কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়ানো কবিরা গুনাহ

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়ানো কবিরা গুনাহ

মুফতি মাও. মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

হালাল উপায়ে ব্যবসায়-বাণিজ্য করা শ্রেষ্ঠ ইবাদত। পবিত্র হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, রসুল (সা.) রজব মাস থেকেই মাহে রমজানের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতেন। আর পুরো শাবান মাস নফল রোজা রেখে  দেহ-মনকে প্রস্তুত করতেন প্রেমমাস রমজানের জন্য। সাহাবিরাও রমজান উপলক্ষে আত্মাকে সতেজ করতেন কোরআন তেলাওয়াত, নফল ইবাদত আর দান সদকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে।

রসুল (সা.) এবং আমাদের রমজান প্রস্তুতি সম্পূর্ণ উল্টো। ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যরে প্রশিক্ষণের মাস রমজানে ভ্রাতৃঘাতী ও নির্মমতার চর্চাই বেশি হয় আমাদের দেশে। মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবসামগ্রী গুদামজাত করা হয় বেশি মুনাফার লোভে।

পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র জাতি, যারা রোজাদারদের গলায় ছুরি ধরে বেশি লাভের আশায় ৬ মাস ১ বছর আগে থেকেই প্রস্তুতি নিই। অথচ অনেক অমুসলিম দেশেও রোজার মাসে রোজাদারদের জন্য বিশেষ সেবা দেওয়ার কথা শুনি থাকি। যেসব ব্যবসায়ী পণ্য মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তাদের ব্যাপারে রসুল (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা, বেশি মুনাফার লোভে দ্রব্যসামগ্রী গুদামজাত করা স্পষ্ট হারাম। মানুষকে কষ্ট দিয়ে খাদ্যদ্রব্য গুদামজাতের ব্যাপারে অসংখ্য সহি হাদিস থেকে কিছু হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো।

  হজরত মা’মার (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘জনগণের জীবিকা সংকীর্ণ করে যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করবে সে বড় অপরাধী গণ্য হবে। আর জেনে রাখ! সে গোনাহগার সাব্যস্ত হবে। (মুসলিম ও তিরমিজি। ) প্রিয়নবী (সা.) আরও বলেন- ‘মুজরিম তথা অপরাধীর পক্ষেই সম্ভব পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা। ’ (মুসলিম) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসরা বলেন, আলোচ্য হাদিসে মজুতদারকে অপরাধী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘অপরাধী’ শব্দটি সহজ কোনো শব্দ নয়। মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে অপরাধী শব্দটি ফেরাউন, হামান ও কারুনের মতো প্রতাপশালী এবং অহংকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। যেমন পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্যবাহিনী অপরাধী ছিল। ’ (সূরা কাসাস : ৮)।   মজুতদারের নোংরা মানসিকতা ও কদর্যপূর্ণ স্বার্থপরতাকে মহানবী (সা.) এভাবে ব্যক্ত করেছেনÑ হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘গুদামজাতকারী কতই না ঘৃণিত মানুষ। আল্লাহ তায়ালা দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দিলে সে চিন্তায় পড়ে যায়। আর বাড়িয়ে দিলে সে আনন্দিত হয়। (শুআবুল ইমান ও মেশকাত। ) হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে রাখবে, মানুষকে কষ্ট দেবে, সে এ সম্পদ দান করে দিলেও তার গোনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট হবে না। (মেশকাত। ) খাদ্যদ্রব্য গুদামজাতকারী সম্পর্কে রসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমদানি করবে সে রিজিক প্রাপ্ত হবে। আর যে গুদামজাত করবে সে অভিশপ্ত হবে। (ইবনে মাজাহ ও সুনানে দারেমি। )

আসন্ন মাহে রমজানে ব্যবসায়ী ভাইরা মজুতদারি থেকে নিজে বেঁচে থাকবেন। অন্যকেও এই ভয়াবহ গোনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন।   রোজাদারদের ঠকানোর গোনাহ থেকে আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেফাজত করুন। হালালভাবে ব্যবসা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং দুনিয়ার সুখ, আখেরাতের মুক্তি লাভের পাশাপাশি নবী-সিদ্দিকদের সঙ্গে জান্নাতি হওয়ার তাওফিক আল্লাহ তায়ালা আমাদের দিন।

লেখক : এম ফিল গবেষক ও খতিব, মনিপুর বাইতুর রওশন জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment