মূলঃ শায়খুল ইসলাম ড. মুহাম্মাদ তাহিরুল কাদেরী
অনুবাদঃ মাওলানা মুহাম্মাদ মুজাফ্ফর আহমদ
প্রকাশকঃ মুহাম্মাদ আবু তৈয়ব চৌধুরী
টেক্সটঃ মাহমুদ হাসান
সুন্নি সাইবার টিম
সনজরী পাবলিকেশন
১. ৪২/২ আজিমপুর ছোট দায়রা শরীফ, ঢাকা- ১২০৫, মোবাইলঃ 01925132031
২. ৮১, শাহী জামে মসজিদ মার্কেট, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম। মোবাইলঃ 01613160111
প্রকাশকের কথা
মৃত্যু মানে লয় বা ধ্বংস নয় বরং মৃত্যু হচ্ছে ইহ-পরকালের মাঝে সেতুবন্ধন মাত্র। মৃত্যুর সেতু পাড়ি দিয়ে প্রত্যেককে পরকালের অনন্ত জীবনে পদার্পণ করতে হবে। একমাত্র ওহী ছাড়া ওই পরকালীন জীবনের রং-রূপ-গন্ধ জানার কোন বিকল্প পদ্ধতি এখনাে আবিষ্কার হয়নি এবং তা’সম্ভবও না। তাই আমাদেরকে ওহীর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
উম্মতের কাণ্ডারী নবী উম্মতের ইহপরকালীন জীবনের প্রতিটি বিষয়ের খবর দিয়ে গেছেন- যাতে উম্মতের পথ চলা সহজ হয়। মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে আমাদের অনেকের বিভ্রান্তির শেষ নেই।
মু’মিন মুসলমান, কাফির-মুশরিকদের মৃত্যু পরবর্তী জীবন যেখানে অবধারিত তারা সেখানে যখন শাস্তি বা নেয়ামত ভােগ করার মাধ্যমে এক প্রকার জীবন উপভােগ করে, সেখানে এক শ্রেণীর মুসলমান নবী-রাসূলগণের ওফাত-পরবর্তী জীবন নিয়ে নানা কটাক্ষ করে থাকে। কেউ বলেছে, নবী-রাসূল মরে মাটির সাথে মিশে গেছে, কেউ বলেছে, ওফাতের পর নবী-রাসূলগণ কারাে লাভ-ক্ষতি করতে অক্ষম ইত্যাদি ইত্যাদি। এ সব নিছক বিভ্রান্তি নয়, ক্ষেত্র বিশেষে কুফরও।
এ সব ভ্রান্তি নিরসণকল্পে ইসলামের সঠিক আক্বীদা-বিশাস জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য সম্মানিত নবী-রাসূলগণ আলায়হিমুস সালাম, বিশেষত সায়্যিদুল আম্বিয়া (ﷺ)-এর ওফাত পরবর্তী জীবনের উপর বিশুদ্ধ ৪০ হাদিস-এর একটি সংকলন তৈরি করেন বর্তমান ইসলামী বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ইসলামী স্কলার ড. মুহাম্মদ তাহেরুল কাদেরী (মু.জি.আ.)। তাঁর সংকলিত এ ৪০ হাদিস গ্রন্থটি প্রকাশ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এ হাদিস চয়নিকায় মুদ্রণগত কোন ভুল-ত্রুটি কারাে পরিলক্ষিত হলে আমাদের জানিয়ে ধন্য করবেন। পরবর্তী সংস্করণে তা শােধরিয়ে নিতে সচেষ্ট থাকবাে। আল্লাহ আমাদের এ নেক আমল কবুল করুন। আমিন!
মুহাম্মদ আবু তৈয়ব চৌধুরী
সনজরি পাবলিকেশন
ভূমিকা
প্রত্যেক জ্ঞানী ও মর্যাদাবান ব্যক্তি আপন আপন যুগের প্রয়ােজন ও দাবীর প্রেক্ষিতে লোকদের জ্ঞান, চিন্তা-চেতনা, আকীদ ও বিশ্বাসের হিফাজত ও দৃঢ়তার জন্য ছােটবড় আকারে নানা বিষয়ে হাদিস সংকলন করেছেন। ঐ সংকলিত হাদিসের মধ্য থেকে একটি হচ্ছে ‘আরবাঈন’ অর্থাৎ পবিত্র চল্লিশ হাদিসের সংকলন। শায়খুল ইসলাম ড. মুহাম্মদ তাহেরুল কাদেরী (মুদ্দা যিলুহুল আলী) বর্তমান যুগের ঐ সকল মহা সম্মানিত মুহাদ্দিসের অন্তর্ভুক্ত, যাঁরা আধুনিক যুগের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রাখতে গিয়ে সর্বসাধারণ প্রত্যেকের জ্ঞান ও চিন্তাগত দিক-নির্দেশনা ও আকীদা আমলের দৃঢ়তার জন্য পূর্বসূরীদের ধারাবাহিকতায় যেখানে ‘আল মিনহাজুস সবী’, ‘হিদায়াতুল উম্মাহ’ ও ‘জামেউস্ সুন্নার মত অত্যন্ত নির্ভযােগ্য বিরাটাকার হাদিসগ্রন্থ সংকলন করেছেন। তেমনি হাদিসের প্রচার-প্রসারের ফযিলত এবং তা থেকে অর্জিত পার্থিব ও পরকালীন ফয়েয ও বরকত অর্জনের জন্য সংক্ষিপ্ত হাদিস চয়নিকা আরবাঈন সংকলন করে জ্ঞানগত ধারাবাহিকতাকে অক্ষুন্ন রেখেছেন। যাতে সময় ও জীবন উপকরণে স্বল্পতায় শিকার লােকেরা প্রিয় রাসূলের বাণী থেকে আলােকিত হতে পারেন।
হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং তেমনি অন্যান্য সকল নবী আলায়হিমুস সালাম আপন আপন নূরানী কবরে স্বশরীরে জীবিত থাকা, তাদেরকে রিজিক প্রদান করা, তাঁদের নমায আদায় করা, হজ্ব আদায় করা এবং উম্মতের অবস্থাদি সম্পর্কে অবগত থাকা, ইত্যাদি এমন সুনিশ্চিত বিষয় যে ব্যাপারে হাদিসের বর্ণনা তাওয়াতুর পর্যায়ে পৌঁছেছে। এবিষয়টি স্বীকার করার মধ্যে কোন বাধা নেই। কারণ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ, সূফী, মুহাদ্দিস, মুফাসির ও ফকীহ প্রমুখ পরবর্তী ও পূর্ববর্তী সকল ইমাম এ বিষয়ে ঐক্যমত পােষণ করেছেন।
আলােচ্য ‘আরবাঈন’-এ হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অন্যান্য নবীগণ আলাহিমুস সালাম আপন বরকতময় কবরে স্বশরীরে জীবিত হওয়া, তাঁদেরকে রিজিক প্রদান করা, তারা নামায ও হজ্ব আদায় করা এবং উম্মতের অবস্থাদি সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া সম্পর্কে নির্ভযােগ্য সূত্রে পবিত্র চল্লিশ হাদিস ও ইমামগণের উক্তি সংকলন করা হয়েছে। এ ‘আরাবাঈন শায়খুল ইসলাম ড. মুহাম্মদ তাহেরুল কাদেরী (মুদ্দা জিলুহুল আলী) সংকলিত ‘আল আযামাতুন নববীয়্যা ফীল খাসাইসিল বরযখিয়্যা’ (হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাত পরবর্তী জীবনের বৈশিষ্ট্য) থেকে চয়নকৃত। যাতে আলােচ্য বিষয়ের উপর অনেক হাদিস সংকলন করা হয়েছে। তাছাড়া সম্মানিত ইমাম ও মুহাদ্দিসগণের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও বিত্মারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু গ্রন্থের কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় এ গ্রন্থে হাদিসসমূহের উৎস তত্ত্ব এবং ইমামদের ব্যাখ্যা সংক্ষেপ করা হয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে প্রিয় নবীর বাণী থেকে যথাযথভাবে উপকার অর্জন ও সঠিক পথ প্রদর্শন ও তাতে অবিচল থাকার শক্তি দান করুন। আমিন! বে জাহি সায়্যিদিল মুরসালিন (ﷺ)!
হাফেজ জহির আহমদ
আল ইসনাদি রিসার্চ স্কলার,
ফরিদে মিল্লাত রিসার্চ ইনস্টিটিউটপবিত্র কুরআনের আলোকে প্রিয় নবীর পরকালীন জীবন
১.
فكيف اذا جءنا من كل امة بشهيد وجءنا بك على هؤلاء شهيدا –
অতপর ঐ দিনের কি অবস্থা হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করবাে এবং (হে হাবীব!) আমি আপনাকে তাদের সাক্ষীরূপে উপস্থিত করবাে?
(সুরা নিসা, ৪/৪১)
২.
وما أرسلنا من رسول إلا ليطاع بإذن الله، ولو أنهم إذ ظلموا انفسهم جاءوك فاشتغفروا الله واستغفر لهم الرسول لوجدوا الله توابا رحيما-
আমি রাসূল এ উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছি যে, আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে তাঁর আনুগত্য করা হবে আর (হে হাবীব!) যদি ঐ সকল লােক যারা নিজেদের আত্মার উপর জুলুম করে এবং আপনার সমীপে আসলে ও আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করলে আর রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইলে তবে তারা (ঐ ওসীলা এবং শাফআতের কারণে) অবশ্যই আল্লাহকে তাওবা কবূলকারী ও পরম দয়ালুরূপে পাবে।
(সুরা নিসা, ৪/৬৪)
৩.
وما كان الله ليعذبهم وانت فيهم – وما كان الله معذبهم وهم يستغفرون –
আর প্রকৃত কথা হচ্ছে এই, আল্লাহর এ শান নয় যে, তাদেরকে শাস্তি দিবেন অথচ (হে হাবীব) আপনি তাদের মধ্যে (উপস্থিত) থাকবেন।
এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন।
(সুরা আনফাল, ৮/৩৩)
৪.
ويوم نبعث فى كل امة شهيدا عليهم من أنفيهم، وچءنا بك شهيدا على هؤلاء، ونزلنا عليك الكتب تبيانا لكل شىء وهدى ورحمة وبشرى للمسلمين –
আর (এটা) ওই দিন হবে (যখন) আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে স্বয়ং তাদের জন্য একজন স্বাক্ষী উঠাবাে। আর (হে প্রিয় হাবীব) আমি আপনাকে ঐ সকলের (উম্মত এবং নবীগণের) জন্য স্বাক্ষী বানাবাে। এবং আপনার উপর আমি ওই মহান কিতাব অবতীর্ণ করেছি যা প্রত্যেক কিছুর সুস্পষ্ট বিবরণ, মুসলমানদের জন্য হেদায়ত, রহমত ও সুসংবাদস্বরূপ।
(সূরা নাহল, ১৬/৮৯)
৫.
النبى أولى بالمؤمنين من أنفسهم وأزواجه أمهاتهم –
এ (সম্মানিত) নবী মু’মিনদের নিকট তাদের প্রাণের চেয়ে বেশি নিকটে। এবং তাঁর (পবিত্র) স্ত্রীগণ তাঁদের মাতা।
(সূরা আহযাব, ৩৩/৬)
৬.
ولا تقولوا لمن يقتل فى سبيل الله أموت، بل أحياء ولكن لا تشعرون –
এবং যে-সব লােক আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলাে না (তারা মৃত নয়) বরং তারা জীবিত, কিন্তু তােমাদের (তাদের জীবন সম্পর্কে) অনুভূতি নেই।
(সূরা বাকারা, ২/১৫৪)
৭.
ولا تحسبن الذين قتلوا فى سبيل الله أمواتا، بل أحياء عند ربهم يرزقون – (١٦٩)
فرحين بما ءاتاهم الله من فضله ويستبشرون بالذين لم يلحقوا بهم من خلفهم ألا خوف عليهم ولا هم يحزنون (١٧٠)
আর যে-সব লােক আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলে অনুমানও করাে না বরং তারা আপন রবের কাছে জীবিত, তাদেরকে (জান্নাতের নেয়ামত দ্বারা) রিজিক দেয়া হয়।
তারা (চিরস্থায়ী জীবনে) ঐ নেয়ামতসমূহে আনন্দিত থাকে, যা আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় করুণা দ্বারা দান করেন এবং তাতেও (আনন্দ প্রকাশ করে) যাদের সাথে এখনাে পর্যন্ত মিলিত হয়নি (তাদের ঈমান ও আনুগত্য দেখে)। কারণ তাদের না কোন ভয় হবে, না তারা দুঃখিত হবে।
(সূরা আলে ইমরান, ৩/১৬৯-১৭০)পবিত্র হাদিসের আলোকে প্রিয় নবীর পরকালীন জীবন
১.
عن أوس بن أوس، قال: قال رسو الله صلى الله عليه وسلم: «إن من أفضل أيامكم يوم الجمعة، فيه خلق آدم، وفيه قبض، وفيه النفخة، وفيه الصعقة، فأكثروا على من الصلاة فيه، فإن صلاتكم معروضة علي» قال: قالوا: يا رسول الله، وكيف تعرض صلاتنا عليك وقد أرمت – يقولون: بليت -؟ فقال: «إن الله عز وجل حرم على الارض أجساد الأنبياء-
وفي رواية : «إن الله عز وجل قد حرم على الأرض أن تأكل أجساد الأنبياء-
رواه أبو داود والنسائي وابن ماجه والدارمي واحمد وابن خزيمة وابن حبان. وقال الحاكم : هذا حديث صحيح على شرط البخاري . وقال الوادياشي : صححه ابن حبان . | وقال العسقلانى : وصححه ابن خزيمة . وقال العجلونى : رواه البيهقي بإسناد جيد .
وقال ابن كثير: قد صحح هذا الحديث بن خزيمة وابن حبان ، والدار قطني ، والنووي فى الاذكار –
হযরত আউস ইবনু আউস [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় তােমাদের দিনসমূহের মধ্য থেকে জুমুআর দিনই সর্বোত্তম। সেদিন হযরত আদম আলায়হিস্ সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সেদিনেই তিনি ওফাত বরণ করেছেন। সেদিনেই সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং সেদিনেই বিকট শব্দ প্রকাশিত হবে। অতএব সেদিনেই আমার উপর অধিকহারে দরূদ শরীফ প্রেরণ করো, কেননা তােমাদের দরূদ আমার উপর পেশ করা হয়। সাহাবায়ে কেরাম [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]ম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের দরূদ আপনার ওফাতের পর আপনার উপর কিরূপে পেশ করা হবে? আপনার বরকতপূর্ণ মােবারক দেহ কি মাটিতে মিশে যাবে না? রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেন, (না, এরূপ নয়) আল্লাহ তা’আলা ভূমির জন্য সম্মানিত নবীগণের দেহ (খেয়ে ফেলা বা কোনরূপ ক্ষতিসাধাণ করা) কে হারাম করে দিয়েছেন।
অপর বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন নিশ্চয় মহান আল্লাহ্ আমাদের দেহকে খেয়ে ফেলা ভূমির উপর হারাম করে দিয়েছেন।
এ হাদিসকে ইমাম আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, দারেমী, আহমদ, ইবনু খুজায়মা এবং ইবনু হিব্বান বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকেম বলেন, এ হাদিস ইমাম বুখারীর শর্তাবলীর ভিত্তিতে সহীহ এবং ইমাম ওয়াদিয়াশীও বলেন ইহাকে ইমাম ইবনু হাব্বান সহীহ নির্ধারণ করেছেন এবং ইমাম আসক্বালানী বলেন, ইহাকে ইমাম ইবনু খুজায়মা সহীহ নির্ধারণ করেছেন। ইমাম আলুনী বলেন, ইহাকে ইমাম বায়হাক্বী উত্তম, মজবুত সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন। আল্লামা ইবনু কাছির বলেন, ইহাকে ইমাম ইবনু খুজায়মা, ইবনু হিব্বান, দারুকুতনী এবং নববী ‘আল-আযকার’ এ সহীহ নির্ধারণ করেছেন।”
________________________________
ক. আবু দাউস : আস্ সুনান, কিতাবুস সালাত, ১/২৭৫, হাদিস :১০৪৭; এবং কিতাবুস সালাত, ২/৮৮, হাদিস : ১৫৩১;
খ. নাসায়ী : আস্ সুনান, কিতাবুল জুমাআ’, ৩/৯১, হাদিস : ১৩৭৪; এবং আস্ সুনানুল কুবারা, ১/৫১৯, হাদিস :১৬৬৬;
গ. ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, কিতাবু ইকামাতিস সালাত, ১/৩৪৫, হাদিস :১০৮৫;
ঘ. দারেমী : আস্ সুনান, ১/৪৪৫, হাদিস : ১৫৭২;
ঙ. আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, ৪/৮, হাদিস : ১৬২০৭;
চ. আবূ শায়বা : আল মুসান্নাফ, ২/২৫৩, হাদিস : ৭৬৯৭;
ছ. ইবনে খুযাইমা : আস্ সহীহ, ৩/১১৮, হাদিস : ১৭৩৩-১৭৩৪;
জ. ইবনে হিব্বান : আস্ সহীহ, ৩/১৯০, হাদিস : ৯১০;
ঝ. হাকেম: আল মুসতাদরাক, ১/৪১৩, হাদিস : ১০২৯;
ঞ. বাযযার: আল মুসনাদ, ৭/৪১১, হাদিস : ৩৪৮৫;
ট. তাবরানী : আল মুজামুল আওসাত, ৫/৯৭, হাদিস : ৪৭৮০; এবং মু’জামুল কবীর, ১/২৬১, হাদিস : ৫৮৯;
ঠ. বায়হাকী : আস্ সুনানুস সুগরা, ১/৩৭১, হাদিস : ৬৩৪; আস্ সুনানুল কুবরা, ৩/২৪৮; হাদিস: ৫৭৮৯; শুআবুল ঈমান, ৩/১০৯, হাদিস : ৩০২৯;
ঢ. দাহযামী : ফাদ্বলুস্ সালাতি আলান্ নবী, /৩৭, হাদিস : ২২;
ণ. ওয়াদীয়াশী: তুহফাতুল মুহতাজ, ১/৫২৪, হাদিস : ৬৬১;
ত. আসকালানী ; ফাতহুল বারী, ১১/৩৭০;
থ. আলযুনী : কাশফুল খিফা, ১/১৯০, হাদীস : ৫০১;
দ. ইবনে কাসীর : তাফসীরু কুরআনিল আযীম, ৩/৫১৫;
২.
وعن أبي الدرداء قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : أكثروا الصلاة علي يوم الجمعة ، فإنه مشهود تشهده الملائكة ، وإن أحدا لم يصل علي إلا عرضت علي صلاته حتى يفرغ منها ” ، قال : قلت : وبعد الموت ؟ قال : ” إن الله حرم على الأرض أن تأكل أجساد الأنبياء ، فنبي الله حي يرزق ” . رواه ابن ماجه .
رواه ابن ماجه بإسناد صحيح . وقال المنذري : رواه ابن ماجه باسناد جيد . وقال المناوي قال الدميرى : رجاله ثقات. وقال العجلونى: حسن
হযরত আবু দারদা [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বর্ণনা করেন যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বলেন, জুমুআ’র দিন আমার উপর অধিকহারে দরূদ প্রেরণ কর। ইহা ইয়াউমে মশহুদ (অর্থাৎ আমার দরবারে ফেরেশতাদের বিশেষ হাজিরার দিন)। এদিন ফেরেশতাগণ (বিশেষ নিয়মে অধিকহারে আমার দরবারে) হাজির হন। যখন কোন ব্যক্তি আমার উপর দরূদ প্রেরণ করে তখন সে উহা থেকে ফ্রি হওয়া পর্যন্ত তার দরূদ আমার সামনে পেশ করে দেয়া হয়। হযরত আবু দারদা [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বর্ণনা করেন যে, আমি আরজ করলাম (এয়া রাসূলাল্লাহ!) আর আপনার ওফাতের পর কিরূপ হবে? তিনি (ﷺ) বলেন, হ্যাঁ (আমার উপরিদৃষ্টের) ওফাতের পরও (আমার সামনে এরূপে পেশ করা হবে কেননা) আল্লাহ্ তা’আলা ভূমির জন্য আম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস সালাম এর দেহকে খেয়ে ফেলা হারাম করে দিয়েছেন। অতএব আল্লাহ্ তা’আলার নবী জীবিত হন এবং তাঁকে রিযিকও দেয়া হয়।
এ হাদিসকে ইমাম ইবনু মাজাহ্ সহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুনযেরী বলেন, ইহাকে ইমাম ইবনু মাজাহ উত্তম-মজবুত সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুনাবী বর্ণনা করেন যে, ইমাম দমীরী বলেন, ইহার রাভীগণ নির্ভরযােগ্য। ইমাম আজলুনীও ইহাকে হাদীসে হাসান বলেছেন।”
________________________
ক. ইবনে মাজাহ : কিতাবুল জানাযা, ১/৫২৪, হাদিস : ১৬৩৭; :
খ. মুনজারী : আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/২২৮, হাদিস : ২৫৮২;
গ. ইবনে কাসীর : তফসীরু কুরআনিল আযীম, ৩/৫১৫, ৪/৪৯৩;
ঘ. মুনাবী : ফয়যুল কদীর, ২/৮৭;
ঙ. আযুলুনী : কাশফুল খিফা, ১/১৯০, হাদিস : ৫০১;
৩.
عن أبي هريرة، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «ما من أحد يسلم على الا رد الله علي روحى حتى ارد عليه السلام –
رواه ابو داؤد والحمد والطبراني والبيهقي . وقال العسقلاني : رواه أبو داود ورواته ثقات، وقال الهيثمى : وفيه عبد الله بن يزيد الاسكندرانى ولم اعرفه ومهدى بن جعفر ثقه وبقية رجاله ثقات.
হযরত আবু হুরায়রা [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত আছে যে, হুজুর নবী আকরাম (ﷺ) বলেন, (আমার উম্মতের মধ্য থেকে) কোন ব্যাক্তি এমন নয় যিনি আমার উপর সালাম প্রেরণ করে কিন্তু আল্লাহ আমার উপর আমার রূহ ফিরিয়ে দেন না, যে পর্যন্ত আমি (প্রত্যেক সালাম প্রেরণকারীর) সালামের উত্তর দান করি।
এ হাদিসকে ইমাম আবু দাউদ, আহমদ, তাবরানী এবং বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন। ইমাম আসক্বালানীও বলেন, ইহাকে ইমাম আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন এবং ইহার বর্ণনাকারী নির্ভরযােগ্য। ইমাম হায়ছমীও বলেন, ইহার সনদে আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াজিদ আল-ইস্কান্দারানী বর্ণনাকারীকে আমি চিনি না, যখন মাহদী ইবনু জাফর এবং অপরাপর সমস্ত বর্ণনাকারী নির্ভরযােগ্য।”
____________________________
ক. আবু দাউদ : আস্ সুনান, কিতাবুল মানাসিক, ২/২১৮, হাদিস : ২০৪১;
খ. আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, ২/৫২৭, হাদিস : ১০৮৬৭;
গ. তাবরানী : আল মু’জামুল আওসাত, ৩/২৬২, হাদিস : ৩০৯২, ৯৩২৯;
ঘ. বয়েহাকী : আস্ সুনানুল কুবরা, ৫/২৪৫, হাদিস : ১০০৫০; শুআবুল ঈমান, য২/২১৭, হাদিস: ৫১৮১-৪১৬১;
ঙ. ইবনে রাহবীয়া : আল মুসনাদ, ১/৪৫৩, হাদিস : ৫২৬;
চ. হায়ছুমী : মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ১০/১৬২;
৪.
عن أنس بن مالك، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ” أتيت – وفي رواية هداب: مررت – على موسى ليلة أسري بي عند الكثيب الآحمر، وهو قائم يصلي في قبره –
رواه مسلم والنساءى،
হযরত আনাস ইবনু মালিক [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বললেন, আমি মেরাজের রাতে হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম এর নিকট আসলাম (হাদ্দার এর এক বর্ণনা মতে) লাল টিলার পাশ দিয়ে আমার গমন হলাে (তখন আমি দেখলাম যে,) হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম নিজ কবরে দণ্ডয়মান অবস্থায় নামাযরত ছিলেন।
এ হাদিসকে ইমাম মুসলিম, নাসাঈ, আহমদ এবং ইবনু আবি শায়বাহ্ বর্ণনা করেছেন।
_________________________
ক. মুসলিম : আস সহীহ, কিতাবুল ফাযায়েল, ৪/১৮৪৫, হাদিস :২৩৭৫;
খ. নাসায়ী : আস্ সুনান, কিতাবু কিয়ামিল লাইয়লি ওয়া তাত্বাওউয়িন নাহারি, ৩/২১৫, হাদিস : ১৬১-১৬৩২; আস্ সুনানুল কুবরা, ১/৪১৯, হাদিস : ১৩২৮;
৫.
عن أنس بن مالك، قال شول الله صلى الله عليه وسلم: «الأنبياء أحياء في قبورهم يصلون –
رواه أبو يعلي ورجاله ثقات وابن عدي والبيهقي والديلمي . وقال ابن عدى : وارجوا انه لا بأس به . وقال الهيثمي : رجال ابي يعلي ثقات . وقال الشوكاني : فقد صححه البيهقي والف في ذالك جزاء . وقال الزرقاني : وجمع البيهقي كتابا لطيفا في حياة الأنبياء وروي فيه بإسناد صحيح عن أنس رضي الله تعالي عنه مرفوعا ،
হযরত আনাস ইবনু মালিক [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বর্ণনা করেন যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বলেন, আম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস্ সালাম নিজ নিজ কবরে জীবিত আছেন এবং নামাযও পড়েন।
এ হাদিসকে ইমাম আবু ইয়ালা, ইবনু ‘আদী, বায়হাক্বী এবং দায়লামী নির্ভরযােগ্য বর্ণনাকারীগণ থেকে বয়ান করেন এবং ইমাম ইবনু ‘আদী বলেন, এ হাদিসের সনদে কোন ত্রুটি নেই। ইমাম হায়ছমীও বলেন, ইমাম আবু ইয়ালার বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযােগ্য এবং আল্লামা শওকানী বলেন, ইহাকে ইমাম বায়হাক্বী সহহী নির্ধারণ করেছেন এবং আম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস সালামের জীবনের উপর তিনি একটি জুম্ (সহীহ হাদিসসমূহের সংক্ষিপ্ত কিতাব) সংকলন করেছেন। এরূপে ইমাম জুরানীও বলেন যে, ইমাম বায়হাক্বী আম্বিয়া আলায়হিমুস্ সালাম-এর জীবনের উপর একটি নিতান্ত সূক্ষ কিতাব সংকলন করেছেন। যার মধ্যে হযরত আনাস্ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] এর মরফু বর্ণনাসমূহ সহীহ সনদ সহকারে বয়ান করেছেন।
_________________________
ক. আবু ইয়ালা : আল মুসনাদ, ৬/১৪৭, হাদিস : ৩৪২৫;
খ. ইবনে আদী : আল কামেল, ২/৩২৭, হাদিস : ৪৬০;
গ. দায়লামী : মুসনাদুল ফিরদাউস, ১/১১৯, হাদিস : ৪০৩;
ঘ. আসকালানী : ফতহুল বারী, ৬/৪৮৭; লিসানুল মিযান, ২/১৭৫, ২৪৬, হাদিস : ৭৮৭, ১০৩৩;
ঙ. হায়ছামী : মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৮/২১১;
চ. সুয়ূতী : শরহু আলা সুনানিন নাসায়ী, ৪/১১০;
ছ. আযীমাবাদী : আওনুল মা’বুদ, ৬/১৯; তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি ‘আল ইনতিবাহিল আযকিয়া বি হায়াতি আম্বিয়া’ নামে পুস্তক রচনা করেছি।
জ. মানাভী : ফয়যুল কাদীর
ঝ. শাওকানী : নায়লুল আওতার, ৫/১৭৮;
ঞ. যুরকানী : শরহু আল মুয়াত্তয়ি লিল ইমামিল মালেক, ৪/৩৫৭;
৬.
عن أنس بن مالك: قال النبي صلى الله عليه وسلم: ” ففرض الله عز وجل على أمتي خمسين صلاة فرجعت بذلك حتى مررت على موسى فقال : ما فرض الله لك على أمتك ؟ قلت : فرض خمسين صلاة ، قال : فارجع إلى ربك فإن أمتك لا تطيق ذلك ، فراجعت فوضع شطرها ، فرجعت إلى موسى ، قلت : وضع شطرها ، فقال : راجع ربك فإن أمتك لا تطيق ، فراجعت فوضع شطرها ، فرجعت إليه ، فقال : ارجع إلى ربك فإن أمتك لا تطيق ذلك ، فراجعته ، فقال : هي خمس ، وهي خمسون ، لا يبدل القول لدي ، فرجعت إلى موسى ، فقال : راجع ربك ، فقلت : استحييت من ربي، حتى انتهى بي إلى سدرة المنتهى، وغشيها ألوان لا أدري ما هي؟ ثم أدخلت الجنة، فإذا فيها حبايل اللؤلؤ واذا ترابها المسك – متفق عليه
হযরত আনাস ইবনু মালিক [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বয়ান করেন যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বলেন, (মে’রাজ এর রাত্রি) আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের উপর পঞ্চাশ রাকাত নামায ফরজ করলেন, তখন আমি ঐ (নামায)গুলােকে নিয়ে ফিরে আসি। এ পর্যন্ত যে আমি মূসা আলায়হিস সালাম এর পাশ দিয়ে চললাম তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ তা’আলা আপনার উম্মতের জন্য আপনার উপর কি ফরজ করেছেন? আমি বললাম, আল্লাহ তা’আলা পঞ্চাশ রাকাত নামায ফরজ করেছেন। তিনি বললেন, আপনি রবের দিকে ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মত ইহা (আদায়) এর শক্তি রাখেনা। তখন তিনি আমাকে ফিরায়ে দিলেন। (আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে) আল্লাহ তা’আলা উহার একভাগ কমিয়ে দিলেন।
আমি হযরত মূসা আলায়হিস্সালামের নিকট ফিরে আসলাম এবং বললাম যে, আল্লাহ তা’আলা একভাগ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট পুনরায় গমন করুন, কেননা আপনার উম্মতের মধ্যে ইহা (আদায়) এর শক্তিও নেই। তারপর আমি ফিরে গেলাম তখন আল্লাহ তা’আলা আরও একভাগ কমিয়ে দিলেন। আমি তাঁর নিকট এলাম। তিনি আবারও বললেন, আপনার রবের নিকট যান, কেননা আপনার উম্মতের মধ্যে ইহা আদায়েরও শক্তি নেই। আমি ফিরে গেলাম তখন (আল্লাহ্ তা’আলা) বললেন, এই (হল যে) পাঁচ (নামায) কিন্তু (পুণ্যের হিসেবে) পঞ্চাশ (এর বরাবর), আমার নিকট নির্দেশাবলী পরিবর্তিত হয় না।
আমি হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম এর নিকট আসলাম তখন তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট যান (আরও বেশী করে কমিয়ে দেয়ার আবেদন করুন)! আমি বললাম, এখন আমার রবের নিকট আমার লজ্জাবােধ হচ্ছে। অতঃপর (জিব্রাঈল আলায়হিস সালাম) আমাকে নিয়ে চললেন, শেষ পর্যন্ত সিদরাতুল মুনতাহার উপর পৌছলেন, যাকে বিচিত্র রঙে আবৃত করে রেখেছে, জানিনা উহা কি? অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করা হলাে যেখানে মুক্তার হারসমূহ রয়েছে এবং উহার মাটি যেন মেশক (এর ন্যায় সুগন্ধিযুক্ত)।
এ হাদিস মুত্তাফাকুন আলায়হি।
_______________________
ক. বুখারী : আস্ সহীহ, কিতাবুস্ সালাত, ১/১৩৬, হাদিস : ৩৪২; কিতাবুল আম্বিয়া, হাদিস : ৩১৬৪;
খ. মুসলিম : আস্ সহীহ, কিতাবুল ঈমান,১/১৪৮, হাদিস : ১৬৩;
৭.
عين الزهري، قال: أخبرني سعيد بن المسيب، عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ليلة أسري به : ” لقيت موسى، قال: فتعته، فإذا رجل حسبته قال – مضطرب رجل الرأس، گانه من رجال شنوءة، قال: ولقيت عیسی فنعته النبي صلى الله عليه وسلم فقال: – ربعه أحمر، كانما خرج من دیماس – يعني الحمام -، ورايت إبراهيم وأنا أشبه ولده به،- متفق عليه.
হরত আবু হুরায়রা [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত আছে যে, হুজুর নবী আকরাম (ﷺ) বললেন, মেরাজের রাত্রি হযরত মূসা আলাইহিস্ সালামের সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। হাদিস বর্ণনাকারী বর্ণনা করেন যে, রাসুল (ﷺ) হযরত মূসা আলায়হিস্ সালামের গুণ এরপ বর্ণনা করলেন, তিনি হালকা-পাতলা, দীর্ঘকায় এলােমেলাে চুলবিশিষ্ট। তিনি শানুয়াহ গােত্রের লােক সাদৃশ্য। হযরত (ﷺ) বলেন, হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালামের সাথেও আমার সাক্ষাৎ হলাে, তখন হুযূর আকরাম (ﷺ) তাঁর ভূষণ এর বর্ণনা দিলেন যে, তিনি মধ্যম কায়বিশিষ্ট লাল বর্ণওয়ালা (এবং এমন হৃষ্টপুষ্ট) যেন এখনই হাম্মাম থেকে (গােসল সেরে) বের হয়েছেন এবং আমি হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালাম এর সাথেও সাক্ষাৎ করেছি এবং আমি তাঁর সকল আওলাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক তাঁর সাদৃশ্যপূর্ণ হই।
এ হাদিস মুত্তাফাকুন আলায়হি।
________________________
ক. বুখারী : আস সহীহ, কিতাবুল আম্বিয়া, ৩/১২৬৯, হাদিস : ৩২৫৪
খ. মুসলিম : আস সহীহ, কিতাবুল ঈমান, ১/১৫৪, হাদিস : ১৬৮
৮.
عن عطاء ، مؤلى أم حبيبة قال : سمعت أبا هريرة ، يقول : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ليهبطن عيسى ابن مريم حكما عدلا ، وإماما مقسطا وليسلكن فجا حجا، أو معتمرا أو نبيتهما وليأتين قبري حتى يسلم ولاردن عليه يقول أبو هريرة : أي بني اخي إن رأيتموه فقولوا : أبو هريرة يقرئك السلام.
رواه الحاكم وابن عساكر وقال : هذا حديث صحيه الإسناد ،
হযরত আবু হুরায়রা [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযূর নবী আকরম (ﷺ) বললেন, হযরত ঈসা ইবনু মরইয়ম আলায়হিস সালাম ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী হুকুমদাতা এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী নেতা হিসাবে নিশ্চয় অবতীর্ণ হবেন, তিনি অবিলম্বে হজ্ব বা ওমরা অথবা উভয়টির নিয়তে বের হবেন এবং নিশ্চয় তিনি আমার কবরে আসবেন এবং আমাকে সালাম দেবেন আর আমি নিশ্চয় তাকে উত্তর দেব। হযরত আবু হুরায়রা [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] (বর্ণনাকারীকে) বললেন, হে আমার ভাতিজা! যদি আপনি তার জেয়ারতের ভাগ্য হাসিল করেন, তখন তাঁর নিকট আরজ করবেন যে, আবু হুরায়রা আপনার খেদমতে সালাম পেশ করেছেন।
এ হাদিসকে ইমাম হাকেম, ইবনু আসাকের এবং মুত্তাকী হিন্দী বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকেম বলেন, ইহা সহীহ সনদ বিশিষ্ট হাদিস।
________________________
ক. হাকেম। : আল মুসতাদরাক, ২/৬৫১, হাদিস : ৪১৬২;
খ. ইবনে আসকীর : তারিখে মাদীনা-এ দামেস্ক, ৪৭/৪৯৩; গ. হিন্দী : কানযুল উম্মাল, ১৪/১৪৬, হাদিস : ৩৮৮৫১;
৯.
عن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لقد رأيتنى في الحجر وقريش تسألني عن مسراي، فسألتني عن أشياء من بيت المقدس لم أثبتها، فگربت كربة ما كربت مثله قط، قال فرفعه الله لي أنظر إليه، ما يسألوني عن شيء إلا أنبأتهم به، ممثله قط»، وقد رأيت في جماعة من الأنبياء، فإذا موسی قائم يصلي، فإذا رجل ضرب، جعد گانه من رجال شنوءة، وإذا عیسی ابن مريم عليه السلام قائم يصلي، أقرب الناس به شبها غروة بن مسعود الثقفي، وإذا إبراهيم عليه السلام قائم يصلي، أشبه الناس به صاحبگم – يعنى نفسه –
فحانت الصلاة فأمتهم، فلما فرغت من الصلاۃ قال قائل: يا محمد، هذا مالك صاحب النار، فسلم عليه، فالتفت إليه، فبدأني بالسلام ” رواه مسلم والنسائي ،
হযরত আবু হুরায়রা [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বলেন, (মে’রাজের রাতে) আমি নিজেকে হাতীমে কা’বায় পেলাম এবং কোরাইশগণ মে’রাজের সফর প্রসঙ্গে আমার নিকট জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন, তাঁরা বায়তুল মুকাদ্দিছ এর কিছু বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলেন, যেগুলাে আমি (স্মৃতিপটে) সংরক্ষিত রাখিনি, যদ্বারা আমি এত অস্বস্থিবােধ করেছি যে, ইতােপূর্বে কখনাে এত অস্বস্থিবােধ করিনি। তখন আল্লাহ তা’আলা বায়তুল মুকাদ্দিছকে উঠিয়ে নিয়ে আমার সামনে রেখে দিলেন, তাঁরা বায়তুল মুকাদ্দিছ প্রসঙ্গে যা কিছু জিজ্ঞাসা করেন (দেখে দেখে) তাদেরকে বলে দিতে লাগলাম। এবং আমি নিজকে নবীদের একটি দলের অন্তর্ভুক্ত পেলাম। আমি দেখলাম হযরত মূসা আলায়হিস সালাম দণ্ডয়মান অবস্থায় নামাযরত আছেন। এবং তিনি শানুয়াহ গােত্রের লােকদের ন্যায় এলােমেলাে চুলওয়ালা ছিলেন। অতঃপর ঈসা ইবনু মরইয়ম আলায়হিমাস সালামও দন্ডয়মান অবস্থায় নামাজরত ছিলেন এবং উ’রওয়া ইবনু মাসউদ ছাক্বাফী তাঁর সাদৃশ্য ছিলেন। অতঃপর হযরত ইব্রাহীম আলায়হিস্ সালাম দণ্ডয়মান অবস্থায় নামাযরত ছিলেন। এবং আপনাদের সর্দার (অর্থাৎ স্বয়ং হুযূর নবী আকরম (ﷺ)) তাঁর সাথে সবচেয়ে বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন এবং আমি সেসব নবী আলায়হিমুস্ সালামের ইমামতী করলাম। যখন নামায থেকে অবসর হলাম একজন প্রবক্তা আমাকে বললেন, ইনি মালিক যিনি জাহান্নামের দারােগা। তাঁকে সালাম দিন, তখন আমি তার অভিমুখী হলাম তখন তিনি (আমার) আগে আমাকে সালাম করলেন।
ইহাকে ইমাম মুসলিম এবং নাসাঈ বর্ণনা করেছেন।
________________________
ক. মুসলিম : আস্ সহীহ, কিতাবুল ঈমান, ১/১৫৬, হাদিস : ১৭৮;
খ. নাসায়ী : আস্ সুনানুল কুবারা, ৬/৪৫৫, হাদিস : ১১৪৮০;
১০.
عن أبي سعيد الخدري، قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول وهو يصف يوسف حين راه في الشماء الثالثة، قال: ” رايت صورته كصورة القمر ليلة البدر، فقلت: يا جبريل من هذا؟ قال: هذا اخوك يوف ” قال ابن إسحاق: وكان الله قد أعطى يوسف من الحسن والهيبة ما لم يعطه أحدا من العالمين قبله، ولا بعده حتی کان يقال: والله أعلم إنه أعطي نصف الحسن و وابن قتيبة وقسم النصف الأخر بين الناس،
رواه الحاكم وابن قتيبة –
হযরত আবু সাঈদ খুদরী [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বয়ান করেন যে, আমি হুযূর নবী আকরাম (ﷺ)কে বলতে শুনলাম, সে সময় তিনি হযরত ইউসুফ আলায়হিস সালাম এর গুণাবলী বয়ান করতে ছিলেন। যখন হুযুর সহ তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁকে (মে’রাজের রাতে) তৃতীয় আসমানে দেখলেন, হযরত (ﷺ) বললেন, আমি এমন এক ব্যক্তিকে দেখলাম যার আকৃতি চৌদ্দ তারিখের চাদের ন্যায় ছিল। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে জিব্রাঈল! ইনি কে? তিনি আরজ করলেন, ইনি আপনার ভাই হযরত ইউসুফ আলায়হিস্ সালাম। ইবনু ইসহাক বলেন, আল্লাহ তা’আলা হযরত ইউসুফ আলায়হিস্ সালামকে ঐ সৌন্দর্য ও প্রভাব দান করে ছিলেন যা সারাজগতে তার আগে বা পরে কাউকে দান করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত বলা যেত যে, আল্লাহর শপথ আমি ইহাই জানি যে, হযরত ইউসুফ আলায়হিস সালামকে পূর্ণ সৌন্দর্যের অর্ধাংশ এবং অপর অর্ধাংশ (সারা দুনিয়ার) লােকদেরকে দেয়া হলাে।
এ হাদিসকে ইমাম হাকেম এবং ইবনু কুতায়বাহ্ বর্ণনা করেছেন।
____________________
ক. হাকেম : আল মুসতাদরাক, ২/৬২৩
খ. ইবনু কুতাইবা : তাবীলু মুখতালাফিল হাদিস, ১/৩২১
১১.
عن عبد الله بن مسعوډ قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «كأني أنظر إلى موسی بن عمران في هذا الوادي محرما بين قطوانيتين»
رواه الطبراني وأبو يعلي وقال المنذري والهيثمى : إسناده حسن
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মসউদ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বর্ণনা করেন যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বললেন, আমি (সে সময়ও) যেমন হযরত মূসা ইবনু ইমরানকে সে উপত্যকায় দু’খানা ক্বিতওয়ানী চাদরের মধ্যখানে এহরাম অবস্থায় দেখতে ছিলাম।
এ হাদিসকে ইমাম ত্বাবরানী, আবু ইয়া’লা এবং আবু নাঈম বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুনযেরী এবং হায়ছমী বলেন, ইহার ইসনাদ হল হাসান।
______________________
ক. তাবরানী : আল মু’জামূল কবীর, ১০/১৪২, হাদিস : ১০২৫৫; মু’জামুল আওসাত, ৬/৩০১, হাদিস : ৬৪৮৭;
খ. আবু ইয়ালা : আল মুসনাদ, ৭/২৭, হাদিস : ৫০৯৩;
গ. মূনযির : আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/১১৮, হাদিস : ১৭৪০;
ঘ. হায়ছূমী : মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৩/২২১ এবং ৮/২০৪;
১২.
عن عبد الله بن عباس، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم أتي على وادي الأزرق فقال: «ما هذا؟» قالوا: وادي الأزرق فقال: «كاني أنظر إلى موسی بن عمران مهبطا له خوار إلى الله بالتكبير، ثم أتى على ثنية، فقال: «ما هذه الثنية؟ قالوا: ثنيه كذا وكذا؟ فقال: «كاني أنظر إلى يونس بن متى على ناقة حمراء جعدة خطامها ليف وهو يلبي، وعليه جبة صوف –
رواه الحاكم وابن حبان وأبو نعيم وأبو عوانة والطبراني . وقال الحاكم : هذا حديث صحيح على شرط مسلم،
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাছ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]মা বয়ান করেন যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) ওয়াদিয়ে আজরকের দিকে আসলেন এবং জানতে চাইলেন ইহা কি? সাহাবাহ কেরাম [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]ম আরজ করলেন (এয়া রাসূলাল্লাহ!) ইহা ওয়াদিয়ে আজরক। তখন হযরত (ﷺ) বললেন, আমি যেমন মূসা ইবনু এমরানকে দেখতে ছিলাম যে, তিনি এ উপত্যকায় আল্লাহ তা’আলার মহত্ব বয়ান করতঃ অবতীর্ণ হচ্ছেন। তারপর তিনি (ﷺ) এক পাহাড়ী পথের দিকে গমন করলেন, তখন তিনি (ﷺ) জানতে চাইলেন, ইহা কোন পাহাড়ী পথ? সাহাবাহ কেরাম [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]ম আরজ রলেন, ইহা অমুক অমুক পাহাড়ী পথ। তখন তিনি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যেমন হযরত ইউনুছ ইবনু মাত্তা আলায়হিস সালামকে লাল রঙের এলােমেলাে কেশওয়ালা উষ্ট্রীর উপর বসা অবস্থায় দেখতে ছিলাম। সে উষ্ট্রীর লাগাম খেজুরের ছালের ছিল। এবং তিনি তলবিয়াহ বলতে ছিলেন এমতাবস্থায় তার পরনে পশমের জুব্বা ছিল।
এ হদিসকে ইমাম হাকেম ইবনু হিব্বান, আবু নাঈম, আবু উ’য়ানা এবং তাবরানী বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকেম বলেন, এ হাদিস ইমাম মুসলিম এর শর্তাবলীর ভিত্তিতে সহীহ।
______________________
ক. হাকেম : আল মুসতাদরাক, ২/৩৭৩, ৬৩৮, হাদিস : ৩৩১৩;
খ. ইবনে হিব্বান : আস সহীহ, ১৪/১০৩, হাদিস : ৬২১৯;
গ. তাবরানী : আল মু’জামুল কবীর, ১২/১৫৯, হাদিস : ১২৭৫৬;
ঘ. আবুনাঈম : হিলইয়াতুল আওলিয়া, ২/২২৩, ৩/৯৬;
ঙ. আবু আওনা : আল মুসনাদ, ২/৪২১, হাদিস : ৩৬৮২;
১৩.
عن ابن عباس رضي الله عنهما ، أنه قال : لقد سلك فج الروحاء سبعون نبيا حجاجا عليهم ثياب الصوف ، ولقد صلى في مسجد الخيف ثبعون نبيا.
رواه الحالكم و الطبراني والبيهقي . وقال الهيثمي : رجاله ثقات.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাছ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]মা বয়ান করেন যে, ৭০ (সত্তর) জন আম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস সালাম হজ্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে রাওহাহ এর পথে রওয়ানা দিলেন, যাদের পরনে পশমের কাপড় ছিল এবং ৭০ (সত্তর) জন অম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস সালাম মসজিদে খাইফে নামায আদায় করেন।
এ হাদিসকে ইমাম হাকেম, ত্ববরানী এবং বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন। ইমাম হায়ছূমী বলেন, এ হাদিসের বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযােগ্য।
_________________________
ক. হাকেম : আল মুসতাদরাক, ২/৬৫৩, হাদিস : ৪১৬৯;
খ. ইবনে হিব্বান : আস্ সহীহ, ১৪/১০৩, হাদিস : ৬২১৯;
গ. তাবরানী : আল মু’জামূল কবীর, ১২/৪৭৪, হাদিস : ১৩৫২৫;
ঘ. বায়হাকী : আস্ সুনানুল কুবরা, ৫/১৭৭, হাদিস : ৯৬১৮;
ঙ. ফাকেহী : আখবারু মক্কা, ৪/২৬৬, হাদিস : ২৫৯৪;
চ. হায়ছূমী : মাজমাউয যাওয়াদে, ৩/২৯৭;
১৪.
عن ابن عباس، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «صلى في مسجد الخيف سبعون نبیا منهم موسی كأني أنظر إليه وعليه عباءتان قطوانيتان وهو محرم على بعير من إبل شنوءة مخطوم بخطام ليف له ضفران»
رواه الطبراني أبو نعيم والفاكهى . وقال الهيثمي : رجاله ثقات .
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাছ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত আছে যে, হুযূর নবী আকরম (ﷺ) বলেন, মসজিদে খাইফে ৭০ (সত্তর) জন আম্বিয়ায়ে কেরাম [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]ম নামায আদায় করেছেন। যাদের মধ্যে হযরত মূসা আলায়হিস্ সালামও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। (সে সময়ও) আমি যেমন তাঁকে দেখতে ছিলাম এবং তাঁর পরণে দু’খানা ক্বিতওয়ানী চাদর ছিল। এবং তিনি এহরাম পরা অবস্থায় শানুয়াহ গােত্রের উষ্ট্ৰীসমূহের একটি উষ্ট্রীর উপর আরােহী ছিলেন। যার লাগাম খেজুরের ছালের ছিল। যাতে দুইটি রশি ছিল।
এ হাদিসকে ইমাম ত্ববরানী আবু নঈম এবং ফাকেহী বর্ণনা করেছেন, ইমাম হায়ছুমী বলেন, ইহার বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযােগ্য।
_____________________
ক. তাবরানী : আল মু’জামূল কবীর, ১১/৪৫২, হাদিস : ১২২৮৩;
খ. আবু নাঈম : হিলইয়াতুল আওলিয়া, ২/১০;
গ. ইবনে আদী : আল কামেল, ৬/৫৮;
ঘ. ফাকেহী : আখবারু মক্কা, ৪/৬২২, হাদিস : ২৫৯৩;
ঙ. দায়লামী: আল মুসনাদুল ফিরদাউস, ২/৩৯২, হাদিস : ৩৭৪০;
চ. হায়ছুমী : মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ, ৩/২২১, ২৯৭;
১৫.
عن عمار بن یاسر ، يقول : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الله وكل بقبري ملكا أعطاه أسماع الخلائق ، فلا يصلي على أحد إلى يوم القيامة إلا ابلغني باسمه واسم ابيه، هذا فلان ابن فلان قد صلى عليك –
رواه البزار والبخاري في الكبير ، وقال الهيثمي : فيه ان الجميري لا أعرفه وبقية رجاله رجال الصحيح
وروى أبو الشيخ ابن حبان ولفظه : قال رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم : إن الله تبارك وتعالي ملگا أعطاه أسماع الخلائق كلهم ، فهو قائم على قبري ، إذا مت الى يوم القيامة ، فليس أحد من صلى على صلاة إلا سماه باسمه واسم آبیه ، فقال : يا محمد ، صلي عليك فلان، فيصلي الرب تبارك وتعالى علي ذالك الرجل بكل واحد عشرا.
হযরত আম্মার ইবনু ইয়াসির [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]মা থেকে বর্ণিত যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা আমার কবরের উপর একজন ফেরেশতা নিয়ােগ করেছেন, যাকে আল্লাহ তা’আলা সমস্ত সৃষ্টিকুলের শব্দ শ্রবণের (এবং বুঝার) শক্তি দান করেছেন, তখন কেয়ামত দিবস পর্যন্ত যে-কেউ আমার উপর দরূদ পাঠ করবে সে ফেরেশতা ঐ দরূদ পাঠকের নাম এবং তার পিতার নাম আমার নিকট পৌছাবেন এবং আবেদন করবেন, এয়া রাসূলাল্লাহ! (দ.) অমুকের পুত্র অমুক আপনার উপর দরূদ প্রেরণ করেছেন।
এ হাদিসকে ইমাম বাজ্জার এবং বুখারী আত্তারিখুল কবীর এ এবং মুনজেরী ও বর্ণনা করেছেন। ইমাম হায়ছুমী বলেন, ইহার সনদে ইবনু হুমায়রী বর্ণনাকারীকে আমি চিনি না। তিনি ছাড়া সকল বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদিসের বর্ণনাকারী হন।
আবূ শায়খ ইবনু হাইয়্যান এর বর্ণনার শব্দসমূহ এরূপ যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলার এক ফেরেশতা আছে, যাকে আল্লাহ তা’আলা সমস্ত সৃষ্টিকুলের শব্দ শােনার (এবং বুঝার) শক্তি দান করেছেন, তখন সে ফেরেশতা আমার ওফাতের পর কেয়ামত পর্যন্ত আমার কবরের উপর দণ্ডয়মান থাকবে, অতঃপর আমার উম্মতের মধ্য থেকে যে-কেউ আমার উপর দরূদ প্রেরণ করবে সে ফেরেশতা তার নাম এবং তার পিতার নাম নেবেন এবং বলবেন, হে মুহাম্মদ! (আমার মনিব) অমুক ব্যাক্তি আপনার খেদমতে দরূদ প্রেরণ করেছেন। তখন আল্লাহ তা’আলা সে ব্যাক্তির উপর প্রতি দরূদের বিনিময়ে দশটি রহমত অবতীর্ণ করবেন।
_______________________
ক. বাযযার : আল মুসনাদ, ৪/২৫৫, হাদিস : ১৪২৫, ১৪২৬;
খ. বুখারী : তারিখুল কবীর, ৬/৪১৬, হাদিস : ২৮৩১;
গ. ইবনে হাইয়ান: আল আযমা, ২/৭৬২, হাদিস : ১;
ঘ. হায়ছুমী : মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ১০/১৬২;
১৬.
عن عبد الرحمن بن عبد القاري، قال: انه سمع عمر بن الخطاب، يعلم الناس التشهد على المنبر : «التحيات لله الزاكيات لله الطيبات الصلوات لله، السلام عليك ايها النبي ورحمه الله وبركاته، السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله، وأشهد أن محمدا عبده ورسوة»
رواه مالك والشافعي وعبد الرزاق والطحاوي . وقال الحاكم هذا حديث صحيح على شرط مسلم،
وفي رواية : عن ابن عمر رضي الله تعالى عنهما ، عن رسول الله صلى الله تعالى عنه أنه قال في التشهد : التحيات لله، والصلوات والطيباات، السلام عليك أيها النبي ورحمه الله و بر گاته،..
رواه الدار قطني ومالك . وقال الدار قطني : هذا إسناد صحيح .
وفي رواية : عن ابن عمر رضي الله عنهما قال : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يعلمنا التشهد : التحيات الطيبات الزاكيات لله ، السلام عليك أيها النبي ورمة الله وبركاته …… فذكر الحديث بنحوه .
رواه الدارقطني والحاكم : عن جابر بن عبد الله رضي الله عنهما . وقال الدار قطني : وهذا إسناد متصل حسن . وقال الحاكم : صحته على شرط مسلم.
وفي رواية : عن عائشة رضي الله تعالى عنها ، زوج النبي صلى الله عليه وسلم كانت تقول إذا تشهدت …… فذكره الحديث بنحوه.
رواه مالك وابن أبي شيبة
হযরত আবদুর রহমান ইবনু আবদুল ক্বারী থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত ওমর ইবনু খাত্তাব [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] মিম্বরের থাকাবস্থায় লােকদেরকে তাশাহহুদ শেখানাের সময় শুনলেন, হযরত (ﷺ) বললেন, “তােমরা ইহাই বল, সমস্ত কথন ও করণীয় উপাসনা এবং সমস্ত পবিত্র বস্তুসমূহ আল্লাহ তা’আলার জন্য এবং হে সম্মানিত নবী! আপনার উপর শান্তি, আল্লাহ তা’আলার দয়া ও তার বরকতসমূহ (অবতীর্ণ হােক) এবং শান্তি বর্ষিত হােক আমাদের উপর এবং আল্লাহ তাআলার সমস্ত নেক বান্দাদের উপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কোন উপাস্য নাই এবং মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহ্ তা’আলার (প্রিয়) বান্দা ও তাঁর রাসূল।”
এ হাদিসকে ইমাম মালেক, শাফেয়ী, আবদুর রাজ্জাক এবং তাহাভী বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকেম বলেন, এ হাদিস ইমাম মুসলিম এর শর্তাবলীর ভিত্তিতে সহীহ।
“অপর এক বর্ণনায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]মা হুযূর নবী আকরম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (ﷺ) বলেন, তাশাহহুদে (ইহাই পড়) সমস্ত কথন ও করণীয় উপাসনাসমূহ এবং সমস্ত পবিত্র কলিমাসমূহ আল্লাহ্ তা’আলার জন্য নির্দিষ্ট। হে সম্মানিত নবী! আপনার উপর শান্তি হােক এবং আল্লাহ তা’আলার দয়া…”
এ হাদিসকে ইমাম দারুকুতনী এবং মালেক বর্ণনা করেছেন।
অপর এক বর্ণনায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]মা থেকে বর্ণিত যে, হুযূর নবী আকরম (ﷺ) আমাদেরকে এ তাশাহহুদ শেখাতে ছিলেন। সমস্ত কথন ও করণীয় উপাসনাসমূহ এবং সমস্ত উন্নত কলিমাসমূহ আল্লাহ্ তা’আলার জন্য নির্দিষ্ট। হে সম্মানিত নবী! আপনার উপর শান্তি, আল্লাহ্ তা’আলার দয়া ও বরকতরাজী (বর্ষিত) হােক… আল-হাদিস।
এ হাদিসকে ইমাম দারুকুতনী এবং হাকেম হযরত জাবের ইবনু আবদুল্লাহ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]মা থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম দারুকুতনী বলেন, এ হাদিস সনদ হিসাবে মুত্তাসিল হাসান। ইমাম হাকেমও বলেন এ হাদিস ইমাম মুসলিম এর শর্তাবলীর ভিত্তিতে সহীহ।
অপর এক বর্ণনায় আছে যে, উম্মুল মু’মেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা তাশাহ্হুদে উপরােল্লেখিত দোয়াই পাঠ করতেন।
এ হাদিসকে ইমাম মালেক এবং ইবনু আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন।
________________________
ক. ইমাম মালেক : আল মুয়াত্তা, কিতাবুন নিদা বিস্ সালাত, ১/৯০-৯১, হাদিস :২০৩-২০৬;
খ. শাফেয়ী : আল মুসনাদ, ১/২৩৭;
গ. আবূ শায়বা : আল মুসান্নাফ, ১/২৬১, হাদিস : ২৯৯২;
ঘ. আবদুর রাযযাক : আল মুসান্নাফ, ২/২০২, হাদিস : ৩০৬৭;
ঙ. তাহাবী : শরহু মা’আনিয়াল আসার, ১/২৬১;
চ. দারে কুতনী : আস্ সুনান, ১/৩৫১, হাদিস : ৬-৯;
ছ. হাকেম : আল মুসতাদরাক, ১/৩৯৮, ৩৯৯, হাদিস : ৯৭৮-৯৮৩;
জ. বায়হাকী : আস্ সুনানুল কুবরা, ২/১৪২, হাদিস : ২৬৫৫-২৬৬৭;
ঝ. ইবনে আবদুল বার: আল ইসতিযকার, ১/৪৮৪;
১৭.
عن عبيد الله بن بريدة عن ابيه رضي الله تعالى عنه قال : قال رسول الله صلي الله عليه وسلم : یا بريده ، إذا جلست في صلاتك ، قلاتتركن التشهد والصلاة على فانها زكاة الصلاة ، وسلم على جميع أنبياء الله ورسوله ، وسلم على عباد الله الصالحين .
رواه الدار قطني والديلمي.
হযরত ওবাইদুল্লাহ ইবনু বুরায়দা নিজ পিতা হযরত বুরায়দা [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণনা করেন যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বলেন, হে বুরায়দা! যখন তুমি নিজ নামায পড়তে বসবে, তখন তাশাহহুদ এবং আমার উপর দরূদ প্রেরণকে কখনাে ছেড়ে দেবে না। উহা নামাযের যাকাত। এবং আল্লাহ তা’আলার সমস্ত নবী এবং রাসূলগণের উপর এবং তাঁর নেক বান্দাদের উপরও সালাম প্রেরণ কর।
এ হাদিসকে ইমাম দারুকুতনী এবং দায়লামী বর্ণনা করেছেন।
________________________
ক. দারে কুতনী : আস্ সুনান, ১/৩৫৫, হাদিস: ৩
খ. দায়লামী : আল্ মুসনাদুল ফেরদাউস, ৫/৩৯২, হাদিস : ৮৫২৭;
গ. হায়ছূমী : মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ, ২/১৩২;
১৮.
عن عبد الملك بن سعيد بن سويد، قال: سمعت ابا حميد، أو أبا أسيد الأنصاري يقول: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ” إذا دخل أحدكم المسجد فليسلم على النبي صلى الله عليه وسلم، ثم ليقل: اللهم <ص:۱۲۷» افتح لي أبواب رحمتك، فإذا خرج قليقل: اللهم إني أسألك من فضلك “، رواه أبو داود وابن ماجه والدارمي،
وقال الرازي : قال أبو زرعة : عن أبي حميد وابي أسيد كلاهما عن النبي صلى الله عليه وسلم أصح . وقال المناوي : إذا دخل أحدكم المسجد فليسلم ندبا مؤكدا أو وجوبا علي النبي صلي الله عليه وسلم لأن المساجد محل الذكر ، والسلام علي النبي صلى الله عليه وسلم منه .
হযরত আবু হােমাইদ আস্-সায়েদী বা আবু উসাইদ আল আনছারী [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]মা বয়ান করেন যে, হুযূর নবী আকরম (ﷺ) বলেন, যখন তােমাদের মধ্য থেকে কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তখন তার উচিৎ যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ)-এর উপর সালাম প্রেরণ করা। তারপর বলবে, হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন এবং যখন মসজিদ থেকে বের হবে তখন বলবে। হে আল্লাহ! আমি আপনার থেকে আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।
এ হাদিসকে ইমাম আবু দাউদ, ইবনু মাজা এবং দারেমী বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু হাতেম রাজী বলেন যে, ইমাম আবু জুরআ’ বলেন, হযরত আবু হােমাইদ এবং আবু ওসাইদ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]মা উভয় থেকে বর্ণিত বর্ণনাসমূহ বিশুদ্ধতম। এবং ইমাম মুনাভী বলেন, যখন তােমাদের মধ্য থেকে কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন তার উচিৎ হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) এর খেদমতে সালাম পেশ করাকে পছন্দনীয় এবং আবশ্যকীয় মনে করে আবেদন করা, কেননা মসজিদ হল জিকির করার স্থান এবং হুযূর নবী আকরাম (ﷺ)’র খেদমতে সালাম পেশ করাও আল্লাহর জিকির এর শামিল।
_______________________
ক, আবু দাউদ : আস্ সুনান, কিতাবুস সালাত, ১/১২৬, হাদিস : ৩৬৫;
খ. ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, কিতাবুল মাসাজিদ ওয়াল জামাআত, ১/২৫৪, হাদিস : ৭৭২;
গ. দারেমী : আস্ সুনান, ১/৩৭৭, হাদিস : ১৩৯৪;
ঘ. ইবনে হিব্বান : আস্ সহীহ, ৫/৩৯৭, হাদিস : ২০৪৮;
ঙ. রাযী : ইলালুল হাদীস, ১/১৭৮, হাদিস : ৫০৯;
১৯.
عن فاطمة بنت الحسين، عن جدتها فاطمة الكبرى قالت: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل المسجد صلى على محمد وسلم، وقال: رب اغفر لي ذنوبي، وافتح لي أبواب رحمتك، وإذا خرج صلى على محمد وسلم، وقال: رب اغفر لي ذنوبي، وافتح لي أبواب فضلك. رواه الترمذي وأحمد وعبد الراق.
وفي رواية يقول : بسم الله والسلام علي رسول الله ………. فذكر الحديث نحوه. رواه ابن ماجه وابن أبي شيبة .
وفي رواية : قالت : كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل المسجد صلي على محمد وسلم ……. فذكر الحديث نحوه. رواه احمد وابو يعلي والتبراني-
وفي رواية : قالت : قال : السلام عليك أيها النبي ورحمه الله وبرگاته ، اللهم اغفرلي ذنوبي وافتح لي أبواب رزقك . رواه أبو يعلي في المعجم،
হযরত ফাতেমা বিনতু হােছাইন [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]মা নিজ দাদীজান সৃষ্টি জগতের সৈয়দা ফাতেমাতুল কুবরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বললেন, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) মসজিদে প্রবেশ করার সময় মুহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ)’র উপর সালাত ও সালাম পড়তেন, অতঃপর এ দোয়া বলতেন, হে রব! আমার জন্য আমার (অর্থাৎ উম্মতের) পাপ মােচন করে দিন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন। এবং বাহির হওয়ার সময়ও মুহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ) এর উপর সালাত ও সালাম পড়তেন, অতঃপর এ দোয়া চাইতেন। হে আমার রব! আমার জন্য আমার (উম্মতের) পাপ ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাসমূহ খুলে দিন।
এ হাদিসকে ইমাম তিরমিজী আহমদ এবং আবদুর রাজ্জাক বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী বলেন, হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার হাদিস হাসান।
অপর এক বর্ণনায় আছে যে, হযরত (ﷺ) বলতেন, আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং আল্লাহ তা’আলার রাসূল (ﷺ) এর উপরও সালাম হােক… তারপর এরূপে হাদিস বয়ান করেন। ইহাকে ইমাম ইবনু মাজা এবং ইবনু আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন।
অপর এক বর্ণনায় সৈয়দা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বয়ান করেন যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন মুহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ) এর উপর সালাম প্রেরণ করতেন এবং এরূপে মসজিদ থেকে বাহির হওয়ার সময়ও মুহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ)’র উপর সালাম প্রেরণ করতেন, ইহার পর পূর্ববর্তী হাদিসের দোয়া বয়ান করলেন। ইহাকে ইমাম আহমদ, আবু ইয়া’লা এবং তৃবরানী বর্ণনা করেছেন।
আরেক বর্ণনায় আছে যে, সৃষ্টিজগতের সৈয়দা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বয়ান করলেন যে, হযরত (ﷺ) ইহাই বলতেন, হে আল্লাহর নবী! আপনার উপর শান্তি হােক এবং আল্লাহ তায়ালার রহমত ও বরকত হােক। এ হাদিসকে ইমাম আবু ইয়া’লা আল-মু’জম এ বর্ণনা করেছেন।
______________________
ক. তিরমিযী : আস্ সুনান, কিতাবুস সালাত ২/১২৭, হাদিস : ৩১৪;
খ. ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, কিতাবুল মাসাজিদ ওয়াল জামাআত, ১/২৫৩, হাদিস : ৭৭১;
গ. ইবনে আবূ শায়বা : আস্ মুসান্নাফ, ১/২৯৮, হাদিস : ৩৪১৬; এবং ৬/৯৬, হাদিস : ২৯৭৬৪;
ঘ. আবদুর রাযযাক : আল মুসান্নাফ, ১/৪২৫, হাদিস : ১৬৬৪;
ঙ. আহমদ ইবনে হাম্বল: আল মুসনাদ, ৬/২৮২-২৮৩, হাদিস : ২৬৪৫৯-২৬৪৬২;
চ. আবু ইয়ালা : আল মুসনাদ, ১২/১২১, ১৯৯, হাদিস : ৬৭৫৩, ৬৮২২; এবং আল মু’জাম, ১/৫৪, হাদিস : ২৪;
ছ. তাবরানী : আল মু’জামূল কবীর, ২২/৪২৪, হাদিস : ১০৪৪; এবং আদ্ দোয়া, ১/১৫০, হাদিস : ৪২৩-৪২৬;
২০.
عن أبي هريرة، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ” إذا دخل أحدكم المسجد فليسلم على النبي صلى الله عليه وسلم، وليقل : اللهم افتح لي أبواب رحمتك، وإذا خرج، فليسلم على النبي صلى الله عليه وسلم، وليقل : اللهم اعصمني من الشيطان الرجيم”
رواه ابن ماجه والنسائي والبخاري في الكبير. وقال الحاكم : هذا حديث صحيح علي شرط الشيخين . وقال الكناني : هذا إسناد صحيح ورجاله ثقات .
হযরত আবু হুরায়রা [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত যে, হুজুর নবী আকরাম (ﷺ) বললেন, যখন তােমাদের মধ্য থেকে কেউ মসজিদে প্রবেশ কর, তখন তার উচিৎ যে, তিনি হুজুর নবী আকরাম (ﷺ) এর খেদমতে সালাম পেশ করবে এবং (এর পর) ইহা বলবে, হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা সমূহ খুলে দিন। এবং যখন মসজিদ থেকে বের হবে, তখনও হুজুর নবী আকরাম (ﷺ) এর খেদমতে সালাম পেশ করবে এবং (ইহার পর) বলবে হে আমার আল্লাহ! আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে বাচান।
অপর এক বর্ণনানুযায়ী বললেন, তার উচিৎ যে, সে (সালাম পেশ করার পর) বলবে, হে আল্লাহ! আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে দুরে রাখুন।
এ হাদিসকে ইমাম ইবনু মাজা, নাসাঈ এবং বুখারী আত্তারিখুল কবর এ বর্ণনা করেছেন। এবং ইমাম হাকেম বললেন, এ হাদিস ইমাম বুখারী ও মুসলিম এর শর্তাবলীর ভিত্তিতে সহীহ। ইমাম কেনানী বললেন, এ হাদিসের সনদ সহীহ এবং ইহার বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযােগ্য।
_______________________
ক, ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, কিতাবুল মাসাজিদ ওয়াল জামাত, ১/২৫৪, হাদিস : ৭৭৩;
খ. নাসায়ী : আস্ সুনানুল কুবরা, ৬/২৭, হাদিস : ৯৯১৮;
গ. বুখারী : আত্ তারীখুল কুবরা, ১/১৫৯, হাদিস : ৪৭০;
ঘ. হাকেম : আল মুসতাদরাক, ১/৩২৫, হাদিস : ৭৪৭;
ঙ. কেনানি : মিসবাহুয যুযাজাহ, হাদিস : ২৯৩
২১.
عن محمد بن عبد الرحمن، أن عبد الله بن سلام كان إذا دخل المسجد سلم على النبي صلى الله عليه وسلم، وقال: «اللهم افتح لي أبواب رحمتك» ، وإذا خرج سلم على النبي صلى الله عليه وسلم وتعوذ من الشيطان .
رواه ابن أبي شيبة .
হযরত মুহাম্মদ ইবনু আবদির রহমান [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনু সালাম [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] যখনই মসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) এর উপর সালাম প্রেরণ করতেন তারপর বলতেন “আল্লাহুম্মফতাহলী আবওয়াবা রাহমাতিকা” (হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাসমূহ খুলে দিন) এবং যখন মসজিদ থেকে বের হয়ে আসতেন তখনও হুযূর নবী আকরাম (ﷺ)’র উপর সালাম প্রেরণ করতেন অতঃপর বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চেয়ে নিতেন (তাঁর এই আমল হুযূর (ﷺ)’র ওফাত মেশকের পর সর্বদা প্রচলিত ছিল।)
এ হাদিসকে ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন।
_______________________
ইবনে আবূ শায়বা : আল্ মুসাননাফ, ১/২৯৮, হাদিস : ৩৪১৬-৩৪১৮
২২.
وفي رواية : عن عقلمة أنه كان إذا دخل المسجد قال: «السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، صلى الله وملائكته على محمد»
رواه ابن أبي شيبة.
এক বর্ণনায় হযরত আলকামা [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বয়ান করেন যে, যখন তিনি মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেন “আচ্ছালামু আলাইকা আইয়ুহান নবীত্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু সাল্লাল্লাহু ওয়ামালাইকাতুহু আ’লা মুহাম্মাদিন (ﷺ)। (হে সম্মানিত নবী! আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর দয়া এবং বরকতসমূহ হােক (সর্বদা) আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে দয়া এবং তার ফেরেশতাদের পক্ষ থেকেও মুহাম্মদ মােস্তফা (ﷺ) এর উপর দরূদ ও বরকতসমূহ হােক।)
এ হাদিসকে ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন।
________________________
ইবনে আবূ শায়বা : আল্ মুসাননাফ, ১/২৯৮, হাদিস : ৩৪১৬-৩৪১৮
২৩.
وفي رواية : عن إبراهيم كان إذا دخل المسجد قال: « بسم الله والصلاة على رسول الله» ، وإذا دخل بيتا ليس فيه أحد قال: «السلام عليكم» رواه ابن أبي شيبة .
এক বর্ণনায় হযরত ইবরাহীম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, যখন তিনি মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেন, “বিসমিল্লাহি ওয়াসসালাতু আ’লা রাসুলিল্লাহি” (আল্লাহ্ তা’আলার নামে এবং হুযূর নবী আকরাম (ﷺ)’র উপর দরূদ প্রেরণের সাথে আমি এ মসজিদে প্রবেশ করছি।) এবং যখন এমন কোন ঘরে প্রবেশ করতেন, যেখানে কোন কেউ নাই, তখন বলতেন “আসসালামু আলায়কুম” (আপনার উপর শান্তি হােক)।
এ হাদিসকে ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ্ বর্ণনা করেছেন।
________________________
ইবনে আবূ শায়বা : আল্ মুসাননাফ, ১/২৯৮, হাদিস : ৩৪১৬-৩৪১৮
২৪.
عن عبد الرحمن بنسعد قال : كنت عند عبد الله بن عمر فخدرت رجله فقلت له: يا أبا عبد الرحمن، ما لرجلك؟ قال: ” اجتمع عصبها من هاهنا، قلت: ادع أحب الناس اليك، قال: يا محمد، فانسطت –
رواه البخارى فى الادب وابن السنى واللفظ له.
হযরত আবদুর রহমান ইবনু সা’দ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বয়ান করেন যে, আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]মার সাথে ছিলাম, তখন তাঁর পা অনুভূতিহীন হয়ে গেল, তখন আমি তাকে বললাম, হে আবু আবদুল্লাহ! আপনার পায়ে কি হয়েছে? তিনি বললেন, এখান থেকে আমার নিতম্বের উপরাংশ ধরে গেছে। তখন আমি বললাম, সমস্ত লােকদের মধ্যে যিনি আপনার নিকট অতীব প্রিয় তাঁর স্মরণ করুন, তখন তিনি ইয়া মুহাম্মদু ((ﷺ))-এর শ্লোগান উঁচু স্বরে দিলেন (বর্ণনাকারী বলছেন যে) তখনই তাঁর নিতম্বের উপরাংশ খুলে গেল।
এ হাদিসকে ইমাম বুখারী আল-আদাবুল মুফরাদ এ এবং ইবনুসসুন্নী উল্লেখিত শব্দসমূহের সাথে বর্ণনা করেছেন।
_______________________
ক. . বুখারী : আদাবুল মুফরাদ, ১/৩৩৫, হাদিস : ১৯৬৪;
খ. ইবনুল জুদ : আল মুসনাদ, ১/৩৬৯, হাদিস : ২৫৩৯;
গ. ইবনে সা’দ : আত্ তাবকাতুল কুবরা, ৪/১৫৪;
ঘ. ইবনুস্ সুন্নী : আমলুল ইয়ামি ওয়াল লাইলি, ১/১৪১-১৪২, হাদিস : ১৬৮-১৭০, ১৭২;
২৫.
وفي رواية :
عن أبي سعيد رضي الله تعالى عنه قال : كنت أمشي مع ابن عمر رضي الله عنهما فخدرت رجله ، فجلس ، فقال له رجل : أذكر أحب الناس إليك . فقال : يا محمداه ، فقام فمشي . رواه ابن السنئ
এক বর্ণনায় হযরত আবু সাঈদ খুদরী [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত, তিনি বয়ান করেন যে, আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]মা এর সাথে চলছিলাম। তার পা অনুভূতিহীন হয়ে গেল এবং তিনি বসে গেলেন। তারপর তাঁকে কোন একজন বলল, লোকদের মধ্যে যিনি আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয় তাঁর স্মরণ করুন। তখন তিনি বললেন, এয়া মুহাম্মাদাহ! (হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম!) তাঁর এই বলাছিল যে, তিনি ঠিক হয়ে গেলেন এবং উঠে হাঁটতে লাগলেন।
এ হাদিসকে ইমাম ইবনুস সুন্নী বর্ণনা করেছেন।
_______________________
ইবনুস্ সুন্নী : আমলুল ইয়ামি ওয়াল লাইলি, ১/১৪১-১৪২, হাদিস : ১৬৮-১৭০, ১৭২;
২৬.
وفي رواية :
ځدرت رجل رجل عند ابن عباس رضي الله عنهما ، فقال ابن عباس رضي الله عنهما : أذكر أحب الناس إليك . فقال : محمد صلي الله عليه وسلم ، فذهب خدره .
رواه ابن السنی .
এক বর্ণনায় আছে যে,
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাছ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]মা এর নিকট বসাবস্থায় কোন এক ব্যক্তির পা অনুভূতিহীন হয়ে গেল। তখন তিনি ঐ ব্যক্তিকে বললেন, লােকদের মধ্যে যিনি আপনার নিকট সর্বাধিক প্রিয় তাঁর স্মরণ করুন, তখন ঐ ব্যক্তি এয়া মুহাম্মদ! ((ﷺ)) এই শ্লোগান লাগালেন, তখনই তার পায়ের অবশাবস্থা চলে গেল।
এ হাদিসকে ইমাম ইবনুসসুন্নী বর্ণনা করেছেন।
২৭.
وفي رؤية :
عن الهيثم بن حنش قال : كنا عند غبد الله بن عمر رضي الله عنهما فخدرت رجله ، فقال له رجل : آذكر احب الناس إليك . فقال : يا محمد صلي الله تعالي عليه وسلم ، فقال : فقام فكانما نشط من عقال .
رواه ابن السنئ،
এক বর্ণনায় হযরত হায়ছম ইবনু হানাশ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত। তিনি বয়ান করেন যে, আমরা হযরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]মার নিকট ছিলাম। এক ব্যক্তির পা অবশ হয়ে গেল, তখন তাকে অপর এক ব্যক্তি বলল, লােকদের মধ্য থেকে তােমার নিকট যিনি সর্বাধিক প্রিয় তার স্মরণ করুন। তখন তিনি বললেন, এয়া মুহাম্মদ! ((ﷺ)) বর্ণনাকারী বয়ান করেন যে, সেখানেই ঐ ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল, যেমন রশির বাঁধ থেকে মুক্তি পেয়ে আরােগ্য হয়ে গেছে।
এ হাদিসকে ইমাম ইবনুসসুন্নী বর্ণনা করেছেন।
২৮.
عن أبي أمامة بن سهل بن حنيف، عن عمه عثمان بڼ حنيف: أن رجلا، گان يختلف إلى عثمان بن عفان رضي الله عنه في حاجة له، فكان عثمان لا يلتفت إليه ولا ينظر في حاجته، فلقي ابن حنيف فشگی ذلك إليه، فقال له عثمان بن حنيف: ” اءت الميضاة فتوضا، ثم اءت المسجد فصل فيه ركعتين، ثم قل: اللهم إني أسألك وأتوجه إليك بنبيا محمد صلى الله عليه وسلم نبي الرحمة، يا محمد إني أتوجه بك إلى ربي فتقضي لي حاجتي وتذكر حاجتك ” ورح حتى أروح معك، فانطلق الرجل فصنع ما قال له، ثم أتي باب عثمان بن عفان رضي الله عنه، فجاء البواب حتى أخذ بيده فادخله علي عثمان رضي الله عنه، فأجلسه معه على الطنفسة، فقال: حاجتك؟ فذكر حاجته وقضاها له، ثم قال له: ما ذكرت حاجتك حتى كان الساعه، وقال: ما كانت لك من حاجة فاذكرها، ثم إن الرجل خرج من عندي قلقي عثمان بن حنيف، فقال له: جزاك الله خيرا ما كان ينظر في حاجتي ولا يلتفت إلى حتى كلمته في، فقال عثمان بن حنيف: والله ما كلمته، ولكني شهدت رسول الله صلى الله عليه وسلم وأتاه ضرير فشگی إليه ذهاب بصره، فقال له النبي صلى الله عليه وسلم: «فتصبر» فقال: يا رسول الله، ليس لي قاءد وقد شق علي، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «اءت الميضأة فتوضا، ثم صل ركعتين، ثم ادع بهذه الدعوات» قال ابن حنيف: فوالله ما تفرقنا وطال بنا الحديث حتى دخل علينا الرجل كأنه لم يكن به ضر قط .
رواه الطبراني والبيهقي . وقال المنذري : والحديث صحيح
হযরত আবু উমামা ইবনু সাহাল ইবনু হানিফ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] নিজ চাচা হযরত ওসমান ইবনু হানিফ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি হযরত ওসমান ইবনু আফফান [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]র নিকট কোন প্রয়ােজন আসছিলেন কিন্তু হযরত ওসমান [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] তার দিকে দৃষ্টিপাত করছিলেন না এবং তার প্রয়ােজনের বিষয়ে চিন্তাও করতে ছিলেন না। সে ব্যক্তি ওসমান (ইবনু হানিফ) [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]র সাথে সাক্ষাৎ করল। নিজ জিজ্ঞাস্য বিষয়ে তার নিকট অভিযােগ করল। ওসমান ইবনু হানিফ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] তাকে বললেন, বদনা নাও, অজু কর। অতঃপর মসজিদে এসে দুই রাকাত নামায পড়। তারপর (এই দোয়া) পড়, হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট চাইতেছি এবং আপনার দিকে নিজ নবী মুহাম্মদ (ﷺ) রহমতের নবীর অসিলায় সম্মুখীন হচ্ছি। হে মুহাম্মদ! আমি আপনার অসিলায় নিজ রবের দিকে সম্মুখীন হচ্ছি যে, তিনি আমার এই প্রয়ােজন পূর্ণ করবেন। তারপর নিজ প্রয়ােজন স্মরণ কর। (এবং এই দোয়া পড়ে হযরত ওসমান ইবনু আফফান [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]র নিকট যাও) শেষ পর্যন্ত আমিও তােমার সাথে এসে যাব। তখন ঐ মানুষটি গেল এবং সে তাই করল যা তাকে বলা হয়েছিল।
আবার সে হযরত ওসমান ইবনু আফফান [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]র দরজায় আসল তখন দারােয়ান তার হাত ধরল এবং হযরত ওসমান ইবন আফফান [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]র নিকট নিয়ে গেল, হযরত ওসমান [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] তাকে নিজের পাশে চাটাইর উপর বসালেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার প্রয়ােজন কি? তখন সে নিজ প্রয়ােজন বয়না করল এবং তিনি উহা পূর্ণ করে দিলেন। তারপর তিনি তাকে বললেন, তুমি নিজের এ প্রয়ােজনের কথা এতদিন বল নাই কেন? আগামীতে তােমার যে প্রয়ােজন হােক না কেন আমাকে বল। তখন লােকটি তার নিকট থেকে চলে গেল এবং হযরত ওসমান ইবনু হানিফের সাথে সাক্ষাৎ করল এবং তাঁকে বলল, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক যদি আপনি আমার জিজ্ঞাসা বিষয়ে হযরত ওসমানের সাথে আলাপ না করতেন তিনি আমার প্রয়ােজনের বিষয়ে চিন্তা করতেন না। আমার দিকে দৃষ্টিপাতও করতেন না।
হযরত ওসমান ইবনু হানিফ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বললেন, খােদার কসম আমি তার সাথে তােমার বিষয়ে আলাপ করিনি। বরং আমি আল্লাহ তায়ালার রাসূল (ﷺ)কে দেখলাম যে, এক অন্ধ লােক আসল এবং তাঁর নিকট নিজ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলার অভিযােগ পেশ করল। তখন হযরত (ﷺ) তাকে বললেন, তুমি ধৈয্য ধর। সে আরজ করল এয়া রাসূলল্লাহ! আমার কোন খাদেম নেই এবং আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, তখন হযরত (ﷺ) বললেন, বদনা নিয়ে এস এবং অজু কর (এবং তাকে এই আমল শিক্ষা দিলেন) হযরত ইবনু হানিফ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বললেন, খােদার কসম! আমরা তখনও মজলিস থেকে দূরে যাইনি এবং আমাদের মধ্যে দীর্ঘ কোন কথােপকথনও হয়নি। শেষ পর্যন্ত অন্ধ লােকটি আমাদের নিকট (এ অবস্থায়) আসল যে যেমন তার নিকট কোনদিন অন্ধত্ব ছিলই না।
এ হাদিসকে ইমাম তৃবরানী এবং বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুনজেরী বললেন, এ হাদিস সহীহ।
________________________
ক. তাবরানী : আল মু’জামূল কবীর, ৯/৩০, হাদিস : ৮২১১; আল মু’জামুস্ সগীর, ১/১৮৩, হাদিস : ৫০৮; আদ্ দোয়া, ১/৩৩০, হাদিস : ১০৫০;
খ. বায়হাকী : দালায়িলুন নবুয়ত, ৬/১৬৭;
গ. আল মুনযিরী : আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/২৩, ২৭৪, হাদিস : ১০১৮;
ঘ. সুবকী : সিফাউস্ সিকাম, ১/১২৫;
ঙ. হায়ছুমী : মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ২/২৭৯;
চ. সুয়ূতী : খাসায়েসুল কুবরা, ২/২০১;
২৯.
عن أبي هريرة رضي الله تعالى عنه
…… وحمل خالد بن ولید رضي الله تعالی عنه حتي جاؤهم وسار لجبال مسيلمة وجعل يترقب أن يصل إليه فيقتله ثم رجع ثم وقف بين الصفيين ودعا البراز . وقال : أنا ابن الوليد العود، أنا ابن عامر وزيد – ثم نادي بشعار المسلمين ، وكان شعارهم يومءذ یا محمداه .
رواه الطبري وابن كثير واللفظ له .
হযরত আবু হুরায়রা [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] (দীর্ঘ বর্ণনায়) বয়ান করেন যে, (জঙ্গে ইয়ামামার স্থলে হযরত হুযায়ফা [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]র শাহাদতের পর) হযরত খালেদ ইবনু অলিদ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] (ইসলামী সেনার) পতাকা হাতে নিলেন এবং সেনাদলকে অতিক্রম করে মুসায়লামা কাজ্জাব এর পাহাড়ের দিকে গেলেন আর তিনি এ অপেক্ষায় ছিলেন যে, মুসায়লামা কাজ্জাব পর্যন্ত পৌছে তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর তিনি ফিরে আসলেন এবং উভয় সেনাদলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রণকৌশলের আহ্বান জানালেন এবং উঁচু স্বরে ডাক দিলেন। আমি অলিদের পুত্র হই। আমি আমের ও যাইদ এর পুত্র হই। তারপর তিনি মুসলমানদের প্রচলিত শ্লোগান উঁচু করলেন এবং সেদিন তার যুদ্ধ শ্লোগান ছিল ‘এয়া মুহাম্মদাহ্ ((ﷺ)) (এয়া মুহাম্মাদ! সাহায্য করুন)।
এ হাদিসকে ইমাম তবরানী এবং ইবনু কাছির উল্লিখিত শব্দ রাজির সাথে বর্ণনা করেছেন।
_______________________
ক. তাবারী : তারিখুল উমামি ওয়াল মূলক, ২/২৮১;
খ. ইবনে কাসীর : আল বিদাইয়াতু ওয়ান নিহায়া, ৬/৩২৪;
৩০.
عن مالك الدار، قال: أصاب الناس قحط في زمن عمر، فجاء رجل إلى قبر النبي صلى الله عليه وسلم فقال: یا رسول الله، استسق لأمتك فانهم قد هلكوا، فأتى الرجل في المنام فقيل له: عليك الكيش، المنام فقيل له: ” اءت عمر فاقرءه السلام، وأخبره أنكم مسقيون وقل له : عليك الكيس “، فاتی عمر فاخبره فبگی عمر ثم قال: يا رب لا آلو إلا ما عجزت عنه .
رواه ابن أبي شيبة والبيهقي في الدلاءل . وقال ابن گثير : إسناده صحيح . وقال العسقلاني : رواه ابن أبي شيبة بإسناد صحيح.
হযরত মালেকদার [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বর্ণনা করছেন যে, হযরত ওমর ইবনু খাত্তাব [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]র আমলে লােকজন অভাবে পড়ে গেল, তখন একজন সাহাবী হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) এর পবিত্র কবরের নিকট হাজির হলেন এবং আরজ করলেন, এয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আল্লাহ তা’আলার নিকট নিজ উম্মতের তৃপ্তির জন্য দোয়া করুন, কেননা তারা (অভাবগ্রস্থ হওয়ার কারণে) ধ্বংস হয়ে গেছে, তখন স্বপ্নে হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) ঐ সাহাবীর নিকট আসলেন এবং বললেন, ওমরের নিকট যাও। তাকে আমার সালাম বল এবং তাঁকে জানিয়ে দাও যে, তােমাদেরকে তৃপ্ত করা যাবে এবং ওমরকে (ইহাও) বলে দাও যে, (শত্রু আপনার প্রাণ নাশে তৎপর রয়েছে, তাদের নিকট থেকে) সতর্ক থাক, সতর্ক থাক। তারপর ঐ সাহাবী হযরত ওমরের নিকট গেলেন এবং তাকে সংবাদ দিলেন, তখন হযরত ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] কাঁদলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! আমি কুণ্ঠা করছি না, কিন্তু আমার অপারগ হওয়া ছাড়া কোন কাজ রইল না।
এ হাদিসকে ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ এবং বায়হাক্বী দালায়েলুন নুবুওয়াত এ বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনু কাছির বললেন, ইহার সনদ সহীহ। ইমাম আসক্বালানীও বললেন, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ ইহাকে সহীহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন।
________________________
ক. ইবনে আবূ শায়বা : আল মুসান্নাফ, ৬/৩৫৬, হাদিস : ৩২০০২;
খ. বায়হাকী : দালায়েলুন নবুয়ত, ৭/৪৭;
গ. আবদুর রায্যাক : আল ইসতিয়াব, ৩/১১৪৯;
ঘ, সুবকী : সিফাউস্ সিকাম, ১/১৩০;
ঙ. হিন্দী : কানযুল উম্মাল, ৮/৪৩১, হাদিস : ২৩৫২৫;
চ. ইবনে তাইমিয়া : ইকতিদ্বায়ুস সিরাতিল মুসতাকিম /৩৭৩;
ছ. ইবনে কাসীর : আল বিদায়াতু ওয়ান নিহায়া, ৫/১৬৭;
জ. আসকালানী : আল ইসাবাহ, ৩/৪৮৪;
৩১.
عن داؤد بن أبي صالح قال أقبل مروان يوما فوجد رجلا واضعا وجهه على القبر فقال أتدري ما تصنع فأقبل عليه فإذا هو أبو ایوب فقال نعم جءت رسول الله صلى الله عليه وسلم ولم آت الحجر سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول لا تبكوا على الدين إذا وليه أهله ولكن ابكوا عليه إذا وليه غير أهله.
رواه أحمد والطبراني . وقال الحاكم : هذا حديث صحيح الإسناد .
হযরত দাউদ ইবনু আবি সালেহ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বর্ণনা করছেন যে, এক দিন (সমকালীন খলিফা) মরওয়ান আসলেন এবং তিনি দেখলেন যে, এক ব্যক্তি হুযু নবী আকরাম (ﷺ)’র আলােকিত কবরে নিজ চেহারা রেখে দাঁড়িয়েছে। তখন তিনি সে ব্যক্তিকে বললেন, তুমি কি জান? তুমি কি করছ? যখন সে ব্যক্তি মরওয়ানের দিকে চেহারা ফিরালেন, তখন তিনি (রাসূলের সাহবী) হযরত আবু আইউয়ুব আনছারী [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] ছিলেন। (উত্তরে) তিনি বললেন, হ্যাঁ (আমি জানি যে) আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র পবিত্র দরবারে হাজির হয়েছি, কোন পাথরের নিকট আসিনি।
এক বর্ণনার শব্দ আমি কোন অনুভূতিহীন ও নিপ্রাণ বস্তুর নিকট আসিনি। আমি রাসূলে খোদা (ﷺ)কে ইহা বলতে শুনেছি দ্বীনের বিষয়ে কেঁদো না, যখন উহার অভিভাবক উহার যােগ্য হয়। দ্বীনের বিষয়ে সে সময় কেদো যখন উহার অভিভাবক অযােগ্য হয়।
এ হাদিসকে ইমাম আহমদ এবং ত্বাবরানী বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকেম বলেন, এই হাদিস সনদের বিবেচনায় সহীহ।
________________________
ক, আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, ৫/৪২২, হাদিস : ২৩২৩২;
খ. হাকেম : আল মুসতাদরাক, ৪/৫৬০, হাদিস : ৮৫৭১;
গ. তাবরানী : মু’জামূল কবীর, ৪/১৫৮, হাদিস : ৩৯৯৯; মু’জামূল আওসাত, ১/৯৪, হাদিস :২৮৪; এবং ৯/১৪৪, হাদিস : ৯৩২২;
ঘ. ইবনে আসাকীর: তারিখু মাদিনায়ে দামেস্ক, ৫৭/২৪৯, ২৫০;
ঙ. সুবকী : শিফাউস সিকাম /১১৩;
চ. হায়ছুমী : মাজমাউযূ যাওয়ায়েদ, ৫/২৪৫;
ছ. হিন্দী : কানযুল উম্মাল, ২/৮৮, হাদিস : ১৪৯২৭;
৩২.
عن عمرو بن ميمون الأودي، قال: رأيت عمر بن الخطاب رضي الله عنه، قال: یا عبد الله بن عمر، اذهب إلى أم المؤمنين عائشة رضي الله عنها، فقل: يقرأ عمر بن الخطاب عليك السلام، ثم سلها، أن أذفن مع صاحبي، قالت: كنت أريده لنفسي قلاوثرنه اليوم على نفسي، فلما أقبل، قال: له ما لديك؟ قال: أذنت لك يا أمير المؤمنين، قال: ” ما كان شيء أهم إلى من ذلك المضجع، فإذا قبضت فاحملوني، ثم سلموا، ثم قل: يستأذن عمر بن الخطاب، فإن أذنت لي، فادفنوني، وإلا فردوني إلى مقابر المسلمين………….. الحديث
رواه البخاري وابن أبي شيبة.
হযরত আমর ইবনু মায়মুন আউদী [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বয়ান করলেন, আমি দেখলাম যে হযরত ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] (ওফাতের। সময় নিজ পুত্রকে) বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবনু ওমর উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহার নিকট যাও এবং আরজ কর যে, ওমর ইবনু খাত্তাব আপনাকে সালাম বলছেন এবং আরজ করেন যে, আমাকে আমার দুই সাথীর সাথে (রাসূল (ﷺ) এর রওজায়) দাফন হওয়ার অনুমতি দান করবেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]মা যখন উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার খেদমতে হযরত ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]র এই আবেদন পেশ করলেন তখন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বললেন, সে জায়গাটি আমি নিজের জন্য রাখতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু আজ আমি তাঁকে (অর্থাৎ হযরত ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]কে) নিজের উপর প্রাধান্য দিচ্ছি। যখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]মা ফিরে গেলেন তখন হযরত ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] তাঁর নিকট জানলেন কি খবর নিয়ে এসেছ? তিনি আরজ করলেন, হে আমীরুল মুমেনীন! উম্মুল মুমেনীন আপনার জন্য অনুমতি দান করেছেন। তখন হযরত ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বললেন, (এই বরকতপূর্ণ ও পবিত্র) জায়গার চেয়ে বেশী আমার জন্য (শেষ আরামের স্থল হিসাবে) কোন জায়গা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। অতএব যখন আমার ওফাত হয়ে যাবে তখন আমাকে উঠায়ে সেখানে নিয়ে যাবে এবং সালাম পেশ করবে। তারপর আরজ করবে (মনিব!) ওমর ইবনু খাত্তাব অনুমতি চাচ্ছেন। যদি আমার জন্য অনুমতি মিলে তখন সেখানে দাফন করবে, অন্যথায় আমাকে সাধারণ মুসলমানদের কবরস্থানে নিয়ে দাফন করে দেবে।
এ হাদিসকে ইমাম বুখারী এবং ইবনু আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন।
_______________________
.ক, বুখারী : আস্ সহীহ, কিতাবুল জানাযেয়, ১/৪৬৯, হাদিস : ১৩২৮; কিতাবুল মানাকিব, ৩/১৩৫৩-১৩৫৫, হাদিস : ৩৪৯৭;
খ. ইবনে আবূ শায়বা : আল মুসান্নাফ, ৩/৩৪, হাদিস : ১১৮৫৮; ৭/৪৩৫-৪৩৬, হাদিস : ৩৭০৫৯, ৩৭০৭৪;
৩৩.
عن عائشة قالت گنت أدخل بيتي الذي دفن فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم، وابي فاضع ثوبي، وأقول انما هو زوجي وأبي ، فلما دفن عمر معهم فوالله ما دخلته إلا وأنا مشدودة علي ثيابي ، حياء من عمر.
رواه أحمد والحالكم . وقال الحاكم : هذا حديث صحيح على شرط الشيخين . وقال الهيثمي : رجاله رجال الصحيح . وقال الزگشي صحيح على شرط الشيځين .
হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বয়ান করেন যে, যখন আমি এই মুবারক কক্ষে প্রবেশ করতাম যেখানে হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) এবং আমার পিতা (হযরত আবু বকর ছিদ্দিক [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]) দাফনকৃত, তখন আমি আমার পর্দার কাপড় নামিয়ে রাখতাম এবং বলতাম নিশ্চয় এখানে আমার স্বামী এবং আমার পিতা আছেন (যাদের নিকট পর্দা আবশ্যক নয়)। যখন সেখানে তাঁদের সাথে হযরত ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]ও দাফনকৃত হলেন তখন আমি সেখানে হযরত ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে লজ্জাবােধ করত: পূর্ণ হেজাবে প্রবেশ করতাম।
এ হাদিসকে ইমাম আহমদ এবং হাকেম বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাকেম বললেন এ হাদিস বুখারী ও মুসলিম এর শর্তানুযায়ী সহীহ। এবং ইমাম হায়ছমীও বললেন ইহার বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদিসের বর্ণনাকারী হন। এবং ইমাম জরকশীও বললেন, এ হাদিস বুখারী ও মুসলিম এর শর্তানুযায়ী সহীহ।
_______________________
ক. আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, ৬/২০২, হাদিস : ২৫৭০১;
খ. হাকেম : আল মুসতাদরাক, ৩/৬৩, হাদিস : ৪৪০৬; ৪/৮, হাদিস : ৬৭২১;
গ. যুরকাশী : আল ইজাবাহ্ , /৬৮, হাদিস : ৬৮;
ঘ. হাইছুমী : মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৮/২৬; এবং ৯/৩৭;
৩৪.
عن علي بن أبي طالب قال لما حضرت أبا بكر الوفاة أقعدني عند رأسه وقال لي يا على اذا انا مت فغسلنى بالكف الذي غسلت به رسؤل الله صلى الله عليه وسلم وحنطوني واذهبوا بي إلى البيت الذي فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم فاستأذنوا فإن رأيتم الباب قد فتح (يفتح) فادخلوا بي وإلا فردوني إلى مقابر المسلمين حتى يحكم الله بين عباده؛ قال فغسل وكفن وكنت أول من بادر إلى الباب فقلت یا رسول الله هذا أبو بكر يستأذن
فرأيت الباب قد فتح (تعتح) فسمعت قاءلا يقول ادخلوا الحبيب إلى حبيبه فان الحبيب
إلى الحبيب مشتاق ،
رواه ابن عساكر والسيوطي .
হযরত আলী ইবনু আবি তালেব [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত যে, যখন হযরত আবু বকর ছিদ্দিক [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]র ওফাতের সময় ঘনিয়ে আসল, তখন তিনি আমাকে নিজ মাথার পাশে বসালেন এবং বললেন, হে আলী! যখন আমি মৃত্যুবরণ করব তখন আপনি আমাকে নিজের ঐ হাত দিয়ে গােসল করাবেন, যে হাত দিয়ে আপনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে গােসল দিয়ে ছিলেন এবং আমাকে (ও সেই) খুশবু লাগাবেন এবং (আমার মৃত দেহ) হুযূর (ﷺ) এর পাশে নিয়ে যাবেন, যদি আপনারা দেখেন যে, (আপনা আপনি) দরজা খুলে দেয়া হল, তখন আমাকে সেখানে দাফন করবেন অন্যথায় ফিরে এনে সাধারণ মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করবেন সে সময় পর্যন্ত যখন আল্লাহ তায়ালা নিজ বান্দাদের মধ্যে ফায়সালা না করেন, (অর্থাৎ কেয়ামত না আসে)।
তারপর তাঁর ইচ্ছা মােতাবেকই তাঁকে গােসল এবং (বরকতপূর্ণ খুশবু ওয়ালা) কাফন দেয়া গেল এবং (হযরত আলী [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বলছেন যে) সবার আগে আমি রাসূল (ﷺ)’র দরজার উপর পৌছে অনুমতি তলব করলাম এবং আরজ করলাম এয়া রাসূলাল্লাহ! ইনি আবু বকর যিনি ভেতরে আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তারপর আমি দেখলাম যে, রওজায়ে পাকের দরজা (আপনা আপনি) খুলে গেল এবং আমি শুনলাম যে, কোন প্রবক্তা বলতেছেন, বন্ধুকে বন্ধুর নিকট দাখিল করে দাও। নিশ্চয় বন্ধু ও বন্ধুর সাক্ষাতের আকাংখী হন।
ইহাকে ইমাম ইবনু আছাকির এবং সুয়ূতী বর্ণনা করেছেন।
________________________
ক. ইবনে আসাকীর : তারিখু মদিনাতি দামেস্ক, ৩০/৩৬;
খ. সুয়ূতী : খাসায়িসুল কুবরা, ২/৪৯২;
৩৫.
عن أبي إسحاق القرشي يقول : كان عندنا رجل بالمدينة إذا رأى منكرا لا يمكنه أن يغيره أتى القبر فقال : أيا قبر النبي وصاحبيه ألا يا غوثنا لو تعلمونا .
رواه البيهقي
হযরত আবু ইসহাক কুরাশী [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বয়ান করছেন যে, এখানে আলােকিত মদীনায় আমাদের পাশে একজন মানুষ ছিল। যখন তিনি এমন কোন খারাবী দেখতাে, যাকে সে নিজ হাতে দমনের শক্তি রাখতাে না তখন সে নবী আকরাম (ﷺ) এবং আলােকিত কবরের পাশে আসতাে এবং (হযরত (ﷺ) এর দরবারে ইহাই) আরজ করতেন, “হে (দু’ জগতের সর্দার) কবরবাসী! (এবং নিজ কবরে আরাম করুন) আপনার দুই সাথী এবং হে আমাদের সাহায্যকারী (এবং আমাদের মনিব ও মওলা) আপনি আমাদের (ক্রন্দনের অবস্থার উপর) বদান্য দৃষ্টি দান করুন।”
এ হাদিসকে ইমাম বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন।
_______________________
বায়হাকী : শু’আবুল ঈমান, ৩/৪৯৫, হাদিস : ৪১৭৭;
৩৬.
عن الحسن قال قال رسؤل الله صلى الله علي وسلم – افرشوا لي قطيفتي في لحدي فإن الأرض لم تسلط على أجساد الأنبياء .
رواه ابن سعد والهندي،
হযরত হাসান [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বয়ান করেন যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বললেন, আমার জন্য আমার কবরে আমার মখমল চাদর বিছিয়ে দেবে, নিঃসন্দেহে জমিকে আম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস সালাম এর শরীরের উপর শক্তি প্রয়ােগের সুযােগ দেয়া হয়নি।
ইহাকে ইমাম ইবনু সা’দ এবং হিন্দী বর্ণনা করেছেন।
_______________________
ক. ইবনে সা’দ : আত্ তাবাতুল কুবরা, ২/২৯৯;
খ. হিন্দী : কানযুল উম্মাল, ১৫/৫৭৭, হাদিস : ৪২২৪৫;
গ. সুয়ূতী : শরহু আল সুনানুন নাসায়ী, ৪/৮৪; খাসায়েসুল কুবরা, ২/২৭৮;
৩৭.
عن الحسن رضي الله تعالى عنه يقول : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تاكل الأرض جسد من گلمه روح القدس .
رواه الجهضمي وابن القيم ، وقال ابن كثير : مرسل حسن.
وفي رواية عنه : قال : قال رسؤل الله صلى الله عليه وسلم : من كلمه روح القدس – لم يؤذن للارض أن تأكل من لحمه .
رواه المقريزي والسيوطي .
হযরত হাসান [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বলছেন, যার সাথে রুহুল কুদুছ জিব্রাঈল কথা বলেছেন, জমিন তার দেহ খাবে না।
ইহকে ইমাম জাহজমী এবং ইবনুল কাইয়ুম বর্ণনা করেছেন। হাফেজ ইবনু কাছির বলেছেন, এ হাদিস মুরসাল হাসান।
হযরত হাসান [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে আরো বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) বলেছেন, যার সাথে রুহুল কুদুছ কথা বলেছেন জমিকে তাঁর গােশত খাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি।
ইহাকে ইমাম মাকুরীজি এবং সুয়ূতী বর্ণনা করেছেন।
______________________
ক. যাহদামী : ফদ্বলুস সালাতু আলান্ নবী, /৩৮, হাদিস : ২৩;
খ. ইবনে কাইয়ুম : জালাউল আফহাম, ৪১, হাদিস : ৫৯;
গ. ইবনে কাসীর : তাফসীরু কুরআনিল আযীম, ৩/৫১৫;
ঘ. সাখাভী : আল কাউলুল বদী, /১৬৯;
ভ. মাকরীষী : ইমতাউল আসমা, ১০/৩০৬;
চ. সুয়ূতী : খাসায়েসুর কুবরা, ২/২৮০; দুরুল মনসুর, ১/৮৭
আল্লামা শরম্বালালী (রহঃ)
قال العلامة الشرنبلالي في الإيضاح في فصل زيارة النبي صلى الله عليه وسلم : ومما هو مقرر عند المحققين انه صلي الله عليه وسلم حي يرزق ممتع بجميع الملاذ والعبادات غير انه حجب عن ابصار القاصرين عن شريف المقامات.
আল্লামা শরম্বালালী নিজ কিতাব ‘নুরুল ঈজাহ’ এ হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) এর জেয়ারত এর অধ্যায় নির্ধারণ করেছেন, সেখানে তিনি বলেন, মহাককেকীনদের নিকট ইহা মিমাংসিত বিষয় যে, হুযুর নবী আকরাম (ﷺ) জীবিত। হযরত (ﷺ)কে (হযরত (ﷺ) এর শানের যােগ্য) রিজিক দেয়া হয় এবং তিনি যাবতীয় স্বাদ ও এবাদতসমূহ দ্বারা উপকৃত হন। পার্থক্য শুধু এতটুকু এসব লােকদের দৃষ্টি থেকে হযরত (ﷺ) আড়ালে রয়েছেন, যে দৃষ্টি মক্বামাতে আলিয়া থেকে খাটো।
ক. শারনাবলালী : নুরুল ইযাহ/ ৩৯১;
৩৮.
عن سعيد بن عبد العزيز رضي الله تعالى عنه قال : لما كان أيام الحرة لم يوذن في مسجد النبي صلي الله عليه وسلم ثلاثا ولم يقم ولم يبرح سعيد بن المسيب رضي الله تعالي عنه من المسجد ، وكان يعرف وقت الصلاة إلا بهمهمة يسمعها من قبر النبي صلى الله عليه وسلم فذكر معناه .
হযরত সাঈদ ইবনু আবদুল আজিজ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত আছে যে, যখন আইয়্যামে হাররাহ (যে দিনগুলােতে ইয়াজিদ মদীনা মুনাওয়ারার উপর হামলা করায়ে ছিল) এর ঘটনা ঘটেছিল তখন হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) এর মসজিদে তিন দিন যাবৎ আযান ও একামত বলা হয়েছিল না এবং হযরত সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] (যিনি বড় মর্যাদাবান তাবেয়ী ছিলেন তিনি মসজিদে নববী ((ﷺ))-তে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং তিনি (তিন দিন পর্যন্ত) মসজিদ ছাড়া ছিলেন না। এবং তিনি নামাজের সময় জানতেন না কিন্তু একটি নীচু স্বরের মাধ্যমে, যা হুযুর নবী আকরাম (ﷺ)’র আলােকিত কবর থেকে শুনতেছিলেন। তারপর তিনি উহার অর্থও বয়ান করলেন।
এ হাদিসকে ইমাম দারেমী এবং খতীব। তাবরিজী বর্ণনা করেছেন।
______________________
ক. দারেমী : আস্ সুনান, ১/৫৬, হাদিস : ৯৩;
খ. খতীবে তিরমিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, ২/৪০০, হাদিস : ৫৯৫১;
গ. সুয়ূতী : শরহু সুনানি ইবনে মাজাহ, ১/২৯১, হাদিস : ৪০২৯;
৩৯.
وفي رواية عنه (سعيد بن عبد العزيز) ، وما يأتي وقت صلاة إلا سمعت الأذان من القبر .
رواه أبو نعيم والسيوطي .
এবং তাঁর (হযরত সাঈদ ইবনু আব্দুল আজিজ) [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত এক বর্ণনায় আছে, হযরত (ﷺ) বললেন, কোন নামাযের সময় এমন আসেনি যে, আমি হুযূর নবী আকরাম (ﷺ)’র আলােকিত কবর থেকে আযানের শব্দ শুনিনি।
ইহাকে ইমাম আবু নাঈম এবং সায়ুতী বর্ণনা করেছেন। (৪৬)
وفي رواية عنه قال : فكنت إذا حانت الصلاة أسمع أذانا يخرج من قبل القبر الشريف .
رواه ابن سعد .
وفي رواية عنه قال : لم ازل اسمع الأذان والإقامة من قبر رسول الله صلي الله عليه وسلم ایام الحرة حتي عاد الناس .
رواه التميز والشؤط .
এবং তাঁরই [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বললেন, যখন নামাযের সময় আসতাে তখন আমি হযরত (ﷺ) এর আলােকিত কবরের দিক থেকে আযানের শব্দ শুনতাম।
ইহাকে ইমাম ইবনু সা’দ বর্ণনা করেছেন।
তারই নিকট থেকে বর্ণিত যে, তিনি বললেন, আমি আইয়্যামে হাররার কালে অবিরত হুযুর নবী আকরাম (ﷺ) এর আলােকিত কবর থেকে আযান এবং একামতের শব্দ শুনতে ছিলাম, এই পর্যন্ত যে, লােকদের (অবস্থা) স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসল (অর্থাৎ মসজিদে নববীতে নিয়মিত আযান ও একামত শুরু হয়ে গেল)
ইহাকে ইমাম মাকারিজী এবং সুয়ূতী বর্ণনা করেছেন। (৪৭)
_____________________
৪৬*
ক. আবু নাঈম : দালায়েলুন নবুয়ত, /৪৯৬;
খ. সুয়ূতী : খাসায়েসুল কুবরা, ২/২৮০; আল হাবী লিল ফাতওয়া, ২/২৬৬;
গ. মাকরীযী : ইমতাউল আসমা, ১৪/৬১৫;
ঘ. যুরকানী ; শরহু মাওয়াহিবুল লাদুন্নী, ৭/৩৬৫;
ঙ. আবদুল হক মুহাদ্দীস দেহলভী : জযবুল কুলুব ইলা দিয়ারিল মাহবুব, /৪৪;
৪৭*
ক. ইবনে সা’দ : আত্ ত্বাবকাতুল কুবরা, ৫/১৩২;
খ. সুয়ূতী : আর রাসয়িলুত তিস’আ, /২৩৮-২৩৯; আল হাভী লিল ফাতওয়া, ২/৬২২; আল খাসায়েসুল কুবরা, ২/২৮১;
গ. মাকরেযী : ইমতাউল আসমা, ১৪/৬১৬;
ঘ, যুরকানী ; শরহুল মাওয়াহিবুল লাদুন্নী, ৭/৩৬৫;
৪০.
عن عروة، عن أبيه، لما سقط عليهم الحائط في زمان الوليد بن عبد الملك، أخذوا في بناءه فبدت لهم قدم، فزعوا وظوا أنها قدم النبي صلى الله عليه وسلم، فما وجدوا أحدا يعلم ذالك حتى قال لهم عروة: «لا والله ما هي قدم النبي صلى الله عليه وسلم، ما هي إلا قدم عمر رضي الله عنه»
رواه البخاري وابن سعد.
হযরত ওরওয়াহ্ [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বর্ণনা করেছেন যে, যখন অলিদ ইবনু আবদুল মালিক এর আমলে (হুজরা মােবারক এর) দেয়াল ঐ (লােকদের) উপর পড়ে গেল তখন একটি পা প্রকাশ পেল। লােকজন ভয় পেল এবং বুঝল যে, সম্ভবত ইহা হুযূর নবী আকরাম (ﷺ) এর পা মােবারক। ইহার কোন পরিচয়কারী পাওয়া গেল না, শেষ পর্যন্ত হযরত ওরওয়াহ (চিনে নিলেন এবং) বললেন, খােদার কসম, ইহা হুযূর নবী আকরাম (ﷺ)’র পা মােবারক নয় বরং হযরত ওমর [রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু]র ক্বদম।
ইহাকে ইমাম বুখারী এবং ইবনু সা’দ বর্ণনা করেছেন।
______________________
ক. বুখারী : আস্ সহীহ, কিতাবুল জানায়েয, ১/৪৬৮; হাদিস : ১৩২৬;
খ. ইবনে সা’দ : আত্ তাবকাতুল কুবরা, ৩/৩৬৮
ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ)
وقال الملا علي القاري في الوسائل : أنه لم يقل أحد أن قبورهم خاليه عن أجسادهم ، وأرواحهم غير المتعلقة بأجسامهم ؛ لءلا يسمعوا سلام من يسلم عليهم ، وكذا ورد أن الأنبياء يلبون ويحجون ، فنبينا – صلى الله عليه وسلم – أولى بهذه الكرامات،
মােল্লা আলী কৃারী নিজ কিতাব ‘জমউল মাসায়েল ফি শরহিশ শামায়েল’ এ বললেন, নিঃসন্দেহে কেউ একথা বলেনি যে, তাঁর কবর তার দেহ থেকে খালি এবং তাঁর রূহের সাথে তার দেহের কোন সম্পর্ক নেই এবং যে কেউ তার উপর সালাম পেশ করে উহা তিনি শুনেন না। তখন এরূপে আম্বিয়াদের প্রসঙ্গে এসেছে যে, নিঃসন্দেহে আম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস সালাম তালবিয়া বলেন এবং হজ্ব করেন। এবং আমাদের হুজুর নবী আকরাম (ﷺ) এর জন্য এই কারামতসমূহ উত্তম পন্থায় প্রমাণিত আছে।
______________________
মোল্লা আলী কারী : জমউল ওসায়েল, ২/৩০০
ইমাম কাসত্বালানী (রহঃ)
وقال القسطلاني في المواهب : وقد ثبت أن الأنبياء يحجون ويلبون. فإن قلت: كيف يصلون ويحجون ويلبون وهم أموات في الدار الآخرة وليست دار عمل؟
فالجواب: أنهم كالشهداء، بل أفضل منهم، والشهداء أحياء عند ربهم يرزقون. فلا يبعد آن يحجوا ويصلوا .
এবং ইমাম কাসত্বালান আল মাওয়াহেব এ বলেন, নিঃসন্দেহে ইহা প্রমাণিত হয়েছে যে, আম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস সালাম হজ্ব করেন এবং তালবিয়া বলেন। যদি ইহা বলা যায় যে, তারা ওফাত পেয়েছেন এবং আখেরাতের ঘরে আছেন, দারুল আমলে নেই। তখন একথার উত্তর এই যে, তাদের অবস্থা শহীদদের ন্যায় বরং তাঁদের চেয়েও উত্তম। যখন শহীদগণ আপন রবের নিকট জীবিত এবং তাদেরকে (তাঁদের মানযোগ্য) খাবার দেয়া হয়, তখন যদি আম্বিয়ায়ে কেরাম আলায়হিমুস্ সালাম হজ্ব করেন এবং নামাজ পড়েন তখন ইহাতে দুর কিসের?
______________________
ক. কসতালানী : আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নী, ২/৬৯৫;
খ. যুরকানী : শরহু মাওয়াহিবুল লাদুন্নী, ৭/৩৬৫-৩৬৬;
আল্লামা মুহাম্মদ আনোয়ার শাহ কাশমিরী (রহঃ)
وقال العلامة محمد انور شاه الكاشميري : واعلم أنه قد تگلمنا مرة في معنى حياة الشهداء والأنبياء عليهم السلام؛ وحاصله: أن الحياة بمعنى أفعال الحياة، وإلا فالأرواح كلها أحيا، ولو كانت أرواح الكفار؛
আল্লামা মুহাম্মদ আনওয়ার শাহ কাশমিরী বললেন, জেনে রাখুন, আমরা প্রথমে নবীদের জীবন এবং শহীদদের জীবন সম্পর্কে আলােচনা করেছি, যার সারমর্ম এই যে, তাদের জীবিত হওয়ার মতলব এই যে, তারা জীবিতদের ন্যায় কার্যাবলী আদায় করেন। অগত্যা রূহ তাে সবগুলাে জীবিত (বরযখে), যদিও কাফিরদের রূহ হােক না কেন?
_______________________
আনোয়ার শাহ কাশমিরী : ফয়যুল বারী, ৩/৪২৫;
লেখক পরিচিতি
===========
শায়খুল ইসলাম ড. মুহাম্মদ তাহিরুল কাদেরী
বর্তমান যুগের প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ শাইখুল ইসলাম ড. মুহাম্মদ তাহের আল-কাদেরী পাকিস্তানের জং শহরে ১৯৫১ সালে জনুগ্রহণ করেন। তিনি পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে এম.এ পরীক্ষায় প্রথম স্থানে পাস করে নতুন এক রেকর্ড স্থাপন করেছেন। তিনি এই সুবাদে গােল্ড মেডেল অর্জন করেন। উল্লেখযােগ্য নাম্বার পেয়ে তিনি একই ইউনিভার্সিটি থেকে এল. এল. বি পাস করেন। ১৯৮৬ সালে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি তাঁকে ‘ইসলামে শাস্তি : এর প্রকার ও দর্শন’ শীর্ষক বিষয়ের ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে।
তিনি মুসলিম বিশ্বের মহান রূহানী ব্যক্তিত্ব, ওলীদর আদর্শ পুরুষ সাইয়িদুনা তাহের আলাউদ্দীন আল-কাদেরী আল-বাগদাদী(রহ) এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছেন। তাঁর কাছ থেকে তরীকত ও তাসাউফ-এর দীক্ষা ও ফায়য অর্জন করেছেন। হযরতের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণের মধ্যে রয়েছেন স্বয়ং তাঁর পিতা ড. ফরীদুদ্দীন কাদেরী, মাওলানা আবদুর রশিদ রেজভী, মাওলানা জিয়াউদ্দীন মাদানী, মাওলানা আহমদ সাঈদ কাযেমী, ড, বােরহান আহমদ ফারুকী এবং শাইখ মুহাম্মদ ইবনে আলভী আল-মালেকী আল মক্কী রহ. এর মতাে প্রখ্যাত আলেমগণ ।
তিনি পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত পুরাে পাকিস্তানব্যাপী ‘উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযােগিতায় প্রথম হয়ে কায়েদে আজম গােল্ড মেডেল’ অর্জন করেছেন। এছাড়াও তিনি অর্জন করেছেন আরাে অনেকগুলি গােল্ড মেডেল।
তিনি পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির এল, এল, বি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। এ ছাড়াও পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির সেন্ট, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য নিবার্চিত হন। তিনি একই সঙ্গে পাকিস্তান শরয়ী আদালতের ফিকহ উপদেষ্টা, পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের উপদেষ্টা, ইসলামি পাঠ্যক্রম জাতীয় কমিটির সদস্য, তাহরীক-ই মিনহাজুল কুরআনের প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক, পাকিস্তান আওয়ামী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সভাপতি, আন্তর্জাতিক ইসলামি সম্মেলনের সহ সভাপতি, আন্তর্জাতিক ইসলামি একতা সংঘের সেক্রেটারী জেনারেল, পাকিস্তান জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য এবং উনিশটি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দলবিশিষ্ট সংঘটন ‘পাকিস্তান আওয়ামী ইত্তেহাদ এর সভাপতি। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন আধুনিক ও প্রচীন জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রখ্যাত বিদ্যাপিঠ ‘মিনহাজুল কুরআন ইউনিভার্সিটি, লাহাের ।
উর্দু আরবি ও ইংরেজী ভাষায় এ পর্যন্ত চার’শর উপরে তাঁর রচিত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে। বিচিত্র বিষয়ে রচিত তাঁর আটশতাধিক গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি প্রকাশের পথে রয়েছে। মানবকল্যাণের কারণে তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক, চিন্তাধারা ও সামাজিক খেদমতকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
নিম্নে আমরা তার কিছু নমুনা পেশ করছি :
১. গবেষণা, রচনা এবং মানবকল্যাণের লক্ষ্যে আত্যন্তিক প্রচেষ্ঠার জন্য দ্বিতীয় মিলিনিয়ামের শেষ প্রান্তে পৃথিবীর পাঁচশত প্রভাবশালী প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২. ‘আমেরিকান বায়ুগ্রফিকেল ইনস্টিটিউট’ (ABI)-এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজের অসাধারণ সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ International Whos Who of Contemporary Achievement ‘সমকালীন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব পুরস্কার’-এর পঞ্চম এডিশনে ড. মুহাম্মদ তাহের আল-কাদেরীর ওপর একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
৩. আমেরিকান বায়ুগ্রাফিকেল ইনস্টিটিউট’(ABI)-এর পক্ষ থেকে পৃথিবীর সবচে’ বড় বেসরকারি শিক্ষাপ্রকল্প বাস্তবায়ন, দুইশ গ্রন্থের লেখক হওয়া, পাঁচ হাজারের অধিক বিষয়ের ওপর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ও সংগঠনে বক্তৃতা উপস্থাপন করা, মিনহাজুল কুরআন আন্দোলন’ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং “দি মিনহাজ ইউনির্ভাসিটি’র চ্যান্সেলর হওয়ার সুবাদে The International Cultural Diploma of Honour আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ডিপ্লোমা অব অনার্স- উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।
৪. ইংল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল বায়ুগ্রাফিক্যাল সেন্টার অব কেম্ব্রিজ- (JBC) এর পক্ষ থেকে শিক্ষা ও সমাজের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী কৃতিত্বের স্বাক্ষর স্থাপনের সুবাদে তাকে The International Man of the Year 1998-99 ‘১৯৯৮-৯৯ সালের আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
৫. বিংশ শত্মব্দিতে জ্ঞানের ক্ষেত্রে অসাধারণ সেবা করার জন্য তাকে Leading Intellectual of the World বিশ্বের মহান বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিত্ব- এর উপাধি প্রদান করা হয়েছে।
৬. শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে তার অদ্বিতীয় খেদমতের জন্য International Who is Who -পক্ষ থেকে Individual Achievement Award ‘অনন্য ব্যক্তিত্ব পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
৭. নজীরবিহীন গবেষণার কারণে (ABI) এর পক্ষ থেকে Key of Success ‘সফলতার চাবিকাঠি’র সম্মানে ভূষিত কার হয়েছে।
৮. বিংশ শতাব্দির International Who is Who এর পক্ষ থেকে Certificate of Recognition যােগ্যতার স্বীকৃতি সনদ প্রদান করা হয়েছে।
সন্দেহাতীতভাবে শাইখুল ইসলাম ড. মুহাম্মদ তাহের আল-কাদেরী একজন ব্যক্তি মাত্র নন; বরং তিনি মুসলিম উম্মার জন্য একটি নতুন যুগের প্রতিষ্ঠাতা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের যােগ্য প্রতিনিধি।