সত্য স্বপ্নের মুহূর্ত

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

হাদীছ  শরীফে এসেছে,  সবচেয়ে সত্য স্বপ্ন  হচ্ছে সুবেহ সাদেকের স্বপ্ন। হাদীছটি  তিরমিযী এবং দারেমী বর্ণনা করেছেন। মুসলিম  শরীফে হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুল করীম (ﷺ) বলেছেন, যখন সময়ের দু’টি অংশ  পরস্পর মিলিত হয়, মুসলমানের সে সময়ের স্বপ্ন মিথ্যা হয় না। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বেশী সত্যবাদী তার স্বপ্ন সমধিক সত্য। সময়ের দুই অংশ মিলিত হওয়া সম্পর্কে দুটি মত রয়েছে। তন্মধ্যে একটি এই যে, রাত্রি এবং দিন যখন মিলিত হয়।

আগুন,পানি, মাটি ও বাতাস- এই চারটি মৌলিক পদার্থের দ্বারা মানুষের দেহ তৈরী।  এই চারটি জিনিসের প্রত্যেকটি এই মুহূর্তে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে। স্বপ্নবিশারদগণের  মতও এই রকম। তাঁরা বলেন, রাত্রি ও দিনের মধ্যে স্বাভাবিকতার যে মুহূর্তটি, সে মুহূর্তের  স্বপ্ন সত্য হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্য একটি প্রশ্ন করা যেতে পারে, স্বাভাবিকতার মুহূর্তকে স্বপ্নের জন্য নির্দিষ্ট করার হেতু  কী? আবহাওয়া, পরিবেশ বা মুহূর্তের স্বাভাবিকতার কারণে যদি মানুষের উপর তার কোনো প্রভাব পড়ে, তাহলে তো কাফেরের উপরও পড়তে পারে। তাই বলে  কি সে মুহূর্তে কোনো কাফের স্বপ্ন দেখলে তা সত্য হবে এবং তাকে

নবুওয়াতের ছেচলিশ্ল    ভাগের একভাগ বলে আখ্যায়িত করা যাবে? উত্তর এই যে, কাফেরদের অবস্থা এ প্রসঙ্গে ধর্তব্যের বাইরে। তাদের দেখা স্বপ্নকে সত্য বলা বা মনে করা নিষিদ্ধ। শরীয়তই এ ব্যাপারে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আর দ্বিতীয় মতটি এই যে, সময়ের মিলন কথাটির তাৎপর্য কিয়ামতের নিকটবর্তী কাল। এই মতটির  সমর্থনে তিরমিযী শরীফের হাদীছ পাওয়া যায়, আখেরী জামানার মুসলমানগণের স্বপ্ন মিথ্যা হবে না।

বান্দা মিসকীন শায়েখ আবদুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী বলেন, আমি আমার কোনো কোনো মাশায়েখ থেকে শুনেছি, তাঁরা এই সময় বলতে মৃত্যুর কাছাকাছি সময়কে  বুঝিয়েছেন। কেউ বলেছেন, ইমাম মেহদী (عليه السلام) এর আগমনের সময়। তখন হবে আদল ও ইনসাফের সময়। তখন মানুষের শান্তি, নিরাপত্তা ও রিযিকের খায়ের বরকত হবে। কাজেই মানুষের মনে আনন্দ ও প্রফুলতা বিরাজ করবে।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, হজরত ঈসা (عليه السلام) এর আগমনের পর দাজ্জালের সঙ্গে মোকাবেলা করে দাজ্জাল ও তার অনুসারীদেরকে ধ্বংস করে দেয়ার পর যে সমস্ত লোক পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে, তারা ইসলামের প্রারম্ভিক যুগের মানুষ ছাড়া অন্য সকল মানুষের চেয়ে উন্নত চরিত্রের হবে। অধিক সত্যবাদী হবে। ওই সময় বলতে সে সময়কেই বুঝানো হয়েছে। ‘তোমাদের মধ্যে যার কথা বেশী সত্য তার

স্বপ্ন বেশী সত্য’ এই হাদীছের মর্ম অনুসারেও বুঝা যায়, শেষোক্ত কথাটি অধিক যুক্তিসঙ্গত।  কেনোনা যারা সত্য কথা বলে, তাদের অন্তর সর্বদাই আলোকিত থাকে এবং তাদের অনুভূতি সুদৃঢ় হয়ে থাকে। জাগ্রত অবস্থায় যে ব্যক্তি শুদ্ধশান্ত, স্বপ্নদর্শন কালেও সে শুদ্ধশান্ত থাকে। তাই তার স্বপ্ন সত্য হয়ে থাকে।

মিথ্যা ও পংকিল কথাবার্তায় যারা অভ্যস্ত, তাদের কাছ থেকে এরকম হওয়া সম্ভব নয়। কেনোনা তাদের অন্তর অন্ধকারাচ্ছাদিত এবং নষ্ট। তাদের স্বপ্ন মিথ্যা এবং পেরেশানীর স্বপ্নই হয়ে থাকে। তবে হাঁ, কখনো কখনো সত্যবাদীও মিথ্যা স্বপ্ন দেখে থাকে, আবার মিথ্যাবাদীও সত্য স্বপ্ন দেখে থাকে। এটা কিন্তু স্বাভাবিক নয়, কদাচিত ব্যাপার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা-ই হয় যা পূর্বে বলা হয়েছে।

হাদীছ শরীফে এসেছে, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন এমন কোনো স্বপ্ন দেখবে, যা তার কাছে খুব প্রিয় ও পছন্দনীয়, তখন আল্লাহতায়ালার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে এবং  তার আলোচনা মানুষের কাছে করবে। আর যদি স্বপ্নে এমন কিছু দেখে, যা তার অপছন্দনীয়, তবে মনে করবে এই স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে হয়েছে। তখন আল্লাহ্তায়ালার কাছে তার ক্ষতি থেকে নিরাপত্তা চাইবে। আর সে বিষয়ে মানুষকে কিছু বলবে না এবং মানুষকে ক্ষতি বা দুশ্চিন্তায় ফেলবে না।

হাদীছখানা ইমাম বোখারী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন। মুসলিম শরীফে এসেছে, মন্দ স্বপ্ন শয়তানের দিক থেকে হয়। মন্দ স্বপ্ন দেখলে তা মানুষের কাছে প্রকাশ না করে  বামদিকে তিনবার থু থু ফেলবে এবং এসতেগফার করবে। এক বর্ণনায় আছে, খারাপ স্বপ্ন দেখলে পার্শ্ব পরিবর্তন করবে। অন্য বর্ণনায় আছে, নামাজ পড়বে এবং কাউকে বলবে না। তবে হাঁ একান্ত প্রিয়জনের কাছে বলতে পারবে। অন্য  আরেক বর্ণনায় আছে, সৎপরামর্শদানকারী আলেমের কাছে বলতে পারবে এবং আয়াতুল কুরসী পড়বে। এক বর্ণনায় এমনও আছে, স্বপ্ন খেয়ালের পেরেশানী থেকে হয়ে থাকে। একথার অর্থ এই যে, এধরনের স্বপ্ন তাবীর করার পূর্ব পর্যন্ত কোনো ধর্তব্য বিষয় হবে না। তাবীর করা হলে তা বাস্তবে রূপ নেয়। স্বপ্ন সম্পর্কে এমনও বলা আছে, সর্বপ্রথম যে তাবীর করা হবে, বাস্তবে তাই হবে। এই হাদীছখানা অবশ্য দুর্বল। কেনোনা মানুষের নিয়ম হচ্ছে এই রকম যে, কেউ কোনো স্বপ্ন দেখলে তাবীরকারীর কাছে বলে থাকে। বিশুদ্ধ তাবীরকারী পেলে তো কথাই  নেই। না পেলে অন্য তাবীরকারীর কাছে ছোটে। স্বপ্নের তাবীর প্রদানকারীর জন্য উচিত, সবসময় ভালো তাবীর করা, যতদূর সম্ভব ভালো দিকে অর্থ নেয়া।

➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)] 

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment