ধরুন, আপনার কাঁধে ক্যামেরা। ঘাড়ে রেডিও। হাতে টেলিফোন। ক্যামন অবস্থা হবে? নিশ্চই বিরক্তিকর।
এ থেকে পরিত্রাণের উপায়? জ্বী, ঠিক ধরেছেন, মোবাইল ফোন। এক সেটেই কথা বলা, গান শোনা, ছবি তোলা। কত্ত সুবিধা! কত সহজ! একখানে সবকিছু।
ঠিক ইসলামও কয়েকটি জিনিষের সমন্বয়। কোর’আন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস।
কোর’আনে অনেক বিষয় স্পষ্ট নাও হতে পারে। আমাদের বোধশক্তির কারণে। যদিও ভিজে ও শুকনো সব কিছু কোর’আনে আছে। যেমন, কোর’আনে আছে, চুরি করলেই হাত কাটো।
কিন্তু হাত কোথায় কাটবে? কব্জি থেকে? না বাহু থেকে? এর সমাধান কই? এর সমাধান হাদিসে।
আবার হাদিসে অনেক জিনিষ স্পষ্ট নেই। যেমন ভাত খাওয়া। উপমাদেশে সুফিগণ ইসলাম আনলেন। নব মুসলিমরা পরল বিপাকে। কারণ, সুন্নাহ হচ্ছে রুটি খাওয়া। আরবে ভাত খায় না। এছাড়াও ভাত দিয়ে মদ হয়। নির্দিষ্ট সময় পানিতে চুবালে। আরেকটি বিষয় এদেশের মাটি, খাদ্যাভাস। হাজার বছর থেকে মানুষ ধান ফলায়। কারণ জলবায়ুই এমন।
তবে উপায়? উপায় ইজমা ও কিয়াস। তৎকালীন আলেমগণ একত্রিত হলেন। আলোচনা করলেন। সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন। ঘোষণা আসল : ভাত খাওয়া যাবে। তবে এটি মুবাহ। যাতে পাপ নেই। আবার পূন্যও নেই।
যা-হোক, মোবাইলের কথায় আসি। মোবাইল সব কিছু সহজ করেছে। একত্রিত করেছে। ঠিক সেভাবে ইসলামের বিভিন্ন ক্ষেত্র ভিন্ন ভাবে চিন্তা করলে মাথায় কুলাবে না। কারণ আমরা কেউই এতটা জ্ঞানের অধিকারী নই। সবজান্তা সমশের নই।
ঠিক একারণেই সৃষ্টি হল মাযহাব। মাযহাব একটি প্যাকেজ। মোবাইলের মত। সমস্ত কিছু সুন্দর করে গুছানো। এরপর আমাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
এখন যে কোনো একটি মাযহাব মানলেই হল। মাযহাব মানলে, কোর’আন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস সব মানা হবে। একস্থানেই সব সমাধান। কত্ত সহজ!
এখন প্রশ্ন, রাসুল সাল্লালাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম কি মাযহাব মেনেছেন? তিনি না মানলে আমরা মানব কেন?
‘পয়েন্ট অভ ভিউ’ বলে একটা কথা আছে। মানে, দৃষ্টিভঙ্গী। আচ্ছা, রাসুল-অতুল (দ) কি আমাদের মত মানুষ? দোষেগুনে মানুষ? যে তাঁকে মাযহাব মানতে হবে।
তিনি যদি আমাদের মত হন, তবে আমরাও তাঁর মত। কিন্তু আমাদের কাছে কি ওহী আসে? আল্লাহ কি আমাদের হাবীব ডেকেছেন?
আরে, মাযহাব মানে পথ, পদ্ধতি। প্রত্যেক পথের একটি মঞ্জিল থাকে। গন্তব্য থাকে। যেমন রংপুর বিশ্বরোড ধরলে ঢাকায় পৌঁছাব। আর রাসুল-অতুল (দ) নিজেই সেই গন্তব্য। মাযহাব হচ্ছে ‘রংপুর বিশ্বরোড’।
এতকিছুর পরেও বলবেন, মানি না। কোর’আনের বাংলা আছে। আল-বানী ভার্সন হাদিস আছে। নিজেই রিসার্চ করুম। নিজেই মানুম।
কোনো সমস্যা নেই। নিজেই অনুসন্ধান করতে পারেন। আত্মপূজা করতে পারেন। শুধু জেনে যান আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী কী বলেছেন। অনুসন্ধানকে ইজতেহা বলে। ইজতেহাদকারীকে মুজতাহিদ।
‘একজন মুজতাহিদ কোর’আন ও সুন্নাহ সম্পর্কে পরিপুর্ণ জানবেন (এক ছটাকও বাকি থাকবে না)। তিনি আরবী ভাষা বিজ্ঞান জানবেন। পরিপূর্ণ ভাবে। এখ অবধি সমস্ত বিষয় সম্পর্কে তাকে নৈর্ব্যক্তি জ্ঞান রাখবে। এবং জটিল সমস্যার উৎস সপর্কে জানবে। তাঁর জীবন হবে নিষ্কলুষ। পাপহীন।’
এখন আমাকে বলুন, আরবী কতটুকুন জানেন? সিহাসিত্তার কতগুলো হাদিস মুখস্ত আপনার? আপনি কতটা পুণ্যবান? ইসলামের কতগুলো জটিল বিষয়ের সমাধান করেছেন?
ঠিকমত বিসমিল্লাহও পড়তে জানেন না! আর সহিহ সহিহ করেন! আল-বানি আর ইবনে তাইমিয়ার লাফালাফি শুধু অনলাইনেই পাবেন। এখান থেকেই ইসলাম শিখেছেন। এজন্যই আপনারা ‘গুগল মুফতি’।
হাজার বছর ধরে কোটি মানুষ মাযহাব মানল। আর আপনারা মহাপণ্ডিত হয়ে গেলেন! এক ধাপে মুজতাহিদ!
এগুলো আসলে মানসিক রোগ। স্কিৎজোফ্রোনিক বলে। ইসলামের ভাষায় তাকফিরি। মানে, আমি ছাড়া সবাই ভুল। সব ভুল। এরকম করলে শুধু নফসের পূজাই হবে। আর নফসের পূজা মানে, জনাব ইবলিসের পূজা।
সত্য বলতে, মাযহাব না মানা ইসলাম না মানারই নামান্তর।
আমার বক্তব্য শেষ। বিবেক আপনার। বিবেচনা আপনার।