যে সমস্ত বস্ত্ত নাপাক হওয়ার ব্যাপারে শারঈ দলীল বর্ণিত হয়েছে, তা থেকে পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি
═══════════
যে সমস্ত বস্ত্ত নাপাক হওয়ার ব্যাপারে শারঈ দলীল বর্ণিত হয়েছে, তা থেকে পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি
(১) হায়েযেব রক্ত থেকে কাপড় পাক করার উপায়:
এমতবস্থায় তা রগ্ড়িয়ে বা উঠিয়ে ফেলতে হবে। অতঃপর আঙ্গুলের কিনারা দিয়ে তা ঘর্ষণ করতে হবে, যাতে তা বিলীন হয়ে যায় এবং নাপাক দূর হয়ে যায়। এরপর তা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবে।
عَنْ أَسْمَاءَ قَالَتْ: جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ ، فَقَالَتْ: إِحْدَانَا يُصِيبُ ثَوْبَهَا مِنْ دَمِ الْحَيْضَةِ، كَيْفَ تَصْنَعُ بِهِ، قَالَ: تَحُتُّهُ، ثُمَّ تَقْرُصُهُ بِالْمَاءِ، ثُمَّ تَنْضَحُهُ، ثُمَّ تُصَلِّي فِيهِ
আসমা বিনতে আবূ বকর (রা.) বলেন: একদিন একজন মহিলা নাবী (ﷺ) এর কাছে এসে বললো, হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ), আমাদের কারও কাপড়ে যদি হায়েযের রক্ত লেগে যায় তখন সে কি করবে? তিনি বললেন: রক্তের জায়গাটি ভালোভাবে রগ্ড়াবে, তারপর পানি দিয়ে কচলিয়ে উত্তমরূপে ধুয়ে ফেলবে। অতঃপর ঐ কাপড় পরে সালাত আদায় করতে পারবে।[1]
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَتْ إِحْدَانَا تَحِيضُ، ثُمَّ تَقْتَرِصُ الدَّمَ مِنْ ثَوْبِهَا عِنْدَ طُهْرِهَا، فَتَغْسِلُهُ وَتَنْضَحُ عَلَى سَائِرِهِ، ثُمَّ تُصَلِّي فِيهِ
‘আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমাদের কারও হায়েয হলে, পাক হওয়ার পর রক্ত রগড়িয়ে কাপড় পানি দিয়ে ধুয়ে সেই কাপড়ে তিনি সালাত আদায় করতেন।[2]
কোন মহিলা যদি হায়েযের রক্ত দূর করার জন্য খড়ি বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করে অথবা পানি, সাবান কিংবা পরিষ্কারক কোন বস্ত্ত দ্বারা তা ধুয়ে ফেলে তবে তা উত্তম হবে।
عن أُمَّ قَيْسٍ بِنْتَ مِحْصَنٍ قالتُ: سَأَلْتُ النَّبِيَّ ﷺ عَنْ دَمِ الْحَيْضِ يَكُونُ فِي الثَّوْبِ قَالَ: حُكِّيهِ بِضِلْعٍ، وَاغْسِلِيهِ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ
উম্মে কায়েস বিনতে মিহসান (রা.) বলেন: আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে হায়েযের রক্ত কাপড়ে লাগলে কি করতে হবে তা জিজ্ঞেস করি। তিনি (ﷺ) বলেন: প্রথমে এক খণ্ড কাঠ দিয়ে তা খুঁচবে অতঃপর কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে ধৌত করবে।[3]
(২) কাপড়ে দুগ্ধপায়ী শিশুর পেশাব লাগলে পবিত্র করার উপায়:
মহানাবী (ﷺ) বলেন:
«يُغْسَلُ مِنْ بَوْلِ الْجَارِيَةِ، وَيُرَشُّ مِنْ بَوْلِ الْغُلَامِ»
মেয়ে শিশুদের পেশাব ধৌত করতে হবে এবং ছেলে শিশুদের পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।[4]
(৩) মযি থেকে কাপড় পবিত্র করার উপায়:
যখন মযি অত্যধিক নির্গত হবে এবং রোগ হওয়ার কারণে ব্যাপকতা দেখা দিবে, তখন ইসলামী শরীয়াতে তা পবিত্র করার ব্যাপারে শিথিলতা প্রদান করেছে। সুতরাং মযি লাগার স্থানে কাপড়ে পানি ছিটিয়ে দিলেই তা যথেষ্ট হয়ে যাবে। যেমন সাহ্ল ইব্ন হুনাইফ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তার অত্যধিক মযি নির্গত হতো। অতঃপর তিনি এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করেন:
«كَيْفَ بِمَا يُصِيبُ ثَوْبِي مِنْهُ، قَالَ: يَكْفِيكَ أَنْ تَأْخُذَ كَفًّا مِنْ مَاءٍ فَتَنْضَحَ بِهِ ثَوْبَكَ حَيْثُ تَرَى أَنَّهُ أَصَابَ مِنْهُ»
আমার কাপড়ে মযি লাগল কি করব? তিনি বলেন: কাপড়ের যে স্থানে মযির নিদর্শন দেখবে, এক আজলা পানি নিয়ে উক্ত স্থানে হালকাভাবে ছিটিয়ে দিবে, যাতে তা দূরীভুত হয়।[5]
(৪) মহিলাদের কাপড়ের নীচের (ঝুলে থাকা) অংশ পবিত্র করার পদ্ধতি:
যখন মহিলাদের কাপড়ের নীচের অংশ নাপাক হবে তখন পবিত্র জমিনে স্পর্শ করার ফলে তা পবিত্র হয়ে যাবে। একদা এক মহিলা রাসূল (ﷺ) এর স্ত্রী উম্মে সালামা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেন-
إِنِّي امْرَأَةٌ أُطِيلُ ذَيْلِي، وَأَمْشِي فِي الْمَكَانِ الْقَذِرِ فَقَالَتْ: أُمُّ سَلَمَةَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يُطَهِّرُهُ مَا بَعْدَهُ
আমি এমন এক মহিলা যে কাপড়ের নীচের অংশ ঝুলিয়ে রাখি। তিনি আরও বলেন, আমি নাপাক স্থানেও চলাফেরা করি। উম্মে সালামা (রা.) বলেন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: পরবর্তী (পবিত্র) স্থান তা পবিত্র করে দেয়।[6]
(৫) জুতা সেন্ডেলের তলদেশ পবিত্র করার পদ্ধতি:
عن أبي سعيد الخدري أن النَّبِيِّ ﷺ قال: إذا جاء أحدكم المسجد فليقلب نعليه فلينظر فيهما فإن رأى فيهما خبثًا فليمسحه بالأرض ثم ليصل فيهما
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন: যখন তোমাদের কেউ মাসজিদে প্রবেশ করবে, তখন তার জুতা খুলে তা ভালভাবে দেখে নিবে। যদি তাতে কোন অপবিত্র কিছু দেখে, তাহলে তা জমিনে মুছে নিবে, অতঃপর তা নিয়ে সালাত আদায় করবে।[7]
(৬) কুকুর পাত্রে জিভ দিয়ে চাটলে তা পবিত্র করার উপায়:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: طُهُورُ إِنَاءِ أَحَدِكُمْ إِذَا وَلَغَ فِيهِ الْكَلْبُ، أَنْ يُغْسَلَ سَبْعَ مِرَارٍ، أُولَاهُنَّ بِتُرَابٍ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নাবী কারীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেছেন: কুকুর যদি তোমাদের পাত্রে লেহন করে (খায় বা পান করে) তবে তা পাক করার নিয়ম এই যে, তা সাতবার পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে, প্রথম বার মাটি দ্বারা ঘর্ষণ করতে হবে।[8]
(৭) দাবাগাত বা পরিশোধনের মাধ্যমে মৃত জন্তুর চামড়া পবিত্র করণ:
মহানাবী (ﷺ) বলেন: إذا دبغ الإهاب فقد طهر তথা, কাঁচা চামড়াকে পাকা করা হলে তা পবিত্র হয়ে যায়।[9]
(৮) পেশাব বা এ জাতীয় কিছু থেকে জমিন পবিত্র করার পদ্ধতি:
এমতবস্থায় জমিনে পানি ঢেলে দিলেই তা পবিত্র হয়ে যাবে। যেমন মহানাবী (ﷺ) জনৈক বেদুঈন এর মাসজিদে পেশাব করার ফলে তাতে পানি ঢালার নির্দেশ দিয়েছিলেন।[10] আর মহানাবী (ﷺ) এটা আদেশ দিয়েছিলেন তাড়াতাড়ি তা পরিষ্কার করার জন্য। তবে যদি পানি না ঢালা হয় তাহলে শুকানোর পর নাপাকের চিহ্ন বা অস্তিত্ব দূর হলে তা পবিত্র হয়ে যাবে।
(৯) কুপে অথবা ঘি এর মধ্যে নাপাকী পতিত হলে তা পবিত্র করার পদ্ধতি:
এমতবস্থায় নাপাক বস্ত্ত ও তার আশপাশের জিনিস তুলে ফেলতে হবে। আর এর বাকি অংশ পবিত্র থাকবে।
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ: سُئِلَ عَنْ فَأْرَةٍ سَقَطَتْ فِي سَمْنٍ، فَقَالَ: أَلْقُوهَا وَمَا حَوْلَهَا فَاطْرَحُوهُ، وَكُلُوا سَمْنَكُمْ
ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসূল (ﷺ) কে ঘি এর মধ্যে পতিত ইঁদূর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাব দেন যে, ইঁদুরটি এবং তার আশেপাশের অংশ উঠিয়ে ফেলে দাও। তার পর তোমাদের ঘি খাও।[11]
═══════════
[1] বুখারী; মুসলিম হা/ ২৯১
[2] বুখারী হা/ ৩০৮ ; ইবনে মাজাহ হা/ ৬৩০
[3] আবূ দাউদ হা/ ৩৬৩; নাসাঈ ১/১৯৫; ইবনে মাজাহ হা/ ৬২৮
[4] সহীহ লিগায়রিহী, আবূ দাউদ হা/ ৩৭৬, নাসাঈ ১/১৫৮; ইবনে মাজাহ হা/ ৫২৬ , এর শাহেদ রয়েছে।
[5] হাসান, আবূ দাউদ হা/ ২১০, তিরমিযী; ইবনে মাজাহ হা/ ৫০৬
[6] সহীহ; আবূ দাউদ হা/ ৩৮৩, তিরমিযী (১৪৩), ইবনে মাজাহ হা/ ৫৩১।
[7] আবুদাউদ (৬৪৬)
[8] মুসলিম হা/ ২৭৯; আবূ দাউদ হা/ ৭১
[9] মুসলিম, প্রভৃতি
[10] বুখারী ২১৯; মুসলিম হা/ ২৮৪
[11] বুখারী (যবেহ করা অধ্যায়-৩৪)




Users Today : 579
Users Yesterday : 677
This Month : 7154
This Year : 179025
Total Users : 294888
Views Today : 10584
Total views : 3516713