ফরযের সংজ্ঞা ও হুকুমঃ
————————
যে কাজ আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে সুনিশ্চিতরূপে করার আদেশ করা হয়েছে তাকে ফরয (অবশ্য করনীয়/ বাধ্যতামূলক) বলে। যেমনঃ কালিমা, নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি।
ফরযের প্রকারভেদঃ
ফরয দু’প্রকার। যথাঃ ফরযে আইন ও ফরযে কিফায়া।
ফরযে আইনঃ- ঐ ফরযকে বলে, যে কাজ প্রত্যেক বালেগ, বুদ্ধিমান নর-নারীর উপর সমভাবে ফরয। যেমনঃ ৫ ওয়াক্ত নামায পড়া, আবশ্যক পরিমাণে ইলমে দ্বীন (ধর্মীয় শিক্ষা) অর্জন করা ইত্যাদি।
ফরযে কিফায়াঃ- ঐ ফরযকে বলে, যা কতক লোক পালন করলে সকলেই গোনাহ থেকে বেঁচে যাবে। আর যদি কেউ পালন না করে তবে সকলেই ফরয তরকের জন্য গোনাহগার হবে। যেমনঃ জানাজার নামায পড়া, মৃত ব্যক্তিকে কাফন-দাফন করা ইত্যাদি।
ফরযের হুকুমঃ-
ফরয কাজ না করলে তাকে ফাসিক (পাপী) বলা হবে এবং আখিরাতে সে শাস্তির উপযোগী হবে। ফরয অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যাবে।
ওয়াজিবের সংজ্ঞা ও হুকুমঃ
—————————-
শরীয়তের যে সকল হুকুম দলিলে যন্নী দ্বারা প্রমাণিত সেগুলোকে ওয়াজিব বলা হয়। ওয়াজিব কাজ ফরযের মতই অবশ্য কর্তব্য। ফরয ছেড়ে দিলে যেমন ফাসিক ও গোনাহগার হয়ে যায়, ওয়াজিব ছেড়ে দিলেও তেমনি ফাসিক হতে হয় এবং শাস্তির উপযুক্ত হতে হয়। তবে পার্থক্য এতটুকু যে, ফরয অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যাবে কিন্তু ওয়াজিব অস্বীকার করলে কাফির
হবে না, ফাসিক হবে। যেমন; বিতরের নামায ইত্যাদি।
সুন্নতের সংজ্ঞা ও হুকুমঃ
—————————
যে কাজ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বা তাঁর সাহাবাগণ করেছেন তাকে ‘সুন্নত’ বলে।
সুন্নত দু’প্রকারঃ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এবং সুন্নতে গাইরে মুয়াক্কাদাহ।
সুন্নতে মুয়াক্কাদাহঃ- যে কাজ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অথবা তাঁর সাহাবাগণ সবসময়ে করেছেন, বিনা ওযরে (কারণে) কোন সময় ছাড়েন নাই তাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলে। যেমনঃ আযান, ইকামত, খাতনা, নিকাহ(বিবাহ) ইত্যাদি। সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ না করলে গোনাহ হয়।
সুন্নতে গাইরে মুয়াক্কাদাহঃ- যে কাজ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বা তাঁর সাহাবাগণ করেছেন কিন্তু ওজর ছাড়াও কোন কোন সময় ছেড়ে দিয়েছেন, তাকে সুন্নতে গাইর মুয়াক্কাদাহ বলে। সুন্নতে গাইর মুয়াক্কাদাহ করলে সওয়াব আছে কিন্তু না করলে গোনাহ নেই।
মুস্তাহাবের সংজ্ঞা ও হুকুমঃ
——————————
যে কাজ রাসূলুল্লাহ (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ করেছেন কিন্তু অধিকাংশ সময় করেন নাই, কোন কোন সময় করেছেন তাকে ‘মুস্তাহাব’ বলে। এটা করলে সওয়াব আছে , না করলে গোনাহ বা আযাব নেই। মুস্তাহাবকে নফল, মুবাহ বা মন্দূবও বলা হয়।
মাকরূহের সংজ্ঞা ও হুকুমঃ
—————————
মাকরূহ শব্দের অর্থ অপছন্দনীয়। যে সকল কাজ শরী’আতে অপছন্দনীয় বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে সেগুলোকে মাকরূহ বলে।
মাকরূহের প্রকারভেদঃ
———————–
মাকরূহ দু’প্রকারঃ মাকরূহে তাহরীমী ও মাকরূহ তানযীহী।
মাকরূহে তাহরীমীঃ-
ইহা ওয়াজিবের বিপরীত। মাকরূহ তাহরীমী অস্বীকার করলে কাফির হবে না; তবে ফাসিক হবে। কোন ব্যাক্তি যদি বিনা ওযরে মাকরূহ তাহরীমী কাজ করে তাহলে সে ফাসিক বলে গণ্য হবে এবং আখিরাতেও আযাবের উপযুক্ত হবে।
মাকরূহ তানযীহীঃ-
ইহা হচ্ছে ঐ সকল কাজ যা না করলে সওয়াব আছে কিন্তু করলে গোনাহ নেই। ফিকাহর কিতাবে যদি শুধুমাত্র মাকরূহ শব্দ থাকে, তাহলে তাঁর অর্থ হচ্ছে মাকরূহ তাহরীমী। মাকরূহ তানযীহী হলে
সেখানে উল্লেখ থাকে।
হারামের সংজ্ঞা ও হুকুমঃ
————————–
হারাম ফরযের বিপরীত। যদি কেউ হারাম অস্বীকার করে (অর্থাৎ যদি কেউ হারাম কাজকে হালাল এবং জায়েয মনে করে) তবে সে কাফির হয়ে যাবে, অস্বীকার না করলে ফাসিক হবে। যেমনঃ নামায না পড়া, মিথ্যা কথা বলা ইত্যাদি।






Users Today : 430
Users Yesterday : 767
This Month : 14852
This Year : 186723
Total Users : 302586
Views Today : 42014
Total views : 3618757