দশের সমাহার পর্ব-০১ : ঈমানের ফজিলত
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
تلك عشرة كاملة
[কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর আলোকে বিভিন্ন আমলের দশটি ফজিলতের বিবরণ ]
بسم الله الرحمن الرحيم
(ক) পবিত্র কুরআনের বাণী
১. আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক
اللَّـهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ
যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক।তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। (আল বাক্বারাহ ২৫৭)
২.অবিচল মুমিনদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে খোশখবরি
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ l أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
যারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক তো আল্লাহ’ অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে, তারা যা করত তার পুরস্কার স্বরূপ।(আল আহকাফ ১৩-১৪)
৩.মুমিনদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ হতে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا وَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ l وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآَتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীগণকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্য পসন্দ করেছেন এবং তাদের ভয় ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্য নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে, আমার কোন শরিক করবে না, অতঃপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারা তো সত্যত্যাগী। তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার। (আন নূর ৫৫-৫৬)
৪.আল্লাহ মুমিনের কোনো আমল বিনষ্ট করেন না
فَمَن يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا كُفْرَانَ لِسَعْيِهِ وَإِنَّا لَهُ كَاتِبُونَ
অতঃপর যে মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে, তার প্রচেষ্টা অস্বীকৃত হবে না এবং আমি তা লিপিবদ্ধ করে রাখি। (আল আম্বিয়া ৯৪)
৫.মুমিনদের আমলের প্রতিদান বাড়িয়ে দেয়া হবে
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّـهَ وَآمِنُوا بِرَسُولِهِ يُؤْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِن رَّحْمَتِهِ وَيَجْعَل لَّكُمْ نُورًا تَمْشُونَ بِهِ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۚ وَاللَّـهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর।তিনি নিজে অনুগ্রহের দ্বিগুণ অংশ তোমাদেরকে দিবেন, তোমাদেরকে দিবেন জ্যোতি, যার সাহায্যে তোমরা চলবে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন।আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়। ( আল হাদীদ ২৮)
(খ) পবিত্র হাদীসের বাণী
৬.ঈমান সর্বোত্তম আমল
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ أَيُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ فَقَالَ إِيمَانٌ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ حَجٌّ مَبْرُورٌ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন্ আমলটি সর্বোত্তম?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনা।’জিজ্ঞেস করা হলো, ‘অতঃপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।’ প্রশ্ন করা হল, ‘অতঃপর কোনটি?’ তিনি বললেনঃ ‘মাকবূল হাজ্জ সম্পাদন করা।’‘ (বুখারী, হাদীস ২৬, মুসলিম, হাদীস ৮৩)
৭. মুমিন জান্নাতে যাবেই যাবে
عَنِ الْمَعْرُورِ بْنِ سُوَيْدٍ ، قَالَ : سَمِعْتُ أَبَا ذَرٍّ يُحَدِّثُ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، أَنَّهُ قَالَ : ” أَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَام ، فَبَشَّرَنِي أَنَّهُ مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِكَ ، لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا ، دَخَلَ الْجَنَّةَ ” ، قُلْتُ : وَإِنْ زَنَى ، وَإِنْ سَرَقَ ، قَالَ : وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ ” .
আবূ যার (গিফারী) (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,একজন আগন্তুক [জিব্রীল (আ.)] আমার প্রতিপালকের নিকট হতে এসে আমাকে সুসংবাদ দিলেন, আমার উম্মাতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করা অবস্থায় মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যদিও সে যিনা করে এবং যদিও সে চুরি করে থাকে? তিনি বললেনঃ যদিও সে যিনা করে থাকে এবং যদিও সে চুরি করে। (মুসলিম, হাদীস ১৪০)
৮. মুমিন নবীজীর শাফা’আত লাভে সবচাইতে বেশি ভাগ্যবান হবে
عن أبي هريرة رضي الله عنه أنَّه قال: قِيل يَا رَسُولَ اللهِ! مَنْ أَسْعدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِكَ يَوْمَ القِيامَةِ؟ قال رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: «لَقَدْ ظَنَنْتُ يا أبا هُرَيْرَةَ أَنْ لَا يَسْأَلَنِي عَنْ هَذا الحَدِيثِ أَحَدٌ أَوَّلَ مِنْكَ، لِـمَا رَأَيْتُ مِنْ حِرْصِكَ عَلى الحديثِ، أَسْعدُ النَّاسِ بِشَفَاعِتي يَوْمَ القِيَامَةِ، مَنْ قَال: لَا إِلَهَ إلَّا اللهُ خَالصًا مِنْ قَلْبِه أو نَفْسِه
আবূ হুরায়রা(রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ! কিয়ামতের দিন আপনার শাফা’আত লাভে কে সবচাইতে বেশি ভাগ্যবান হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবূ হুরায়রা ! আমি ধারণা করেছিলাম, এ বিষয়ে তোমার আগে আমাকে আর কেউ প্রশ্ন করবে না। কারণ আমি দেখেছি হাদীসের প্রতি তোমার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। কিয়ামতের দিন আমার শাফা’আত লাভে সবচাইতে ভাগ্যবান হবে সেই ব্যাক্তি যে খালিস দিলে লা ইলাহা ইল্লাহ্ (পূর্ণ কালেমা তাইয়্যেবা) বলে।(বুখারী,হাদীস ৯৯)
৯. মুমিনের মন্দ কাজের বিনিময় বাড়ে না;পক্ষান্তরে নেক আমলের বিনিময় সাতশ গুণ পর্যন্ত বাড়ে
أَنَّ عَطَاءَ بْنَ يَسَارٍ، أَخْبَرَهُ أَنَّ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ إِذَا أَسْلَمَ الْعَبْدُ فَحَسُنَ إِسْلاَمُهُ يُكَفِّرُ اللَّهُ عَنْهُ كُلَّ سَيِّئَةٍ كَانَ زَلَفَهَا، وَكَانَ بَعْدَ ذَلِكَ الْقِصَاصُ، الْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ، وَالسَّيِّئَةُ بِمِثْلِهَا إِلاَّ أَنْ يَتَجَاوَزَ اللَّهُ عَنْهَ
আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাযি.) বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, বান্দা যখন ইসলাম গ্রহণ করে এবং তার ইসলাম উত্তম হয়, আল্লাহ্ তা’আলা তার আগের সব গুনাহ্ মাফ করে দেন। এরপর শুরু হয় প্রতিদান; একটি সৎ কাজের বিনিময়ে দশ গুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত; আর একটি মন্দ কাজের বিনিময়ে ঠিক ততটুকু মন্দ প্রতিফল। অবশ্য আল্লাহ্ যদি মাফ করে দেন তবে ভিন্ন কথা।(বুখারী,হাদীস ৪০)
১০. মুমিনের দুআ বিফলে যায় না
عَنْ عَلِيِّ بْنِ عَلِيٍّ ، قَالَ : سَمِعْتُ أَبَا الْمُتَوَكِّلِ النَّاجِيَّ ، قَالَ : قَالَ أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَدْعُو ، لَيْسَ بِإِثْمٍ وَلا بِقَطِيعَةِ رَحِمٍ ، إِلا أَعْطَاهُ إِحْدَى ثَلاثٍ : إِمَّا أَنْ يُعَجِّلَ لَهُ دَعْوَتَهُ ، وَإِمَّا أَنْ يَدَّخِرَهَا لَهُ فِي الآخِرَةِ ، وَإِمَّا أَنْ يَدْفَعَ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا ، قَالَ : إِذًا يكثرِ ، قَالَ : اللَّهُ أَكْثَرُ
যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দুআ করে, যে দুআতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দুআ অবশ্যই কবুল করে নেন। যে দুআ সে করেছে হুবহু সেভাবে তা কবুল করেন অথবা তার দুআর প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা এ দুআর মাধ্যমে তার দিকে আগুয়ান কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবাগণ বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দুআ করতে থাকবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন। (আল-আদাবুল মুফরাদ ৭১৫)