হজরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, একদা রসুলেপাক (ﷺ) তাঁর মুঠির ভিতর কিছু পাথর দানা নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো তাঁর হাতের ভিতর থেকে তসবীহ পাঠ করা শুরু করলো। তসবীহ পাঠের আওয়াজ আমরাও শুনতে পেলাম। তিনি পাথরগুলো হজরত আবু বকর সিদ্দিকের হাতে দিলেন। তখনও তসবীহর পাঠ চলছিলো। এরপর ওগুলো যখন আমার হাতে নিলাম, তখন তসবীহ পাঠ বন্ধ হয়ে গেলো। আশশেফা কিতাবে এ ধরনের হাদীছ হজরত আবু যর গিফারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, হজরত ওমর ও হজরত ওছমানের হাতে যাওয়ার পরও পাথরগুলো তসবীহ পাঠ করেছিলো।
উক্ত ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া কিতাবে এভাবে প্রদান করা হয়েছে- ওলীদ ইবনে সুওয়ায়দ বর্ণনা করেন, বনী সালেম গোত্রের এক বৃদ্ধ হজরত আবু যর (رضي الله عنه) এর ঘরে এলেন। তিনি হজরত আবু যর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন- তিনি বলেন, আমি দুপুরবেলা রসুলেপাক (ﷺ) এর খেদমতে হাজির হলাম। তখন তাঁর নিকট আর কেউ ছিলেন না। আমি দেখলাম, রসুল (ﷺ) এর উপর ওহীর হাল জারি হচ্ছে। আমি সালাম প্রদান করলাম। রসুলেপাক (ﷺ) সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, হে আবু যর! কী প্রয়োজনে তুমি এখানে এসেছো? আমি বললাম, আল্লাহ্ ও তাঁর রসুলই তো ভালো জানেন। তিনি বললেন, বসো! আমি তাঁর পাশে বসে পড়লাম। এরপর আমি কিছু জিজ্ঞেস করলাম না, তিনি (ﷺ)ও আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। নীরবতা বিরাজ করছিলো। হজরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) এলেন। তিনিও সালাম পেশ করলেন। রসুলেপাক (ﷺ) সালামের জবাব দিয়ে বললেন, কী প্রয়োজনে এসেছো?
হজরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) বললেন, আমাকে আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্র রসুল নিয়ে এসেছেন। রসুলেপাক (ﷺ) তাঁকে হাতের ইশারায় বসে যেতে বললেন। তিনি রসুলেপাক (ﷺ) এর সামনাসামনি বসে পড়লেন। এবার এলেন হজরত ওমর (رضي الله عنه)। তাঁর সঙ্গেও এধরনের কথোপকথন হলো। তিনি হজরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর পাশে বসে পড়লেন। এরপর এলেন হজরত ওছমান (رضي الله عنه)। তিনি হজরত ওমর (رضي الله عنه) এর পাশে বসে পড়লেন। এরপর রসুলেপাক (ﷺ) পাথরের সাত কি নয়টি টুকরা অথবা এর কমবেশী হতে পারে, স্বীয় হাত মোবারকের ভিতর তুলে নিলেন। তখন পাথরের টুকরোগুলো হাতের ভিতর থেকে এতো জোরে তসবীহ পাঠ করতে লাগলো যে, আমরা মৌমাছির গুঞ্জনের মতো তাদের আওয়াজ শুনতে পেলাম। এরপর রসুলেপাক (ﷺ) পাথরদানাগুলো হজরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) এর হাতে দিলেন- আমার হাতে দিলেন না- সেগুলো হজরত আবু বকর সিদ্দীকের হাতের ভিতরও তসবীহ পাঠ করছিলো। এরপর যখন সেগুলোকে হজরত আবু বকরের হাত থেকে নিয়ে মাটিতে রেখে দিলেন, তখন তাদের তসবীহ পাঠ বন্ধ হয়ে গেলো। এরপর হজরত ওমরের হাতে পাথরগুলো দেয়া হলো। তখন সেগুলো ওরকম তসবীহ পাঠ করতে লাগলো হজরত আবু বকর সিদ্দীক (رضي الله عنه) এর হাতের ভিতর যেরকম করেছিলো। তারপর হজরত ওছমান (رضي الله عنه) এর হাতে দেয়া হলে তারা পূর্বের মতো তসবীহ পাঠ করতে লাগলো। যখন মাটিতে রাখা হলো, তখন চুপ হয়ে গেলো। হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বাযযার (رحمة الله)। তিবরানী (رحمة الله) করেছেন আওসাত কিতাবে। ইমাম বায়হাকী যুহরী (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিবরানীর বিবরণে আছে, আবু যর (رضي الله عنه) বলেছেন, পাথরগুলো আমার হাতে দেওয়া হলে তসবীহ পাঠ আর শোনা গেলো না। এরকম বর্ণনা মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়াতেও রয়েছে। রওজাতুল আহবাব কিতাবে আবু শাকুর সালমী থেকে বর্ণনা করা হয়েছে, হজরত আলী মুর্তজা (رضي الله عنه)ও সেই মজলিশে উপস্থিত ছিলেন এবং তার হাতেও পাথরগুলো তসবীহ পাঠ করেছিলো।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]