অছ্অছা-কুমন্ত্রণা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

“ছেরাজুছ্–ছালেকীন” – আব্দুলখালেকএমএ

অছ্অছা-কুমন্ত্রণাঃ

  আল্লাহতায়ালা বলিয়াছেনঃ “হে নবী। তুমি বল, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করিতেছি মানুষের প্রতিপালক, মানুষের বাদশা ও মানুষের মাবুদের নিকট খান্নাছের বদ্‌ অছ্‌অছা হইতে যে মানুষের অন্তরে অছ্‌অছা নিক্ষেপ করে – খান্নাছ্‌ জ্বিন ও ইনছান হইতে – শয়তান তোমাদের দুশমন তাহাকে দুশ্‌মন জান কেননা সে তাহার অনুগত দলকে দোজখের দিকে আহবান করে”।

  ‘অছ্‌অছা’ মানে নফসের কুপ্রবৃত্তির ও শয়তানের কথা যাহা অন্তরে কুচিন্তার সৃষ্টি করে। সৎচিন্তাকে ‘এলহাম’ বলা হয়। অছ্‌অছা কয়েক প্রকার: এক প্রকার অছ্‌অছা এই যে, উহা বেখেয়াল ভাবে দিলের মধ্যে আসিয়া পড়ে, উহাকে ‘হাজেছ’ বলা হয়। ইহাতে কোন প্রকার গোনাহ্‌ হইবে না। আবার যদি এই প্রকার অছ্‌অছা দিলের মধ্যে অবস্থান করে এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করে উহাকে ‘খাতের’ বলে, ইহাতেও কোন প্রকার গোনাহ্‌ হইবে না। আর এক প্রকার এই যে, উহা দিলের মধ্যে আসিয়া স্থায়ীভাবে অবস্থান করে এবং অনবরত দিলের মধ্যে আবেগ বাড়াইয়া দিতে থাকে, অনন্তর মানুষ ইহাতে এক প্রকার মুহব্বত ও আস্বাদ অনুভব করিয়া থাকে, ইহাকে ‘হাম্ম’ বলা হয়। হযরতের উম্মতের জন্য ইহাও মাফ, তবে অছ্‌অছার আবেগ অনুযায়ী কাজ না করিলে কোন গোনাহ্‌ হইবে না বরং ইচ্ছা হওয়া সত্ত্বেও ঐ বদকাজ না করিলে একটি নেকী লেখা যাইবে। আর এক প্রকার অছঅছা আছে যাহাকে ‘আজম’ বলা হয়। ইহা নফ্‌ছের কথা, যাহা মানুষের দিলের মধ্যে এমন প্রবলভাবে স্থান অধিকার করিয়া বসে যে কিছুতেই সে ইহাকে দমন করিতে পারে না। এই কুপ্রবৃত্তির প্রতি তাহার আদৌ ঘৃণা বা অনিচ্ছা থাকে না। এমন কি সুবিধা পাইলেই তাহা কার্যে পরিণত করিয়া বসে। এই রকম প্রবল অছ্‌অছা যতক্ষণ দিলের মধ্যে থাকে ততক্ষণ অল্প মাত্রায় গোনাহ্‌ হয়, আর ইহা কার্যে পরিণত হইলে অধিক পরিমাণে গোনাহ্‌ হয়। উল্লিখিত অছ্‌অছা যখন শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সহিত সংশ্লিষ্ট থাকে যথাঃ- জ্বেনা ইত্যাদি তখন উহার এই হুকুম, আর যাহা দিলের সহিত এলাকা রাখে যেমন- বদ আকীদা ও জঘন্য মানসিক ভাব যথাঃ- হাছাদ, বোগজ, রীয়া, অহঙ্কার ইত্যাদি তখন উহা স্থায়ীভাবে মনে পোষণ করিতে থাকিলে অনবরত গোনাহ্‌ হইতে থাকিবে। অছ্অছার প্রতিকার এই যে, উহা মনে উদয় হইলে তৎপ্রতি কোন লক্ষ্য করিতে নাই বরং ইহা বাজে বিষয় বিবেচনা করিয়া পরিত্যাগ করিবে। এই রূপ অছঅছার প্রতি যতই লক্ষ্য করিবে শয়তান ততই উহা বাড়াইয়া দিতে থাকিবে। শয়তান তৎপ্রতি তাহার অমনযোগ দেখিলে আর উহা দিলের মধ্যে নিক্ষেপ করিতে প্রয়াস পাইবে না।

  প্রাথমিক অবস্থায় ছালেকগণ (তরিকতপন্থীগণ) অছ্‌অছা দিল হইতে দূরে রাখিবার চেষ্টা করিবে। জিকিরের সময় ধারণা করিবে যে তাহার মকছুদ আল্লাহ এবং অছ্‌অছা বা খেয়াল কল্পনায় যাহা আসে তাহা মকছুদ নয়। এই গুলিকে আল্লাহর পথে বাধা দান করিবে। অন্তরদৃষ্টি আল্লাহর দিকে রাখিতে চেষ্টা করিবে। সব দিক হইতে খেয়াল ফিরাইয়া ধারণা করিবে আল্লাহই মাবুদ, আল্লাহই মকছুদ।

  মেশকাত শরীফ হইতে গৃহীত কতকগুলি হাদীছের অর্থঃ-

  হাদীছঃ যাহা অছঅছা স্বরূপ মনের মধ্যে আসে, আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য উহা মাফ করিয়া দিয়াছেন।

  হাদীছঃ একদল লোক হজরতের নিকট আসিয়া বলিলেন: ইয়া রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ) আমাদের দিলের মধ্যে এমন কোন কুচিন্তা উদয় হয় যাহা আমরা মুখে প্রকাশ করিতে অত্যন্ত লজ্জাবোধ করি। হজরত ফরমাইলেন: তোমরা কি এরূপ (অছ্‌অছা) অনুভব করিয়া থাক? তাহারা বলিলেন: হ্যাঁ, হুজুর। হযরত ফরমাইলেন: উহা প্রকাশ্য ঈমানের চিহ্ন। (কেননা অছ্‌অছা দিলেই শুধু রহিয়া গেল কার্যে পরিণত হইল না)।

  হাদীছঃ আদম সন্তানকে শয়তান স্পর্শ করে এবং ফেরেশতাও স্পর্শ করে। শয়তানের স্পর্শ এই যে, মন্দ কাজে লাগিয়া যাওয়া এবং সত্যকে অবিশ্বাস করা। ফেরেশতার স্পর্শ এই যে নেককাজে অগ্রসর হওয়া এবং হককে বিশ্বাস করা। যখন এই শেষের অবস্থা অনুভব করিবে তখন “আউজুবিল্লাহে মিনাশ শয়তানির রাজীম” বলিবে।

  হাদীছঃ হজরত ফরমাইয়াছেন: তোমাদের মধ্যে কোনও লোকের নিকট শয়তান আসিয়া বলে: কে অমুক অমুক বস্তু পয়দা করিয়াছে, কে অমুক অমুক বস্তু পয়দা করিয়াছে, অবশেষে বলে: কে তোমার পরওয়ারদেগারকে পয়দা করিয়াছে? তোমাদের মনে যখন এরূপ অবস্থার উদয় হয় তখন তোমরা আল্লাহর নিকট পানা চাও এবং উহা হইতে দূরে সরিয়া পড়।

  হাদীছঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেহ না্ই যাহার নিকট জ্বিনের একজন সঙ্গী ও ফেরেশতাগনের একজন সঙ্গী নাই। ছাহাবাগণ আরজ করিলেন: ইয়া রাসুলুল্লাহ্‌! (সাঃ) আপনারও কি তাহা (জ্বিন) আছে? তিনি বলিলেন: আমারও তাহা আছে, কিন্তু আল্লাহ তাহার বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করিয়াছেন। অতঃপর সে মুসলমান হইয়া গিয়াছে এবং সৎকাজ ব্যতীত আর কিছুরই আদেশ করে না।

  হাদীছঃ নিশ্চই শয়তান মানুষের শিরায় শিরায় বিচরণ করিয়া বেড়ায়।

  হাদীছঃ এমন কোন আদম সন্তান নাই যাহাকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শয়তান স্পর্শ না করে। অতঃপর শিশুটি শয়তানের স্পর্শে চীৎকার করিতে থাকে, কেবলমাত্র হজরত মরিয়ম এবং তাঁহার পুত্র হজরত ইছা (আঃ) তাহা হইতে মুক্তিলাভ করিয়াছিলেন।

  হাদীছঃ এক ব্যক্তি হজরতের নিকট আসিয়া বলিল: ইয়া রাসুলুল্লাহ্‌! (সাঃ) আমার দিলের মধ্যে এমন বস্তু (অছ্‌অছা) অনুভব করি যে তাহা মুখে উল্লেখ করা অপেক্ষা আমি জ্বলিয়া কয়লা (অঙ্গার) হইয়া যাওয়া অধিকতর ভাল মনে করি। হজরত ফরমাইলেন: আল্লাহর শোকর যে ইহা অছ্‌অছাই রহিয়া গিয়াছে, অর্থাৎ ইহা দিলে কেবলমাত্র অছ্‌অছা অবস্থায় রহিয়া গেল এবং কার্যে পরিণত হয় নাই।

  হাদীছঃ হজরত ওছমান (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে: তিনি হজরত (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করিলেন : হুজুর! শয়তান আমার এবং আমার নামাজ ও কোরআন পাঠের মধ্যে পরদা (প্রতিবন্ধক) হইয়া দাঁড়ায় এবং তাহাতে নামাজের মধ্যে আমার সন্দেহ আসিয়া পড়ে। হজরত ফরমাইলেন: এই শয়তানকে ‘খেনজেব’ বলা হয়; যখন তুমি উহা অনুভব কর, তখন হইতে উহা হইতে আল্লাহর নিকট পানা চাও এবং বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ কর। হজরত ওছমান (রাঃ) বলেন: আমি তাহা করিলাম, তারপর আল্লাহ তাহা দূর করিয়া দিয়াছেন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment