ইসলামে জাদুকরের হুকুম ও কালো জাদুর শাস্তি

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

কেউ যদি কাউকে কালা জাদু করে এবং যাকে কালা জাদু করা হয়েছে সে যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে যে কালো জাদু করেছে ইসলামে তার কেমন শাস্তির বিধান আছে?

এর উত্তরে বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি কাউকে কালো জাদু করে এবং তার মাধ্যমে যদি সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সেটি আদালতে যখন প্রমাণিত হবে তখন ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী আদালতে তার শাস্তির বিধান হবে।

যতটুকু ক্ষতি করা হয়েছে ততটুকু ক্ষতিপূরণ তাকে অবশ্যই দিতে হবে এবং কোন পর্যায়ের ক্ষতি হয়েছে সেটি ইসলামি আদালতের বিচারক নির্ধারণ করে দেবেন।

এই ক্ষেত্রে যিনি কালো জাদু করেছেন অথবা এই কাজে লিপ্ত রয়েছেন তার জন্য ইসলামি বিধান হচ্ছে, তাকে তওবা করতে হবে। যদি সে এই কাজের জন্য তওবা না করে থাকে তাহলে কুফরি করার কারণে ইসলামি শরিয়ার বিধান অনুযায়ী তাকে হত্যা করা হবে, তাকে হত্যাদণ্ড দেওয়া হবে। এটি ইসলামের একটি অপরিহার্য বিধান বা দণ্ডবিধি যেটি ইসলাম এই অপরাধের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে।

ইসলামি শরিয়তে জাদুকরের হুকুম

ইমাম মালেক (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন, ব্যক্তি জাদু করে তার জন্য আল্লাহতায়ালার এই বাণী প্রযোজ্য :

وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ

অর্থ : ‘নিশ্চয়ই তারা জানে, যা তারা ক্রয় করেছে আখিরাতের জন্য কোনো অংশ নেই।’ (সুরা বাকারা : ১০২) অতঃপর বলেন, আমার অভিমত হলো, জাদুকরকে হত্যা করা, যদি সে জাদুকর্ম করে থাকে।

ইবনে কুদামা (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন, জাদুকরের শাস্তি হত্যা। আর এই অভিমত পোষণ করেছেন, উমর, উসমান বিন আফফান, ইবনে আমর বিন আব্দুল আজিজ, আবু হানিফা এবং ইমাম মালেক।

ইমাম কুরতুবী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন, মুসলিম মনিষীদের মাঝে মুসলিম জাদুকর ও (অমুসলিম) জিম্মি জাদুকরের শাস্তির ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে।

ইমাম মালেক (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন, যখন মুসলমান জাদুকর কুফুরি কালামের মাধ্যমে জাদু করে তবে তাকে হত্যা করা হবে। আর তার তাওবা ও গ্রহণীয় হবে না। আর না তাকে তাওবা করতে বলা হবে। কেননা এটা এমন বিষয় যার দ্বারা আল্লাহর নির্দেশকে লঙ্ঘন করা হয়। এজন্য আল্লাহতায়ালা জাদুকে কুফুরি বলে আখ্যায়িত করেছেন।

وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ

অর্থ : ‘তারা যাকেই জাদু বিদ্যা শিখাতো তাকে বলে দিত, তোমরা (জাদু শিখে) কুফুরি করো না, নিশ্চয়ই, আমরা তোমাদের জন্য পরীক্ষা।’ (সুরা বাকারা : ১০২)

আর এই অভিমত পোষণ করেছেন ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, আবু সাওর, ইসহাক এবং আবু হানিফা (রাহেমাহুমুল্লাহ)।

ইমাম ইবনে মুনজির বলেন যখন কোনো ব্যক্তি স্বীকার করে, সে কুফরি কালামা দিয়ে জাদু করেছে, তখন তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। যদি সে তাওবা না করে থাকে। এমনিভাবে কারো কুফুরির যদি প্রমাণ ও বর্ণনা সাব্যস্ত হয়ে যায়, তবুও তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। আর যদি তার কথা কুফরি না হয় তবে তাকে হত্যা করা বৈধ হবে না। আর যদি জাদুকর তার জাদু দ্বারা কাউকে হত্যা করে তবে তাকেও হত্যা করা হবে আর যদি ভুলক্রমে হত্যা করে তবে তাতে দিয়াত দিতে হবে।

হাফেজ ইবনে কাসির (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন : মনীষীরা আল্লাহতায়ালার নিম্নোল্লিখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণ করেছেন যাতে জাদুকর সম্পর্কে বলা হয়েছে :

وَلَوْ أَنَّهُمْ آمَنُوا وَاتَّقَوْا

অর্থাৎ ‘যদি তারা ইমান আনয়ন করত এবং আল্লাহকে ভয় করত।’ সুতরাং এই আয়াত দ্বারা অনেকেই জাদুকরকে কাফের বলে মতপোষণ করেছেন। আবার অনেকেই অভিমত পোষণ করেছেন, সে কাফের তো নয় তবে তার শাস্তি শিরোচ্ছেদ কেননা ইমাম শাফেয়ি (রাহেমাহুল্লাহ), আহমদ বিন হাম্বল (রাহেমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন, তারা উভয়ে বলেন : বলেছেন, তিনি বাজলা বিন আব্দকে বলতে শুনেছেন, উমর বিন খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এ মর্মে নির্দেশ জারি করেছেন, প্রত্যেক জাদুকর পুরুষ ও মহিলার শিরোচ্ছেদ করে দাও। তিনি বলেন, তিনি তিনটি জাদুকর মহিলাকে হত্যা করেছেন। ইবনে কাসির (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন, ইমাম বুখারি (রাহেমাহুল্লাহ) এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন। (বুখারি : ২/২৫৭)

ইবনে কাসির (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন, সহিহ বিশুদ্ধ বর্ণনায় আছে যা হাফসা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তাকে তার এক বান্ধবী জাদু করেছেন। অতঃপর তার নির্দেশে জাদুকরকে হত্যা করা হয়েছে।

ইমাম আহমদ থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর তিন সাহাবা থেকে জাদুকরকে হত্যার ফতোয়া রয়েছে। (তাফসির ইবনে কাসির : ১/১৪৪)

মূলকথা : পূর্বের আলোচনা থেকে বুঝা যায়, ইমাম শাফেয়ি (রাহেমাহুল্লাহ) ছাড়া জমহুর উলামা জাদুকরকে হত্যার মতপোষণ করেন, তিনি বলেন, জাদুকরের জাদু দ্বারা যদি কেউ মারা যায়, তবে তার (কিসাসের) পরিবর্তে তাকে হত্যা করা হবে।

জাদু দিয়ে জাদু দমন করা কি বৈধ?

কাতাদা বলেন, আমি সাঈদ বিন মুসাইয়্যাবকে জিজ্ঞাসা করলাম কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হলে অথবা পুরুষত্বহীনতার জন্য কি ঝাড়-ফুঁক করা যাবে? তিনি বললেন, তাতে কোনো নিষেধ নেই। কেননা তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মানুষের কল্যাণ। (ফতহুল বারী : ১০/২৩২)

ইমাম কুরতুবি বলেন : মুসলিম পণ্ডিতদের এ বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। জাদু দ্বারা জাদুর দমন করে মানুষের চিকিৎসা করাকে সাঈদ বিন মুসাইয়িব বৈধতার স্বীকৃতি দিয়েছেন। ইমাম মুজনিও এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

ইমাম শাবি বলেন, আরবি ভাষায় ঝাড়-ফুঁক হলে কোনো দোষ নেই; কিন্তু হাসান বসরি তা মাকরুহ বলেছেন। (কুরতুবি : ২/৪৯)

ইবনে কুদামা বলেন, জাদুর চিকিৎসক যদি কুরআনের আয়াত অথবা কোনো জিকিরের মাধ্যমে অথবা এমন বাক্য দ্বারা চিকিৎসা করে, যাতে কোনো কুফরির বিষয় নেই তবে কোনো বাধা নেই; কিন্তু তা যদি জাদু দ্বারাই হয়ে থাকে তবে তা হতে ইমাম আহমদ বিমুখ হয়েছেন। (আল-মুগনি : ১০/১১৪)

হাফেয ইবনে হাজার (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বাণী :

النشرة من عمل الشيطان

অর্থাৎ ‘ঝাড়-ফুঁক শয়তানি কর্মের অন্তর্ভুক্ত।’ (মুসনাদে আহমদ ও আবু দাউদ)

এর উদ্দেশ্য হলো মৌলিকভাবে এটিই, তবে যার উদ্দেশ্য ভালো তাতে কোনো দোষ নেই। ইবনে হাজার আরো বলেন : ঝাড়-ফুঁক দুধরনের :

প্রথম : জায়েজ ঝাড়-ফুঁক : এ পদ্ধতি হলো, যা কুরআন ও শরিয়তসম্মত দুআর দ্বারা জাদুর চিকিৎসা করা।

দ্বিতীয় : হারাম ঝাড়-ফুঁক : এ প্রকার হলো, যার মাধ্যমে জাদুকে জাদু দ্বারা নষ্ট করা হয়। অর্থাৎ জাদু নষ্ট করার জন্য শয়তানকে খুশি করা হয় এবং তার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করে তার সাহায্য কামনা করা হয়। আর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাদিস :

النشرة من عمل الشيطان

অর্থাৎ ‘ঝাড়-ফুঁক শয়তানের কর্মের অন্তর্ভুক্ত।’ সাধারণত এদিকেই ইঙ্গিত করে। এজন্য নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কয়েক হাদিসে গণক ও জাদুকরের থেকে যেতে নিষেধ করেন এবং তা কুফরি সাব্যস্ত করেন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment