কেমন চোখে দেখলে আমায় তুমি:
‘আইনুল ইয়াকিন’ বনাম ‘ইয়াকিনুল আইন’
—–
আগে মনে করতাম, এইখানে সামান্য একটু গ্রামারের মিসটেক আছে। কথাটা আইনুল ইয়াকিন হবে না, ইয়াকিনুল আইন হবে।
এখন দেখছি, গ্রামারে নয়, আমার সামান্য একটু মিসটেক আছে।
১. ইয়াকিনুল আইন কী?
চোখে দেখে যা বিশ্বাস করলাম সেটা হল ইয়াকিনুল আইন।
যেমন, আরবের কাফিররা রাসূল দ. কে চোখে দেখল। তারপর বিশ্বাস করল। কী বিশ্বাস করল? ‘আপনি তো আমাদের মতই মানুষ’ বলে বিশ্বাস করল।
২. আইনুল ইয়াকিন কী?
সাহাবীরা রাসূল দ. কে চোখে দেখে বিশ্বাস করলেন না, বরং বিশ্বাসের চোখে দেখলেন। কেঁদে কেঁদে বললেন, কোন দাগ ছাড়া ইয়া রাসূলআল্লাহ্ দ.! আল্লাহ্ আপনাকে তৈরি করেছেন।
মজার ব্যাপার হল, দাগ ছাড়া বা অ্যায়ব ছাড়া কথাটা কিন্তু প্রাচীণ ইংরেজিতেও আছে। সিনসিয়ারলি কথাটা এসেছে সিনসেরা দিয়ে। আর সিনসেরা মানে হল মোম ছাড়া। মোম ছাড়া? আগের ভাষ্কররা যখন কোন ভাষ্কর্য বানাতো, সেই ভাষ্কর্যের কোথাও কোথাও একটু দাগ বা একটু খাদ থাকতেই পারতো। সেই খাদ মোম ভরে পূরণ করা হতো। তো, যে ভাষ্কর্যে কোন মোম ভরার প্রয়োজন নেই, সেটাই হল সিন-সেরা। কুল্লি অ্যায়ব ব্যতীত। স্ক্র্যাচহীন।
কেঁদে কেঁদে বললেন, এমন সন্তান না কোন জননী কোনদিন গর্ভে ধারণ করেছে না কোনদিন করবে। কেঁদে কেঁদে বললেন, আমাদের মাঝে চতুর্দশীর চাঁদ এসেছেন। ত্বলাআল বাদরু আলাইনা।
অবিশ্বাসী এসে বলল, আপনার মত বিশ্রি কাউকে দেখিনি, রাসূল দ. বললেন, সাদ্দাকতা।
বিশ্বাসী বললেন, আপনার মত সুন্দর কাউকে দেখিনি। রাসূল দ. বললেন, সাদ্দাকতা।
মুনাফিক বললো, এই গাধা কার গাধা! কী বিশ্রি এই গাধার প্রস্রাবের গন্ধ। ইয়াকিনুল আইন।
মু’মিন বললেন, পাষন্ড, দূর হ, এটা রাসূল দ.’র গাধা। এই গাধার প্রস্রাবেও সুগন্ধ। আইনুল ইয়াকিন।
এইগুলো হল আইনুল ইয়াকিন।
৩. সূফিদের আইনুল ইয়াকিন কী?
সূফিরা বলেন না, কীসব বইপত্র পড়ে পড়ে বিশ্বাস ঠিক কর! গ্রামারের কাটাকুটিতে বিশ্বাস ঠিক কর! কোনটা সত্য কোনটা কেমন সব এভাবে ঠিক কর!
চোখে দেখে বিশ্বাস করবা। এইটা হল দেখার বিশ্বাস। এইটা হল সামনাসামনি পাবার বিশ্বাস।
সূফিরা যখন বিশ্বাসের চোখে চামড়ার চোখের বাইরেও অন্তরের চোখে দেখা শুরু করেন, এবং তাতে খুব সহজ স্বাভাবিক, স্বত:স্ফূর্ত ভরসা রাখেন, এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন- এইটা হল সূফিদের পরিভাষায় আইনুল ইয়াকিন।
এই আইনুল ইয়াকিনে আইনুল ইয়াকিনও আছে, ইয়াকিনুল আইনও আছে, শুধু কপালের মাঝের দুই আইন দিয়ে তারা এগুলো দেখে না, কালির কলমের আইন দিয়েও দেখে না- তফাত এখানেই।