ইলমে দ্বীন

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

এলেম

“ছেরাজুছ্-ছালেকীন” – আব্দুল খালেক এম এ

এলেমঃ

  এলেম মানে জানা। এলেম বহুপ্রকার, ফরজ, মোবাহ এবং হারাম। শরীয়ত বিরোধী এলেম হারাম। আর কতিপয় এলেম আছে যাহাতে শরীয়তের আদেশ বা নিষেধ নাই তাহা মোবাহ। শরীয়ত সম্পর্কীত এলেম ফরজ। নবীগণ যেই দীন বা ইসলাম লইয়া আসিয়াছিলেন সেই সম্পর্কীয় বিদ্যা শিক্ষা করা ওয়াজেব। নবীগণ মোটামুটি ঐ বিদ্যা শিক্ষা দিতে আসিয়াছিলেন যাহার সম্বন্ধ দেহ ও রূহের সংগে রহিয়াছে। তাঁহারা ঈমান আমল, আখলাক ও মোয়ামেলা (ব্যবহারিক জীবন) সম্পর্কীয় বিষয়াদি শিক্ষা দিবার জন্য আসিয়াছিলেন। তাঁহারা শিক্ষা আল্লাহর নিকট হইতে প্রাপ্ত হইয়াছেন। তাঁহারা নিজ হইতে কোনকিছু বলিতেন না বরং আল্লাহর তরফ হইতে যাহা শিক্ষা পাইতেন তাহাই তাঁহাদের শিক্ষা- সাধারণ আকলের স্তরের উর্ধের শিক্ষা। এই শিক্ষা সর্বসাধারণের আকলের গন্ডীর বহির্ভূত। আকীদার এলেম যথাঃ আল্লাহর তাওহীদ, ফেরেশতা, বেহেশত, দোজখ, কেয়ামত ইত্যাদির এলেম এবং আমলের এলেম যথাঃ- নামাজ, রোজা, হজ্ব, জাকাত, হারাম ইত্যাদির এলেম সাধারণ আকলের গন্ডীর বাহিরে। এইগুলি আকল দ্বারা উপলব্ধি করা সম্ভবপর নহে। যাহা উপকারী বিদ্যা তাহা একমাত্র নবীগণই বলিতে পারিয়াছেন। জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প ইত্যাদি যাহা সুষ্ঠু আকল উপলব্ধি করিতে পারে তাহা নবীগণের শিক্ষার গন্ডীর বাহিরে। নবীগণের শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা এবং প্রত্যেক নর-নারীর তাহা শিক্ষা করা ওয়াজেব আর বাকীগুলি মোবাহ, যদি তাহা শরীয়তের খেলাফ না হয়। কাজেই ঈমান, আমল, মোয়ামেলা ও চরিত্র সম্বন্ধীয় এলেম লাভ করা অতি জরুরী। এই বিষয়াদির এলেম শরীয়ত সম্পর্কীয়। এ স্থলে শরীয়ত সম্পর্কীয় বিদ্যা সম্বন্ধে আলোচনা করিব।

  দুইজাহানের কাজ-কর্ম এলেমের উপর নির্ভর করে। এলেম ও এবাদত এই দুইটি জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বস্তু যাহা শিক্ষা দিবার জন্য আল্লাহতায়ালা কিতাব ও রাসুল পাঠাইয়াছেন এবং যাহার জন্য আছমান ও জমীন এবং তন্মধ্যস্থ যাবতীয় বস্তু পয়দা করিয়াছেন। আল্লাহতায়ালা বলিয়াছেন-“সেই আল্লাহতায়ালা যিনি সাত আছমান ও তৎতুল্য জমীন পয়দা করিয়াছেন এবং উহাদের মধ্যে তাঁহারই আদেশ নাজেল হয় যেন তোমরা বুঝিতে পার যে আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান এবং তাঁহার এলেম প্রত্যেক বস্তুকে পরিবেষ্টন করিয়া রাখিয়াছেন”। আল্লাহতায়ালা বলিয়াছেন- “যাহাদের এলেম আছে এবং যাহাদের এলেম নাই তাহারা সমান নহে”। অন্যত্র বলিয়াছেন- “আমি জ্বিন ও ইনছানকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য পয়দা করিয়াছি।” এবাদাতের নিয়ম কানুন বুঝিতে হইলে এলেম দরকার। অতএব এলেম ও এবাদতের কায়দা কানুন শিক্ষা করা সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ বলিয়া গ্রহণ করা অবশ্য কর্তব্য। এই দুই বস্তু উপলব্ধি করার জন্যই মানব সৃষ্ট।

এস্থলে স্মরণ রাখা কর্তব্য যে, এলেম এবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। হযরত ফরমাইয়াছেনঃ আমি আমার উম্মত অপেক্ষা যেরূপ শ্রেষ্ঠ, আলেম আবেদ অপেক্ষা সেইরূপ শ্রেষ্ঠ। আরও হযরত ফরমাইয়াছেনঃ নামাজ রোজার সহিত এক বৎসর এবাদত করা অপেক্ষা আলেমের প্রতি একবার দৃষ্টিপাত করা আল্লাহ্‌র নিকট অধিকতর প্রিয়। কোরআনে আল্লাহতায়ালা রাসুলুল্লাকে লক্ষ্য করিয়া বলিয়াছেন- “তুমি যাহা জানিতে না তাহা আমি তোমাকে শিক্ষা দিয়াছি”। অন্যত্র আছে- “তিনি ইনছানকে ঐ বস্তু শিক্ষা দিয়াছেন যাহা তাহারা জানিত না”। আল্লাহ রাসুলুল্লাকে এই দোয়ার আদেশ দিয়াছেন- “হে পরওয়ারদেগার! আমাকে এলেম বাড়াইয়া দাও”। একদা হযরত ছাহাবাগণকে বলিলেনঃ আমি তোমাদিগকে দেখাইয়া দিব না যে সর্বশ্রেষ্ঠ বেহেশ্‌তি কে? তাঁহারা আরজ করিলেনঃ হ্যাঁ হুজুর। তখন হযরত ফরমাইলেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে যাহারা আলেম। ইহাতে বুঝা গেল যে এলেম এবাদত অপেক্ষা উত্তম। কিন্তু বান্দার এবাদত করা ব্যতীত গতি নাই, আর আমল ছাড়া এলেমেরও কোন মূল্য নাই। এলেম বৃক্ষ স্বরূপ, এবাদত উহার ফল। বৃক্ষ মূল্যবান বস্তু হইলেও ফলহীন বৃক্ষের কোন মূল্য নাই। অতএব এলেম ও এবাদত উভয়ই হাছেল করিবার জন্য চেষ্টা করা নিতান্ত দরকার। হযরত হাছান বছরী (রাঃ) বলিয়াছেনঃ “এলেম এমনভাবে হাছেল কর যেন এবাদতের ক্ষাতি না হয়, আর এবাদত এমনভাবে হাছেল কর যেন এলেমের ক্ষতি না হয়”। এলেম আমলের ইমাম। এলেম ব্যতীত আমল হইতে পারে না। মাবুদকে না চিনিলে ও না জানিলে এবাদত হইতে পারে না। যে ব্যক্তি মাবুদের নাম ও গুণ জানে না, কোন কোন বিষয় বিশ্বাস করা  ও কোন্‌ কোন্‌ বিষয় বর্জন করা আবশ্যক, তাহা অবগত নহে, তবে সে ব্যক্তি কিসের এবাদত করিবে? হয়ত অজ্ঞতাবশতঃ এমন কোন কাজ করিয়া বসিবে যদ্বারা তাহার নেক আমল সমূলে বিনষ্ট হইয়া যাইবে।

  অতএব ইনছানের সর্বপ্রথম কর্তব্য শরীয়তের এলেম যথাঃ অজু তাহারাত (পাক-পাকিজা), নামাজ, রোজা এবং উহার আহকাম ও শর্তসমূহ ইত্যাদি শিক্ষা করা। কতক লোক এবাদত করে বটে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এমন শরীয়তের খেলাপ কাজ করিয়া বসে যদ্বারা তাহাদের এবাদত সমূহ বিনষ্ট হইয়া যায়। জাহেরী এবাদতের সঙ্গে বাতেনী এবাদতও আবশ্যক। যে সব বিষয় দিলের সহিত এলাকা রাখে যথা-তাওয়াক্কুল, ছবর, শোকর, আল্লাহ্‌র রেজা, মুহব্বত, কানায়াত, তছলীম, তওবা, এখালাছ প্রভৃতি অর্জন এবং তৎসঙ্গে ক্রোধ, সুদীর্ঘ বাসনা, হাছাদ, রীয়া, অহঙ্কার প্রভৃতি বর্জন করাও ওয়াজেব। জাহেরী তাহারাত (পবিত্রতা) ও এবাদত দ্বারা এক গুণ আর দিলের পাক-পাকিজা ও এবাদত দ্বারা নিরানব্বই গুণ ফল লাভ হইয়া থাকে। বাতেনী এবাদত সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা এবং উহার উপর আমল করা আল্লাহর কালাম পাক হইতে প্রমাণিত হইয়াছে। কোরআন শরীফে আছেঃ “যদি তোমরা সত্য ঈমানদার হও তবে তোমরা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কোল কর”। অন্য স্থানে আছেঃ “তুমি সমস্ত সম্বন্ধ কর্তন করিয়া তাঁহার (আল্লাহর) দিকে ছুটিয়া আস”। সাধারণত লোক নামাজ, রোজা ইত্যাদির আমল যেরূপ জরুরী বলিয়া মনে করে, ছবর, শোকর ইত্যাদির অর্জন ও রীয়া, অহংকার প্রভৃতি বর্জনকে তদ্রুপ জরুরী বলিয়া মনে করে না। মুর্খতাবশতঃ অনেক সময় লোক গোনার কাজকে নেক কাজ বলিয়া ধারণা করিয়া বসে এবং আল্লাহর নিকট আজাবের পরিবর্তে ছওয়াবের আশা মনে পোষণ করিতে থাকে। জাহেরী আমলের সঙ্গে বাতেনী আমলের একটি এলাকা আছে যদ্বারা আমল পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। যে ব্যক্তি বাতেনী আমল, যথা-এখলাস (বিশুদ্ধ সংকল্প) রীয়া বর্জন, আত্মশ্লাঘা বর্জন প্রভৃতিকে এবাদত বলিয়া না জানে এবং উহাদের ফলাফল সম্পর্কে অবগত না হইয়া থাকে তবে তাহার জাহেরী আমলও নিরাপদ থাকে কিনা ইহাতে সন্দেহ আছে। হয়ত তাহার অজ্ঞতার দরুণ জাহের ও বাতেন উভয়ই নষ্ট হইয়া যাইবে। এইহেতু হজরত ফরমাইয়াছেন- জাহেলের নামাজ পড়া অপেক্ষা আলেমের নিদ্রা ভাল।

এলেম শিক্ষা দ্বারা আল্লাহর ভয় দেলের মধ্যে হাছেল হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন- “আল্লাহতায়ালার বান্দাগণের মধ্যে তাহারাই আল্লাহকে ভয় করে যাহারা আলেম।” অতএব যাহারা আল্লাহকে ভালরূপে চিনে না তাহারা আলেমগণের ন্যায় ভয় করিতে পারে না। কাজে কাজেই এলেম শিক্ষা করা সর্বপ্রথম কর্তব্য।

(১) এল্‌মে তাওহীদ – আল্লাহ্‌তায়ালার একত্ববাদ বিষয়ক জ্ঞান বা আকায়েদের এলেম যাহার এলাকা দেলের সংগে।

(২)এল্‌মে শরীয়ত অর্থাৎ যদ্বারা দীনের আরকান, আহকাম যথা- হালাল, হারাম, জায়েজ, নাজায়েজ, ফরজ, ওয়াজেব, সুন্নত আমলের কায়দা কানুন ইত্যাদি অবগত হওয়া যায়।

(৩) এল্‌মে ছির্র অর্থাৎ বাতেনী এলেম যাহার দ্বারা বস্তু বা বিষয়ের নিগূঢ় তত্ত্ব বুঝা যায়।

এল্‌মে তাওহীদের মধ্যে দীনের মূল বিষয়গুলি জানিতে হইবে। প্রত্যেক ব্যক্তির জানা কর্তব্য যে আল্লাহ্‌তায়ালা সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান, সর্বদর্শী, শ্রোতা, ইচ্ছাময়, হামিশা জেন্দা ও হামিশা জেন্দা থাকিবেন, অসীম, অনন্ত, রেজেকদাতা, তাঁহার শরীক বা মেছাল নাই,  হায়াত-মৌত, লাভ-লোকসান, তাঁহারই হাতে ইত্যাদি এবং হযরত নবী করিম (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁহার রসুল এবং আখেরাত সম্বন্ধে যে যে সংবাদ তিনি দিয়াছেন তাহা সবই সত্য এবং যাহা কোরআন ও হাদীছ শরীফের বিপরীত তাহা অসত্য ইত্যাদি।

  এল্‌মে ছির-ইহার মধ্যে এতটুকু শিক্ষা করা ফরজ যদ্বারা আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ ভালরূপে অবগত হওয়া যায় এবং এখলাছ ও আমলের নিরাপদতার পরিচয় পাওয়া যায়।

  এল্‌মে তাওহীদ সম্বন্ধে এতটুকু জানা জরুরী যদ্বারা আকিদা, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ঠিক হইয়া যায়। এল্‌মে শরীয়তের মধ্যে যেই পরিমাণ আমল করা ফরজ সেই পরিমাণ জানাও ফরজ। যেমন- অজু, তাহারাত, নামাজ, রোজা ইত্যাদি আদায় করা ফরজ, তৎসংক্রান্ত মছলাগুলি জানাও ফরজ। এল্‌মে ছির্র সম্বন্ধে ঐ বিষয়গুলি জানিতে পারিলেই যথেষ্ট যাহা এবাদতের জন্য উপকারী এবং ঐগুলিও জানা আবশ্যক যদ্বারা এবাদত বিনষ্ট হয়। কেননা দেলের গুপ্তভেদ অসংখ্য এবং সর্বসাধারণের পক্ষে সবগুলি জানা সম্ভবপর নহে।

  যে বিদ্যা উপকারী উহাই শিক্ষা করিতে হইবে। তাওহীদের এলেম সর্বাপেক্ষা উপকারী। হাদীছ শরীফে আছে যে, হযরত দাউদ (আঃ) এর উপর অহী নাজেল হইল – হে দাউদ! তুমি উপকারী বিদ্যা শিক্ষা কর। তিনি আরজ করিলেনঃ হে আল্লাহ্‌! উপকারী বিদ্যা কোনটি? আল্লাহ বলিলেনঃ যদ্বারা আমার বুজুর্গী, কুদরত, জালাল, আজমাত প্রভৃতি প্রত্যেক বস্তুতে মালুম হয় এবং যাহা আমার নৈকট্য লাভের সাহায্য প্রদান করে উহাই উপকারী বিদ্যা। হযরত আলী(রাঃ) ফরমাইয়াছেনঃ যদি আমি বাল্যকালে মরিয়া যাইতাম, অতঃপর বেহেশ্‌তে যাইতাম তথাপি উহা আমর পক্ষে আনন্দদায়ক হইত না, যেহেতু আমি তখন আল্লাহকে চিনিতে পারিতাম না। এই শ্রেনীর এলেমের প্রভাবে এই জ্ঞান লাভ হয় যে আল্লাহ আমার মুনিব, সবকিছু দেখেন, শুনেন ও জানেন, যাহা তিনি ইচ্ছা করেন তাহা করেন, সর্বশক্তিমান, তাঁহার প্রথম নাই, শেষ নাই, নির্দোষ, অদ্বিতীয়, অতুলনীয়, সৃষ্টিকর্তা, বিচারকর্তা, তিনি কোন স্থানে আবদ্ধ নহেন, দয়াময়, তাঁহার কোন শরীক নাই, আকার ও নিরাকারের সৃষ্টিকর্তা ইত্যাদি। হযরত নবী করীম (সাঃ) কে বিশ্বাস করা যে, তিনি আল্লাহর রাসুল এবং তিনি আল্লাহর আদেশ নিষেধ যথাযথভাবে আমাদের নিকট পৌঁছাইয়াছেন। আল্লাহর হুকুম ছাড়া একটি জর্রাও নড়িতে পারে না। সবই আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে, ভাল-মন্দ, লাভ-লোকসান কুফর ও ঈমান সবকিছু আল্লাহর এলেম ও কুদরতের আয়ত্তাধীন, তিনি চিরস্বাধীন, যাহাকে ইচ্ছা করেন আপন দয়াগুণে ছওয়াব দান করেন, আর যাহাকে ইচ্ছা করেন বিচারের সহিত আজাব দেন।

  হাদীসে আছেঃ এলেম তলব করা প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরজ। যে এলেম আল্লাহ ফরজ করিয়াছেন উহা কোরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের এলেম। মোটের উপর এলেম দুই প্রকারঃ এল্‌মে মোয়ামেলা ও এল্‌মে মোকাশেফা। আমল (কর্ম) আখলাক (চরিত্র গঠন) ও আকায়েদের (দীনী বিষয়ে বিশ্বাসের) এলেমকে এল্‌মে মোয়ামেলা বলা হয় এবং এল্‌মে মোকাশেফাকে এল্‌মে বাতেন বলা হয়। ইহাই সর্বোচ্চ দরজার এলেম। এল্‌মে বাতেন একটি নূর, যাহা নেক আমল ও রেয়াজতের ফলে দিলের মধ্যে হাছেল হইয়া থাকে। ইহা দ্বারা বস্তু, বিষয়ের হাকীকত জানা যায় এবং আল্লাহর জা’ত ছেফাত (গুণাবলী) ও কার্যসমূহের পরিচয় পাওয়া যায়। হাদীছে আছেঃ যে ব্যক্তি এলেম অনুযায়ী আমল করে আল্লাহ তাহাকে এমন বস্তুর এলেম দান করেন যাহা সে ব্যক্তি কখনও জানে নাই ও পড়ে নাই। মোটকথা এলেম হাছেল না হইলে আমল চলিতে পারে না। বাতেনী ছাফাইর-অন্তরের বিশুদ্ধতার জন্য এল্‌মে বাতেন আত্যাবশ্যক। কোন কোন আরেফ বলেন, যাহার এল্‌মে বাতেন নাই তাহার খাতেমা বিল্‌খায়ের হওয়া সম্বন্ধে সন্দেহ আছে কেহ কেহ বলেন, যাহার মধ্যে বেদয়াত বা অহঙ্কার আছে সে ব্যক্তি কখনও এলমে বাতেনের অংশ পাইতে পারে না। আবার অনেকে বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়া ও খাহেশে নফ্‌ছানীর প্রতি অনুরক্ত সে ব্যক্তি কখনও এল্‌মে বাতেনের খোঁজ পাইতে পারে না।

  এল্‌মে বাতেন সিদ্দিক ও মোকার্রাবগণের এলেম। পূর্বেই বলা হইয়াছে যে ইহা একটি নূর যাহা পাক পবিত্র দিলের মধ্যে জাহের হইয়া থাকে। উক্ত নূরের সাহায্যে বহুতর গুপ্ত বিষয়ের হাকীকত প্রকাশ হইয়া থাকে। তদ্বারা আল্লাহর জা’ত ছেফাত ও কার্যাবলীর, দুনিয়া ও আখেরাত সৃষ্টির মধ্যে তাঁহার আদেশ, দুনিয়ায় থাকিয়া আখেরাতের পথ আবিষ্কার, নবীগণ প্রেরণের উদ্দেশ্যে, অহীর মানে, শয়তানের হাকীকত, মানবের বিরূদ্ধে শয়তানের শত্রুতা প্রণালী, পৃথিবী ও ফেরেশতা রাজ্যের অবস্থা, হৃদয়রাজ্যে শয়তানের সৈন্যদল ও ফেরেশতার কার্যাবলী, বেহেশত দোজখ, গোর আজাব ইত্যাদির অবস্থা আখেরাত দুনিয়া হইতে অধিকতর স্থায়ী ও উত্তম এবং আখেরাতই কেবলমাত্র প্রকৃত হায়াত ইত্যাদির গুপ্তভেদ, আল্লাহর দীদারের অর্থ, ক্বাল্‌বের পরিচয় এবং উহা পরিষ্কার করিবার নিয়ম প্রভৃতির হাকীকত জানা যায়। এল্‌মে মোয়ামেলা দ্বারা ছবর, শোকর, গোনার ভয়, রহমতের আশা, রেজা, জোহদ, তাওয়াক্কোল, নেক খাছলত, এখলাছ প্রভৃতি সদগুণগুলির হাকীকত ও অর্জনের আবশ্যকতা জানা যায় এবং তদ্বারা দরিদ্রতার ভয়, তকদীরের প্রতি অসন্তুষ্টি দ্বেষ, হিংসা, অহংকার, হাছাদ, তোষামোদপ্রিয়তা, সুদীর্ঘ বাসনা, গীবত, গজব, শত্রুতা, লোভ, ঘুষ, চুরি, সুদ, বখিলী, বড়লোকের প্রতি সম্মান ও দরিদ্রের প্রতি অবহেলা, অনধিকার চর্চা, আত্মপ্রশংসা, অতিরিক্ত কথন, পরের দোষ খোঁজ করা, নফছের পায়রবী করা, আল্লাহর ভয় না থাকা, অন্যায় কাজে সাহায্য ও ন্যায় কাজে অবহেলা, মকর দাগাবাজি, দেলের কঠিনতা, আখেরাতের চিন্তা বিলুপ্ত হওয়া,  দুনিয়ার প্রতি অনুরাগ, লজ্জাহীনতা, ভক্তি ও মায়া-মমতা বিহীন হওয়া প্রভৃতি বদ বিষয়গুলির হাকীকত ও বর্জনের আবশ্যকতা বুঝা যায়। উল্লিখিত বিষয়গুলির অল্পবিস্তর এলেম না থাকিলে অন্তরের পবিত্রতা ও মানব-জীবনের পূর্ণতা হাছেল হয় না। মানব – জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহর রেজামন্দি ও মুহব্বত লাভের পথ খোঁজ করিতে গেলেই উল্লিখিত বিষয়গুলির কিছু না কিছু এলেম থাকা দরকার। কোন্‌ কাজ করিতে হইবে আর কোন্‌ কাজ বর্জন করিতে হইবে তাহা জানিতে ও বুঝিতে হইলে এলেম অত্যাবশ্যক। এলেম ব্যতীত আল্লাহকে কেহ চিনিতে পারে না এবং মানব-জীবনের পূর্ণতা এলেম ব্যতীত হইতে পারে না। শরীয়তের হুকুম – আহকাম, মছলা – মাছায়েল কোনও আলেমের নিকট মৌখিক বা কিতাব পড়িয়া শিক্ষা করিয়া লইবে এবং তদনুযায়ী আমল করিতে থাকিবে। জাহেরী এছলাহের (সংশোধনের) সঙ্গে সঙ্গে বাতেনী এছলাহ্‌ করিতে  আরম্ভ করিবে। যাহারা জাহেরী ও বাতেনী শিক্ষা লাভ করিয়াছে তাহারাই প্রকৃত আলেম ও অলী।

  আবার আমল ব্যতীত এলেমের কোন মূল্যই নাই। জাহেরী মাদ্রাসায় এলেম শিক্ষালাভ করার পর প্রত্যেক আলেমের উচিত যে কোনও কামেল পীরের নিকট ছলুক ও জজ্‌বা হাছেল করিয়া নফছের ছাফাই হছেল করে। হযরত মাওলানা রুমী (রহঃ) বলিয়াছেন “জাহেরী এলেম দেলের মধ্যে কোন প্রকার হাল বা জজ্‌বা আনয়ন করে না, আশেকী এলেমই প্রকৃত এলেম।” অনেক সময় জাহেরী এলেম শুধু দিলের মধ্যে অছঅছার সৃষ্টি করে। যেই এলেম আল্লাহর প্রাপ্তির পথ দেখাইয়া দেয়, দিল হইতে গোমরাহীর মরিচাকে দূর করিয়া দেয়, মস্তিস্ক হইতে দুনিয়ার লোভ লালসাকে বাহির করিয়া দেয় এবং তৎপরিবর্তে আল্লাহর ভয় ও মুহব্বত বাড়াইয়া দেয় উহাই প্রকৃত এলেম। এলেম যখন দিলের উপর ক্রিয়া করে তখন দোস্ত হয় আর যখন শুধু শরীরের উপর ক্রিয়া করে তখন সর্প হইয়া দাঁড়ায়।

এলেম সম্বন্ধে মেশকাত শরীফ হইতে উদ্ধৃত কতগুলি হাদীছের সারমর্মঃ

হাদীছঃ আমার নিকট হইতে একটিমাত্র আয়াত (হাদীছ) হইলেও উহা পৌঁছাইয়া দাও। অর্থাৎ হজরতের হাদীছ অল্প কিছু জানা থাকিলেও উহা লোকসমাজে প্রচার কর।

  হাদীছঃ যাহার সঙ্গে আল্লাহ্‌ ভালাইর এরাদা করেন তাহাকে দীনের এলেম দান করেন (অর্থাৎ শরীয়ত, তরীকত, মারেফাত ও হাকীকতের এলেম দান করেন) এবং অবশ্যই আমি (হযরত) বন্টনকারী এবং আল্লাহতায়ালা দাতা।

  হযরত ফরমাইয়াছেনঃ মানুষ যখন মরিয়া যায় তখন তাহার আমল বন্ধ হইয়া যায়, কেবলমাত্র ছদকায়ে জ্বারিয়া (স্থায়ী দান), সুফল প্রদানকারী এলেম এবং নেককার সন্তান যে তাহার জন্য দোয়া করে, এইগুলিই বাকী থাকে।

  হাদীছঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে দুনিয়ার কোনও বিপদ হইতে উদ্ধার করে, আল্লাহ তাহাকে কেয়ামতের দিন বিপদ হইতে উদ্ধার করিবেন, যে ব্যক্তি কোনও গরীবের প্রতি সহজ ব্যবহার করে আল্লাহ তাহার প্রতি দুনিয়া ও আখেরাতে সহজ ব্যবহার করিবেন, যে ব্যক্তি কোন মোছলমানের আয়েবকে (দুষত্রুটি) গোপন করে আল্লাহ তাহার আয়েবকে দুনিয়া ও আখেরাতে গোপন করিবেন, যে ব্যক্তি তাহার মুসলমান ভাইকে সাহায্য করে আল্লাহ ঐ বান্দাকে সাহায্য প্রদান করিবেন। যে ব্যক্তি এলেম হাছেল করার মতলবে কোনও পথে চলে আল্লাহ তাহার প্রতি বেহেশ্‌তের পথ সহজ করিয়া দেন, আল্লাহর যে কোন ঘরে (মসজিদ, মাদ্রাসা) লোকজন কোরআন তেলাওয়াত ও তাহা শিক্ষার উদ্দেশ্যে একত্রিত হয় সেখানে আল্লাহর শান্তি তাহাদের উপর নাজেল হয়, আল্লাহর রহমত তাহাদিগকে ঘেরাও করে, ফেরেশতাগণ তাহাদিগকে ঢাকিয়া ফেলে এবং আল্লাহ তাহাদের বিষয় তাঁহার নৈকট্য ফেরেশতাগণের নিকট বয়ান করেন। আর যে ব্যক্তি আমলের মধ্যে শিথিলতা করে তার বংশ মর্যাদা কেয়ামতে কোন কাজেই আসিবে না।

  হাদীছঃ আখেরী জমানায় আল্লাহ কখনও এলেমকে লোকগণ হইতে ছিনাইয়া লইবেন না, বরং (হাক্কানী) আলেমগণকে উঠাইবার সঙ্গে সঙ্গে এলেমকে উঠাইয়া লইবেন, এমন কি পরে যখন কোন আলেমই থাকিবে না, লোকগণ জাহেল সরদারকে ধরিবে, তাহাদের নিকট শরীয়তের মছলাগুলি জিজ্ঞাসা করিবে এবং তাহারা না জানিয়া ফতওয়া দিবে। তাহারা একেত নিজে গোমরাহ এবং অপর লোককে গোমরাহ করিবে।

  কাছীর বিন কায়েছ (রাঃ) বলিয়াছেনঃ একদিন হযরত আবু দারদা (রাঃ)- এর সঙ্গে মসজিদে বসা ছিলাম, তখন এক ব্যক্তি আসিয়া বলিলঃ “হে আবু দারদা (রাঃ)! আমার নিকট একটি হাদীছের সংবাদ পৌঁছিয়াছে যাহা আপনি হজরত হইতে পাইয়াছেন বলিয়া প্রকাশ করিয়া থাকেন। তাহার জন্যই আমি মদীনা শরীফ হইতে এখানে আসিয়াছি এবং আমার কোন মতলব নাই।” হযরত আবু দারদা (রাঃ)বলিলেনঃ “আমি হজরতকে বলতে শুনিয়াছিঃ যে ব্যক্তি এলেম তলব করার মতলবে কোনও পথে চলে (দূর বা কাছে, কমবেশী এলেম শিক্ষার জন্য পথে পথে চলে) আল্লাহ তাহাকে বেহেশতের একটি পথে পরিচালিত করিয়া থাকেন। আল্লাহর রেজামন্দির জন্য, ফেরেশতাগণ তালেবে এলেমের (শিক্ষার্থীর) জন্য তাহাদের বাজু (বাহু) বিস্তার করে। অবশ্যই যাহারা আছমানে আছে (ফেরেশতাগণ), যাহারা জমীনে আছে (জ্বিন ও ইন্‌ছান ইত্যাদি) এবং যাহারা পানির মধ্যে আছে, আলেমের জন্য মাগফেরাত (ক্ষমা) প্রার্থনা করে। অবশ্যই আলেমের ফজিলত আবেদের উপর, যেমন পূর্ণিমা রাত্রের চাঁদের ফজিলত সকল তারকারাজির উপর। অবশ্যই আলেমগণ নবীগণের ওয়ারিশ এবং নবীগণ দেরেম ও দীনারের (টাকাকড়ির) ওয়ারিশ হন নাই, বরং এলেমের ওয়ারিশ হইয়াছেন। তবে যে ব্যক্তি এলেমকে গ্রহণ করিল, সে ব্যক্তি বড় অংশ গ্রহণ করিল।”

  হাদীছঃ শয়তানের নিকট একজন আলেম এক হাজার আবেদ (এবাদতকারী) অপেক্ষা অধিকতর শক্ত।

  হাদীছঃ দুইটি খাছলত মোনাফেকের মধ্যে একত্রিত হইতে পারে না- একটি সৎস্বভাব, অপরটি দীন সম্বন্ধে জ্ঞান।

  হাদীছঃ যে ব্যক্তি আলেমগণের সঙ্গে ফখর করা, অশিক্ষিত লোকের সঙ্গে ঝগড়া করা ও মানুষের রোখ তাহার প্রতি আকর্ষণ করার (লোকের নিকট হইতে অর্থ ও সম্মান লাভ করার) উদ্দেশ্যে এলেম হাছেল করে আল্লাহ তাহাকে দোজখে দাখেল করিবেন।

  হাদীছঃ যে ব্যক্তি কোরআনের মধ্যে আপন আকল মোতাবেক কথা বলে অর্থাৎ কোরআনের তফছীর নিজ জ্ঞান অনুযায়ী করে, তার পক্ষে উচিত যে তাহার স্থান দোজখে তালাস করে। এক রেওয়ায়েতে আছেঃ যে ব্যক্তি না জানিয়া কোরআনের মানের মধ্যে কথা বলে তাহার পক্ষে উচিত যে তাহার স্থান দোজখে তালাস করে।

  হাদীছঃ যে ব্যক্তি কোরআনের মধ্যে আকল মোতাবেক কথা বলে এবং উহা ঠিক হইলেও সে ব্যক্তি গোনাহগার হইবে।

  হাদীছঃ যে ব্যক্তি দীন ইসলামকে জিন্দা করার উদ্দেশ্যে এলেম তলব করা অবস্থায় মরিয়া যায়, তাহার ও পয়গাম্বরগণের মধ্যে মাত্র একটি দরজার পার্থক্য।

 হাদীছঃ এক ঘন্টা এলেমের চর্চা করা সারারাত্রি জাগিয়া এবাদত করা অপেক্ষা ভাল।

  হাদীছঃ হজরতকে জিজ্ঞাসা করা হইল, কি পরিমাণ এলেম অর্জন করিলে একজন লোক ফকীহ (ধর্মজ্ঞানী) হইতে পারে? তিনি বলিলেনঃ আমার উম্মতের উপকারার্থে যে ব্যক্তি দীনের বিষয়ে চল্লিশটি হাদীছ স্মরণ করিয়া লয় আল্লাহ তাহাকে ফকীহ বলিয়া কবর হইতে উঠাইবেন এবং কেয়ামতে তাহার জন্য আমি শাফায়াত করিব ও স্বাক্ষী হইব।

  হাদীছঃ রাসুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলিতেনঃ আল্লাহ তাহাকে সন্তুষ্ট করুক যে ব্যক্তি আমার নিকট যাহা কিছু শ্রবণ করিয়াছে তাহা হুবহু অন্যের নিকট পৌঁছাইয়া থাকে। কেননা বহু প্রচারক শ্রোতার নিকট হইতে অবগত হইয়া তাহা স্মরণ রাখে।

  হাদীছঃএকদা হযরত জিজ্ঞাসা করিলেন: “তোমরা কি জান সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা কে? ছাহাবাগণ বলিলেন: আল্লাহ ও তাঁহার রাসুল অধিকতর ভাল জানেন। হজরত বলিলেন: সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা আল্লাহতায়ালা, তৎপর আদম সন্তানের মধ্যে আমি এবং আমার পরে শ্রেষ্ঠ দাতা ঐ ব্যক্তি যে এলেম শিক্ষা করিয়া উহাকে প্রচার করে, সে ব্যক্তি কেয়ামতের  দিবস একজন আমীর অথবা এক দলের আমীর স্বরূপ আসিবে।”

হাদীছঃ হযরত ফরমাইয়াছেন যে, “তোমরা জোব্বোল হোজ্‌ন হইতে আল্লাহর নিকট পানা চাও। ছাহাবাগণ জজ্ঞাসা করিলেন: ইয়া রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ) জোব্বোল হোজ্‌ন কাহাকে বলে? রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলিলেন: দোজখের একটি নালা, যাহা হইতে দোজখ প্রত্যহ একশত বার পানা চায়। হযরতকে জিজ্ঞাসা করা হইলঃ উহার মধ্যে কে প্রবেশ করিবে? তিনি বলিলেন: কোরআন পাঠকারীগণ যাহারা অপরকে দেখাইবার উদ্দেশ্যে আমল করে।”

 হাদীছঃ এলেম শিক্ষা কর এবং লোকদিগকে এলেম শিক্ষা দাও, ফরায়েজ সম্বন্ধীয় বা ফরজ সংক্রান্ত এলেম শিক্ষা কর এবং লোকদিগকে উহা শিক্ষা দাও; কোরআন শিক্ষা কর এবং লোকদিগকে উহা শিক্ষা দাও, কেননা আমি দুনিয়া হইতে বিদায় গ্রহণ করিব, এলেমও সত্বর উঠিয়া যাইবে এবং ফ্যছাদ জাহের হইয়া পড়িবে, এমনকি দুইজনের মধ্যে কোন ফরজ সম্বন্ধে মতভেদ হইলে উহা মীমাংসা করিবার লোক পাওয়া যাইবে না।

  হাদীছঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কিছুর জন্য এলেম শিক্ষা করে সে যেন তাহার স্থান দোজখে তালাস করে।

ইহ্‌ইয়াউল ওলুম হইতে উদ্ধৃতঃ

  হাদীছঃ সকালে উঠিয়া এলেমের একটি ধাব(অধ্যায়) শিক্ষা করা একশত রাকাত নামাজ পড়া অপেক্ষা ভাল।

  হাদীছঃ একজন লোকের পক্ষে এলেমের একটি অধ্যায় শিক্ষা করা দুনিয়া ও দুনিয়ার যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা ভাল।

  হাদীছঃ এলেম ভান্ডার স্বরূপ এবং প্রশ্ন করা উহার চাবি। তোমরা প্রশ্ন কর, তজ্জন্য তোমাদিগকে ছওয়াব দেওয়া যাইবে। উহার ছওয়াব চারি শ্রেণীর লোকগণকে দেওয়া যাইবেঃ প্রশ্নকারী, আলেম, শ্রবণকারী এবং যাহারা তাহাদের সঙ্গে মুহব্বত রাখে।

  হাদীছঃ আলেমের মজলিসে হাজির হওয়া এক হাজার রাকাত নামাজ পড়া, এক হাজার রোগীকে দেখিতে যাওয়া, এক হাজার জানাজায় হাজের হওয়া অপেক্ষা ভাল। হজরতকে জিজ্ঞাসা করা হইলঃ “তবে কোরআন তেলাওয়াত সম্বন্ধে কি? তিনি বলিলেনঃ এলেম ব্যতীত কোরআন পাঠ যাথাযথ ফায়দা দান করে না”।

  হজরত আবু দারদা (রাঃ) বলিয়াছেনঃ আমার নিকট সারা রাত্রি জাগিয়া এবাদত করা অপেক্ষা একটি মছলা শিক্ষা করা ভাল।

  হযরত ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) বলিয়াছেনঃ এলেম তলব করা নফল এবাদত অপেক্ষা অধিকতর ভাল।

  হজরত নবী (সাঃ) হযরত মোয়াজ (রাঃ) কে য়্যামন দেশে পাঠাইবার কালে বলিলেনঃ “তোমার দ্বারা একজন লোক হেদায়েত প্রাপ্ত হওয়া দুনিয়া ও দুনিয়ার যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা অধিকতর ভাল”।

  হাদীছঃ  যে ব্যক্তি এলেম হাছেল করিল, তদনুযায়ী আমল করিল এবং লোকদিগকে শিক্ষা দিল তবে তাহা ফেরেশতা রাজ্যে অতি বড় বিষয় বলিয়া গণ্য হইবে।

  হাদীছঃ যে ব্যক্তি এলেমের  একটি অধ্যায় এই মতলবে শিক্ষা করিল যে তদ্বারা লোকদিগকে শিক্ষা দিবে তবে তাহাকে সত্তর জন শহীদের ছওয়াব দান করা হইবে।

  হাদীছঃ  যে ব্যক্তি এলেম শিক্ষা করিয়া উহাকে গোপন করিল কেয়ামতে আল্লাহতায়ালা তাহাকে আগুনের লাগাম পরাইবেন।

  হাদীছঃ কোনও ঈমানদার ব্যক্তি একটি মাত্র নেক কথা শ্রবণ করিয়া লোকদিগকে শিক্ষা দেয় এবং তদনুযায়ী নিজেও আমল করে, তাহার পক্ষে এক বৎসর এবাদত করা অপেক্ষাও ভাল।

  একদা হজরত তাঁহার মসজিদের মধ্যে দুইটি পৃথক মজলিসে দেখিতে পাইয়া বলিলেনঃ “উভয় মজলিসই ভাল কিন্তু তন্মধ্যে একটি অপরটি হইতে অপেক্ষাকৃত ভাল। তন্মধ্যে এক জামাত আল্লাহর নিকট দোয়া করিতেছে এবং তাঁহার (আল্লাহর) রহমত প্রাপ্তির আরজু প্রকাশ করিতেছে। আল্লাহ ইচ্ছা করিলে তাহাদিগকে দিতেও পারেন এবং নাও দিতে পারেন। কিন্তু অপর জামাত দ্বীনের এলেম শিক্ষা করিতেছে এবং জাহেলকে শিক্ষা দিতেছে, অতএব তাহারা অধিকতর ভাল। আল্লাহ আমাকে শিক্ষাদাতা করিয়া পাঠাইয়াছেন।” তৎপর তিনি শেষোক্ত জামাতের মধ্যে যাইয়া বসিলেন।

  হাদীছঃ হজরত ইবনে মছউদ (রাঃ) বলিয়াছেনঃ আমি হজরতকে দোয়া করিতে শুনিয়াছিঃ আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে সন্তুষ্ট করুন, যে আমার নিকট হইতে কিছু শুনিয়া লোকের নিকট অবিকল উহা পৌঁছাইয়া থাকে কেননা অধিকাংশ স্থলে শ্রবণকারী উহাকে স্মরণ রাখে।

elem page 16

আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন ইল্‌মিল লা ইয়ানফাউ, ওয়া কালবিল্‌ লা ইয়াখ্‌শাউ, ওয়া দুয়াই লা ইউসমাউ, ওয়া আইনিল লা তাদমাউ, ওয়া নাফছিল লা তাস্‌বাউ।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment