দাজ্জালে কাজ্জাব উলামায়ে ছূ’দের ভ্রান্ত আক্বীদা হচ্ছে, “শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট কোনো কিছু চাওয়া বা ফরিয়াদ করা শিরক।” নাউযুবিল্লাহ! আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ছহীহ আক্বীদা- দাজ্জালে কাজ্জাব বগুড়ার ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ছূ’রা ‘মাসিক
আল বাইয়্যিনাত’-এর ২০৩ তম সংখ্যার (বিশেষ সংখ্যা) ২৩৮ পৃষ্ঠার যে বক্তব্যের ব্যর্থ সমালোচনা করেছে, তার জাওয়াব দু’ভাবে হতে পারে।
উল্লিখিত বক্তব্যটি তা’বীল বা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। অর্থাৎ উক্ত বাক্যের তা’বীলী বা ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আয় আল্লাহ পাক! আপনি মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার উসীলায় এ সমস্ত বিপদ-আপদ, বালা-মুছীবত, রোগ-শোক, আযাব-গযব হতে আমি ও আমার পরিবারের সকলকে খাছভাবে মুক্তি দিন। চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে, ক্ষেত-খামারে খাছ খায়ের বরকত দান করুন।”
সরাসরি মুর্শিদ ক্বিবলা ও শায়েখ উনার নিকট কিছু চাওয়া বা ফরিয়াদ করা কখনই শিরকের অন্তর্ভুক্ত নয়। হ্যাঁ, যদি মুর্শিদ ক্বিবলা বা শায়েখ উনাকে ‘আল্লাহ পাক’ মনে করে কিছু চায়, তবে সেটা অবশ্যই শিরক হবে। এটা শুধু শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার জন্যই খাছ নয় বরং যে কাউকেই ‘আল্লাহ পাক’ মনে করে তার নিকট কিছু চাওয়া শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আর বান্দার নিকট সাহায্য বা কোনো কিছু চাওয়া বা ফরিয়াদ করার সমর্থন তো
হাদীছ শরীফ-এই রয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “তোমাদের কেউ যদি কোথাও রাস্তা হারিয়ে ফেলে, তখন বলবে- ইয়া আব্দাল্লাহ অর্থাৎ হে আল্লাহ পাক উনার বান্দা আমাকে সাহায্য করুন।” স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতদেরকে তা’লীম দিলেন বান্দার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করতে।
যদি বান্দার নিকট কোনো কিছু চাওয়া শিরক হয়, তবে কি রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতদেরকে শিরক শিক্ষা দিয়েছেন? নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক! কেউ যদি একথা বিশ্বাস করে বা কল্পনা করে যে, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতদেরকে শিরক শিক্ষা দিয়েছেন তাহলে তো সে কাফির হয়ে যাবে। তাছাড়া বগুড়ার দাজ্জালে কাজ্জাব উলামায়ে ছূ’রা কি সবকিছুই আল্লাহ পাক উনার নিকট চায়? মানুষের কাছে কি কিছুই চায় না? তাদের জঙ্গি আস্তানা জামিল মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের ফান্ড যখন শূন্য হয়ে যায়, তখন কি তারা আল্লাহ পাক উনার নিকট টাকা চায়? নাকি কমিটি বা এলাকার ধনী লোকের নিকট হাত পাতে? তখন তো তারা ধনী লোকের পিছনে ঘুরতে ঘুরতে জুতার তলা পর্যন্ত ক্ষয় করে ফেলে। ‘স্যার’ ‘স্যার’ বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। কে জানে- এক ফাঁকে ‘আপনিই আমাদের আল্লাহ’ একথা বলে সিজদাই দিয়ে ফেলে কিনা! তখন তো তারা ঠিকই বলে থাকে যে, আপনারা ধনীরা দান না করলে, সাহায্য না করলে মাদরাসা চলবে কিভাবে? ইয়াতীমরা খাবে কি? এতে কি তারা ধনীদেরকে ‘আল্লাহ’ মনে করলো না? তাদের এটা কি শিরকের অন্তর্ভুক্ত নয়? তারা এর কি জাওয়াব দিবে?
সম্মানিত পাঠক! বগুড়ার দাজ্জালে কাজ্জাব বা উলামায়ে ছূ’দের বক্তব্য হচ্ছে, “লবণ এমনকি জুতার ফিতাও যদি হয় তাও আল্লাহ পাক উনার নিকট চাইতে হবে। মানুষের নিকট চাওয়া যাবে না।” অথচ তারাসহ সব মানুষই শুধু লবণ বা জুতার ফিতা নয় বরং অনেক কিছুই মানুষের কাছে চেয়ে থাকে। যেমন- ধান-চাল, টাকা-পয়সা, খাদ্য- খাবার, জায়গা-জমি, কাপড়-চোপড়, ঔষধ ইত্যাদি। একজন এমপি বা মন্ত্রী যখন এলাকায় যায়, তখন উক্ত দাজ্জালে কাজ্জাবসহ এলাকার সকলেই বলে, “হে মহামান্য এমপি বা মন্ত্রী সাহেব! আমাদের এই এই সমস্যা আছে। আমাদের অমুক অমুক জিনিসের প্রয়োজন আছে। আমাদের ইয়াতীমরা না খেয়ে মরছে, ওদের বাঁচান। ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক কিছুই ফরিয়াদ করে থাকে।” তখন তাওহীদ থাকে কোথায়? তখন শিরক হয় না? মোটকথা হচ্ছে- আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নিকট কিছু চাওয়া বা ফরিয়াদ করা সম্পূর্ণ জায়িয। কেননা আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের উসীলায় আল্লাহ পাক তিনি বান্দা-
বান্দী ও উম্মতদেরকে রিযিক দেন, বৃষ্টি দেন, বিপদ-আপদ, বালা-মুছীবত থেকে হিফাযত করেন। খাছ করে রহমত বরকত নাযিল করেন বলে হাদীছ শরীফ- এ উল্লেখ আছে। ইসলামী শরীয়তের ছহীহ আক্বীদা হচ্ছে, ওলীআল্লাহ বা অন্যদের নিকটও চাওয়া বা ফরিয়াদ
করা যাবে। তবে ‘আল্লাহ পাক’ মনে করে নয়। যেমন, একজন ফকির মানুষের কাছে টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড়, খাবার চায়। তবে তাকে ‘আল্লাহ পাক’ মনে করে নয়। আর ‘ইয়া মুর্শিদ ক্বিবলা’ বললেই যে মুর্শিদ ক্বিবলা ‘আল্লাহ পাক’ হয়ে গেলেন- এ ধারণাটাও ভ্রান্ত ও কল্পনাপ্রসূত। কারণ মুসলমানগণ নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও ‘ইয়া রসূলাল্লাহ’, ‘ইয়া হাবীবাল্লাহ’ বলে সম্বোধন করে থাকে। তাই বলে কি নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘আল্লাহ’ হয়ে যান? যেমন ‘ইবনে সাদ’ কিতাবের ৪র্থ খ- ১৫৪ পৃষ্ঠায় ও ‘কিতাবুদ দাই’-এর ১ম খ- ৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, একদা হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের পা মুবারক অবশ হয়ে গেলে উনারা প্রত্যেকে
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এভাবে দোয়া করেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আমাদের পা ভালো করে দিন।” বলার সঙ্গে সঙ্গে উনাদের পা মুবারক ভালো হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! যদি এক্ষেত্রে সেটা শিরক না হয়ে থাকে তবে শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ক্ষেত্রে এটা শিরক হবে কেন? হক্কানী শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা তো রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই ক্বায়িম-মাক্বাম। সকল কওমী, চর্মনাই ও ছয় উছুলী তাবলীগীদের মুরুব্বী মাওলানা রশিদ আহমদ ও মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব কর্তৃক লিখিত ‘ফতওয়ায়ে রশীদিয়া’-এর ১ম খ- ৪র্থ পৃষ্ঠা, ‘ফতওয়ায়ে আশরাফিয়া’-এর ১ম খ- ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠা এবং ‘ইমদাদুল ফতওয়া’-এর ১ম খ- ৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “ইয়া বড়পীর সাহেব! আমাকে দয়া করুন বলে আবেদন করা জায়িয।” দেওবন্দী-কওমীদের সকলের মুরুব্বী মাওলানা আশরাফ আলী থানবী তার পীর সাহেব হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে লক্ষ্য করে বলে, “হে আমার পীর সাহেব! আপনার সীনা থেকে আমার সীনায় কিছু দান করুন।” (বেহেশতী জেওর পৃষ্ঠা ৯)
দেওবন্দী-কওমীদের আরেক গুরু তথাকথিত শায়খুল হাদীছ আল্লামা আজিজুল হক তার ‘বুখারী শরীফ’-এর অনুবাদের ৫ম খ-ন্ডের ১০ পৃষ্ঠায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এভাবে দোয়া করেছে, “হে দয়ার দরিয়া আল্লাহ পাক উনার হাবীব! গোনাহগার আজিজুল হকের প্রতি দয়া করুন।” এবার বগুড়ার দাজ্জালে কাজ্জাব বা উলামায়ে ছূ’রা নিজ মুরুব্বীদেরকে মুশরিক বলে ফতওয়া দিবে তো? অতএব প্রমাণিত হলো যে, বগুড়ার দাজ্জালে কাজ্জাব উলামায়ে ছূ’দের “শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নিকট কিছু চাওয়া বা ফরিয়াদ করা” সম্পর্কিত বক্তব্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও স্ববিরোধী।