রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু মানব জাতিই নয়, সমগ্র বিশ্ব জাহানের জন্য রহমত স্বরূপ। আল্লাহ সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে বলেন-আমি আপনাকেই শুধুমাত্র সমগ্র বিশ্ব জাহানের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। যিনি আমাদের জন্য রহমত। আল্লাহ পাক যে মানুষটিকে কেন্দ্র করে তামাম পৃথিবীর সৃষ্টি করেছেন। সেই রাসূল (সা.) এর প্রশংসাই হচ্ছে দরূদ। এই দরূদ পাঠ মানুষের ঈমানি শক্তিকে বৃদ্ধি করে। আল্লাহ তাআলা মানুষের কল্যাণের জন্যই দরূদ পাঠকেও নাজাতের মাধ্যম বানিয়েছেন। নিচে সবচেয়ে ছোট এবং সর্বোত্তম দরূদ পাঠের গুরুত্ব ও ফজিলত তুলে ধরা হলো।
দরূদ শরীফের মধ্যে সর্বোত্তম দরূদ হলো- দরূদে ইবরাহিম। যা নামাজের শেষ বৈঠকে পড়া হয়। আর সবচেয়ে ছোট দরূদ হচ্ছে
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যা পাঠের মাধ্যমে সালাত ও সালাম পাঠের হুকুম আদায় হয়ে যায়। সালাত ও সালাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মর্যাদায় অসংখ্য আয়াত নাযিল হয়েছে। যার কয়েকটি :
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্মান জানানোর সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে এই দরূদ পাঠ করা। তাঁকে সম্মান জানানোর কথা কুরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন-
আমি তোমাকে (নবী) প্রেরণ করেছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। যাতে তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং তোমরা রাসূলকে শক্তি যোগাও তাকে সম্মান করো। ( সূরা ফাতাহ : আয়াত ৮ ও ৯)।
আল্লাহ রাসূলের মর্যাদায় বলেন,
আল্লাহর নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তার ফেরেশতারাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করো ও তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। (সূরা আহজাব : আয়াত ৫৬)
দরূদ পাঠের ফজিলত :
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি হাশরের ময়দানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে থাকতে চান, সে যেন বেশি বেশি দরূদ পাঠ করেন।
যে ব্যক্তি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করবে, তাঁর জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ আবশ্যক হয়ে যায়। বেশি বেশি দরূদ পাঠের বরকতে স্বপ্নযোগে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জিয়ারত নসিব হয়ে যায়। দরূদ পাঠের বরকতের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলােইহি ওয়া সাল্লামের সাক্ষাৎ লাভ করতে পারলে ঐ ব্যক্তির জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যায়। দরূপ পাঠের ফলে বান্দার সব বৈধ চাওয়া পাওয়া আল্লাহ কবুল করেন।
হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) বলেন, নিশ্চয় বান্দার দোয়া-মোনাজাত আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝুলানো থাকে, তার কোনো কিছু আল্লাহপাকের নিকট পৌঁছে না যতক্ষণ না বান্দা তোমার নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করবে। (তিরমিজী শরিফ)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হজরত রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দরুদ শরিফের আমল কাল কিয়ামতের পুলসিরাতের অন্ধকারে আলোর কাজ করবে। যে ব্যক্তি জুমার দিন আমার প্রতি ৮০ বার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহপাক তার ৮০ বছরের ছগিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
হযরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের যে দল কোনো মজলিসের কাজ শেষ করে আল্লাহপাকের জিকর ও দরূদ পাঠ না করে সেখানে থেকে উঠে পড়বে তাদের ওই মজলিস তাদের জন্য দুঃখ-কষ্টের কারণ হবে। হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত রসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কৃপণ ওই ব্যক্তি যার নিকট আমার নাম উচ্চারিত হলো, কিন্তু সে আমার নাম শুনে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না। (তিরমিজি শরিফ)
দরূদ পাঠের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতেই আল্লাহ তাআলা কুরআনে আয়াত নাজিল করেছেন :
`নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ্) স্বয়ং এবং আমার ফেরেস্তাগণ নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরুদ পাঠ পূর্বক সালাম প্রেরণ করিয়া থাকি; হে মুমিনগণ তোমরাও তাঁহার উপর দরুদ পাঠ কর এবং সালাম প্রেরণ কর।` (সূরা আহযাব : আয়াত ৫৬)।