রাসুল (ﷺ) এর এর বৈশিষ্ট্য, সিরাত ও আখলাকঃ
কৃতঃ (মাওলানা আলী উসমান)
রাসুল (ﷺ). এর গঠন প্রকৃতি
عن أنس بن مالك أنه سمعه يقول : كان رسول الله – صلى الله عليه وسلم – ليس بالطويل البائن ، ولا بالقصير ، ولا بالأبيض الأمهق ، ولا بالآدم ، ولا بالجعد القطط ، ولا بالسبط ، بعثه الله على رأس أربعين سنة ، فأقام بمكة عشر سنين ، وبالمدينة عشر سنين ، وتوفاه الله على رأس ستين سنة ، وليس في رأسه ولحيته عشرون شعرة بيضاء
১নং হাদিস : হযরত রবিআ বিন আবু আব্দুর রহমান হযরত আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি আনাস রা. কে বলতে শুনেছেন, রাসুল (ﷺ) অস্বাভাবিক দীর্ঘাদেহী ছিলেন না, আবার বেঁটেও ছিলেন না। তিনি ধবধবে সাদা কিংবা বাদামী বর্ণেরও ছিলেন না। তাঁর চুল মোবারক একেবারে কোঁকড়ানোও ছিল না আবার একেবারে সোজাও ছিল না। চল্লিশ বছর বয়সে আল্লাহ তাআলা তাকে নবুওয়াত দান করেন, এরপর মক্কায় দশ বছর এবং মদিনায় দশ বছর অবস্থান করেন। ষাট বছর বয়সে আল্লাহ তাঁকে ওফাত দেন। ওফাতের সময় তার চুল ও দাঁড়ি মুবারকে সব মিলিয়ে বিশটি চুলও সাদা ছিল না। [সহিহ বুখারি : হা. ৩৩৫৫, তিরমিযি : হা. ১, মুওয়াত্তা মালেক]
২নং হাদিস : হযরত হাসান বিন আলী রা. বলেন, আমি আমার মামা হিন্দ ইবনে আবু হালা রা. কে রাসুলুল্লাহ (ﷺ). এর দেহাবয়ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি প্রায় রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর দেহাবয়ব বর্ণনা করতেন এবং সুন্দরভাবে বর্ণনা করতেন। আমার ঐকান্তিক আগ্রহ ছিলো যে, তিনি আমার নিকট এ সম্পর্কে কিছু বর্ণনা করবেন, আমি তা স্মৃতিপটে অংকিত করে রাখব। সুতরাং তিনি বলেন, রাসুল (ﷺ). আপন গুণধর সত্ত্বার দিক থেকে মহান ছিলেন এবং মানুষের দৃষ্টিতেও বিশেষ মর্যাদাবান ছিলেন। তাঁর চেহারা মোবারক ছিল পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল। তিনি মধ্যমাকৃতির লোকের চেয়ে কিছুটা দীর্ঘাকৃতির এবং দীর্ঘকায় লোকের চেয়ে কিছুটা কম লম্বা ছিলেন। তাঁর মাথা মোবারক মানানসই রকম বড় আর চুল ঈষৎ কোঁকড়ান ছিল। স্বাভাবিকভাবে চুলে সিঁথি প্রকাশ পেলে রেখে দিতেন। অন্যথায় কষ্ট করে সিঁথি কাটতেন না। চুল বড় হয়ে গেলে তা কানের লতি অতিক্রম করে যেত। গায়ের রং অতিশয় উজ্জ্বল, প্রশস্ত ললাট ও ভ্রুযুগল কিঞ্চিত বক্র, সরু ও ঘন সন্নিবিষ্ট ছিল। ভ্রুদুটি সম্মিলিত ছিল না, পৃথক পৃথক ছিল। দুই ভ্রুর মাঝখানে একটি রগ ছিল যা রাগের সময় স্ফীত হত। তাঁর নাক মোবারক উন্নত ছিল এবং তাতে নূর চমকাত। হঠাৎ দেখলে তাঁকে বড় নাক বিশিষ্ট মনে হত। ভালোরূপে তাকালে অবশ্য বুঝা যেত যে, মানানসই উঁচু।
নুরের চাকচিক্যের দরুন বেশি উঁচু মনে হতো। তাঁর দাঁড়ি মোবরাক ছিল ঘন ও ভরপুর। কপোল যুগল স্বল্প মাংসল ও মসৃণ, মুখ চিবর পরিমিত প্রশস্ত।
দন্তরাজি চিকন ও উজ্জ্বল, সামনের দাঁত দুটির মাঝখানে কিঞ্চিত ফাঁক ছিল। তাঁর বুক থেকে নাভি পর্যন্ত লোমের একটি সরু রেখা ছিল। গর্দান ও কন্ঠদেশ এত সুন্দর ও মসৃণ ছিল, ঠিক যেন মূর্তির (নির্মল ও পরিচ্ছন্ন) গ্রীবা, গর্দানের রং ছিল রূপার ন্যায় ঝকঝকে, চকচকে। তাঁর প্রত্যেকটি অঙ্গ ছিল সুষম সুগঠিত, দেহ ছিল মাংসল, সুদৃঢ়। পেট এবং বক্ষদেশ ছিল সমান। কিন্তু বক্ষ ছিল প্রশস্ত। উভয় স্কন্ধের মাঝখানে কিছুটা দূরত্ব ছিল। অঙ্গ প্রত্যংগের অস্থিগুলো স্থূল ও দৃঢ় (এটা শক্তিশালী হওয়ার আলামত)। অনাবৃত হলে তাঁর দেহ উজ্জ্বল ও চমৎকার দেখা যেত ( বা দেহের যে অংশ খোলা থাকে তাও চকচকে দেখা যেত। সুতরাং যে অংশ পোশাকে ঢাকা থাকে তা কতই না সমুজ্জ্বল হত তা সহজেই অনুমেয়।)
বক্ষদেশ থেকে নাভি পর্যন্ত লোমের একটি সারি রেখার ন্যায় লম্ভা ছিল। এ ছাড়া বুকের দুই পাশ ও পেট লোম শূন্য ছিল। তবে উভয় বাহু কাঁধ ও বুকের উপরিভাগে লোম ছিল। কনুই থেকে কব্জি ছিলো মাননসই দীর্ঘ, হাতের তালু দুটি প্রশস্ত এবং তালুদ্বয় ও পায়ের পাতাদ্বয় ছিল মাংসল। হাত ও পায়ের আঙ্গুলসমূহ ছিল পরিমিত দীর্ঘ। পায়ের তালূ কিঞ্চিত গভীর ও পায়ের পাতাদ্বয় ছিল মসৃণ। ফলে তাতে পানি জমত না; বরং গড়িয়ে পড়ে যেত। তিনি যখন পথ চলতেন সজোরে পা তুলে সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে হাঁটতেন। মাটিতে পা ফেলতেন মৃদুভাবে, হাঁটতেন একটু লম্বা কদমে দ্রুত গতিতে। হাঁটার সময় মনে হত যেন তিনি কোন নিচু ভূমির দিকে অবতরণ করছেন। যখন কারো প্রতি তাকাতেন সর্ব শরীর ফিরিয়ে তাকাতেন। প্রায়ই আনতদৃষ্টি থাকতেন। আসমানের চাইতে যমীনের দিকেই তাঁর দৃষ্টি বেশি নিবদ্ধ থাকত। সাধারণত তিনি লাজুকতার দরুন কারো প্রতি পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেন না। পথ চলার সময় সাহাবিদের আগে দিতেন (এবং নিজে পেছনে থাকতেন)। কারো সাথে সাক্ষাত হলে তিনি আগে সালাম দিতেন। [তিরমিযি : হা. ৮, মুজামুল কবির : হা.২৯]
ব্যাখ্যা : হযরত খাদিজাতুল কুবরা রা. এর প্রথম বিবাহ হয়েছিল আতীক নামক জনৈক ব্যক্তির সাথে। এই সংসারে আব্দুল্লাহ নামক এক ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। দ্বিতীয় বিবাহ হয় আবু হালার সাথে। এই সংসারে হিন্দ ও হালা নামক দুই সন্তান জন্মগ্রহণ করে। এই দু’জন হযরত ফাতেমা রা. এর মা-শরীক ভাই ছিলেন। তাই হযরত হাসান রা. হিন্দকে মামা বলেছেন। এই হিন্দ ইবনে আবু হালাকে রাসুল (ﷺ) লালন পালন করছেন এবং তিনি একজন সাহাবি ছিলেন।
রাসুল (ﷺ) এর ‘হিলয়া’ মুবারক ও আখলাক সম্পর্কে এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ ও বিস্তারিত হাদিস। হাদিসটি ইমাম তিরমিযি রহ. সংক্ষিপ্তাকারে এনেছেন। রাসুল (ﷺ) এর ওফাতের সময় হযরত হাসান রা. এর বয়স ছিল সাত বছর। তাই পরবর্তীতে তিনি রাসুল (ﷺ) এর ‘হিলয়া’ স্পর্কে পিতা আলী এবং মামা হিন্দ বিন আবু হালার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে নেন। আর হিন্দ বিন আবু হালা রাসুল (ﷺ) এর তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হন বিধায় তার দৈহিক গড়ন ও আখলাক চরিত্র সম্পর্কে খুব বেশি অবহিত ছিলেন।
ان انفرقت عقيقه فرق
হাদিসের এই অংশ থেকে বুঝে আসে যে, সিঁথি কাটা চুল পরিপাটি করে রাখা সুন্নত, উষ্কখুষ্ক থাকা সুন্নতে রাসুলের খেলাফ। তবে পরিপাটি থাকাটা অহংকার ও লোক দেখানোর জন্য না হওয়া চাই, এজন্যই হাদিসের এই অংশে والا فلاবলে হয়তো এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, পরিপাটির পিছনে ওঠেপড়ে লাগাটাও দোষণীয়, রাসুল (ﷺ) সিঁথি কাটা অবশ্য পালনীয় করে নেননি।
সৃষ্টিগত যে গুণাবলী মানুষের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দেয় তার সব ক’টিই রাসুলের মাঝে বিদ্যমান ছিল। ব্র“ ঘন ও ঢেউ খেলানো চিকন হওয়া, নাক খাড়া ও উন্নত হওয়া, দাঁত সামান্য ফাঁকা ফাঁকা মুক্তার মতো হওয়া, বুক প্রশস্ত হওয়া, গর্দান উন্নত ও হস্তিদন্তের মোহিতর মতো হওয়া ইত্যাদি সবগুলোই সুদর্শন পুরুষের জন্য ‘অপরিহার্য। আর এগুলোর সবকটিই রাসুল (ﷺ) এর মাঝে বিদ্যমান ছিলো। হযরত হাস্সান বিন সাবিত রা. এর কথায় রাসুল (ﷺ) এর গঠন চরিত্রের বর্ণনা দিয়েছেন তার এই কবিতার পংক্তিতে-
خلقت مبرا من كل عيب – كأنك قد خلقت كما تشاء
সব দোষত্র“টি থেকে মুক্ত করে আপনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ঠিক যেন আপনার মনের মতো করে আপনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
রাসুল (ﷺ) এর আখলাক
دخل نفر على زيد بن ثابت فقالوا له حدّثنا أحاديث رسول الله صلى الله عليه وسلم، قال: ماذا أحدّثكم؟ كنت جاره فكان إذا نزل عليه الوحي بعث إليّ فكتبته له ، فكنّا إذا ذكرنا الدنيا ذكرها معنا، وإذا ذكرنا الآخرة ذكرها معنا، وإذا ذكرنا الطّعام. ذكره معنا، فكلّ هذا أحدّثكم عن رسول الله صلى الله عليه وسلم
৩নং হাদিস : খারেজ বিন যায়েদ বিন সাবেত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একবার কিছু লোক যায়েদ বিন সাবেত রা. এর নিকট এসে বলল, আমাদেরকে রাসুল (ﷺ). এর কিছু জীবনচরিত শোনান। তিনি বললেন, রাসুল (ﷺ) এর জীবনচরিত সম্পর্কে তোমাদেরকে কী আর বলবো। (অর্থাৎ তা তো বলে শেষ করা সম্ভব না) আমি তার প্রতিবেশী ছিলাম। তো যখন তার নিকট ওহী আসত তখন আমাকে তিনি ডেকে পাঠাতেন। আর আমি তা তার জন্য লিখে রাখতাম।
আমরা যখন দুনিয়াবি বিষয় আলোচনা করতাম, তখন তিনিও আমাদের সাথে আলোচনা করতেন। আবার আমরা যখন আখেরাত সম্পর্কে আলোচনা করতাম, তখনও তিনি তা নিয়ে আলোচনা করতেন। খানাপিনা নিয়ে আলোচনা করলে তিনিও তা নিয়ে আলোচনা করতেন। এসবই আমি তোমাদেরকে রাসুল (ﷺ) সম্পর্কে বলছি। [শামায়েলে তিরমিযি : হা.৩২৮, তাবাকাতুল কুবরা লি ইবনে সা’আদ : হা.৮২২, সুনানে কুবরা লিল বায়হাকী : হা.১২৩৪৫, শরহুস সুন্নাহ : ৩৫৮৫, দালাইলুন নুবুওয়া লি আবি নাঈম : ১২১]
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , ” يُقْبِلُ بِوَجْهِهِ وَحَدِيثِهِ عَلَى أَشَرِّ الْقَوْمِ , يَتَأَلَّفُهُمْ بِذَلِكَ فَكَانَ يُقْبِلُ بِوَجْهِهِ وَحَدِيثِهِ عَلَيَّ ، حَتَّى ظَنَنْتُ أَنِّي خَيْرُ الْقَوْمِ ” ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَنَا خَيْرٌ أَوْ أَبُو بَكْرٍ ؟ فَقَالَ : ” أَبُو بَكْرٍ ” ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَنَا خَيْرٌ أَوْ عُمَرُ ؟ فَقَالَ : ” عُمَرُ ” ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَنَا خَيْرٌ أَوْ عُثْمَانُ ؟ فَقَالَ : ” عُثْمَانُ ” ، فَلَمَّا سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَصَدَقَنِي فَلَوَدِدْتُ أَنِّي لَمْ أَكُنْ سَأَلْتُهُ
৪নং হাদিস : হযরত আমর ইবুনল আস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (ﷺ) সবচেয়ে সাধারণ ব্যক্তির দিকেও মুখ ফিরিয়ে (মনযোগসহ) কথা বলতেন। কথা বলে তিনি মানুষের মন রক্ষা করতেন। তিনি আমার দিকেও মুখ করে কথা বলতেন, ফলে আমি ভাবতে লাগলাম যে, আমি সবচেয়ে ভাল মানুষ। তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি উত্তম নাকি আবু বকর? রাসুল (ﷺ) বললেন, আবু বকর। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, আমি উত্তম না উমর? তিনি বললেন ওমর। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আমি উত্তম নাকি উসমান? তিনি বললেন, উসমান। যখন আমার প্রশ্নে রাসুল (ﷺ). ঠিক ঠিক উত্তর দিলেন, তখন আমার মনে হল, হায়! আমি যদি তাকে এমন প্রশ্ন না করতাম!
ব্যাখ্যা : হুসাইন রা. সূত্রে এক দীর্ঘ হাদিসেও বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল (ﷺ) মজলিসে সবার কথা এমনভাবে মনোযোগ দিয়ে শুনতেন, সবাইকে এমনভাবে কাছে টেনে নিতেন যে, সবাই মনে করত আমিই রাসুল (ﷺ). এর নিকট সবচেয়ে প্রিয়। এটা রাসুল (ﷺ). এর অনন্য বৈশিষ্ট। আমর ইবনুল আস রা. ঐ ধারণার বশবর্তী হয়ে ভেবেছিলেন যে, প্রকৃতপক্ষে তিনিই রাসুল (ﷺ). এর নিকট শ্রেষ্ঠ। তাই তিনি রাসুল (ﷺ). এর কাছ থেকে মৌখিকভাবে তা শুনার জন্য জিজ্ঞেস করে বসেন। কিন্তু রাসুল (ﷺ). আমানতের খাতিরে বাস্তবতা তুলে ধরেন এবং পর্যায়ক্রমে আবু বকর, ওমর এবং উসমান রা. এর শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দেন।
সব সাহাবিদের মধ্যে শুধু এ তিনজন সম্পর্কে তাঁর এ ধারাবাহিক প্রশ্ন থেকে বুঝে আসে যে, খুলাফায়ে রাশেদীনের পর্যায়ক্রমের শ্রেষ্ঠত্বের কথা রাসুল (ﷺ). এর জীবদ্দশায় সাহাবাদের জানা ছিল। আরো সহিহ হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদাও তাই।
عن أنس قال خدمت النبي صلى الله عليه وسلم عشر سنين فما قال لي أف قط وما قال لشيء صنعته لم صنعته ولا لشيء تركته لم تركته وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم من أحسن الناس خلقا ولا مسست خزا قط ولا حريرا ولا شيئا كان ألين من كف رسول الله صلى الله عليه وسلم ولا شممت مسكا قط ولا عطرا كان أطيب من عرق رسول الله صلى الله عليه وسلم
৫নং হাদিস : হযরত আনাস বিন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি দশ বছর রাসুল (ﷺ). এর খেদমত করেছি। কিন্তু (এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে) তিনি কখনো আমার কোন কাজে ‘উফ’ বলেননি। কোন কাজ করার দরুন বলেননি যে, তুমি এ কাজ কেন করলে? কিংবা কোন কাজ না করার দরুন বলেননি যে, তুমি এ কাজ কেন করলে না?
রাসুল (ﷺ). ছিলেন সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী। আমি রাসুল (ﷺ) এর হাতে তালুর চেয়ে কোমল কোন রেশমী কাপড় বা অন্য কিছু স্পর্শ করিনি। রাসুল (ﷺ). এর ঘামের চেয়ে অধিক সুগন্ধময় কোন মেশক বা আতরের সুবাস গ্রহণ করি নি। ব্যাখ্যা : হযরত আনাস রা. রাসুল (ﷺ). এর মদিনায় হিজরতের পর থেকেই রাসুল (ﷺ). এর খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। এ বর্ণনায় দশ বছর খেদমত করার কথা উল্লেখ হয়েছে। সম্ভবত হিজরতের বছরকে বাদ দিয়ে নয় বছর বলা হয়েছে। যেহেতু এটা ভাঙ্গা বছর ছিল।
রাসুল (ﷺ). এর ‘উহ’ না বলা ছিল তাঁর উন্নত চরিত্র ও পরম বিনয়ের পরিচায়ক। তিনি আনাস রা. এর করা না করাকে আনাসের কাজ মনে না করে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মনে করতেন এবং তাঁর ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকতেন। রাসুল (ﷺ). তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়ে এমনই মনে করতেন। তিনি কারো থেকে প্রতিশোধ নিতেন না। তবে কেউ আল্লাহর হুকুম লংঘন করলে বা হারামে লিপ্ত হলে এর ব্যবস্থা নিতেন।
হযরত আনাস রা. একবার পরম আনন্দের সাথে বলতে লাগলেন, আমি আমার এ হাতে নবী করিম (ﷺ). এর সাথে মুসাফাহা করেছি। আমি তাঁর হস্ত মুবারকের চেয়ে কোমল কোন কিছু স্পর্শ করিনি। এ হাদিস বর্ণনা করার পর শাগরেদ পরম আগ্রহের সাথে বললেন, আমি সে হাতের সাথে মুসাফাহা করতে চাই যে হাত নবী করিম (ﷺ) এর সাথে মুসাফাহা করেছে। অতঃপর এ ধারা এমনভাবে চালূ হল যে, আজ চৌদ্দশত বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত রয়েছে।
বিভিন্ন সহিহ বর্ণনায় এসেছে, নবীজী (ﷺ) এর ঘাম মুবারক আতর হিসেবে ব্যবহার করা হত। তিনি কারো সাথে মুসাফাহা করলে দিনভর তার হাত থেকে সুঘ্রাণ ছড়াতো।