স্বপ্ন সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। এক প্রকার, যাকে কোরআন মজীদে আদগাছে আহলাম বলা হয়েছে, যার অর্থ মিথ্যা ও বাজে স্বপ্ন। জাগ্রত অবস্থায় অলস ও কুচিন্তাযুক্ত মাথা থেকে যেমন বাজে খেয়াল ও বাজে পেরেশানী জন্ম
নেয়, স্বপ্নেও ওই রকমই হয়ে থাকে। এ জাতীয় স্বপ্ন কোনো ধর্তব্য বিষয় নয়। এগুলোর কোনো তাবীর হয় না। অধিকাংশ সময় এ জাতীয় স্বপ্ন শয়তান দেখিয়ে থাকে। দর্শনকারীকে চিন্তিত করে তোলাই শয়তানের উদ্দেশ্য।
যেমন, কোনো ব্যক্তি দেখলো তার মস্তক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন অথবা দুশমন দ্বারা সে আক্রান্ত হচ্ছে, অথবা কোনো ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে, তা থেকে সে কোনোক্রমেই উদ্ধার পাচ্ছে না ইত্যাদি। এগুলো শয়তান কর্তৃক প্রদর্শিত দুঃস্বপ্ন।
মুসলিম শরীফে হজরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে, এক বেদুইন রসুলে করীম (ﷺ) কে বললো, হে আল্লাহর রসুল! আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমার মাথা কাটা হয়েছে। রসুলেপাক (ﷺ) বললেন, স্বপ্নে শয়তান তোমার সঙ্গে কৌতুক করেছে। একথা কাউকে বলো না।
এজাতীয় স্বপ্নগুলো এরকম- যেমন কেউ দেখলো, কোনো ফেরেশতা তাকে একটি হারাম কাজ করার হুকুম দিচ্ছে। অথবা এমন হুকুম দিচ্ছে, যা তার পক্ষে করা সম্ভব নয়। অথবা জাগ্রত অবস্থায় যে কোনো একটি অসম্ভব বিষয় নিয়ে সে চিন্তা করেছিলো, স্বপ্নে সে তাই দেখতে পেয়েছে। অথবা মানুষের মধ্যে যে চারটি মৌলিক পদার্থ রয়েছে তার কোনো একটি প্রবল হলে সেটাকেই সে স্বপ্নযোগে দেখে থাকে।
কোনো মানুষের দেহে জলীয় ভাগ বেশী থাকলে সে স্বপ্নে পানি দেখতে পায়। কারও দেহে যদি হরিদ্রা ভাব বেশী থাকে, সে স্বপ্নে আগুন অথবা হলুদ রঙ দেখে থাকে। লৌহকণিকা বেশী থাকলে, লাল বর্ণ দেখে। কৃষ্ণতার প্রাবল্য থাকলে দেখে কালো রঙ অথবা কালো অন্ধকার। এজাতীয় সমস্ত স্বপ্নই উপেক্ষণীয়।
স্বপ্নের দ্বিতীয় প্রকার, যাকে বলা হয় রুইয়া সাদেকা, যেমন আম্বিয়া কেরামের স্বপ্ন এবং সুলাহায়ে উম্মত অর্থাৎ উম্মতের নেককার লোকদের স্বপ্ন। রুইয়া সাদেকা ছাড়াও তার আরও দুটি নাম রয়েছে- রুইয়া সালেহা এবং রুইয়া হাসানা। বাহ্যতঃ সবগুলোর অর্থ একই। কিন্তু কোনো কোনো লোক এগুলোর মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করে থাকেন। যেমন যে স্বপ্ন সত্য, তাকে সাদেকা বলা হয়। আর হৃদয়ের বাসনা অনুসারে যে স্বপ্ন দেখা হয় তাকে সালেহা বা হাসানা বলা হয়। আম্বিয়া কেরাম এবং নেককার লোকদের স্বপ্ন সাধারণত আখেরাতের বিষয়াদির সাথে সম্পর্ক রাখে। দুনিয়াবী ব্যাপারে দৃষ্ট স্বপ্ন বিস্ময়কর হয়, তবে মনের আশানুরূপ নাও হতে পারে। যেমন রসুলেপাক (ﷺ) উহুদযুদ্ধের সময় স্বপ্নে দেখেছিলেন, তিনি গরু যবেহ করছেন। যবেহ করার পর তলোয়ারের দিকে যখন নযর করলেন, দেখলেন তা ভাঙা। রসুলেপাক (ﷺ) গরু যবেহ করার তাবীর করেছিলেন, সাহাবা কেরামের কেউ কেউ শহীদ হচ্ছেন। আর ভাঙা তলোয়ার দেখার তাবীর করেছিলেন, আহলে বাইতের শহীদ হবেন একজন। তাই হয়েছিলো। ওই যুদ্ধে হজরত হামযা (رضي الله عنه) শহীদ হয়েছিলেন।
স্বপ্নদ্রষ্টারা সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকে। ১. যাদের অবস্থা আচ্ছন্ন – সত্য, মিথ্যা উভয় দিকই তাদের মধ্যে থাকতে পারে। ২. ফাসেক ফাজের ব্যক্তি – বিক্ষিপ্ত চিন্তা, কুকামনা ও বদ্ খেয়াল যাদের মধ্যে প্রবল। তাদের স্বপ্নে মিথ্যার দিক প্রবল থাকে। সত্যের দিক অতি দুর্লভ। ৩. কাফের ব্যক্তি, তার স্বপ্নে সত্যের লেশ নেই বললেই চলে। অবশ্য তাদের স্বপ্ন কোনো কোনো সময় সত্য হয়। যেমন হজরত ইউসুফ (عليه السلام) এর সঙ্গে জেলখানায় যে দুজন কয়েদী ছিলো, তাদের স্বপ্ন। তাছাড়া ওই সময়ের বাদশাহ্র স্বপ্ন।
হাদীছ শরীফে এসেছে, শেষ রাত্রের স্বপ্ন বেশী সত্য হয়। আহলে এলেমগণ বলে থাকেন, রাতের প্রথম দিকের স্বপ্ন দেরীতে ফলে। দ্বিতীয়ার্ধের স্বপ্ন কখনও সত্য হয়। আবার কখনও মিথ্যা হয়। কখনও তাড়াতাড়ি ফলে। আবার কখনও
দেরীতে ফলে। শেষ রাত্রের স্বপ্ন খুব তাড়াতাড়ি ফলে থাকে। বিশেষ করে সুবেহ সাদেকের স্বপ্ন।
ইমাম জাফর সাদেক (رحمة الله) বলেছেন, দুপুরে কায়লুলার সময়ের স্বপ্ন অত্যন্ত দ্রুত বাস্তবায়িত হয়। মোহাম্মদ ইবনে শিরীন, যিনি স্বপ্নবিশারদ রূপে খ্যাত, তিনি বলেছেন, দিবাভাগের স্বপ্ন রাতের স্বপ্নের মতোই। মেয়েদের স্বপ্নের তাবীর পুরুষদের মতোই। কেউ কেউ বলেছেন, নারীরা যদি এমন কোনো স্বপ্ন দেখে, যা তার যোগ্য নয়, তাহলে মনে করতে হবে, তা তার স্বামীর ক্ষেত্রে ঘটবে। ঠিক তেমনি কোনো গোলাম যদি এমন স্বপ্ন দেখে, যা তার যোগ্য নয়, তাহলে মনে করতে হবে তা তার মনীবের। তেমনি ছেলে মেয়েদের স্বপ্ন তাদের পিতা মাতার বেলায় গ্রহণীয় হবে। ওয়াল্লাহু আ’লাম।
➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]