চাঁদ দেখা সংক্রান্ত মাসায়েল

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

চাঁদ দেখা সংক্রান্ত মাসায়েল :

মাসআলাঃ চাঁদ উদয়স্থান যদি মেঘাচ্ছন্ন হয় তবে এমন একজন সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, বালেগ ও মুসলমান ব্যক্তির (চাই পুরুষ হোক অথবা মহিলা) চাঁদ দেখার দারাই রমযানের চাঁদ প্রমানিত হবে,যার দ্বীনদার হওয়া স্বীকৃত। কাজেই উক্ত অবস্থায় একজন পাগল, নাবালেগ,অমুসলিম অথবা প্রকাশ্য ফাসেকের চাঁদ দেখা দ্বারা রমজানের চাঁদ প্রমাণিত হবে না।

মাসআলাঃ চন্দ্র উদয়স্থল পরিষ্কার হলে এমন সংখ্যক লোকের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দেওয়া জরুরী যার দ্বারা চাঁদ উঠার প্রবল বিশ্বাস সৃষ্টি হয়।

মাসআলাঃ কেউ নিজে চাঁদ দেখলে যদি তার সাক্ষ্য গ্রহন না করা হয়, তবে সেক্ষেত্রে তার নিজের জন্য রোযা রাখা ফরজ । তবে ঈদ সে অন্যান্য মানুষের সাথেই আদায় করবে । চাই তার রোযা ৩১ টি হোক না কেন।

মাসআলাঃ অনেকে শাবান মাসের ৩০ তারিখে এই নিয়তে রোযা রাখে যে, যদি রমযান শুরু হয়ে থাকে তবে রমযানের রোযা অন্যথ্যায় নফল রোযা হবে। এভাবে এই দিনে রোজা রাখা মাকরূহ । তবে কেউ যদি পূর্ব থেকেই এভাবে রোযা রাখতে অভ্যস্ত হন (যেমন তিনি প্রতি মাসেই শেষ তিনদিন রোযা রাখেন ) তবে তার জন্য জায়েয।

মাসআলাঃ কোন ব্যক্তি একদেশে রোযা শুরু করল। এরপর সে অন্য একটি দেশে সফর করল । সেখানে গিয়ে দেখল ঐ দেশবাসীর রোযা তার থেকে একটি বেশি হয়েছে এবং তার ২৮ টি রোযা পূর্ণ হওয়ার পর ঈদ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যেমন কেউ বাংলাদেশ থেকে সৌদিআরব গেলে এমনটি হতে পারে। এক্ষেত্রে তার করনীয় কী ?
অনুরুপভাবে কেউ সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে এসে দেখল তার থেকে বাংলাদেশবাসীদের রোযা একটি কম হচ্ছে । এক্ষেত্রে তার রোযা ৩১ টি হতে পারে । সে কী করবে ?
এমতাবস্থায় প্রথম ব্যক্তি অর্থাৎ যার রোযা ২৮টি হয়েছিল সে ঐ দেশবাসীর সাথেই ঈদ পালন করবে এবং পরবর্তিতে ১ টি বা ২টি রোযা রেখে ৩০টি পূর্ণ করে নিবে । তবে ওই দেশে ( যেখানে সে সফর করে গিয়েছে ) যদি ২৯টি রোযা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে সে ২৯টি পুরা করতে পারবে।
আর দ্বিতীয় ব্যক্তি ঐ দেশবাসীর সাথে রোযা রাখতে থাকবে । যদিও তার রোযা ৩১টি হয়ে যায় । যাতে রমযানের সম্মান নষ্ট না হয় । পরে তাদের সাথেই ঈদ করবে।

মাসআলাঃযেসব স্থানে দিন-রাত সাভাবিক নয় (যেমন ছয় মাস দিন এবং ছয় মাস রাত থাকে) সেসব স্থনের লোক কিভাবে রোযা রাখবে ?
যেসব দেশে দিন-রাত ভারসাম্য পূর্ণ নয় সেখানকার লোকেরা তাদের পাশ্ববর্তি ভারসাম্যপূর্ণ দেশের সাথে তুলনা করে রোযা রাখবে । অর্থাৎ তারা যেভাবে রোযা রাখে উক্ত দেশের লোকেরাও সেভাবে রোযা রাখবে।

সাহরি -ইফতার সম্পর্কিত মাসায়েল

১. প্রতিটি কাজের পূণ্য ও প্রতিদান নিয়তের উপর নির্ভরশীল। তাই সাওমের জন্য নিয়ত করা আবশ্যক। (বুখারি-১, মুসলিম-২৫৮২)

২. রাতে নিয়ত করতে না পারলে দিনে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিয়ত করলেও রোযা হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী ২০০৭, মুহাল্লা ৪/২৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৬)

৩. সিয়াম পালনকারির জন্য সাহরি খাওয়া সুন্নাত।(বুখারি: হাদিস-১৯২৩, মুসলিম: হাদিস-২৬০৩)

৪. রমযানের প্রত্যেক দিনেই ঐ দিনের রোযার নিয়ত করা জরুরি। একদিনের নিয়ত পুরো মাসের রোযার জন্য যথেষ্ট নয়।(দুররে মুখতার: ২/৩৭৯)

৫. যদি কেউ রোযার নিয়ত ব্যতীত এমনিতেই সারা দিন না খেয়ে থাকে, তাহলে এটা রোযা বলে ধর্তব্য হবে না। (রদ্দুল মুহতার: ২/৩৭৭)

সাহরি

৪. সুবহে সাদিকের পর খানা-পিনা যায়েজ নেই। আযান হোক বা না হোক। লোক মুখে যে প্রচলিত রয়েছে যে, সুবহে সাদিকের পরেও আযান পর্যন্ত খাওয়া যায় তা সম্পূর্ণ ভুল। (রদ্দুল মুহতার:২/৪১৯)

ইফতার

৫. ইফতারের জন্য সূর্যাস্ত হওয়া আবশ্যক। সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করলে সাওম আদায় হবে না।
(বুখারি-১৮১৫)

৯১. রোযাদারকে ইফতার করালে রোযাদারের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। (তিরমিযি-৮০৭)

৯২. কেউ যদি মেঘের কারণে সূর্যাস্ত হয়েছে ভেবে ইফতার করে এবং পরে একথা জানতে পারে যে তখন ইফতারের সময় হয়নি। তবে সে রোযা কাযা আদায় করবে। (বুখারি-১৮২০)

নিয়তের মাসআলাঃ

মাসআলাঃ রমজানের রোযার জন্য নিয়ত করা ফরজ। প্রতিটি রোযার জন্য আলাদাভাবে নিয়ত করা জরুরী। পুরো মাসের জন্য একবার নিয়ত করলে তা যথেষ্ট হবে না ।

মাসআলাঃ নিয়ত হল মনের ইচ্ছা । কাজেই মনে মনে এই সংকল্প করবে যে, অমি আজ রোযা রাখছি । মুখে নিয়ত করা জরুরী নয় বরং উত্তম। মুখে নিয়ত করলে এভাবে করবে আমি আজ রোযা রাখার নিয়ত করলাম।

মাসআলাঃ কেউ যদি রোযার নিয়ত ব্যতীত সারাদিন না খেয়ে থাকে তবে তা রোযা হিসেবে ধর্তব্য হবে না।

মাসআলাঃ রোযার নিয়ত রাতে করা উত্তম । তবে ফরয রোযার ক্ষেত্রে সূর্য ঢলে পড়ার পূর্ব পযন্ত নিয়ত করার অবকাশ রয়েছে। নফল রোযার ক্ষেত্রেও একই হুকম। তবে কাযা রোযার ক্ষেত্রে ‍সুবহে সাদিকের পূর্বে নিয়ত করা জরুরী।

মাসআলাঃ নিয়ত করার ‍শুরু সীমা হল পূর্বের দিনের সূর্যাস্তের পর থেকে । কাজেই এর পূর্বে কেউ নিয়ত করলে তা সহীহ হবে না।

মাসআলাঃ রমযান মাসে অন্য যে কোন রোযার নিয়ত করলেও এই রমজানের রোযা আদায় হবে। অন্য রোযা আদায় হবে না।

সাহরীর মাসায়েল :

মাসআলাঃ সাহরী খাওয়া সুন্নত এবং ইহা একটি বরকতপূর্ণ কাজ । তাই পেট ভরা থাকলেও ফযীলত ও বরকত হাছিলের জন্য অন্তত এক ঢোক পানি হলেও খেয়ে নিবে।

মাসআলাঃ সাহরী এমন সময় খাওয়া শেষ করা সুন্নত যার অল্প কিছু সময় পরে সুবহে সাদিক হয় । তবে এত বিলম্ব করা জায়েয নেই যে, রোযার ব্যাপারেই সন্দেহ ‍সৃষ্টি হয়।

মাসআলাঃ সুবহে সাদিকের পর খানা – পিনা জায়েয নেই। চাই আযান হোক বা না হোক । অনেকে মনে করে আযানের পূর্ব পর্যন্ত খাওয়া যায় । যা সম্পূর্ন ভুল ধারনা । কেননা আযান সুবহে সাদিকের পরে দেওয়া হয়। কাজেই কেউ যদি আযানের পূর্ব পর্যন্ত খেতে ‍থাকে তবে তার খাওয়ার শেষ অংশ সুবহে সাদিকের মধ্যে পড়াই স্বাভাবিক । এমতাবস্থায় তার ঐ দিনের রোযা পরবর্তিতে ক্বাযা করে নেওয়া জরুরী।

মাসআলাঃ কোন কারনে সাহরী খেতে না পারলেও রোযা রাখতে হবে। একারনে রোযা ছেড়ে দেওয়া মারাত্ত্বক গুনাহ।

ইফতার-এর মাসআলাঃ

মাসআলাঃ ইফতার করা সুন্নত । সুর্যাস্তের পর বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি ইফতার করা সুন্নত। ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করে ইফতার করা মাকরূহ।

মাসআলাঃ ইফতারের পূর্বে নিম্নোক্ত দুআটি বেশী বেশী পড়বে।
يا واسع الفضل اغفرلي
(অর্থ: হে মহান ক্ষমা দানকারী!আমাকে ক্ষমা করুন)

মাসআলাঃ ইফতার খেজুর বা খুরমা দ্বারা করা ‍সুন্নত । খেজুর না পেলে পানি দ্বারা করবে।

মাসআলাঃ ইফতার সাধারন খানা খাওয়ার দুআ পড়েই শুরু করবে। এরপর নিম্নোক্ত দুআ দুটি পড়বে:
اللهم لك صمت و علي رزقك افطرت
(অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোযা রেখেছি এবং তোমারই দেওয়া রিযিক দ্বারা ইফতার করলাম )
কেউ কেউ মনে করে এই দুআটি ইফতার শুরু করার পূর্বে পড়তে হয়। অথচ তা সহীহ নয়। বরং হাদীসে ইফতার এর পরেই পড়ার কথা এসেছে।
ذهب الظمأ و ابتلت العروق و ثبت الاجر ان شاء الله
(অর্থ: পিপাসা দূরিভূত হয়েছে, ধমনীসমূহ সতেজ হয়েছে এবং রোযার ছাওয়াব নিশ্চিত হয়েছে ইনশা আল্লাহ)
আর ইফতারীর দাওয়াত খেলে মেযবানকে শুনিয়ে এই দুআ পড়বে –
افطر عندكم الصائمون و اكل طعامكم الابرار و صلت عليكم الملائكة
(অর্থঃ রোযাদারগন যেন তোমাদের বাড়িতে ইফতার করে এবং নেক লোকেরা যেন তোমাদের খানা খায় আর ফেরেশতাগন যেন তোমাদের জন্য রহমতের দুআ করে)

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment