৭ম হিজরী। মদিনা শহর। ঝিলমিলে রোদ। ঝিরঝিরে খেজুর পাতা। ঝরঝরে বালু।
মদিনা-মুনিব (দ) বসে। সাথে সাহাবী সালমান ফার্সি। হযরত সালমান ফার্সি পারসিক ছিলেন। ইরানকে পারস্য বলে। পারস্যের মানুষকে পারসিক।
হযরত আবু হুরায়রাও ছিলেন সেখানে। আলোচনা চলছিল। তখনি এলো জীব্রাইল। সাথে ‘সূরা জুম’আহ’। মদিনা-মুনিব (দ) উচ্চারণ করলে, ওয়া আখারীনা মিনহুম লাম্মা… এবং তিনি (নবীজ্বী) জ্ঞান দানকারী। এমনকি তাঁদেরকেও, যাঁরা এখনো মিলিত হয় নি তাঁর সাথে।
আবু হুরায়রা এঁর কৌতুহল হল। তাই জিজ্ঞেস করলেন। হে প্রেমাস্পদ! তাঁরা কে? যারা মিলিত হন নি এখনো? যাঁদের আপনি জ্ঞান দান করেন?
মদিনা-মুনিব (দ) চুপ। কথা নেই। আবু হুরায়রা আবার জিজ্ঞেস করলেন। আবার চুপ। আবার প্রশ্ন। মোট তিনবার।
এবার কথা বললেন তিনি। আর হাত রাখলেন সালমান ফার্সি এঁর মাথায়।
-“জেনে রাখো, যদি দ্বীন (ধর্ম) নির্বাসিত হয় ৪৪৪ আলোকবর্ষ দূরেও। কৃত্তিকা নক্ষত্রে। সুরাইয়া তারকার দেশে। কিংবা সপ্তর্ষি মণ্ডলে। তবুও একজন পারসিক সেই দ্বীনকে ফিরিয়ে আনবেন (বুখারী : ৬০ : ৪২০)।”
মদিনা-মুনিব (দ) হাসছেন। মুচকি হাসি। ৭৩ বছর পর কারো আগমনের কথা বললেন। এমনকি জাতিগত পরিচয়ও দিলেন। এটি ‘ইলমে গায়েব’ ছাড়া আর কি!
(দ্বিতীয় অংশ)
৯১ হিজরী। কুফা শহর। এক লোক কথা বলছেন। উঁচু মঞ্চে দাঁড়িয়ে। সামনে বিপুল জনতা। সবাই মুসলিম। কিন্তু বক্তা জনৈক রোমান দার্শনিক। তার উদ্দেশ্য মুসলিমদের বিভ্রান্ত করা।
– শুনুন, আমার তিনটি প্রশ্ন আছে। উত্তর দিতে না পারলে বুঝব ইসলাম মিথ্যে। আমি সত্য।
১. আল্লাহ’র আগে কি ছিল? তাঁকে কে বানিয়েছে?
২. আল্লাহ এখন কোন দিকে মুখ করে আছেন?
৩. আল্লাহ এ মুহূর্তে কি করছেন?
গুঞ্জন উঠল। সবাই অবাক। কি করে এর উত্তর দেয়া যায়! ইসলাম কি তবে মিথ্যে? তখনি একটি বালক এগিয়ে এলো। দশ বছর বয়স। বুদ্ধিদীপ্ত চোখ।
– আমি উত্তর দিব।
সবাই অবাক। এ বালক কি করে উত্তর দিবে।
– প্রথম প্রশ্ন : আল্লাহ’র আগে কি ছিল?
আপনি ৯ থেকে পিছে গুনুন। কি পাওয়া যায়? ৯-৮-৭-৬-৫-৪-৩-২-১-০। ব্যাস! শূণ্য! এরপর কিছু নেই। যেহেতু আল্লাহ এক। তাই তাঁর আগে কিছুই ছিল না। ১ এর আগে শূন্য যেমন। তাই তিনি সৃষ্টি নন।
দ্বিতীয় প্রশ্ন : আল্লাহ কোন দিকে তাঁকিয়ে আছেন?
একটি মোমবাতি জ্বালান। এবার বলুন এর আলো কোন দিকে যাচ্ছে? নিশ্চই সব দিকে। একদিকে নয়। আলো সব দিকেই ছড়িয়ে যায়।
আল্লাহ তো আলোর স্রষ্টা। নূরুন আ’লা নূর। তিনি আছেন। সর্বত্রই তাকিয়ে আছেন। ভিজে এবং শুকনো সব স্থানেই (তাঁর জ্ঞানের দ্বারা)।
তৃতীয় প্রশ্ন : আল্লাহ এখন কি করছেন?
এ উত্তরের জন্য আমাকে মঞ্চে উঠতে হবে। এবং আপনাকে নামতে হবে।
(কথা মত কাজ হল। বালক এখন মঞ্চে। দার্শনিক নিচে।)
শুনুন! এ মুহূর্তে আল্লাহ একজন বোকাকে নিচে নামিয়েছেন। শিক্ষা নেয়ার জন্য। এবং একজন বালককে মঞ্চে উঠিয়েছেন। বোকাকে শিক্ষা দেয়ার জন্য।
কারণ, ওয়াল কাদরে খায়রিহি ওয়া শাররিহী মিনাল্লাহে তায়ালা… প্রত্যেক কর্ম আল্লাহ’র পক্ষ থেকে আসে। পূর্বনির্ধারিত। এটাই তাকদির, ভাগ্য।
(শেষাংশ)
অনেক লিখলাম। এতক্ষণে বুঝে গেছেন। কাকে নিয়ে লিখেছি।
জ্বী, সেই বালকই ইমামে আ’যম। তিনি আবু হানিফা। তিনি নুমান বিন সাবিত।
যাঁর কথা ৭৩ বছর পূর্বেই ঘোষিত হয়েছে মদিনা-মুনিব (দ) এঁর পবিত্র কণ্ঠে।
যুগের পৃষ্ঠে সময় অদৃষ্টে মূর্ছিত যবে মুসলমান
নুমান নামের কেউ আযানের সুরে তুলে দেয় নতুন প্রাণ।
অগোছালো সব নীতি অনুভব করে থরে-বিথরে সুসজ্জিত
মুল আবেদন তবু কমেনি’ক কভু হলেন শ্রেষ্ঠ পথিকৃৎ।
ধারা প্রগতির হল অস্থির বেগবান হল হল মুসলমান
নব জোয়ারে তটনির পাড়ে খুঁটি গেঁড়ে গায় সাম্য গান।
আর কেউ নয় সে নিশ্চয় আমার আজম-এ-ইমাম
যাঁর নাম ধরে চলে অকাতরে মাযহাবের প্রতি মাকাম।