ই’তিকাফ
১) রমযান মাসের শেষ দশ দিন ই’তিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়াহ। যদি কোনো মসজিদে এক জনও ই’তিকাফ এ বসে তাহলে এলাকাবাসী সুন্নত তরকের গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। আর যদি একজনও ই’তিকাফ না করে তাহলে ঐ এলাকার সকলেই গুনাহগার হবে।
২) রমযান মাসের শেষ দশকের ই’তিকাফ অবস্থায় সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয নয়। বের হলে ই’তিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ব্যক্তি সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়ার কারণে তার সুন্নত ই’তিকাফ নষ্ট হয়ে গেছে। যেদিন গোসলের জন্য বের হয়েছে ঐ দিনের ই’তিকাফ কাযা করে নেওয়া জরুরি। আর এই ই’তিকাফটি নফল ই’তিকাফ হিসাবে গন্য হবে। (মারাকিল ফালাহ ৩৮৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১২)
৩) ই’তিকাফ একটি ইবাদত, যা বিনিময়যোগ্য নয়। তাই ই’তিকাফ এর জন্য পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয নয়। কাউকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এতেকাফ করালে সে ই’তিকাফ সহীহ হবে না। অতএব এ জাতীয় ই’তিকাফ দ্বারা এলাকাবাসী দায়িত্বমুক্ত হতে পারবে না। (হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ২/৩০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৭; ইলাউস সুনান ১৬/১৭২-৭৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৫৫)
৪) ই’তিকাফরত ব্যক্তি পেশাব-পায়খানার জন্য মসজিদের বাইরে গেলে আসা যাওয়ার পথে পথ চলতে চলতে সালাম আদান-প্রদান করতে পারবে। তদ্রুপ এসময় পথ চলতে চলতে কারো সাথে অল্পস্বল্প কথাও বলতে পারবে। এতে ই’তিকাফ এর ক্ষতি হবে না। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৭; মিরকাতুল মাফাতিহ ৪/৫২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১)
৫) বিনিময় নিয়ে ই’তিকাফ করা বা করানো সম্পূর্ণ নাজায়েয। কারণ ই’তিকাফ একটি ইবাদত। আর ইবাদতের বিনিময় দেওয়া-নেওয়া নাজায়েয। ঐ লোকের ই’তিকাফ দ্বারা সুন্নতে মুয়াক্কাদা (কেফায়া) এর দায়িত্ব আদায় হবে না। (জামে তিরমিযী ১/৫১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১১৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৪; মাবসূত,সারাখসী ১৬/৩৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১১৪; ফাতাওয়া খানিয়া ২/৩২৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৫/৩৭)
৬) বুঝমান নাবালেগের ই’তিকাফ সহীহ। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্য থেকেই ই’তিকাফে বসা উচিত । কেননা রমযানের শেষ দশকের ই’তিকাফ অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ ইবাদত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। তাই এ ব্যাপারে উদাসীনতা মোটেই ভালো নয়। (বাদায়েউস সানায়ে ২/২৭৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১১; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭৭)
৭) পুরুষের ই’তিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য শরয়ী মসজিদ হওয়া জরুরি। নামায-ঘরে ই’তিকাফ সহীহ হবে না। তাই ই’তিকাফে বসতে চাইলে মসজিদেই বসতে হবে। খানা আনা-নেওয়ার জন্য কেউ না থাকলে ই’তিকাফ অবস্থায় খানা নেওয়ার জন্য বাড়ি যেতে পারবেন। তবে খানা নিয়ে দ্রুত মসজিদে ফিরে যেতে হবে। বাইরে বিলম্ব করা যাবে না।(সূরা বাকারা ১৮৭; সুনানে আবু দাউদ ৩৩৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২২১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১১; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪০)
৮) আযান দেওয়ার জন্য ই’তিকাফকারী মুয়াযযিনের কামরায় যাওয়া জায়েয। এ কারণে ইতিকাফ নষ্ট হবে না। (দেখুন : আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৮০; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৩)