এ দুটো হলে তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন। রুকইয়াহ করি বা না করি, সুস্থ হই বা না হই আমার এ দুই প্রশ্নের জবাব লাগবে। এমন না যে, জাদুর জিনিস কোথায় আছে জেনে সেখান থেকে উদ্ধার করবো বা কে জাদু করেছে জেনে তাকে কিছু বলতে পারবো! কিছুই করতে পারবো না তবুও প্রশ্নের উত্তর লাগবে!
আমার কাছে এসব প্রশ্ন হল আজাইরা প্রশ্ন। এই টাইপের প্রশ্নের পিছনে যারা পড়ে তারা প্রায়ই রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে পারে না। কারণ তাদের উদ্দেশ্য তো সুস্থতা না, তাদের উদ্দেশ্য হল প্রশ্নের উত্তর পাওয়া।
যাই হোক, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাদু আক্রান্ত হবার পর প্রচুর দুয়া করতেন। দুয়ার বরকতে আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দেন আল্লাহর রাসুলের রোগের কথা। কে জাদু করেছে, জাদুর জিনিস কোথায় আছে। দুইজন ফেরেশতা স্বপ্নে এসে নিজেদের মধ্যে কথোপকথন করতে থাকেন।
মাথায় রাখতে হবে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘কে জাদু করেছে, কোথায় জাদু আছে’ জানার জন্য দুআ করেন নি। (কারও যদি জানা থাকে এভাবে করেছেন তাহলে রেফারেন্স দিবেন, আমি সংশোধন করে নিব। আমি যত জায়গায় পড়েছি এক জায়গাতেও নেই এমন)। উপরন্তু নবীগনের স্বপ্ন সত্য। আমার আপনার স্বপ্নের মত নয়। আমি আপনি স্বপ্ন দেখলাম, অমুকে জাদু করছে বা অমুক জায়গায় জাদুর জিনিস আছে সেক্ষেত্রে এটাই সঠিক এমন না ভাবাই সতর্কতা। তবে কাউকে জাদু করতে দেখলে স্বপ্নে নিজে নিজে সতর্ক হওয়া যায়। কি টাইপের সতর্কতা সে ব্যাপারে এখানে পাবেন। (জাদু টোনা থেকে বাঁচতে করণীয়)
আর কোন জায়গা দেখলে সেখানে খোজ নেয়া যায় যে, আসলেই জাদুর কিছু আছে কিনা। পাওয়া গেলে তো আলহামদুলিল্লাহ। এই নিয়মে নষ্ট করতে হবে। (জাদুর জিনিস বা তাবিজ নষ্ট করার নিয়ম)।
পাওয়া না গেলেও হতাশার কিছু নেই। আমাদের উচিত মুল বিষয়ে স্থির দৃষ্টি রাখা। সেটা হল, জাদু নষ্টের রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে থাকা। (সেলফ রুকইয়াহ গাইড (যাদু) | যাদুর সাধারণ চিকিৎসা)
তাহলেই যথেষ্ট ইন শা আল্লাহ। জাদুর রুকইয়াহ করার সময় অনেক সময় জাদুকর, জাদুর স্থান, জাদুর জিনিস, জাদুর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের স্বপ্নে দেখেন। এমন হলে কি করতে হবে উপরে বলেছি। আবার এমনও হয়েছে, জাদুকর এসে মাফ চেয়ে গিয়েছে। রুকইয়াহ একদিন করার পরেই কবিরাজ ফোনে মাফ চেয়েছে এমন ঘটনাও আছে। কাদের ক্ষেত্রে এমন হয়েছে? যাদের আমল, আখলাক শক্তিশালি। তারা সহজেই আল্লাহর সাহায্য পেয়েছেন।
কাজেই রুকইয়াহর পাশাপাশি আমল, আখলাকের দিকেও নজর দেয়া দরকার। কিন্তু আমরাতো সেটা করবো না। আমাদের মাথায় ঘুড়বে হল- কে জাদু করলো, কেন জাদু করলো, কিভাবে জাদু করলো, কোথায় আছে কুফুরি জিনিসপত্র! আর উদভ্রান্তের মত এই কবিরাজ থেকে ঐ কবিরাজের কাছে ছুটে বেড়াবো, পকেট খালি করে ফেলবো। কবিরাজও বুঝে কাকে কি বললে তার কাছ থেকে খসানো যাবে, ঝগড়া লাগানো যাবে, আরও ধান্ধা বাড়ানো যাবে।
আমরাও এর-ই উপযুক্ত!
আরও দু’টো অদ্ভুত প্রশ্নের জবাব।
১ নং প্রশ্নোত্তর
এটা অদ্ভুত কেন সেটা আগে বলি। কেউ যখন ডাক্তারের কাছে যায় তখন কি ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে, “ডাক্তার সাহেব, আমি কিভাবে বুঝবো আমি অসুস্থ?”
করে না। কারণ সুস্থ মানুষ ডাক্তারের কাছে যায় না। অসুস্থ হলে যায়। এখন যদি ডাক্তার সাহেব তাকে সুস্থতার ক্রাইটেরিয়া বলা শুরু করেন তখন খুবই সম্ভবনা আছে কয়েকটি ক্রাইটেরিয়া তার সাথে মিলবে না আর সে নিজেকে অসুস্থ ধরে নিবে। অথচ সে বাস্তবে সুস্থ!
সঠিক প্রশ্ন করতে পারাটাও একটা গুণ। সঠিক প্রশ্ন, সঠিকভাবে, সঠিক জায়গায় করতে পারা বড় গুণ। প্যাচ দেখিয়ে এই যুক্তি দেয়া যাবে না, এই প্রশ্ন দিয়ে আসলে আমি এটা বুঝাতে চাই নি, ওটা বুঝাতে চেয়েছি। কথা হল, আপনি ওটা বুঝাতে চাইলে ওটাই যেন বোঝা যায় এমনভাবে প্রশ্নটা করবেন।
সাধারনত, কেউ যখন কোনো অসুবিধার কথা বলে তখন আমি চিন্তা করি তার সমস্যা আসলে কি হতে পারে। এটা কি ডাক্তারি সমস্যা? নাকি বদনজরের সমস্যা, নাকি জিন সংক্রান্ত, নাকি জাদু সংক্রান্ত কিছু? নাকি সবকিছুর মিক্সআপ? এই প্রশ্নের উত্তর এমনি এমনি বাতাসে খুজি না। বরং প্রতিটা সমস্যার লক্ষনগুলো ভাবি, লক্ষনগুলোর সাথে তার বলা অসুবিধাগুলো মিলাই এবং সে অনুযায়ী একটা ডিসিশন নেই। আমার ডিসিশন এবং প্রেসক্রিপশন হল সম্ভাব্য। হতেও পারে এটা জাদুর সমস্যা, নাও হতে পারে।
কোন রোগের কি লক্ষন তার উপর আপনার ভাল দখল থাকলে এই ডায়াগনোসিস আপনি নিজেও করতে পারবেন। তখন নিজেই বুঝতে পারবেন আপনি বদনজরে আক্রান্ত, নাকি জিনের সমস্যা, নাকি জাদুতে ভুগছেন।
এটাও বুঝতে পারবেন যে, আপনার সমস্যাগুলো রুকইয়াহ সংক্রান্ত নাকি ডাক্তারী সংক্রান্ত নাকি দুটোই।
কাজেই প্রশ্নটা কিভাবে বুঝবো জাদু করেছে কিনা হবে না। বরং আপনি আপনার অসুবিধাগুলো ব্যক্ত করবেন। আমার এই হয়েছে, ঐ হয়েছে, এমন লাগে, অমন লাগে। কিসে আক্রান্ত আর কি ট্রিটমেন্ট দিতে হবে সেটা স্পেশালিস্টদের উপর ছেড়ে দিন। আর নাহয় নিজে স্টাডি করবেন লক্ষনগুলো। তাহলে বুঝতে পারবেন ইংশাআল্লাহ। আর যদি কোনো অসুবিধা/সমস্যা না থাকে তাহলেতো আপনি সুস্থ! সকাল, সন্ধ্যা ও ঘুমের আগের মাসনুন আমল করবেন। ইংশাআল্লাহ সুরক্ষিত থাকবেন।
২ নং প্রশ্নোত্তর
এটাও আরেকটা অদ্ভুত প্রশ্ন। কারণ সমস্যা চলে গেলেই বুঝবো আমি সুস্থ! এই প্রশ্নটাই যদি ঘুড়িয়ে করা হয়, “কিভাবে বুঝবো আমার জ্বর সেরে গিয়েছে?” – অদ্ভুত শোনাচ্ছে না?
রুকইয়াহ সংক্রান্ত সমস্যার কারণে কারও চুল পড়ে, চেহাড়া খারাপ হয়ে যায়, কারও সংসার ভাঙার পথে চলে যায়, কেউ পাগলের মত হয়ে যায়। রুকইয়াহ করে যদি চুল ঠিক হয়ে যায়, চেহাড়ার সৌন্দর্য্য ফিরে আসে, সংসার আবারও জোড়া লেগে যায়, মানসিক সুস্থতা ফিরে আসে – তাহলেইতো বোঝা গেল সমস্যা চলে গিয়েছে, সুস্থ হয়েছে। আর যদি না হয় তাহলে যতদিন না হবে ততদিন চালিয়ে যেতে হবে।
রুকইয়াহ সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর পিছনে শয়তানের হাত থাকে। শয়তান কখনই কুরআন পছন্দ করবে না। কাজেই আপনি যখন কুরআন তেলাওয়াত করবেন/শুনবেন (রুকইয়াহর নিয়তে) সে বাধা দিবে। হয়ত ঘুম পাবে, হয়ত অসুস্থ হয়ে যাবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আর যদি সুস্থ হয়ে যান (সুস্থ থাকেন) তাহলে এসব কিছুই হবে না। (ধোকা দেয়ার জন্য শয়তান কিছুদিন চুপ থাকতে পারে। কাজেই রুকইয়াহ করা শুরু করলে ২-৩ মাস করা উচিত যদিও কোনো কিছু বোঝা না যায়)
আল্লাহ তায়ালা সবাইকে চিন্তাশক্তি দিয়েছেন। আমাদের উচিত কাজে লাগানো। আল্লাহ তৌফিক দিন। আমীন।