সাহাবীগণের দৃষ্টিতে ইলমে গায়েবঃ (১ম পর্ব) (প্রিন্স ঠাকুর রেজভী)
নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলমে গায়েবের ব্যাপারে সম্মানিত সাগাবীগণের কী মনোভাব ছিল সেই ব্যাপারে সামান্য কিছু দলিল ভিত্তিক আলোচনা করা হল—
১/ হযরত রাবি’য়া ইবনে কা’ব (রা) থেকে বর্ণিত, ইসলাম গ্রহণের আগে হযরত আবু বকর (রা) সিরিয়ায় একটি স্বপ্ন দেখে সেখানকার এক খ্রীস্টান পাদ্রীর কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে গিয়েছিলেন। স্বপ্নের ব্যাখ্যায় পাদ্রী বলেন — তোমার সাথে একজন নবীর দেখা হবে এবং তুমি তাঁর পরে খলিফা হবে।
পরবর্তীতে হযরত আবু বকর (রা) মক্কায় ফিরে এসে নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর কাছে এসে বলেন– “আপনি যে নবী তার প্রমাণ কী?”
জবাবে নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- “” তুমি যে সিরিয়ায় স্বপ্নটি দেখেছিলে সেটিই আমার সত্য নবী হওয়ার প্রমাণ! “”
একথা শুনে হযরত আবু বকর (রা) তাৎক্ষনাৎ কলেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলেন। (হুবুহু উদ্ধৃত নয়)
[দলিল –
(ক) ইমাম জালাল উদ্দিন সৈয়ুতি (রহ) লিখিত “খাসায়েসুল কুবরা” ; ১ম খন্ড ৫১ পৃষ্টা।
(খ) ইমাম ইবনে আসাকির (রহ) লিখিত “তারিখে দামেস্ক” ; ৩০ পৃষ্টা। ]
২/ হযরত উমর (রা) বলেন, নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সৃষ্টির শুরু থেকে আলোচনা আরম্ভ করে জান্নাতী ও জাহান্নামীরা যথাক্রমে জান্নাত ও জাহান্নামে প্রবেশ করা পর্যন্ত সবকিছু বর্ণনা করেন। এই বর্ণনা যাঁরা পেরেছেন তাঁরা সংরক্ষণ করেছেন, আর যাঁরা পারেন নি তাঁরা ভুলে গেলেন৷ (হুবুহু উদ্ধৃত নয়)
[দলিল-
(ক) সহিহ বুখারী শরীফ, হাদিস নং – ৩১৯২।
(খ) আবু দাউদ শরীফ, হাদুস নং -৪২৪০। ]
৩/ হযরত ওমাইর বিন জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, হযরত উমর (রা) এর কাছে নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন – ইয়েমেনবাসীদের মধ্যে মুরাদ গোত্রের একজন ব্যাক্তি আসবে ; সে মায়ের অনেক সেবাযত্ন করবে; তার শরীরে কুষ্ঠরোগ হয়েছিল, যার ১ দিরহাম পরিমাণ চিহ্ন তখনও থাকবে। সেই ব্যাক্তি আসলে তার কাছে তুমি দোয়া চাইবে।
পরবর্তীতে নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর বর্ণিত প্রতিটি কথা সত্য হয় এবং হযরত উমর (রা) ইয়েমেন থেকে আগত সেই ব্যাক্তির কাছে দোয়া চান। (হুবুহু উদ্ধৃত নয়)
[দলিল–
(ক) মুসলিম শরীফ, হাদিস নং- ২৫৪২
(খ) আল মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং- ৫৭১৯]
৪/ হযরত আলী (রা) বলেন, নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন – “রওজায়ে খাখ” নামক স্থানে এক মহিলার কাছে লুকানো একটি চিঠি আছে। ওর কাছ থেকে সেই চিঠিটা নিয়ে এস।
অতঃপর , সেই নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে সেই মহিলাকে পাওয়া গেলেও ওর কাছে তল্লাশি করেও চিঠি পাওয়া যায়নি।
শেষে হযরত আলী (রা) বলেন– নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা বলেন না। তাড়াতাড়ি চিঠিটা বের করে দাও, অন্যথায় তোমাকে উলঙ্গ করে চিঠি বের করব। শেরে খোদা আলী (রা) এর এই কঠোর মনোভাব দেখে মহিলাটি নিজের শরীরের গোপনীয় স্থান থেকে চিঠিটি বের করে দিলেন৷ (হুবুহু উদ্ধৃত নয়)
[দলিল–
(ক) সহিহ বুখারী শরীফ, হাদিস নং- ৩৯৮৩
(খ) মুসলিম শরীফ, হাদিস নং- ২৪৯৪ ]
৫/ হযরত আনাস বিন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত, একদিন নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবী আবু বকর (রা), উমর (রা) এবং ওসমান (রা) কে নিয়ে উহুদ পাহাড়ের উপর চড়ার পরে পাহাড় কম্পন শুরু হয়। তখন নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- হে উহুদ পাহাড় থাম! তোমার উপর একজন নবী, একজন সিদ্দিক এবং দুজন শহীদ আছে। (হুবুহু উদ্ধৃত নয় )
[ দলিল-
(ক) সহিহ বুখারী শরীফ, হাদিস নং ৩৬৭৫ এবং ৩৬৮৬
(খ) সুনানে তিরমিযী শরীফ, হাদিস নং ৩৬৯৭]
উপরোক্ত প্রতিটি হাদিস শরীফে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েবের খবর বলেছেন। সাহাবীগন সবাই নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখে গায়েবের খবর শোনার পরেও কেউ অস্বীকার করেন নি। সকল সাহাবী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করেছেন যে, নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েবের খবর জানেন এবং তিনি গায়েবীভাবে যা যা বলেছেন সবই সত্য।
সুতরাং, প্রমাণ হল নূর নবিজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলমে গায়েবের ব্যাপারে সুন্নী রেজভীদের আক্বিদা এবং সাহাবীগণের আক্বিদা হুবুহু এক।
আল্লাহ সকল ঈমানদারকে সুন্নী রেজভী পরিপন্থী জাহান্নামী ফির্কাগুলির হাত থেকে রক্ষা করুন। আমিন।