদাভিরুতা, সুন্দর চরিত্র এবং বিশুদ্ধ আকিদার মধ্যে সম পর্যায়ের হওয়া।
প্রশ্ন:- পাপী বাপের নেক মেয়ে যদি অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে কোন পাপীকে বিয়ে করে নেয়, তবে বিয়ে হবে কি না?
উত্তর:- এমন বিয়ে হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুখতার, ৪র্থ খন্ড, ২০২ পৃষ্ঠা)
পাপী ও খোদাভিরুর কন্যা
প্রশ্ন:- একটি যুবক মদ পান করে এবং তার এই কাজটি লোকদের মধ্যে প্রসিদ্ধ, এই মদ্যপায়ী ছেলে কি খোদাভিরু ও পরহেযগার পিতার কন্যার যোগ্য হতে পারবে?
উত্তর:- যোগ্য হতে পারবে না। সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত “বাহারে শরীয়াতে”র ৭ম অংশের ৫৪ পৃষ্ঠায় বলেন: “পাপী ব্যক্তি খোদাভিরু লোকের মেয়ের যোগ্য নয়। যদিওবা সে মেয়ে খোদাভিরু ও পরহেযগার না হয়। (দুররে মুখতার, ৪র্থ খন্ড, ২০১ পৃষ্ঠা) আর এটা প্রকাশ্য যে, মন্দ আকীদা মন্দ (বদ) আমলের চেয়েও নিকৃষ্ট। এজন্য সুন্নী মেয়ের যোগ্য, সেই বদ মাযহাব হতে পারে না, যার বদ মাযহাবী কুফরের সীমান্তে পৌছে নাই এবং যার বদ মাযহাবী কুফরের সীমান্তে পৌছে গেছে (অর্থাৎ মুরতাদ হয়ে গেছে) তার সাথে তো বিয়েই হবে না। কেননা, সে তো মুসলমানই নয়। যোগ্য হওয়া তো দূরের কথা।” (বাহারে শরীয়াত, ৭ম অংশ, ৫৪ পৃষ্ঠা)
(৫) সম্পদের মধ্যে যোগ্যতা
প্রশ্ন:- সম্পদের মধ্যে যোগ্যতা দ্বারা কি উদ্দেশ্য?
উত্তর:- সম্পদের মধ্যে যোগ্যতা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো; পুরুষের নিকট এতটুকু পরিমাণ সম্পদ থাকা, যা দিয়ে সে নগদ মোহর আদায় করতে পারবে এবং খরচাদি দেয়ার উপর সক্ষম হওয়া। যদি কোন কাজই না করে, তবে ১ মাসের খরচাদি দেয়ার উপর সক্ষম হওয়া। তা না হলে প্রতিদিনের মুজুরি এতো পরিমাণে হওয়া যা দ্বারা মহিলার প্রতিদিনের খরচাদি দিতে পারে। সম্পদের দিক থেকে সে তার সমপর্যায়ের হওয়া আবশ্যক নয়। (বাহারে শরীয়াত, ৭ম অংশ, ৫৪ পৃষ্ঠা)
কুফু (যোগ্যতা) সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক
প্রশ্ন:- নাবালিগ ও নাবালিগার বিয়ের জন্যও কি যোগ্যতা আবশ্যক?
উত্তর:- নাবালিগ ছেলে অথবা মেয়ে স্বয়ং ইজাব (প্রস্তাব) ও কবুলের অধিকার রাখে না। এইজন্য তাদের বিয়ের জন্য তাদের অভিভাবকের অনুমতি নেয়া আবশ্যক। নাবালিগের বিয়ে তো অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে হতেই পারে না। অতএব কতিপয় অবস্থায় এখানেও যোগ্য হওয়া বিয়ের জন্য শর্ত। যেমন; একটি অবস্থা হলো; “নাবালিগা মেয়ের বিয়ে যখন পিতা-মাতার অনুপস্থিতে অন্য কোন দূরবর্তী অভিভাবকের উপস্থিতিতে হয় তখন যোগ্যতা হওয়া আবশ্যক।” এমনিভাবে নাবালিগার বিয়ে তার পিতা শুধু মাত্র একবারই যোগ্যতা ব্যতিত দিতে পারবে। এই একজনের বিয়ে দেয়ার পর পিতার এখন আর কোন মেয়ের বিয়ে যোগ্যতা ব্যতিত দেয়ার অনুমতি নেই। অতএব নাবালিগার বিয়ের ব্যাপারে আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দীদে দ্বীন ও মিল্লাত, মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ “ফতোওয়ায়ে রযবীয়া” ১১তম খন্ডের, ৭১৭ পৃষ্ঠায় বলেন: “আর যদি (মেয়ে) নাবালিগা হয় এবং তার বিয়ে বাপ, দাদা ব্যতিত অন্য কোন অভিভাবক যদিওবা সে প্রকৃত ভাই অথবা চাচা অথবা মা এমন ব্যক্তির সাথে দেয় (যে নাবালিগা মেয়ের চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের), তাহলে সেটা বাতিল, অভিশপ্ত এবং বাপ দাদাও একবারই এমন করতে পারবে। (যাতে ছেলে মেয়ের চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের) দ্বিতীয়বার যদি কোন মেয়ের বিয়ে এমন নিম্ন (পর্যায়ের) ব্যক্তির সাথে দিয়ে দেয়। তবে এই বিয়ে বাতিল হয়ে যাবে।”
প্রশ্ন:- মেয়ে কোন ব্যক্তির সাথে অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে বিয়ে করলো, বিয়ের সময় সে ব্যক্তি মেয়ের যোগ্য ছিলো কিন্তু পরে খারাপ পথে চলে যায় এবং জন সম্মুখে মদ পান করে। এই অবস্থায় কি বিয়েতে কোন প্রভাব পড়বে?
উত্তর:- শুধুমাত্র বিয়ের সময়ই যোগ্যতার উপর আস্থা রাখবে। জিজ্ঞাসাকৃত অবস্থায় ছেলে যখন বিয়ের সময় যোগ্য ছিলো। তবে বিয়ে হয়ে গেছে এবং পরক্ষনে ছেলে খারাপ পথে চলে যাওয়াতে বিয়েতে কোন প্রভাব পড়বে না। “ফতোওয়ায়ে রযবীয়া”য় বর্ণিত রয়েছে: “যোগ্যতার গ্রহণযোগ্যতা শুধুমাত্র বিয়ের মুহুর্তে রয়েছে। যদি সেই মুহুর্তে যোগ্যতা ছিলো, অতঃপর যোগ্যতা নষ্ট হয়ে যায়, তবে তা গন্য হবে না।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১১তম খন্ড, ৭০৪ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন:- যায়েদ বকরকে যেকোনভাবে সন্তুষ্ট করলো যে, সে যায়েদের যোগ্য এবং বকর তার কথায় বিশ্বাস করে নিজের যোগ্য মনে করে তার নাবালিগা মেয়েকে যায়েদের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো। বিয়ের কিছু দিন পর জানা গেলো, যায়েদ যোগ্য নয়। এই অবস্থায় কি বিয়ে হয়ে যাবে?
উত্তর:- যখন অভিভাবক মেয়েকে কারো কাছে যোগ্য মনে করে বিয়ে দেয় অর্থাৎ এই শর্ত সাপেক্ষে আপনি এই মেয়ের যোগ্য, পরক্ষনে ছেলের সেই যোগ্যতা নেই বলে প্রমানিত হলো, তাহলে গ্রহণযোগ্য ফতোয়া অনুসারে এমন বিয়ে হবেই না। (সংকলিত ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১১তম খন্ড, ৭২৫-৭২৮ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন:- যদি কোন বালিগা মেয়ে নিজেই অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে এমন কোন ব্যক্তিকে বিয়ে করে, যে ভুল বর্ণনা ও ধোকাবাজির মাধ্যমে নিজেকে সেই মেয়ের যোগ্য বলে পরিচয় দিয়েছে। যেমন; মেয়ে সৈয়দজাদী ছিলো, ছেলে বিয়ের পূর্বে নিজেকে সৈয়দ বলে প্রকাশ করে কিন্তু বিয়ের পর সত্য সামনে এলো যে, সেই ব্যক্তি সৈয়দ নয় বরং শেখ বংশের। এমতাবস্থায় বিয়ে শুদ্ধ হবে কি না?
উত্তর:- বিনা অনুমতিতে যাকে বিয়ে করেছে, সে মিথ্যা বলে নিজের যোগ্যতা প্রকাশ করেছিলো এবং বিয়ের পর সে যোগ্য না হওয়ার প্রমাণ হয়ে যায়, তাহলে শরীয়াত অনুযায়ী এ বিয়ে হবে না, বরং এই বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে। (সংগৃহিত ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ১১তম খন্ড, ৭০২, ৭০৩ পৃষ্ঠা)
অন্যকে পিতা বানানো
স্মরণ রাখবেন! নিজের সত্যিকার পিতাকে ছেড়ে অন্য কাউকে নিজের পিতা বলা অথবা নিজের বংশ ও সম্পর্ক ত্যাগ করে অন্য কারো বংশে নিজের সম্পর্ক গড়া হারাম ও জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে যাওয়ার মতো কাজ। এ ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা হাদীস শরীফে এসেছে; উভয় জাহানের সুলতান, প্রিয় নবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করেন: “যে নিজের পিতা ব্যতিত অন্য কাউকে পিতা বানিয়ে নেয় অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়, তবে তার উপর জান্নাত হারাম।” (বুখারী, ৪র্থ খন্ড, ৩২৬ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৬৭৬৬)
বিয়ে কার্ডে পিতার নাম ভুল দেওয়া
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এ থেকে সেই সব লোক শিক্ষা গ্রহণ করুন, যারা পালিত সন্তানের মন রাখার জন্য নিজেকে তার সত্যিকার পিতা হিসেবে পরিচয় দেন এবং সে সরল মনা সন্তানও তাকে সারা জীবন নিজের সত্যিকার পিতা মনে করে। তার প্রকৃত পিতাকে ইছালে সাওয়াব ও তার জন্য দোয়া করা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। স্মরণ রাখবেন! প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট এবং বিয়ের কার্ড ইত্যাদিতে সত্যিকার পিতার স্থলে পালিত পিতার নাম লিখানো হারাম ও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ। তালাক প্রাপ্ত মহিলা অথবা বিধবা মহিলাও নিজের পূর্বের ঘরের সন্তানকে তার সত্যিকার পিতার ব্যাপারে না জানিয়ে আখিরাত ধ্বংসের পথ তৈরী করবেন না। সাধারণত কথাবার্তায় কাউকে আব্বাজান বলে দিলে কোন সমস্যা নেই। এটা তখনই হবে যখন সবাই এ ব্যাপারে জানবে যে, সে তার প্রকৃত পিতা নয়। জ্বী হ্যাঁ! যদি এমন আব্বাজানকে কেউ আপন পিতা বলে প্রকাশ করে, তবে সে গুনাহগার ও জাহান্নামের আগুনের ভাগিদার হবে। শায়খুল হাদীস মাওলানা আব্দুল মুস্তফা আযমী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “বর্তমানে অসংখ্য লোক নিজেকে সিদ্দিকি, ফারুকী, ওসমানী ও সৈয়দ বলে থাকে। তাদের চিন্তা করা উচিত যে, তারা এমন কাজ করে কত বড় গুনাহের সাগরে পতিত হচ্ছে, দয়ালু আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে সঠিক পথে চলার তৈাফিক দান করুক এবং এই হারাম ও জাহান্নামে নিক্ষেপকারী কাজ থেকে তাদেরকে তাওবা করার তৌফিক দান করুক।” (আমীন) (জাহান্নামের ভয়াবহতা, ১৮২ পৃষ্ঠা, সংকলিত)
প্রশ্ন:- ধার্মিক ব্যক্তি অথবা ছেলেকে মেয়ে বিয়ে দেয়া আমাদের সামাজে ﻣَﻌَﺎﺫَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞ (আল্লাহর পানাহ! ) অপমান মনে করা হয় এবং এমন বিয়ের ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে যে, অমুকের মেয়েকে কেউ বিয়ে করেনি এজন্য মৌলভীর হাতে তুলে দিয়েছে। এমন চিন্তাভাবনা রাখা কেমন? এবং এই অপমানকে কি যোগ্যতার মধ্যে গন্য করা হবে?
উত্তর:- যে চিন্তা ভাবনা কোরআন ও হাদীসের সাংঘর্ষিক, তা বাতিল এবং এমন চিন্তভাবনা করার কখনো অনুমতি দেয়া হবে না। পবিত্র শরীয়াত তো এই চিন্তা ভাবনাই দিয়েছে যে, বিয়ে করার সময় ধর্ম ও দ্বীনকে প্রাধান্য দাও। যেমনিভাবে রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! ইরশাদ করেন: “মহিলাকে চারটি গুনের কারণে বিয়ে করা হয় (অর্থাৎ বিয়েতে এই চারটি বিষয়ের উপর দৃষ্টি রাখা হয়) (১) সম্পদ (২) বংশ (৩) সৌন্দর্য্যতা এবং (৪) ধার্মিকতা এবং তোমরা ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দাও।” (সহীহ বুখারী, ৩য় খন্ড, ৪২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৫০৯০) বর্ণিত হাদীস শরীফটি শুধুমাত্র মেয়ে যাচাই বাছাই সম্পর্কে। কিন্তু শরীয়াতের উদ্দেশ্য এবং আল্লাহর মাহবুব ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! এর পছন্দ ও সন্তুষ্টিরও সংবাদ দেয় যে, ধার্মিককে প্রাধান্য দেয়া হোক।
অতএব ছেলে বাছাই করার সময় যখন যোগ্যতার অন্য শর্তগুলো পূর্ণ হয়ে যায়। তখন ধার্মিক ছেলেকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত এবং প্রশ্নে উল্লেখিত চিন্তা ভাবনাকে কখনো গ্রহণ করবেন না। পাপী লোকদের সাথে সম্পর্ককারী দুনিয়াবী পর্যায়ে নিজের কাজকে যতই ভাল মনে করুক না কেন, কিন্তু এতে আখিরাতের ক্ষতিই ক্ষতি। একজন সাহাবী ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ বলেন: “যে নিজের কন্যাকে কোন মদ্যপায়ীর সাথে বিয়ে দিল, সে যেন তার কন্যাকে ‘যিনা’য় ধাবিত করে দিল।” কেননা মদ্যপায়ী যখন নেশা অবস্থায় থাকে, তখন কতবারই যে তালাক সংগঠিতকারী কথা বলে ফেলে। আর এমনিভাবে তার জন্য তার স্ত্রী হারাম হয়ে যায়, কিন্তু তার খবরও থাকে না। (তাম্বীহুল গাফিলীন, ৮১ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন:- ইসলাম তো এই শিক্ষা দিয়েছে যে, ফর্সা ব্যক্তি কালো ব্যক্তির উপর এবং কালো ব্যক্তি ফর্সা ব্যক্তির উপর কোন মর্যাদা নেই। তার পরেও বিয়ের ব্যাপারে জাত ও বংশে এতো গুরুত্ব কেন দেয়া হয়?
উত্তর:- ইসলাম যে বলেছে, ফর্সা ব্যক্তি কালো ব্যক্তির উপর ও কালো ব্যক্তি ফর্সা ব্যক্তির উপর কোন মর্যাদা নেই। এ দ্বারা উদ্দেশ্যহলো; সমস্ত মুসলমানের ধন-সম্পদ, মানসম্মান ও জানের হিফাযত যেন কোন পার্থক্য ছাড়াই করা হয় এবং মান সম্মান ও ইজ্জতের মধ্যে যেন কাউকে তুচ্ছ মনে না করে। অনূরূপ ভাবে আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর রাসূলের যে আহকাম রয়েছে, তার উপর আমল করাতেও সবাই সমান। ফর্সা কালোর উপর এবং কালো ফর্সার উপর কোন মর্যাদা নেই। এই কথারও কোন ভিত্তি নেই যে, যদি গরিব অপরাধ করে, তবে সে শাস্তি পাবে, এবং ধনীরা যদি অপরাধ করে, তবে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। অতএব প্রশ্নের মধ্যে ইসলামের যে কার্যকারিতার বর্ণনা করা হয়েছে তা একেবারে সঠিক। কিন্তু এর দ্বারা কি উদ্দেশ্য তা বর্ণনা করা হয়েছে। বাকী রইলো বিয়েতে জাত, বংশ ও কাজকর্ম ইত্যাদির দিকে দৃষ্টি রাখা। প্রথমতো; এটা বিভক্ত করার আদেশও ইসলাম দিয়েছে। প্রিয় নবী, রাসূলে আরবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করেছেন: “নিজের মেয়েকে কুফুর (যোগ্যতার) দিকে দৃষ্টি রেখে বিয়ে দাও।” (আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, ৭ম খন্ড, ২১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৩৭৬০) “তিরমিযী শরীফে” আমীরুল মু’মিনীন হযরত মাওলায়ে কায়েনাত আলী ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ থেকে বর্ণিত; প্রিয় রাসূল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! বলেন: “হে আলী ( ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ ) তিনটি কাজে দেরী করো না। (১) যখন নামাযের সময় আসবে। (২) যখন জানাযা উপস্থিত থাকবে। (৩) অবিবাহিত মেয়ের জন্য যখন যোগ্যতা সম্পন্ন স্বামী পাওয়া যায়।” (তিরমিযী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৯, হাদীস: ১০৭৭) দ্বিতীয়ত: যেহেতু বিয়ে একটি পুরো জীবন একত্রে থাকার বন্ধন, যাতে মন মানসিকতা এক হওয়া ও স্বভাবে মিল হওয়ার নিশ্চয়তাও খেয়াল রাখা খুবই আবশ্যক। যে কোন জোড়ার সাফল্যময় জীবনের জন্য শুধুমাত্র এটাই নয় যে, তাদের উভয়ের মধ্যে একতা ও সমন্বয় হওয়া আবশ্যক বরং উভয় পক্ষের বংশের মধ্যেও সমন্বয় হওয়া আবশ্যক এবং যোগ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে এই উদ্দেশ্য অর্জন করার জন্য বাছাই করাটা সাহায্য করে। এ কারণে এদিকে মনোযোগ দেয়ার হুকুম রয়েছে। তৃতীয়ত: যোগ্যতার বিষয়টি আসলে অভিভাবকের হকের অনুযায়ী হওয়া অর্থাৎ বাপ, দাদা ইত্যাদি যেহেতু তারাই অভিবাবক। যোগ্যতার দিকে মনোযোগী না হওয়াতে লোকদের ঠাট্টা-বিদ্রুপের পাত্র এই অভিবাবকরাই হয় এবং তাদের যে কি পরিমাণ লজ্জার মখোমুখি হতে হয়, তা কারো নিকট গোপন নয়। এ কারণে তাদেরকে অপমান থেকে বাঁচার জন্য স্বয়ং তাদেরকেই যোগ্যতার দিকে খেয়াল রাখার আদেশ দেয়া হয়েছে এবং মেয়ে যদি তাদের বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও অযোগ্যকে বিয়ে করে ফেলে, তবে অভিভাবকের হকের দিকে মনোযোগ না দেয়ার কারণে বিয়ে না হওয়ার হুকুম দেয়া হয়েছে।
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সন্দেহ করা কেমন?
প্রশ্ন:- স্বামী-স্ত্রী পরস্পর সন্দেহের কারণে একে অপরের উপর ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া কেমন?
উত্তর:- কবিরা গুনাহ, হারাম এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ। বর্তমানে এই সমস্যাটি খুবই বেশি। অনেকে সন্দেহের বশে কুধারণা ও অপবাদের মাধ্যমে নিজের সাজানো সংসারকে নিজের হাতেই নষ্ট করে দেয়। সন্দেহের কারণে কখনোও স্বামী তার স্ত্রীকে ব্যাভিচারিনী এবং কখনোও স্ত্রী তার স্বামীকে অন্য মহিলার সাথে সম্পর্কযুক্ত মনে করে, উভয়ে শুধু মাত্র সন্দেহের কারণে পরস্পরের উপর অপবাদ চাপিয়ে দেয়, ঝগড়া-বিবাদ করে এবং পরস্পর পরস্পরের বংশের উপর সেই কলঙ্কের দাগ লাগায়, সাত সমুদ্রের পানিও যে দাগকে ধুতে পারবে না! এমন লোকদের উচিত যে, তারা যেন আল্লাহ্ তাআলা কে ভয় করে।
হযরত সায়্যিদুনা হুযাইফা ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসুলে আকরাম ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! ইরশাদ করেন: “ ﺍِﻥَّ ﻗَﺬْﻑَ ﺍﻟْﻤُﺤْﺼَﻨَﺔِ ﻳَﻬْﺪِﻡُ ﻋَﻤَﻞَ ﻣِﺎﺋَﺔِ ﺳَﻨَﺔٍ অর্থাৎ কোন পবিত্রা মেয়ের উপর ব্যাভিচারের অপবাদ দেওয়া, একশ বছরের নেকী সমূহকে বরবাদ করে দেয়।” (মুজামুল কাবির লিত তাবারানী, ৩য় খন্ড, ১৬৮ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৩০২৩) এই হাদীসে পাক থেকে সেই সকল স্বামীদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, যারা শুধুমাত্র সন্দেহের কারণে নিজের পবিত্রা স্ত্রীর উপর ব্যাভিচারের অপবাদ দিয়ে থাকে। এছাড়া সেই সকল স্ত্রীগনও শিক্ষা গ্রহণ করুন, যারা নিজের স্বামীর ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কথাবার্তা বলে। শুধু তাই নয় তার উপর ব্যাভিচারের অপবাদও চাপিয়ে দেয় এবং চারদিকে এরূপ বলতে থাকে যে, পরিবারে তো সময় দেয় না, শুধুমাত্র নিজের প্রেমিকার নিকট পড়ে থাকে, সব টাকা পয়সা তাকেই দিয়ে আসে, তার সাথে ব্যভিচার করে ইত্যাদি।
করলে তাওবা রব কি রহমত হে বড়ী,
কবর মে ওয়ার না সাযা হুগি কড়ি।
কাউকে দুঃশ্চরিত্রা (বেশ্যা) বলা কেমন?
প্রশ্ন:- আজকাল অনেক নারীরা রাগের মাথায় একে অপরকে “বেশ্যা” বলে গালি দেয়, তার কি পরিণাম হবে?
উত্তর:- এই বাক্যটি মারাত্মক মনে কষ্ট প্রদানকারী বাক্য, অনেক বড় ও খারাপ গালি এবং জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ। গালী-গালাজের ইহকালীন (দুনিয়াবী) শাস্তি যে সব লোকেরা কথায় কথায় খারাপ গালি দেওয়ায় অভ্যস্ত। তারা যেন এটা মনে না করে যে, তাদের কেউ আটকাবে না। (সাধারনত প্রতিটি গালি লিখা অসম্ভব দুটি উদাহরন উপস্থাপন করছি) যেমন; যদি কাউকে ﻭَﻟَﺪُ ﺍﻟﺰِّﻧَﺎ অর্থাৎ যেনাকারীনীর বংশধর বলে অথবা কোন পবিত্রা নারীকে যেনাকারীনী বলে। (যেমনটি নারীরা সাধারণত একে অপরকে রাগের মাথায় বলে থাকে) এ সবগুলো অপবাদ এবং হারাম ও কবিরা গুনাহ। এখানে এই দলিল গ্রহণযোগ্য হবে না যে, আমি তো এমনিতেই বলে দিয়েছি, আমার নিয়্যতই ছিলো না। স্মরণ রাখবেন! এতে পরকালীন শাস্তি তো আছেই, ইহকালেও অনেক সময় কঠোর শাস্তি রয়েছে। যেমন; যদি কোন পুরুষ অথবা মহিলা অন্য মহিলাকে যেনাকারীনী বলে, তবে ইসলামী আদালতে মামলা হওয়াবস্থায় যদি চারজন চাক্ষুষ সাক্ষী উপস্থাপন করতে না পারে তবে সেই অপবাদ প্রদানকারীর উপর ৮০টি চাবুক মারা হবে এবং এমন অপবাদ প্রদানকারীর সাক্ষ্যও ভবিষ্যতে কোন কার্যাদিতে গ্রহণযোগ্য হবে না। (এই বিধান মুহসিন ও মুহসিনার অর্থাৎ মুসলমান পুরুষ ও মহিলা, স্বাধীন, জ্ঞানী, বালিগ ও পবিত্র লোকদের উপর অপবাদ লাগানোর) যেনার অপবাদকে “ক্বয্ফ” ও অপবাদ প্রদানকারীকে ক্বাযিফ” এবং ইসলামী আদালত থেকে প্রাপ্ত শাস্তিকে “হদ্দে ক্বযফ” বলে। যাই হোক যেনার অপবাদ দানকারী পুরুষ বা মহিলাকে শুধুমাত্র দুটি জিনিসই শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে। (১) যার উপর অপবাদ দিয়েছে, সে নিজের অপরাধের স্বীকারোক্তি দেয়া, (২) অথবা অপবাদ দানকারী চারজন এমন সাক্ষী হাকিমে ইসলামের সামনে উপস্থাপন করবে। যারা নিজের চোখে পুরুষ ও মহিলাকে যেনা করতে দেখেছে। আর এই দেখা এতে সহজ নয় এবং তা প্রমান করা আরো কঠিন। তাই শান্তির পথ হলো; যদি কেউ কারো যেনা করার ব্যাপারে অবগত হয়েও যায় তবে তা পর্দার অন্তরালেই থাকতে দেওয়া। যেন আবর্জনা যেখানে আছে সেখানেই থেকে যায়। তা না হলে বলে দেওয়া অবস্থায় যদি চারজন চাক্ষুষ সাক্ষী উপস্থাপন করতে না পারলে “মাকযোফ” (অর্থাৎ যাকে অপবাদ দেয়া হয়েছে) এর আবেদনে আপনা পিঠে ৮০ টি চাবুক খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। “বাহারে শরীয়াতে” বর্ণিত রয়েছে: “যদি কোন পবিত্রা নারীকে বেশ্যা বলে, তবে এটা ‘ক্বযফ’ এবং (অপবাদ দানকারী) শাস্তির উপযোগী। কেননা, এই বাক্যটি তাদের জন্য ব্যবহার হয়, যারা যেনাকে পেশা বানিয়ে নিয়েছে।” (বাহারে শরীয়াত, ৯ম অংশ, ১১৬ পৃষ্ঠা)
সন্দেহের ভিত্তিতে অপবাদ দিবেন না
একটু অনুমান করুন, পবিত্র শরীয়াতে মুসলমান নারী পুরুষের মান-সম্মানের কতটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং তাদের সম্মান রক্ষার্থে কত শক্তিশালী ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নিশ্চয় সে খুবই মন্দ লোক, যে কোন মুসলমানের ব্যাপারে শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে অথবা কানাঘুষা হওয়া দোষ ত্রুটি অপরের কাছে বর্ণনা করে। সে যেন এটা মনে না করে যে, আজ যদিও কেউ জিজ্ঞাসা করার নাই, কাল কিয়ামতেও কিছু হবে না। দুটি হাদীসে মোবারক শুনুন ও খোদার ভয়ে কেঁপে উঠুন!
লোহার ৮০টি চাবুক
(১) হযরত সায়্যিদুনা ইকরামা ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ বলেন: এক নারী তাঁর দাসীকে ব্যভিচারীনী (যেনাকারীনী) বললো, (এতে) হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ বিন ওমর ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ বললেন: “তুমি কি ব্যভিচার (যেনা) করতে দেখেছো?” সে বললো: “না।” তিনি বললেন: “ َﻭَﺍﻟَّﺬِﻯ ﻧَﻔْﺴِﻰْ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻟَﺘُﺠْﻠَﺪَﻥَّ ﻟَﻬَﺎ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔَ ﺛَﻤَﺎﻧِﻴْﻦ অর্থাৎ কসম সেই মহান সত্তার! যার কুদরতি হাতে আমার প্রাণ, কিয়ামতের দিন এ কারণে তোমাকে ৮০টি চাবুক মারা হবে।” (মুসান্নিফে আব্দুর রাজ্জাক, ৯ম খন্ড, ৩২০ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৮২৯৩)
(২) হযরত সায়্যিদুনা ইবনুল মুসাইয়াব ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ বলেন: “যে নিজের দাসীর উপর ব্যাভিচারের (যেনার) অপবাদ দিবে, তাকে কিয়ামতের দিন লোহার ৮০টি চাবুক মারা হবে।” ((মুসান্নিফে আব্দুর রাজ্জাক, ৯ম খন্ড, ৩২০ পৃষ্ঠা, হাদীস: ১৮২৯২)
দোষ-ত্রুটি গোপন করো জান্নাতে প্রবেশ করো!
প্রশ্ন:- যদি কারো গুনাহের ব্যাপারে জেনে যায়, তখন কি করবে?
উত্তর:- তা গোপন রাখা উচিত। কেননা, শরীয়াতের বিনা অনুমতিতে অন্য কারো কাছে তা প্রকাশকারী গুনাহগার ও জাহান্নামের আগুনের ভাগিদার হবে। মুসলমানের দোষত্রুটি গোপন করার মন মানসিকতা তৈরী করুন। কেননা, যে কোন (মুসলমানের) দোষ গোপনে রাখবে তার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে; হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদরী ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ থেকে বর্ণিত: “যে ব্যক্তি আপন ভাইয়ের কোন মন্দ কাজ দেখে তা গোপন করবে, তবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।” (মুসনদে আবদ ইবনে হুমাইদ, ২৭৯ পৃষ্ঠা, নম্বর-৮৮৫)
এজন্য যখনই আমাদের জানা হবে, অমুক ﻣَﻌَﺎﺫَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞ (আল্লাহর পানাহ! ) ব্যভিচার (যেনা) অথবা সমকামিতায় লিপ্ত হয়েছে, কুদৃষ্টি দিয়েছে, মিথ্যা বলেছে, ওয়াদা ভঙ্গ করেছে, গীবত করেছে অথবা গোপনে এমন কোন কাজ করেছে, যা প্রকাশ করার শরয়ী অনুমতি নেই, তখন আমাদের উপর তা গোপন রাখা আবশ্যক এবং অন্যের নিকট প্রকাশ করা গুনাহ। নিশ্চয় গীবত ও দোষ প্রকাশ করার শাস্তি সহ্য করা যাবে না।
দোষ প্রকাশ করার শাস্তি
প্রশ্ন:- গীবত ও সম্মানহানি করার শাস্তি বর্ণনা করুন?
উত্তর:- মেরাজ রজনিতে প্রিয় নবী, রাসূলে আরবী ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! একটি দৃশ্য এমনও অবলোকন করলেন যে, কিছুলোক তামার নখ দ্বারা আপন চেহারা ও বক্ষদেশকে আছঁড়াচ্ছে, সুলতানে মদীনা, হুযুর পুরনূর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! এর জিজ্ঞাসা করাতে আরয করা হলো: “এরা লোকদের মাংস ভক্ষন করতো। (অর্থাৎ গীবত করতো) এবং লোকদের সম্মানহানি করতো।” (সুনানে আবু দাউদ, ৪র্থ খন্ড, ৩৫৩ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৪৮৭৮) বিস্তারিত জানার জন্য মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত কিতাব “গীবতের ধ্বংসলীলা” মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে সংগ্রহ করে অবশ্যই পড়ে নিন।
যাদুটোনা করানোর অপবাদ
প্রশ্ন:- আজকাল আমিলের (বৈদ্য) কথার উপর নির্ভর করে আত্মীয়রা পরস্পর যাদুটোনা করার অপবাদ দিয়ে থাকে। এটা কেমন?
উত্তর:- কোন মুসলমানের উপর অপবাদ দেওয়া হারাম ও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ। আমিলের (বৈদ্য) কথানুযায়ী অথবা স্বপ্নের মাধ্যমে অথবা অনুমানের ভিত্তিতে অথবা ইস্তিখারার মাধ্যমে জানা খবরকে শরীয়াতে দলিল বলা হয় না যে, যার উপর নির্ভর করে কোন মুসলমানের উপর সেই গুনাহের ইঙ্গিত করা যায়। এখানে শরয়ী দলিল হলো; হয়তো অভিযুক্ত (বৈদ্য) নিজেই স্বীকার করে নেয় যে, আমি যাদু করেছি অথবা করিয়েছি। অথবা দুজন মুসলমান পুরুষ অথবা একজন মুসলমান পুরুষ ও দুজন মুসলমান নারী সাক্ষ্য দেয় যে, আমরা নিজেই তাকে যাদু করতে দেখেছি অথবা করাতে দেখেছি।
অপবাদের শাস্তি
প্রশ্ন:- যাদুটোনা করানো অথবা বিভিন্ন ধরনের অপবাদ দেয়ার পরকালীন শাস্তিও বর্ণনা করুন, যেন মুসলমান ভয় করে এবং তাওবা করে।
উত্তর:- দুটি বর্ণনা লক্ষ্য করুন।
(১) রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, হুযুর পুরনূর ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! ইরশাদ করেছেন: “যে (ব্যক্তি) কোন মুসলমানের মন্দ দিক বর্ণনা করে যা তার মধ্যে নেই, তবে তাকে আল্লাহ্ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত জাহান্নামিদের আবর্জনা, পুঁজ ও রক্তের মধ্যে রাখবেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের বর্ণনাকৃত কথা থেকে ফিরে না আসে।” (সুনানে আবু দাউদ, ৩য় খন্ড, ৪২৭ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৩৫৯৭)
(২) আমীরুল মু’মিনীন হযরত মাওলায়ে কায়েনাত, আলী মুরতাদ্বা, শেরে খোদা ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ বলেন: “কোন নির্দোষ ব্যক্তির উপর অপবাদ দেওয়া, আসমান সমূহ থেকেও ভারি গুনাহ।” (নওয়াদারুল উচুল লিল হাকিমি তিরমিযী, ১ম খন্ড, ৯৩ পৃষ্ঠা)
তাওবার চাহিদা পূর্ণ করে নিন
প্রশ্ন:- যদি কারো দ্বারা অপবাদ দেয়ার গুনাহ সংগঠিত হয়ে যায়। তবে সে কি করবে?
উত্তর:- যদি কেউ শুধুমাত্র কুধারণা অথবা অনুমানের ভিত্তিতে অথবা কানাঘুষা করা কথায় নির্ভর করে কারো প্রতি ব্যভিচার (যেনা), সমকামিতা, কুদৃষ্টি, চুরি, ওয়াদা খেলাফী, যাদুটোনা করানো ইত্যাদির অপবাদ দেয়ার গুনাহ করে বসে, তবে আল্লাহ্ তাআলার নিকট তাওবা করবে এবং যাদের সামনে অপবাদ দিয়েছিলো তাদেরকেও নিজের ভুল স্বীকার করে তাওবা করার ব্যাপারে অবহিত করবে। কেননা, যে গরীবকে শরয়ী দলিল ব্যতিত অপমান করেছিলো, তাদের দৃষ্টিতে যেন তার (গরীবের) সম্মান পূর্বের মতো হয়ে যায়। যার উপর মিথ্যা অপবাদ লাগিয়েছে সেও যদি এ ব্যাপারে জানে, তবে লজ্জিত হয়ে তার কাছ থেকেও ক্ষমা চেয়ে তাকে সন্তুষ্টি করবে। এখানে ﻣَﻌَﺎﺫَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّﻭَﺟَﻞ (আল্লাহর পানাহ! ) ব্যাভিচারিদের (যেনাকারীদের) উৎসাহ দান করা হচ্ছে না বরং তাদেরকেও তাওবার সমস্ত আহকাম পুরো করতে হবে। তা না হলে ইহকাল ও পরকালে তার জন্য ‘কাযিফ’ (যেনার অপবাদ প্রদানকারী) এর অনুপাতে আরো বেশি শাস্তি রয়েছে। এভাবে অপরাধী বরং প্রত্যেক গুনাহগারও যেন আল্লাহ্ তাআলার দরবারে তাওবা করে, বান্দার হক নষ্ট করাবস্থায় তার কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার শর্তও পুরো করতে হবে। তা না হলে জাহান্নামের আগুনের ভাগিদার হবে।
করলে তাওবা রবকি রহমত হে বড়ি,
কবর মে ওয়ার না সাযা হোগি কড়ি।
কুধারণা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন:- দোয়া অথবা ইজতিমায়ে যিকির ও নাতে কাউকে কান্না করতে দেখে, এটা মনে করা কেমন যে, এই ব্যক্তি সবাইকে দেখানোর জন্য কান্না করছে?
উত্তর:- এটা কুধারণা এবং নেক মুমিনের প্রতি কুধারণা করা হারাম ও জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কাজ। আল্লাহ্ তাআলা ১৫ পারার সূরা বনী ইসরাঈলের ৩৬ নং আয়াতে ইরশাদ করেন:
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘْﻒُ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻚَ ﺑِﻪٖ ﻋِﻠْﻢٌ ﻁ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺴَّﻤْﻊَ ﻭَﺍﻟْﺒَﺼَﺮَ ﻭَﺍﻟْﻔُﺆَﺍﺩَ ﻛُﻞُّ ﺃُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻨْﻪُ ﻣَﺴْﺌُﻮﻟًﺎ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং ঐ কথার পিছনে পড়োনা, যেটা সম্বন্ধে তোমার জ্ঞান নেই। নিশ্চয় কান, চোখ ও হৃদয় এগুলোর প্রত্যেকটা সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (পারা: ১৫, সূরা: বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৩৬)
আল্লাহ্ তাআলা ২৬ পারার সূরা হুজরাতের ১২ নং আয়াতে ইরশাদ করেন:
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻈَّﻦِّ ﺇِﻥَّ ﺑَﻌْﺾَ ﺍﻟﻈَّﻦِّ ﺇِﺛْﻢٌ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা বহুবিধ অনুমান থেকে বিরত থাকো। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান পাপ হয়ে যায়; (পারা: ২৬, সূরা: হুজরাত, আয়াত: ১২)
হুযুরে আনওয়ার ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ইরশাদ করেন: “(হে লোকেরা) কুধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা, কুধারণা করা সবচেয়ে নিকৃষ্ট মিথ্যা।” (বুখারী, ৩য় খন্ড, ৪৪৬ পৃষ্ঠা, হাদীস: ৫১৪৩) আইম্মায়ে দ্বীন ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ বলেন: “মন্দ ধারণা মন্দ অন্তর থেকে সৃষ্টি হয়।” (ফয়যুল কাদির লিল মানাভী, ৩য় খন্ড, ১৫৭ পৃষ্ঠা, হাদীস: ২৯০১)
কান্নাকারীর প্রতি কুধারণার ক্ষতি
হযরত সায়্যিদুনা মকহুল দামেশকি ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “যখন তুমি কাউকে কান্না করতে দেখো, তখন তুমিও তার সাথে কান্নায় রত হয়ে যাও। এই কুধারণা করো না যে, সে লোকদেরকে দেখানোর জন্য কান্না করছে। একবার আমি একজন ব্যক্তিকে কান্না করতে দেখে, কুধারণা করেছিলাম যে, এই ব্যক্তি রিয়াকারী করছে। অতঃপর এ কুধারণার শাস্তি স্বরূপ আমি একবছর পর্যন্ত (খোদার ভয়ে ও ইশ্কে রাসূলে কান্না করা) থেকে বঞ্চিত ছিলাম।” (তাম্ভীহুল মুগতারিন, ১০৭ পৃষ্ঠা)
মৃত স্বামী-স্ত্রীর গোসল দেয়ার ব্যাপারে প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন:- স্ত্রী তার মরহুম স্বামীর গোসল দিতে পারবে কি না?
উত্তর:- সদরুশ শরীয়া, বদরুত তরিকা হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আমজাদ আলী আযমী ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “স্ত্রী তার স্বামীকে গোসল দিতে পারবে। যদি মৃত্যুর পূর্বে অথবা পরে এমন কোন কাজ সংগঠিত না হয়, যার দ্বারা সে বিয়ের বন্ধন থেকে বের হয়ে যায়।” (বাহারে শরীয়াত, ১ম অংশ, ৮১২ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন:- স্বামী মরহুমা স্ত্রীর গোসল কি দিতে পারবে?
উত্তর:- দিতে পারবে না। ফুকাহায়ে কিরামগণ ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ বলেন: “যদি স্ত্রী মৃত্যুবরণ করে, তবে স্বামী তাকে না গোসল দিতে পারবে এবং না স্পর্শ করতে পারবে। (হ্যাঁ) দেখাতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।” (বাহারে শরীয়াত, ১ম অংশ, ৮১৩ পৃষ্ঠা। দূররে মুখতার, ৩য় খন্ড, ১০৫ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন:- স্বামী কি তার মরহুমা স্ত্রীর মুখও দেখতে পারবে না?
উত্তর:- মুখ দেখতে পারবে। “বাহারে শরীয়াতে” বর্ণিত আছে: “সাধারন মানুষের মধ্যে এটা প্রসিদ্ধ যে, স্বামী তার স্ত্রীর জানাযাকে কাঁধে নিতে পারবে না এবং কবরেও নামাতে পারবে না, মুখও দেখতে পারবে না। এটা একেবারে ভুল। শুধুমাত্র গোসল দেয়া এবং তার দেহকে কোন আড়াল ব্যতিত স্পর্শ করাতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।” (বাহারে শরীয়াত, ১ম অংশ, ৮১২ পৃষ্ঠা)
প্রশ্ন:- স্বামী তার মরহুমা স্ত্রীকে গোসল দিতে পারবে না, কিন্তু স্ত্রী তার মরহুম স্বামীকে গোসল দিতে পারবে, এতে কি হিকমত রয়েছে?
উত্তর:- স্বামীর ইন্তেকালের সাথে সাথেই বিয়ে ভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু স্ত্রীর ইদ্দত পর্যন্ত কিছু আহকামের কারণে বিয়ে অবশিষ্ট থাকে। যেমনিভাবে- আমার আক্বা আ’লা হযরত ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻪِ বলেন: “স্বামী ইন্তেকালের পর স্ত্রীকে দেখতে পারবে। কিন্তু তার দেহকে স্পর্শ করার অমুমতি নেই (এবং তা) এজন্য যে মৃত্যু হওয়াতে বিয়ে ভঙ্গ হয়ে যায় এবং স্ত্রী যতক্ষণ পর্যন্ত ইদ্দতে থাকবে আপন মৃত স্বামীর দেহ স্পর্শ করতে পারবে, তাকে গোসল দিতে পারবে। ইতিপূর্বে যেন তালাক বাইন (অর্থাৎ এমন তালাক যাতে দ্বিতীয়বার বিয়ে করার প্রয়োজন হয়, শুধুমাত্র ফিরে আসলে কাজ হয় না) না হয়। এজন্য যে, ইদ্দতের কারণে স্ত্রীর হক্বে তার বিয়ে অবশিষ্ট থাকে।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ২২ খন্ড, ২৩৪ পৃষ্ঠা)
হে প্রিয় মুস্তফা ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠّٰﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﻪِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ ! এর প্রতিপালক! উম্মাহাতুল মু’মিনীন এবং বিবি ফাতেমা ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟﺮِّﺿْﻮَﺍﻥ এর সদকায় আমাদের সকল ইসলামী বোনদেরকে পর্দা ও চার দেওয়ালের মাঝে অবস্থান করে গুনাহ থেকে বাঁচার তাওফীক দান করো এবং বাস্তবিক মাদানী বোরকা সহকারে শরয়ী পর্দা করার তাওফীক দান করো। আমাকে ও সকল উম্মতকে মাগফিরাত করে দাও।
ﺍٰﻣِﻴﻦ ﺑِﺠﺎ ﻩِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺍﻟْﺎَﻣﻴﻦ ﺻَﻠَّﯽ ﺍﻟﻠﮧُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﯽ ﻋَﻠَﯿْﮧِ ﻭَﺍٰﻟِﮧٖ ﻭَﺳَﻠَّﻢ
——–
লিখাটি আমীরে আহলে সুন্নাত হযরত মাওলানা ইলয়াস আত্তার কাদেরী রযভী কর্তৃক লিখিত ৩৪৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত “ পর্দা সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর “ নামক কিতাবের ১-১০ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। অতি গুরুত্বপূর্ণ এই কিতাবটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখুন। অন্যকে উপহার দিন।
যারা মোবাইলে (পিডিএফ) কিতাবটি পড়তে চান তারা ফ্রি ডাউনলোড করুন ।
পর্দার মাসআলা (ত্রয়োদশ পর্ব) কুফু (যোগ্যতা) কাকে বলে?
পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।