সংক্ষিপ্ত খাসায়েসুল কুবরা
ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) রচিত রাসূলু্ল্লাহ (ﷺ) এর বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী এবং তার জীবনের বিসম্য়কর ঘটনাবলীর উপর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল খাসায়েসুল কুবরা’ থেকে সংকলিত।
নবী (ﷺ) এর সৃষ্টি ও নবুওয়াত সকল নবীদের পূর্বে
● ইমাম ইবনে আবি হাতিম (رحمة الله) তার তাফসীরে এবং আবু নুআইম (رحمة الله) দালায়িলে হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه), হাসান (رضي الله عنه) এবং আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে নিম্নের আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করে-
وَإِذ أَخذنَا من النَّبِيين ميثاقهم
স্মরণ কর! যখন আমি সকল নবীদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম।– সূরা আহযাব:৭
● রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন-
كنت أول النَّبِيين فِي الْخلق وَآخرهمْ فِي الْبَعْث فَبَدَأَ بِهِ قبلهم
আমি সৃষ্টির দিক থেকে নবীদের প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে তাদের শেষ। আর আমার অঙ্গীকারও তাদের অগ্রে।
● ইমাম আহমদ (رحمة الله), বুখারী (رحمة الله) তার ইতিহাসে, তাবরানী (رحمة الله), হাকিম (رحمة الله), বায়হাকী (رحمة الله) এবং আবু নুআইম (رحمة الله) মায়সারাতুল ফজর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম-
يَا رَسُول الله مَتى كنت نَبيا قَالَ وآدَم بَين الرّوح والجسد
“ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি নবী কবে থেকে? নবী (ﷺ) বললেন, যখন আদম (عليه السلام) রূহ ও দেহের মধ্যবর্তী অবস্থায় ছিলেন।”
● ইমাম আহমদ (رحمة الله), হাকিম (رحمة الله) এবং বায়হাকী (رحمة الله) হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি-
إِنِّي عِنْد الله فِي ام الْكتاب لخاتم النَّبِيين وَإِن آدم لَمُنْجَدِل فِي طينته
“আমি আল্লাহ তাআলার নিকট উম্মুল কিতাবে ঐ সময়ও শেষ নবী ছিলাম, যখন আদম (عليه السلام) তার খামিরে ছিলেন।”
আরশে ও জান্নাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নাম
● ইমাম ইবনে আদি (رحمة الله), আসাকীর (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- “মিরাজের রাতে আমি আরশের পায়ায় লিখিত দেখেছি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।”
● ইমাম বাযযার (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন-
“মেরাজের রাতে যখন আমাকে আসমানে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আমি প্রত্যেক আসমানে আমার নাম মুহামাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ দেখতে পেয়েছি।”
● ইমাম দারাকুতনী (رحمة الله) আফরাদে, খতীবে বাগদাদ (رحمة الله), ইবনে আসাকির (رحمة الله) হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন- “মেরাজের রাতে আমাকে ভ্রমণ করিয়ে যখন আরশের নিকট নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আমি সেখানে একটি সবুজ পর্দায় সাদা উজ্জল অক্ষরে লিখা দেখলাম- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।”
● আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه), উমর ফারুক (رضي الله عنه), উসমান যিন নূরাইন (رضي الله عنه), ইবনে আসাকির (رحمة الله) হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন-
مَكْتُوب على بَاب الْجنَّة لَا اله إِلَّا الله مُحَمَّد رَسُول الله
“জান্নাদের দরজায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ লিখা আছে।”
হযরত দাউদ (عليه السلام) এর অংটিতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নাম
● ইমাম উকায়লী (رحمة الله) কিতাবুদ দুআফায় এবং ইবনে আদি (رحمة الله) হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন-
كَانَ نقش خَاتم سُلَيْمَان بن دَاوُد لَا إِلَه إِلَّا الله مُحَمَّد رَسُول الله
“হযরত সুলায়মান বিন দাউদ (عليه السلام) এর আংটির নগীনায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর নকশা করা ছিল।”
হযরত আদম (عليه السلام) এর নিকট রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পরিচয়
● ইমাম আবু নুআইম (رحمة الله) হিলইয়াতে, ইবনে আসাকির (رحمة الله) আতা (رحمة الله) থেকে, তিনি হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন,
“হযরত আদম (عليه السلام) হিন্দে (ভারতবর্ষে) অবতরণ করেন[1] এবং একাকীত্ব ও বিমর্ষতা অনুভব করেন। হযরত জিবরাইল (عليه السلام) অবতরণ করে আযান দেওয়া শুরু করেন। আল্লাহু আকবার, অল্লাহু আকবার। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- দুইবার। আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলুল্লাহ- দুইবার। তখন হযরত আদম (عليه السلام) জিবরাইল (عليه السلام) কে জিজ্ঞাসা করলেন, মুহাম্মদ কে? তিনি বললেন, ইনি আপনার সন্তানদের মধ্যে সর্বশেষ নবী।”
হযরত ইবরাহিম (عليه السلام) এর দুআ এবং ইসা (عليه السلام) এর সুসংবাদ
● ইবনে জারির (رحمة الله) তার তাফসীরে হযরত আবুল আলিয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। যখন ইবরাহিম (عليه السلام) দুআ করলেন-
رَبنَا وَابعث فيهم رَسُولا مِنْهُم
“আমার সন্তানদের মধ্যে হতে একজন রাসূল প্রেরণ করুন।” (সূরা বাকারাঃ১২৯)
তখন তাকে বলা হলো তোমার দুআ কবুল করা হয়েছ। আর তিনি শেষ যুগে আগমন করবেন।”
● ইমাম আহমদ (رحمة الله), হাকিম (رحمة الله) এবং বায়হাকী (رحمة الله) হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন-
انا دَعْوَة أبي إِبْرَاهِيم وَبشَارَة عِيسَى عَلَيْهِمَا السَّلَام
“আমি আমার পিতা ইবরাহিম (عليه السلام) এর দুআ এবং ইসা (عليه السلام) এর সুসংবাদ।”
● ইবনে আসাকির (رحمة الله) হযরত উবাদা ইবনুস সামিত (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। কেউ আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনার ব্যাপারে কিছু বলেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ।
انا دَعْوَة أبي ابراهيم وَكَانَ آخر من بشر بِي عِيسَى بن مَرْيَم عَلَيْهِمَا الصَّلَاة وَالسَّلَام
“আমি আমার পিতা ইবরাহিম (عليه السلام) এর দুআ। আর যারা আমার অগমনের সুসংবাদ দিয়েছেন তাদের মধ্যে সর্বশেষ হযরত ইসা (عليه السلام)।”
তাওরাত ও ইঞ্জিলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর গুণাবলী
● ইবনে সাদ (رحمة الله), হাকীম (رحمة الله), বায়হাকী (رحمة الله) এবং আবু নুআইম হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-
مَكْتُوب فِي الانجيل لَا فظ وَلَا غليظ وَلَا صخاب فِي الاسواق وَلَا يَجْزِي بِالسَّيِّئَةِ مثلهَا وَلَكِن يعْفُو ويصفح
ইঞ্জিলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর গুণাবলী এভাবে উল্লেখ হয়েছে- “তিনি না মন্দ চরিত্রের, না বদ মিজায, না কঠোর স্বভাবসম্পন্ন। আর না তিনি বাজারে ঘুরাফিরা করেন। আর না মন্দের প্রতিদান মন্দ দিয়ে দেন বরং ক্ষমা ও মার্জনার আচরণ করেন।”
● ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এবং আবু নুআইম (رحمة الله) হযরত উম্মু দারদা (رضي الله عنه) যিনি আবু দারদা (رضي الله عنه) এর স্ত্রী ছিলেন, তার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি কাব (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করলাম,
“আপনি তাওরাতে নবী (ﷺ) এর গুণাবলী কিরুপ পেয়েছেন? তিনি বললেন- আমি তাওরাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর গুণাবলী এমন পেয়েছি- তিনি আল্লাহর রাসূল আর তার নাম মুতাওয়াককিল (আল্লাহর উপর ভরসাকারী)। তিনি না মন্দ চরিত্রের, না বদ মিজায, না কঠোর স্বভাবসম্পন্ন। আর না তিনি বাজারে ঘুরাফিরা করেন। তাকে (কল্যাণের) খাযানাহ দান করা হয়েছে। যাতে আল্লাহ তাআলা তার মাধ্যমে অন্ধকে পথ দেখাবেন, বধিরকে শ্রবণ করাবেন এবং বিপথগামীদেরকে পথে আনবেন। এমনকি সবাই,
لَا إِلَه إِلَّا الله وَحده لَا شريك لَهُ
এর সাক্ষ্য প্রদান করবে। তিনি উৎপীড়িতদেরকে সাহায্য করবেন এবং দুর্বলদের সহায় হবেন।”
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সহনশীলতা ও তার পরীক্ষা
● তাবরানী (رحمة الله), ইবনে হিব্বান (رحمة الله), হাকীম (رحمة الله), বায়হাকী (رحمة الله) এবং আবু নুআইম (رحمة الله) আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন,
“আল্লাহ তাআলা যখন হযরত যায়দ বিন সানআর হিদায়াতের ইচ্ছা করলেন তখন তিনি বললেন, যখন আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর চেহারা মোবারক দেখলাম তখন নবুওয়াতের আলামতের কোন আলামত দেখাই বাকী রইল না। শুধুমাত্র দুইটি ব্যতীত। এক: অপরের মূর্খতার উপর তার সহনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়া। দুই: অপরের মূর্খতা যত বৃদ্ধি পাবে তার সহনশীলতাও তত বৃদ্ধি পাবে।
অতএব আমি তার এই গুণ পরীক্ষা করার জন্য নম্রতার আচরণ করে তার সাথে এক লেনদেন করি, যাতে পরে চুক্তির বিপরীত করে তার সহনশীলতা পরীক্ষা করতে পারি। অতএব আমি তার সাথে অগ্রিম খেজুড় ক্রয়ের চুক্তি করে মূল্য পরিশোধ করে দিলাম আর আমাকে খেজুড় পরিশোধের তারীখের দুই একদিন আগে গিয়েই হাজির হলাম এবং তার জামা ও চাদর ধরে তাকে ক্রোধের স্বরে বললাম- হে মুহাম্মদ! তুমি কি আমার হক আদায় করবে না? তোমরা আব্দুল মুত্তালিবের পরিবার, লেনদেনে টালাবাহানা করাই তোমাদের অভ্যাস। লেনদেনে তোমরা বেপরোয়া, আমি আগেই জানতাম।
আমার এই কথাবার্তা শুনে হযরত উমর (رضي الله عنه) বললেন, হে আল্লাহর দুশমন! তুই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে এভাবে কথা বলিস। যদি আমার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সম্মানের পরোয়া না থাকত তবে তলোয়ার দিয়ে তোর গর্দান উড়িয়ে দিতাম।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত উমর (رضي الله عنه) এর দিকে গম্ভীর দৃষ্টি দিয়ে মুচকী হাসলেন এবং বললেন- হে উমর! আমি আর সে তোমার এই ব্যবহার ছাড়া অন্য ব্যবহারের যোগ্য। তুমি আমাকে উত্তমভাবে দাবি পরিশোধ করতে বলতে আর তাকে ভদ্রভাবে দাবি করতে বলতে। অতএব এখন যাও! তার দাবি পূর্ণ কর আর অতিরিক্ত আরো বিশ সা’ তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রদান কর। কননা তুমি তাকে কথা শুনিয়েছ, হতে পারে এতে সে মনমরা হবে না।
উমর (رضي الله عنه) রাসূলের আদেশ পূর্ণ করল। তখন আমি বললাম, হে উমর! আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়াতের সকল আলামত চিনে নিয়েছিলাম। শুধু দুটি বাকী ছিল। এক: অপরের মূর্খতার উপর তার সহনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়া। দুই: তার সাথে মূর্খতার আচরণ যত বৃদ্ধি পাবে তার সহনশীলতাও তত বৃদ্ধি পাবে। এখন আমি এই দুটি নিদর্শনও চিনে নিলাম। অতএব আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে- আমি আল্লাহকে প্রতিপালক, ইসলামকে দীন এবং মুহাম্মদ (ﷺ) নবী হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বিজয়
● ইমাম আবু নুআইম (رحمة الله) ইউসুফ ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে এবং তিনি তার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি যতগুলো (আসমানী) কিতাব পাঠ করেছি তার প্রত্যেকটির মধ্যেই ছিল যে, মক্কায় একটি পতাকা সমুন্নিত হবে। তার সাথে থাকবেন আল্লাহ আর তিনি আল্লাহর সাথে থাকবেন। আর তাকে আল্লাহ সকল শহরের উপর বিজয় দান করবেন।
রাহমাতুল লিল আলামীন
● ইমাম ইবনে মুনদাহ (رحمة الله) হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন-
بَعَثَنِي الله هدى وَرَحْمَة للْعَالمين وبعثني لأمحو المزامير وَالْمَعَازِف
আমাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য হিদায়াত ও রহমতরুপে প্রেরণ করা হয়েছে, আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে যাতে আমি গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র মিটিয়ে ফেলি।
তখন আউস ইবনে সামআন (رضي الله عنه) বললেন, কসম সেই সত্তার যিনি আপনাকে রাসূলরুপে প্রেরণ করেছেন, আমি তাওরাতে এমনই পড়েছি।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে ইসা (عليه السلام) এর সমাধি
● ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন আর তিনি এটাকে হাসান বলেছেন। তিনি বলেন-
مَكْتُوب فِي التَّوْرَاة صفة مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَعِيسَى بن مَرْيَم يدْفن مَعَه
তাওরাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর গুণাবলী বর্ণিত আছে। আর (শেষ যুগে) ইসা (عليه السلام) নবী (ﷺ) এর সাথে সমাহিত হবেন।
বাদশাহ নাজ্জাশীর সহচরদের স্বীকৃতি
● ইমাম আবুশ শায়খ (رحمة الله) তার তাফসীরে হযরত সাঈদ ইবনে যুবায়র (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। বাদশাহ নাজ্জাশীর কয়েকজন সহচর তাকে বলেন, আমাদেরকে অনুমতি দিন যে আমরা সেই সম্মানিত নবীর নিকট যাব, যার আলোচনা আমরা আমাদের আসমানী কিতাবে পেয়েছি। অতএব সেমতে তারা সেখানে যান এবং সত্য দীনে প্রবেশ করেন।”
মদীনার চল্লিশটি নাম
● কাসিম ইবনে মুহাম্মদ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-
بَلغنِي أَن للمدينة فِي التَّوْرَاة أَرْبَعِينَ اسْما
“আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, তাওরাতে পবিত্র মদীনার চল্লিশটি নাম বর্ণনা করা হয়েছে।”
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আবির্ভাবের পূর্বে খ্রিষ্টান-ইহুদি আলিম ও সন্ন্যাসীদের ঘটনাবলী
হযরত সালমান (رضي الله عنه) এর ঘটনা
● ইমাম তাবরানী (رحمة الله), আবু নুআইম (رحمة الله) হযরত শুরাহবিল (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত সালামান (رضي الله عنه) বলেন- আমি সত্য দীনের অনুসন্ধানে বের হয়ে পড়লাম। যখন আমি আহলে কিতাবদের সন্ন্যাসীদের সাথে সাক্ষাৎ করলাম, তখন তারা সবাই এই বিষয়ে একমত ছিলেন যে, এটাই সেই যুগ, যে যুগে আরব ভূমিতে একজন নবী আগমন করবেন। সেই নবীর অনেক গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এটাও একটা বৈশিষ্ট্য যে, তার উভয় কাঁধের মাঝখানে একটি চিহ্ন থাকবে যেটি হলো মোহরে নবুওয়াত। আমি (এটা শুনে) আরব ভূমিতে পৌছে গেলাম। অতঃপর নবী (ﷺ) এর আবির্ভাব ঘটল, আর সন্ন্যাসীরা যেসব গুণাবলী বর্ণনা করেছিল সেই সমস্ত গুণাবলী তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল। আর যখন আমি মোহরে নবুওয়াত প্রত্যক্ষ্য করলাম তখন সাক্ষ্য দিলাম-
لَا إِلَه إِلَّا الله وَأَن مُحَمَّد رَسُول الله
আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল।”
● ইবনে সাদ (رحمة الله) এবং আবু নুআইম (رحمة الله) হযরত আবু উসমান নাহদী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। হযরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) বলেন- আমি আমার মালিকের সাথে খেজুড়ের পাঁচশত চারা লাগানোর উপর চুক্তিবদ্ধ হলাম যে, যখন তার ফলন ধরবে তখন আমি আযাদ। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আগমন করলেন এবং সব চারা তিনি নিজ হাতে রোপন করলেন আর একটি আমি রোপন করলাম। তার রোপনকৃত সবগুলোই ফলবান হলো কিন্তু আমারটি ফলবান হলো না।
নবী (ﷺ) এর আগমনের পূর্বে ইহুদীদের দুআ
● ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এবং আবু নুআইম (رحمة الله) আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন- ইহুদীরা দুআ করত-
اللَّهُمَّ ابْعَثْ لنا هَذَا النَّبِي يحكم بَيْننَا وَبَين النَّاس
হে আল্লাহ! আমাদের প্রতি এই (শেষ) নবীকে প্রেরণ করুন, যিনি আমাদের মাঝে ও অন্য মানুষের মাঝে মীমাংসা করবেন।
● ইমাম হাকীম (رحمة الله) এবং বায়হাকী (رحمة الله) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, খায়বরের ইহুদি এবং আতফান গোত্রের মধ্যে শত্রুতা ছিল। আর ইহুদীরা তাদের নিকট সবসময় পরাজিত হত। অতএব তারা এই বলে দুআ করল-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلك بِحَق مُحَمَّد النَّبِي الْأُمِّي الَّذِي وعدتنا ان تخرجه لنا فِي آخر الزَّمَان أَلا نصرتنا عَلَيْهِم
হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট প্রতিশ্রুত উম্মী নবী মুহাম্মদ (ﷺ) যিনি শেষ যুগে আবির্ভূত হবেন- তাকে আমাদের মধ্যে প্রেরণ করুন এবং তার উসিলায় আমাদেরকে সাহায্য করুন।” এরপর থেকে তাদের মধ্যে যখন মুকাবিলা হত তখন ইহুদীরা জয়লাভ করত এবং আতফান গোত্র পরাজয় বরণ করতে। পরে যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবির্ভূত হলেন, তখন এই ইহুদীরাই তার সাথে কুফরী করল। যার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাযিল করলেন-
وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ
ইতোপুর্বে তারা ঐ নবীর উসিলায় কাফিরদের বিরুদ্ধে বিজয় কামনা করত। (সূরা বাকারা: ৮৯)
নবী (ﷺ) এর আগমনের পূর্বে আরবরা বাচ্চাদের নাম মুহাম্মদ রাখত
● ইবনে সাদ (رحمة الله) সাঈদ ইবনে মুসায়িব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আরবের লোকেরা আহলে কিতাব এবং অতীন্দ্রিয়বাদীদের নিকট থেকে শুনত যে, আরবে একজন নবী আবির্ভূত হবেন, যার নাম হবে মুহাম্মদ। তখন আরবের লোকদের মধ্যে যে-ই এটা শুনত সেই নবুওয়াতের আকাঙ্ক্ষায় তার পুত্রের নাম মুহাম্মদ রাখত।
ইবনে সাদ কাতাদাহ আস সাকান আল উরফী থেকে বর্ণনা করেন। বনু তামীমে এক ব্যক্তি ছিল, যার নাম ছিল মুহাম্মদ ইবনে সুফিয়ান মুজাশী। কেননা একজন পাদ্রী তার পিতাকে বলেছিল, আরবদের মধ্যে একজন নবী হবেন, যার নাম হবে মুহাম্মদ। অতএব তারা তার পুত্রেরে নাম মুহাম্মদ রেখে দেন।
ইহুদীদের বিদ্বেষ
● ইবনে সাদ (رحمة الله), আবু নুআইম (رحمة الله) এবং ইবনে আসাকির (رحمة الله) আবী নুমলা (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বনী কুরায়যার ইহুদীরা তাদের বাচ্চাদেরকে তাদের কিতাবে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আলোচনার পাঠ দান করতেন এবং তার গুণাবলীর তালিম দিতেন। আর তারা আরো বলতেন তার নাম এবং তার হিজরতের স্থান মদীনার কথা। এপর যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আবির্ভূত হলেন তখন তারা হিংসা করতে লাগল এবং তাকে অস্বীকার করল।
পাথরের আড়াল থেকে নবী (ﷺ) এর আগমনের কথা ভেসে এলো
● আবু নুআইম (رحمة الله) যিয়াদ ইবনে লাবিদ (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি মদীনার টিলাসমূহের এক টিলার মধ্যে ছিলেন। তখন তিনি শুনতে পেলেন যে, হে ইয়াসরিবের অধিবাসীগণ! বনী ইসরাইলের মধ্য থেকে নবুওয়াত শেষ হয়ে গেছে। কেননা আহমদের আগমনের তারকা উদিত হয়ে গেছে। তিনি নবীদের মধ্যে সর্বশেষ নবী এবং তিনি ইয়াসরিবে (মদীনায়) হিজরত করবেন।