আল্লাহ তায়ালা আমাদের সাধারন মানুষ কে মা বাবার বীর্য থেকে তৈরি করেছেন
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ-
▪ আত-তারিক ৮৬:৫
সুতরাং মানুষের ভেবে দেখা উচিত যে, তাকে কি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে?
▪ আত-তারিক ৮৬:৬
তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে। [১]
[১] অর্থাৎ, বীর্য থেকে; যা চরম কাম-উত্তেজনার শেষে সবেগে নির্গত হয়। এই বীর্য-বিন্দু নারীর গর্ভাশয়ে পৌঁছনোর পর আল্লাহর আদেশ হলে গর্ভ সঞ্চারের কারণ হয়।
▪ আল-ইনসান ৭৬:২
নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে,[১] যাতে আমি তাকে পরীক্ষা করি, এই জন্য আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। [২]
[১] মিলিত শুক্র বা বীর্যবিন্দু বলতে নর-নারী উভয়ের মিশ্রিত বীর্য এবং তার বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন অবস্থা। মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হল, তাকে পরীক্ষা করা। যেমন তিনি বলেছেন, “যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করবার জন্য; কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম?” <em>(সূরা মুলক ৬৭:২ আয়াত)</em>
[২] অর্থাৎ, তাকে শ্রবণশক্তি ও দর্শনশক্তি দান করেছি। যাতে সে সব কিছু দেখতে ও শুনতে পারে এবং তারপর আনুগত্যের অথবা অবাধ্যতার উভয় রাস্তার মধ্যে কোন এক রাস্তা অবলম্বন করতে পারে।
▪ আল-মুরসালাত ৭৭:২০
আমি কি তোমাদেরকে এক ঘৃণিত পানি (বীর্য) থেকে সৃষ্টি করিনি?
আস-সিজদাহ ৩২:৭
যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে উত্তমরূপে সৃজন করেছেন[১] এবং মাটি হতে মানব-সৃষ্টির সূচনা করেছেন।[২]
[১] অর্থাৎ, যা কিছু আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন, তা যেহেতু আল্লাহর হিকমত ও ইচ্ছা অনুযায়ী সেহেতু প্রতিটি বস্তুতেই এক বিশেষ সৌন্দর্য ও উৎকৃষ্টতা আছে। বলা বাহুল্য, তাঁর সৃষ্টির সকল জিনিসই সুন্দর। অনেকে أَحسَنَ শব্দটিকে أَتقَنَ ও أحكَمَ এর অর্থে ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ তিনি যাবতীয় বস্তুকে সুনিপুণ ও মজবুত করে সৃষ্টি করেছেন। অনেকে তাকে أَلهَمَ এর অর্থে মনে করেছেন। অর্থাৎ যাবতীয় সৃষ্টিকে তার প্রয়োজনীয় জিনিসের ইলহাম (জ্ঞানসঞ্চার) করেছেন।
[২] অর্থাৎ, সর্বপ্রথম মানুষ আদম (আঃ)-কে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন যাঁর নিকট থেকে মানব জন্মের সূচনা হয়েছে এবং তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে তাঁর বাম পার্শেবর অস্থি থেকে সৃষ্টি করেছেন; তা হাদীস দ্বারা বুঝা যায়।
▪ আস-সিজদাহ ৩২:৮
অতঃপর তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হতে[১] তার বংশ উৎপন্ন করেছেন।
[১] অর্থাৎ বীর্য হতে। উদ্দেশ্য হল যে, মানুষের জোড়া তৈরী করার পর তার বংশ বৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ এই নিয়ম নির্ধারণ করেছেন যে, পুরুষ ও নারী উভয়ে বিবাহ করবে, অতঃপর তাদের মিলনের ফলে পুরুষের বীর্যের যে ফোঁটা নারীর গর্ভাশয়ে প্রবেশ করবে তার দ্বারা তিনি সুন্দর অবয়বে মানুষ সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠাতে থাকবেন
▪ ইয়াসীন ৩৬:৭৭
মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে (নাপাক) বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি? আর সে কিনা হয়ে যায় প্রকাশ্য ঝগড়াটে।
▪ আল-ফুরকান ২৫:৫৪
তিনিই পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তার জন্য বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্ক নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তোমার প্রভু অত্যন্ত ক্ষমতাবান।
▪ আন-নাজ্ম ৫৩:৪৫
তিনিই নারী-পুরুষ জোড়া সৃষ্টি করেন
▪ আন-নাজ্ম ৫৩:৪৬ ۪
বীর্য থেকে, যখন তা নির্গত করা হয়;
▪‘আবাসা ৮০:১৮
আল্লাহ তাকে কোন্ বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন?
▪‘আবাসা ৮০:১৯
বীর্য থেকে; তিনি তাকে সৃষ্টি করেন ও পরিমিতভাবে গঠন করেন।
▪ আল-‘আলাক ৯৬:২
তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন জমাটবদ্ধ রক্ত থেকে।
▪ আন-নাহ্ল ১৬:৪
তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন এক ফোঁটা শুক্র থেকে। অথচ এই মানুষই প্রকাশ্য বিরোধী হয়ে যায়।
▪ আল-কিয়ামাহ ৭৫:৩৬
মানুষ কি মনে করে যে, তাকে বৃথাই ছেড়ে দেওয়া হবে?
▪ আল-কিয়ামাহ ৭৫:৩৭
সে কি (মায়ের গর্ভাশয়ে) নিক্ষিপ্ত একফোঁটা বীর্য ছিল না?
▪ আল-কিয়ামাহ ৭৫:৩৮
অতঃপর সে ছিল (মাতৃগর্ভে) একটি ঝুলন্ত রক্তপিণ্ড, তারপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুন্দর আকার দিয়েছেন।
▪ আল-হাজ্জ ২২:৫
হে মানুষ! পুনরুত্থান সম্বন্ধে তোমাদের যদি কোন সন্দেহ থাকে তাহলে (ভেবে দেখ,) আমিই তো তোমাদেরকে (প্রথম মানুষ আদমকে) মাটি থেকে, তারপর (অন্যান্যদেরকে) বীর্য থেকে, তারপর জমাট রক্তপিণ্ড থেকে, তারপর সুগঠিত ও সুগঠিত নয় এমন মাংসখণ্ড থেকে সৃষ্টি করেছি; তোমাদের কাছে (আমার ক্ষমতা) প্রকাশ করার জন্য। আমি যা (সৃষ্টি করতে) চাই তা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত মাতৃগর্ভে রেখে দেই; তারপর তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করে আনি; পরে যাতে তোমরা পূর্ণ শক্তির বয়সে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কতক (অল্প বয়সে) মারা যায়, আবার তোমাদের মধ্যে কতককে নিকৃষ্টতম বয়সে (জরাজীর্ণ বার্ধক্যে) উপনীত করা হয়, যাতে তারা জানার পরে আবার কিছুই না জানে (সবকিছু ভুলে যায়)। আর তুমি জমিনকে দেখতে পাও মৃত, তারপর আমি যখন তাতে পানি (বৃষ্টি) বর্ষণ করি তখন তা নড়ে (জীবিত হয়ে) ওঠে, বেড়ে ওঠে আর সবরকম সুন্দর উদ্ভিদ উদ্গত করে।
[১] আয়াতটিকে আল্লাহ তা’আলা পুনরুত্থানের উপর প্রথম প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছেন। প্রথম সৃষ্টি যার পক্ষে করা সম্ভব তাঁর পক্ষে দ্বিতীয় সৃষ্টি কিভাবে কঠিন হবে? প্রথম সৃষ্টিই প্রমাণ করছে যে, তিনি দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে সক্ষম। [ইবন কাসীর] আয়াতে মাতৃগর্ভে মানব সৃষ্টির বিভিন্ন স্তর বর্ণিত হয়েছে।
▪ রাসূলুল্লাহ বলেনঃ মানুষের বীর্য চল্লিশ দিন পর্যন্ত গর্ভাশয়ে সঞ্চিত থাকে। চল্লিশ দিন পর তা জমাট রক্তে পরিণত হয়। এরপর আরো চল্লিশ দিন অতিবাহিত হলে তা মাংসপিণ্ড হয়ে যায়। অতঃপর আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে একজন ফিরিশতা প্রেরিত হয়। সে তাতে রূহ ফুঁকে দেয়। এ সময়েই তার সম্পর্কে চারটি বিষয় লিখে দেয়া হয়ঃ [১] তার বয়স কত হবে, [২] সে কি পরিমাণ রিযিক পাবে, [৩] সে কি কি কাজ করবে এবং [৪] পরিণামে সে ভাগ্যবান হবে, না হতভাগা হবে। [বুখারীঃ ২৯৬৯, মুসলিমঃ ২৬৪৩]
[২] এর অর্থ হচ্ছে মানুষ নামের প্রজাতির সূচনা হয়েছে আদম আলাইহিস সালাম থেকে। তাঁকে সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তারপর পরবর্তী পর্যায়ে শুক্র থেকেই মানব বংশের ধারাবাহিকতা চলতে থাকে। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছেঃ “মানুষের সৃষ্টি শুরু করেন মাটি থেকে তারপর তার বংশ-ধারা চালান একটি নির্যাস থেকে যা বের হয় তুচ্ছ পানির আকারে।” [সূরা আস সাজদাহ, ৭-৮]