উত্তর: وبالله التوفيق মুহাদ্দিসীন-ই কিরামের পরিভাষায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ), সাহাবা-ই কিরাম ও তাবেঈন-ই কিরামের রীতি-নীতিকে সুন্নাত বলে। সুন্নাতের উক্ত সংজ্ঞায় আসহাব, ত্বাওর ও তরিকা- এই তিনটি শব্দের ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
اصحاب শব্দটি বহুবচন, একবচনে صحابى । সাহাবী ওই ব্যক্তি যিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন ও নবী করীম -এর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়েছেন এবং ইসলামী আক্বীদা-বিশ্বাসের ওপর ইন্তিকাল করেছেন। সোহরত বা সাহচর্যের জন্য নির্দিষ্ট কোন সময়-সীমা নেই, সামান্য হোক বা বেশী। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর সাথে সাহাবা-ই কিরামের যেরূপ সম্বন্ধ স্থাপিত হয়েছে, অনুরূপ তাবেঈগণের সম্বন্ধ স্থাপিত হয়েছে সাহাবা-ই কিরামের সঙ্গে। তাবেঈ এমন ব্যক্তি যাঁর সাথে কোন সাহাবীর (رضى الله تعالي عنه) সংশ্রব বা সান্নিধ্য লাভ হয়েছে এবং ইসলামের শর্তও যথাযথ পাওয়া গিয়েছে।
طورطريق শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য قول، فعل، تقرير অর্থাৎ- বাণী, কাজ ও নীরবতা। تقرير দ্বারা কথা-বার্থা ও আলাপ-আলোচনা উদ্দেশ্য নয়; বরং تقرير দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, কাউকে কোন কাজ করতে দেখে কিংবা আদেশ-উপদেশ দিতে শুনে, ভাল-মন্দ কিছুই না বলে নীরব থাকা। এতে প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত কাজ-কর্ম ও আদেশ-উপদেশ ইত্যাদি জায়েয। অতএব সুন্নাত নয় প্রকার:
১. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর قول বা বাণী।
২. তাঁর فعل বা পবিত্র কাজ।
৩. তাঁর (ﷺ) কোন কর্ম ও বাণীকে জায়েয বা বৈধতা প্রদান করা। এ ধরনের তিন প্রকার সাহাবা-ই কিরামের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে, অতঃপর ওই ধরনের তিন প্রকার তাবেঈনদের সাথে সম্পর্কের কারণে। এ সবগুলো মিলে নয় প্রকার হলো।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর অনুসরণ ও তাঁর প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ কোরআন মজিদের দলিল দ্বারা প্রমাণিত। যথা:
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ .
‘হে রাসূল! আপনি ওই সকল লোকদের বলেদিন, যদি তোমরা আল্লাহকে বন্ধু হিসেবে পেতে চাও, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো। যাতে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদেরকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ ২৮০
সাহাবা-ই কিরাম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
اصحابى كا لنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم .
‘আমার সাহাবীরা (رضى الله تعالي عنه) আকাশের নক্ষত্রের ন্যায়, তোমরা তাদের মধ্য হতে কারো অনুসরণ-অনুকরণ করলে সঠিক পথ পাবে।’ বাকী রইলো তাবেঈনগণের ফযিলত। আমরা তাঁদের অনুসরণ নিম্নোক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণ করবো।
خير القرون قرنى ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم .
‘কালের মধ্যে সর্বোত্তম কাল হলো আমার কাল। অতঃপর তাঁদের কাল উত্তম, যাঁরা উক্ত কালের লোকদের নিকটতম হবেন। অতঃপর তাঁদের যাঁরা এদের নিকটতম হবেন।’
সারকথা হচ্ছে, আমাদেরকে কোরআন মাজীদ ছাড়াও আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে রাসূল (ﷺ) -এর এবং রাসূল (ﷺ)-এর হুকুমে সাহাবা-ই কিরাম, তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈনগণের অনুসরণ ও অনুকরণ করা আবশ্যক। সুতরাং তাঁদের قول، فعل،تقرير তথা বাণী, কাজ ও নীরবতারও অনুকরণ করতে হবে। যার অর্থ আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি।
কাশ্শাফ গ্রন্থকার ‘ইস্তিলাহাত’ এ লিখেছেন যে, শরীয়তের পরিভাষায় সুন্নাতের প্রয়োগ নিম্নোক্ত অর্থে হয়ে থাকে-
১. শরীয়ত।
২. রাসূলুল্লাহ(ﷺ)-এর কওল, ফেল এবং তাকরীর তথা বাণী, কর্ম ও অনুমোদন।
৩. ওই হুকুম যা শুধু হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত।
৪. সে সকল কাজ যা না করার চেয়ে করাই উত্তম। এখানে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল ও মুস্তাহাব সবই অন্তভুর্ক্ত।
৫. নফল: যা করাতে সওয়াব রয়েছে এবং না করলে শাস্তি নেই।
৬. امر مشروع তথা শরীয়ত অনুমোদিত হুকুম।
৭. এমন কাজ বা আমলসমূহ যা হুযূর (ﷺ) কিংবা সাহাবা-ই কিরাম (رضى الله تعالي عنه) সর্বদা করেছেন, মাত্র দু’একবার ছাড়া কখনো পরিত্যাগ করেন নি।
এগুলো আদায় না করাতে যদি গুনাহ হয়, তাহলে এগুলোকে সুন্নাতুল্লাহ বা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলা হয়। যেমন, আযান, জামাত, ফজরের দুই রাকাআত সুন্নাত, যোহরের ছয় রাকাআত সুন্নাত এবং মাগরিব ও এশার ফরযের পর দুই রাকাআত সুন্নাত। আর যদি আদায় না করাতে গুনাহ না হয়, তাহলে এগুলোকে সুন্নাতে যায়েদা বা সুন্নাতে গাইরে মুয়াক্কাদা বলা হয়।