হাফেজ মুহাম্মদ আবু ইউসুফ
গ্রাম: চেড়িয়ারা, শাহরাস্তি, চাঁদপুর।
উত্তরঃ প্রসিদ্ধ অভিমত অনুযায়ী নবী করিম [ﷺ]-এর রবিউল আওয়াল মাসের ১২তারিখে এ ধরাধামে মিলাদ তথা শুভাগমন উপলক্ষে শুকরিয়া আদায় স্বরূপ জশনে জুলুসের আয়োজন করা, তাঁর জীবনবৃত্তান্ত আলোচনা, তাঁর প্রতি দরূদ ও সালামের হাদিয়া পেশ করা এবং তাঁর সম্মানে কিয়াম করা, গরীব-মিসকিনদের প্রতি দান খায়রাত করা, নবীজির আগমন উপলক্ষে বৈধপন্থায় খুশী উদযাপন করা, ফাতেহাখানির আয়োজন করা, সাহাবায়ে কেরাম, আউলিয়ায়ে কেরাম, ফোকাহা ও মুহাদ্দেসীনে এজামের বিশেষত: হাদিসে পাকের বর্ণনা দ্বারা বরকতময় ইবাদত হিসেবে প্রমাণিত। এ সমস্ত পুণ্যময় আমল যুগ যুগ ধরে প্রচলিত হয়ে আসছে। এ সমস্ত পুণ্যময় অনুষ্ঠান ও আমলের সমর্থনে অনেক হাদিসের বর্ণনা এবং বুযুর্গানে দ্বীনের অভিমত ও ফতোয়া রয়েছে। নিন্মে এ প্রসঙ্গে আলোচিত হল।
যেমনঃ বিশ্ববরেণ্য মুজাদ্দিদ ও মুহাদ্দিস ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী [رحمه الله عليه] তাঁর কিতাব ‘সুবুলিল হুদা ফি মৌলুদিল মুস্তফা’তে বর্ণনা করেছেন-
একদিন নবী করীম [ﷺ] বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু আমের [رضي الله عنه]’র গৃহে গমন করলেন এবং সেখানে তিনি দেখতে পেলেন যে, হযরত আবু আমের [رضي الله عنه] তাঁর সন্তান-সন্ততি ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে অত্যন্ত আদব সহকারে হুযূর আকরাম [ﷺ]-এর জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করছেন- এ দৃশ্য দেখে নবী করিম [ﷺ] অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং বললেন, হে আমের! নিশ্চয় তোমার জন্য মহান আল্লাহ্ রহমতের দুয়ার খুলে দিয়েছেন এবং যারা তোমার মত এ রকম করবে তারাও তোমার মত পরিত্রাণ পাবে।
আল্লামা জালালউদ্দীন সুয়ূতী [رحمه الله عليه] উল্লিখিত কিতাবে আরো উল্লেখ করেছেন-
একদিন রয়িসুল মুফাস্সিরিন হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস [رضى الله عنهما] পরিবারের ও এলাকার সকলকে একত্রিত করে নবী করিম [ﷺ]’র জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করছিলেন। যা শুনে উপস্থিত সবাই অত্যন্ত আনন্দ, ভক্তি ও শ্রদ্ধা পেশ করছিলেন। এমতাবস্থায় হুযূর পুরনূর [ﷺ] সেখানে উপস্থিত হলেন এবং এরশাদ করলেন- তোমাদের জন্য আমার শাফাআত তথা শুপারিশ ওয়াজিব হয়েছে।
এসব বর্ণনা সাহাবায়ে কেরামের উপস্থিতিসহ হাফেজ ইবনে দাহয়া [رحمه الله عليه] ‘আত্তানবীর ফি মাওলেদিল বশিরিন্নযির’ কিতাবেও বর্ণনা করেছেন। হযরত জালালউদ্দীন সুয়ূতী [رحمه الله عليه] স্বীয় কিতাব ‘আল ওছায়েল ফি শরহিশ শামায়িলি’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে, গৃহে বা মসজিদে বা মহল্লায় মিলাদুন্নবী [ﷺ]’র মাহফিল আয়োজন করা হয়, তখন সে গৃহে বা মসজিদে বা মহল্লায় অসংখ্য নূরানী ফেরেশতা অবস্থান করে তাদের জন্য তাঁরা দু’আ ও মাগফিরাতের প্রার্থনা করেন। আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের সবাইকে সাধারণভাবে রহমত ও সন্তুষ্টি দ্বারা ভুষিত করেন। অতঃপর নূরের মালা পরিহিত ফেরেশতাকুল মিলাদুন্নবী [ﷺ] উপলক্ষে মাহফিল আয়োজন কারীর গুনাহ্ মাফের জন্য আল্লাহ্ তাবারাকা ও তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন।
‘ফয়সালায়ে হাফত মসআলা’ কিতাবে দেওবন্দি ওহাবীদের বড়পীর হাজী এমদাদুল্লাহ্ মুহাজেরে মক্কী [رحمه الله عليه] বলেন, আমি মিলাদুন্নবী [ﷺ] মাহফিলে অংশগ্রহণ করি, এটাকে বরকতের উপায় মনে করি। প্রতিবৎসর আমি মিলাদুন্নবী [ﷺ]’র মাহফিল আয়োজন করি। মাহফিলের সমাপ্তি লগ্নে ‘কেয়াম’ তথা ‘দাঁড়িয়ে দরূদ সালাম পাঠ করা’র মাধ্যমে স্বাদ ও আনন্দ অনুভব করি।
‘দুররুছ্ ছামিন’ কিতাবে উল্লেখ আছে- শাহ্ ওলী উল্লাহ্ দেহলভী [رحمه الله عليه]’র পিতা মাওলানা আবদুর রহিম দেহলভী [رحمه الله عليه] বর্ণনা করেন যে, তিনি প্রতি বৎসর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী [ﷺ] উদ্যাপন উপলক্ষে দু‘আ-দরূদ ও ফাতেহা শরীফ পড়ে ভোজ সভার আয়োজন করতেন। কিন্তু এক বৎসর দুর্ভিক্ষের দরুণ জাঁক মজক পূর্ণভাবে তিনি মিলাদুন্নবীর দিবসে শুকরিয়া স্বরূপ খানা-পিনা ও ভোজ সভার আয়োজন করতে না পেরে সামান্য ভাজা চনা (ছোলা) দিয়ে মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত লোকদের আপ্যায়ন করালেন। সেদিন রাতেই দেখতে পেলেন যে, নবী করিম [ﷺ]-এর সামনে মিলাদে বন্টিত ভাজা ছোলাগুলো বিদ্যমান। এ দৃশ্য দেখে তিনি খুশীতে আত্মহারা হয়ে পড়লেন।
খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবায়ে কেরাম, আওলিয়ায়ে এযাম বিশেষত আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়ূতী [رحمه الله عليه], ইমাম কসতুলানী [رحمه الله عليه], ইমাম ইবনে হাজার হায়তামী [رحمه الله عليه], আল্লামা ইবনে জওযী [رحمه الله عليه], মোল্লা আলী কারী হানাফী [رحمه الله عليه] সহ অনেক মনীষী ঈদে মিলাদুন্নবী [ﷺ]-এর গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
।।।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান আলকাদেরী
প্রধান ফকিহ্-জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম।
মাসিক তরজুমান-Monthly Tarjuman (প্রশ্ন-উত্তর বিভাগ)
প্রকাশনায় : আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট
৩২১ দিদার মার্কেট, দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম।